উপসর্গ মনে রাখার সহজ কৌশল

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা হওয়া সত্ত্বে ও আমরা অনেকেই বাংলা ব্যাকরণে দুর্বল।আসলে বাংলা ব্যাকরণে কিছু টপিক আছে যা আমরা অনেকেই বুঝি না বা বুঝতে চেষ্টা ও করি না । এর মধ্যে অন্যতম একটি টপিক হচ্ছে উপসর্গ। আমরা এটি ভালভাবে পড়ি না বা পড়লে ও মনে রাখতে পারি না। তাই আজকের পাঠে আমরা উপসর্গ মনে রাখার সহজ কৌশল সহ উপসর্গের এ টু জেড আলোচনা করব।

উপসর্গ কী

ইংরেজি ‘Prefix’ শব্দকে বাংলায় ‘উপসর্গ’ বলে।‘উপসর্গ' শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ 'অবাঞ্ছিত বিষয়'। এর ব্যাকরণগত অর্থ হলো উপসৃষ্টি। সুতরাং উপসর্গের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা যায়, যে সকল অব্যয় বা অব্যয়জাত শব্দাংশ ধাতুর পূর্বে বসে নতুন শব্দ গঠন করে সেগুলোকে উপসর্গ বলে। যেমন: পরা + জিত = পরাজিত, পরা + শক্তি = পরাশক্তি।

উপসর্গের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা

বাংলা ভাষায় উপসর্গের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। উপসর্গ নতুন নতুন অর্থবোধক শব্দ গঠন ও শব্দের অর্থের পূর্ণতা সাধন করে। শুধু নতুন শব্দ গঠনই নয়, এরা ধাতু বা শব্দের পূর্বে বসে ধাতু বা শব্দের অর্থের সংকোচন, সম্প্রসারণ ও পরিবর্তন ঘটায়। উপসর্গের নিজস্ব কোন অর্থ নেই, কিন্তু শব্দ সৃষ্টি করে শব্দের বৈচিত্র্য আনয়ন করে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সংস্কৃত উপসর্গ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, “ সংস্কৃত ভাষায় কতগুলো টুকরো শব্দ আছে যেগুলোর স্বতন্ত্র কাজ নেই, তারা বাক্যের লাইন বদলিয়ে দেয়। রেলের রাস্তায় যেমন সিগন্যাল, ভিন্নদিকে ভিন্ন রঙের আলোয় তাদের ভিন্ন রকমের সংকেত, সংস্কৃত ব্যাকরণের উপসর্গগুলো শব্দের মাথায় চড়া সেই রকম সিগন্যাল। কোনটাতে আছে নিষেধ। কোনটা দেখায় এগোবার পথ, কোনটা বাইরের পথ, কোনটা নিচের দিকে, কোনটা উপরের দিকে, কোনটা চারদিকে, কোনটা ডাকে ফিরে আসতে। গত' শব্দে আ উপসর্গ জুড়ে দিলে হয় ‘আগত’, সেটা লক্ষ্য করায় কাছের দিক; ‘নির’ জুড়ে দিলে হয় ‘নির্গত’, দেখিয়ে দেয় বাইরের দিক; ‘অনু’ জুড়ে দিলে হয় ‘অনুগত’, দেখিয়ে দেয় পিছনের দিক; তেমনি ‘সংগত’, ‘দুর্গত’, ‘অপগত’, প্রভৃতি শব্দে নানা দিকে তর্জনী চালানো। উপসর্গ থাকে সামনে, প্রত্যয় থাকে পিছনে। তারা আছে একই শব্দের নানা অর্থ বানাবার কাজে।”

উপসর্গের প্রকারভেদ

বাংলা ভাষায় তিন প্রকার উপসর্গ আছে। যথা :
(১) তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গ
(২) খাঁটি বাংলা উপসর্গ ও
(৩) বিদেশি উপসর্গ।

তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গ

সংস্কৃত ভাষা থেকে গৃহীত উপসর্গগুলোকে তৎসম উপসর্গ বলে। এগুলো তৎসম শব্দের আগে বসে। এ উপসর্গের সংখ্যা মোট বিশটি। যথা : প্র, পরা, অপ, সম, নি, নির, অনু, অব, অধি, অতি, অপি, অভি, পরি, প্রতি, উপ, উৎ, দূর, বি, সু, আ।

তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গ মনে রাখার কৌশল

প্রিয় প্রভাস,
পরাজয়, অপমানের সম্মুখীন না হয়ে এগিয়ে যাও। নিজে অবহেলা অনুভব করো না। নির্ভয়ে (নির) দূর্গম (দূর) পথ এগোও। বিশুদ্ধ মনে সুচরিত্র উৎপন্ন হয়। অধিকার পরিপূর্ণ কর। প্রতিটি ভালো কাজ উপভোগ কর। অতি ভাল থেকো। জ আর নয়।
ইতি
অপি

এই চিঠির প্রত্যেকটি রঙ্গিন বর্ণই এক একটি তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গ।

খাঁটি বাংলা উপসর্গ

আর্যদের আগমনের পূর্বে এদেশবাসীর ভাষা থেকে যে সকল উপসর্গ এসেছে তাদেরকে দেশি বা খাঁটি বাংলা উপসর্গ বলে। খাঁটি বাংলা উপসর্গ মোট একুশটি। যথা : অ, অঘা, অজ, অনা, আ, আড়, আন, আর, ইতি, ঊন (ঊনা), কদ, কু, নি, পাতি, বি, ভর, রাম, স, সা, সু, হা।

খাঁটি বাংলা উপসর্গ মনে রাখার কৌশল

সুহা,
প্রথমেই দর নিবি। তুই তো জানিসই, তুই আমাদের এই অজপাড়াগাঁয়ের একমাত্র আশা আর ভরসা। আর শোন, কিছু মানুষের অনাচার, কুকথা আর ঐ আড়চোখে তাকানো কে কিন্ত মোটেও পাত্তা দিবি না। তোর জন্য আবরার ঊনত্রিশ টি পাতিলেবু সাথে কয়েকটি কদবেল পাঠিয়েছে। চেনা জায়গায় গিয়েছিস। আনমনে হয়ে থাকলে খাবি। ভালো লাগবে।
ইতি
অঘারাম

এই চিঠির প্রত্যেকটি রঙ্গিন বর্ণই এক একটি খাঁটি বাংলা উপসর্গ।

বিদেশি উপসর্গ

আরবি, ফারসি, ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু ইত্যাদি ভাষার বহুশব্দ দীর্ঘকাল ধরে বাংলা ভাষায় প্রচলিত আছে। এসব শব্দের কতগুলো খাঁটি উচ্চারণে, আবার কতগুলো বিকৃত উচ্চারণে বাংলায় ব্যবহৃত হয়। এরই সঙ্গে কিছু বিদেশি উপসর্গও বাংলায় চালু রয়েছে। এগুলো বহুদিন যাবৎ ব্যবহারের ফলে বাংলা ভাষার -সাথে একদম মিশে গেছে। বিদেশি উপসর্গ মনে রাখার কৌশল আমরা বিদেশি উপসর্গের প্রকারভেদের সাথে একটি একটি করে কৌশল দিয়েছি।

বাংলা শব্দ গঠনে উপসর্গের ভূমিকা

বাংলা শব্দ গঠনে উপসর্গের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। উপসর্গ এক শ্রেণীর অব্যয় হিসেবে হয় এবং ধাতু বা শব্দের পূর্বে বসে নতুন শব্দ গঠন ও শব্দের অর্থের পূর্ণতা সাধন করে। শুধু নতুন শব্দ সৃষ্টিই নয়, শব্দের অর্থের পরিবর্তন, সম্প্রসারণ, সংকোচন ঘটাতে উপসর্গ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উপসর্গ নিজে কোন অর্থ প্রকাশ নাও করতে পারে। কিন্তু অন্য শব্দের আগে বসে এরা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে। এভাবে উপসর্গ বাংলা শব্দ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।

উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে

উপসর্গ নতুন শব্দ গঠনের একটি বিশেষ প্রক্রিয়া। যেসব বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি ধাতু বা শব্দের পূর্বে বসে নতুন শব্দ গঠন করে, সেগুলোকে উপসর্গ বলে। উপসর্গ মূলত কতগুলো অব্যয়সূচক শব্দাংশ।
বাংলা ভাষায়— প্র, পরা, নির, সম, পরি, উপ, অপ, বি প্রভৃতি উপসর্গের নিজস্ব কোন অর্থ নেই; কিন্তু এগুলো নতুন শব্দ সৃষ্টি করে শব্দের বৈচিত্র্য বা পরিবর্তন ঘটাতে পারে। যেমন- উপ’ একটি উপসর্গ, ‘হার’ একটি মৌলিক শব্দ। যার অর্থ অলংকার বিশেষ। ‘হার’ এর পূর্বে 'উপ' উপসর্গ যুক্ত হয়ে ‘উপহার’ শব্দটি গঠিত হয়েছে। যা নতুন অর্থ আলোকিত করে। এভাবে একটি মৌলিক শব্দের পূর্বে বিভিন্ন উপসর্গ ব্যবহৃত হয়ে একাধিক নতুন অর্থের দ্যোতনা সৃষ্টি করতে সক্ষম। যেমন-

উপসর্গ +মূলশব্দ নতুন শব্দার্থ
আ + হার (অলংকার বিশেষ) আহার = খাওয়া
বি + হার (অলংকার বিশেষ) বিহার = ভ্রমণ করা
সম + হার (অলংকার বিশেষ) সংহার = হত্যা
প্র + হার (অলংকার বিশেষ) প্রহার = মারা

উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায় উপসর্গের নিজস্ব কোন অর্থ নেই কিন্তু অন্য শব্দের অর্থকে বদলে দিতে পারে, এমনকি অর্থের সংকোচন, সম্প্রসারণ করে। তাই, ওপরের বিশ্লেষণ প্রমাণ করে যে, “ উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে।”

উপসর্গ ও প্রত্যয়ের পার্থক্য

উপসর্গ ও প্রত্যয়ের কাজ নতুন নতুন শব্দ তৈরি করা। তা সত্ত্বেও উভয়ের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য বিদ্যমান।
(১) উপসর্গ ধাতু বা শব্দের পূর্বে বসে নতুন শব্দ গঠন করে এবং এগুলো একশ্রেণীর অব্যয় হিসেবে বিবেচিত।অপরদিকে প্রত্যয় ধাতু বা শব্দের শেষে যুক্ত হয় এবং এগুলো এক প্রকার বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি।
(২) উপসর্গ শুধু নতুন শব্দই গঠন করে না, শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটায়, কখনো অর্থের বিশিষ্টতা দান করে।অপরদিকে প্রত্যয় কখনো ধাতুর শেষে কখনো শব্দের শেষে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে।

১. তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গ

সংস্কৃত ভাষা থেকে গৃহীত উপসর্গগুলোকে তৎসম উপসর্গ বলে। এগুলো তৎসম শব্দের আগে বসে।
তৎসম উপসর্গ বিশটি : প্র, পরা, অপ, সম, নি, নির, অনু, অব, অথি, অতি, অশি, অভি, পরি, প্রতি, উপ, উৎ,দূর, বি, স, আ।

তৎসম উপসর্গের ব্যবহার

উপসর্গ যে অর্থে ব্যবহৃত উদাহরণ
প্র প্রকৃষ্ট/সম্যক প্রভাব, প্রচলন, প্রস্ফুটিত।
উৎকর্ষ অর্থে প্রকার, প্রকৃষ্ট, প্রজ্ঞা, প্রদর্শন, প্রবাদ।
খ্যাতি অর্থে প্রসিদ্ধ, প্রতাপ, প্রভাব, প্রকীর্তি, প্রখ্যাত।
আধিক্য অর্থে প্রগাঢ়, প্রচার, প্রবল, প্রসার, প্রকোপ।
সম্মুখ অর্থে প্রগতি, প্রণতি, প্রণাম।
গতি/ক্রিয়া অর্থে প্রবেশ, প্রস্থান, প্রকাশ, প্রচলন, প্রচার।
ধারা পরম্পরা বা অনুগামিত প্রপৌত্র, প্রশাখা, প্রশিষ্য, প্রজন্ম।
পরা আতিশয্য অর্থে পরাকাষ্ঠা, পরাক্রান্ত, পরায়ণ, পরাক্রম।
বিপরীত অর্থে পরাজয়, পরাভব, পরাধীন, পরান্মুখ।
অপ বিপরীত অর্থে অপমান, অপকার, অপচয়, অপবাদ।
অপকর্ষ অর্থে অপকর্ম, অপকীর্তি, অপচয়, অপচেষ্টা ।
নিকৃষ্ট অর্থে অপসংস্কৃতি, অপকর্ম, অপসৃষ্টি, অপযশ।
স্থানান্তর/ক্রিয়া অর্থে অপসারণ, অপহরণ, অপনোদন,অপসরণ।
উৎকৃষ্ট অর্থে অপরূপ।
বিকৃত অর্থে অপমৃত্যু, অপব্যাখ্যা, অপপাঠ, অপভাষা ।
সম সম্যকরূপে অর্থে সম্পূর্ণ, সমৃদ্ধ, সমাদর, সংগঠন, সংবাদ।
আধিক্য অর্থে সংক্রম, সন্তাপ, সমুজ্জ্বল, সমুৎসুক
মিলন অর্থে সম্বন্ধ, সম্মিলন, সম্মেলন, সংকলন।
সম্মুখে অর্থে সমাগত, সম্মুখ, সমক্ষ, সমুপস্থিত।
নি নিষেধ অর্থে নিবারণ, নিবৃত্তি।
নিশ্চয় অর্থে নির্ণয়।
নেই অর্থে নিখাদ, নিখুঁত, নিখোঁজ, নিচ্ছিদ্ৰ, নিটোল।
সম্যকভাবে অর্থে নিগূঢ়, নিথর, নিপুণ, নিবিষ্ট, নিবেদন।
বাজে অর্থে নিকৃষ্ট।
আতিশয্য অর্থে নিদাঘ, নিদারুণ, নিষ, নিতল, নিপীড়ন।
অভাব অর্থে নিষ্কলুষ, নিষ্কাম।
অব হীনতা অর্থে অবজ্ঞা, অবমাননা, অবহেলা।
সম্যকভাবে অর্থে অবরোধ, অবগাহন, অবগত, অবগুণ্ঠন।
উৎকর্ষ অর্থে অবদান।
নিশ্চয়তা অর্থে অবধান, অবধারণ।
নিম্নে/অধোমুখিতা অর্থে অবতরণ, অবরোহণ, অবতীর্ণ, অবনতি।
অল্পতা অর্থে অবশেষ, অবসান, অবেলা, অবশিষ্ট।
অনু পশ্চাৎ অর্থে অনুশোচনা, অনুগামী, অনুজ, অনুচর ।
সাদৃশ্য অর্থে অনুবাদ, অনুরূপ, অনুকার, অনুদান।
পৌনঃপুন্য অর্থে অনুক্ষণ, অনুদিন, অনুশীলন।
সঙ্গে অর্থে অনুকূল, অনুকম্পা।
নির্ অভাব/নেই অর্থে নিরক্ষর, নির্জীব, নিরহঙ্কার, নিরাশ্রয়।
অতিরিক্ত অর্থে নিরতিশয়।
নিশ্চয় অর্থে নির্ধারণ, নির্ণয়, নির্ভর, নির্দেশ, নিঃসংশয়।
বাহির/বহির্মুখিতা অর্থে নির্গত, নিঃসরণ, নির্বাসন
দূর্ মন্দ অর্থে দুর্ভাগ্য, দুর্দশা, দুর্নাম, দুরাত্মা, দুর্ঘটনা।
কষ্টসাধ্য অর্থে দুর্লভ, দুর্গম, দুর্নাম, দুরূহ, দুর্জয়, দুর্নিবার।
বি বিশেষরূপে অর্থে বিধৃত, বিশুদ্ধ, বিজ্ঞান, বিবস্ত্র, বিশুষ্ক।
অভাব অর্থে বিনিদ্র, বিবর্ণ, বিশৃঙ্খলা, বিফল, বিকর্ণ।
বিপরীত ভাব অর্থে বিকর্ষণ, বিকাল, বিক্রয়, বিদেশ, বিরাগ।
গতি অর্থে বিচরণ, বিক্ষেপ।
অপ্রকৃতস্থ অর্থে বিকার, বিপর্যয়।
সু উত্তম অর্থে সুকণ্ঠ, সুকৃতি, সুচরিত্র, সুপ্রিয়, সুনীল।
সহজ অর্থে সুগম, সুসাধ্য, সুলভ, সুপাচ্য, সুবোধ্য।
আতিশয্য অর্থে সুচতুর, সুকঠিন, সুধীর, সুনিপুণ, সুতীক্ষ্ণ।
উৎ ঊর্ধ্বমুখিতা অর্থে উদ্যম, উন্নতি, উৎক্ষিপ্ত, উদগ্রীব, উত্তোলন।
আতিশয্য অর্থে উচ্ছেদ, উত্তপ্ত, উৎফুল্ল, উৎসুক, উৎপীড়ন।
প্রাবল্য অর্থে উচ্ছ্বাস, উত্তপ্ত, উদগ্ন, উত্তেজনা, উন্মত্ত।
প্রস্তুতি/বিকাশ অর্থে উৎপাদন, উচ্চারণ, উত্তীর্ণ, উৎপন্ন।
অপকর্য উৎকোচ, উচ্ছৃঙ্খল, উৎকট, উন্ন, উচ্ছেদ।
অধি আধিপত্য অর্থে অধিকার, অধিপতি, অধিকর্তা, অধিনায়ক।
মধ্য বা আয়ত্তে অর্থে অধিকৃত, অধিগত, অধিগম্য, অধিবাসী।
অতিরিক্ত অর্থে অধিকর্ম, অধিবর্ষ, অধিহার।
উপরি অর্থে অধিরোহণ, অধিষ্ঠান, অধিত্যকা।
ব্যাপ্তি অর্থে অধিকার অধিবাস, অধিগতি।
পরি বিশেষরূপ অর্থে পরিপূর্ণ, পরিবর্তন, পরিত্যাগ, পরিচালনা।
শেষ অর্থে পরিশেষ, পরিশোধ, পরিসমাপ্তি।
সুন্দর অর্থে পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি, পরিমার্জিত, পরিষ্কার।
বিরুদ্ধ অর্থে পরিত্যাগ, পরিপন্থী, পরিহার।
সম্যকরূপে অর্থে পরিশ্রান্ত, পরীক্ষা, পরিমাণ।
চতুর্দিক অর্থে পরিক্রমণ, পরিমণ্ডল, পরিবেশ, পরিবার।
প্রতি সদৃশ অর্থে প্রতিমূর্তি, প্রতিধ্বনি, প্রতিচ্ছায়া, প্রতিকৃতি।
বিরোধ অর্থে প্রতিবাদ, প্রতিদ্বন্দ্বী, প্রতিকার, প্রতিপক্ষ।
সম্যক অর্থে প্রতীক্ষা, প্রতিষ্ঠা।
বিপরীত অর্থে প্রত্যুপকার, প্রতিদান।
পৌনঃপুন্য অর্থে প্রতিদিন, প্রতিমাস, প্রতিক্ষণ, প্রতিগ্রাম।
অনুরূপ কাজ অর্থে প্রতিঘাত, প্রতিদিন, প্রত্যুপকার।
উপ সামীপ্য অর্থে উপকূল, উপকণ্ঠ, উপনগর।
সদৃশ অর্থে উপদ্বীপ, উপবন।
মন্দ অর্থে উপদেবতা, উপপতি, উপপত্নী, উপজীবী।
সম্যক অর্থে উপকরণ, উপদেশ, উপবেশন, উপহার।
ক্ষুদ্র অর্থে উপগ্রহ, উপসাগর, উপনেতা, উপজাতি।
বিশেষ অর্থে উপনয়ন (পৈতা), উপভোগ।
অভি সম্যক অর্থে অভিব্যক্তি, অভিজ্ঞ, অভিভূত, অভিনিবেশ।
উৎকর্ষ অর্থে অভিজাত, অভিরাম।
বিশেষ অর্থে অভিধান, অভিনয়, অভিনেতা, অভিভাবক।
গমন অর্থে অভিযান, অভিসার, অভিকেন্দ্র, অভিবাসন।
সম্মুখ বা দিক অর্থে অভিমুখ, অভিবাদন, অভিনন্দন। অতিকায়।
অতি আতিশয্য অর্থে অতিকায়,অত্যাচার,অতিশয়।
অধিক বা অতিরিক্ত অর্থে অতিকায়, অতিচালাক, অতিবুদ্ধি।
স্বাভাবিকতার বাইরে 'অতিপ্রাকৃত, অতিলৌকিক।
পার হওয়া অর্থে অতিক্রম, অতিক্রান্ত।
অতিক্রম অর্থে অতিমানব, অতিপ্রাকৃত।
অপি ব্যাকরণের সূত্র অপিনিহিতি।
আরও অর্থে অপিচ।
পর্যন্ত অর্থে আকণ্ঠ, আমরণ, আসমুদ্র।
ঈষৎ অর্থে আরক্ত, আভাস।
বিপরীত অর্থে আদান, আগমন।

২. খাঁটি বাংলা উপসর্গ

আর্যদের আগমনের পূর্বে এদেশবাসীর ভাষা থেকে যে সকল উপসর্গ এসেছে তাদেরকে দেশি বা খাঁটি বাংলা উপসর্গ বলে। খাটি বাংলা উপসর্গ সাধারণত খাঁটি বাংলা শব্দের আগে যুক্ত হয়ে থাকে। খাঁটি বাংলা উপসর্গ একুশটি: অ, অঘা, অজ, অনা, আ, আড়, আন, আব, ইতি, উন (ঊনা), কদ, কু, নি, পাতি,বি, ভর, রাম, স, সা, সু, হা।

বাংলা উপসর্গের ব্যবহার

উপসর্গ যে অর্থে ব্যবহৃত উদাহরণ
নিন্দিত অর্থে অকাজ, অকেজো, অপয়া, অকাট, অকাল, অগোছালো।
না অর্থে অচিন, অচেনা, অজানা, অথৈ, অখুশি, অমিল।
ক্রমাগত অর্থে অঝোর, অঝোরে, অঘোরে।
অঘা বোকা অর্থে অঘারাম, অঘাচণ্ডী।
অজ নিতান্ত (মন্দ) অর্থে অজ পাড়াগাঁ, অজমূর্খ, অজপুকুর।
অনা অভাব অর্থে অনাবৃষ্টি, অনাদর, অনাদায়।
ছাড়া অর্থে অনাছিষ্টি, অনাচার, অনাসৃষ্টি।
অশুভ অর্থে অনামুখো।
অভাব বা না অর্থে আধোয়া,আলুনি, আচালা, আছাকা, আছাঁটা, আঢাকা।
বাজে বা নিকৃষ্ট অর্থে আকাঠা, আগাছা, আকথা, আকাম, আকাল, আঘাটা।
আড় বক্র অর্থে আড়চোখ, আড়নয়নে।
আধা, প্রায় অর্থে আড়ক্ষ্যাপা, আড়মোড়া, আড়পাগলা।
বিশিষ্ট অর্থে আড়কোলা, আড়গড়া (আস্তাবল), আড়কাঠি।
আন না অর্থে আনকোরা।
বিক্ষিপ্ত অর্থে আনচান, আনমনা।
আব অস্পষ্টতা অর্থে আবছায়া, আবডাল।
ইতি এ বা এর অর্থে ইতিকর্তব্য, ইতিপূর্বে।
পুরান অর্থে ইতিকথা, ইতিহাস।
ঊন কম অর্থে ঊনপাঁজুরে, ঊনিশ (< ঊনবিংশ), ঊনবুকো, ঊনবর্ষা।
কদ্ নিন্দিত অর্থে কদবেল, কদর্য, কদাকার।
কু কুৎসিৎ/অপকর্ষ অর্থে কুঅভ্যাস, কুকথা, কুকাজ, কুপথ্য, কুকাম ।
নি নাই/নেতি অর্থে নিখুঁত, নিখোঁজ, নিলাজ, নিৰ্ভাঁজ, নিরেট, নিদয়, নিপাট।
পাতি/পাত ক্ষুদ্র অর্থে পাতিহাঁস, পাতিশিয়াল, পাতিলেবু, পাতকুয়ো, পাতিকাক।
বি ভিন্নতা/নাই বা নিন্দনীয় অর্থে বিভুঁই, বিফল, বিপথ, বিকল, বিকাল, বিজন্মা (বেজন্মা)।
ভর পূর্ণতা অর্থে ভরপেট, ভরসাঁজ, ভরপুর, ভরদুপুর, ভরসন্ধ্যে, ভরযৌবন।
রাম বড় বা উৎকৃষ্ট অর্থে রামছাগল, রামশিঙ্গা, রামবোকা, রামদা।
সঙ্গে অর্থে সলাজ, সরব, সঠিক, সজোর, সপাট, সজোরে, সস্ত্রীক।
সা উৎকৃষ্ট অর্থে সাজিরা, সাজোয়ান।
সু উত্তম অর্থে সুনজর, সুখবর, সুনাম, সুদিন, সুডৌল।
হা অভাব অর্থে হাপিত্যেশ, হাভাতে, হাঘরে, হাকপাল, হাহুতাশ।
চারটি উপসর্গ যথা আ,সু,বি,নি । যা বাংলা ও তৎসম উভয় উপসর্গে পাওয়া যায় ।

৩. বিদেশি উপসর্গ

আরবি, ফারসি, ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু ইত্যাদি ভাষার বহুশব্দ দীর্ঘকাল ধরে বাংলা ভাষায় প্রচলিত আছে। এসব শব্দের কতগুলো খাঁটি উচ্চারণে, আবার কতগুলো বিকৃত উচ্চারণে বাংলায় ব্যবহৃত হয়। এরই সঙ্গে কিছু বিদেশি উপসর্গও বাংলায় চালু রয়েছে। এগুলো বহুদিন যাবৎ ব্যবহারের ফলে বাংলা ভাষার সাথে একদম মিশে গেছে।

আরবি উপসর্গ

উপসর্গ যে অর্থে ব্যবহৃত উদাহরণ
আম্ সাধারণ অর্থে আমদরবার, আমমোক্তার।
খাস্ বিশেষ অর্থে খাসমহল, খাসদখল, খাসকামরা, খাসদরবার।
লা না অর্থে লাজওয়াব, লাখেরাজ, লাওয়ারিশ, লাপাত্তা।
গর্ অভাব অর্থে গরমিল, গরহাজির, গররাজি।

আরবি উপসর্গ মনে রাখার কৌশল

আমদরবার এবং খাসমহল এই দুই জায়গাতেই মন্ত্রী গরমিল করে লাপাত্তা।

ফারসি উপসর্গ

উপসর্গ যে অর্থে ব্যবহৃত উদাহরণ
কার্ কাজ অর্থে কারখানা, কারসাজি, কারচুপি, কারবার ।
দর্ মধ্যস্থ,অধীন অর্থে দরপত্তনি, দরপাট্টা, দরখাস্ত, দরদালান।
না না অর্থে নাচার, নারাজ, নামঞ্জুর, নাখোশ, নালায়েক।
নিম্ আধা অর্থে নিমরাজি, নিমমোল্লা, নিমখুন।
ফি প্রতি অর্থে ফি রোজ, ফি হস্তা, ফি বছর, ফি মাস।
বদ্ মন্দ অর্থে বদমেজাজ, বদরাগী, বজ্জাত, বদহাল ।
বে না অর্থে বেআদব, বেআক্কেল, বেকসুর, বেকায়দা ।
বর্ বাইরে,মধ্যে অর্থে বরখাস্ত, বরদাস্ত, বরখেলাপ, বরবাদ।
সহিত অর্থে বমাল, বনাম, বকলম।
কম্ স্বল্প অর্থে কমজোর, কমবখ্ ত্, কমপোখ্ ত।

ফারসি উপসর্গ মনে রাখার কৌশল

কারখানা তে গিয়ে কিছুর দরদাম না করাই ভালো।
নিম্ ফিরোজার বান্ধবী।
বদস্বভাব আর বেয়াদবি দুটোই তার মধ্যে আছে।
মিলির বর বোকা কম।

ইংরেজি উপসর্গ

উপসর্গ যে অর্থে ব্যবহৃত উদাহরণ
ফুল পূর্ণ অর্থে ফুলহাতা, ফুলশার্ট, ফুলমোজা, ফুলপ্যান্ট।
হাফ আধা হাফহাতা, হাফটিকিট, হাফফুল, হাফনেতা।
হেড প্রধান হেডমাস্টার, হেড অফিস, হেড পণ্ডিত।
সাব অধীন সাব অফিস, সাবজজ, সাব ইন্সপেক্টর।

ইংরেজি উপসর্গ মনে রাখার কৌশল

ফুল -বাবু হাফ -টিকেট কেটে ট্রেনে করে হেড- অফিস এ সাব- ইনস্পেকটর এর সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন।

হিন্দি উপসর্গ

উপসর্গ যে অর্থে ব্যবহৃত উদাহরণ
হর প্রত্যেক বা বিভিন্ন অর্থে হরেক, হররোজ, হরকিসিম, হরহামেশা।

বাক্যে উপসর্গের ব্যবহার

তৎসম : ১০টি

প্র- প্রচণ্ড→ আমার প্রচন্ড রাগ হয়েছে।
পরা - পরাজয়→ পরাজয়ে ডরে না বীর।
অপ – অপরূপ → ধরণী বসন্তে অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়।
সম - সংসার → সংসার সাগরে দুঃখের অন্ত নেই।
নি – নিবৃত্ত→ সে তার মনোবাসনা নিবৃত্ত করতে পারেনি।
অব – অবহেলা→ পাঠে অবহেলা অনুচিত।
অনু – অনুতাপ→ অনুতাপের অনলে দগ্ধ হলো মন।
নির – নির্দোষ→ নির্দোষ লোকটিকে অপমান করা হলো।
দুর – দুর্গম → 'দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার।'
বি - বিজন→ শ্বাপদ-সংকুল বিজন বন ভয়ংকর।

খাঁটি বাংলা : ১০টি

অ- অবেলা→ অবেলায় তুমি কোথায় যাচ্ছ?
অঘা-অঘাচণ্ডী→ তোমার মতো অঘাচন্ডী আর হয় না।
অজ-অজপাড়াগী→ এই অজপাড়াগায় এসে বিপদে পড়েছি।
অনা-অনাছিষ্টি→ তোমার যত অনাছিষ্টি কাণ্ড।
আ-আকাঁড়া→ ‘ভিক্ষার চাল কাঁড়া আর আকাঁড়া।
কু-কুকথা→ কুলোক-কুকথা বলবেই।
নি-নিলাজ→ মেয়েটি বড্ড নিলাজ।
বি-বিপথ→ বিপথে যেও না।
ভর-ভরদুপুর→ ভরদুপুরে চাষী জমিতে লাঙ্গল দেয়।
রাম-রামদা→ রামদা দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়েছে।

বিদেশী উপসর্গ : ১০টি

আম-আমদরবার→ বাদশাহর আমদরবার লোকে লোকারণ্য।
কম – কমজোর → তোমার মতো কমজোর লোক দিয়ে এমন শক্ত কাজ হবে না।
খাস – খাস-চাকর→ আবদুল তাদের বাড়ির খাস-চাকর।
গর- গরমিল → হিসেবে গরমিল হয়ে গেল।
না – নাছোড় → তার মতো নাছোড়বান্দা আর হয় না।
নিম – নিমরাজি → মেয়েটি এ বিয়েতে নিমরাজি।
ফি – ফি-বছর→ ফি বছরই এ দেশে বন্যা হয়।
ব – বকলম → তার মতো বকলম লোক দিয়ে এ কাজ হবে না।
বদ – বদরাগী→ মনির অত্যন্ত বদরাগী।
বর – বরখেলাপ → কখনো কথার বরখেলাপ করো না।

নবীনতর পূর্বতন