সেলিনা হোসেন

সেলিনা হোসেন (১৯৪৭-)

সেলিনা হোসেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত নারী ঔপন্যাসিক। সমকালের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকটের সামগ্রিকতা তাঁর উপন্যাসের মূল বিষয়। অবরুদ্ধ সমাজের মানুষের মুক্তিচিন্তা ও মুক্তির আকুতিকে তাঁর লেখনীতে ফুটিয়ে তুলেছেন ।

সেলিনা হোসেনের সাহিত্যকর্ম

সাহিত্যিক উপাদান সাহিত্যিক তথ্য
জন্ম সেলিনা হোসেন ১৪ জুন, ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে রাজশাহী শহরের সিরোইলে জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস লক্ষ্মীপুর জেলার হাজিরপাড়া গ্রাম ।
প্রথম গল্প বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ঢাকার ‘পূবালী' পত্রিকায় তাঁর প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়।
কর্মজীবন তিনি ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমির গবেষণা সহকারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি বাংলা একাডেমির প্রথম মহিলা পরিচালক নিযুক্ত হন এবং ২০০৪ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ২০১৪ সালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান হিসেবে দুই বছরের জন্য নিয়োগ পান।
সম্পাদনা বাংলা একাডেমির ‘ধান শালিকের দেশ” পত্রিকাটি প্রায় ২০ বছর সম্পাদনা করেন।
পুরস্কার তিনি ১৯৮০ সালে ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার', চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৭) লাভ করেন।
প্রবন্ধ তাঁর রচিত প্রবন্ধসমূহ:

‘স্বদেশে পরবাসী’ (১৯৮৫),
‘একাত্তরে ঢাকা' (১৯৯০),
‘নির্ভয় করো হে’ (১৯৯৮),
‘মুক্ত করো ভয়’ (২০০২),
‘ঘর গেরস্থির রাজনীতি' (২০০৭)।
গল্পগ্রন্থ তাঁর রচিত গল্পগ্রন্থসমূহ:

‘উৎস থেকে নিরন্তর' (১৯৬৯): এটি তাঁর প্রকাশিত প্রথম গল্পগ্রন্থ। ভাষা আন্দোলন, নারী-পুরুষের সমতা প্রত্যাশা, গ্রামীণ পারিবারিক পরিমণ্ডলের ভাঙ্গন ইত্যাদি বিষয় এ গল্পগ্রন্থের গল্পের বিষয়।

‘পরজন্ম’ (১৯৮৬),
‘মানুষটি’ (১৯৯৩),
“মতিজানের মেয়েরা’ (১৯৯৫),
‘অনূঢ়া পূর্ণিমা' (২০০০),
‘নারীর রূপকথা' (২০০৭)।
উপন্যাস তাঁর রচিত উপন্যাসসমূহ:

‘জলোচ্ছ্বাস' (১৯৭২): দক্ষিণ বাংলার মেঘনা, তেঁতুলিয়া, আগুনমুখা, কাজল নদীর কূলে প্রতিকূল প্রকৃতি ও সামাজিক অপশক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামশীল মানুষের জীবনধারা এ উপন্যাসের আলেখ্য।

'হাঙর নদী গ্রেনেড' (১৯৭৬): এটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস। ১৯৭২ সালে এ ঘটনা নিয়ে তিনি গল্প লেখেন। পরবর্তীতে এটি উপন্যাসে রূপান্তরিত করেন ।

‘যাপিত জীবন' (১৯৮১): এ উপন্যাসে ১৯৪৭-৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের যাবতীয় ঘটনা কেন্দ্রীয় চরিত্র জাফর এর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন।

‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি' (১৯৮৬): উপন্যাস বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে নাফ নদীর তীরবর্তী শাহপরী দ্বীপ নামক এক ছোট দ্বীপের ধীবর শ্রেণির মানুষের জীবন সংগ্রাম এর বাস্তব রূপায়ণ । চরিত্র: মালেক, সাফিয়া।

‘নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি’ (১৯৮৭): চল্লিশের দশকের পটভূমিতে রচিত।

‘কাঁটাতারে প্রজাপতি' (১৯৮৯): নাচোলের তেভাগা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত।

‘কাকতাড়ুয়া’ (১৯৯৬): এটি শিশুতোষ উপন্যাস। এটি বুধা নামে এক এতিম সাহসী কিশোর মুক্তিযোদ্ধার কাহিনি ।

'যুদ্ধ' (১৯৯৮): ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত। এ উপন্যাসে ১১ নম্বর সেক্টরের নারী মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক তারামন বিবির প্রসঙ্গ এসেছে।

‘কাঠকয়লার ছবি' (২০০১): এটি চা বাগানের শ্রমিকদের জীবনযাত্রা নিয়ে রচিত।

‘মগ্ন চৈতন্যে শিস' (১৯৭৯),
'নীল ময়ূরের যৌবন' (১৯৮২),
'চাঁদবেনে' (১৯৮৪),
'কালকেতু ও ফুল্লরা’ (১৯৯২),
'ভালোবাসা প্রীতিলতা' (১৯৯২),
‘পদশব্দ’ (১৯৯২),
'টানাপোড়েন' (১৯৯৪),
‘লারা' (২০০০),
‘মোহিনীর বিয়ে' (২০০২),
'আণবিক আঁধার' (২০০৩),
‘ঘুমকাতুরে ঈশ্বর' (২০০৪),
‘মর্গের নীল পাখি' (২০০৫),
‘অপেক্ষা' (২০০৭),
‘পূর্ণছবির মগ্নতা' (২০০৮),
'যমুনা নদীর মুশায়রা' (২০০৯),
'গেরিলা ও বীরাঙ্গনা' (২০১৪)
ত্রয়ী উপন্যাস ত্রয়ী উপন্যাস: ‘গায়ত্রী সন্ধ্যা' (১ম খণ্ড- ১৯৯৪, ২য় খণ্ড- ১৯৯৫, ৩য় খণ্ড- ১৯৯৬)। এ উপন্যাসটি রচিত হয়েছে ১৯৪৭-৭৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৮ বছরের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক পটভূমিতে।
'হাঙর নদী গ্রেনেড’ ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে যশোরের কালীগঞ্জের একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে সেলিনা হোসেন এ উপন্যাসটি রচনা করেন। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র বুড়ি'র অল্পবয়সে বিয়ে হয় বিপত্নীক চাচাত ভাই গফুরের সাথে। গফুরের আগের ঘরের দুই ছেলে সলীম ও কলীম এবং বুড়ির নিজের বাক্ ও শ্রুতি প্রতিবন্ধী ছেলে রইসকে নিয়ে তার সংসার। এরই মধ্যে মারা যায় গফুর। দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। সলীম যুদ্ধে যায়। কলীমকে পাকিস্তানী সৈন্য ও দোসররা সলীমের চোখের সামনে নির্মমভাবে হত্যা করে। এমন পরিস্থিতিতে একদিন হাফেজ ও কাদের দুই মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করতে করতে শত্রুপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে আশ্রয় নেয় বুড়ির ঘরে। বুড়ি মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচাতে নিজের প্রতিবন্ধি সন্তান রইসকে তুলে দেয় বন্দুকের নলের মুখে ।
নবীনতর পূর্বতন