সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী

সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী (১৮৮০-১৯৩১)

সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী যৌবনকালে অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করতেন এবং কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ধর্মীয় চেতনায় প্রভাবিত হয়ে মুসলিম পুনর্জাগরণবাদী হিসেবে পরিচিত হন। তাঁর রচিত গদ্য ছিল সংস্কৃতবহুল এবং কবিতা ক্লাসিক রীতির।

সৈয়দ ইসমাইল হোসেনের সাহিত্যকর্ম

সাহিত্যিক উপাদান সাহিত্যিক তথ্য
জন্ম সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ১৩ জুলাই, ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে সিরাজগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। সিরাজগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেছেন বলে নামের সাথে ‘সিরাজী' যুক্ত হয়।
কারাদণ্ড তিনিই প্রথম সাহিত্যিক, যিনি ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগে কারাদণ্ড ভোগ করেন ।
সম্পাদনা তিনি ‘মাসিক নুর’ (১৯১৯) ও ‘সাপ্তাহিক সুলতান' (১৯২৩) পত্রিকা সম্পাদনা করেন ।
উপাধি বলকান যুদ্ধের (১৯১২) সময় তুরস্ককে সাহায্য করার জন্য ভারতবর্ষ থেকে মেডিকেল টিম পাঠানো হয়। এ টিমে থেকে তিনি আহত সৈনিকদের সেবা করার জন্য তুরস্কের সুলতান কর্তৃক ‘গাজী’ উপাধি লাভ করেন ।
কাব্যগ্রন্থ ইসমাইল হোসেনের কাব্যগ্রন্থসমূহ:

‘অনল প্রবাহ’ (১৯০০): এটি তাঁর প্রথম রচনা যা সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত হয় এবং ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারের অভিযোগে তার ২ বছরের (১৯১০-১২) কারাদণ্ড হয় ।

‘স্পেন বিজয় কাব্য' (১৯১৪): এটি স্পেনের সম্রাট রডরিকের সাথে মুসলিম বীর তারেকের সংগ্রাম কাহিনি নিয়ে রচিত মহাকাব্য। এ কাব্যের মাধ্যমে মুসলিমদের অতীত বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস নতুন করে উপস্থাপন করা হয়েছে।

‘আকাঙ্ক্ষা’ (১৯০৬), ‘উদ্বোধন’ (১৯০৭), ‘উচ্ছ্বাস' (১৯০৭), ‘নব উদ্দীপনা' (১৯০৭)।
উপন্যাস ইসমাইল হোসেনের উপন্যাসসমূহ:

‘রায়নন্দিনী’ (১৯১৮): বঙ্কিমচন্দ্রের ‘দুর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাসের নায়ক হিন্দু এবং নায়িকা মুসলমান। দুই ধর্মের অবৈধ সম্পর্কের রচনার কারণে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে রচনা করেন ‘রায়নন্দিনী’। এর নায়ক মুসলিম এবং নায়িকা হিন্দু। এ উপন্যাসে তিনি দেখান যে, হিন্দু নায়িকা কেদার রায়ের কন্যা স্বর্ণময়ী মুসলিম নায়ক ঈশা খাঁর প্রেমেই পড়েনি, বরং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে বিয়েও করেছেন। ‘রায়নন্দিনী' উপন্যাস হিসেবে সফল না হলেও প্রতিক্রিয়া হিসেবে সফল ।

‘বঙ্কিম দুহিতা’ : বঙ্কিমচন্দ্রের ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসে মুসলমান সম্পর্কে বক্রোক্তির জবাবে সিরাজী এ উপন্যাস লিখেন।

‘তারা-বাঈ’ (১৯১৮), ‘ফিরোজা বেগম’ (১৯২৩), ‘নূরউদ্দিন' (১৯২৩), ‘জাহানারা’ (১৯৩১)।
অন্যান্য রচনাবলি ইসমাইল হোসেনের অন্যান্য রচনাবলি:

প্রবন্ধ: ‘স্বজাতি প্রেম' (১৯০৯), ‘তুর্কি নারী জীবন’ (১৯১৩), ‘মহানগরী কর্ডোভা’(১৯১৩), ‘আদব কায়দা শিক্ষা' (১৯১৪), ‘স্পেনীয় মুসলমান সভ্যতা' (১৯১৬), ‘সুচিন্তা' (১৯১৬)।

ভ্রমণকাহিনি: ‘তুরস্ক ভ্রমণ' (১৯১০)।

সঙ্গীত গ্রন্থ: ‘সঙ্গীত সঞ্জীবনী' (১৯১৬), ‘প্রেমাঞ্জলি' (১৯১৬)।
'অনল প্রবাহ' ‘অনল প্রবাহ' কাব্যগ্রন্থের পরিচয়:

সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী রচিত মুসলিম জাগরণমূলক মহাকাব্য জাতীয় রচনা ‘অনল প্রবাহ' (১৯০০)। এ কাব্যে ‘যা চলে গেছে তার জন্য শোক বৃথা বরং জাতির হৃতগৌরব উদ্ধারের প্রচেষ্টাই মুখ্য' এই বাণীর মাধ্যমে মুসলমানদের দুরবস্থা ও অধঃপতন ব্যক্ত করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও রোষ প্রকাশ করেছেন। কাব্যগ্রন্থটিতে ইংরেজ বিরোধী মনোভাব তীব্রভাবে প্রকাশিত হয়েছে বলে ব্রিটিশ সরকার ১৯০৯ সালে বইটি বাজেয়াপ্ত করেন এবং সিরাজীকে দুই বছর (১৯১০-১২) কারাদণ্ড প্রদান করেন। কারাদণ্ড ভোগের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা ‘কারা কাহিনি' পরবর্তীতে মাসিক ‘সাধনা’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।
মৃত্যু তিনি ১৭ জুলাই, ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে মারা যান ।
নবীনতর পূর্বতন