শব্দ প্রকরণ

যে কোন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য শব্দ প্রকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ টপিক থেকে প্রায় প্রতিটি পরীক্ষায়ই প্রশ্ন এসে থাকে। বিশেষ করে শব্দের উৎপত্তিমূলক শ্রেণিবিভাগ থেকে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন এসে থাকে। আমরা শব্দ প্রকরণের সম্পূর্ণ অধ্যায়টিকে অনেক সূচারুরুপে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অন্তত: একবার পড়তে পারলে ও বেশ উপকৃত হবেন । আজকের এই পোস্ট পড়ার পর আশা করছি শব্দের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কিত একটি সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে করবেন। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।

 শব্দ প্রকরণ

শব্দ কী ও কেন

মনের ভাবকে সুন্দরভাবে প্রকাশের জন্য মানুষ অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টি উচ্চারণ করে। এই অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টিকে শব্দ বলে। আরও সহজ করে বলা যায়—এক বা একাধিক ধ্বনি বা বর্ণ মিলিত হয়ে যদি একটি অর্থ প্রকাশ করে, তবে তাকে শব্দ বলে। যেমন : 'গোলাপ' একটি শব্দ। এই শব্দটি উচ্চারণের সাথে সাথে একটি ফুলের ছবি আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে। এরূপ 'রাজশাহী' শব্দটি একটি স্থানকে চিহ্নিত করে। 'আনন্দ' শব্দটি দ্বারা আমরা মনের একটি বিশেষ অবস্থা বুঝে থাকি। অতএব, শব্দ হচ্ছে ধ্বনি বা বর্ণের অর্থপূর্ণ মিলন।

বিশিষ্ট ভাষাতাত্ত্বিক ডঃ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “কোন বিশেষ সমাজের নর-নারীর কাছে যে ধ্বনির স্পষ্ট অর্থ আছে, সেই অর্থযুক্ত ধ্বনি হচ্ছে সেই সমাজের নর-নারীর ভাষার শব্দ।" এ কারণে স্পষ্টতই বলা যায় অর্থপূর্ণ ধ্বনি ছাড়া শব্দ গঠন সম্ভব নয়। এ, ও, ঔ ইত্যাদি এককভাবে অর্থ প্রকাশ করতে পারে বলে এগুলো একই সাথে ধ্বনি ও শব্দ।

বাংলা ভাষার শব্দ সম্ভার

বাংলা ভাষার শব্দ সংখ্যা কম নয়; তদুপরি এ ভাষার শব্দ ভাণ্ডারের সবই খাঁটি বাংলা নয়। বাংলা ভাষার সে শব্দ সম্ভার সৃষ্টি হয়েছে তা বহুদিনের গড়ে ওঠা দেশি-বিদেশি শব্দের নির্যাস সংমিশ্রণ। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে প্রাচীন ভারতীয় আর্য—শাখাটি ক্রমবিবর্তনের ফলে বাংলা ভাষার বর্তমান রূপ লাভ করেছে। এজন্যে এ ভাষাগোষ্ঠীর অগণিত শব্দ ত্রাণ হিসেবে বাংলা ভাষার শব্দ সম্ভারে সঞ্চিত হয়েছে। এছাড়া বাংলা ভাষার কিছু দেশি শব্দ রয়েছে। অনার্যরা এদেশে বাস করার সময় তাদের কিছু শব্দ বাংলায় এসেছে। এরপর এসেছে বিদেশিরা তাদের শব্দ ভাণ্ডার নিয়ে। বিদেশি শব্দভাণ্ডারও বাংলা ভাষার ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। শব্দ সংখ্যার ওপরই নির্ভর করে ভাষার সমৃদ্ধতা। শব্দ ভাণ্ডারের সংগ্রহ বাড়ানোর জন্য প্রত্যেক বিদেশি ভাষা থেকে শব্দ সংগ্রহ করার প্রচলিত রীতি রয়েছে। যে ভাষার যত বেশি অন্য ভাষা গ্রহণের ক্ষমতা বিদ্যমান সে ভাষা ততই উৎকর্ষতায় পরিপূর্ণ। বাংলা ভাষার ভাণ্ডারে শব্দ সংখ্যা প্রায় একলক্ষ পঁচিশ হাজার। এর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ তৎসম শব্দ। প্রায় আড়াই হাজার শব্দ আরবি-ফার্সি। প্রায় চারশত শব্দ তুর্কি; আটশ ইংরেজি এবং দেড়শ শব্দ পর্তুগিজ ও ফরাসি। এছাড়া কিছু বিদেশি শব্দও রয়েছে। শব্দ ভাণ্ডারের বাদবাকি শব্দ তদ্ভব বা দেশি।

উৎস বা উৎপত্তি অনুসারে শব্দের শ্রেণীবিভাগ

উৎস বা উৎপত্তি অনুসারে শব্দের শ্রেণীবিভাগ উৎস বা উৎপত্তি অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দ ভাণ্ডারকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে—
১. তৎসম (সংস্কৃত) শব্দ।
২. অর্ধ-তৎসম শব্দ।
৩. তদ্ভব শব্দ।
৪. খাঁটি বাংলা বা দেশি শব্দ।
৫. বিদেশি শব্দ।

এছাড়াও আছে
৬. মিশ্র শব্দ।

১. তৎসম শব্দ

যে সকল শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে অবিকৃত অবস্থায় বাংলা ভাষায় এসেছে এবং এখনও তা অবিকৃত অবস্থায় ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলোকে তৎসম শব্দ বলে। 'তৎসম' একটি পারিভাষিক শব্দ । 'তৎ' অর্থ 'তার' এবং ‘সম’ অর্থ ‘সমান'। শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় ‘তার সমান'। অর্থাৎ সংস্কৃতের সমান। যেমন : সূর্য, চন্দ্র, পর্বত, রবি, শশি, নক্ষত্র, মনুষ্য, পিতা, মাতা, ভ্রাতা, ধর্ম, কর্ম, ভোজন, শয়ন, সত্য, ক্ষমা, ক্ষমতা, ঘৃত, চর্ম, জল, জলদ, অদ্য, ক্ষতি, কুণ্ডল, দীক্ষিত, বন্য, মুক্তি, ভবন, পত্র, প্রস্তর ইত্যাদি।

ভাষাবিদ ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় মনে করেন বাংলা সাধু ভাষায় প্রায় ৪৫ শতাংশ শব্দ তৎসম।

২. অর্ধ-তৎসম শব্দ

সংস্কৃত ভাষার যে সকল শব্দ কিছুটা বিকৃত হয়ে বাংলা ভাষায় ঠাঁই নিয়েছে, তাকে অর্ধ তৎসম শব্দ বলে। যেমন :

তৎসম শব্দ অর্ধতৎসম শব্দ
সূর্য > সুরুজ
কৃষ্ণ > কেষ্ট
রাত্রি > রাত্তির
প্রাণ > পরাণ
জ্যোৎস্না > জোছনা/জোসনা
নিমন্ত্রণ > ‌ নেমনতন্ন
শ্রাদ্ধ > ছেরাদ্দ
যত্ন > যতন
পুত্র > পুত্তুর
প্রণাম > পেন্নাম
ক্ষুধা > খিদে

৩. তদ্ভব শব্দ

সংস্কৃত ভাষার যে সকল শব্দ নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে, তাকে তদ্ভব শব্দ বলে। ‘তদ্ভব' কথাটির অর্থ 'তা থেকে যা উৎপন্ন'। অর্থাৎ সংস্কৃত থেকে যা উৎপন্ন। যেমন :

তৎসম শব্দ প্রাকৃত শব্দ তদ্ভব শব্দ
অদ্য > অজ্জ > আজ
চন্দ্ৰ > চন্দ > চাঁদ
হস্ত > হত্থ > হাত
কৃষ্ণ > কহ্ন > কানু
কর্ম > কজ্জ > কাজ
বধূ > বহু > বউ
পদ > পাঅ > পা

৪. খাঁটি বাংলা বা দেশি শব্দ

বাংলাদেশের আদিম অধিবাসী অনার্য (যারা আর্য নয় অর্থাৎ এদেশীয়) মানুষেরা বিভিন্ন গোষ্ঠীতে আবদ্ধ ছিল এবং প্রত্যেক গোষ্ঠীর ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ছিল; এক গোষ্ঠীর ভাষা অন্য গোষ্ঠীর মানুষ বুঝত না। গোষ্ঠীবদ্ধ অনার্য যেমন— দ্রাবিড়, তোল, ভীম, সাঁওতাল এমনি বিভিন্ন ভাষাভাষী গোষ্ঠীবদ্ধ অনার্যের ব্যবহৃত শব্দ থেকে যে সকল শব্দ বাংলা ভাষায় রক্ষিত হয়েছে, তাকে খাঁটি বাংলা বা দেশি শব্দ বলে। যেমন— চাউল, ঢেঁকি, কুলো, মই, বাদুড়, ডিঙ্গি, টোপর, চাঙারি, ডাব, চোঙ্গা, কয়লা, যাঁতা, ঝিঙ্গা, ঝাঁটা, পেট, কাটা, কামড়, ডাঁসা, ডাগর, মেকি, গয়লা, পয়লা, খড় ইত্যাদি।

৫. বিদেশি শব্দ

রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও বাণিজ্যিক কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ বাংলাদেশে আগমন করে। তারা এদেশে দীর্ঘদিন যাবৎ স্থায়ীভাবে বসবাস করে। অনেকে শাসন ক্ষমতা পরিচালনা করে। ফলে এ সকল বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের নিজ নিজ ভাষায় ব্যবহৃত অনেক শব্দ বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে। এ সকল শব্দকে বিদেশি শব্দ বলে। যে ভাষাগুলো থেকে বাংলা ভাষার শব্দসম্ভারে যোগ হয়েছে সেগুলো হলো, আরবি, ফারসি, ফরাসী, অস্ট্রেলীয়, ইংরেজি, জাপানি, তুর্কি, তামিল, তিব্বতি, পেরু, বর্মি, রুশ, পর্তুগীজ ইত্যাদি ভাষা প্রধান।

আরবি শব্দ :

আল্লাহ, কুরআন, ঈমান, হারাম, হালাল, কবর, কাফন, কাফের, আকবর, যাকাত, হাদিস, আমানত, দুনিয়া, জেহাদ, ফরজ, কেরামতি, ইনকিলাব, ইনসান, কৈফিয়ৎ, গায়েব, আহম্মক, কবুল, ফকির, তুলিয়া, দৌলত, গরিব, আতর, খাজনা, মসজিদ, মাদ্রাসা, আখেরাত, কেয়ামত, কোরবানি, মনিব, মলম, ইন্তিকাল, এলাকা, জমজমাট, সিন্দুক, তোয়াক্কা, দোয়াত, কলা, অজুহাত, আছিলা, অন্দর, আদব-কায়দা, আবির, আমল, আমলা, আমিন, আমির, ওমরা, আলাদা, আগল, আসবাব, আসামি, ইজারা, ঈদ, ইনাম, ইসলাম, ইহুদি, উকিল, উজির, উসুল, এজলাস, এজাহার, ওকালত, ওজন, কদম, কদব, কেবলা, কসাই, কসবা, কলায়, কামাল, কামিজ, কায়দা, কালিমা, কুদরত, কেতা, কেতাব, কেরামতি, ক্রোক, খতম, খতিয়ান, খবর, খতিব, খাদিম, খারাপ, খালি, খাসা, খাসি, খেয়াল, খোলসা, গজল, গাদ, গড়া, ছবি- ছাদ, জমা, জরিপ, জরিমানা, জলদি, জলসা, জাহাজ, জিজিয়া, জুলুম, জেরা, তওবা, তকলিফ, তাক, তাগিদ, তাজিয়া, তামাম তারিখ, তালাক, তুফান, তোফা, দফা, দাখিল, দালাল, দায়রা, নবাব, মসনদ, মহকুমা, মিনতি, মিনার, মুশকিল, মোল্লা, শয়তান, লেবু, লোকসান, হিস্যা, হেফাজত, হ্যাবলা, শর্ত, ফানুস, বকেয়া, রায় ইত্যাদি।

ফারসি শব্দ :

খোদা, নামায, ফেরেশতা, বেহেশতু, দোযখ, জিন্দেগি, গুনাহ, পয়গম্বর, বাদশাহ, বেগম, দরবার, কারখানা, দোকান, চশমা, দস্তখত, জবানবন্দি, জামদানি, পেয়াদা, পেশকার, মখমল, মোহর, বাদামি,তরমুজ, দর্জি, তারিখ, দৌলত, কারিগর, কামান, দরকার, নামী, নাশতা, পাঁয়তারা, মাহিনা, বাজিকর, বেতার, গোয়েন্দা, চাকর, জাদু, আমদানি, রপ্তানি, নমুনা, হাঙ্গামা, আইন, আজাদ, আফগান, আবাদ, আয়না, আরাম, আলু, আসমান, আস্তে, ইয়ার, ইয়ারকি, উমেদার, একদম, একবার, কম, কষাকষি, কাগজ, কাবুলি, কারবার,কিনারা, কুচি, কোমর, খরগোস, খরিদ, খাজা, খানসামা, খুচরা, খুন, খুনি, খুব, খুশি, খোদ, খোরাক, গরম,গর্দান, গালিচা, বালিশ, গোমস্তা, গোরস্থান, গোলাপ, চরকা, চর্বি, চাকরি, চাদর, চালক, চাঁদা, চেহারা, চৌরাস্তা, জং, জঙ্গল, জবান, জমি, জর্দা, জান, জানোয়ার, জাম, জামা, জায়গা, জারি, জের, জোর, দরদ, দরবেশ, দাঙ্গা, দানা, দামামা, দারোয়ান, দেয়াল, দেদার, নফর, নিশান, পালক, পাইকারী, পয়দা, পরওয়ানা, পাঞ্জাব, ফরিয়াদ, ফন্দিবাজ, বাগান, বাগিচা, বরফ, বরবাদ, বাদাম, বাবরি, বিবি, বেদনা, মুর্দা, রোজ, লাল, শরম, শাদি, সরাসরি, সর্দার, সুদ, সেতার, হিন্দু, হাজার, হপ্তা ইত্যাদি।

ইংরেজি শব্দ :

ফুটবল, স্টেশন, সার্কাস, সার্জন, কলেজ, স্কুল, লাইব্রেরি, বোতল, আস্তাবল, ইঞ্জিন, সিনেমা, হাইকোর্ট, সুপ্রিমকোর্ট, পেনশন, ট্যাক্সি, ডাক্তার, প্যাকেট, ব্যাগ, পাউডার, পেন্সিল, বোনাস, টেনিস, গেলাস, ক্লাস, কোম্পানি, অফিস, উইল, ট্রেন, ট্রাম, লেবেল, জাঁদরেল, থিয়েটার, এজেন্ট, কনস্টেবল, কেস, ক্লাব, ডজন, ফটো, ফ্যাশন, আরদালি, সিগন্যাল, টেবিল, চেয়ার, নম্বর, টিকিট, বুরুশ, টিফিন, কেরোসিন, ইউনিয়ন ইত্যাদি।

পর্তুগীজ শব্দ :

আলমারি, আলপিন, আনারস, বালতি, পাউরুটি, গুদাম, আতা, পাদ্রি, মার্কা, সাবান, বেহালা, আয়া, কাবাব, মাস্তুল, নিলাম, তামাক, গরাদ, গির্জা। মিস্ত্রি, ইস্পাত, চাবি, ফিরিঙ্গি, ক্রুশ, যিশু, কপি, বারান্দা, পেঁপে, আলকাতরা, কামিজ, কামরা, বোতাম, পেয়ারা, জানালা, কেদারা, পেরেক, তোয়ালে, আচার, ইস্তিরি, এনতার, কাতান, কেরানি, গামলা, গস্ত, পাচার, পিপা, পরতি, পিস্তল, ফর্মা, ফিতা, ফালতো, বাসন, বোমা, বরগা, টোকা, মস্করা, মাইরি, সাগু, সালসা ইত্যাদি।

তুর্কি শব্দ :

চাবুক, উজবুক, আলখাল্লা, কুলি, বাবুর্চি, দারোগা, বেগম, কাবু, কাঁচি, চাকর, তোপ, চারু, উর্দি, ফস্কা, কুরনিশ, কোর্মা, চাকু, চোগা, অলমল, ঠাকুর, তকমা, দাদা, নানা, নানী, বাস, বাহাদুর, মুচলেকা, মোগল, লাশ, সওগাত ইত্যাদি।

জাপানি শব্দ :

হারিকিরি, রিকশা ইত্যাদি।

চীনা শব্দ :

চা, চিনি ইত্যাদি।

বর্মি শব্দ :

লুঙ্গি, ফুঙ্গি ইত্যাদি।

ভারতীয় ভাষা থেকে আগত শব্দ :

হিন্দি— কাহিনী, চামেলি, ফালতু, পানি, টহল, ডেরা, চালু, তাগড়া ইত্যাদি।
পাঞ্জাবি— তরকা, শিখ, চাহিদা ইত্যাদি।
গুজরাটি— খদ্দর, হরতাল ইত্যাদি।

আপনার জন্য আরো: পদ কাকে বলে? পদ কত প্রকার ও কি কি? - এ টু জেড

গঠনপ্রণালি অনুসারে শব্দের শ্রেণীবিভাগ

গঠনপ্রণালি অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে প্রধানত দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:

১. মৌলিক শব্দ
২. সাধিত শব্দ

১. মৌলিক শব্দ

যে শব্দকে ভাঙা বা বিশ্লেষণ করা যায় না, তাকে মৌলিক শব্দ বলে। মৌলিক শব্দগুলো ভাষার মূল উপকরণ। যেমন : ফুল, মুখ, হাত, পা, ঘোড়া, পাঁচ, গরু ইত্যাদি।

২. সাধিত শব্দ

প্রত্যয় দ্বারা নিষ্পন্ন উপদর্শ দ্বারা গঠিত এবং সন্ধি বা সমাসযুক্ত > শব্দকে সাধিত শব্দ বলে। বিভিন্ন রকমের সাধিত শব্দ রয়েছে।যেমন :
প্রত্যয় -সাধিত শব্দ : √ডুব + অন্ত = ডুবন্ত, √ খেল্ + অনা = খেলনা, বড় + আই = বড়াই।
উপসর্গ দ্বারা গঠিত শব্দ : প্র + বৃত্তি = প্রবৃত্তি, নি + বাস = নিবাস, অভি + মুখ = অভিমুখ।
সন্ধি গঠিত শব্দ : পরি + ঈক্ষা = পরীক্ষা, বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়, প্রতি + এক = প্ৰত্যেক ইত্যাদি।
সমাসযুক্ত শব্দ : জায়া ও পতি = দম্পতি, আশীতে বিষ যার = আশীবিষ, মনরূপ মাঝি = মনমাঝি ইত্যাদি।

অর্থ অনুসারে শব্দের শ্রেণীবিভাগ

অর্থ অনুসারে শব্দের শ্রেণীবিভাগ অর্থগতভাবে বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যেমন :
১। যৌগিক শব্দ
২। রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ
৩। যোগরূঢ় বা যোগরূঢ়ি শব্দ।

১. যৌগিক শব্দ

যে সকল প্রত্যয় গঠিত শব্দের অর্থ প্রকৃতি ও প্রত্যয়ের অর্থ অনুযায়ী হয়ে থাকে, সেগুলোকে যৌগিক শব্দ বলে। অন্যভাবে বললে বলা যায়, যে সকল শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও প্রচলিত বা ব্যবহারিক অর্থ অভিন্ন, সে সকল শব্দকে যৌগিক শব্দ বলে। যেমন— রূপবান শব্দটির ব্যুৎপত্তি হল রূপ + বান । ব্যুৎপত্তিগত অর্থ যার রূপ আছে, আবার প্রচলিত অর্থও যার রূপ আছে। সুতরাং এটি যৌগিক শব্দের উদাহরণ। যেমন :

পাগল + আমি = পাগলামি > অর্থ : পাগলের ভাব।
কৃ + তব্য = কর্তব্য > অর্থ : যা করা উচিত।
পঠ + অক = পাঠক > অর্থ : পাঠ করে যে।

২. রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ

প্রত্যয় অথবা উপসর্গ দ্বারা গঠিত যে সকল শব্দ মূল শব্দের অর্থের অনুগামী না হয়ে ভিন্ন অর্থ প্রকাশ তাকে তাদেরকে রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ বলে। অন্যভাবে যে সকল শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও প্রচলিত অর্থ সম্পূর্ণ ভিন্ন, রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ বলে।যেমন:
হস্ত + ইন = হস্তী
প্রকৃতি ও প্রত্যয়ের অর্থ ‘হস্ত আছে যার’ কিন্তু ‘হস্তী' শব্দ দ্বারা বিশেষ কোন পশু বোঝায়।
এরূপ—
বাঁশ + ই = বাঁশি
শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বাঁশের তৈরি সামগ্রী কিন্তু ব্যবহারিক অর্থ ‘বাদ্যযন্ত্র বিশেষ’।
এরূপ-
প্র + বীণ = প্রবীণ
সম + দেশ = সন্দেশ

৩. যোগরূঢ় বা যোগরূঢ়ি শব্দ

সমাস নিষ্পন্ন যে সকল শব্দ সমস্যমান পদগুলোর কোনটার অর্থ প্রকাশ না করে বিশেষ কোন অর্থ প্রকাশ করে, সেগুলোকে যোগরূঢ় শব্দ বলে। যেমন :
রাজার পুত্র = রাজপুত – ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ‘রাজার ছেলে'।
বিশেষ অর্থ-‘জাতি বিশেষ'।
জল ধারণ করে যে = জলধি—ব্যুৎপত্তিগত অর্থ-‘জল ধারণ করে এমন কলসি বা পাত্র'।
বিশেষ অর্থ –‘সমুদ্র'।
সুন্দর হৃদয় যার = সুহৃদ—ব্যুৎপত্তিগত অর্থ সুন্দর হৃদয়ের অধিকারী।
বিশেষ অর্থ—‘বন্ধু’।

নবীনতর পূর্বতন