বাংলাদেশের পরিবেশ দূষণ ও প্রধান চ্যালেঞ্জসমূহ

ভৌতিক ও জৈবিক কারণে পরিবেশের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের যে কোনো পরিবর্তনকেই বলে পরিবেশ দূষণ। পরিবেশ দূষণ প্রধানত চার প্রকার যথাঃ ১. বায়ুদূষণ ২. পানিদূষণ ৩. মাটিদূষণ ৪. শব্দদূষণ । দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক শক্তিতে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে নিজের জায়গা দখল করে নিচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ঝুঁকি মোকাবেলা করে সুস্থ পরিবেশ সুরক্ষা বাংলাদেশের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ এর মতই। বাংলাদেশের প্রধান চ্যালেঞ্জ সমূহ নিম্নরুপ:

  • জনসংখ্যা সমস্যা
  • বেকারত্ব
  • অপরিকল্পিত নগরায়ন
  • অপুষ্টি
  • বনভূমির হ্রাস
  • অপরিকল্পিত নগরায়ন
  • সামাজিক অবক্ষয়
  • রাজনৈতিক অস্থিরতা
  • পরিবেশ দূষণ: বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, শিল্প দূষণ, মাটি দূষণ, তেজস্ক্রিয় দূষণ, শব্দদূষণ।

পরিবেশ সম্পর্কিত কিছু তথ্য :

  • প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রধান নিয়ামক : পানি, গাছপালা ইত্যাদি।
  • 'ইকোলজি' শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন : জার্মান বিজ্ঞানী আর্নেস্ট হেকেল।
  • পৃথিবীর প্রথম জাতীয় উদ্যান : ইয়োলো স্টোন ন্যাশনাল পার্ক।
  • এশিয়ার সর্ববৃহৎ বস্তি অবস্থিত : ভারতের মুম্বাইয়ে।
  • বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ তৈরির পদ্ধতিকে বলে : বায়ো একটিভা।
  • ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য বাংলাদেশ পরিচিত : প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে।
  • বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিবেশ দূষণ নগরী : :মেক্সিকো।
  • ই-৮ হলো পরিবেশ দূষণকারী : ৮টি দেশ।
  • সর্ববৃহৎ সৌরশক্তি কেন্দ্র অবস্থিত : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।
  • যেখানে দুই বা ততোধিক উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্প্রদায় পরস্পর মিলিত হয়ে মিশে যায় তাকে বলে: ইকোটোন।
  • সাগরের শেওলার সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে পৃথিবীর বাতাসে অক্সিজেন আসে - ৭০ ভাগ।

বায়ু দূষণ

বায়ু দূষণের কারণ :

  • কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড , হাইড্রোকার্বন, সীসা, ধূলিকণা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। মোটরগাড়ির ধোঁয়া, কলকারখানার বিষাক্ত ধোয়া বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ।
  • SMOG অর্থ-দূষিত বাতাস (Smoke এবং Fog সমন্বয়ে SMOG শব্দটি সৃষ্টি হয়েছে ) ।
  • বাতাসে ভেসে বেড়ানো আর্সেনিক, সিসা, নিকেল প্রভৃতি ধাতু কণাকে বলে ভাসমান বস্তুবণ্য বা SPM ।
  • গাড়ি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় যে বিষাক্ত গ্যাস থাকে তা হলো - কার্বন মনোক্সাইড (CO)।
  • ডিজেল পোড়ালে উৎপন্ন হয় - সালফার ডাই-অক্সাইড।
  • ওজোনের গড় ঘনত্ব প্রতি কেজি বাতাসে - ৬৩৫ মাইক্রোগ্রাম।
  • পরিবেশের শব্দ দূষণের ফলে প্রধানত হতে পারে - উচ্চ রক্তচাপ।
  • বায়ুদূষণের জন্য প্রধানত দায়ী - কার্বন-মনোক্সাইড।
  • বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের স্বাভাবিক পরিমাণ - ০.০৩ শতাংশ
  • WHO-এর মতে, বাতাসে SPM-এর স্বাভাবিক মাত্রা - ২০০ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার।
  • বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৩% শতাংশের বেশি হলে কোনো প্রাণী বাঁচতে পারে না
  • দুই স্ট্রোক ইঞ্জিন চার স্ট্রোক বিশিষ্ট ইঞ্জিনের চাইতে বায়ুদূষণ হয় বেশি।

সর্বোচ্চ সহনীয় বায়ুদূষণের মাত্রা (মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার) :

স্থান SPM So2 CO NO
শিল্পাঞ্চল ও মিশ্র এলাকা ৫০০ ১২০ ৫০০০ ১০০০
বাণিজ্যিক এলাকা ৪০০ ১০০ ৫০০০ ১০০
আবাসিক এলাকা ও গ্রামাঞ্চল ২০০ ৮০ ২০০০ ৮০
স্পর্শকাতর এলাকা (হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) ১০০ ৩০ ১০০০ ৩০

বায়ুদূষণ রোধে পদক্ষেপ :

  • বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোষন ২০১০) অনুযায়ী যানবাহনে ক্ষতিকর ধোয়া সৃষ্টির জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করা যায়।
  • বায়ু দূষণ হাসের লক্ষ্যে ২০০৩ সালের ১ জানুয়ারী ঢাকা মহানগরীতে টু-স্ট্রোক যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয় ।
  • ইটভাটা থেকে সৃষ্ট দূষণ কমানোর লক্ষ্যে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ প্রণয়ন করা হয়েছে।
  • পুরাতন ইটভাটাগুলো ২০১৪ সাল থেকে পরিবর্তন করে পরিবেশবান্ধব ইট ভাটায় রূপান্তরিত করা হয়েছে। এ যাবৎ প্রায় ৬১% ইটভাটা পরিণত হয়েছে।
  • দেশে ১১ টি বায়ু মান পরীক্ষণ যন্ত্র চালু আছে ।

পানি দূষণ

  • পানিদূষণ বলতে বোঝায় পানির গুনাগুন এর যে কোন অনাকাঙ্কিত ও ক্ষতিকর পরিবর্তন।
  • সর্বপ্রথম পানি দূষন সমস্যাকে চিহ্নিত করেন হিপোক্রেটিস।
  • অধিকাংশ রোগ জীবাণুর উৎস দূষিত পানি।
  • পরিবেশ অধিদপ্তর ১৯৭৩ সাল থেকে নদীর পানি মনিটরিং করে আসছে।
  • ২৭টি নদীর পানি ৬৩টি স্থানে মনিটরিং করা হয়।
  • বুড়িগঙ্গার পানি দূষণের কারণ: শিল্প কারখানার বর্জ্য।
  • বাংলাদেশের যে নদীর দূষণের মাত্রা সর্বাধিক : বুড়িগঙ্গা
  • যে দূষণ প্রক্রিয়ায় পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ আক্রান্ত : পানি দূষণ।
  • নদীর নাব্যতা হ্রাস পেলে নদী পথের গুরুত্ব কমে যায়।
  • যে নদীগুলোতে জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত কোন অক্সিজেন থাকে না - বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ নদী
  • দক্ষিনাঞ্চলে প্রবাহিত নদীর Turbidity বেশী দেখা যায়। কর্ণফুলী নদীতে সর্বোচ্চ COD- ৩৫ মিয়া/লি এর বেশি।
  • বুড়িগঙ্গার যে জায়গায় দূষণের মাত্রা সর্বাধিক হাজারীবাগের নিকট। সাগরের ৮০% পানি দূষণের জন্য দায়ী সাগর পাড়ের বাষ্ট্রগুলোর কর্মকান্ড।
  • পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত সাগর মনে করা হয় - ভূমধ্যসাগরকে।
  • পৃথিবীর সর্বাধিক মাত্রার দূষিত নদী - সিতারাম নদী, ইন্দোনেশিয়া।
  • সাগরের কোন এলাকা সবচেয়ে বেশি দূষিত - তীরবর্তী এলাকা।
  • অম্ল বৃষ্টি সাধারণত যে এলাকায় বেশি হয় - শিল্পোন্নত দেশসমূহে।
  • সাগরের পানি তেল দ্বারা দূষিত হলে অক্সিজেন তৈরি কম হয়।
  • পানি দূষণের জন্য দায়ী-শিল্পকারখানার বর্জ্য পদার্থ, শহর ও গ্রামের ময়লা আবর্জনা, জমি থেকে ভেসে আসা রাসায়নিক সার ও কীটনাশক।

আর্সেনিক দূষণ

  • বাংলাদেশে প্রথম আর্সেনিক শনাক্ত হয় - ১৯৯৩ সালে।
  • বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৬১টি জেলা আর্সেনিক দূষণের শিকার।
  • বাংলাদেশের প্রাপ্ত আর্সেনিকের মাত্রা ১.০১ মিলিগ্রাম/লিটার।
  • আর্সেনিকের গ্রহণযোগ্য মাত্রা: বাংলাদেশ ০.০৫ মিলিগ্রাম/লিটার , WHO মতে ০.০১ মিগ্রা/ লিটার।
  • দেশের প্রথম আর্সেনিক ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায়।
  • সর্বাধিক আর্সেনিক আক্রান্ত জেলা- চাঁদপুর।
  • আর্সেনিক পাওয়া যায়নি পার্বত্য ৩ টি জেলায়, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান জেলায়।
  • আর্সেনিক দূরীকরণ সনো এবং আর্থ ফিল্টারের উদ্ভাবক - প্রফেসর আবুল হুসমাম এবং অধ্যাপক দুলালী চৌধুরী।
  • বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয় - ১৯৫৯ সালে।
  • সায়দাবাদ পানি শোষন প্রকল্পে দৈনিক পানি উৎপাদন ক্ষমতা - ২২.৫ কোটি লিটার।
  • দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি।
  • বাংলাদেশে আর্সেনিক দূষণের প্রধান কারণ ভূগর্ভস্থ পানির মাত্রাতিরিক্ত উত্তোলন।

পলিথিন ব্যবহার ক্ষতিকর: ইথিলিনের একাধিক অণু রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে যে বড় অণু গঠন করে তাই পলিথিন। এটি একটি জটিল যৌগ। এ জটিল যৌগ পানি বা মাটির সাথে বিক্রিয়া করে না। ব্যবহারের পর পরিত্যক্ত পলিথিন মাটিতে বা পানিতে পচে না। ফলে এটি দীর্ঘকাল অপরিবর্তিত থেকে মাটি, পানি তথা পরিবেশের ক্ষতি করে।

  • পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করার বড় কারণ - পরিবেশ দূষণ হ্রাস।
  • ঢাকায় পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ হয় - ১ জানুয়ারি ২০০২
  • সারা বাংলাদেশে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ হয় - ১ মার্চ ২০০২
  • ড. মোবারক হোসেন ২০১৮ সালে পাট থেকে সোনালী ব্যাগ নামে পচনশীল পলিথিন ব্যাগ আবিষ্কার করেন।

শব্দ দূষণ

শব্দদূষণের ফলে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। শব্দ পরিমাপের একক ডেসিবল। ডেসিবলের মাত্রা ১ থেকে ১৬০ হতে পারে। ১ থেকে ৬০ ডেসিবল পর্যন্ত সহনীয়, ৬০ থেকে ১০০ ডেসিবল পর্যন্ত বিরক্তিকর এবং ১০০ থেকে ১৬০ ডেসিবল পর্যন্ত শব্দ শ্রবণশক্তির জন্য ক্ষতিকর। ১০৫ ডিবি এর বেশি মাত্রার শব্দ দূষণ হলে মানুষ বধির হয়ে যেতে পারে।

  • ঢাকা মহানগরীর শব্দ দূষণ মাত্রা ১১৫-১৭০ ডিবি
  • শব্দ দূষণের ফলে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।
  • শব্দ পরিমাপের একক ডেসিবল।
  • মানুষ বধির হয়ে যেতে পারে ১০৫ ডিবির ওপরের শব্দে।
  • শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা আইন প্রণয়ন করা হয় ২০০৬ সালে।
  • শব্দের মাত্রা যে পরিমাণের বেশি হলে তাকে শব্দদূষণ বলে- ৮০ ডেসিবেল।

মাটি দূষণ

  • মাটির ক্ষয়রোধ করে বনভূমি।
  • পরিত্যক্ত পলিথিন মাটিতে পচে না বলে দীর্ঘকাল অপরিবর্তিত থেকে মাটি, পানি তথা পরিবেশের ক্ষতি করে।
  • ১ জানুয়ারি ২০০২ সালে ঢাকা শহর এবং ১ মার্চ ২০০২ সালে পলিথিন ব্যবহার করা নিষিদ্ধ করা হয় সারাদেশে।

শিল্প দূষণ

  • দূষণ সৃষ্টিকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার ব্যবস্থা (Effluent Treatment Plant)
  • ETP আছে এমন শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১১১৩ টি এবং ETP বিহীন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ৩৬৯ টি।
  • পরিবেশ আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে - ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে।
  • শিল্প কারখানার সংখ্যা বেশি - ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে।
  • পরিবেশবান্ধব শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে - রেমি গার্মেন্টস।

তেজস্ক্রিয়তাজনিত দূষণ

তেজস্ক্রিয়তাজনিত দূষণ মানুষের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর এক ধরনের অদৃশ্য দূষণ। তেজস্ক্রিয়তার উৎস সূর্য ও মহাশূন্য, যেখান থেকে তা পৃথিবীতে পৌঁছে। ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয়তার অধিকাংশ বিকরিত হয় বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে, বিশেষত পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্ফোরণ, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক সামগ্রী থেকে।

নবীনতর পূর্বতন