শহীদুল্লা কায়সার

শহীদুল্লা কায়সার (১৯২৭-১৯৭১)

সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানে সাম্যাবস্থা আনয়নের প্রচেষ্টার অন্যতম অগ্রদূত শহীদুল্লা কায়সার। বামপন্থী রাজনীতির সমর্থক হিসেবে তিনি শ্রমিক-জনতার দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের জন্য সক্রিয় সংগ্রামের ওপর গুরুত্ব দিতেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে অত্যন্ত সাহসী ভূমিকা পালন করেন এবং ৩ জুন গ্রেফতার হয়ে প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাভোগ করে মুক্তি পান। তাঁর রচিত উপন্যাসে উজ্জ্বলভাবে প্রতিফলিত হয়েছে বাঙালি জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা, দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও সংগ্রামী চেতনা।

শহীদুল্লা কায়সারের সাহিত্যকর্ম

সাহিত্যিক উপাদান সাহিত্যিক তথ্য
জন্ম শহীদুল্লা কায়সার ১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে ফেনীর মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রকৃত নাম তাঁর প্রকৃত নাম আবু নঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ।
পরিচিতি কথাসাহিত্যিক জহির রায়হান তাঁর ভাই এবং অভিনেত্রী শমী কায়সার তাঁর মেয়ে।
আদর্শ তিনি মার্কসবাদ-লেনিনবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭ সালে ‘গণতান্ত্রিক যুবলীগ' গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।
সাংবাদিকতা ১৯৪৯ সালে ‘সাপ্তাহিক ইত্তেফাক' পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৮ সালে 'দৈনিক সংবাদ' এর সহকারী সম্পাদক নিযুক্ত হন। এতে দেশপ্রেমিক ছদ্মনামে 'রাজনৈতিক পরিক্রমা' ও বিশ্বকর্মা ছদ্মনামে 'বিচিত্র কথা' শিরোনামে উপসম্পাদকীয় লিখতেন।
সাহিত্যকর্ম তাঁর রচিত সাহিত্যকর্মসমূহ:

উপন্যাস:

‘সারেং বউ' (১৯৬২): এটি তাঁর প্রথম উপন্যাস। এতে সমুদ্র উপকূলবর্তী জনপদের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। কদম সারেং জাহাজের নাবিক। সৎ ও সরল বলে সহকর্মীদের মতো বাড়ি-গাড়ি করতে পারেননি, কিন্তু অভাব-অনটনের মধ্যেও ছিলো সুখের সংসার। ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মাদক পাচারের অপরাধে জেলে যেতে হয়। দীর্ঘদিন কদম সারেং নিখোঁজ থাকায় যুবতী স্ত্রী নবিতুন ডুবে যায় দারিদ্র্যের করালগ্রাসের অন্তরালে এবং নিপতিত হয় লোলুপ সমাজপতিদের শিকারের কবলে। কিন্তু আদর্শনিষ্ঠ নবিতুন সব কিছু পরাজিত করে। প্রবল ঝড়ের পর সারেং ফিরে আসলে পিপাসিত কদম সারেংকে ধর্মীয় বিধি লংঘন করে নবিতুন নিজের দুগ্ধ পান করিয়ে সুস্থ করে তোলে। ‘সারেং বউ' উপন্যাসে সব সংস্কার তুচ্ছ করে মানবতাবোধকে জয়ী করা হয়েছে। উপন্যাসটির জন্য তিনি ‘আদমজী পুরস্কার’ (১৯৬২), ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার' (১৯৬২) লাভ করেন । চরিত্র: কদম সারেং, নবিতুন।

'সংশপ্তক' (১৯৬৫): ‘সংশপ্তক' এর অর্থ- নিশ্চিত পরাজয় জেনেও যারা যুদ্ধ চালিয়ে যায়। শহীদুল্লা কায়সার এ চেতনাকে ধারণ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত কাল থেকে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পূর্বকাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সামাজিক- রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিবর্তন ও রূপান্তরকে তাঁর বিখ্যাত ‘সংশপ্তক' (১৯৬৫) উপন্যাসে তুলে ধরেন। হিন্দু-মুসলিম সম্মিলিত জীবনযাপন, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বযুদ্ধ, দাঙ্গা, দূর্ভিক্ষ, ঢাকা ও কলকাতার নাগরিক পরিবেশের সঙ্গে বাকুলিয়া ও তালতলি গ্রামের গ্রামীণ পরিবেশ এ উপন্যাসে তুলে ধরেছেন। উল্লেখযোগ্য চরিত্র: হুরমতি, লেকু, রমজান।

স্মৃতিকথা:

‘রাজবন্দীর রোজনামচা' (১৯৬২)।

ভ্রমণকাহিনি:

‘পেশোয়ার থেকে তাসখন্দ' (১৯৬৬)।
মৃত্যু ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর এদেশীয় দোসর আলবদর বাহিনীর সদস্যগণ তাঁকে ঢাকার কায়েতটুলির বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তাঁর আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
নবীনতর পূর্বতন