বাংলাদেশের জাতীয় পুরস্কার

বাংলাদেশের জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে প্রদত্ত সম্মাননা সূচক পুরস্কারগুলোকে জাতীয় পুরস্কার বলা হয়। এই পুরস্কারগুলো জাতীয় ঐক্য ও সংহতি বৃদ্ধি, সৃজনশীলতা ও প্রতিভাকে উৎসাহিত করা এবং সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের প্রধান প্রধান জাতীয় পুরস্কারগুলো হল:

  1. বীরত্ব পুরস্কার
  2. বাংলা একাডেমি পুরস্কার
  3. বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার
  4. জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
  5. জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার
  6. একুশে পদক পুরস্কার
  7. স্বাধীনতা পদক পুরস্কার
  8. শিশু একাডেমী পুরস্কার
  9. শিশু একাডেমি পুরস্কার
  10. প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার
  11. বাচসাস পুরস্কার
  12. জয়নুল আবেদীন পুরস্কার
  13. ফিলিপস পুরস্কার
  14. সুফী মোতাহার হোসেন পুরস্কার
  15. বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা

প্রধান জাতীয় পুরস্কারের বিবরণ

  • বীরত্ব পুরস্কার : স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য এ পুরস্কার দেয়া হয়। এ পর্যন্ত বীরত্ব পুরস্কার দেয়া হয়েছে ৬৭৬ জন কে । বীরশ্রেষ্ঠ পুরস্কারপ্রাপ্ত সবাই শহিদ হয়েছেন। একমাত্র বেসামরিক বীরউত্তম পদকপ্রাপ্ত হলেন বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী। দুজন মহিলা বীরপ্রতীক পদক লাভ করেছেন তারা হলেন ক্যাপ্টেন সেতারা বেগম এবং তারামন বিবি।
    বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্ত সর্বমোট মুক্তিযোদ্ধা (৬৭৬ জন)
    পদক ১৯৭৩ গেজেট পরবর্তীতে দেয়া হয় ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ বাতিল করার ঘোষণা
    বীরশ্রেষ্ঠ
    ( ৭ জন )
    ৭ জন
    সেনাবাহিনী-৩
    ই.পি.আর-২
    নৌ বাহিনী-১
    বিমান বাহিনী- ১
    বীরউত্তম
    ( ৬৮ জন )
    ৬৮ জন
    সেনাবাহিনী - ৪২
    নৌবাহিনী - ৮
    বিমান বাহিনী - ৬
    বিডিআর - ৭ জন
    সিভিল - ৫
    ১ জন
    ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল উদ্দীন আহমেদ। বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালের আগস্টে বাঁচানোর চেষ্টার জন্য তাঁকে ২০১০ সালে মরণোত্তর বীরউত্তম পদক প্রদান করা হয়।
    ১ জন (শরিফুল হক ডালিম)
    বীরবিক্রম
    ( ১৭৭ জন )
    ১৭৫ জন ৩ জন
    -মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী
    -ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোজাফফর আহমেদ
    -আবদুল খালেক (৬জুন, ২০২০)
    ১ জন (নূর চৌধুরী)
    বীরপ্রতীক
    ( ৪২৪ জন )
    ৪২৬ জন ২ জন (মেজর রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিন)
  • বাংলা একাডেমি পুরস্কার : বাংলা একাডেমি যে সাহিত্য পুরস্কার চালু করেন তাই বাংলা একাডেমি পুরস্কার । ১৯৬০ সালে এ পুরস্কার চালু হয়। ঐ বছর কবিতায় ফররুখ আহমদ, উপন্যাসে আবুল হাশেম খান, ছোটগল্পে আবুল মনসুর আহমদ, প্রবন্ধ-গবেষণায় আব্দুল্লাহেল কাফী ও মুহম্মদ বরকতউল্লাহ, নাটকে আশকার ইবনে শাইখ এবং শিশু সাহিত্যে খান মুহম্মদ মঈনুদ্দীন বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেশের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার। বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কারের ৬টি বিভাগের নতুনভাবে নামকরণ করা ২০০৬ সালে। নতুন নির্বাচিত ছয়টি বিভাগ হলো কবিতা, গল্প/ছোটগল্প, বিজ্ঞান/প্রযুক্তি, শিশুসাহিত্য, নাটক/অনুবাদ ও উপন্যাস। ২০০৪ সালের পূর্বে তিনটি শাখায় পুরস্কার দেয়া হতো। বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেয়া হয়- প্রবন্ধ ও গবেষণামূলক সাহিত্যকর্ম, কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, অনুবাদ ও শিশু সাহিত্য প্রভৃতি সাহিত্যের বিভিন্ন দিক। বাংলা একাডেমি পুরস্কারের মান- প্রতিটি নগদ এক লক্ষ টাকা এবং একটি সম্মাননাপত্র।
  • বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার : কৃষি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরুপ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। এই পুরস্কার বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৯৭৩ সাল থেকে প্রদান করা শুরু হয়। এই পুরস্কারের পূর্বনাম রাষ্ট্রপতি কৃষি উন্নয়ন পদক । প্রত্যেক পদকপ্রাপ্তদের পদক ও সনদের পাশাপাশি, স্বর্ণ পদকপ্রাপ্তদের ২৫ হাজার টাকা, রৌপ্য পদকপ্রাপ্তদের ১৫ হাজার ও ব্রোঞ্জ পদকপ্রাপ্তদের সাড়ে ৭ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়। বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার কৃষি সংক্রান্ত ১০ টি বিষয়ে প্রদান করা হয় ।
  • জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার: চলচ্চিত্রের বিভিন্ন শাখায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে জুরী বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন শাখায় নির্বাচিত শ্রেষ্ঠদের মধ্যে সরকার কর্তৃক দেয়া পুরস্কার। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেকে রেপ্লিকা পান। শ্রেষ্ঠ পরিচালক রেপ্লিকা ছাড়াও ১০ হাজার টাকা এবং অন্যান্যরা ৫ হাজার টাকা পান। ১৯৭৬ সাল থেকে এই পুরস্কার প্রদান করা শুরু হয়।
  • জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার: জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার দেয়া হয় ক্রীড়া সংগঠক ও বিভিন্ন ক্রীড়ার উৎকৃষ্ট ক্রীড়াবিদদেরকে। এটি ক্রীড়া ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক দেয় পুরস্কার। এ পুরস্কার প্রবর্তন করা হয় ১৯৭৬ সালে। জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের অর্থমান একটি স্বর্ণপদক এবং নগদ ২০ হাজার টাকা। ১৯৭৬ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রদান করা প্রবর্তন করেন। এরপর ছয় বছর নিয়মিত দেয়ার পর ১৯৮২ সাল থেকে এটি প্রদান বন্ধ হয়ে গেলেও ১৯৯৬ সাল থেকে আবার শুরু করা হয় পুরস্কার প্রদান করা।
  • একুশে পদক পুরস্কার : বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সঙ্গীত, শিল্পকলা, চারুকলা, সাংবাদিকতা, নাট্যাভিনয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় অবদানের জন্যে সরকার একুশে পদক নামক জাতীয় পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়েছে। ১৯৭৬ সালে একুশে পদক চালু করা হয়। বর্তমানে সর্বোচ্চ ১৫ জনকে প্রশংসনীয় অবদানের জন্যে একুশে পদক দেওয়া হয়। একুশে পুরস্কারের বর্তমান অর্থমূল্য- ১৮ ক্যারেট মানের ৩ ভরি স্বর্ণের ১টি পদক। এককালীন চার লাখ টাকা, রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র।
  • স্বাধীনতা পদক পুরস্কার : জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ প্রতিভার প্রকাশ এবং মহান অবদান রাখার জন্য জাতির স্বাধীনতা দিবসে সরকার কর্তৃক দেয়া পুরস্কার । ১৯৭৭ সাল থেকে এ পুরস্কার দেয়া হয়। সর্বোচ্চ ১০জনকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। স্বাধীনতা পুরস্কার বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদক। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালে স্বাধীনতা পদকের প্রবর্তন করেন।[৫] ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ এই পদক প্রদান করা হয়ে আসছে। বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এই পুরস্কারের প্রবর্তক । স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার দেয়া হয়- স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ , বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি , চিকিৎসাবিদ্যা , শিক্ষা , সাহিত্য , সংস্কৃতি , ক্রীড়া , পল্লী উন্নয়ন , সমাজসেবা/জনসেবা , জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ , জনপ্রশাসন , গবেষণা ও প্রশিক্ষণ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অন্য যে কোন ক্ষেত্র । স্বাধীনতা পুরস্কারের বর্তমান মান: প্রতিটি পুরস্কার একটি স্বর্ণপদক এবং নগদ পাঁচ লাখ টাকা ও সম্মাননা পত্র।
  • শিশু একাডেমী পুরস্কার : বাংলাদেশের শিশু সাহিত্যে সার্বিক বিচারে এ পুরস্কার দেয়া হয়। শিশু একাডেমী পুরস্কারের মান নগদ ২৫ হাজার টাকা। শিশু একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার প্রবর্তন করা হয় ১৯৯০ সালে ।
  • প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার : বৃক্ষরোপণে যারা বিশেষ অবদান রাখেন তাদেরকে ১৯৯৩ সাল থেকে 'বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার' দেয়া হয়।
  • বাচসাস পুরস্কার: চলচ্চিত্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সংস্থা কর্তৃক ঘোষিত পুরস্কার।
  • জয়নুল আবেদীন পুরস্কার: চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। এই মহাবিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের স্মৃতি রক্ষার্থে ১৯৭৭ সাল থেকে এই পুরস্কার প্রবর্তন করেছেন।
  • ফিলিপস পুরস্কার: সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ফিলিপস পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ পুরস্কারের অর্থমান নগদ ৫০ হাজার টাকা, একটি ট্রফি ও একটি সম্মাননাপত্র। এটি প্রদান করেন ট্রান্সকম ইলেক্ট্রনিক্স।
  • সুফী মোতাহার হোসেন পুরস্কার: সুফী মোতাহার হোসেন পুরস্কার প্রবর্তন করেন বাংলা লেখক পরিষদ। এ পুরস্কারের অর্থমান ১টি স্বর্ণপদক, নগদ ১ হাজার টাকা এবং ১টি প্রশংসাপত্র।
  • বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা : মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার বিদেশি নাগরিকদের তিন ক্যাটাগরিতে সম্মাননা প্রদান করবে। এগুলো হলো বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা এবং মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা। প্রথম পর্যায়ে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ ৪৭ জন এবং পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এসব পদক দেয়া হয়। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখায় ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে বিদেশীদের জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা 'বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা' (মরণোত্তর) পুরস্কার দেয়া হয় ২৫ জুলাই ২০১১। রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান বঙ্গভবনে ইন্দিরা গান্ধীর পুত্রবধূ ও কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর হাতে পুরস্কার হিসেবে তুলে দেন ১৮ ক্যারেটের ২০০ ভরি ওজনের স্বর্ণ দিয়ে তৈরি পদক ও একটি মানপত্র।
নবীনতর পূর্বতন