পরিসংখ্যান (Statistics)-গণিত

পরিসংখ্যান এক ধরনের গাণিতিক বিজ্ঞান যা মূলত: উপাত্ত সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা এবং উপাত্ত সহজে পরিবেশন নিয়ে কাজ করে। উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তা থেকে তথ্যসমৃদ্ধ সিদ্ধান্ত গ্রহণে পরিসংখ্যানের ভূমিকা অপরিহার্য। বিভিন্ন ধরনের গবেষনায় পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হয়। গড়, মধ্যক, প্রচুরক, আয়তলেখ, গণসংখ্যা বহুভূজ, অজিভরেখা পরিসংখ্যানের বিষয়বস্তু।

কেন্দ্রীয় প্রবণতা (Central Tendency):
অবিন্যস্ত উপাত্তসমূহকে মানের ক্রমানুসারে সাজালে উপাত্ত সমূহ মাঝামাঝি কোনো মান (কেন্দ্রীয় মান)-এর কাছাকাছি পুঞ্জিভূত হয়। আবার এগুলোকে গণসংখ্যা সারণিতে উপস্থাপন করলে মাঝামাঝি একটি শ্রেণিতে গণসংখ্যার প্রাচুর্য লক্ষ্ করা যায়। উপাত্তসমূহের কেন্দ্রীয় মানের দিকে পুঞ্জিভূত হওয়ার এই প্রবণতাকে কেন্দ্রীয় প্রবণতা বলে।
কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপ :
সাধারণভাবে কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপ হল:
১। গড় বা গাণিতিক গড়
২। মধ্যক
৩। প্রচুরক

গড় বা গাণিতিক গড় (Mean):
গড় হল কোন একটি সংখ্যা তালিকার সকল মানকে প্রতিনিধিত্বকারী একটি একক মান। যেমন: বাংলাদেশের মানুষের আয়ুর গড় ৭১ বছর।
গাণিতিক গড় নির্ণয়ের পদ্ধতি: কোনো সংখ্যা তালিকার সংখ্যাগুলোর সমষ্টিকে উপাত্ত সংখ্যা দ্বারা ভাগ করে গড় বা গাণিতিক গড় নির্ণয় করা হয়। যেমন:
কোনো একটি বাসায় ৫ জন লোক থাকে যাদের উচ্চতা (ফুট) ৪, ৪.৫, ৩, ৪, ৫.৫ ।
সুতরাং, তাদের উচ্চতার গড় = উপাত্তগুলোর সমষ্টি পদসংখ্যা
= ৪+৪.৫+৩+৪+৫.৫
= ২১
= ৪.২
তবে বেশি সংখ্যক উপাত্তের গড় নির্ণয় করার জন্য এই পদ্ধতিটি সুবিধাজনক নয়। এক্ষেত্রে উপাত্তসমূহকে শ্রেণি বিন্যাসের মাধ্যমে সারণিবদ্ধ করে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে গড় নির্ণয় করা হয়।

মধ্যক (Median):
উপাত্তসমূহকে মানের ক্রমানুসারে সাজালে মাঝখানে যে মানটি পাওয়া যায় তা-ই হল মধ্যক। মাঝে একাধিক মান থাকলে তাদের গড় মান হল মধ্যক। উল্লেখ্য, মধ্যকের বামপাশে থাকে অপেক্ষাকৃত ছোট সংখ্যাসমূহ আর ডানপাশে থাকে অপেক্ষাকৃত বড় সংখ্যাগুলো। দুই ভাগেই সমান সংখ্যক উপাত্ত থাকে। যেমন:
৩৪, ৪৫, ৫৩, ৬৪, ৭৫, ৭৫, ৮৫ এর মধ্যক ৬৪ (ক্রমানুসারে সাজানো সংখ্যা তালিকার মাঝের সংখ্যা)।
আবার ১৪, ২৫, ৩৩, ৪৫, ৬৫, ৬৫, ৮৫, ৮৫ এর মধ্যক ৫৫ (ক্রমানুসারে সাজানো সংখ্যা তালিকার মাঝের দু’টি সংখ্যার গড় মান) ।
এছাড়াও মধ্যক নির্ণয়ের আরো পদ্ধতি রয়েছে। নিচের সূত্রগুলো মধ্যক নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়:

১। উপাত্ত সংখ্যা বিজোড় হলে,
মধ্যক = n + ১ তম পদ [ এখানে n উপাত্তের সংখ্যা ]
প্রশ্ন: ৩৪, ৪৫, ৫৩, ৬৪, ৭৫, ৭৫, ৮৫ এর মধ্যক কত?
সমাধান :
মধ্যক = n + ১ তম পদ [ এখানে উপাত্তের সংখ্যা n = ৭]
= ৭ + ১ তম পদ
= তম পদ
= ৪ তম পদ
= ৬৪ [ এখানে ৪ তম পদ হচ্ছে ৬৪]

২। উপাত্ত সংখ্যা জোড় হলে,
মধ্যক = { ( n ) তম পদ +( n +১) তম পদ}÷২ [ এখানে n উপাত্তের সংখ্যা ]
প্রশ্ন: ১৪, ২৫, ৩৩, ৪৫, ৬৫, ৬৫, ৮৫, ৮৫ এর মধ্যক কত?
সমাধান:
মধ্যক = { ( n ) তম পদ +( n +১) তম পদ}÷২ [ এখানে n উপাত্তের সংখ্যা ]
= { ( ) তম পদ +( +১) তম পদ}÷২ [ এখানে n = ৮ উপাত্তের সংখ্যা ]
= (৪ তম পদ + ৫ তম পদ) ÷২
= (৪৫+ ৬৫) ÷ ২
= ১১০÷২
= ৫৫

প্রচুরক (Mode):
কোনো উপাত্তে যে সংখ্যাটি সবচেয়ে বেশি বার উপস্থাপিত হয় তাকে উক্ত উপাত্তের প্রচুরক বলে। প্রচুরক একাধিকও হতে পারে। কোনো উপাত্তে যদি একটি সংখ্যাও একাধিকবার উপস্থাপিত না হয় তাহলে ঐ উপাত্তের প্রচুরক নেই। যেমন:
৩৪, ৪৫, ৫৩, ৬৪, ৭৫, ৭৫, ৮৫ এর প্রচুরক ৭৫
১৪, ২৫, ৩৩, ৪৫, ৬৫, ৬৫, ৮৫, ৮৫ এর প্রচুরক ৬৫ ও ৮৫।
আবার ৩৪, ৪৫, ৫৩, ৬৪, ৭৫, ৮৫ এর প্রচুরক নেই।

বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্ন ও সমাধান

১. প্রদত্ত উপাত্ত গুলোর মধ্যকঃ ১২,৯, ১৫,৫,২০,৮,২৫,১৭,২১,২৩,১১। [ সমাজকল্যাণ সংগঠক-২০০৫]

উত্তরঃ (ঘ) ১৫

Explanation:
উপাত্তগুলোকে মানের উর্ধ্বক্রম অনুসারে সাজিয়ে পাই, ৫ , ৮ , ৯ , ১১ , ১২ , ১৫ , ১৭ , ২০ , ২১ , ২৩ , ২৫ ।
দেখা যাচ্ছে উপাত্তগুলোর সংখ্যা N = ১১ । যা বিজোড় সংখ্যা ।
সুতরাং মধ্যক = n + ১ তম পদ [ এখানে n = উপাত্তের সংখ্যা ]
মধ্যক = ১১ + ১ তম পদ [ এখানে উপাত্তের সংখ্যা n = ১১]
= ১২ তম পদ
= ৬ তম পদ
= ১৫ [ এখানে ৬ তম পদের মান হচ্ছে ১৫ ]

২.নিম্নে প্রদত্ত সংখ্যাগুলোর গড়, মধ্যক ও প্রচুরক নির্নয় করুনঃ [কারিগরী শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চীফ ইন্সট্রাক্টর-২০০৩]

৩০,১২,২২,১৭,২৭,২৫,২০,২৪,১৯,২,২৩,৩২,২৬,২৯,৩৫,২১,১১,২৮ এবং ১৯

উত্তরঃ (খ) গড় ২২.২১, মধ্যক ২৩, প্রচুরক ১৯

Explanation:
গড় = উপাত্তগুলোর সমষ্টি পদসংখ্যা
= ৩০ + ১২ + ২২ + ১৭ + ২৭ + ২৫ + ২০ + ২৪ + ১৯ + ২ + ২৩ + ৩২ + ২৬ + ২৯ + ৩৫ + ২১ + ১১ + ২৮ + ১৯ ১৯
= ৪২২ ১৯
= ২২.২১

মধ্যকঃ
উপাত্তগুলোকে মানের উর্ধ্বক্রম অনুসারে সাজিয়ে পাই, ২ , ১১ , ১২ , ১৭ , ১৯ , ১৯ , ২০ , ২১ , ২২ , ২৩ , ২৪ , ২৫ , ২৬ , ২৭ , ২৮ , ২৯ , ৩০ , ৩২ , ৩৫ ।
দেখা যাচ্ছে উপাত্তগুলোর সংখ্যা N = ১৯ । যা বিজোড় সংখ্যা ।
সুতরাং মধ্যক = n + ১ তম পদ [ এখানে n = উপাত্তের সংখ্যা ]
মধ্যক = ১৯ + ১ তম পদ [ এখানে উপাত্তের সংখ্যা n = ১৯]
= ২০ তম পদ
= ১০ তম পদ
= ২৩ [ এখানে ১০ তম পদের মান হচ্ছে ২৩ ]

প্রচুরক:
দেখা যাচ্ছে উপাত্তগুলোর মধ্যে ১৯ সর্বোচ্চ ২ বার রয়েছে। তাই প্রচুরক ১৯ ।

৩. উপাত্তসমূহের সর্বোচ্চ মান এবং সর্বনিম্ন মানের পার্থক্য কোনটি? [ পিএসসির সহকারী পরিচালক -২০১৬]

উত্তরঃ (গ) পরিসর

Explanation:
উপাত্তসমূহের সর্বোচ্চ মান এবং সর্বনিম্ন মানের পার্থক্য হচ্ছে পরিসর ।

নবীনতর পূর্বতন