সাগর-মহাসাগর-উপসাগর

বারিমন্ডল: যে বিশাল পানিরাশিতে ভূত্বকের নিচু অংশগুলো পরিপূর্ণ রয়েছে, তাকে বারিমণ্ডল বলে। মহাসাগর, সাগর, উপসাগর, হ্রদ প্রভৃতি নিয়ে বারিমণ্ডল গঠিত।

  • মহাসাগর : উন্মুক্ত বিস্তীর্ণ পানিরাশিকে মহাসাগর বলে ।
  • সাগর : মহাসাগরের চেয়ে আয়তনে ছোট পানিরাশিকে সাগর বলে ।
  • উপসাগর : তিনদিক স্থল দ্বারা বেষ্টিত পানিরাশিকে উপসাগর (Bay) বলে। প্রায় চারদিক স্কুল দ্বারা বেষ্টিত পানিরাশিকেও উপসাগর (Gulf) বলে।
  • হ্রদ : চারদিকে সম্পূর্ণভাবে স্থল দ্বারা বেষ্টিত প্রাকৃতিক পানিরাশিকে হ্রদ বলে।

মহাসাগর

পৃথিবীতে পাঁচটি মহাসাগর রয়েছে। যথা: প্রশান্ত মাহাসগর, আটলান্টিক মহাসাগর, ভারত মহাসাগর, উত্তর মহাসাগর (আর্কটিক মহাসাগর) এবং দক্ষিণ মহাসাগর (এ্যান্টর্কটিক মহাসাগর) । জলরাশির পরিমাণ বেশি দক্ষিণ গোলার্ধে।

  1. প্রশান্ত মহাসাগর :
    ● পৃথিবীর বৃহত্তম ও গভীরতম মহাসাগর।
    ● সর্বোচ্চ গভীরতা ১০,৯২৮ মিটার এবং গড় গভীরতা ৪০৭৯ মিটার ।
    ● আয়তন- ১৬ কোটি ৬০ লক্ষ বর্গকিলোমিটার।
    ● পৃথিবীর গভীরতম স্থান প্রশান্ত মহাসাগরের মারিয়ানা ট্রেজ । এই স্থানের গভীরতা ১১০৩৩ মিটার বা ৩৬১৯৯ফুট।
    ● পৃথিবীর বৃহত্তম প্রবাল-প্রাচীর 'গ্রেট বেরিয়ার রীফ' (Great Barrier Reef) অস্ট্রেলিয়ার উত্তরপূর্ব উপকূলে অবস্থিত।
  2. আটলান্টিক মহাসাগর :
    ● গভীরতম স্থানের নাম ন্যায়ার্স (পোয়ের্তেরিকা) ।
    ● আটলান্টিক মহাসাগরের সর্বোচ্চ গভীরতা ৯,২১৯ মিটার এবং গড় গভীরতা ৩,৯২৬ মিটার ।
    ● আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমে আমেরিকা মহাদেশ এবং পূর্বে ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশ।
    ● আয়তন- ৮ কোটি ৫১ লক্ষ ৩৩ হাজার বর্গ কিমি ।
  3. ভারত মহাসাগর :
    ● গভীরতম স্থানের নাম সুন্দা ট্রেঞ্চ ।
    ● ভারত মহাসাগরের সর্বোচ্চ গভীরতা ৭,৪৫৫৫ মিটার এবং গড় গভীরতা ৩,৯৬৩ মিটার ।
    ● আটলান্টিক ও ভারত উভয় মহাসাগরের তীরবর্তী দেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা।
    ● আয়তন ৭ কোটি ৫ লক্ষ ৬০ হাজার বর্গ কিমি ।
  4. দক্ষিণ মহাসাগর :
    ● আয়তন-১ কোটি ৪৭ লক্ষ বর্গকিলোমিটার।
    ● দক্ষিণ মহাসাগরের সর্বোচ্চ গভীরতা ৫,৭৪৫ মিটার এবং গড় গভীরতা ১৪৯ মিটার ।
  5. উত্তর বা আর্কটিক মহাসাগর :
    ● আয়তনে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম মহাসাগর ও সর্বাপেক্ষা কম গভীর একটি মহাসাগর।
    ● উত্তর মহাসাগরের সর্বোচ্চ গভীরতা ৫,৬২৫ মিটার এবং গড় গভীরতা ১,২০৫ মিটার ।
    ● গভীরতম স্থানের নাম ইউরেশিয়ান বেসিন।
    ● উত্তর মহাসাগরের অধিকাংশ অঞ্চল একটি বরফের টুপি" দ্বারা আবৃত থাকে।
    ● আন্টর্কটিক মহাসাগর থেকে আসা জলের সবচেয়ে বড়ো অন্তঃপ্রবাহটি হল নরওয়েজিয়ান স্রোত।
    ● আয়তন ১,৪০,৫৬,০০০ বর্গ কিমি।
    ● রাশিয়ার সাথে আর্কটিকের বৃহত্তম সীমান্ত অবস্থিত।
মহাসাগর ও এর অন্তর্গত দ্বীপসমূহ
মহাসাগর অন্তর্ভুক্ত দ্বীপসমূহ
প্রশান্ত মহাসাগর ফিলিপাইন, পাপুয়া নিউগিনি, পালাউ, নাউরু, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ।
আটলান্টিক মহাসাগর সেন্ট হেলেনা, যুক্তরাজ্য, বাহামা, বারমুডা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, গ্রিনল্যান্ড, কিউবা।
ভারত মহাসাগর সিসিলি, মরিশাস, দিয়েগো গার্সিয়া, মালদ্বীপ, মালাগাসি, মাদাগাস্কার।
আর্কটিক-আটলান্টিক মহাসাগর গ্রিনল্যান্ড দ্বীপ

সাগর উপসাগর

  • পৃথিবীর বৃহত্তম সাগর : দক্ষিণ চীন সাগর ।
  • পৃথিবীর গভীরতম সাগর : ক্যারিবিয়ান সাগর ।
  • পৃথিবীর বৃহত্তম উপসাগর :
    মেক্সিকো উপসাগর (Gulf হিসাবে)
    বঙ্গোপসাগর (Bay হিসাবে)
  • শান্ত সমুদ্র : চাঁদে অবস্থিত ।
  • Sargasso Sea : উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত ।
সাগর এবং তীরবর্তী রাষ্ট্রসমূহ
সাগর তীরবর্তী রাষ্ট্রসমূহ
আন্দামান সাগর বার্মা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড
বঙ্গোপসাগর ভারত, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা
আরব সাগর ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, ওমান, পাকিস্তান, সামালিয়া, ইয়েমেন
পারস্য উপসাগর ইরান, ইরাক, কুয়েত, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ওমান

লোহিত সাগর:

  • প্রাচীন নাম: সাইনাস এরাবিকাস
  • ভারত মহাসাগরের একটি অংশ। যা আফ্রিকা ও এশিয়াকে পৃথক করেছে। এটি দক্ষিণে বাবেল মান্দেব ও এডেন উপসাগর এর মাধমে ভারত মহাসাগরের সাথে যুক্ত। উত্তরে রয়েছে আকাবা ও সুয়েজ উপসাগর।
  • তীরবর্তী দেশ: সৌদি আরব, ইয়েমেন, মিশর, সুদান, ইরিত্রিয়া, জিবুতি।

এজভ সাগর:

  • পূর্ব ইউরোপে অবস্থিত। কৃষ্ণ সাগরের সাথে কার্চ প্রণালী দিয়ে যুক্ত। ।
  • তীরবর্তী দেশ: ইউক্রেন, রাশিয়া

দক্ষিণ চীন সাগর : প্রশান্ত মহাসাগরের এক অংশ। তীরবর্তী দেশসমূহ চীন, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, ব্রুনেই, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম। ওই সাগর দিয়ে বিশ্বে এক-তৃতীয়াংশ পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করে। সামুদ্রিক মৎস্য আরোহন এর স্থান। এর তলদেশে আছে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস। সাম্প্রতিককালে চীন অঞ্চলে কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করছে ও সামরিক স্থাপনা তৈরি করেছে। যাতে এক সংকট তৈরি হয়েছে। এ সাগরে অবস্থিত paracel Icelands নিয়ে চীন এবং তাইওয়ান ও ভিয়েতনামের সাথে দ্বন্দ্ব রয়েছে এবং বর্তমানে চীনের দখলে। এ সাগরে অবস্থিত স্প্রাটলি দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে চীন এবং তাইওয়ান, মালয়শিয়া, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের মাঝে দ্বন্দ্ব রয়েছে।

বিভিন্ন দেশের সমুদ্র সৈকত
সমুদ্র সৈকত অবস্থান
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশ
স্যান্ডোওয়ে সৈকত মিয়ানমার
স্যান সেবাসতিয়ান বিচ স্পেন
কনটিজ প্লেজ ফ্রান্স
সেন্ট জর্জ আইল্যান্ড বিচ যুক্তরাষ্ট্র
ক্যালগ্রে বে যুক্তরাজ্য
ন্যাপলস সী বিচ যুক্তরাষ্ট্র
নাইটি মাইল বীচ নিউজিল্যান্ড
খোরফাক্কান সৈকত আরব আমিরাত
ওমান সৈকত ওমান
গোয়া সী বিচ ভারত

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল রহস্যের সমাধান

  • মূলত পশ্চিম আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝে একপাশে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা, অন্যদিকে বারমুডা আর সান জুয়ান ও পুয়ের্তো রিকোর ৫,০০০ বর্গকিলোমিটারের ত্রিভুজাকৃতির অঞ্চলটি 'বারমুডা ট্রায়াঙ্গল' হিসেবে পরিচিত। এ অঞ্চলে প্রতি বছর গড়ে চারটি বিমান এবং ২০টি জাহাজ রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়। এসব জাহাজও বিমান নিখোঁজ হওয়ার অধিকাংশেরই কোনো ব্যাখ্যা মানুষের কাছে ছিল না। অনেকেই এ নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টিকে ভৌতিক কারণ মনে করতো। এজন্য অনেকেই এ অঞ্চলকে 'শয়তানের ত্রিভুজ' নামে আখ্যা দিয়ে থাকে।
  • সম্প্রতি বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে রহস্যজনকভাবে বিমান ও জাহাজ নিখোঁজের কারণ উদঘাটনের দাবি করেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা। তাদের মতে, বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে অনেকটা ভৌতিকভাবে বিমান ও জাহাজ অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার বড় কারণ প্রকৃতির খামখেয়ালি। মূলত ঝড়ের কবলে পড়ে এবং দৈত্যাকার ঢেউয়ের মধ্যেই হারিয়ে যায় এসব বিমান ও জাহাজ। এখানকার কোনো কোনো ঢেউ ৩০ মিটার বা ১০০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। ফলে কোনো জাহাজ এ ঢেউয়ের মুখে পড়লে কোনাভোবেই রক্ষা পাওয়ার উপায় থাকে না। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে মূলত বারমুডা, ফ্লোরিডা, এবং পুয়ের্তো রিকোর প্রত্যেকটি দিক থেকে আসা স্রোত এক জায়গায় মিলিত হয়ে বিশাল ঢেউয়ের সৃষ্টি করে। এর মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ থেকে ঝড় এলে ঢেউগুলো আরো ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। ঐ ঝড়ের সাথে যখন আবার ফ্লোরিডার দিক থেকে ঝড়ো বাতাস এর সাথে মিলিত হয় তখন তা রুদ্ররূপ নেয়।
নবীনতর পূর্বতন