কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি? কত প্রকার ও কি কি ?

দুই বা ততোধিক কম্পিউটারকে যোগাযোগের কোনো মাধ্যম দিয়ে একসাথে যুক্ত করে দিলে যদি তারা নিজেদের ভেতর তথ্য কিংবা উপাত্ত আদান-প্রদান করতে পারে- তাহলে সেটাকে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বলা যেতে পারে । প্রকৃতপক্ষে কম্পিউটার নেটওয়ার্কে আসলে দু-তিনটি কম্পিউটার থাকে না। সাধারণত অনেক কম্পিউটার একসঙ্গে যুক্ত থাকে। আজকাল এমন হয়ে গেছে যে, কেউ একটা কম্পিউটার কিনলে যতক্ষণ না সেটাকে একটা নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করতে পারে, ততক্ষণ তার মনে হতে থাকে কম্পিউটার ব্যবহারের আসল কাজটিই বুঝি করা হলো না। তার কারণ হচ্ছে কম্পিউটারের নেটওয়ার্কে যখন তথ্য দেওয়া নেওয়া হয়, তখন একটা অনেক বড় কাজ হয়। একজন ব্যবহারকারী তখন নেটওয়ার্কের অনেক কিছু ব্যবহার করতে পারে। যে রিসোর্স তার কাছে নেই, সেটিও সে নেটওয়ার্ক থেকে ব্যবহার করতে পারে।

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি

নেটওয়ার্ক এর বাংলা অর্থ বিস্তীর্ণ জালিকা । কাজেই কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হচ্ছে এমন একটি বিস্তীর্ণ জাল ব্যবস্থা যেখানে অনেক কম্পিউটার একসাথে যুক্ত থাকে। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীরা সার্ভারে থাকা সকল রিসোর্স একে অন্যের সাথে শেয়ার করে ব্যবহার করতে পারেন, একে অপরের কাছে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারেন কিংবা এক কম্পিউটারে থেকে অন্য কম্পিউটার চালাতে পারেন। আরো সহজ করে বললে , বিভিন্ন কম্পিউটার কোন যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্বারা একসঙ্গে যুক্ত থাকলে তাকে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বলে । কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সম্পুর্ণ ধারণা নিতে হলে নেটওয়ার্কের সাথে সম্পর্ক আছে এরকম কিছু যন্ত্রপাতির কথা জেনে নেওয়া প্রয়োজন।যেমন-

সার্ভার : সার্ভার হচ্ছে একটি শক্তিশালী কম্পিউটার যেটি নেটওয়ার্কের অন্য কম্পিউটারকে নানা রকম সেবা প্রদান করে থাকে। একটি নেটওয়ার্কে অনেকগুলো সার্ভার থাকতে পারে।

ক্লায়েন্ট: কেউ যদি অন্য কারো কাছ থেকে কোনো ধরনের সেবা নেয়, তখন তাকে ক্লায়েন্ট বলে। কম্পিউটার নেটওয়ার্কেও ক্লায়েন্ট শব্দটির অর্থ মোটামুটি সেরকম। যে সব কম্পিউটার সার্ভার থেকে কোনো ধরনের তথ্য নেয় তাকে ক্লায়েন্ট বলে।

মিডিয়া : যে সব বস্তু বা ডিভাইস ব্যবহার করে কম্পিউটারগুলো যুক্ত করা হয় সেগুলো হচ্ছে মিডিয়া। উদাহরণ- বৈদ্যুতিক তার, কো-এক্সিয়াল তার, অপটিক্যাল ফাইবার ইত্যাদি । আবার কোনো মিডিয়া ব্যবহার না করেও অর্থাৎ তার বিহীন (যেমন- Wi-Fi) পদ্ধতিতে কম্পিউটারকে নেটওয়ার্কে যুক্ত করা যায়।

নেটওয়ার্ক এডাপ্টার : একটি কম্পিউটারকে সরাসরি নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করা যায় না। এটি করার জন্য কম্পিউটারের সাথে একটি নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড (NIC) যুক্ত করতে হয়। সেই কার্ডগুলো তখন মিডিয়া থেকে তথ্য নিয়ে ব্যবহার করার জন্য কম্পিউটারকে দিতে পারে। আবার কম্পিউটার থেকে তথ্য নিয়ে সেটি নেটওয়ার্কে ছেড়ে দিতে পারে।

রিসোর্স : ক্লায়েন্টের কাছে ব্যবহারের জন্য যে সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, তার সবই হচ্ছে রিসোর্স। কম্পিউটারের সাথে যদি একটি প্রিন্টার কিংবা একটি ফ্যাক্স মেশিন লাগানো হয় সেটি হচ্ছে রিসোর্স। কম্পিউটার দিয়ে কেউ যদি সার্ভারে রাখা একটি ছবি আঁকার সফটওয়ার ব্যবহার করে সেটিও রিসোর্স। একটি কম্পিউটার একই সাথে ক্লায়েন্ট এবং রিসোর্স দুটোই হতে পারে । যদি কেউ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে একটি ছবি ডাউনলোড করে ব্যবহার করে তখন সে কম্পিউটার হবে ক্লায়েন্ট । আবার একই কম্পিউটার যদি নেটওয়ার্কের সবার সাথে কোন ছবি শেয়ার করে এবং অন্যরা ব্যবহার করতে থাকে তখন এই কম্পিউটারই আবার হয়ে যাবে রিসোর্স ।

ইউজার : সার্ভার থেকে যে ক্লায়েন্ট রিসোর্স ব্যবহার করে, সে-ই ইউজার (user) বা ব্যবহারকারী।

প্রটোকল : ভিন্ন ভিন্ন কম্পিউটারকে একসাথে যুক্ত করতে হলে এক কম্পিউটারের সাথে অন্য কম্পিউটারের যোগাযোগ করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয়। এসব নিয়ম মেনেই তথ্য আদান-প্রদান করতে হয়। যারা নেটওয়ার্ক তৈরি করে তারা আগে থেকেই ঠিক করে নেয়, কোন ভাষায়, কোন নিয়ম মেনে এক কম্পিউটার অন্য কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ করবে। এই নিয়মগুলোই হচ্ছে প্রটোকল। যেমন- ইন্টারনেটে ওয়েব পেজ ব্রাউজ করার জন্য প্রটোকল হলো hypertext transfer protocol (http)।

কম্পিউটার নেটওয়ার্কের প্রকারভেদ

কম্পিউটার সমূহের এই নেটওয়ার্ক বা সংযুক্ত থাকার ব্যবস্থা বিভিন্ন ভাবে হতে পারে।যেমন- ধরুন আপনার কম্পিউটারের সাথে প্রিন্টার যুক্ত থাকা । এটাও এক ধরনের নেটওয়ার্ক । আবার একই প্রতিষ্ঠানের এক ভবনের বিভিন্ন কম্পিউটারের মাঝে সরাসরি তার বা ক্যবল দিয়ে সংযোগ ব্যবস্থা । এটাও এক ধরনের নেটওয়ার্ক । কিন্তু অনেক সময় বিভিন্ন দূরত্বের কম্পিউটার সমূহের মাঝে সংযোগ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে ক্যবল বা তার দিয়ে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হয় না। যেমন- ধরেন একটি ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার কম্পিউটার সমূহের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে হয়। ঢাকা শাখার কম্পিউটারের সাথে সিলেট শাখার কম্পিউটারের সংযোগ স্থাপন করতে হলে, এত দূরত্বে সরাসরি তার বা ক্যবল দিয়ে সংযোগ করা সম্ভব নয়। কিন্তু টেলিফোন লাইন মডেম কিংবা স্যাটেলাইট ব্যবহার করে কম্পিউটার সমূহের মাঝে নেটওয়ার্ক স্থাপন করা যায়। নিচে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের প্রকারভেদ সবিস্তারে তুলে ধরা হল ।

নেটওয়ার্কের প্রকারভেদ
নেটওয়ার্কের প্রকারভেদ

ক) নেটওয়ার্কের ভৌগোলিক বিস্তৃতি অনুসারে

নেটওয়ার্কের ভৌগোলিক বিস্তৃতি অনুসারে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক পাঁচ প্রকার যথাঃ

১) পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা প্যান (Personal Area Network = PAN): কোন ব্যক্তির দৈনন্দিন বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (PAN) গড়ে তোলা হয়। PAN এর পরিধি ১০ মিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ট্রান্সমিশন মিডিয়া হিসেবে Infrared Data Association (IrDA), USB, Bluetooth, ZigBee প্রভৃতি ব্যবহৃত হয়।

২) লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (Local Area Network LAN): ছোট অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কিংবা একটি বিল্ডিং বা স্বল্প দূরত্বে অবস্থিত কয়েকটি ভবনে স্থাপিত অসংখ্য কম্পিউটারের মধ্যে এই নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়। রিপিটার ব্যবহার করে এর বিস্তৃতি সর্বোচ্চ ১ কি.মি. করা যায়। এই ধরনের নেটওয়ার্কে তার মাধ্যম হিসেবে টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল, কো-অ্যাক্সিয়াল ক্যাবল বা ফাইবার অপটিক ক্যাবল এবং তারবিহীন মাধ্যম হিসেবে রেডিও ওয়েভ ব্যবহৃত হয়। LAN এর স্ট্যান্ডার্ড হলো IEEE (Institute of Electrical and Electronics Engineers) 802 ।

৩) ক্যাম্পাস এরিয়া নেটওয়ার্ক (Campus Area Network = CAN): অনেক LAN এর সমন্বয়ে গঠিত CAN হয়। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবন, লাইব্রেরি ভবন, স্টুডেন্ট সেন্টার, আবাসিক হলসমূহ এবং অন্যান্য ব্যবহৃত ভবনে স্থাপিত LAN গুলোকে সংযুক্ত করতে CAN ব্যবহার করা হয়। এর বিস্তৃতি ১-৫ কি.মি. পর্যন্ত হতে পারে। যেমন- Googleplex এবং Microsoft's এর নেটওয়ার্ক।

৪) মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক (Metropolitan Area Network = MAN): একই শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত কিছু কম্পিউটার বা ডিভাইস নিয়ে যে নেটওয়ার্ক গঠিত হয় তাকে মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক বা MAN বলে। MAN এর বিস্তৃতি LAN এর চেয়ে বড় কিন্তু WAN এর চেয়ে ছোট। প্রায় ৫০ কি.মি. পর্যন্ত MAN এর নেটওয়ার্ক থাকতে পারে। ট্রান্সমিশন মিডিয়া হিসেবে ব্যবহৃত হয় টেলিফোন লাইন, অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল, রেডিও ওয়েভ বা টেরিস্ট্রিয়াল মাইক্রোওয়েভ। MAN-এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক।

৫) ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (Wide Area Network = WAN): ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক দিয়ে বড় ধরনের এলাকাজুড়ে নেটওয়ার্কের ব্যবস্থা করা হয়। একটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল বা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত কম্পিউটারের মধ্যে গড়ে তোলা হয় ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক। ট্রান্সমিশন মিডিয়া হিসেবে টেলিফোন লাইন, স্যাটেলাইট, মাইক্রোওয়েভ, ফাইবার অপটিক ক্যাবল ব্যবহৃত হয়। WAN-এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো ইন্টারনেট।

খ) নেটওয়ার্কের সার্ভিস প্রদান ও কাঠামো অনুসারে

নেটওয়ার্কের সার্ভিস প্রদান ও কাঠামো অনুসারে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তিন প্রকার যথাঃ

১) ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্ক (Client Server Network): এক (বা একাধিক) কেন্দ্রীয় সার্ভার এবং একাধিক ক্লায়েন্ট (Client)/ওয়ার্কস্টেশন (Workstation) এর সমন্বয়ে ক্লায়েন্ট- সার্ভার নেটওয়ার্ক গঠিত হয়। এখানে সার্ভার কম্পিউটারে কেন্দ্রীয়ভাবে ডেটা জমা থাকে এবং এসব ডেটা ক্লায়েন্ট কম্পিউটার কর্তৃক রিসোর্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়। একে সার্ভার-বেজড নেটওয়ার্কও বলা হয়। এই পদ্ধতির নেটওয়ার্কিং এর জন্য পৃথক সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সফটওয়্যার হলো নোভেল নেটওয়‍্যার, উইন্ডোজ এনটি সার্ভার, আইবিএম ওএস/২ সার্ভার প্রভৃতি। ব্যবহারকারী (Client) টার্মিনাল দুই ধরনের হয়। যথা- (i) Thin client (অন্য নাম Dumb Terminal): শুধুমাত্র কী-বোর্ড ও মনিটর থাকে। কোন প্রসেসিং ইউনিট থাকে না। (ii) Thick client: কী-বোর্ড, মনিটর এবং নিজস্ব প্রসেসিং ইউনিট থাকে।

ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্ক
ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্ক

ping কমান্ড দিয়ে মূলত হোস্টের সাথে ক্লায়েন্ট পিসির নেটওয়ার্কের কানেকশন এবং ল্যাটেন্সি পরীক্ষা করা হয়। এতে একটি পিসি হোস্টে একটি রিকুয়েস্ট পাঠায়। হোস্ট মেশিন সেই রিকুয়েস্ট পেয়ে ফিরতি একটা রেসপন্স পাঠায়। প্রথম পিসি সেটা গ্রহণ করে আউটপুট দেখায়। নেটওয়ার্ক কানেকশনে কোনো সমস্যা থাকলে ফিরতি রেসপন্স পাওয়া যায় না।

২) পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক (Peer to Peer Network): পৃথক সার্ভার কম্পিউটার ব্যতীত দুই বা ততোধিক কম্পিউটারের মধ্যে রিসোর্স শেয়ার করার জন্য যে নেটওয়ার্ক গঠন করা হয় তা হলো পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক। পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্কে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই। একাধিক নেটওয়ার্কের সাথে সংযোগ দেওয়া অসুবিধাজনক।

পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক
পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক

৩) হাইব্রিড নেটওয়ার্ক (Hybrid Network): এটি মূলত পিয়ার টু পিয়ার এবং ক্লায়েন্ট-সার্ভার নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত। এই নেটওয়ার্কে ক্লায়েন্ট-সার্ভারের প্রাধান্য বেশি থাকে।

গ) নেটওয়ার্কের মালিকানার ভিত্তিতে

নেটওয়ার্কের মালিকানার ভিত্তিতে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক দুই প্রকার যথাঃ

১) পাবলিক নেটওয়ার্ক (Public Network): যে নেটওয়ার্কে ব্যবহারকারীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত নয় এবং যেকোনো সময় যেকোনো কম্পিউটার নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হতে পারে, তাকে পাবলিক নেটওয়ার্ক বলে। এ ধরনের নেটওয়ার্ক পরিচালিত হয় অনেক প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে, অর্থাৎ এর একক মালিকানা থাকে না। এর ব্যবহারকারীকে সাধারণত ফিস্ বা মূল্য পরিশোধ করতে হয়। WAN বা ইন্টারনেট এ ধরনের নেটওয়ার্কের উদাহরণ।

২) প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (Private Network): যে নেটওয়ার্কে ব্যবহারকারীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত এবং কোনো কম্পিউটারকে নেটওয়ার্কে যুক্ত করতে কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হয়, তাকে প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বলে। কেউ ইচ্ছা করলেই এই নেটওয়ার্কে অ্যাকসেস করতে পারে না। এ ধরনের নেটওয়ার্ক পরিচালিত হয় একটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় ও তত্ত্বাবধানে। এর সিকিউরিটি সিস্টেম মজবুত এবং এতে ট্রাফিক নেই বললেই চলে। ডেটা আদান-প্রদানে ডিলে (Delay) কম হয়। PAN, LAN বা CAN এ ধরনের নেটওয়ার্ক।

নেটওয়ার্ক টপোলজি

টপোলজি হচ্ছে নেটওয়ার্কভুক্ত কম্পিউটারসমূহের অবস্থানগত এবং সংযোগ বিন্যাসের কাঠামো। টপোলজিকে তাই সাধারণভাবে নেটওয়ার্কের সংগঠন বা আর্কিটেকচার হিসেবে অভিহিত করা হয়। একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্কে কম্পিউটার ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি থাকতে পারে। নেটওয়ার্কে সংযুক্ত প্রতিটি যন্ত্রের (কম্পিউটার, প্রিন্টার ও অন্যান্য পেরিফেরাল যন্ত্র) সংযোগস্থলকে নোড (Node) নামে অভিহিত করা হয়। লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কে সাধারণত নিচে উল্লিখিত টপোলজি ব্যবহার করা হয়। যথা-

১. বাস সংগঠন (Bus Topology): একটি সংযোগ লাইনের সাথে সব ধরনের নোড অর্থাৎ কম্পিউটার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি বা ডিভাইস সংযুক্ত থাকে। এই প্রধান সংযোগ লাইনকে বাস (Bus) বলা হয়। এর লাইনের দুইপ্রান্তে দু'টি টার্মিনেটর থাকে। এ ধরনের সংগঠনে প্রত্যেকটি কম্পিউটার বা ডিভাইস স্বাতন্ত্র্যভাবে ডেটা বাসের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। ডেটা প্রবাহ ব্যবস্থা হয় দ্বিমুখী। বাসের মাধ্যমে যে কোনো কম্পিউটার অন্য যে কোনো কম্পিউটারে ডেটা প্রেরণ করতে পারে। প্রেরিত ডেটা প্রবাহিত হওয়ার সময় প্রত্যেক কম্পিউটার পরীক্ষা করে দেখে। একমাত্র যে কম্পিউটারের উদ্দেশ্যে ডেটা প্রেরণ করা হয়েছে, সেই কম্পিউটার উক্ত ডেটা গ্রহণ করে, অন্যগুলো এই ডেটা গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। বাস সংগঠনে কোন কেন্দ্রীয় কম্পিউটার বা হোস্ট কম্পিউটার থাকে না। কাজেই প্রত্যেকটি কম্পিউটার/ ডিভাইসকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হয়। যে কোন কম্পিউটার খুলে নিলে নেটওয়ার্কের কার্যকারিতা ব্যাহত হয় না। আবার নতুন কোন কম্পিউটার বা ডিভাইস ডেটা বাসের সাথে সংযুক্ত করে নেটওয়ার্কভুক্ত করা যায়।

বাস সংগঠন
বাস সংগঠন

২. রিং সংগঠন (Ring Topology): রিং নেটওয়ার্কের সংগঠন হচ্ছে বৃত্তাকার। এ ধরনের নেটওয়ার্কে প্রতিটি কম্পিউটার তার দুই দিকের দুটি কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। কোন কম্পিউটার থেকে প্রেরিত ডেটা বা সংকেত বৃত্তাকারে এক কম্পিউটার থেকে পরবর্তী কম্পিউটারে ঘুরতে থাকে। প্রত্যেক কম্পিউটার পরিভ্রমণরত ডেটা পরীক্ষা করে দেখে। ডেটা যদি তার উদ্দেশ্যে প্রেরিত হয় তাহলে গ্রহণ করে অন্যথায় পরবর্তী কম্পিউটারে পাঠিয়ে দেয়। এভাবে ডেটা গ্রাহক কম্পিউটারে গ্রহণ না করা পর্যন্ত বৃত্তাকারে পরিভ্রমণ করতে থাকে। রিং সংগঠনে নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণকারী কোন কেন্দ্রীয় কম্পিউটার থাকে না। কাজেই প্রত্যেকটি কম্পিউটার/ডিভাইসকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হয়। নেটওয়ার্কভুক্ত কোন কম্পিউটার ডেটা প্রেরণ বা গ্রহণে অপারগ হলে নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়ে। নতুন কম্পিউটার যোগ করতে হলে সম্পূর্ণ রিং ভেঙ্গে নতুন সংগঠন করতে হয়।

রিং সংগঠন
রিং সংগঠন

৩. স্টার সংগঠন (Star Topology): যে টপোলজিতে কম্পিউটার বা বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেমন- প্রিন্টার সরাসরি একটি হাব বা সুইচের মাধ্যমে পরস্পর যুক্ত থাকে তাকে স্টার টপোলজি বলে। এ পদ্ধতিতে নেটওয়ার্কভুক্ত কম্পিউটারগুলো একটি হাব বা সুইচ বা সার্ভার (হোস্ট কম্পিউটার) এর মাধ্যমে একটি অন্যটির সাথে যোগাযোগ ও ডেটা আদান-প্রদান করে। হাব বা সুইচ বা হোস্ট কম্পিউটারে সমস্যা দেখা দিলে গোটা নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়ে। কিন্তু নেটওয়ার্কভুক্ত কোনো কম্পিউটারে সমস্যা দেখা দিলে নেটওয়ার্কের কাজ শুধু সমস্যাযুক্ত কম্পিউটারের ক্ষেত্রে ব্যাহত হয়। অফিসে স্টার নেটওয়ার্ক টপোলজি ব্যবহৃত হয়।

স্টার সংগঠন
স্টার সংগঠন

৪. শাখা-প্রশাখা সংগঠন (Tree Topology): ট্রি নেটওয়ার্ক প্রকৃতপক্ষে স্টার সংগঠনেরই সম্প্রসারিত রূপ। এতে একাধিক স্তরের কম্পিউটার একটি কেন্দ্রীয় হোস্ট কম্পিউটার বা সার্ভারের সাথে যুক্ত থাকে। এই হোস্ট কম্পিউটারের সাথে স্তর বিন্যাস বা হায়ারারর্কি (Hierarchy) অনুসারে বিভিন্ন স্তরের ডিভাইস নেটওয়ার্কে হাব বা সুইচের মাধ্যমে যুক্ত থাকে। এজন্য এটিকে হায়ারারর্কিক্যাল টপোলজিও বলা হয়। এ ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি স্তরের কম্পিউটার তার পরবর্তী স্তরের জন্য অন্তর্বর্তী হোস্ট কম্পিউটার হিসেবে কাজ করে। যে কম্পিউটারের পর আর কোনো কম্পিউটার যুক্ত হয় না সেই কম্পিউটারকে পেরিফেরাল টার্মিনাল বা প্রান্তীয় কম্পিউটার বলে।

শাখা-প্রশাখা সংগঠন
শাখা-প্রশাখা সংগঠন

৫. পরস্পর সংযুক্ত সংগঠন (Mesh Topology): পরস্পর সংযুক্ত সংগঠনের নেটওয়ার্কে প্রতিটি কম্পিউটার পারস্পরিকভাবে সংযুক্ত থাকে। এ ধরনের নেটওয়ার্কে কোনো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকারী কম্পিউটার বা হোস্ট কম্পিউটার থাকে না। নেটওয়ার্কযুক্ত প্রত্যেক কম্পিউটার অন্য যে কোনো কম্পিউটারের সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন এবং সংকেত ও ডেটা আদান-প্রদান করতে পারে। এ ধরনের নেটওয়ার্কভুক্ত কম্পিউটারগুলোর মধ্যে সংযোগকে পয়েন্ট টু পয়েন্ট লিংক বলা হয়। এটি সম্পূর্ণরূপে আন্তঃসংযুক্ত (Completely Interconnected) টপোলজি নামেও পরিচিত। প্রচুর পরিমাণ তারের ব্যবহার এবং জটিল কনফিগারেশনের জন্য কম্পিউটার নেটওয়ার্কে সাধারণত এটি ব্যবহৃত হয় না।

পরস্পর সংযুক্ত সংগঠন
পরস্পর সংযুক্ত সংগঠন

৬. সংকর সংগঠন (Hybrid Topology): স্টার, রিং, বাস ইত্যাদি নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে যে নেটওয়ার্ক গঠিত হয়, তাকে হাইব্রিড নেটওয়ার্ক বলে।

প্রোটোকল (Protocol)

কমিউনিকেশন সিস্টেমে কম্পিউটার এবং বিভিন্ন ডিভাইস বা কম্পিউটারের মধ্যে ডেটা ট্রান্সমিট পদ্ধতি সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতিই হল প্রোটোকল। এককথায়, কম্পিউটার নেটওয়ার্কের জন্য সুপরিকল্পিত নির্ধারিত রীতিনীতিই হচ্ছে নেটওয়ার্ক প্রোটোকল। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের প্রোটোকল তৈরি করেছে। যেমন; TCP/IP, FTP (File Transfer Protocol), IPX/SPX, NETBEUI, Appletalk, EtherNET ইত্যাদি। এদের মধ্যে ইন্টারনেটে ব্যবহৃত প্রোটোকল হচ্ছে TCP/IP (Transmission Control Protocol/ Internet Protocol)। TCP/IP প্রোটোকলে ৪টি স্তর রয়েছে।

OSI model

OSI Model এর পূর্ণরূপ হলো Open Systems Interconnection model। মূলত কম্পিউটার এবং অন্যান্য নেটওয়ার্কিং ডিভাইসসমূহের মধ্যে কিভাবে সংযোগ গড়ে উঠে সেটাই নির্দেশ করে এই OSI Model। এটি একটি লজিক্যাল মডেল, এতে সাতটি লেয়ার থাকে। উপরের তিনটি লেয়ারকে Upper Layer বলে এবং নিচের চারটি লেয়ারকে Lower Layer বলে।

OSI MODEL
OSI Model

নেটওয়ার্ক ডিভাইস

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য কম্পিউটারগুলো যুক্ত করতে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় সেগুলোকে নেটওয়ার্ক ডিভাইস বলা হয়।

LAN কার্ড বা NIC : একসময় কম্পিউটার বা অন্য কোনো ডিভাইসকে নেটওয়ার্কে যুক্ত করার জন্য আলাদা করে নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড (NIC: Network Interface Card) ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে কম্পিউটারগুলোতে এই কার্ড বিল্ট-ইন অবস্থায় থাকে বলে আলাদাভাবে এর ব্যবহার বিলুপ্তির পথে।

মডেম (Modem) শব্দটি Modulator এবং DEModulator শব্দদ্বয়ের সংক্ষিপ্ত রূপ। টেলিফোন লাইনের মধ্য দিয়ে অ্যানালগ সংকেত (Analog Signal) আদান-প্রদান হয়। কম্পিউটারে। প্রসেসিং করার জন্য ডেটাকে ডিজিটাল সংকেত (Digital Signal) এ রূপান্তর করা হয়। মডেম কম্পিউটারের কমিউনিকেশন পোর্টে সংযুক্ত থাকে। মডেম যন্ত্রটি টেলিফোন লাইন এবং কম্পিউটারের মাঝখানে অবস্থান করে। প্রেরক কম্পিউটারে মডেম কম্পিউটারের ডিজিটাল সংকেতকে অ্যানালগ সংকেতে পরিণত করে টেলিফোন যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্বারা গ্রাহকের নিকট প্রেরণ করে। ডিজিটাল সংকেতকে অ্যানালগ সংকেতে পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকে মডুলেশন (Modulation) বলে। গ্রাহক কম্পিউটারে মাডম সেই অ্যানালগ সংকেতকে আবার ডিজিটাল সংকেতে পরিণত করে। অ্যানালগ সংকেতকে ডিজিটাল সংকেতে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়াকে ডিমডুলেশন (Demodulation) বলে। ডিজিটাল সিগন্যালকে এনালগ সিগন্যালে এবং এনালগ সিগন্যালকে ডিজিটাল সিগন্যালে রূপান্তরিত করার এই প্রক্রিয়াকে ডায়াল আপ (Dail Up) কমিউনিকেশন সিস্টেমও বলে। ডায়াল আপ কমিউনিকেশন সিস্টেমে ডেটা ট্রান্সফার হার খুব ধীর গতিসম্পন্ন হয়।

রিপিটার (Repeater) নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত কম্পিউটারের দূরত্ব বেশি হলে কিংবা নেটওয়ার্কের বিস্তার বেশি হলে ক্যাবলের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত সিগন্যাল দূর্বল হয়ে পড়ে। এ কারণে প্রবাহিত সিগন্যালকে পুনরায় শক্তিশালী এবং সিগন্যালকে আরও অধিক দূরত্বে অতিক্রমের জন্য রিপিটার ব্যবহার করা হয়।

হাব (Hub): একটি কম্পিউটারের সাথে অন্য কম্পিউটার বা ডিভাইসের নেটওয়ার্কিং করার জন্য হাব ব্যবহৃত হতো। হাবের পোর্টগুলোতে কম্পিউটারের নেটওয়ার্কিং পোর্টগুলো সংযুক্ত করা হলে একটি LAN তৈরি হয়ে যায়। হাবের ভেতরে কোনো বুদ্ধিমত্তা নেই, এটি বিভিন্ন ডিভাইসের নেটওয়ার্কিং পোর্টগুলোর ভেতরে এক ধরনের পরিবাহিক যোগাযোগ ছাড়া আর কিছুই নয়। এজন্য হাবে প্রেরিত যেকোনো সংকেত কোনোরূপ পরিবর্তন ছাড়াই সংযুক্ত প্রতিটি ডিভাইসে ব্রডকাস্ট করে, এক্ষেত্রে সংকেতটি যে ডিভাইসের জন্য পাঠানো হয়েছে সেই ডিভাইসটিই শুধু সংকেত গ্রহণ করে, বাকি ডিভাইসগুলো সংকেত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে। সে কারণে হাবে ডেটা কলিশন বা সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকে এবং নেটওয়ার্কে ট্রাফিক জ্যাম বেড়ে যায়। বর্তমানে হাবের ব্যবহার বিলুপ্তির পথে।

সুইচ (Switch): নেটওয়ার্কিং করার জন্য বর্তমানে হাবের পরিবর্তে ব্যাপকভাবে সুইচ ব্যবহৃত হয়। কার্যক্রমের দিক থেকে হাব এর সাথে সুইচের তেমন কোনো পার্থক্য নেই তবে সুইচের বুদ্ধিমত্তা রয়েছে। সুইচ কোনো সংকেতকে ব্রডকাস্ট করে না, সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য প্রতিটি কম্পিউটারের MAC (Media Access Control) অ্যাড্রেস ব্যবহার করে শুধু নির্দিষ্ট পোর্টে সিগন্যালটি পাঠায়। শুধু তাই নয় দুর্বল হয়ে পড়া সংকেতটিকে অ্যামপ্লিফাই (বর্ধিত) করে গন্তব্য কম্পিউটারের পোর্টে প্রেরণ করে। একটি সুইচ নিয়ে একটি LAN তৈরি করা যায়, একাধিক LAN তৈরি সম্ভব নয়।

ব্রিজ (Bridge): একই ধরনের নেটওয়ার্ক সংযোগের জন্য ব্যবহৃত অপেক্ষাকৃত সরল মধ্যবর্তী ব্যবস্থাকে ব্রিজ বলে।

রাউটার (Router): রাউটার এমন একটি কানেকটিং ডিভাইস যা একই প্রটোকলভুক্ত দুই বা ততোধিক স্বতন্ত্র নেটওয়ার্কের সংযোগ করে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করতে পারে। এর মাধ্যমে একই ধরনের ছোট আকারের ভিন্ন ভিন্ন গঠনের একাধিক LAN সংযুক্ত করে বড় ধরনের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা যায়। WAN এর সাথে একটি LAN যুক্ত করতে রাউটার ব্যবহৃত হয়। রাউটার NAT (Network Address Translation) ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক চিহ্নিত করে থাকে। একটি নেটওয়ার্ক থেকে পাওয়া ডেটা সংকেত রাউটার সবচেয়ে কম দূরত্বের পথ ব্যবহার করে অন্য নেটওয়ার্কের নিদিষ্ট ডিভাইসে পাঠাতে পারে। কোনো একটি ডেটা প্যাকেটকে কোনো পথ দিয়ে পাঠানো সবচেয়ে সুবিধাজনক রাউটার সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। রাউটার ডেটা ফিল্টারিং করতে পারে। নেটওয়ার্কে ডেটার আধিক্য এবং ব্যস্ততা দেখতে পেলে রাউটার সেই রুট (পথ) পরিহার করে অন্য রুট (পথ) দিয়ে ডেটা পাঠাতে সক্ষম হয়। তবে এর কনফিগারেশন অপেক্ষাকৃতভাবে একটু জটিল। একই প্রটোকলবিশিষ্ট নেটওয়ার্কের মাঝে সংযোগ স্থাপন করলেও রাউটার ভিন্ন প্রটোকলবিশিষ্ট একাধিক নেটওয়ার্কের মাঝে সংযোগ স্থাপনে করতে পারে না। রাউটার তৈরির ক্ষেত্রে Cisco বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন করেছে।

গেটওয়ে (Gateway): ভিন্নধর্মী প্রটোকলবিশিষ্ট নেটওয়ার্কের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য গেটওয়ে ব্যবহৃত হয়। এটি একই ধরনের বা ভিন্ন ভিন্ন প্রটোকলবিশিষ্ট একাধিক নেটওয়ার্কের মধ্যে ডেটা আদান-প্রদানের সুযোগ করে দেয় অর্থাৎ এটি মূলত একটি নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি ডিভাইস। গেটওয়ে অপেক্ষাকৃত দামি এবং কনফিগারেশন জটিল। গেটওয়ে ব্যবহার করে ছোট ছোট নেটওয়ার্ককে যুক্ত করে বড় ধরনের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা যায়। গেটওয়ে PAT (Protocol Address Translation) ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক চিহ্নিত করে থাকে বলে একে প্রটোকল কনভার্টার বলে। এটি ডেটা ফিল্টারিং করতে পারে এবং শুধু টার্গেট আই.পি অ্যাড্রেসে সংকেত পাঠায়। এটি রাউটারের চেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন এবং ডেটার সংঘর্ষ বা কলিশন আশঙ্কা কম।

OSI মডেলের -
ফিজিক্যাল লেয়ারে কাজ করে- হাব, রিপিটার
ডেটালিংক লেয়ারে কাজ করে- সুইচ, ব্রিজ
নেটওয়ার্ক লেয়ারে কাজ করে- রাউটার, গেটওয়ে

ক্লাউড কম্পিউটিং

তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষতার দরুণ আজকের যুগে আমরা নিজের ঘরের কোণে বসে নিজস্ব ছোট্ট কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে একটি বিশালাকার কম্পিউটারকে ভাড়ার মাধ্যমে যথেচ্ছা ব্যবহার করতে পারি এবং আমাদের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সেই কম্পিউটারে সংরক্ষণও করতে পারি। এই বিশালাকার কম্পিউটারের ধারণাটিই ক্লাউড কম্পিউটিং। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিগত সবকিছুই চলছে এই ক্লাউড কম্পিউটিং ধারণার উপর ভিত্তি করে। 'ক্লাউড' শব্দটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত। ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে যে কোনো ব্যবহারকারী পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের সুবিশাল তথ্যভাণ্ডার দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহার এবং সংরক্ষণ করতে পারেন। আমরা বর্তমানে যারা কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করি তাদের প্রায় সবারই Facebook, E-mail বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একাউন্ট রয়েছে। আমরা ইচ্ছানুযায়ী এসব একাউন্টের মাধ্যমে স্টেটাস দিচ্ছি কিংবা মেইল আদান-প্রদান করে থাকি। এসব সেবা গ্রহণের জন্য আমাদেরকে কোনো টাকা খরচ করতে হয় না। কেননা, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এইসব সার্ভিস বা সেবা প্রদানকারী বেশকিছু কোম্পানীর বিপুল সংখ্যক সার্ভার রয়েছে, যার মাধ্যমে তারা অসংখ্য ক্লায়েন্টকে একই সময়ে সার্ভিস প্রদান করে যাচ্ছেন। আবার কিছু সংখ্যক সার্ভিস রয়েছে। যেগুলো অর্থের বিনিময়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন সেবা দান করে থাকেন। বিনামূল্যের এবং অর্থের বিনিময়ে উভয় প্রকার সার্ভিস ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের অন্তর্গত। এক্ষেত্রে কম্পিউটার রিসোর্স যেমন- হার্ডওয়্যার , সফটওয়্যার , নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে থাকে , ক্রেতা বা ব্যবহারকারী নিজস্ব কম্পিউটার ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সার্ভিসদাতা সার্ভারের সাথে সংযোগ স্থাপন করে প্রয়োজনীয় কম্পিউটিংয়ের কাজ সমাধা করে থাকে। ক্লাউড কম্পিউটিংকে কোনো সুনির্দিষ্ট টেকনোলজি হিসাবে গণ্য করা হয় না, এটি মূলত একটি ব্যবসায়িক মডেল, যার দ্বারা ব্যবহারকারী এবং সার্ভিস প্রদানকারী উভয়ই ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হয়ে থাকেন।

ক্লাউড কম্পিউটিং
ক্লাউড কম্পিউটিং

ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের প্রকারভেদ

ক্লাউড কম্পিউটিং পদ্ধতিকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

প্রাইভেট ক্লাউড (Private Cloud): একক প্রতিষ্ঠান নিজস্ব মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় কিংবা থার্ড পার্টির ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয় যাতে অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, এ ধরনের ক্লাউডকে প্রাইভেট ক্লাউড বলে। এ সব পরিচালনা অত্যন্ত ব্যয়বহুল, তবে অনেক বড় প্রতিষ্ঠানের অনেক শাখায় ডেটা সেন্টার না বসিয়ে একটিমাত্র ক্লাউড ডেটা সেন্টার স্থাপন করলে প্রতিষ্ঠানটির জন্য সাশ্রয়ী হয়।

পাবলিক ক্লাউড (Public Cloud): জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ক্লাউডকে পাবলিক ক্লাউড বলে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত সকলের বিনামূল্যে বা স্বল্প ব্যয়ে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত অ্যাপ্লিকেশন, স্টোরেজ এবং অন্যান্য রিসোর্স ইত্যাদির সার্ভিসযুক্ত ক্লাউড-ই পাবলিক ক্লাউড। Amazon, Microsoft এবং Google ইত্যাদি তাদের নিজস্ব ডেটা সেন্টারে পাবলিক ক্লাউডের অবকাঠামো স্থাপন ও পরিচালনা করার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস প্রদান করে থাকে।

হাইব্রিড ক্লাউড (Hybrid Cloud): দুই বা ততোধিক ধরনের ক্লাউড (প্রাইভেট, পাবলিক বা কমিউনিটি।-এর সংমিশ্রণই হলো হাইব্রিড ক্লাউড। বিভিন্ন ধরনের ক্লাউড পৃথক বৈশিষ্ট্যের হলেও। এক্ষেত্রে একই সাথে সংঘবদ্ধভাবে কাজ করে। ক্লাউড সার্ভিসের ক্ষমতাবৃদ্ধির জন্য একাধিক ক্লাউডকে একীভূত করা হয়ে থাকে।

ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের সুবিধা

ক্লাউড কম্পিউটিং সার্ভিসদাতা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস প্রদান করে থাকে। এ সব সার্ভিস মডেলকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

ক) অবকাঠামোগত সেবা (laaS: Infrastructure as a Service): এই মডেলে অবকাঠামো ভাড়া দেওয়া হয়। অ্যামাজন এর ইলাস্টিক কম্পিউটিং ক্লাউড (EC2) এ রকম একটি মডেল। EC2 এর প্রতিটি সার্ভারে ১ থেকে ৪টি ভার্চুয়াল মেশিন চলে, ক্রেতারা এগুলোই ভাড়া নিয়ে থাকেন। ব্যবহারকারীরা ভার্চুয়াল মেশিনে নিজেদের ইচ্ছেমতো অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার চালাতে পারেন।

খ) প্ল্যাটফর্মভিত্তিক সেবা (PaaS: Platform as a Service): এই মডেলে ভার্চুয়াল মেশিন ভাড়া না দিয়ে ভাড়া দেয়া হয় কম্পিউটিং প্লাটফর্ম, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত অপারেটিং সিস্টেম, প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এক্সিকিউশন পরিবেশ, ডেটাবেজ ও সার্ভার ইত্যাদি। এ প্লাটফর্মে ব্যবহারকারী স্বল্প ব্যয়ে তার অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার উন্নয়ন করতে পারেন। মাইক্রোসফটের Azure এবং Google এর App Engine এই মডেলের উদাহরণ।

গ) সফটওয়্যার সেবা (SaaS: Software as a Service): এই মডেলে ব্যবহারকারীরা সার্ভিসদাতা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করা সফটওয়্যার ও ডেটাবেজের অ্যাকসেস এবং ব্যবহারের সুযোগ পায়। এর ফলে ব্যবহারকারীকে সিপিইউ বা স্টোরেজের অবস্থান, কনফিগারেশন ইত্যাদি জানা বা রক্ষণাবেক্ষণ করার প্রয়োজন হয় না।।

এছাড়াও ক্লাউড সার্ভিসের ব্যবহারকারীরা নিচের সুবিধাগুলো ভোগ করে থাকে:

  • যত চাহিদা তত সার্ভিস (Resource Flexibility): ছোট বা বড় যাই হোক, ক্রেতার সব ধরনের চাহিদাই মেটানো হবে, ক্রেতা যত চাইবে সেবাদাতা ততোই অধিক পরিমাণে সেবা দিতে পারবে।
  • যখন চাহিদা তখন সার্ভিস (On demand): ক্রেতা যখন চাইবে, তখনই সেবা নিতে পারবে। ক্রেতা তার ইচ্ছা অনুযায়ী যখন খুশি তার চাহিদা বাড়াতে বা কমাতে পারবে।
  • যখন ব্যবহার তখন মূল্য পরিশোধ (Pay as you go): ইহা একটি পেমেন্ট মডেল। ক্রেতাকে আগে থেকে কোনো সার্ভিস রিজার্ভ করতে হবে না। ক্রেতা যা ব্যবহার করবে কেবলমাত্র তার জন্যই পেমেন্ট দিতে হবে।
  • উদ্যোক্তাদের সুযোগ: সার্বক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য ক্লাউড সার্ভিস ছোট ও প্রাথমিক উদ্যোক্তাদের জন্য সহজে ব্যবসা করার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। যে কোনো স্থান হতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য আপলোড এবং ডাউনলোড করা যায়। নিজস্ব কোনো হার্ডওয়্যারের প্রয়োজন হয় না। যে কোনো ছোট বড় হার্ডওয়্যারের মধ্য দিয়ে অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে। তথ্য কীভাবে সংরক্ষিত হবে বা প্রসেস হবে তা জানার প্রয়োজন হয় না। স্বয়ংক্রিয়ভাবে সফটওয়্যার আপডেট করা হয়ে থাকে। সার্বক্ষণিক ব্যবহার করা যায়। অপারেটিং খরচ তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
  • ক্লাউড স্টোরেজ: Google Drive, Microsoft's OneDrive, Dropbox, pCloud, Mega, iDrive, Apple's iCloud etc
  • ক্লাউড কম্পিউটিং প্লাটফর্ম: AWS (Amazon Web Service), Microsoft's Azure, GAE (Google App Engine), Apache Hadoop etc

ক্লাউড কম্পিউটিং প্রযুক্তি জগতে একটি নতুন দিগন্তের উন্মোচন করলেও একই সাথে এটি তথ্যের জগতে বিশাল নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। এই সার্ভিসে ডেটা, তথ্য, প্রোগ্রাম বা অ্যাপ্লিকেশনের উপর ব্যবহারকারীর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। একবার ক্লাউডে তথ্য পাঠিয়ে দেওয়ার পর তা কোথায় সংরক্ষণ হচ্ছে বা কিভাবে প্রসেস হচ্ছে তা ব্যবহারকারীদের জানার উপায় থাকে না।

নবীনতর পূর্বতন