রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন (১৮৮০-১৯৩২)

বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম নারীবাদী লেখিকা ও মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত। নারীদের কুসংস্কারমুক্ত ও শিক্ষিত করতে এবং সমাজে প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তিনি লেখনী ধারণ করেছিলেন। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন।

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের সাহিত্যকর্ম

সাহিত্যিক উপাদান সাহিত্যিক তথ্য
জন্ম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ৯ ডিসেম্বর, ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
বিবাহ ১৮৯৭ সালে ১৬ বছর বয়সে উর্দুভাষী ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট বিপত্নীক সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর তিনি রোকেয়া খাতুন এর সাথে স্বামীর নাম সাখাওয়াত হোসেন যোগ করেন এবং আর. এস হোসেন নামে লিখতেন ।
বিশেষত্ব তিনি মুসলিম নারী মুক্তি আন্দোলনের অগ্রদূত ছিলেন তাই তাকে ‘মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত' বলা হয় ।
প্রথম গল্প ১৯০২ সালে তাঁর প্রথম গল্প ' পিপাসা' প্রকাশিত হয় 'নবনূর’ পত্রিকায় ।
রোকেয়া হল তার নামানুসারে 'রোকেয়া হল' নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হল আছে।
সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল ৩ মে, ১৯০৯ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর ১৯১০ সালে কলকাতায় গমন করেন এবং নারী মুক্তির লক্ষ্যে তিনি ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল' (১৬ মার্চ, ১৯১১) ও ‘আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম' (মুসলিম মহিলা সমিতি)- ১৯১৬ প্রতিষ্ঠা করেন।
উপন্যাস বেগম রোকেয়ার উপন্যাস দুটি যথা: ‘পদ্মরাগ' (১৯২৪), 'Sultana's Dream': এটি ইংরেজিতে লেখা।
গদ্যগ্রন্থ বেগম রোকেয়ার গদ্যগ্রন্থসমূহ: ‘মতিচূর’ (১ম খণ্ড - ১৯০৪, ২য় খণ্ড- ১৯২২), ‘অবরোধবাসিনী’ (১৯৩১)।
মৃত্যু তিনি ৯ ডিসেম্বর, ১৯৩২ সালে মারা যান।

‘আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম' (মুসলিম মহিলা সমিতি)

বাংলার অবহেলিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত নারী সমাজকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে উন্নত সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বাংলা সাহিত্যে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ১৯১৬ সালে 'আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম' (মুসলিম মহিলা সমিতি) প্রতিষ্ঠা করেন। এর কার্যালয় ছিল কলকাতা এবং সদস্য সংখ্যা ১২।

‘সুলতানার স্বপ্ন' গ্রন্থের পরিচয়’

বাংলা সাহিত্যে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন রচিত 'সুলতানার স্বপ্ন' গ্রন্থটি ইংরেজি 'Sultana's Dream' শিরোনামে রচিত। এখানে মূল চরিত্র Sultana একজন অবরুদ্ধা নারী। গৃহের চতুষ্কোণ হচ্ছে তার বিচরণ ও কর্মক্ষেত্র, বাইরের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার অধিকার তার ছিল না। তিনি স্বপ্ন দেখেন, তিনি তার বোন সারার মতো অপরিচিতা এক নারীর সাথে অন্তঃপুর ত্যাগ করে উন্মুক্ত প্রকৃতির মধ্যে ফুল-বাগান দেখতে বের হয়েছেন, যাকে স্বপ্নরাজ্য ‘Lady Land' বলা হয়েছে। এ গ্রন্থে রোকেয়া একটি নারীবাদী স্বপ্নরাজ্য বা ইউটোপিয়ার বর্ণনা দিয়েছেন। এ কল্পরাজ্যে সমাজের সকল কর্মকাণ্ডে নারীরা হবেন প্রধান চালিকাশক্তি আর পুরুষরা হবেন গৃহবন্দী। এখানে থাকবে না কোন অপরাধ, প্রচলিত থাকবে ‘ভালোবাসা ও সত্যের' ধর্ম।

‘অবরোধবাসিনী' সম্পর্কে কি জান?

মুসলিম নারী মুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন রচিত ‘অবরোধবাসিনী’ (১৯৩১) একটি উল্লেখযোগ্য গদ্যগ্রন্থ। কিছু ঐতিহাসিক ও চাক্ষুষ সত্য ঘটনার হাসি-কান্না নিয়ে এর কাহিনি বিন্যস্ত। নকশাধর্মী ছোট ছোট রচনাগুলির মধ্যে ফুটে উঠেছে অবরুদ্ধ নারীর মর্মান্তিক জীবনকথা। বেগম রোকেয়া তাঁর এ গ্রন্থে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, লাহোর, পাঞ্জাব, দিল্লি ও আলীগড়ের সম্ভ্রান্ত ও উচ্চবিত্ত মুসলিম পরিবারে পর্দার নামে অবরোধের অমানবিক ৪৭টি চিত্র তুলে ধরেছেন। এ লেখাগুলো ১৯২৮ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত কলকাতার মাসিক ‘মোহাম্মদী’ পত্রিকায় ছাপানো হতো ।

নবীনতর পূর্বতন