কম্পিউটার সংগঠন : সিপিইউ, এএলইউ, হার্ডডিস্ক, সফটওয়্যার

কম্পিউটার কতকগুলো যন্ত্রাংশের সমন্বয়ে তৈরি। এ ধরনের যন্ত্রাংশগুলো একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। মূলত কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্র বা যন্ত্রাংশের সম্পর্ক বা সংযোগ স্থাপনের বিন্যাসই হচ্ছে কম্পিউটার সংগঠন । কম্পিউটার সংগঠন বা কম্পিউটার পদ্ধতির প্রধান অংশ দু'টি। যথা- হার্ডওয়্যার (Hardware) এবং সফটওয়্যার (Software) । তবে অন্য পরিপুরক উপাদানগুলো ও এখানে কম গুরুত্বপূর্ণ নয় যেমন- হিউম্যানওয়্যার বা ব্যবহারকারী এবং ডেটা বা ইনফরমেশন।

কম্পিউটার সংগঠন

কম্পিউটারের সংগঠন বলতে মূলত হার্ডওয়্যারের সংগঠনকেই বোঝানো হয়। কম্পিউটার বিভিন্ন প্রকার যন্ত্র বা যন্ত্রাংশের সমন্বয়ে গঠিত। বিভিন্ন ধরনের কাজের প্রয়োজনে কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাকে। কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্র ও যন্ত্রাংশকে পারস্পরিক সংযোগ দ্বারা সংযুক্ত করা অবস্থাকেই কম্পিউটার সংগঠন বলা হয়। কম্পিউটার সংগঠনের প্রধান অংশ পাঁচটি। যথা-

  1. ইনপুট অংশ (Input Unit)
  2. নিয়ন্ত্রণ অংশ (Control Unit)
  3. গাণিতিক যুক্তি অংশ (Arithmetic Logic Unit)
  4. স্মৃতি অংশ (Memory Unit)
  5. আউটপুট অংশ (Output Unit)
কম্পিউটার সংগঠন

অবশ্য স্মৃতি, গাণিতিক যুক্তি অংশ ও নিয়ন্ত্রণ অংশকে একত্রে কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশ (Central Processing Unit) বা সিপিইউ (CPU) বলা হয়। কম্পিউটারের যে অংশ ডেটা প্রক্রিয়াকরণের কাজ করে থাকে, তাকে সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট বা সিপিইউ (CPU) বলে। কম্পিউটারের কাজ করার গতি ও ক্ষমতা সিপিইউ'র উপর নির্ভরশীল। এটি কম্পিউটারের সকল প্রকার কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। সিপিইউ এ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামগুলোর কাজ সম্পাদনা করা ছাড়াও স্মৃতি, ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইসগুলোর কাজ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বড় কম্পিউটারে এক বা একাধিক সার্কিট বোর্ডে কয়েকটি মাইক্রোপ্রসেসর এবং অন্যান্য সমন্বিত সার্কিটের সমন্বয়ে সিপিইউ গঠিত হয়। 'সিপিইউ' কে কম্পিউটারের 'ব্রেইন' ও 'হৃদপিন্ড' স্বরূপ।

সিপিইউ তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত যথাঃ

  • নিয়ন্ত্রণ অংশ বা কন্ট্রোল ইউনিট: এটি রেজিস্টারসমূহ এবং গাণিতিক যুক্তি অংশের মধ্যে ডেটার আদান-প্রদান তদারকি করে এবং গাণিতিক অংশ কি কাজ করবে তার ইন্সট্রাকশন প্রদান করে। এছাড়া কম্পিউটারের সকল অংশের নিয়ন্ত্রণ ও সময় নির্ধারণ সংকেত প্রদান করে।
  • গাণিতিক যুক্তি অংশ বা Arithmatic Logic Unit: এটি কম্পিউটারের ইন্সট্রাকশনগুলোর নির্বাহ (Execution) কাজ করার জন্য মাইক্রোঅপারেশনগুলো পালন করে। এটি কম্পিউটারের গাণিতিক ও যুক্তিমূলক কাজ বা সিদ্ধান্তমূলক কাজ করে।
  • রেজিস্টার সেট: প্রক্রিয়াকরণের সময় অস্থায়ীভাবে ডেটা সংরক্ষণের জন্য সিপিইউ এর ভিতের ইলেকট্রনিক সার্কিট দিয়ে গঠিত রেজিস্টারসমূহ প্রয়োজন হয়। এই রেজিস্টারগুলো হলো অ্যাকিউমুলেটর রেজিস্টার, ইনস্ট্রাকশন রেজিস্টার, অ্যাড্রেস রেজিস্ট্রার, সাধারণ রেজিস্টার, বিশেষ ব্যবহার কার্যের জন্য রেজিস্টার ইত্যাদি।

কম্পিউটার হার্ডওয়্যার

কম্পিউটার তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস বা যন্ত্র এবং যন্ত্রাংশসমূহকে বলা হয় কম্পিউটার হার্ডওয়্যার। সাধারণত কম্পিউটার হার্ডওয়‍্যারকে আমরা দেখতে পারি এবং স্পর্শ করতে পারি যেমন মনিটর, মাউস, কেসিং, মাদারবোর্ড, রম, সিডি, ডিভিডি, ইত্যাদি। হার্ডওয়্যার ছাড়া সফটওয়্যার অচল, এর কোন মূল্য নেই। বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রাংশ দিয়ে একটি কম্পিউটার তৈরি হয়। এরপর এতে অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করা হয় এবং ব্যবহারকারীর প্রয়োজন মোতাকে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার ইনস্টল করা হয়। অত:পর কম্পিউটার কাজের উপযোগী হয় । কম্পিউটারের হার্ডওয়‍্যারকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

  1. ইনপুট হার্ডওয়‍্যার (Input Hardware) বা ইনপুট ডিভাইস : কম্পিউটারকে নির্দেশনা প্রদানের জন্য যে সকল ডিভাইস বা যন্ত্রাংশ ব্যবহৃত হয় তাদেরকে ইনপুট হার্ডওয়‍্যার বা ইনপুট ডিভাইস বলা হয় ।
  2. আউটপুট হার্ডওয়‍্যার (Output Hardware) বা আউটপুট ডিভাইস : কম্পিউটারের যে সকল যন্ত্রাংশ ফলাফল প্রদর্শনের কাজ করে থাকে সেগুলোকে আউটপুট হার্ডওয়‍্যার (Output Hardware) বা আউটপুট ডিভাইস বলে ।
  3. প্রসেসিং হার্ডওয়‍্যার (Processing Hardware) : সাধারণত কম্পিউটারের যে সকল যন্ত্রাংশ ফলাফল প্রদর্শনের জন্য প্রসেসিং বা প্রক্রিয়াকরণের কাজের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত সে সকল যন্ত্রাংশসমূহকে প্রসেসিং হার্ডওয়্যার ‍ বলা হয় । সাধারণত CPU কে প্রসেসিং হার্ডওয়্যার ‍ বলা হয় ।
  4. স্টোরেজ হার্ডওয়‍্যার (Storage Hardware) বা মেমরি বা স্মৃতি অংশ : মূলত কম্পিউটার ইনপুট হার্ডওয়্যারের মাধ্যমে গ্রহণকৃত ডেটাসমূহকে প্রক্রিয়াকরণের পর ফলাফল বা আউটপুট প্রদান করে। তবে কম্পিউটারের প্রক্রিয়াকরণের পর প্রক্রিয়াজাতত্ত্ব ফলাফল সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হার্ডওয়‍্যারসমূহই হলো স্টোরেজ হার্ডওয়‍্যার।

ডেটা প্রসেসিং (Data Processing)

 ডেটা প্রসেসিং চক্র

IPOS Cycle (Input, Processing, Output and Storage) : কম্পিউটার সিস্টেমের চারটি প্রধান কাজ হলো- ইনপুট (Input), প্রক্রিয়াকরণ (Processing) আউটপুট (Output) এবং স্টোরেজ (Storage)। প্রথমে তথ্য (Data) গ্রহণ করে বিভিন্ন ইনপুট ডিভাইসের মাধ্যমে। এরপর তথ্যের (Data) প্রক্রিয়াকরণ (Processing) করে সিপিইউ (Central Processing Unit) নামের সিস্টেম ডিভাইসের মাধ্যমে এবং ফলাফল প্রকাশ করে আউটপুট ডিভাইস (Output Device) এর মাধ্যমে।

ইনপুট হার্ডওয়্যার

কম্পিউটারকে নির্দেশনা বা ডেটা প্রদানের জন্য যে সমস্ত যন্ত্র ব্যবহূত হয় সেগুলোকে ইনপুট হার্ডওয়্যার বলে। ইনপুট যন্ত্রাংশের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যসমূহ প্রেরণ করা হয়। এরপর প্রক্রিয়াকরণ অংশে প্রক্রিয়াজাত হয়ে আউটপুট হার্ডওয়্যারের মাধ্যমে ফলাফল প্রদান করা হয়। উদাহরণ কী-বোর্ড, মাউস, স্ক্যানার, OCR, OMR .

ইনপুট হার্ডওয়্যার

মাউস : এটি দেখতে অনেকটা ইদুরের মত। ইদুরের লেজের মত একটি তার দিয়ে এটি কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত থাকে। মাউসে বসানো বোতামে হাত দিয়ে টিপে বা ডিভাইস দিয়ে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করা যায়। উইলিয়াম ইংলিশ প্রথম মাউস তৈরি করেন। এটি গ্রাফিক্যাল ইউজারভিত্তিক জনপ্রিয় পয়েন্ট এন্ড ড্র ডিভাইস যা ব্যবহার করে মনিটরের পর্দায় পয়েন্টার ঘুরানো হয়।

কী-বোর্ড : কী-বোর্ড একটি ইনপুট হার্ডওয়্যার। প্রতিটি কী একটি ইলেকট্রনিক সুইচের মতো এক একটি স্প্রিং এর উপর আটকানো থাকে। প্রতিটি সুইচের সাথে একটি এনকোডার যুক্ত থাকে যা কী-বোর্ড থেকে টাইপকৃত নির্দিষ্ট চিহ্নিত আসকি কোডের ডিজিটাল বৈদ্যুতিক তরঙ্গ ( 0 , 1 ) উৎপন্ন করে। প্রথমে ইনপুট রেজিস্টারে চিহ্নের কোড দেয়া হয়। তারপর প্রসেসরের রেজিস্টারে চলে যায়, প্রসেসর রেজিস্টারের মাধ্যমে মনিটরে দেখা যায়।

স্ক্যানার : স্ক্যানার একটি ইনপুট যন্ত্র। এটি কম্পিউটারের সাথে সংযোগকারী আলোক সংবেদী যন্ত্র বিশেষ। মুদ্রিত কোন ছবি, ক্যামেরায় তোলা ছবি বা লেখা হুবহু কম্পিউটারের ইনপুট করার জন্য স্ক্যানার ব্যবহৃত হয়। এর মাধ্যমে কম্পিউটারে নেওয়া ছবি, রেখা বা লেখা ইত্যাদি প্রয়োজনে ছোট বা বড় করা যায়। সংশোধন, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন, রংয়ের পরিবর্তন ইত্যাদি কার্যাবলি সম্পাদন করা যায়। অপটিক্যাল স্ক্যানার আলোক রেখা, লেখা ইত্যাদি তথ্য পাঠ করে থাকে। স্ক্যানার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে যথাঃ

  • ক. ফ্লাটবেড স্ক্যানার (Flatbed)
  • খ. হ্যান্ড হেল্ড স্ক্যনার (Hand Held Scanner)
  • গ. ড্রাম স্ক্যানার (Drum Scanner)

OMR : OMR -এর পূর্ণরূপ হচ্ছে-Optical Mark Reader. এটি এমন একটি যন্ত্র যা পেন্সিল বা কালির দাগ বুঝতে পারে। পেন্সিলের দাগ বোঝা যায় পেন্সিলের সীসের উপাদান গ্রাফাইটের বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা বিচার করে। কালির দাগ বোঝা যায় কালির দাগের আলোর প্রতিফলন বিচার করে। বিশেষ ব্যবস্থার সাহায্যে এই দাগগুলো তড়িৎ প্রবাহের পরিবর্তন ঘটায়, যার ফলে কম্পিউটার দাগের অস্তিত্ব বুঝতে পারে। সাধারণত নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন, জনমত জরিপ, আদমশুমারী ইত্যাদি ক্ষেত্রে এ যন্ত্র ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন SSC পরীক্ষায় MCQ মূল্যায়নে OMR পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। OMR ব্যবহারের জন্য প্রথমে কাগজের উপর সুনির্দিষ্ট নিয়মে তৈরি ছকের বিভিন্ন ঘর কালি অথবা নরম পেন্সিল দিয়ে পূরণ করতে হয়। পরে ঐ অংশ OMR পদ্ধতিতে পাঠ ও ব্যবহার করা হয়।

OCR : OCR-এর পূর্ণরূপ হচ্ছে-Optical Character Recognition. OCR শুধু দাগই বোঝে না, বিভিন্ন রঙের পার্থক্যও বোঝে। OCR কোন বর্ণ পড়ার সময় সেই বর্ণের গঠন অনুযায়ী কতগুলো বৈদ্যুতিক সংকেত সৃষ্টি করে। OCR-এ আগে থেকেই প্রত্যেক বর্ণের বৈদ্যুতিক সংকেত কম্পিউটারে জমা রাখা থাকে। এর সঙ্গে মিলিয়ে কোন বর্ণ পড়া হচ্ছে OCR তা বুঝতে এবং কম্পিউটারে জমা রাখতে পারে। চিঠির পিন কোড, ইলেকট্রিক বিল, ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম নোটিস ইত্যাদি পড়ার জন্য OCR ব্যবহৃত হয়।

ইনপুট-আউটপুট ডিভাইস : কম্পিউটারের কিছু কিছু যন্ত্রপাতি রয়েছে যারা ইনপুট ও আউটপুট উভয় হিসেবে কাজ করে। যেমন- ক্যামেরা, ভিসিআর, টাচ স্ক্রীন, মডেম, টিভি, টেপরেকর্ডার ইত্যাদি । টাচ স্ক্রীন হচ্ছে এমন এক ধরনের প্রযুক্তি যা দ্বারা মনিটরের বা কম্পিউটার স্ক্রীনে স্পর্শ করে মাউসের মত নির্দেশনা দেয়া যায়।

আউটপুট হার্ডওয়্যার

কম্পিউটারের ইনপুট যন্ত্রাংশসমূহে প্রাপ্ত তথ্যসমূহ প্রক্রিয়াকরণ অংশে প্রক্রিয়াজাত হয়ে যে অংশসমূহের সাহায্যে ফলাফল প্রদান করে থাকে সেগুলোকে আউটপুট হার্ডওয়্যার বলে। উদাহরণ : মনিটর, প্রিন্টার, প্লটার, স্পিকার, ভিডিইউ ইত্যাদি ।

প্লটার (Plotter): প্লটার কম্পিউটারে ব্যবহারোপযোগী এক ধরনের আউটপুট ডিভাইস যার সাহায্যে ছবি বা গ্রাফ আউটপুট করা যায়। প্লটার দুই ধরনের ফ্ল্যাট বেড প্লটার ও ড্রাম প্লটার ।

VDU : VDU -এর পূর্ণরূপ ভিজ্যুয়াল ডিসপ্লে ইউনিট। এটিকে ইনপুট ও আউটপুট উভয় ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহার করা যায়। VDU তে একটি মনিটর ও একটি কী বোর্ড থাকে। কী বোর্ডের সাহায্যে ইনপুটকৃত ডেটা মনিটরে আউটপুট হিসেবে দেখা যায়। বর্তমানে বিভিন্ন শ্রেণীর কম্পিউটারে VDU বেশ প্রচলিত ইনপুট ও আউটপুট ব্যবস্থা হিসেবে।

Laser printing : লেজার প্রিন্টারে প্রিন্ট হয় লেজার (LASER Light Amplification by Stimulated Emission of Radiation) রশ্মি নামক এক ধরনের আলোক রশ্মির সাহায্যে। লেজার প্রিন্টারের মুদ্রণের জন্য লেজার রশ্মি একটি আলোক সংবেদনশীল ড্রামের উপর মুদ্রণযোগ্য বিষয়ের ছাপ তৈরি করে তখন লেজার রশ্মির প্রক্ষেপিত অংশ টোনার বা গুড়া কালিকে আকর্ষণ করে এরপর ড্রাম সেই টোনারকে কাগজে স্থানান্তরিত করে। কাগজের উপর পতিত টোনার উচ্চ তাপে এবং ড্রামের চাপে গলে স্থায়ীভাবে বসে যায়। এইভাবে লেজার প্রিন্টারে মুদ্রণের কাজ সম্পন্ন হয়। লেজার প্রিন্টারের ছাপা খুবই উন্নতমানের এবং কাজের গতিও অনেক বেশি। এই প্রিন্টারের গতি প্রায় ১,০০০ এলপিএম (line per minute) ।

মনিটর : মনিটর হল গুরুত্বপূর্ণ আউটপুট ডিভাইস। এটি লেখা, ছবি, রেখাচিত্র, নকশা, প্রোগ্রাম, ভিডিওচিত্র ইত্যাদি দেখার কাজে ব্যবহৃত হয়। মনিটর তিন ধরনের সিআরটি, এলসিডি ও এলইডি।

প্রসেসিং হার্ডওয়্যার

ব্যবহারকারীর কাঙ্ক্ষিত ফলাফল কম্পিউটার তার প্রক্রিয়াকরণের ফলাফলের মাধ্যমে পূরণ করে থাকে। প্রসেসিং বা প্রক্রিয়াকরণের কাজের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত হার্ডওয়্যারসমূহকে বলা হয় প্রসেসিং হার্ডওয়্যার। সাধারণত সিস্টেম ইউনিটের (কম্পিউটারের কেসিং) অভ্যন্তরে প্রসেসিং হার্ডওয়্যারসমূহ অবস্থান করে। কম্পিউটারের প্রসেসিং কাজের সাথে বিভিন্ন ধরনের প্রসেসিং হার্ডওয়্যার জড়িত থাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হলো-

  • মাইক্রোপ্রসেসর (Microprocessor)
  • মেমরি (Memory)
  • বাস (BUS)
  • মাদারবোর্ড (Motherboard)
  • ইন্টারফেস (Interface)
  • পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট (Power Supply Unit)
  • এক্সপানশন স্লট (Expansion slot): সাউন্ড কার্ড, ভিডিওকার্ড, এজিপি বা ভিজিএ কার্ড, নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড, ফ্যাক্স কার্ড, মডেম কার্ড, টিভি টিউনার কার্ড ইত্যাদি।

মাইক্রোপ্রসেসর : মাইক্রোপ্রসেসর হলো সিলিকনের তৈরি এক ধরনের ভিএলএসআই (VLSI-Very Large Scale Integration) চিপ। একটি একক ভিএলএসআই সিলিকন চিপের মধ্যে এক মিলিয়নেরও অধিক ডায়োড, ট্রানজিস্টর, রেজিস্টার, ক্যাপাসিটর ইত্যাদি একীভূত থাকে। মাইক্রোপ্রসেসর মাইক্রোকম্পিউটারের কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশ হিসেবে কাজ করে। মাইক্রোপ্রসেসরকেই মাইক্রোকম্পিউটারের মস্তিষ্ক বা ব্রেইন বলা হয়।

বিটের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে মাইক্রোপ্রসেসরের নামকরণ করা হয়ে থাকে। যেমন:

মাইক্রোপ্রসেসর উদাহরণ
4 বিট 4004, 4040
৪ বিট 8008, 8080
16 বিট 8086, 8088, 80186, 80286
32 বিট 80386, 80486, Intel Pentium, AMD K6, AMD Athlon
64 বিট Intel Core i3, i5, i7, i9, Intel ITANIUM,

বর্তমানে প্রচলিত মাইক্রোপ্রসেসর সাধারণভাবে নিম্নোক্ত তিনভাগে ভাগ করা যায়-

  1. সিল্ক প্রসেসর (CISC Processor) : CISC = Complex Instruction Set Computing। তুলনামূলকভাবে জটিল ইনস্ট্রাকশন ব্যবহার করা হয়। এসেম্বলি ভাষায় প্রোগ্রামিং এর জন্য বেশি উপযোগী।
  2. রিস্ক প্রসেসর (RISC Processor) : RISC Reduced Instruction Set Computing। সরল ও ছোট মোডের ইনস্ট্রাকশন ব্যবহার করা হয়। উচ্চতর ভাষায় প্রোগ্রামিং এর জন্য বেশি উপযোগী।
  3. বিশেষ ব্যবহার কার্যের প্রসেসর (Special Purpose Processor)

বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মাইক্রোপ্রসেসর তৈরিতে বিশ্বের বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইন্টেল কর্পোরেশন (Intel Corporation), মটোরোলা (Motorola), আইবিএম (IBM), এএমডি (AMD Advanced Micro Devices), সাইরিক্স (Cyrix), টেক্সাস ইনস্ট্রুমেন্ট (TI Texas Instrument), এনভিডিয়া (NVidia), কোয়ালকম (Qualcomm) ইত্যাদি।

মাইক্রোপ্রসেসর সংগঠন। মাইক্রোপ্রসেসর প্রধানত তিনটি অংশে বিভক্ত। যথা-

ক) নিয়ন্ত্রণ ইউনিট (CU- Control Unit) : কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণ ইউনিট কম্পিউটারের সকল অংশকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার কাজে নিয়োজিত থাকে। কট্রোল ইউনিট (CU) মানব মস্তিষ্কের থ্যালামাসের মতো কাজ করে। এটি কম্পিউটারের প্রতিটি নির্দেশ পরীক্ষা করে এবং কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় সংকেত তৈরি করে। মেমরিতে কখন তথ্যের প্রয়োজন হবে- সহায়ক মেমরি হতে কখন প্রধান মেমরিতে তথ্য নিতে হবে, কখন ইনপুট হতে উপাত্ত নিতে হবে, কখন ফলাফল দিতে হবে এসব বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে। নিয়ন্ত্রণ ইউনিটের প্রধান কাজই হলো মেমরি হতে ইনস্ট্রাকশন কোড পড়া ও ডিকোড করা এবং মাইক্রোপ্রসেসরের অন্য অংশসমূহকে কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজনীয় কন্ট্রোল সিগন্যাল তৈরি করা। যেমন- গাণিতিক কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য মাইক্রোপ্রসেসরের গাণিতিক যুক্তি অংশকে কন্ট্রোল সিগন্যালের মাধ্যমে নির্দেশ প্রদান করা।

খ) গাণিতিক যুক্তি ইউনিট (ALU- Arithmetic Logic Unit) : নিয়ন্ত্রণ অংশের তত্ত্বাবধানে ALU বিভিন্ন ধরনের গাণিতিক (mathematical) ও লজিক্যাল (logical) অপারেশনের কাজ সম্পাদান করে। বেশির ভাগ গাণিতিক অপারেশনগুলো হলো যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ এবং লজিক্যাল অপারেশনগুলো হলো তুলনা, সত্য মিথ্যা যাচাই ইত্যাদি। আবার কোনো রেজিস্টার পরিষ্কারকরণ এবং রেজিস্টারে সংরক্ষিত তথ্য বা সংখ্যাকে ডানে-বামে সরানো ইত্যাদি কাজও এ অংশের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক বর্তনীর সহায়তায় গাণিতিক যুক্তি অংশ এই কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে এবং প্রয়োজনে ফলাফল অস্থায়ীভাবে রেজিস্টারে সংরক্ষিত রাখে।

গ) রেজিস্টারসমূহ (Register Set) : মূলত মাইক্রোপ্রসেসরের অস্থায়ী মেমরি রেজিস্টার হিসেবে কাজ করে। রেজিস্টার তৈরি হয় ফ্লিপ-গ্রুপের সাহায্যে। এগুলোর কাজ করার ক্ষমতা অত্যন্ত দ্রুত। মাইক্রোপ্রসেসর যখন হিসাব-নিকাশের কার্যাবলি সম্পাদন করে তখন ডেটাকে সাময়িকভাবে জমা রাখার জন্য রেজিস্টারসমূহ ব্যবহৃত হয়। কম্পিউটারে ব্যবহৃত রেজিস্টারকে প্রধানত ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

  1. সাধারণ রেজিস্টার (General Register)
  2. বিশেষ রেজিস্টার (Special Register)
    - অ্যাকিউমুলেটর (Accumulator): গাণিতিক ও যুক্তিমূলক ইউনিটের প্রক্রিয়াকরণের ফলাফল তাৎক্ষণিক অস্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য অ্যাকিউমুলেটর ব্যবহৃত হয়।
    -প্রোগ্রাম কাউন্টার রেজিস্টার (Program Counter Register): প্রোগ্রাম কাউন্টার রেজিস্টারে মেমরি অ্যাড্রেসের পর্যায়ক্রম সংরক্ষিত থাকে বলে একে Sequence Control Register ও বলা হয়।
    - মেমরি অ্যাড্রেস রেজিস্টার (Memory Address Register)
    - ইনস্ট্রাকশন রেজিস্টার (Instruction Register)
    -ফ্ল্যাগ রেজিস্টার (Flag Register) বা স্ট্যাটাস রেজিস্টার (Status Register)
    - মেমরি ডেটা রেজিস্টার (Memory Data Register) বা মেমরি বাফার রেজিস্টার

ইনস্ট্রাকশন সেট (Instruction Set): মাইক্রোপ্রসেসর দিয়ে অনেক রকম উপাত্ত বা ডেটা প্রক্রিয়াকরণের কাজ করা হয়। ইনস্ট্রাকশন সেট হলো এসব কাজের জন্য ব্যবহৃত নির্দেশের তালিকা। বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের ইনস্ট্রাকশন সেট ব্যবহৃত হয়। যেমন-

  1. গাণিতিক নির্দেশ বা ইনস্ট্রাকশন। যেমন- ADD, SUB.
  2. যুক্তিমূলক নির্দেশ বা ইনস্ট্রাকশন। যেমন- COMPARE.
  3. ডেটা স্থানান্তর নির্দেশ বা ইনস্ট্রাকশন। যেমন- MOV.
  4. প্রোগ্রাম নিয়ন্ত্রণ নির্দেশ বা ইনস্ট্রাকশন। যেমন- JUMP.
  5. মেশিন নিয়ন্ত্রণ নির্দেশ বা ইনস্ট্রাকশন। যেমন- IN, INTO.

প্রসেসরের গতি (Speed of Processor): মাইক্রোকম্পিউটারের গতি বিবেচনা করা হয় মাইক্রোপ্রসেসরের ক্লক স্পিড (Clock Speed)-এর দ্বারা। ক্লক স্পিড পরিমাপ করা হয় প্রতি সেকেন্ডে কতটি স্পন্দন (Pulse) বা টিক সম্পন্ন হয় তার ওপর নির্ভর করে। স্পন্দন পরিমাপ করা হয় হার্টজে। প্রসেসরের ক্লকটি প্রতি সেকেন্ডে এক মিলিয়ন (10) বার স্পন্দন বা টিক করার সময়কে ১ মেগাহার্টজ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এই স্পন্দনকেই ক্লক স্পিড (Clock Speed) বলা হয়। সাধারণত মাইক্রোকম্পিউটার বা পার্সোনাল কম্পিউটারের প্রসেসরের গতি পরিমাপ করা হয় MHz বা GHz এ। কিন্তু মিনি ও মেইনফ্রেম কম্পিউটারের প্রসেসরের গতি পরিমাপ করা হয় MIPS (Million of Instructions per Second) বা BIPS (Billion of Instructions per Second) এ ।

মাদারবোর্ড : মাদারবোর্ডই হচ্ছে একটি কম্পিউটারের মূল অংশ, যা সিস্টেম ইউনিটের অভ্যন্তরে সংযুক্ত থাকে। সাধারণত কম্পিউটারের সমস্ত যন্ত্রাংশের সংযোগ স্থানকে বলা হয় মাদারবোর্ড। মাদারবোর্ড হলো কম্পিউটারের কেন্দ্রীয় সার্কিট বোর্ড। এটি সিস্টেম বোর্ড বা মেইনবোর্ড হিসেবেও পরিচিত। প্রসেসর মাদারবোর্ডের মধ্যেই থাকে। মাদারবোর্ডের মধ্যে কম্পিউটারের বিভিন্ন ডিভাইস যেমন-কি-বোর্ড, মাউস, মনিটর, প্রিন্টার, হার্ডডিস্ক ড্রাইভ, ফ্লোপি ডিস্ক ড্রাইভ, পেনড্রাইভ ইত্যাদি লাগানোর ব্যবস্থা থাকে। মাদারবোর্ডে বিভিন্ন ধরনের কানেক্টর এবং এক্সপানশন স্লট থাকে। মাদারবোর্ডে AGP Slot, RAM slot, PCI slot প্রভৃতি থাকে। Mother board -এ PCI BUS 32 বিটে কাজ করে। বর্তমানে Intel, GIGABYTE, ASUS, MSI ইত্যাদি ব্র্যান্ডের মাদারবোর্ডগুলো বাজারে পাওয়া যায়।

ইন্টারফেস

কম্পিউটারের সঙ্গে পেরিফেরাল ডিভাইসগুলোর সংযোগের প্রক্রিয়াকে বলা হয় ইন্টারফেস। যেমন- গ্রাফিক্স কার্ডের সাথে পেরিফেরাল মনিটরের সংযোগ পয়েন্ট অর্থাৎ যে প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত হয় তাই হলো ইন্টারফেস। বিভিন্ন প্রকার স্ট্যান্ডার্ড ইন্টারফেস আছে। যেমন- SCSI (Small Computer Systern Interface) SCSI এর উচ্চারণ Scuzzy (স্ক্যাজি)। SCSI bus এর মাধ্যমে মনিটরের সাথে সিপিইউ সংযুক্ত থাকে।

কম্পিউটার পোর্ট হলো এক ধরনের পয়েন্ট বা সংযোগমুখ। কম্পিউটারের সিস্টেম ইউনিটের সঙ্গে কীবোর্ড, মাউস, স্ক্যানার ইত্যাদি যন্ত্রের সংযোগ পয়েন্ট থাকে। এ সংযোগ পয়েন্টকে বলা হয় পোর্ট। পোর্ট বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন-

কম্পিউটার পোর্ট
  • Parallel Port (প্যারালাল পোর্ট) : প্যারালাল পোর্টের মাধ্যমে একসঙ্গে একাধিক বিট স্থানান্তরিত হয়। সাধারণত প্যারালাল পোর্ট ২৫ পিনবিশিষ্ট হয়। প্রিন্টার, স্ক্যানার, অপটিক্যাল ড্রাইভ ইত্যাদি ডিভাইস এ ধরনের পোর্টে যুক্ত করা যায়। এই পোর্টকে প্রিন্টার পোর্টও বলা হয়। এর লজিক্যাল নাম। LTP (Line Print Terminal).
  • Serial Port (সিরিয়াল পোর্ট) : RS-232 বা সিরিয়াল পোর্টের মাধ্যমে ডেটা পর্যায়ক্রমে এক বিট করে স্থানান্তরিত হয়। মডেম, মাউস, কি-বোর্ড ইত্যাদি হার্ডওয়্যার এ ধরনের পোর্টের সঙ্গে যুক্ত থাকে। মাদারবোর্ডে ৯ পিনবিশিষ্ট COM1 এবং COM2 নামে দুটি সিরিয়াল পোর্ট থাকে।
  • VGA or Monitor Port : এ ধরনের পোর্টের সাহায্যে কম্পিউটারে ভিডিও ডিসপ্লে যেমন- মনিটর সংযুক্ত করা হয়। এ ধরনের পোর্ট ১৫ পিনের ছিদ্রবিশিষ্ট হয়।
  • USB Port : এ ধরনের পোর্টে বিভিন্ন ধরনের USB পোর্টের ডিভাইস যেমন- মাউস, কি-বোর্ড, স্ক্যানার, পেনড্রাইভ, ডিজিটাল ক্যামেরা ইত্যাদি সংযুক্ত করা যায়।
  • MIDI Port : কম্পিউটারে গানের ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি সংযোগ দিতে MIDI (Musical Instrument Digital Interface) Port ব্যবহৃত হয়।
  • PS/2 Port : ১৯৮৭ সালে আইবিএম পিএস/২ স্ট্যান্ডার্ডটি চালু করেছে। সাধারণত পিএস/২ পোর্টে কি-বোর্ড ও মাউস পোর্ট সংযুক্ত করা হয়। পোর্ট ৬ পিনবিশিষ্ট হয়।।
  • Networking Port : পিসিতে নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য নেটওয়ার্ক কার্ড বা ল্যানকার্ড ব্যবহার করা হয়। ইথারনেট পোর্ট পিসির নেটওয়ার্কের জন্য একটি জনপ্রিয় ও দ্রুতগতি সম্পন্ন ব্যবস্থা। একে RJ-45 Port নামেও ডাকা হয়ে থাকে।
  • Audio Port : অডিও ইন করার জন্য মাইক্রোফোন পোর্ট এবং অডিও আউটের জন্য স্পিকার পোর্ট থাকে।
  • Video Port : ভিডিও ইন বা আউট করার জন্য কম্পিউটারে ভিডিও ইনপুট ও আউটপুটের পোর্ট থাকে। প্রায় সকল কম্পিউটারে এর জন্য আলাদা কার্ড ব্যবহার করা হয়।
  • HDMI : HDMI (High-Definition Multimedia Interface) এক ধরনের পোর্ট যা দিয়ে অডিও, ভিডিও ট্রান্সফার করা হয়।
  • Game Port (গেম পোর্ট) : কম্পিউটারে গেম খেলার জন্য জয়স্টিক নামে একটি ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। এই ডিভাইস ব্যবহারের জন্য মাদারবোর্ডের সাথে যে পোর্ট থাকে, তাকে গেম পোর্ট বলে। একটি আদর্শ গেম পোর্টে ১৫ পিন বিশিষ্ট কানেক্টর থাকে ।

API (Application Programming Interface) হলো একগুচ্ছ ফাংশন ও কার্যপ্রণালি, যা একাধিক প্রোগ্রামের মধ্যে ডেটা বিনিময়ের সুযোগ করে দেয়। উদাহরণ: ধরুন, HP কোম্পানি প্রিন্টার তৈরি করেছে, অন্যদিকে মাইক্রোসফট কোম্পানি MS Word সফটওয়্যার বানিয়েছে। তাহলে MS Word ডকুমেন্ট কিভাবে HP প্রিন্টারে প্রিন্ট হয়? আসলে, প্রোগ্রাম দুটো একটি ইন্টারফেস বা মাধ্যম ব্যবহার করে যোগাযোগ করে থাকে। এই মাধ্যমকেই API বলে MS Word এ প্রিন্ট কমান্ড দিলে সে API এর কাছে প্রিন্ট রিকোয়েস্ট পাঠায়, API প্রিন্টারকে ঐ ডকুমেন্টটি প্রিন্ট করতে বলে।

এক্সপানশন স্লট (Expansion slot)

  • VGA (Video Graphics Array) কার্ডের উপর নির্ভর করে মনিটরের ডিসপ্লে কেমন হবে। উন্নতমানের গ্রাফিক্স, ভিডিও, গেম ইত্যাদি প্রদর্শনের জন্য AGP (Accelerated Graphics Port) কার্ড ব্যবহৃত হয়।
  • TV Tuner Card কম্পিউটারের মনিটরের মাধ্যমে Television দেখার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • Jack Card: ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারা বিশ্বে ফোন করার জন্য Net 2 Phone টাইপের অনেক সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। আর এর জন্য একটি ডিভাইস ব্যবহৃত হয় যার নাম Jack।

পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট : পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট এমন একটি ডিভাইস যা কম্পিউটারের শক্তি জোগায়। কম্পিউটারের সাথে সংশ্লিষ্ট কম্পোনেটগুলো যথাযথভাবে কাজ করছে কি না তা নিশ্চিত করার জন্য সরবরাহ করা ভোল্টেজকে রেগুলেট করে। এটি কম্পিউটারের জন্য প্রয়োজনীয় ২৩০ ভোল্ট বিদ্যুৎ সাপ্লাইকে রেগুলেটেড ডিসি ভোল্টেজে রূপান্তরিত করে।

কম্পিউটার বাস

কম্পিউটার বিট বা ডিজিটাল সংকেত (0 বা 1) হিসেবে ডেটাকে প্রসেস এবং সংরক্ষণ করে। এই বিটগুলো কম্পিউটারের অভ্যন্তরে সার্কিটে চলাচল করে। বাস হলো এমন একগুচ্ছ তার যার মধ্যে দিয়ে ডিজিটাল সংকেত (1 বা 0) চলাচল করতে পারে। বস্তুগত দিক থেকে বাস হচ্ছে ক্যাবল বা তার অথবা সার্কিট বোর্ডের পরিবাহক লাইন। অর্থ্যাৎ কম্পিউটারের বাস কতকগুলো বিদ্যুৎ পরিবাহী লাইনের সাহায্যে গঠিত, যার মাধ্যমে কম্পিউটারের এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে ডেটা, তথ্য, সিগন্যাল, নির্দেশ বা প্রোগ্রাম আদান-প্রদানের কাজ সম্পন্ন হয়। বাসের ভিতর একই সময় কতকগুলো বিট চলাচল করতে পারে, তাকে বলা হয় বাসের প্রশস্ততা (Bus Width)। যেমন; 16 বিট বাস অর্থ বাসের ভিতর দিয়ে 16 বিট একসাথে চলাচল করতে পারবে। বাসের উইডথ বা প্রশস্ততা যত বেশি হবে তত বেশি বিট একসাথে চলাচল করতে পারবে। বাসের গতি মাপা হয় মেগাহার্টজে। তবে এই গতি গিগাহার্টজও হতে পারে। বাসের প্রশস্ততা যত বেশি হবে, কম্পিউটার ডেটা তত বেশি দ্রুতগতিতে চলাচল করতে পারবে।

কম্পিউটার বাসের শ্রেণিবিভাগ

কম্পিউটার বাস দু’ধরনের যথাঃ ১.সিস্টেম বাস ২.এক্সপানশন বাস । সিস্টেম বাস আবার তিন ধরনের যথাঃ ক) ডেটা বাস খ) কন্ট্রোল বাস গ) অ্যাড্রেস বাস ।

১. সিস্টেম বাস (System Bus): যে বাস সিপিইউ এর সাথে অন্যান্য অংশের সংযোগ স্থাপন করে, তাকে সিস্টেম বাস বলে। কম্পিউটার বাস বলতে সাধারণত সিস্টেম বাসকে বুঝানো হয়। সিস্টেম বাসকে ইন্টারনাল বাসও বলা হয়। অ্যাড্রেস বাস একমুখী কিন্তু ডেটা ও কন্ট্রোল বাস উভমুখী।

ডেটা বাস (Data Bus): কম্পিউটারের সিস্টেম ইউনিটের অভ্যন্তরের বিভিন্ন উপাদান যেমন মাইক্রোপ্রসেসর, হার্ডডিস্ক, ব্যাম, ইনপুট/আউটপুট পোর্ট ইত্যাদির মধ্যে ডেটা আদান-প্রদানে ব্যবহৃত বাসকে ডেটা বাস বলা হয়।

অ্যাড্রেস বাস (Address Bus): মূলত কম্পিউটারের মেমরিতে তথ্যসমূহ স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু মেমরিতে কোনো তথ্য সংরক্ষণের জন্য অথবা মেমরি হতে তথ্য আহরণের জন্য মাইক্রোপ্রসেসরের প্রয়োজন নির্দিষ্ট মেমরি অ্যাড্রেস। কম্পিউটার সিস্টেমে মাইক্রোপ্রসেসর ও মেমরি উভয়ের মধ্যে একগুচ্ছ লাইন বা তার সংযুক্ত থাকে, যার মাধ্যমে মাইক্রোপ্রসেসর মেমরির নির্দিষ্ট অ্যাড্রেসে যোগাযোগ করে তথ্য আহরণ করে বা সংরক্ষণ করে। এই গুচ্ছ লাইন বা তারগুলোই। হলো অ্যাড্রেস বাস। অর্থাৎ মাইক্রোপ্রসেসর অ্যাড্রেস বাসের মাধ্যমে RAM/ ROM স্মৃতির বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে সে স্থানে সংরক্ষিত তথ্য ডেটা বাসের মাধ্যমে পড়ে নেয় কিংবা নতুন তথ্য লিখে রাখতে পারে। মেমরি ইউনিট দ্বারা প্রদর্শিত ঠিকানাকে ভৌত ঠিকানা (Physical address) বলে। কম্পিউটারে চলমান অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামগুলো ভৌত ঠিকানাগুলো দেখতে পায় না। তারা সবসময় লজিক্যাল ঠিকানা ব্যবহার করে কাজ করে। প্রোগ্রাম নির্বাহ করার সময় সিপিইউ দ্বারা লজিক্যাল ঠিকানা (Logical address) উৎপন্ন হয়। Memory-Management Unit (MMU) হার্ডওয়্যার লজিক্যাল ঠিকানাগুলোকে ভৌত ঠিকানায় অনুবাদ করে দেয়।

নিয়ন্ত্রণ বাস (Control Bus): কন্ট্রোল বাস বা নিয়ন্ত্রণ বাস মাইক্রোপ্রসেসর থেকে সংকেত বা নির্দেশ বহনপূর্বক সংশ্লিষ্ট অংশগুলোতে প্রেরণ করে।

২. এক্সপানশন বাস (Expansion Bus) : সিপিইউ এক্সপানশন বাসের সাহায্যে কম্পিউটারের ইনপুট/আউটপুট ও অন্যান্য পেরিফেরাল ডিভাইসের সাথে যোগাযোগ করে। কম্পিউটার প্রযুক্তির বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক ধরনের এক্সপানশন বাস আবিষ্কৃত হয়েছে।

  • লোকাল বাস (Local Bus)
    - ভেসা (VESA = Video Elcetronic Standard Architecture)
    - পিসিআই (PCI = Peripheral Component Interconnect)
  • ইউনিভার্সাল সিরিয়াল বাস (USB = Universal Serial Bus)
  • ফায়ারওয়্যার (Fireware)
  • এজিপি (AGP = Accelerated Graphics Port)
  • আইএসএ (ISA = Industry Standard Architecture)

লোকাল বাস (Local Bus): বাইরের কিছু বোর্ডকে সিপিইউ-এর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করার জন্য নতুন ধরনের যে বাস সংযুক্ত করা হয়েছে, তাকে লোকাল বাস বলে। লোকাল বাস প্রধান বাসের মাধ্যমে ডেটা পরিবহনের চাপ কমিয়ে কম্পিউটারের জন্য দ্রুতগতিতে কাজ করার সুযোগ নিশ্চিত করেছে।

ভেসা বাস : (VESA = Video Elcetronic Standard Architecture) সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন গ্রাফিক্সের কাজের জন্য।

পিসিআই বাস : (PCI = Peripheral Component Interconnect) বাস উদ্ভাবন করা হয়েছে কম্পিউটারের গঠন কাঠামোর বিভিন্ন অংশের মধ্যে দ্রুতগতিতে ডেটা পরিবহনের কাজ সম্পাদনের জন্য।

ইউনিভার্সাল সিরিয়াল বাস (USB Universal Serial Bus) : ১৯৯৮ সাল থেকে ইনটেল মাইক্রোপ্রসেসর দিয়ে তৈরি কম্পিউটারগুলোতে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইউএসবি বাসের ভিত্তিতে এখন কীবোর্ড, মাউস, প্রিন্টার, স্ক্যানার, ডিজিটাল ক্যামেরা, হার্ডডিস্ক, ফ্লপি ডিস্ক ড্রাইভ, সিডি ড্রাইভ তৈরি হচ্ছে।

ফায়ারওয়্যার (Fireware) : এ যাবৎকালের উদ্ভাবিত সবচেয়ে দ্রুতগতির কম্পিউটার বাস।

নবীনতর পূর্বতন