সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্য-বাংলা ভাষারীতি

 সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্য

আমাদের আজকের টপিক বাংলা ভাষার রীতি। আমার মনে হয় এই প্রসঙ্গটি নিয়ে প্রশ্ন করলেই সবাই এক বাক্যে বলে দিবে সাধু ও চলিত। অর্থাৎ খুব কমন টপিক, তাই না? কিন্তু আমি এমন ও দেখেছি বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অনেক পরীক্ষার্থীই এই টপিকে ও ভুল করে বসেন। আপনারা বলতে পারেন এটা হেয়ালী ভাবে হয়ে থাকে। কিন্তু না এটা আসলে জানার অভাবের কারণেই হয়ে থাকে।আর তাই আজ আমরা সাধু ও চলিত কি এবং সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্য এ টু জেড জানার চেষ্টা করব। সেই সাথে বাংলা ভাষা সম্পর্কে ও যৎসামান্য জানব । তা না হলে বিষয়টা পুরোপুরি অনুধাবন এবং হৃদয়ঙ্গম করতে পারব না। চলুন তাহলে শুরু করা যাক আমাদের আজকের বিষয়টির আদ্যোপান্ত।

বাংলা ভাষা

মানুষ তার মনের ভাব অন্যের কাছে প্রকাশ করার জন্য কত কিছুই না করে, তাই না? কখনো অঙ্গভঙ্গি, কখনো ইশারা, ইঙ্গিত আবার কখনো বা কন্ঠধ্বনির সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনি বা ধ্বনির সমষ্টি। কন্ঠধ্বনি ছাড়া বাকি সবকিছু যেমন হাত,পা, মুখ এবং চোখ ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাহায্যে মানুষ ইঙ্গিত করে থাকে। কন্ঠধ্বনির সাহায্যে মানুষ যত বেশি পরিমাণ মনোভাব প্রকাশ করতে পারে, অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাহায্যে ততটা পারে না। কন্ঠধ্বনি বলতে মুখগহ্বর,কন্ঠ,নাক,ঠোট ইত্যাদির সাহায্যে উচ্চারিত বোধগম্য ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টিকে বোঝায়। এই ধ্বনির সাহায্যে ভাষার সৃষ্টি হয়। বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত অর্থবোধক ধ্বনির সাহায্যে মানুষের মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যমকে ভাষা বলে। আর তাই ভাষার সংজ্ঞায় আমরা বলতে পারি “মনের ভাব প্রকাশের জন্য, বাগ্যন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধধ্বনির দ্বারা নিষ্পন্ন কোন বিশেষ জনসমাজে ব্যবহৃত, স্বতন্ত্রভাবে অবস্থিত, তথা বাক্যে প্রযুক্ত, শব্দ  শব্দ প্রকরণ মনের ভাবকে সুন্দরভাবে প্রকাশের জন্য মানুষ অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টি উচ্চারণ করে। এই অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টিকে শব্দ বলে। আরও সহজ করে বলা যায়—এক বা একাধিক ধ্বনি বা বর্ণ মিলিত হয়ে যদি একটি অর্থ প্রকাশ করে, তবে তাকে শব্দ বলে। সমষ্টিকে ভাষা বলে। ভাষার মূল উপাদান ধ্বনি। তবে ভাষার মেীলিক উপাদান শব্দ  শব্দ প্রকরণ মনের ভাবকে সুন্দরভাবে প্রকাশের জন্য মানুষ অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টি উচ্চারণ করে। এই অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টিকে শব্দ বলে। আরও সহজ করে বলা যায়—এক বা একাধিক ধ্বনি বা বর্ণ মিলিত হয়ে যদি একটি অর্থ প্রকাশ করে, তবে তাকে শব্দ বলে। আর ভাষার প্রাণ হলো অর্থপূর্ণ বাক্য। বাক্য ভাষার মূল উপকরণ । কারণ একটি সম্পূর্ণ বাক্যই ভাষার প্রাণ । বাক্য ব্যতীত ভাষা প্রাণহীন। এখানে মনে রাখতে হবে মূল উপাদান এবং মৌলিক উপাদান । মেীলিক উপাদান শব্দ  শব্দ প্রকরণ মনের ভাবকে সুন্দরভাবে প্রকাশের জন্য মানুষ অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টি উচ্চারণ করে। এই অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টিকে শব্দ বলে। আরও সহজ করে বলা যায়—এক বা একাধিক ধ্বনি বা বর্ণ মিলিত হয়ে যদি একটি অর্থ প্রকাশ করে, তবে তাকে শব্দ বলে। কারণ শব্দেই প্রথম অর্থের সংশ্লিষ্টতা দেখা যায়। ভাষার প্রধান উদ্দেশ্য যেহেতু অর্থবাচকতা প্রকাশ করা,সেহেতু শব্দ  শব্দ প্রকরণ মনের ভাবকে সুন্দরভাবে প্রকাশের জন্য মানুষ অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টি উচ্চারণ করে। এই অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টিকে শব্দ বলে। আরও সহজ করে বলা যায়—এক বা একাধিক ধ্বনি বা বর্ণ মিলিত হয়ে যদি একটি অর্থ প্রকাশ করে, তবে তাকে শব্দ বলে। ভাষার মেীলিক উপাদান। প্রত্যেক ভাষারই ৪টি মেীলিক অংশ থাকে।যথা: ক.ধ্বনি খ. শব্দ  শব্দ প্রকরণ মনের ভাবকে সুন্দরভাবে প্রকাশের জন্য মানুষ অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টি উচ্চারণ করে। এই অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টিকে শব্দ বলে। আরও সহজ করে বলা যায়—এক বা একাধিক ধ্বনি বা বর্ণ মিলিত হয়ে যদি একটি অর্থ প্রকাশ করে, তবে তাকে শব্দ বলে। গ.অর্থ ঘ.বাক্য। দেশ,কাল ও পরিবেশভেদে ভাষার পার্থক্য ও পরিবর্তন ঘটে। ভাষা ও ব্যাকরণের মধ্যে ভাষা আগে সৃষ্টি হয়েছে।মূলত ভাষাকে শাসন করার জন্যই ব্যাকরণের সৃষ্টি। বাংলাদেশ ছাড়া ও পশ্চিমবঙ্গ,ত্রিপুরা,বিহার,উাড়ষ্যা ও আসামের কয়েকটি অঞ্চলের মানুষের ভাষাবাংলা ভাষা। বাংলা ভাষার মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ হল অর্থদ্যোতকতা,মানুষের কন্ঠনিঃসৃত ধ্বনি এবং জনসমাজে ব্যবহারের যোগ্যতা। বাক্য ভাষার মূল উপকরণ।কারণ একটি সম্পূর্ণ বাক্যই ভাষার প্রাণ।বাক্য ব্যতীত ভাষা প্রাণহীন। ভাষার গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট এথনোলগের ২০২০ সালের ২২তম সংস্করণের পরিসংখ্যান আমাদের জানাচ্ছে, পৃথিবীজুড়ে মোট বাংলাভাষীদের সংখ্যা প্রায় ২৬ কোটি ৫০ লাখের কিছু বেশি। মাতৃভাষা হিসেবে বিশ্ব-ভাষা তালিকায় বাংলার অবস্থান পঞ্চম এবং ব্যবহারীর সংখ্যা বিবেচনায় বাংলা ভাষা সারা বিশ্বের সপ্তম প্রধান ভাষা । তবে ভাষা গবেষকদের ধারণা এর পরিমাণ ২৮ কোটি হবে । পৃথিবীর প্রায় ৩ শতাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে ।

বাংলা ভাষারীতি- সাধু ও চলিত ভাষা

সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্য জানার আগে আমরা সাধু ও চলিত ভাষা কী তা ভাল ভাবে জানব।আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় বাংলা ভাষার মৌলিক রূপ কয়টি? তখন কি উত্তর দিবেন? হয়ত বলবেন সাধু ও চলিত রীতি।কিন্তু না বাংলা ভাষার মৌলিক রূপ হচ্ছে দুইটি। যথা: ১. মৌখিক বা কথ্য (চলিত ও আঞ্চলিক বা উপভাষা) ও ২. লৈখিক বা লেখ্য (সাধু ও চলিত)। বাংলা ভাষার মেীখিক রুপ আবার দুই ধরনের যথা চলিত ভাষা ও আঞ্চলিক বা উপভাষা। লৈখিক রুপ ও আবার দুই ধরনের যথা সাধু ও চলিত। সাধু ও চলিত হচ্ছে বাংলা ভাষার রীতি। সাধু ভাষা প্রাচীনকাল থেকেই সাহিত্যের ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে এটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের শুরু থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। সাধু ভাষা ছিল সাহিত্যিক ও কৃত্রিম ভাষা। সংস্কৃত ভাষা থেকে উৎপন্ন ভাষাকে সাধু ভাষা হিসেবে অভিহিত করা হয়।

১৮০০ সালে বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ সূচিত হয়। মূলত এ সময়ই সাধু ভাষার আবির্ভাব কাল । উনিশ শতকের শুরুর দিকে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজকে বাংলা গদ্যের বিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ও লেখক গোষ্ঠীর অবদান বাংলা গদ্যের বিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ এর অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাংলায় কর্মরত ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্রিটিশ অফিসারদের দেশীয় ভাষা শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে লর্ড ওয়েলেলি কর্তৃক ৪ মে, ১৮০০ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে বাংলা বিভাগ চালু হয় ২৪ নভেম্বর, ১৮০১ খ্রি.। বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন শ্রীরামপুর মিশনের পাদ্রি এবং বাইবেলের অনুবাদক বাংলায় অভিজ্ঞ উইলিয়াম কেরী। কেন্দ্র করে বাংলা গদ্য বাংলা গদ্যের বিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ও লেখক গোষ্ঠীর অবদান আঠারো শতকের শেষার্ধে ও উনিশ শতকের শুরুতে রাষ্ট্রিক, আর্থিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া সাহিত্যে দৃশ্যমান হয় এবং বাংলা সাহিত্যে নতুন রাগিণী ধারার সূচনা ঘটে। পাশ্চাত্য শিক্ষা, সভ্যতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রভৃতির সংস্পর্শে এসে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হল আধুনিক যুগে। এ যুগের প্রতিভূ হলো বাংলা গদ্য সাহিত্যের উদ্ভব ও বিকাশ। প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের বিষয় ছিল ধর্ম অথবা রাজবন্দনা আর আঙ্গিকে ছিল কেবলই কবিতা। কিন্তু আধুনিক যুগে বাংলা গদ্য সাহিত্যের উদ্ভব ও বিকাশের সাথে সাথে বাংলা সাহিত্যের নব নব শাখা বিস্তৃত হলো। চর্চা শুরু হয়। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাংলা গদ্যের বিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ও লেখক গোষ্ঠীর অবদান বাংলা গদ্যের বিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ এর অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাংলায় কর্মরত ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্রিটিশ অফিসারদের দেশীয় ভাষা শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে লর্ড ওয়েলেলি কর্তৃক ৪ মে, ১৮০০ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে বাংলা বিভাগ চালু হয় ২৪ নভেম্বর, ১৮০১ খ্রি.। বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন শ্রীরামপুর মিশনের পাদ্রি এবং বাইবেলের অনুবাদক বাংলায় অভিজ্ঞ উইলিয়াম কেরী। পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে উইলিয়াম কেরি উইলিয়াম কেরি উইলিয়াম কেরি ছিলেন মিশনারি ও বাংলায় গদ্যপাঠ্য পুস্তকের প্রবর্তক। তিনি আধুনিক মিশনসমূহের জনক নামে পরিচিত। তিনি ‘ব্যাপটিস্ট মিশনারি সোসাইটি'র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। বাংলা গদ্যের সূচনাকালীন অবদান, বাংলা লিপির সংস্কার এবং এদেশীয় কৃষ্টি, উদ্ভিদবিদ্যা ও প্রাণিবিদ্যা নিয়ে গবেষণার জন্য তিনি অমর হয়ে থাকবেন । তাঁর মূল পেশা ছিল পাদুকা নির্মাণ । উইলিয়াম কেরি ও তার সহকর্মীগণ গদ্যের বাংলা গদ্যের বিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ও লেখক গোষ্ঠীর অবদান আঠারো শতকের শেষার্ধে ও উনিশ শতকের শুরুতে রাষ্ট্রিক, আর্থিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া সাহিত্যে দৃশ্যমান হয় এবং বাংলা সাহিত্যে নতুন রাগিণী ধারার সূচনা ঘটে। পাশ্চাত্য শিক্ষা, সভ্যতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রভৃতির সংস্পর্শে এসে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হল আধুনিক যুগে। এ যুগের প্রতিভূ হলো বাংলা গদ্য সাহিত্যের উদ্ভব ও বিকাশ। প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের বিষয় ছিল ধর্ম অথবা রাজবন্দনা আর আঙ্গিকে ছিল কেবলই কবিতা। কিন্তু আধুনিক যুগে বাংলা গদ্য সাহিত্যের উদ্ভব ও বিকাশের সাথে সাথে বাংলা সাহিত্যের নব নব শাখা বিস্তৃত হলো। প্রয়োজন উপলব্ধি করেন এবং তাদের প্রচেষ্টায় গদ্যের বাংলা গদ্যের বিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ও লেখক গোষ্ঠীর অবদান আঠারো শতকের শেষার্ধে ও উনিশ শতকের শুরুতে রাষ্ট্রিক, আর্থিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া সাহিত্যে দৃশ্যমান হয় এবং বাংলা সাহিত্যে নতুন রাগিণী ধারার সূচনা ঘটে। পাশ্চাত্য শিক্ষা, সভ্যতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রভৃতির সংস্পর্শে এসে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হল আধুনিক যুগে। এ যুগের প্রতিভূ হলো বাংলা গদ্য সাহিত্যের উদ্ভব ও বিকাশ। প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের বিষয় ছিল ধর্ম অথবা রাজবন্দনা আর আঙ্গিকে ছিল কেবলই কবিতা। কিন্তু আধুনিক যুগে বাংলা গদ্য সাহিত্যের উদ্ভব ও বিকাশের সাথে সাথে বাংলা সাহিত্যের নব নব শাখা বিস্তৃত হলো। আবির্ভাব হয়। বাংলা গদ্যের বাংলা গদ্যের বিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ও লেখক গোষ্ঠীর অবদান আঠারো শতকের শেষার্ধে ও উনিশ শতকের শুরুতে রাষ্ট্রিক, আর্থিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া সাহিত্যে দৃশ্যমান হয় এবং বাংলা সাহিত্যে নতুন রাগিণী ধারার সূচনা ঘটে। পাশ্চাত্য শিক্ষা, সভ্যতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রভৃতির সংস্পর্শে এসে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হল আধুনিক যুগে। এ যুগের প্রতিভূ হলো বাংলা গদ্য সাহিত্যের উদ্ভব ও বিকাশ। প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের বিষয় ছিল ধর্ম অথবা রাজবন্দনা আর আঙ্গিকে ছিল কেবলই কবিতা। কিন্তু আধুনিক যুগে বাংলা গদ্য সাহিত্যের উদ্ভব ও বিকাশের সাথে সাথে বাংলা সাহিত্যের নব নব শাখা বিস্তৃত হলো। প্রথম যুগে সাধু রীতির ব্যাপক প্রচলন ছিল। রাজা রামমোহন রায় সমাজসংস্কারক, ধর্মসংস্কারক, চিন্তাবিদ, বহুভাষাবিদ পণ্ডিত ও বাংলা গদ্যের প্রস্তুতিকালীন লেখকদের অন্যতম রাজা রামমোহন রায়। সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন, জুরির বিচার, সম্পত্তিতে স্ত্রীলোকদের অধিকার, পাশ্চাত্য শিক্ষার সম্প্রসারণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে তিনি পথিকৃৎ। মূলত ধর্মসংস্কার ও সমাজসচেতনতার বশবর্তী হয়ে বাংলা গদ্য লিখেছেন । প্রথম সাধু ভাষার প্রয়োগ করেন। তিনি তাঁর "বেদান্ত গ্রন্থ" রচনাটিতে প্রথম সাধু ভাষা ব্যবহার করেছিলেন।

সাধু ভাষার সংজ্ঞা হিসেবে বলা যায় যে ভাষা রীতিতে ক্রিয়া ও সর্বনাম পদের পূর্ণরুপ ব্যবহার করা হয় তাকে সাধু ভাষা বলে। সাধারণত সাধু ভাষায় ক্রিয়া ও সর্বনাম পদগুলো দীর্ঘতর হয়। সহজে আমরা এই জিনিসটাকেই হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে থাকি সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্য নির্ণয় করার জন্য। যা মোটে ও কাম্য নয়। প্রাচীন ও মধ্যযুগের সাহিত্যিক নিদর্শনে সাধুভাষার প্রভাব ছিল স্পষ্ট। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বাংলা সাহিত্যে 'চলিত ভাষা'র প্রচলন শুরু হতে থাকে। তৎকালীন সময়ের কিছু গদ্যলেখক পণ্ডিতি সাহিত্যের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে এসে আপামর জনসাধারণের ‘কথ্য ভাষায় সাহিত্য রচনায় ব্রতী হন এবং সফল হন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন প্রমথ চৌধুরী বাংলা গদ্যে চলিত রীতির প্রবর্তক ও বিদ্রূপাত্মক প্রাবন্ধিক প্রমথ চৌধুরী। তীক্ষ্ণ মননশীলতা, বাকচাতুর্যের চমৎকারিত্ব এবং বুদ্ধির অসিচালনা ছিল তাঁর ভাষাগত বিশেষত্ব। তিনি ১৮৯৯ সালে রবীন্দ্রনাথের অগ্রজ বাংলা প্রথম সিভিলিয়ান সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেয়ে ইন্দিরা দেবীকে বিয়ে করেন । তিনি রবীন্দ্রনাথকে বাংলা গদ্যে চলিত রীতি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করেন । । তিনিই প্রথম চলিত ভাষায় সাহিত্য রচনা শুরু করেন এবং 'সবুজপত্র' (১৯১৪) সাহিত্য পত্রিকার মাধ্যমে চলিত রীতিকে সাহিত্যের ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেন। যার কারণে তাকে চলিত রীতির প্রবর্তক বলা হয়।সাধারণ মানুষের মুখের ভাষাকে চলিত ভাষা বলে। চলিত ভাষার আদর্শরূপ থেকে গৃহীত ভাষাকে বলা হয় প্রমিত ভাষা। চলিত ভাষার অন্যতম বৈশিষ্ট্য প্রমিত উচ্চারণ। কলকাতা অঞ্চলের মেীখিক ভাষাকে ভিত্তি করে চলিত ভাষা গড়ে উঠেছে। চলিত ভাষারীতির প্রবর্তনে প্রমথ চৌধুরীর বাংলা গদ্যে চলিত রীতির প্রবর্তক ও বিদ্রূপাত্মক প্রাবন্ধিক প্রমথ চৌধুরী। তীক্ষ্ণ মননশীলতা, বাকচাতুর্যের চমৎকারিত্ব এবং বুদ্ধির অসিচালনা ছিল তাঁর ভাষাগত বিশেষত্ব। তিনি ১৮৯৯ সালে রবীন্দ্রনাথের অগ্রজ বাংলা প্রথম সিভিলিয়ান সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেয়ে ইন্দিরা দেবীকে বিয়ে করেন । তিনি রবীন্দ্রনাথকে বাংলা গদ্যে চলিত রীতি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করেন । অবদান অনস্বীকার্য। আঞ্চলিক ভাষা কী? বিভিন্ন অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মুখের ভাষাকে আঞ্চলিক ভাষা বলে। আঞ্চলিক ভাষার অপর নাম উপভাষা। আক্ষরিক অর্থে উপভাষা বলতে ‘ভাষা'র চেয়ে একটু নিম্ন বা কিছুটা কম মর্যাদাসম্পন্ন ভাষাকে বোঝায়। পৃথিবীর সব ভাষারই উপভাষা আছে। বাংলা ভাষার উপভাষা মোট ৫টি। যথা:

ক. রাঢ়ি (পশ্চিম ও মধ্যবঙ্গ),
খ. ঝাড়খণ্ডি (দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গ, সিংভূম, মানভূম, পুরুলিয়া অঞ্চল)
গ. বরেন্দ্র (উত্তরবঙ্গ),
ঘ. বঙ্গালি (পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ববঙ্গ, বাংলাদেশ) ও
ঙ. কামরুপি ( উত্তর-পূর্ববঙ্গ,কোচবিহার,কাছাড়)

সাধু রীতি ও চলিত ভাষার পার্থক্য

সাধু ভাষা চলিত ভাষা
সাধু রীতি ব্যাকরণের নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে এবং এর পদবিন্যাস সুনিয়ন্ত্রিত চলিত রীতি পরিবর্তনশীল
এ রীতি গুরুগম্ভীর ও তৎসম শব্দবহুল এ রীতি তদ্ভব শব্দবহুল
সাধু রীতি নাটকের সংলাপ ও বক্তৃতায় অনুপযোগী অর্থাৎ বক্তৃতা ও নাটকের সংলাপের জন্য সাধু ভাষা উপযোগী নয়। এ রীতি নাটকের সংলাপ ও বক্তৃতায় উপযোগী
এ রীতিতে সর্বনাম ও ক্রিয়াপদ এক বিশেষ গঠন পদ্ধতি মেনে চলে এ রীতিতে সর্বনাম ও ক্রিয়াপদ পরিবর্তিত ও সহজতর রূপ লাভ করে
সর্বনাম, ক্রিয়া ও অনুসর্গের পূর্ণরূপ ব্যবহার করা হয় সর্বনাম, ক্রিয়া ও অনুসর্গের সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহার করা হয়
সাধু ভাষায় ধ্বন্যাত্নক শব্দের প্রাধান্য নেই চলিত ভাষায় ধ্বন্যাত্নক শব্দের প্রাধান্য আছে। যেমন-হনহন,ঝনঝন,গনগনে ইত্যাদি।
সাধু ও চলিত রীতিতে অভিন্নরুপে ব্যবহৃত হয় একমাত্র পদ অব্যয়। বাক্যে ব্যবহার করার সময় যে পদের কোনো পরিবর্তন হয় না তাকে অব্যয় পদ 'পদ' শব্দটির ব্যুৎপত্তি এরকম, √পদ্ + অ = পদ ।মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করে বাক্যের সাহায্যে। কয়েকটি শব্দ মিলে একটি বাক্য হয়। আবার এ বাক্যের প্রতিটি শব্দই একেকটি পদ। বিভক্তিযুক্ত শব্দকে পদ বলে। বাক্যে ব্যবহৃত প্রত্যেকটি শব্দ এক একটি পদ। বলে।


সাধু ও চলিত ভাষার বিভিন্ন পদের রূপভেদ

সাধু ভাষা চলিত ভাষা
বিশেষ্য পদ 'পদ' শব্দটির ব্যুৎপত্তি এরকম, √পদ্ + অ = পদ ।মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করে বাক্যের সাহায্যে। কয়েকটি শব্দ মিলে একটি বাক্য হয়। আবার এ বাক্যের প্রতিটি শব্দই একেকটি পদ। বিভক্তিযুক্ত শব্দকে পদ বলে। বাক্যে ব্যবহৃত প্রত্যেকটি শব্দ এক একটি পদ।
জুতা জুতো
জোসনা/জ্যোৎস্না জোছনা
তুলা তুলো
পূজা পূজো
মস্তক মাথা
সুতা সুতো
সর্প সাপ
হস্ত হাত
বিশেষণ পদ 'পদ' শব্দটির ব্যুৎপত্তি এরকম, √পদ্ + অ = পদ ।মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করে বাক্যের সাহায্যে। কয়েকটি শব্দ মিলে একটি বাক্য হয়। আবার এ বাক্যের প্রতিটি শব্দই একেকটি পদ। বিভক্তিযুক্ত শব্দকে পদ বলে। বাক্যে ব্যবহৃত প্রত্যেকটি শব্দ এক একটি পদ।
কিয়ৎক্ষণ কিছুক্ষণ
বন্য বুনো
রঙ্গিন রঙিন
সাতিশয় অত্যন্ত
শুষ্ক/শুকনা শুকনো
সর্বনাম পদ 'পদ' শব্দটির ব্যুৎপত্তি এরকম, √পদ্ + অ = পদ ।মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করে বাক্যের সাহায্যে। কয়েকটি শব্দ মিলে একটি বাক্য হয়। আবার এ বাক্যের প্রতিটি শব্দই একেকটি পদ। বিভক্তিযুক্ত শব্দকে পদ বলে। বাক্যে ব্যবহৃত প্রত্যেকটি শব্দ এক একটি পদ।
উহা ওটা
তাহাকে তাকে
তাঁহার তাঁর
তাঁহারা তাঁরা
অব্যয় (অনুসর্গ)
অপেক্ষা চেয়ে
পূর্বেই আগেই
সহিত সাথে
হইতে হতে
দ্বারা দিয়ে
নিমিত্ত জন্য/জন্যে
ব্যতীত ছাড়া
ক্রিয়া পদ 'পদ' শব্দটির ব্যুৎপত্তি এরকম, √পদ্ + অ = পদ ।মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করে বাক্যের সাহায্যে। কয়েকটি শব্দ মিলে একটি বাক্য হয়। আবার এ বাক্যের প্রতিটি শব্দই একেকটি পদ। বিভক্তিযুক্ত শব্দকে পদ বলে। বাক্যে ব্যবহৃত প্রত্যেকটি শব্দ এক একটি পদ।
আসিয়া এসে
করিল করল
করিয়া করে
খুলিয়া খুলে
দেন নাই দেন নি
হউক হোক
দেখিয়া দেখে
পড়িল পড়ল
পড়িয়াছেন পড়েছেন
ফুটিয়া ফুটে
রহিয়াছে রয়েছে
হইয়া হয়ে
লিখা লেখা


সাধু ও চলিত ভাষার বাক্যে প্রয়োগ

সাধু ভাষায় চলিত ভাষায়
যে কথা একবার জমিয়ে বলা গিয়াছে, তাহার পর তা ফেনাইয়া ব্যাখ্যা করা চলে না’ । যে কথা একবার জমে বলা গেছে, তার পর তা ফেনিয়ে ব্যাখ্যা করা চলে না ।
অতঃপর তাহারা চলিয়া গেল । তারপর তারা চলে গেল ।
এইরূপ সাদৃশ্য অনেক চক্ষে পড়িবে। এরকম সাদৃশ্য অনেক চোখে পড়বে।
সে আসিবে বলিয়া ভরসাও করিতেছি না। সে আসবে বলে ভরসাও করছি না।
নবীনতর পূর্বতন