এন্টনি ফিরিঙ্গি

খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী, আঠার শতকের কবি ও বাংলা ভাষার কবিয়াল এন্টনি ফিরিঙ্গি। তিনি জাতিতে ছিলেন পর্তুগিজ। ইউরোপীয় ছিলেন বলে তিনি ‘ফিরিঙ্গি' আখ্যা পান। তার প্রকৃত নাম এন্টনি হেন্সম্যান। তার বাবা ছিলেন পর্তুগিজ এবং মা বাঙালি ।

অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির জীবনী

হ্যান্সম্যান অ্যান্টনি, যিনি অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি নামে পরিচিত, ১৭৮৬ সালে পর্তুগালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯ শতকের শুরুতে তিনি বাংলায় এসে পশ্চিমবঙ্গের ফরাসডাঙ্গায় বসবাস শুরু করেন। তিনি অ্যান্টনি লীলাবতী নামে একজন বাঙালি হিন্দু মহিলাকে বিয়ে করেন এবং তাদের দুই পুত্র ও এক কন্যা ছিল।

অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি বাংলা ভাষার প্রথম ইউরোপীয় কবিয়াল ছিলেন। কবিগান, বাংলার লোকসঙ্গীতের একটি প্রকার, এই কবিগান গাওয়ার জন্য তিনি বিখ্যাত ছিলেন। জাতি, ধর্ম, বর্ণের উর্ধ্বে উঠে মানুষ ও মানবতার কথা তার গানে বারবার উঠে এসেছে। প্রথমে গোরক্ষনাথ তার গানগুলোর বাঁধনদার ছিলেন, পরে তিনি নিজেই গান রচনা শুরু করেন। তিনি 'হেসুন্' নামেও পরিচিত ছিলেন । তিনি "মন যদি বিশ্বাস করে", "আমি যে গান গাই", "এই দুঃখে কেঁদে মরি", "হরিনাম গান গাইবো" সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গান রচনা করেন।

১৮৩৬ সালে ফরাসডাঙ্গায় অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির মৃত্যু হয়। তার সমাধি আজও সেখানে বিদ্যমান। বাংলা কবিগানের ইতিহাসে তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এবং বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন। তার গান আজও জনপ্রিয় এবং বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির জীবন ও কর্ম নিয়ে বেশ কিছু বই ও গান রচিত হয়েছে। ২০১৩ সালে, 'অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি' নামে একটি বাংলা চলচ্চিত্রও মুক্তি পায়।

এন্টনি ফিরিঙ্গির তথ্য কণিকা

  • তিনি সৌদামিনি নামক এক হিন্দু ব্রাহ্মণ বিধবাকে সতীদাহের চিতা থেকে উদ্ধার করে বিয়ে করেন।
  • তিনি কলকাতার বউবাজারে ‘ফিরিঙ্গি কালী মন্দির' প্রতিষ্ঠা করেন।
  • তাকে নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র: উত্তম কুমার অভিনীত ‘এন্টনি ফিরিঙ্গি' (১৯৬৭), প্রসেনজিৎ অভিনীত 'জাতিস্মর' (২০১৪)। (জাতিস্মর অর্থ যে ব্যক্তি পূর্বজন্মের কথা স্মরণ করতে পারে)
  • তিনি আনুমানিক ১৮৩৬ সালে মারা যান ।

তাঁর বিখ্যাত গান

    আমি ভজন সাধন জানি নে মা
          নিজে তো ফিরিঙ্গি,
যদি দয়া করে কৃপা কর / হে শিবে মাতঙ্গী।

নবীনতর পূর্বতন