সৈয়দ শামসুল হক

সৈয়দ শামসুল হক (১৯৩৫-২০১৬)

বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে সক্রিয় প্রখ্যাত সাহিত্যিক সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক । ষাট-সত্তরের দশকে যখন যৌনতা চরম লজ্জার বিষয় তখনই তিনি যৌনগন্ধী সাহিত্য রচনা করেন। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, অনুবাদ তথা সাহিত্যের সকল শাখায় সাবলীল পদচারণার জন্য তাকে ‘সব্যসাচী লেখক' বলা হয়।

সৈয়দ শামসুল হকের সাহিত্যকর্ম

সাহিত্যিক উপাদান সাহিত্যিক তথ্য
জন্ম সৈয়দ শামসুল হক ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ।
তাঁর স্ত্রী প্রখ্যাত লেখিকা ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হক তাঁর স্ত্রী ।
সব্যসাচী লেখক তাঁকে সব্যসাচী লেখক নামে অভিহিত করা হয়। সব্যসাচী অর্থ- যার ডান বাম দুই হাত সমানভাবে চলে। যে লেখক সাহিত্যের সকল শাখায় অবাধ বিচরণ করেন, তাকেই সব্যসাচী লেখক বলে। কিন্তু সে বিচারে সৈয়দ শামসুল হক সব্যসাচী লেখক নন। তিনি ও তাঁর সাহিত্যানুরাগী ব্যক্তিবর্গ তাকে সব্যসাচী লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম দিককার গ্রন্থগুলো তাঁর ভাইয়ের লক্ষ্মীবাজারের সব্যসাচী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হতো। সে দিক থেকেই তাকে সব্যসাচীর লেখক বলা হয়।
পুরস্কার তিনি মাত্র ২৯ বছর বয়সে ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার' পান (এ পুরস্কার প্রাপ্ত সাহিত্যিকদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে কম বয়সী)। এছাড়াও তিনি ‘আদমজী সাহিত্য পুরস্কার' (১৯৬৯), ‘একুশে পদক' (১৯৮৪), ‘স্বাধীনতা পুরস্কার' (২০০০) লাভ করেন।
উপন্যাস তাঁর রচিত উপন্যাসগুলো:

‘দেয়ালের দেশ': এটি তাঁর প্রথম উপন্যাস । “নিষিদ্ধ লোবান' (১৯৮১): এটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস। উপন্যাসটি ‘গেরিলা' নামে চলচ্চিত্রায়িত করেন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ ।

‘নীলদংশন' (১৯৮১): এটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ।

‘খেলারাম খেলে যা' (১৯৭৯) : আত্মসুখ সন্ধানী ও ভোগবাদী চেতনার চরিত্র বাবর আলীর মস্তিষ্ককোষে ক্রিয়াশীল ফ্রয়েডীয় লিবিডোর একাধিপত্যের কাহিনি এর বিষয়। যৌন সুরসুরি এ উপন্যাসে বিদ্যমান থাকায় একে ‘পিনআপ নভেল' বলা হয়। এ ধরনের উপন্যাসকে হুমায়ুন আজাদ ‘অপন্যাস’ বলেছেন।

‘এক মহিলার ছবি’ (১৯৫৯),

‘অনুপম দিন' (১৯৬২),

‘সীমানা ছাড়িয়ে' (১৯৬৪),

‘দ্বিতীয় দিনের কাহিনী' (১৯৮৪),

‘আয়না বিবির পালা' (১৯৮৫),

‘স্তব্ধতার অনুবাদ' (১৯৮৭),

‘বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ' (১৯৮৯),

‘ত্রাহি’ (১৯৮৯),

'তুমি সেই তরবারি' (১৯৮৯),

‘মৃগয়ায় কালক্ষেপণ’ ,

‘অন্য এক আলিখান’ ,

‘একমুঠো জন্মভূমি' ,

‘আলোর জন্য’ ,

‘রাজার সুন্দরী'
কাব্যগ্রন্থ তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থগুলো:

‘পরানের গহীন ভিতর' (১৯৮০): এটি আঞ্চলিক ভাষারীতিতে রচিত।

‘একদা এক রাজ্যে' (১৯৬১),

‘বিরতিহীন উৎসব' (১৯৬৯),

‘বৈশাখে রচিত পঙ্ক্তিমালা' (১৯৭০),

'প্রতিধ্বনিগণ' (১৯৭৩),

‘অপর পুরুষ' (১৯৭৮),

‘আমি জন্মগ্রহণ করিনি' (১৯৯০),

‘ধ্বংসস্তূপে কবি ও নগর' (২০০৯),

‘নাভিমূলে ভষ্মাধার'
কাব্যনাট্য কাব্যনাট্য:

‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়' (১৯৭৬) : এটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কাব্যনাট্য। এর রচনাকাল ১ মে থেকে ১৩ জুন, ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড শহরে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষে মুক্তিবাহিনীর গ্রামে প্রবেশের ঘটনা এ নাটকে স্থান পেয়েছে।

‘নূরলদীনের সারা জীবন' (১৯৮২) : ১৭৮৩ সালের রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের সামন্তবাদ বিরোধী কৃষক নেতা নূরলদীনের সংগ্রাম নিয়ে রচিত এ নাটক। এ নাটকের বিখ্যাত উক্তি- ‘জাগো, বাহে, কোনঠে সবায়'।

‘গণনায়ক’ (১৯৭৬),

‘এখানে এখন' (১৯৮৮),

‘ঈর্ষা’
প্রবন্ধ ‘হৃৎকলমের টানে' (১৯৯১)
শিশুতোষ ‘সীমান্তের সিংহাসন’, ‘আনু বড় হয়', ‘হডসনের বন্দুক'
গল্প ‘তাস' (১৯৫৪),

‘শীত বিকেল' (১৯৫৯),

‘রক্তগোলাপ' (১৯৬৪),

‘আনন্দের মৃত্যু' (১৯৬৭),

‘প্রাচীন বংশের নিঃস্ব সন্তান' (১৯৮২),

‘জলেশ্বরীর গল্পগুলো' (১৯৯০)।
মৃত্যু তিনি ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। (কবির ইচ্ছানুযায়ী কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে তাকে সমাহিত করা হয়)
নবীনতর পূর্বতন