ক্রিয়ার কাল

Tense is the soul of English Grammar. Tense কে ইংরেজি গ্রামারের প্রাণ বলা হয়। তেমনি বাংলায় ও ক্রিয়ার কাল একই ভূমিকা পালন করে । ইংরেজি বাক্যের ধর্ম হচ্ছে কর্তা,ক্রিয়া, কর্ম কিন্তু বাংলা বাক্যের ধর্ম হচ্ছে কর্তা,কর্ম,ক্রিয়া। তবে Tense এবং ক্রিয়ার কাল উভয়ই কাজ সংঘটিত হওয়ার সময়কেই নির্দেশ করে। আসলে ইংরেজি Tense নিয়ে আমরা যতটুকু ভাবি অথবা পড়াশোনা করি বাংলা ক্রিয়া নিয়ে আমরা এর ছিটেফোটা ও ভাবি না বা পড়াশুনা করি না। এর মূল কারণ বাংলা আমাদের মাতৃভাষা হওয়ার কারণে ভাষার প্রয়োগে ক্রিয়ার কাল শিখে ব্যবহার করতে হয় না। তবে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় টিকে থাকতে হলে ক্রিয়ার কাল ও পড়া উচিত। নতুবা অনেক সময় আমাদের ভুল এড়ানো সম্ভব হয় না। চলুন ক্রিয়ার কাল সম্পর্কে আজ জেনে আসি ।

কাল কাকে বলে?

ক্রিয়া সংঘটনের সময়কে কাল বলে। চিরন্তন সত্যের ক্ষেত্রে পরোক্ষ উক্তির ক্রিয়ার কাল অপরিবর্তিত থাকে। যেমন:
১. আমরা বই পড়ছি। ‘পড়া' ক্রিয়াটি দ্বারা বর্তমানে সংঘটিত হচ্ছে বোঝাচ্ছে।
২. কাল তুমি শহরে গিয়েছিলে। ‘যাওয়া' ক্রিয়াটি পূর্বে অর্থাৎ‍ অতীতে সম্পন্ন হয়েছে।
৩.আগামীকাল স্কুল বন্ধ থাকবে। ‘বন্ধ থাকা' কাজটি পরে বা ভবিষ্যতে সম্পন্ন হবে। সুতরাং ক্রিয়া বর্তমানে, অতীতে বা ভবিষ্যতে সম্পন্ন হওয়ার সময় নির্দেশই ক্রিয়ার কাল।

ক্রিয়ার কাল কত প্রকার?

ক্রিয়ার কাল তিন প্রকার। যথা: ১. বর্তমান কাল, ২. অতীত কাল, ৩. ভবিষ্যৎ কাল। নিম্নে বিস্তারিত আলোচিত হলো।

১. বর্তমান কাল

যে ক্রিয়া বর্তমানে সাধারণভাবে ঘটে, তার কালকে বর্তমান কাল বলে। যেমন- আমি ভাত খাই । বর্তমান কাল আবার তিন ভাগে বিভক্ত। যথা:

ক. সাধারণ বা নিত্যবৃত্ত বর্তমান

স্বাভাবিক বা অভ্যস্ততা বোঝালে সাধারণ বর্তমান কালের ক্রিয়াকে সাধারণ বা নিত্যবৃত্ত বর্তমান কাল বলে। যেমন-
স্বাভাবিকতা : সন্ধ্যায় সূর্য অস্ত যায়।
অভ্যস্ততা : আমি রোজ সকালে হাঁটতে যাই।

নিত্যবৃত্ত বর্তমান কালের বিশিষ্ট প্রয়োগ

১. স্থায়ী সত্য প্রকাশে : চার আর তিনে সাত হয়।
২. ঐতিহাসিক বর্তমান : বাবরের মৃত্যুর পর হুমায়ুন দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করেন।
৩. কাব্যের ভণিতায় : মহাভারতের কথা অমৃতের সমান কাশীরাম দাস ভনে শুনে পুণ্যবান।
৪. অনিশ্চয়তা প্রকাশে : কে জানে দেশে আবার সুদিন আসবে কি না।
৫. ‘যদি', ‘যখন’, ‘যেন' প্রভৃতি শব্দের প্রয়োগে অতীত ও ভবিষ্যৎ কাল জ্ঞাপনের জন্য সাধারণ বর্তমান কালের ব্যবহার হয়। যেমন: বৃষ্টি যদি আসে, আমরা বাড়ি চলে যাব। সকলেই যেন সভায় হাজির থাকে। বিপদ যখন আসে, তখন এমনি করেই আসে।

সাধারণ বর্তমান কালের বিশিষ্ট প্রয়োগ

১. অনুমতি প্রার্থনায় (ভবিষ্যৎ কালে অর্থে): এখন তবে আসি।
২. প্রাচীন লেখকের উদ্ধৃতি দিতে (অতীত কালের অর্থে): চণ্ডীদাস বলেন, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই ।
৩. বর্ণনীয় বিষয় প্রত্যক্ষীভূত করতে(অতীতের স্থলে): আমি দেখেছি, বাচ্চাটি রোজ রাতে কাঁদে ।
৪. ‘নেই', 'নাই' বা ‘নি' শব্দযোগে অতীত কালের ক্রিয়ায়: তিনি গতকাল হাটে যাননি।

খ. ঘটমান বর্তমান

যে কাজ শুরু হয়েছে, কিন্তু শেষ হয়নি তাকে ঘটমান বর্তমান কাল বলে। যেমন- নাজনীন বই লিখছে। সাদিয়া ইসলাম রিয়া বই পড়ছে ।

ঘটমান বর্তমান কালের বিশিষ্ট প্রয়োগ

১. বক্তার প্রত্যক্ষ উক্তিতে ঘটমান বর্তমান কাল ব্যবহৃত হয়। যথা: “শত্রুর অত্যাচারে দেশ আজ বিপন্ন, ধন-সম্পদ লুণ্ঠিত হচ্ছে, দিকে দিকে আগুন জ্বলছে।” ২. ভবিষ্যৎ‍ সম্ভাবনা অর্থে: চিন্তা করো না, কালই আসছি।

গ. পুরাঘটিত বর্তমান কাল

ক্রিয়া পূর্বে শেষ হলেও তার ফল এখনও বর্তমান থাকলে পুরাঘটিত বর্তমান কাল ব্যবহৃত হয়। যেমন- এ বার আমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। এতক্ষণ আমি অঙ্ক করেছি।

২. অতীত কাল

যে ক্রিয়া পূর্বেই ঘটে গেছে, তাই অতীত কাল। অতীত কাল চার ভাগে বিভক্ত। যথা:

ক. সাধারণ অতীত

বর্তমান কালের আগেই যে ক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে, তার সংঘটন কালই সাধারণ অতীত কাল। যেমন- প্রদীপ নিভে গেল। শিকারি পাখিটিকে গুলি করল।

সাধারণ অতীতের বিশিষ্ট ব্যবহার

১. পুরাঘটিত বর্তমান স্থলে: 'এক্ষণে জানিলাম, কুসুমে কীট আছে।' ২. বিশেষ ইচ্ছা অর্থে বর্তমান কালের পরিবর্তে: তোমরা যা খুশি কর, আমি বিদায় হলাম।

খ. নিত্যবৃত্ত অতীত

অতীত কালে যে ক্রিয়া সাধারনত অভ্যস্ততা অর্থে ব্যবহৃত হয়, তাকে নিত্যবৃত্ত অতীত কাল বলে। যেমন- আমরা তখন রোজ সকালে নদীতীরে ভ্রমণ করতাম।

নিত্যবৃত্ত অতীত কালের বিশিষ্ট প্রয়োগ

কামনা প্ৰকাশে : আজ যদি সুমন আসত, কেমন মজা হত।
অসম্ভব কল্পনায় : ‘সাতাশ হত যদি একশ সাতাশ।
সম্ভাবনা প্রকাশে : তুমি যদি যেতে, তবে ভালই হত।

গ. ঘটমান অতীত কাল

অতীত কালে যে কাজ চলছিল এবং যে সময়ের কথা বলা হয়েছে, তখনো কাজতি সমাপ্ত হয়নি, ক্রিয়া সংঘটনের এরূপ ভাব বোঝালে ক্রিয়ার ঘটমান অতীত কাল হয়। যেমন- কাল সন্ধ্যায় বৃষ্টি পড়ছিল। আমরা তখন বই পড়ছিলাম। বাবা আমাদের পড়াশুনা দেখাচ্ছিলেন।

ঘ. পুরাঘটিত অতীত কাল

যে ক্রিয়া অতীতে বহু পূর্বেই সংঘটিত হয়ে গিয়েছে এবং যার পরে আরো কিছু ঘটনা ঘটে গেছে, তার কালকে পুরাঘটিত অতীত কাল বলে। যেমন- সেবার তাকে সুস্থই দেখেছিলাম। কাজটি কি তুমি করেছিলে?

পুরাঘটিত অতীত কালের বিশিষ্ট প্রয়োগ

১. অতীতে সংঘটিত ঘটনার নিশ্চিত বর্ণনায়: পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে এক লক্ষ মারাঠা সৈন্য মারা গিয়েছিল। আমি সমিতিতে সে দিন পাঁচ টাকা নগদ দিয়েছিলাম।
২. অতীতে সংঘটিত ক্রিয়ার পরম্পরা বোঝাতে শেষ ক্রিয়াপদে পুরাঘটিত অতীত কালের প্রয়োগ হয়: বৃষ্টি শেষ হবার পূর্বেই আমরা বাড়ি পৌঁছেছিলাম।

৩. ভবিষ্যৎ কাল

যে কাজ ভবিষ্যতে ঘটবে, তার কালকে ভবিষ্যৎ কাল বলে। যেমন- আমি ভাত খাবো। ভবিষ্যৎ কাল আবার তিন ভাগে বিভক্ত। যথা:

ক. সাধারণ ভবিষ্যৎ কাল

যে ক্রিয়া পরে বা অনাগত কালে সংঘটিত হবে, তার কালকে সাধারণ ভবিষ্যৎ কাল বলে। যেমন- শীঘ্রই বৃষ্টি আসবে। আমরা মাঠে খেলতে যাব।

সাধারণ ভবিষ্যৎ কালের বিশিষ্ট প্রয়োগ

১. আক্ষেপ প্রকাশে অতীতের স্থলে ভবিষ্যৎ কাল ব্যবহার হয়। যেমন: কে জানত, আমার ভাগ্য এমন হবে?
২. অতীত কালের ঘটনা সম্পর্কিত যে ক্রিয়াপদে সন্দেহের ভাব বর্তমান থাকে, তার বর্ণনায় সাধারণ ভবিষ্যৎ কালের ব্যবহার হয়। যেমন: ভাবলাম, তিনি এখন বাড়ি গিয়ে থাকবেন। তোমরা হয়ত ‘বিশ্বনবী' পড়ে থাকবে।

খ. ঘটমান ভবিষ্যৎ কাল

যে কাজ ভবিষ্যৎ কালে চলতে থাকবে তার কালকে ঘটমান ভবিষ্যৎ কাল বলে। যেমন- আমরা ফুটবল খেলতে থাকব।

গ. পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ কাল

যে ক্রিয়া সম্ভবত ঘটে গিয়েছে, সাধারণ ভবিষ্যৎ কালবোধক শব্দ ব্যবহার করে তা বোঝালে পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ কাল হয়। যেমন- আমরা সেখানে গিয়ে থাকব।
পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ কালের অর্থ প্রকাশের জন্য মূল ধাতুর সঙ্গে অসমাপিকা ক্রিয়াবিভক্তি- ইয়া / -এ যোগ করে এবং যাক্ ও গম্ ধাতুর সঙ্গে সাধারণ ভবিষ্যতের ক্রিয়াবিভক্তি যুক্ত করে যৌগিক ক্রিয়াপদ তৈরি হয়। যথা: গিয়ে থাকব / যাইয়া থাকব ।

আপনার জন্য আরো: ক্রিয়ার ভাব

নবীনতর পূর্বতন