সত্যিকার অর্থে বাংলা ভাষার বয়স হাজার বছরের অধিক হলে ও বাংলা বানানের ইতিহাস এখনো দুইশ বছর পেরোয় নি।উনিশ শতকের পূর্বে বাংলা বানানের নিয়ম বলতে তেমন কিছুই ছিল না।উনিশ শতকের শুরুর দিকে যখন সাহিত্যের আধুনিক যুগের সূত্রপাত ঘটে এবং গদ্যের সূচনা হয়,তখন থেকেই বাংলা বানানের একটি নিয়ম নির্ধারণ করা হয়।এই বানানের নিয়ম সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম মেনে রচনা করা হয়েছিল।পরবর্তীতে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৩৬ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে বাংলা বানানের নিয়ম প্রবর্তিত হলে ও বাংলা বানানের সমতা প্রতিষ্ঠিত হয় নি।১৯৮৮ সালে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বাংলা বানানের নিয়মের একটি খসড়া প্রস্তুত করে।বিশ্বভারতী,কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়,জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের অনুসৃত বাংলা বানানের নিয়মের আলোকে ১৯৯২ সালে বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম প্রণয়ন করে।বাংলা বানানের প্রধান নিয়মগুলো এখানে আলোচনা করা হল।
![]() |
বাংলা বানানের নিয়ম |
৯. বিশেষণবাচক আলি প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ই-কার হবে। যেমন— সোনালি, রুপালি, বর্ণালি, হেঁয়ালি, খেয়ালি, মিতালি ইত্যাদি।
১০. জীব, -জীবী, জীবিত, জীবিকা ব্যবহার। যেমন— সজীব, রাজীব, নির্জীব, চাকরিজীবী, পেশাজীবী, জীবিত, জীবিকা।
১১. অদ্ভুত, ভুতুড়ে বানানে উ-কার হবে। এ ছাড়া সকল ভূতে ঊ-কার হবে। যেমন— ভূত, ভস্মীভূত, বহির্ভূত, ভূতপূর্ব ইত্যাদি।
১২. বিদেশি শব্দে ই-কার ব্যবহার হবে। যেমন— আইসক্রিম, স্টিমার, জানুয়ারি, ফ্রেরুয়ারি, ডিগ্রি, চিফ, শিট, শিপ, নমিনি, কিডনি, ফ্রি, ফি, ফিস, স্কিন, স্ক্রিন, স্কলারশিপ, পার্টনারশিপ, ফ্রেন্ডশিপ, স্টেশনারি, নোটারি, লটারি, সেক্রেটারি, টেরিটরি, ক্যাটাগরি, ট্রেজারি, ব্রিজ, প্রাইমারি, মার্কশিট, গ্রেডশিট ইত্যাদি।
১৩. সমাসবদ্ধ পদ ও বহুবচন রূপী শব্দগুলোর মাঝে ফাঁক রাখা যাবে না। যেমন—
চিঠিপত্র, আবেদনপত্র, ছাড়পত্র (পত্র), বিপদগ্রস্ত, হতাশাগ্রস্ত (গ্রস্ত), গ্রামগুলি/গ্রামগুলো (গুলি/গুলো), রচনামূলক (মূলক), সেবাসমূহ (সমূহ), যত্নসহ, পরিমাপসহ (সহ), ত্রুটিজনিত, (জনিত), আশঙ্কাজনক, বিপজ্জনক (জনক), অনুগ্রহপূর্বক, উল্লেখপূর্বক (পূর্বক), প্রতিষ্ঠানভুক্ত, এমপিওভুক্ত, এমপিওভুক্তি (ভুক্ত/ভুক্তি), গ্রামভিত্তিক, এলাকাভিত্তিক, রোলভিত্তিক (ভিত্তিক), অন্তর্ভুক্তকারণ, এমপিওভুক্তকরণ, প্রতিবর্ণীকরণ (করণ), আমদানিকারক, রফতানিকারক (কারক), কষ্টদায়ক, আরামদায়ক (দায়ক), স্ত্রীবাচক (বাচক), দেশবাসী, গ্রামবাসী, এলাকাবাসী (বাসী), সুন্দরভাবে, ভালোভাবে (ভাবে), চাকরিজীবী, শ্রমজীবী (জীবী), সদস্যগণ (গণ), সহকারী, আবেদনকারী, ছিনতাইকারী (কারী), সন্ধ্যাকালীন, শীতকালীন (কালীন), জ্ঞানহীন (হীন), দিনব্যাপী, মাসব্যাপী, বছরব্যাপী (ব্যাপী) ইত্যাদি। এ ছাড়া যথাবিহিত, যথাসময়, যথাযথ, যথাক্রমে, পুনঃপুন, পুনঃপ্রকাশ, পুনঃপরীক্ষা, পুনঃপ্রবেশ, পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বহিঃপ্রকাশ শব্দগুলো একত্রে ব্যবহার হয়।
১৪. পদের শেষে’-গ্রস্থ’ নয় ‘-গ্রস্ত’ হবে। যেমন— বাধাগ্রস্ত, ক্ষতিগ্রস্ত, হতাশাগ্রস্ত, বিপদগ্রস্ত ইত্যাদি।
১৫. অঞ্জলি দ্বারা গঠিত সকল শব্দে ই-কার হবে। যেমন— অঞ্জলি, গীতাঞ্জলি, শ্রদ্ধাঞ্জলি ইত্যাদি।
১৬. ‘স্ট’ এবং ‘ষ্ট’ ব্যবহার: বিদেশি শব্দে ‘স্ট’ ব্যবহার হবে। বিশেষ করে ইংরেজি st যোগে শব্দগুলোতে ‘স্ট’ ব্যবহার হবে। যেমন— ফটোস্ট্যাট,পোস্ট, স্টার, স্টাফ, স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, স্ট্যাটাস, মাস্টার, ডাস্টার, পোস্টার, স্টুডিও, ফাস্ট, লাস্ট, বেস্ট ইত্যাদি। ষত্ব-বিধান অনুযায়ী বাংলা বানানে ট-বর্গীয় বর্ণে ‘ষ্ট’ ব্যবহার হবে। যেমন— বৃষ্টি, কৃষ্টি, সৃষ্টি, দৃষ্টি, মিষ্টি, নষ্ট, কষ্ট, তুষ্ট, সন্তুষ্ট ইত্যাদি।
১৭. দূরত্ব বোঝায় না এরূপ শব্দে উ-কার যোগে ‘দুর’ (‘দুর’ উপসর্গ) বা ‘দু+রেফ’ হবে। যেমন— দুরবস্থা, দুরন্ত, দুরাকাঙ্ক্ষা, দুরারোগ্য, দুরূহ, দুর্গা, দুর্গতি, দুর্গ, দুর্দান্ত, দুর্নীতি, দুর্যোগ, দুর্ঘটনা, দুর্নাম, দুর্ভোগ, দুর্দিন, দুর্বল, দুর্জয় ইত্যাদি।
১৮. দূরত্ব বোঝায় এমন শব্দে ঊ-কার যোগে ‘দূর’ হবে। যেমন— দূর, দূরবর্তী, দূর-দূরান্ত, দূরীকরণ, অদূর, দূরত্ব, দূরবীক্ষণ ইত্যাদি।
১৯. পদের শেষে ‘-জীবী’ ঈ-কার হবে। যেমন— চাকরিজীবী, পেশাজীবী, শ্রমজীবী, কৃষিজীবী, আইনজীবী ইত্যাদি।
২০. পদের শেষে ‘-বলি’ (আবলি) ই-কার হবে। যেমন— কার্যাবলি, শর্তাবলি, ব্যাখ্যাবলি, নিয়মাবলি, তথ্যাবলি ইত্যাদি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন