প্রমথ চৌধুরী


প্রমথ চৌধুরী (১৮৬৮-১৯৪৬)

বাংলা গদ্যে চলিত রীতির প্রবর্তক ও বিদ্রূপাত্মক প্রাবন্ধিক প্রমথ চৌধুরী। তীক্ষ্ণ মননশীলতা, বাকচাতুর্যের চমৎকারিত্ব এবং বুদ্ধির অসিচালনা ছিল তাঁর ভাষাগত বিশেষত্ব। তিনি ১৮৯৯ সালে রবীন্দ্রনাথের অগ্রজ বাংলা প্রথম সিভিলিয়ান সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেয়ে ইন্দিরা দেবীকে বিয়ে করেন । তিনি রবীন্দ্রনাথকে বাংলা গদ্যে চলিত রীতি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করেন ।

প্রমথ চৌধুরীর সাহিত্যকর্ম

সাহিত্যিক উপাদান সাহিত্যিক তথ্য
জন্ম প্রমথ চৌধুরী ৭ আগস্ট, ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে যশোরে জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস- পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর গ্রাম ।
বিশেষত্ব তাকে বলা হয় বাংলা গদ্যে চলিত রীতির প্রবর্তক ও বিদ্রূপাত্মক প্রাবন্ধিক ।বাংলা কাব্য সাহিত্যে তিনিই প্রথম ইতালীয় সনেটের প্রবর্তন করেন।‘হালখাতা’ (‘ভারতী’ পত্রিকায় প্রকাশ- ১৯০২), গদ্য/প্রবন্ধ রচনায় তিনি প্রথম চলিত রীতির প্রয়োগ ঘটান।
পত্রিকা সম্পাদনা তিনি ‘সবুজপত্র' (১৯১৪), ‘বিশ্বভারতী পত্রিকা' সম্পাদনা করেন।
ছদ্মনাম প্রমথ চৌধুরীর সাহিত্যিক ছদ্মনাম- বীরবল
প্রথম প্রবন্ধ প্রমথ চৌধুরীর প্রথম প্রবন্ধ ‘জয়দেব ’ ১৮৯৩ সালে ‘ সাধনা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
স্বর্ণপদক তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩৮ সালে জগত্তারিণী স্বর্ণপদক লাভ করেন। উল্লেখ্য, স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় নিজ মাতার নামে এ পদক প্রবর্তন করেন।
সবুজপত্র প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত ' সবুজপত্র' বাংলা সাময়িক পত্রের ইতিহাসে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। ১৯১৪ সালে (বৈশাখ- ১৩২১) এর প্রথম প্রকাশ ঘটে। বাংলা গদ্যরীতির বিকাশে এই পত্রিকার গুরুত্ব অপরসীম। সাধু গদ্যরীতির পরিবর্তে চলিত গদ্যরীতি ব্যবহার ও প্রতিষ্ঠায় এটির অবদান তাৎপর্যপূর্ণ। রবীন্দ্রনাথ নিজেও এই পত্রিকায় লেখার সুবাদে চলিত গদ্যরীতির স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করেন এবং পরে তা তিনি চর্চা করেন। রবীন্দ্রনাথের কথ্য ভাষায় লেখা উপন্যাস ‘শেষের কবিতা’ এ পত্রিকায় প্রকাশিত হলে প্রমথ চৌধুরীর চলিত ভাষার আন্দোলন ব্যাপক সফলতা অর্জন করে। প্রমথ চৌধুরী ‘বীরবলী রীতি' নামে যে মৌখিক ভাষারীতি সাহিত্যে প্রচলন করে যুগান্তর এনেছিলেন তার প্রচারের মাধ্যম ছিল এই ‘সবুজপত্র' । সাহিত্যজগতে এ পত্রিকা ‘সবুজপত্র গোষ্ঠী’ তৈরি করতে সক্ষম হয় ।
চলিত রীতিতে রচিত তাঁর প্রথম গদ্যরচনা চলিত রীতিতে রচিত তাঁর প্রথম গদ্যরচনা ‘হালখাতা” (১৯০২): এটি ‘ভারতী' পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়। [বাজারের অধিকাংশ বইয়ে লেখা যে, প্রমথ চৌধুরীর প্রথম প্রকাশিত রচনা ‘বীরবলের হালখাতা । প্রকৃতপক্ষে এটি হবে ‘হালখাতা। কারণ, ‘বীরবলের হালখাতা প্রবন্ধগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯১৬ সালে আর ‘হালখাতা' গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯০২ সালে।] সূত্র: বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান]
অন্যান্য সাহিত্যকর্ম প্রমথ চৌধুরী রচিত অন্যান্য সাহিত্যকর্মগুলো:

প্রবন্ধগ্রন্থ: ‘তেল-নুন-লাকড়ি’ (১৯০৬), 'বীরবলের হালখাতা' (১৯১৬), ‘নানাকথা' (১৯১৯), ‘আমাদের শিক্ষা’ (১৯২০), ‘রায়তের কথা' (১৯২৬), ‘নানাচর্চা' (১৯৩২), ‘আত্মকথা’ (১৯৪৬), ‘প্রবন্ধ সংগ্রহ' (১ম খণ্ড- ১৯৫২, ২য় খণ্ড- ১৯৫৩)।

কাব্যগ্রন্থ : ‘সনেট পঞ্চাশৎ' (১৯১৩), ‘পদচারণ’ (১৯১৯)।

গল্পগ্রন্থ: ‘চার ইয়ারী কথা’(১৯১৬),‘আহুতি’(১৯১৯),‘নীললোহিত ও গল্পসংগ্রহ'(১৯৪১)।

প্রবন্ধ : ‘যৌবনে দাও রাজটীকা’, ‘বই পড়া', 'সাহিত্যে খেলা’, ‘ভাষার কথা' ।
‘চার ইয়ারি কথা’ চারবন্ধুর প্রেমের কাহিনি নিয়ে প্রমথ চৌধুরী রচনা করেন বিখ্যাত গল্পগ্রন্থ ‘চার ইয়ারি কথা” (১৯১৬)। চারবন্ধুর প্রত্যেকটি প্রেমই অভিশপ্ত। এদের নায়িকারা স্বর্ণকেশী ইউরোপীয়। প্রথম নায়িকা উম্মাদ, দ্বিতীয় নায়িকা চোর, তৃতীয় নায়িকা প্রতারক এবং চতুর্থ নায়িকা মৃত্যুর পর তার ভালোবাসা প্রকাশ করেছে। নানাবিধ হাস্যরসাত্মক ঘটনা ও ব্যঙ্গের মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটে।
বিখ্যাত উক্তি ১. সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত। ( বই পড়া)

২. ভাষা মানুষের মুখ থেকে কলমের মুখে আসে,
উল্টোটা করতে গেলে মুখে শুধু কালি পড়ে। (ভাষার কথা)
মৃত্যু তিনি ২ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৬ সালে (১৬ ভাদ্র, ১৩৫৩ বঙ্গাব্দ) শান্তিনিকেতনে মারা যান ।

এই পোস্টগুলি আপনার ভাল লাগতে পারে:

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন