আবহাওয়া ও জলবায়ু কী? সংজ্ঞা , পার্থক্য , পরিবর্তনের প্রভাব

আবহাওয়া ও জলবায়ু আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পরিচিত দুটি শব্দ। আবহাওয়া ও জলবায়ু উভয়ই নির্দিষ্ট স্থানের বায়ুমণ্ডলের একেকটি বিশেষ অবস্থাকে নির্দেশ করে । সাধারণত আবহাওয়া নির্দিষ্ট স্থানের বায়ুমণ্ডলের স্বল্প সময়ের অবস্থাকে এবং জলবায়ু নির্দিষ্ট স্থানের বায়ুমণ্ডলের দীর্ঘ সময়ের অবস্থাকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয় । আবহাওয়া যে কোন সময়েই সহজেই পরিবর্তন হতে পারে কিন্তু জলবায়ু সহজে পরিবর্তন সম্ভব নয় ।

আবহাওয়া ও জলবায়ু

আবহাওয়া ও জলবায়ু

প্রতি দিনের গড় তাপ, চাপ, বায়ুপ্রবাহ, আর্দ্রতা ও বারিপাতের তথ্যের ভিত্তিতে কোনো এলাকার যে অবস্থা প্রকাশ করে তাকেই আবহাওয়া বলে। সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ বছরের গড় আবহাওয়ার অবস্থাকে জলবায়ু বলে। সাধারণত বৃহৎ এলাকাজুড়ে জলবায়ু পরিমাপ করা হয়ে থাকে। আবহাওয়া সম্পর্কীয় বিজ্ঞান,যা ইংরেজিতে মেটিওরোলজি ( Meteorology ) নামে পরিচিত । সমুদ্র নিকটবর্তী এলাকায় শীত-গ্রীষ্ম এবং দিনরাত্রির তাপমাত্রার তেমন পার্থক্য হয় না। এ ধরনের জলবায়ুকে সমভাবাপন্ন জলবায়ু বলে। সমুদ্র উপকূল থেকে দূরের এলাকায় শীত-গ্রীষ্ম উভয়ই চরম হয়। কারণ স্থলভাগ জলভাগ অপেক্ষা যেমন দ্রুত উষ্ণ হয়, আবার দ্রুত ঠান্ডাও হয়। এ জন্য গ্রীষ্মকালে মহাদেশের অভ্যন্তর ভাগের এলাকা অত্যন্ত উত্তপ্ত থাকে, আবার শীতকালে প্রচন্ড শীত অনুভূত হয়। এ ধরনের জলবায়ুকে মহাদেশীয় বা চরমভাবাপন্ন জলবায়ু বলে। জানুয়ারি মাসে সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধের অধিক নিকটবর্তী থাকে। তাই জানুয়ারি দক্ষিণ গোলার্ধে উষ্ণতম মাস এবং উত্তর গোলার্ধে শীতলতম মাস।

আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদান:

  1. বায়ুর তাপ
  2. বায়ুর চাপ
  3. বায়ুপ্রবাহ
  4. বায়ুর আর্দ্রতা
  5. বারিপাত।

আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদানসমূহ নিম্নলিখিত নিয়ামক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়:

  1. অক্ষাংশ
  2. উচ্চতা
  3. সমুদ্র থেকে দূরত্ব
  4. বায়ুপ্রবাহ
  5. সমুদ্রস্রোত
  6. পর্বতের অবস্থান
  7. ভূমির ঢাল
  8. মৃত্তিকার গঠন
  9. বনভূমির অবস্থান।

সংক্ষিপ্ত তথ্য:

  • জলবায়ুর উপর প্রভাব বিস্তারকারী অন্যতম প্রধান উপাদান হলো- অক্ষরেখা/ অক্ষাংশ।
  • অক্ষাংশের প্রভাব বেশি - বায়ু ও তাপের ওপর।
  • নিরক্ষরেখার অপর সূর্যকিরণ সোজাসুজি পড়ার ফলে দিন রাত্রি সমান হয় এবং আবহাওয়া ও জলবায়ু সবসময় উষ্ণ থাকে।
  • সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বেশী থাকে।
  • প্রতি ৯১ মিটার (৩০০ ফুট) উচ্চতায় উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় ০.৫৬° সেলসিয়াস (১" ফারেনহাইট)
  • শীতকালে বায়ুতে কম থাকে জলীয়বাষ্প।
  • বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম দিক থেকে আগত মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয়- গ্রীষ্মকালে।
  • ভারতীয় উপমহাদেশের জলবায়ু অপেক্ষাকৃত কম শীতল।
  • সূর্য রশ্মি সোজাসুজিভাবে পতিত হয়- নিরক্ষীয় অঞ্চলে।
  • নিরক্ষীয় অঞ্চলে গড়ে উঠেছে- চিরহরিৎ বৃক্ষের বন।
  • সারা বছর বৃষ্টিপাত হয়- নিরক্ষীয় অঞ্চলে।
  • অক্ষাংশের দিকে সূর্যকিরণ লম্বভাবে পতিত হয়- ঢালু ভূমির ওপর।
  • সূর্যতাপে অতি তাড়াতাড়ি গরম হয়- বালু বা প্রস্তরময় মাটি।
  • কাদা এবং পলি মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বেশি কিন্তু তাপ বিকিরণ ক্ষমতা কম।
  • সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু সমভাবাপন্ন কিন্তু সমুদ্র থেকে দূরবর্তী এলাকার জলবায়ু চরমভাবাপন্ন।
  • বায়ু সর্বদা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রবাহিত হয়- তাপ ও চাপের পার্থক্যের জন্য।
  • পৃথিবীর বায়ুপ্রবাহকে ৪টি ভাগে ভাগ করা যায়- নিয়ত বায়ু, সাময়িক বায়ু, স্থানীয় বায়ু, অনিয়মিত বায়ু।
  • আরব মরুভূমির একটি স্থানীয় বায়ু সাইমুম।
  • পৃথিবীর চাপ বলয় আছে সাতটি।
  • রাতের বেলা বায়ু স্থল ভাগ থেকে প্রবাহিত হয় সমুদ্রের দিকে।
  • দিনের বেলা বায়ু সমুদ্র থেকে প্রবাহিত হয় স্থলভাগের দিকে।

বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু

বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণাংশে অবস্থিত হলেও মহাদেশীয়-অক্ষাংশীয় অবস্থানের দিক থেকে এটি উত্তর অক্ষে অবস্থিত। কর্কটক্রান্তি রেখা বাংলাদেশের ঠিক মধ্যভাগ দিয়ে অতিক্রম করেছে আর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মৌসুমী স্রোত এদেশের দক্ষিণ-প্রান্তবর্তী বঙ্গোপসাগর দিয়ে অতিক্রম করায় এখানে ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ু বিরাজ করে। তাই বাংলাদেশ ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত এবং বাংলাদেশের জলবায়ু সমভাবাপন্ন।

বাংলাদেশের তাপমাত্রা

  • বাংলাদেশের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ২৬.০১ সে.
  • গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা ২৮ সে.
  • বর্ষাকালে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা ২৭ সে
  • শীতকালে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা ১৭.৭ সে.
  • বাংলাদেশের উষ্ণতম স্থান : নাটোরের লালপুর
  • বাংলাদেশের শীতলতম স্থান : সিলেটের শ্রীমঙ্গল
  • বাংলাদেশের উষ্ণতম জেলা : রাজশাহী
  • বাংলাদেশের শীতলতম জেলা : সিলেট
  • শীতকালে বাংলাদেশের সবচেয়ে শীতলতম জেলা : দিনাজপুর
  • বাংলাদেশের উষ্ণতম মাস : এপ্রিল
  • বাংলাদেশের শীতলতম মাস : জানুয়ারি

বাংলাদেশের বৃষ্টিপাত

  • বাংলাদেশের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত- ২০৩ সেমি বা ২০৩০ মি.মি
  • বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের স্থান-সিলেটের জৈন্তাপুরের লালখাল
  • বাংলাদেশের সর্বনিম্ন বৃষ্টিপাতের স্থান-নাটোরের লালপুর
  • ঋতুভিত্তিক বৃষ্টিপাত :
    ক) বাংলাদেশে মোট বৃষ্টিপাতের এক পঞ্চমাংশ গ্রীষ্মকালে হয়।
    খ) বাংলাদেশে মোট বৃষ্টিপাতের পাঁচভাগের প্রায় চারভাগ বৃষ্টিপাত বর্ষাকালে হয়।
  • বাংলাদেশে বার্ষিক সর্বোচ্চ গড় বৃষ্টিপাত - সিলেট

বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্য

  • বাংলাদেশের মোট ঋতু ৬ টি। যথা- গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত।
    গ্রীষ্ম = বৈশাখ + জ্যৈষ্ঠ , বর্ষা = আষাঢ়+ শ্রাবণ, শরৎ = ভাদ্র + আশ্বিন, হেমন্ত = কার্তিক-অগ্রহায়ণ . শীত = পৌষ + মাঘ , বসন্ত = ফাল্গুন + চৈত্র।
  • বাংলাদেশের স্বতন্ত্র ঋতু : বর্ষাকাল
  • বাংলাদেশে শীতকালে কম বৃষ্টিপাত হয় উত্তর- পূর্ব শুষ্ক মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে
  • বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় দিন : ২১ জুন
  • বাংলাদেশে সবচেয়ে ছোট দিন : ২২ ডিসেম্বর

বাংলাদেশের জলবায়ুকে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত ও বার্ষিক তাপমাত্রার ভিত্তিতে তিনটি ঋতুতে ভাগ করা হয়েছে। যথা- (ক) গ্রীষ্মকাল, (খ) বর্ষাকাল ও (গ) শীতকাল।

বাংলাদেশের প্রধান তিনটি ঋতুর বর্ণনা
ঋতু এবং সময়কাল তাপমাত্রা বায়ুপ্রবাহ বৃষ্টিপাত
গ্রীষ্মকাল (মার্চ-মে) (ফাল্গুন-জ্যৈষ্ঠ) • সবচেয়ে উষ্ণ ঋতু।
• সর্বোচ্চ: ৩৪ সে.
• সর্বনিম্ন: ২১ সে.
• গড়: ২৮ সে.
• সবচেয়ে উষ্ণ মাস: এপ্রিল মাস
• দক্ষিণ দিক থেকে উষ্ণ এবং আর্দ্র বায়ু এবং উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আগত শীতল ও শুষ্ক বায়ু সংঘর্ষে ঝড় বৃষ্টি হয়। • মার্চ-এপ্রিলে কালবৈশাখী ঝড় হয়।
• গড় বৃষ্টিপাত: ৫১ সে.মি.
• মোট বৃষ্টির এক পঞ্চমাংশ / ২০% এ সময় হয়।
বর্ষাকাল (জুন- অক্টোবর) (জ্যৈষ্ঠ- কার্তিক) • প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে কম তাপমাত্রা অনুভূত হয়।
• গড় তাপমাত্রা ২৭ সেলসিয়াস।
• জুন মাসের প্রথম দিকে বায়ুর মৌসুমী আগমনে বর্ষা ঋতুর শুরু হয়।
• বর্ষা শেষে মাঝে মাঝে বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে।
• মোট বৃষ্টি শতকরা ৮০ ভাগ এ সময় হয়।
• দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এসময় বাংলাদেশের শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত হয়।
শীতকাল (নভেম্বর- ফেব্রুয়ারি) (কার্তিক- ফাল্গুন) • সর্বোচ্চ তাপমাত্রা: ২৯ সেলসিয়াস
• সর্বনিম্ন তাপমাত্রা: ১১ সেলসিয়াস
• গড় তাপমাত্রা: ১৭.৬০ সেলসিয়াস
• শীতলতম মাস: জানুয়ারি
• উত্তর পূর্ব দিক থেকে আগত শীতল মৌসুমী বায়ু এই ঋতুতে প্রধান।
• সর্বনিম্ন আর্দ্রতা: ৩৬%
• বৃষ্টি প্রায় হয় না বললেই চলে।
• উপকূলীয় এবং পাহাড়ি এলাকায় খুব সামান্য বৃষ্টিপাত হয় যে ১০ সেন্টিমিটার এর বেশি নয়।

মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন কেন্দ্র (SPARRSO)
Space Research and Remot Sensing Organization
• ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত মহাকাশ গবেষণাকারী সরকারী সংস্থা।
• ঘূর্ণিঝড় ও দূর্যোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একমাত্র পূর্বাভাস কেন্দ্র।
• ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
• সংস্থাটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে।

সার্ক আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্র (SMRC)
SAARC Meteorological Research Centre
• ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত।
• ১৯৯৫ সালের ২ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়।

গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত তথ্য :

  • বাংলাদেশের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য মৌসুমি বায়ু।
  • বাংলাদেশের বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত এর সাথে প্রায়ই নিম্ন চাপ ও ঘূর্ণিবাতের সংযোগ থাকে।
  • সমবৃষ্টিপাত সম্পন্ন স্থানসমূহকে যোগকারী রেখাকে বলা হয় আইসোহাইট ।
  • বাংলাদেশের ভূগোল কম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র চারটি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর এবং সিলেট।
  • বর্তমানে রাডার স্টেশন পাঁচটি: ঢাকা, পতেঙ্গা, মৌলভীবাজার, পটুয়াখালী, কক্সবাজার।
  • বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর Bangladesh Meteorological Department (BMD).
  • বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর আঞ্চলিক কেন্দ্র ২টি।
  • বাংলাদেশের কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্র ১২টি।
  • বাংলাদেশে রেকর্ডকৃত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা - ১৯৭২ সালের ১৮ মে, রাজশাহীতে ৪৫.১° সেলসিয়াস।
  • বাংলাদেশের রেকর্ডকৃত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা: ১৯০৫ সালে দিনাজপুরে ১.৬° সেলসিয়াস।
  • বাংলাদেশ আবহাওয়া রাডার সিস্টেম এর প্রধান কেন্দ্র: ঢাকা, আগারগাঁও।
  • ল্যান্ড সেট ও নোয়া কি? - কৃত্রিম উপগ্রহ যা ভূমি জরিপ কাজে নিয়োজিত।
  • পূর্বে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড রিসিভিং স্টেশন কোথায় ছিল? - সাভারে।

বাংলাদেশে ভূ-উপগ্রহ

আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে যে কেন্দ্র ব্যবহার করা হয়, তাই ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র। বাংলাদেশে ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের সংখ্যা ৪টি।

এক নজরে বাংলাদেশের ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র
উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্রের নাম অবস্থান প্রতিষ্ঠা জ্ঞাতব্য
সজীব ওয়াজেদ উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র (বেতবুনিয়া উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র) রাঙামাটি ১৯৭৫ বাংলাদেশের প্রথম উপগ্রহ ভূ- কেন্দ্র
সজীব ওয়াজেদ উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র (তালিবাবাদ উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র) গাজীপুর ১৯৮২ -
মহাখালী উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র ঢাকা ১৯৯৫ যোগাযোগ ছাড়াও আন্তর্জাতিক ট্রাঙ্ক এক্সচেঞ্জের কাজে ব্যবহৃত হয়।
সিলেট উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র সিলেট ১৯৯৭ বাংলাদেশের সর্বশেষ উপগ্রহ ভূ- কেন্দ্র

আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে পার্থক্য

আবহাওয়া জলবায়ু
আবহাওয়া হলো কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো নির্দিষ্ট স্থানের আকাশ ও বায়ুমণ্ডলের সাময়িক অবস্থা। জলবায়ু হলো কোনো স্থানের বহু বছরের আবহাওয়ার গড় অবস্থা।
আবহাওয়া কোনো নির্দিষ্ট স্থানের নির্দিষ্ট সময়ের বায়ুর উষ্ণতা, বায়ুচাপ, বায়ুপ্রবাহ, আদ্রতা, বৃষ্টিপাত, প্রভৃতি উপাদানের দৈনন্দিন অবস্থাকে নির্দেশ করে । জলবায়ু সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ বছরের গড় আবহাওয়ার অবস্থাকে নির্দেশ করে ।
কোন একটি এলাকার বা দেশের বিভিন্ন স্থানের আবহাওয়া দিনের বিভিন্ন সময় ভিন্ন হয়। কিন্তু একটি দেশের বা এলাকার বিভিন্ন স্থানের জলবায়ু একই রকম থাকে ।
বছরের কোনো সময়ের আবহাওয়া কেমন হবে তা আবহওয়ার পূর্বাভাস থেকে জানতে পারি না । কিন্তু বছরের কোনো সময়ের আবহাওয়া কেমন হতে পারে তা আমরা পূর্ব অভিজ্ঞতা ও জলবায়ুর ধারণা থেকে অনুমান করতে পারি।
আবহাওয়া স্বল্পকালীন বায়ুমন্ডলীয় অবস্থাকে নির্দেশ করে । জলবায়ু দীর্ঘকালীন বায়ুমন্ডলীয় অবস্থাকে নির্দেশ করে ।
আবহাওয়া সবসময় পরিবর্তনশীল। যেমন- সকালে রোদ উঠলেও বিকালে আকাশ মেঘলা হতে পারে । জলবায়ু সহজে পরিবর্তনশীল নয় । যেমন- যে সময় বর্ষা হওয়ার কথা সে সময় বর্ষা হবেই । তবে বায়ুমন্ডলের সার্বিক দূষণ ধীরে ধীরে জয়বায়ুকে পরিবর্তন করে দিতে পারে ।
আবহাওয়া হল জলবায়ুর বিভিন্নতা । জলবায়ু হল বিভিন্ন আবহাওয়ার সমন্বয় ।

আবহাওয়া ও জলবায়ুর নিয়ামকসমূহ

আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ামকসমূহের সেক্টরভিত্তিক যেমন- অভিবাসন , কৃষি , শিল্প , মৎস্য ইত্যাদি নিচে তুলে ধরা হল :

কৃষিকাজের ভৌগলিক নিয়ামকসমূহঃ

  • প্রাকৃতিক নিয়ামক: জলবায়ু, মৃত্তিকা, ভূ-প্রকৃতি।
  • অর্থনৈতিক নিয়ামক: মূলধন, শ্রমিক, বাজার পরিবহন।
  • সাংস্কৃতিক নিয়ামক: জনসংখ্যা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যা, সরকারি সাহায্য।

ধান চাষের নিয়ামকসমূহঃ

  • ধান চাষের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত।
  • নদী উপত্যকা ও ব-দ্বীপের পলি ও কাদা মাটিতে ধানের ফলন ভালো হয়।
  • উচ্চ ফলনশীল বীজ, সার, কীটনাশক অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নিয়ামকের মধ্যে অন্যতম।
  • উপযোগী তাপমাত্রা: ১৬-৩০° সেলসিয়াস, বৃষ্টিপাত: ১৫০-২০০ সে.মি।

গম চাষের নিয়ামকসমূহঃ

  • গম চাষের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা: ২১- ২৪° সেলসিয়াস।
  • দোঁ-আশ মাটিতে অর্থাৎ যে মাটিতে বালি ও পলির পরিমাণ সমান থাকে সে মাটি গম চাষের জন্য অধিক উপযোগী।
  • ভূমধ্যসাগরীয় এবং নাতিশীতোষ্ণ এলাকায় গম চাষ বেশি হয়।
  • ব্যাপকভাবে গম চাষের জন্য সমতলভূমি প্রয়োজন।
  • অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক নিয়ামক এর কারনে চীন, ভারত, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র গম উৎপাদনে প্রসিদ্ধ।

আখ চাষের ভৌগোলিক নিয়ামকঃ

  • আখের জমি পানি নিষ্কাশনের উপযোগী হতে হবে। উঁচু এবং সামান্য ঢালু জমিতে ফলন ভালো হয়।
  • উপযুক্ত তাপমাত্রা: ২৪° সেলসিয়াস।
  • উপযুক্ত বৃষ্টিপাত: ১২৫-১৭৫ সে.মি (৫০-৭০ ইঞ্চি)।
  • চুন ও পটাশ জাতীয় পদার্থ মিশ্রিত দৌ - আশ মাটি আখ চাষের জন্য সর্বোত্তম।
  • আখ মূলত ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলের ফসল।

পাট চাষের নিয়ামকঃ

  • পাট উষ্ণ অঞ্চলের ফসল।
  • পাট চাষের তাপমাত্রা: ২০ - ৩৫° সেলসিয়াস।
  • বৃষ্টিপাত: ১৫০-২৫০ সেন্টিমিটার।
  • নদী অববাহিকার পলি যুক্ত দোঁ আশ মাটি চাষের জন্য উপযুক্ত।

চা চাষের নিয়ামকঃ

  • চা চাষের জন্য প্রয়োজন উষ্ণ এবং আর্দ্র জলবায়ু। ফলে অধিক উত্তাপে এবং বৃষ্টি যুক্ত অঞ্চলের চায়ের আবাদ ভালো হয়।
  • উচ্চভূমিতে পানি নিষ্কাশন দ্রুত এবং সহজে বলে পৃথিবীর অধিকাংশ চা বাগান উচ্চ ভূমিতে অবস্থিত ।
  • উর্বর লৌহ মিশ্রিত দৌ আশ মাটি চা চাষের বিশেষ উপযোগী।
  • উপযুক্ত তাপমাত্রা: ১৬-১৭° সেলসিয়াস।
  • উপযুক্ত বৃষ্টিপাত: ২৫০ সেন্টিমিটার

শিল্প সম্পদের নিয়ামকঃ

  • কোন দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত - শিল্পায়ন।
  • শিল্প যে সকল নিয়ামক এর উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক নিয়ামক।
  • কোন দেশের শিল্পায়ন মূলত বাধাগ্রস্থ হয় মূলধনের অভাবে।
  • ঝুঁকিহীন শিল্প হলো- পর্যটন শিল্প।
  • শিল্পের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য প্রয়োজন হয় চাহিদা সম্পন্ন বাজার।
  • শিল্প জাত দ্রব্যের চাহিদা বেশি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়।
  • দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।
  • যে শিল্পে কম শ্রমিক ও মূলধনের দরকার হয় তাকে বলে ক্ষুদ্র শিল্প।
  • ক্ষুদ্র শিল্পগুলো গড়ে ওঠে ব্যক্তি মালিকানায়।
  • ক্ষুদ্র শিল্পের উদাহরণ তাঁত শিল্প, বেকারি, ডেইরি ফার্ম।
  • যে শিল্প ব্যক্তি উদ্যোগ ও প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় গড়ে ওঠে তাকে বলে- মাঝারি শিল্প
  • মাঝারি শিল্পের উদাহরণ সাইকেল, রেডিও, টেলিভিশন, কারখানা ইত্যাদি।
  • বৃহৎ শিল্প গড়ে ওঠা শহরের কাছাকাছি।

অভিবাসনের ওপর জলবায়ুর প্রভাব

  • সম্প্রতি "Second Home" তৈরিতের যে দেশে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে - মালয়েশিয়া।
  • অভিবাসন দুই প্রকার।
    ১) অবাধ অভিবাসন: নিজ ইচ্ছায় অভিবাসন।
    ২) বলপূর্বক অভিগমন: প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক চাপে বা পরোক্ষ অর্থনৈতিক ও সামাজিক চাপে বাধ্য হয়ে যে অভিগমন হয় তাকে বলপূর্বক অভিগমন বলে।
  • উদ্বাস্তু : বলপূর্বক অভিগমনের ফলে যে ব্যক্তি কোন স্থানে এসে স্থায়ীভাবে আবাস স্থাপন করে তাকে উদ্বাস্তু বলে।
  • শরণার্থী: যারা সাময়িকভাবে আশ্রয় গ্রহণ করে এবং স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় থাকে তাদের শরণার্থী বলে।
  • আবার স্থানভেদে অভিগমন দুই প্রকার। ১. রাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ ২. আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা (IOH) সম্প্রতি প্রকাশ করে বিশ্ব অভিবাসী প্রতিবেদন ২০১৮ প্রতিবেদন অনুযায়ী-
অভিবাসন গন্তব্যের শীর্ষ দেশ: ১. যুক্তরাষ্ট্র ২. জার্মানি ৩. রাশিয়া ৪. সৌদি আরব ৫. যুক্তরাজ্য ।
সবচেয়ে বেশি অভিবাসিত হয় যে দেশ থেকে: ১. ভারত ২. মেক্সিকো ৩. রাশিয়া ৪. চীন ৫. বাংলাদেশ।

অভিবাসনের কারণ:
বিকর্ষণমূলক কারণ আকর্ষণমূলক কারণ
• প্রাকৃতিক দুর্যোগ
• জনসংখ্যা বৃদ্ধি
• সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা
• সামাজিক বৈষম্য
• অর্থনৈতিক মন্দা
• নিজ গোষ্ঠীভুক্ত জনগণের নৈকট্য লাভ
• কর্মসংস্থান
• অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা
• শিক্ষা, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা
• সামাজিক নিরাপত্তা

সংক্ষিপ্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ

  • বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের আদি বাসভূমি ছিল এশিয়া মহাদেশ।
  • মানুষ যখন এক দেশ থেকে অন্য দেশে বসবাসের জন্য গমন করে তাকে বলে আন্তর্জাতিক অভিবাসন।
  • দেশের মধ্যে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বাস করা হলো অভ্যন্তরীণ অভিবাসন।
  • অভ্যন্তরীণ আঞ্চলিক অভিবাসন নির্ভর করে দুটি অবস্থার উপর। যথা: ঔপনিবেশিক গমন এবং জনসংখ্যার চাপ
  • অভিবাসনের স্বাভাবিক ফলাফল- জনসংখ্যার বন্টন।
  • সামাজিক আচার-আচরণের আদান-প্রদান হয় - অভিবাসনের ফলে।
  • অভিবাসনের আদি কারণ ভূমি ও খাদ্য সরবরাহের সীমাবদ্ধতা।
  • কোন দেশে জনসংখ্যা কম থাকায় তারা অন্য দেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি নিয়ে জনসংখ্যা ভারসাম্য আনে - অস্ট্রেলিয়া, কুয়েত।
  • ধর্মীয় কারণে অভিবাসন হয়ে থাকে। যেমন: মুসলমানদের মক্কা, মদিনা, হিন্দুদের, গয়া ও কাশী।

মৎস্য সম্পদের উপর জলবায়ুর প্রভাব

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ইতোমধ্যেই দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রজনন ও উৎপাদনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে । এক সময়ের প্রবাদ “মাছে ভাতে বাঙালি” তা যেন হারিয়ে যেতে বসেছে । আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের মানুষরা এ দেশের যে কোনো নদ-নদী, খাল-বিল-জলাশয়ে প্রাকৃতিকভাবে যে পরিমাণ মাছ পাওয়া যেত বলে বর্ণনা করে তা যেন বর্তমান প্রজন্মের মানুষের কাছে রুপকথার গল্পের মতই মনে হয় । আগে প্রাকৃতিকভাবে যে পরিমাণ মাছ পাওয়া যেত এখন তা কমে গিয়েছে বহুগুণ। জেলে, গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনই এ জন্য দায়ী । বর্তমানে কৃত্রিমভাবে মাছ উৎপাদন করে প্রাণীজ আমিষের চাহিদা পূরণের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।

  • মাছ প্রায় তিন বিলিয়ন মানুষের জন্য পুষ্টি সরবরাহ করে।
  • মৎস্য ধৃত হবার প্রধানত দুটি উৎস হল:
    ১. অভ্যন্তরীণ জলাশয়
    ২. সমুদ্র হতে
  • স্বাদু বা মিঠা পানির মৎস্য বলতে বুঝায় অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে ধৃত মৎস্যকে।
  • জাতীয় আয়ের ৩.৬১% এবং রপ্তানি আয়ের ৪.০৪% আসে মৎস্য খাত থেকে।
  • উন্নয়নশীল দেশের ৫০০ মিলিয়ন মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে তাদের জীবিকার জন্য মৎস্য ও কৃষির উপর নির্ভরশীল।
  • অভ্যন্তরীণ মৎস্য আহরণে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ। বাংলাদেশে বছরে চার হাজার কোটি টাকার মাছ রপ্তানি করে।
  • গত দুই শতকে বঙ্গোপসাগরে Exclusive Economic Zone এর মৎস্য হ্রাস প্রায় ২৫- ৩০%।
  • গত দুই দশকে বঙ্গোপসাগর ১০০ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়েছে।
  • বাংলাদেশের প্রাপ্ত ২০৬ প্রজাতির মাছের মধ্যে ১৩০ প্রজাতিই পাওয়া যায় হাওড় অঞ্চলে কিন্তু হাকালুকি হাওড়ের ১০৭ প্রজাতির মধ্যে ৩২ প্রজাতি হুমকির মুখে।
  • সামুদ্রিক মাছের অবস্থানকে ভাগ করা হয় দুই ভাগে:
    -পেলাজিক মৎস্য
    -ডেমার্সাল মৎস্য
  • সমুদ্রের যেসব মৎস্য দিনের বেলায় সমুদ্রের গভীরে চলে যায় এবং রাতে সমুদ্রের উপরিভাগে ঝাঁকে ঝাঁকে বিচরণ করে তাদের বলে প্যালাজিক মৎস্য
    -প্যালাজিক মৎস্য: হেরিং, ম্যাকারেল, সার্ভিন, পিলচার্ড।
  • যে সকল মৎস্য সমুদ্রের গভীরে বসবাস করে তাকে বলে -ডেমার্সাল মৎস্য
    -ডেমার্সাল মৎস্য হল কড, হ্যাডক, হ্যালিবাট হ্যাক ইত্যাদি।
  • পৃথিবীর যে অঞ্চলে মৎস্য চাষ বেশি হয়: দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল।
  • মাছ শ্বাসকার্য চালায় ফুলকার সাহায্যে
  • বাগদা চিংড়ি চাষ করা হয় লোনা পানিতে।

মানুষের স্বাস্থ্যের উপর জলবায়ুর প্রভাব

‘জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক হুমকি। বৈশ্বিক উষ্ণতা, ক্রমবর্ধমান তাপ এবং আবহাওয়ার তাৎক্ষণিক বিপদ থেকে দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য ও পানির ঘাটতি, বায়ু দূষণ এবং রোগের কারণে স্বাস্থ্যকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। তাপমাত্রার প্রত্যক্ষ প্রভাবে Heat stroke, Dehydration, CVS disease ইত্যাদি রোগ বাড়ছে । জলবায়ুর পরোক্ষ প্রভাবের মধ্যে রয়েছে পানি, বাতাস ও খাদ্যের গুনগতমান পরিবর্তন এবং কৃষি, শিল্প, বাসস্থান ও অর্থনীতির উপর প্রভাব । এই সমস্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবের ফলে মানুষের মৃত্যু হতে পারে, শারীরিক ও মানসিকভাবে কার্যক্ষমতা হারাতে পারে, দুঃখ-দুর্দশায় ভুগতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী অসুখে আক্রান্ত হতে পারে। স্বাস্থ্যের এ ধরনের সমস্যার কারনে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে মানুষ নিজেদের খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষমতা হ্রাস পায়। আপাতঃদৃষ্টিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অল্প মনে হলেও অদূর ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সারা বিশ্বে মারাত্মক আকার ধারণ করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষের এ্যাজমা , ফুসফুসের ক্যান্সার , হৃদরোগ , ডায়রিয়া , ম্যালেরিয়া , কলেরা , উচ্চ রক্তচাপ , চর্মরোগ এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ইত্যাদি রোগ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে ।

জলবায়ু পরিবর্তনের সৃষ্ট বাংলাদেশের মানুষের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা সমূহের হ্রাস কল্পে নিম্নে উল্লেখিত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে:

  • জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে পানিবাহিত রোগসমূহ মারাত্মক আকারে বিস্তার লাভ করে। তাই নীতি-নির্ধারণী পর্যায় থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিস্তার পর্যন্ত এবং সমস্যা সমূহ মোকাবিলার জন্য পূর্ব থেকে প্রস্তুতির প্রয়োজন।
  • স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় আওতাধীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক, ডিজিজ সার্ভিলেন্স উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া। যার ফলে সময়মত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।
  • জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে সমস্ত রোগ ব্যাধির সৃষ্টি হয়, ভৌগোলিক অবস্থান মোতাবেক যথাযথ তথ্য সংরক্ষনের ব্যবস্থা নেয়া।
  • জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব বিস্তার হ্রাস কল্পে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এর আওতাধীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইন-সার্ভিস ট্রেনিং ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনবলকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সমস্যা মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত রাখা।
  • স্বাস্থ্যের উপর জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে বিসিসি প্রোগ্রামের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করা।
  • সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধির সমন্বয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের সেল (Climate Change Cell) গঠনের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ সমস্যা সমাধান লক্ষ্যে কৌশল (Strategies) নির্ধারণ করা।

বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ুর পরিবর্তন

বর্তমান পৃথিবীতে পরিবেশগত প্রধান সমস্যাসমূহের মধ্যে অন্যতম বিশ্ব উষ্ণায়ন । বৈশ্বিক উষ্ণতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে জলবায়ু কখনো এক থাকেনি। কখনো খুব উষ্ণ ও শুষ্ক থেকেছে। কখনো শীতল হয়ে বরফে ঢেকেছে। কিন্তু পরিবর্তন হয়েছে অনেক ধীর গতিতে। লক্ষ লক্ষ বছর লেগেছে এবং বলা হয়ে থাকে এই পরিবর্তন হয়েছে কিছু প্রাকৃতিক কারণে । তবে সমকালীন পরিবর্তন নিয়ে সবাই খুব চিন্তিত কারণ এ পরিবর্তন ঘটছে অতি দ্রুত এবং এই পরিবর্তনের একটি বড় কারণ হচ্ছে পৃথিবীপৃষ্ঠে মানুষের ক্রিয়া-কর্ম। একশত বছর পূর্বের গড় তাপমাত্রার তুলনায় প্রায় ০.৬° সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞানীগণ কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জলবায়ুগত পরিবর্তন সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, ২১ শতকের সমাপ্তিকালের মধ্যে গড় তাপমাত্রা প্রায় আরও ২.৫ থেকে ৫.৫° সেলসিয়াস তাপমাত্রা যুক্ত হতে পারে। এর ফলে পর্বতের উপরিভাগের জমাকৃত বরফ এবং মেরু অঞ্চলের হিমবাহের মুক্ত গলনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে।

তুলনামূলকভাবে যথেষ্ট কম সময় মানুষের কার্যক্রমের ফলে পৃথিবীর জলবায়ুর গড় তাপমাত্রার একটা লক্ষনীয় বৃদ্ধিকেই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা Global warming বলা হয়। যা বর্তমান সময়ের একটি বহুল আলোচিত ইস্যু। কোন জায়গার গড় আবহাওয়া এর দীর্ঘমেয়াদী ও অর্থপূর্ণ পরিবর্তন, যার ব্যাপ্তি কয়েক যুগ থেকে কয়েক লক্ষ বছর পর্যন্ত হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের নিয়ামকগুলো হল:
- জৈব প্রক্রিয়া সমূহ
-পৃথিবী কর্তৃক গৃহীত সৌর বিকিরণের পরিবর্তন
- প্লেট টেকটোনিক
-আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত
তবে বর্তমান সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন বলতে মানবিক কার্যক্রমের ফলে জলবায়ুর যে পরিবর্তন হয় তাকে বোঝায়।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ:

ক. প্রাকৃতিক কারণ:
- পৃথিবীর অক্ষরেখার পরিবর্তন
- সূর্যরশ্মির পরিবর্তন
- মহাসাগরীয় পরিবর্তন

খ. মানব সৃষ্ট কারণ :
কার্বন নিঃসরণ: জীবাশ্ম জ্বালানি দহনের ফলে প্রতিনিয়ত কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে, সাথে রয়েছে অন্যান্য গ্রীন হাউজ গ্যাস গুলো। মূলত গ্যাসগুলো সঞ্চিত হয়ে গ্রীন হাউস ইফেক্ট এর ফলে বিশ্বের উষ্ণতা বেড়েই চলেছে।

গ্রিন হাউজ (Green House) : গ্রিন হাউস হল কাঁচের তৈরি ঘর। ইহা সূর্যের আলো আসতে বাধা দেয় না কিন্তু বিকীর্ণ তাপ ফেরত যেতে বাধা দেয়। ফলে কাঁচের ঘরটি গরম থাকে। শীত প্রধান দেশে তীব্র ঠাণ্ডার হাত থেকে গাছপালাকে রক্ষার জন্য গ্রিন হাউস তৈরি করা হয়। গ্রিন হাউজ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন- সুইডিশ রসায়নবিদ সোভিনটে আরহেনিয়াস ।

গ্রিন হাউস

গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া (Green House Effect): পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিবর্তনশীল আবহাওয়ার প্রতিক্রিয়াকে গ্রিন হাউস ইফেক্ট বলে। গ্রিন হাউজ গ্যাসগুলো পৃথিবীতে সূর্যের আলো আসতে বাধা দেয় না কিন্তু পৃথিবী থেকে বিকীর্ণ তাপ ফেরত যেতে বাধা দেয়। ফলে তাপ আটকে পড়ে পৃথিবীর উষ্ণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৮৯৬ সালে সুইডিস রসায়নবিদ সোভনটে আর হেনিয়াস 'গ্রিন হাউস। ইফেক্ট' কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন।

গ্রিন হাউজ গ্যাস (Green House Gas): যে সকল গ্যাস গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী, তাদের গ্রিন হাউজ গ্যাস বলে। গ্রিন হাউজ গ্যাসগুলো হলো-

  • কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) : ৪৯%
  • মিথেন (CH4) : ১৮%
  • ক্লোরো ফ্লোরো কার্বন (CFC) : ১৪%
  • নাইট্রাস অক্সাইড (N2O) : ০৬%
  • অন্যান্য (জলীয় বাষ্প) : ১৩%

ওজোন স্তরের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে ক্লোরোফ্লোরো কার্বন (CFC);

  • সবচেয়ে বেশি গ্রীন হাউজ গ্যাস ও কার্বন নিঃসরণ করে - চীন (প্রায় ৩০%)
  • মাথাপিছু বেশি গ্রীন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ করে - সংযুক্ত আরব আমিরাত
  • মাথাপিছু বেশি CO₂/কার্বন নিঃসরণ করে - কাতার

গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়ার কারণ (Aetiology of Green House Effect):

  • জীবাশশ্ম জ্বালানী দহনের ফলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • অবাধে বৃক্ষ উজাড় করার কারণে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশন, এরোসল ইত্যাদিতে সিএফসি বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ার পরিণতি (Result of Green House Effect): পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে গেলে পাহাড়ের শীর্ষে এবং মেরু অঞ্চলে জমে থাকা বরফ গলে গিয়ে সমুদ্রতলের উচ্চতা বেড়ে যেতে পারে। ফলে, সমুদ্র উপকূলবর্তী নিম্নভূমি নিমজ্জিত হতে পারে। গ্রীন হাউজ এফেক্টের পরিণতিতে বাংলাদেশের নিম্নভূমি নিমজ্জিত হতে পারে। বিগত ১০০ বছরে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ০.৭ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘের আন্তরাষ্ট্রীয় জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যানেল (IPCC) তৃতীয় সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমুদ্র পৃষ্ঠে পানির উচ্চতা ৪৫ সেমি বাড়লে বাংলাদেশের ১১% ভূমি সমুদ্র গর্ভে নিমজ্জিত হবে। রিপোর্টে আরও বলা হয় ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ১৮ সেমি হতে ৫৯ সেমি এ উন্নীত হবে।

গ্রিন হাউজ এফেক্ট প্রতিরোধে করণীয়ঃ

  • জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার যথাসম্ভব সীমিত করা।
  • বনাঞ্চল সংরক্ষণ ও নিয়মিত বনায়ন।
  • ক্লোরো ফ্লোরো কার্বনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা এবং এর সস্তা বিকল্প ব্যবহার।
  • উপকূলে বাঁধ দেওয়া।

বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমিত উপস্থিতির গুরুত্বঃ বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা ০.০৩%। কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস সূর্য থেকে আগত। ক্ষুদ্র তরঙ্গের আলোক রশ্মিকে পৃথিবীতে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। পৃথিবী পৃষ্ঠে প্রতিফলিত সূর্যের এ বিকিরিত আলোক রশ্মি ক্ষুদ্র তরঙ্গ থেকে দীর্ঘ তরঙ্গে পরিণত হয়। কার্বন ডাইঅক্সাইড এ দীর্ঘ তরঙ্গ রশ্মিকে শুষে নিয়ে নিম্ন বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে। এ গ্যাস যদি বায়ুমণ্ডল থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে যায় তবে পৃথিবী রাতারাতি পরিণত হবে শীতল গ্রহে। তাই বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমিত উপস্থিতি জীবের স্বাভাবিক ও অনুকূল অস্তিত্বের জন্য আবশ্যক।

গ্রীন হাউজ গ্যাস নির্গমন দেশ: ২০১১ সালে, শীর্ষ কার্বন-ডাই-অক্সাইড (CO) এমিটার্স চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, রাশিয়ান ফেডারেশন, জাপান ও কানাডা।

কার্বন ও অন্যান্য গ্রীন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের কারণ গুলো হলো:

  1. কয়লা তেল প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি জীবাশ্ম জ্বালানির দহন
  2. অপরিকল্পিত নগরায়ন
  3. শিল্প কারখানা ট্যানারি প্রকৃতির বর্জ্য অব্যবস্থাপনা
  4. জনসংখ্যা বৃদ্ধি
  5. সার, কীটনাশকের অপরিমিত ব্যবহার
  6. মরুকরণ
  7. বনভূমির উজার নিধন

সংক্ষিপ্ত তথ্য:

  • গ্রীন হাউস ইফেক্ট এর ফলে নিম্নভূমি তলিয়ে যাবে।
  • গ্রীন হাউজ গ্যাস নির্গমন করে শীর্ষ দেশ গুলো হল:
    - চীন (২৮%)
    - আমেরিকা (১৫%)
    - ভারত (৬%)
    - রাশিয়া (৫%)
    - জাপান (৪%)
    - জার্মানি (২%)

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব: বৈশ্বিক প্রেক্ষিত

  • গ্রিন হাউস গ্যাসের প্রভাবে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধিকে বলা হয় - গ্লোবাল ওয়ার্মিং।
  • পৃথিবীর তাপমাত্রা গত ১০০ বছরে বেড়েছে প্রায় ০.৭৪°C।
  • বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়তে পারে : ৬.৪°C পর্যন্ত।
  • বৈশ্বিক উষ্ণতার মূল কারণগুলো হলো: CO₂ সহ ওজোন, মিথেন, CFC, নাইট্রাস অক্সাইড ও জলীয় বাষ্প, যারা গ্রিন হাউস নামে পরিচিত।
  • জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ : বৈশ্বিক উষ্ণতা।
  • গ্রীন হাউজ প্রভাব সাফল্য বয়ে আনবে যেসব দেশের জন্য : কানাডা, রাশিয়া, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, সুইডেন, দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া। এসব এলাকার লাখ লাখ একর জমি বরফ মুক্ত হয়ে চাষাবাদ ও বসবাস যোগ্য হয়ে উঠবে।
  • কিন্তু দুর্ভোগ বাড়বে পৃথিবীর প্রায় ৪০% এলাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ।
  • উন্নত বিশ্ব তাদের উৎপাদিত শস্যের বাড়তি অংশ ব্যবহার করবে পশু খাদ্য হিসেবে কিন্তু উন্নয়নশীল গরিব দেশগুলোতে শরণার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাবে।
  • বৈষম্য বাড়বে উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের মাঝে।
  • বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে অস্ট্রেলিয়ার গ্রীষ্মকাল দীর্ঘতর হয়ে উঠছে, শীতকালও পূর্বের তুলনায় বর্ষাসিক্ত হয়ে উঠেছে।
  • একুশ শতকের সমাপ্তিকালের মধ্যে গড় তাপমাত্রা ২.৫° থেকে ৫.৫° সেলসিয়াস বাড়তে পারে।
  • বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে একবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২০% অধিবাসীর সরাসরি ভাগ্য বিপর্যয় ঘটবে।
  • IPCC এর তথ্য অনুসারে ২০৩০ সালের পর নদীর প্রবাহ নাটকীয়ভাবে কমে যাবে। ফলে এশিয়াতে পানির স্বল্পতা দেখা দেবে।
  • জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, পরবর্তী ৫০ বছরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৩ ফুট বাড়লে সমুদ্র উপকূলবর্তী একটি অংশ প্লাবিত হবে এবং প্রায় ১৭% ভূমি পানির নিচে চলে যাবে।
  • ADB এর সমীক্ষা থেকে জানা যায়, উষ্ণায়নের বর্তমান ধারা ২০৫০ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে 'দক্ষিণ এশিয়ার শস্য উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে।
  • বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে শতকের শেষ নাগাদ বিশ্বে চাষাবাদ ২০- ৪০% হ্রাস পাবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত

মানুষের নিয়ন্ত্রনহীন ব্যবহারের কারণে মাত্রাতিরিক্ত গ্রীন হাউজ গ্যাস অর্থাৎ CO2, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন গ্যাস নির্গমনের কারণে বিশ্ব উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যান্য দেশ এ ক্ষতির মুখোমুখি হবার আগে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়ে গেছে। প্রতিবছর বাংলাদেশের ১৮% ভূমি বন্যায় প্লাবিত হয়। ১৯৮৮ সালের বন্যা প্লাবিত হয়ে ৬০% ভূমি এবং ১৯৯৮ সালের বন্যা প্লাবিত হয় ৭৫% ভূমি । সম্প্রতি বিলুপ্ত হয় সোনালী ব্যাঙ এবং হার লেকুইন ব্যাঙ।

জাতিসংঘের সতর্কীকরণ:

পরবর্তী ৫০ বছরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৩ ফুট বাড়লে তাতে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূববর্তী একটি অংশ প্লাবিত হবে এবং প্রায় ১৭ শতাংশ ভূমি পানির নিচে চলে যাবে। আনুমানিক ৩ কোট মানুষ তাদের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি হারিয়ে জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। ইন্টারন্যাশনাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর তথ্য অনুযায়ী ২০৩০ সালের পর নদীর প্রবাহ নাটকীয়ভাবে কমে যাবে। ফলে এশিয়ায় পনির স্বল্পতা দেখা দেবে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উচ্চ ভাপমাত্রার প্রভাবে ঘন ঘন বন্যা , ঝড় , অনাবৃষ্টি এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। যা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে অনুভূত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরো বাড়বে।
  • UNESCO এর তথ্যমতে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন কারণে সুন্দরবনের ৭৫% ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
  • খরার প্রকোপে নব্বইয়ের দশকে চাল উৎপাদন ৩.৫ মিলিয়ন কম হয়েছে।
  • রাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬১ টি জেলা আর্সেনিক দূষণের শিকার।
  • অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে বাংলাদেশে বাসস্থান, স্বাস্থ্য, পরিবহন ব্যবস্থা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে মাদকাসক্তি ও অপরাধ প্রবণতা পথ আরো বেশি সুগম হচ্ছে।
  • বাংলাদেশে দূষণের মাত্রা সর্বাধিক - বুড়িগঙ্গা নদীতে।
  • পৃথিবীর মানুষ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় - পানি দূষণ প্রক্রিয়ায় ।
  • যে আপদটি পৃথিবীর মানুষের মৃত্যুর কারণ - বায়ু দূষণ।
  • বাংলাদেশের জনগণের জীবিকা পরিবর্তনের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে সমুদ্রের জল স্তরের বৃদ্ধি।
  • বাংলাদেশের সর্বাধিক আর্সেনিক আক্রান্ত জেলা - চাঁদপুর।
  • জাটকা কর্মসূচি পালন হয়ে থাকে প্রতি বছরের নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত।
  • সাফারি ও ইকোপার্ক এর উদ্দেশ্য হল বনের জীব বৈচিত্র্য এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ করা।
  • পৃথিবীর মোট দরিদ্র জনসংখ্যার মধ্যে বাংলাদেশে আছে- ৫% ।
  • বাংলাদেশের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহর - নারায়নগঞ্জ।
  • শব্দের মাত্রা ৮০ ডেসিবলের বেশি হলে তাকে শব্দ দূষণ বলে ।
  • জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় Green Climate Fund বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর জন্য অর্থ মঞ্জুর করেছে ১০০ বিলিয়ন ডলার
  • বিশ্ব সাহায্যের যত আংশ বাংলাদেশ পাবে - ৩০%।
  • জার্মান ওয়াচের হিসাব অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদি জলবায়ু ঝুঁকি সূচকে বাংলাদেশ বিশ্বের ষষ্ঠ ।
  • ২০৫০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে মোট ১৬৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অতিরিক্ত প্রয়োজন হবে।
  • উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সর্বপ্রথম জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবিলায় সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে।
  • ২০৩০ সাল নাগাদ বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১০-১৫% এবং ২০৭৫ সাল নাগাদ ৭৫% বেড়ে যাবে।
  • বরিশাল ও পটুয়াখালীতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে ২ পিপিটি থেকে বেড়ে ৭ পিপিটি হয়েছে।
  • চট্টগ্রাম শহরের সন্নিকট এর হালদা নদীতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে ৮ পিপিটি হয়েছে।
  • বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে প্রয়োজনের তুলনায় কম বৃষ্টিপাত হয়। আমন জাতের ধানের উৎপাদন কমে গেছে।
  • ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত ঝুঁকির ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে শীর্ষ দেখানো হয়েছে।
  • প্রাকৃতিকভাবে কার্বনচক্রের প্রভাবে ভূমিকম্প হয়ে থাকে । গত ২৫০ বছরে বাংলাদেশে ১০০ টি ভূমিকম্প অনুষ্ঠিত হয়।
  • বাংলাদেশ আটটি ভূতাত্ত্বিক চ্যুতি এলাকা বা ফল্ট জোন সচল অবস্থায় রয়েছে। ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা এলাকাগুলো হলো:
    উচ্চমাত্রার বুঝুঁকি: ৪৩%
    মধ্যমমাত্রার ঝুঁকি: ৪১%
    নিম্নমাত্রার ঝুঁকি: ১৬%
  • দেশে বর্তমানে চিনির চাহিদা প্রায় ১৪ লক্ষ মেট্রিক টন। আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আখের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না, ফলে চিনির বার্ষিক চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না।
  • গ্রীষ্মকালে সমুদ্রের লোনা পানির দেশের অভ্যন্তরে প্রায় ১০০ কিমি পর্যন্ত নদীতে প্রবেশ করেছে।
  • বাংলাদেশে গড় বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেয়েছে।
  • বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় এর সংখ্যা বেড়েছে। অশান্ত সমুদ্র জেলেদের জীবিকার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।
২০০৯ সালে বিশ্বব্যাংক বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ দিক চিহ্নিত করেছে। এগুলো হলো- মরুকরণ, বন্যা, ঝড়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং কৃষিক্ষেত্রে অধিকতর অনিশ্চয়তা। এগুলোর প্রতিটিতে শীর্ষ ঝুঁকিপূর্ণ ১২টি দেশের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই তালিকার ৫টি ভাগের একটিতে শীর্ষ ঝুঁকিপূর্ণসহ ৩টিতে নাম আছে বাংলাদেশের। বৈশ্বিক উষ্ঞায়নের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বাংলাদেশ ।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ভবিষ্যতের জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় বিশ্ব সাহায্যের প্রায় ৩০% শতাংশ বাংলাদেশকে প্রদান করবে। ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে ৭-১৮ই ডিসেম্বর, ২০০৯ জাতিসংঘের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেওয়া ১৯৩টি দেশের মধ্যে ১৮৯টি দেশ কোপেনহেগেন তিন পৃষ্ঠার অঙ্গীকারনামাকে একটি নোট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। অঙ্গীকারনামায় জাতিসংঘের আন্তঃসরকার জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত প্যানেলের (IPCC) ২০০৭ সালে প্রকাশ করা চতুর্থ মূল্যায়ন প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। খসড়ায় ২০১০-২০১২ সালের জন্য ৩ হাজার কোটি ডলারের একটি তহবিলের কথা বলা হয়েছে। জলবায়ু তহবিলের অর্থ বনায়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও সক্ষমতা অর্জনের জন্য ব্যয় হবে। ফলে এই তহবিলের অর্থ দরিদ্র দেশগুলোর পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশ যেমন- চীন, ভারত ও ব্রাজিল পাবে। জাতিসংঘ একে রাজনৈতিক সমঝোতা হিসেবে উল্লেখ করে।

'বিশ্ব ঝুঁকি প্রতিবেদন ২০১৬ : ২৫ আগস্ট ২০১৬ জাতিসংঘের ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান সিকিউরিটি (UNU-EHS) এবং বান্দরনিস এনটুইকলাং হিলফট প্রকাশ করে বিশ্ব ঝুকি প্রতিবেদন ২০১৬। এতে বিশ্বের ১৭১টি দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সামাজিক ঝুঁকি প্রবণতার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা-

  • শীর্ষ ঝুঁকিপূর্ণ দেশঃ ১. ভানুয়াতু
  • কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশঃ ১৭১, কাতার
  • বাংলাদেশ এর অব্স্থানঃ ৫ম

ওজোনস্তর অবক্ষয়

ওজোন (Ozone) : ওজোন অক্সিজেনের একটি রূপভেদ- এর সংকেত o3 । ওজোনের রঙ গাঢ় নীল এবং গন্ধ মাছের আঁশটের মত।

বায়ুমণ্ডলে ওজোনস্তরের গুরুত্বঃ বায়ুমণ্ডলের স্ট্রাটোমগুলে ওজোনের একটি স্তর অবস্থিত (ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৬৫ মাইল উপরে)। সূর্য রশ্মিতে ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি থাকে। অতিবেগুনি রশ্মি চর্ম ক্যান্সার, চোখে ছানিসহ নানাবিধ রোগ হতে পারে। ওজোন স্তর সূর্যের আলোর ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মির (Ultraviolet rays) বেশির ভাগই শুষে নেয়। ফলে মানুষসহ জীবজন্তু অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকারক দিক হতে রক্ষা পায়।

ফ্রেয়ন (Freons): ফ্রেয়নের রাসায়নিক নাম ক্লোরো ফ্লোরো কার্বন (CFC) । Prof. Thomas Midgley ১৯২০ সালে ক্লোরো-ফ্লোরো কার্বন আবিষ্কার করেন। রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশন, এরোসোল, ইনহেলার প্রভৃতিতে ক্রেয়ন ব্যবহৃত হয়। রেফ্রিজারেটরের কম্প্রেসার, এয়ারকন্ডিশন প্রভৃতিতে শীতলীকারক হিসাবে ফ্রেয়ন ব্যবহৃত হয়। CFC সক্রিয় থাকে ৮০-১৭০ বছর। একটি CFC অণুর তাপ আটকে রাখার ক্ষমতা কার্বন ডাই-অক্সাইডের একটি অণুর চেয়ে- ২০ হাজার গুণ বেশি। CFC এর দূষন রোধ করার জন্য বর্তমানে CFC এর পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় গ্যাজেলিয়াম।

ওজোনস্তরের অবক্ষয় (Ozone depletion): বায়ুমণ্ডলে নির্গত ক্লোরোফ্লোরো কার্বন ওজোনস্তরে ফুটো সৃষ্টি করেছে। বৎসরের নির্দিষ্ট ঋতুতে এই গর্ত সৃষ্টি হয়। দক্ষিণ মেরুতে এই গর্ত সৃষ্টি হয়।
CFCl 3 → CFCl2 + Cl ,
Cl + O3 → ClO + 02 ,
ClO + O3 → Cl + 202

  • ওজোন স্তরে ফাটল আবিষ্কার করেন - বিজ্ঞানী শাকালেন।
  • ওজোন স্তর ছিদ্রের কথা জানা যায় ১৯৮৩ সালে।
  • ওজোন গ্যাসকে ভাঙ্গতে সাহায্য করে-ক্লোরিন।
নবীনতর পূর্বতন