বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সমূহ

বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে সমৃদ্ধ একটি দেশ। সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন যুগের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন যা আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাক্ষী বহন করে। বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সমূহের মাঝে রয়েছে বিভিন্ন প্রাচীন স্থাপত্য যেমন- মসজিদ , মন্দির , দীঘি ; বিভিন্ন প্রত্নবস্তু যেমন- পাথরের মূর্তি , মুদ্রা , অস্ত্র , মৃৎশিল্প ; বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান যেমন- মহাস্থানগড় , ময়নামতি , সোনারগাঁও ,পাহাড়পুর , বিভিন্ন বিহার , বানৌঘা , নবগ্রাম , উয়ারি বটেশ্বর ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য । বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অমূল্য সম্পদ। এগুলো সংরক্ষণ করা আমাদের সকলের কর্তব্য।

বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান সমূহ

বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে সমৃদ্ধ একটি দেশ। সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন যুগের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান যা আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাক্ষী বহন করে। কিছু উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান সমূহ নিম্নরুপ:

উয়ারি বটেশ্বর

উয়ারি বটেশ্বর বাংলাদেশে প্রাচীন জনপদের একটি নিদর্শন।উয়ারি বটেশ্বর নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্বিক স্থান। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন এবং সর্বশেষ আবিষ্কৃত প্রত্নতত্বস্থান। এটি মাটির নিচে একটি দূর্গ নগরী। উয়ারির বসতিকে খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০ অব্দের বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রত্নতাত্বিকদের অনেকেই উয়ারি বটেশ্বরকে টলেমির 'সৌনাগড়া' বলে উল্লেখ করে থাকেন। এখানে প্রাপ্ত চারটি পাথরে নিদর্শন প্রস্তর যুগের বলে মনে করা হয়। ২০১০ সালে এখানে আবিষ্কৃত হয়েছে ১৪০০ বছরের প্রাচীন প্রাচীন ইট নির্মিত বৌদ্ধ পদ্মমন্দির । ১৯৩০ সালের দিকে স্থানীয় স্কুল শিক্ষক জনাব মোহাম্মদ হানিফ পাঠান প্রথম উয়ারি বাটেশ্বরকে সুধী সমাজের নজরে আনেন। ২০০০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ববিভাগের উদ্যোগে শুরু হয় এর প্রথম খনন কাজ। খনন কাজের নেতৃত্ব দেন বিভাগের প্রধান সুফী মোস্তাফিজুর রহমান।

মহাস্থানগড়

বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত মহাস্থানগড় বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। বাংলার প্রাচীনতম জনপদ ছিল পুণ্ড্র বা পৌণ্ড্র পুন্ডদের আবাসস্থলই পুণ্ড্র বা পুণ্ড্রবর্ধন নামে পরিচিত। এই পুণ্ড্র রাজ্যের রাজধানী ছিল পুণ্ড্রনগর। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে এই নগর গড়ে উঠেছিল। পুণ্ড্রনগরের বর্তমান নাম মহাস্থানগড়। এটি প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধনের ধ্বংসাবশেষ এবং মৌর্য ও গুপ্ত রাজবংশের পুরাকীর্তির জন্য বিখ্যাত। কথিত আছে, এখানে পরশুরামের সাথে ফকির বেশী আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র.) এর যুদ্ধ হয়। (১২০৫-১২২০) যুদ্ধে পরশুরাম পরাজিত ও নিহত হন। শাহ সুলতান বলখী (র.) এ অঞ্চলে ইসলামের পতাকা উড্ডীন করেন। গড়ের পূর্ব পার্শ্বে রয়েছে করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত শীলাদেবীর ঘাট। এখানে রয়েছে সম্রাট অশোক নির্মিত বৌদ্ধ স্তম্ভ যা বেহুলার বাসর ঘর নামে পরিচিত। মহাস্থানগড়ের দর্শনীয় স্থান শাহ সুলতান বলখীর মাজার, পরশুরামের প্রাসাদ, খোদার পাথর ভিটা, বৈরাগীর ভিটা, গোবিন্দ ভিটা, লক্ষ্মীন্দরের মেধ, কালীদহ সাগর, পদ্মাদেবীর বাসভবন ইত্যাদি। ১৮০৮ সালে বুকানন হ্যামিল্টন সর্বপ্রথম এ স্থানটি আবিষ্কার করেন। ১৮৮৯ সালে আলেকজান্ডার কানিংহাম স্থানটিকে প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধনের রাজধানী হিসাবে সনাক্ত করেন। ২০১৬-২০১৭ সালের জন্য সার্ক সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে মহাস্থানগড়কে ঘোষণা হয়েছিলো। সাত লাইন বিশিষ্ট বাংলার প্রাচীনতম লিপিতাত্ত্বিক দলিল 'ব্রাহ্মী লিপি' বগুড়ার মহাস্থানগড়ে পাওয়া গেছে।

সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে চূড়ান্ত স্বীকৃতি লাভ করে বাংলাদেশের প্রাচীন জনপদ বহুড়ার মহাস্থানগড়। ২৪ নভেম্বর ২০১৬ সার্ক কালচারাল সেন্টার এ ঘোষণা চূড়ান্ত করে। ২১ জানুয়ারি ২০১৭ থেকে এ ঘোষণা কার্যকর হবে। নানা তথ্য-উপাত্ত, ইতিহাস-ঐতিহ্য বিশ্লেষণ করে কুমিল্লার ময়নামতি অঞ্চল ও কুষ্টিয়ার শিলাইদহকে পাশে রেখে বেছে নেয়া হয়। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত আড়াই হাজার বছরের ইতিহাস সমৃদ্ধ মহাস্থানগড়। বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন রাজ্যের রাজধানী মহাস্থানগড়ের নাম ছিল পুণ্ড্রনগর। মৌর্য, গুপ্ত, পাল, শশাঙ্ক, হর্ষবর্ধন, যশোবর্ষন, মদন, সেনরাজসহ অন্তত ১৬টি কালের নিদর্শন মেলে মহাস্থানগড় ও তার আশপাশে। ১৮৭৯ সালে প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন রাজ্যের ঐতিহাসিক নিদর্শন আবিষ্কার করেন ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ আলেকজান্ডার কানিংহ্যাম।

মহাস্থানগড়ের আশেপাশে রয়েছে আরো অনেক ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। এর মধ্যে 'বেহুলার বাসরঘর' নামে অধিক পরিচিত গোকূল মেঘ, ভাসুবিহার, যোগীর ভবন, ভীমের জাঙ্গাল, গোবিন্দভিটা, বৈরাগীর ভিটা, খোদার পাথর ভিটা, শাহ সুলতান বলখী (রহ:) মাজার, শীলাদেবীর ঘাট, শেরপুরের খেরুয়া মসজিদ, নবাববাড়ী (সাবেক নীলকুঠি) অন্যতম।

  • বৈরাগীর ভিটা: বগুড়ার মহাস্থান
  • বৈরাগীর চাল : গাজীপুরের শ্রীপুরে

ময়নামতি

'ময়নামতি' কুমিল্লা জেলায় অবস্থিত ঐতিহাসিক স্থান। এ এলাকাটি প্রকৃতপক্ষে একটি প্রাচীন নগরী এবং বৌদ্ধ বিহারের অবশিষ্টাংশ। ৭ম-দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে এই নগরী ও বিহারগুলো নির্মিত হয়েছিল। রাজা মানিকচন্দ্রের স্ত্রী রানী ময়নামতির নামানুসারে এ স্থানের নামকরণ করা হয়। প্রত্নতাত্বিকদের মতে, ইহা জয়কর্মান্তবসাক নামক একটি প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ। এখানকার উল্লেখযোগ্য স্থাপনা হল- শালবনবিহার, লালমাই পাহাড়, কুটিলা মুড়া, ইটাখোলা মুড়া, রূপবান মুড়া, চারপত্র মুড়া ইত্যাদি।

ওয়ার সেমেট্রি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ব্রিটিশ ও ভারতীয় সৈন্যদের কবরস্থান। এটি ১৯৪৩-১৯৪৪ সালে তৈরি হয়েছে। এই সমাধিক্ষেত্রটি Commonwealth War Graves Commission (CWGC) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ও তারাই এই সমাধিক্ষেত্র পরিচালনা করেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে দুটি ওয়ার সিমেট্রি রয়েছেঃ ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি এবং চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রি।

নোয়াপাড়া ঈষাণচন্দ্রনগর : কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার অন্যতম বৃহৎ অনাবিষ্কৃত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। ধ্বংসাশেষের বেশির ভাগ এলাকা বৌদ্ধ আমলের। পণ্ডিতগণ মনে করেন এই নিদর্শনগুলো হারিয়ে যাওয়া নগরী কর্মান্ত ভাসাকর যা ৭ শতকে সমতটের রাজধানী খাদগা।

সোনারগাঁও

বারভূইয়াদের নেতা ঈসা খাঁ সোনারগাঁয় বাংলার রাজধানী স্থাপন করেন। এ সময় দিল্লীর ক্ষমতায় ছিলেন সম্রাট আকবর। সোনারগাঁও বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা। সোনারগাঁর পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা, দক্ষিণে ধলেশ্বরী এবং উত্তরে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বেষ্টিত একটি বিস্তৃত জনপদ ছিল। এর পূর্ব নাম 'সুবর্ণগ্রাম'। ঈসা খাঁর স্ত্রী সোনা বিবির নামানুসারে সোনারগাঁও এর নামকরণ করা হয়।

  • সোনারগাঁর দর্শনীয় স্থান : সোনা বিবির মাজার, পাঁচবিবির মাজার, পঞ্চম পীরের মাজার, গিয়াস উদ্দিন আজম শাহের মাজার, হোসেন শাহ নির্মিত একটি সদৃশ্য মসজিদ, ঈসা খাঁর স্মৃতি বিজড়িত লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর, গ্রান্ড-ট্রাঙ্ক রোড ইত্যাদি।
  • পানাম নগর: এই এলাকাটি ১৯ শতকে সোনারগাঁয়ের উচ্চবিত্ত ব্যবসায়ীদের বাসস্থান ছিল। বড় নগর, খাস নগর, পানামা নগর প্রাচীন সোনারগাঁর এই তিন নগরের মধ্যে পানামা ছিলো সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এখানে কয়েক শতাব্দী পুরনো অনেক ভবন রয়েছে, যা বাংলার বার ভূইয়াদের ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত। সোনারগাঁর ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই নগরী গড়ে ওঠে।
  • বাংলাদেশের লোকশিল্পের অতীত কীর্তিসমূহ নকশী কাঁথা, মাটির পাত্র, বেতন, কাঁসা, মসলিন বস্ত্র, তৈজসপত্র ইত্যাদি সংরক্ষণের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ে লোকশিল্প জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে। ১৯৯৬ সালের ৬ অক্টোবর সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের নাম পরিবর্তন করে 'শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন' জাদুঘর করা হয়েছে।

হরিপুর জমিদার বাড়ি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার পঞ্চম সংরক্ষিত পুরাকীর্তি নাছিরনগর উপজেলার তিতাস নদীর পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত হরিপুর জমিদার বাড়ি। প্রাচীন জমিদার বাড়িটির ঐতিহাসিক নিদর্শন বিবেচনা করে সম্প্রতি প্রত্নতত্ত্ব হিসেবে ঘোষণা করে। জেলার অন্য চারটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি- উলচাপড়া মসজিদ, সদর; আড়িয়াইল মসজিদ ও আড়িফাইল মাজার (জোড়া কবর), সরাইল এবং বাড়ি উড়া প্রাচীন পুল, সরাইল। নাছিরনগর উপজেলা সদর হতে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামে অবস্থিত হরিপুর জমিদার বাড়িটি প্রায় ১৭৫ বছর আগে জমিদার গৌরী প্রসাদ রায় চৌধুরী ও কৃষ্ণপ্রসাদ রায় চৌধুরী নির্মাণ করেন।

বাংলা ১৩৪৩ সনের ১২ চৈত্র কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পর পর্যায়ক্রমে বাড়িটির উত্তরাধিকার হন হরিপদ রায় চৌধুরী ও শান্তি রায় চৌধুরী। তাদের কাছ থেকে বাড়ির মালিকানা ও জমিদারি আসে উপেন্দ্র রায় চৌধুরী ও হরেন্দ্র রায় চৌধুরীর কাছে। কালক্রমে ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্ত হওয়ার পর জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে তারা বাড়িটি ফেলে কলকাতায় চলে যান।

বগুড়ার নবাববাড়ি

১২ মে ২০১৬ বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী নবাববাড়িকে সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে সরকার। ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব থাকায় ১৯৬৮ সালের পুরাকীর্তি আইনের ১০ নম্বর ধারা (১) উপধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার এ নবাববাড়িকে সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে।

বগুড়া শহরের সূত্রপুর মৌজায় প্রায় ১০ বিঘা জমির ওপর ১৮৮৪ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল ঐতিহ্যবাহী এ নবাববাড়ি। এরপর ১৮৯৪ সালে বগুড়ার জমিদার আবদুস সোবহান চৌধুরী নীলকরদের কাছ থেকে এ বাড়িটি কিনে নেন। পরিবারের সদস্য হিসেবে ১৯৫৩ সালে নিযুক্ত পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রি মোহাম্মদ আলী চৌধুরীও দীর্ঘদিন এ বাড়িতে ছিলেন। মরহুম মোহাম্মদ আলী ও তার স্ত্রীসহ পরিবারের অনেক সদস্যের কবর রয়েছে এখানে। স্বাধীনতার পর কয়েক দশক পরিত্যক্ত থাকলেও নবাব পরিবারের উত্তরসূরিরা ১৯৯৮ সালে 'মোহাম্মদ আলী মিউজিয়াম' নামে বাড়িটিকে ঘিরে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলেন।।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বড়বাড়ি মঠেরচালা এলাকায় গত দুই বছর ধরে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণার কাজ চলে। এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে ১০ এপ্রিল, ২০১৫ পাল আমলের প্রাচীন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয় স্থাপনাটি হাজার বছর আগের পাল আমলের ধর্মীয় কোনো প্রার্থনার স্থান ছিল।

বালিয়াটি জমিদার বাড়ি

'বালিয়াটি জমিদার বাড়ি' মানিকগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। এটি ১৯ শতকে নির্মিত অন্যতম প্রাসাদ। মানিকগঞ্জের ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান হলো একচালা দুর্গ শিবালয়, মত্তের মাঠ, আনন্দময়ী কালিবাড়ী, তেওতা জমিদার বাড়ি, ধানকোড়া জমিদার বাড়ি, দশচিড়া বৌদ্ধবিহার ও স্তুপ, নবরত্ন মাঠ ইত্যাদি।

বাংলাদেশে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি: দেশে বর্তমানে সংরক্ষিত পুরাকীর্তির সংখ্যা ৪৫৪টি। এর মধ্যে সর্বাধিক ৫৪টি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি রয়েছে। বগুড়া জেলায়। আর বগুড়ার মধ্যে সর্বাধিক ৪২টি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি রয়েছে শিবগঞ্জ উপজেলায়।বিভাগওয়ারী পুরাকীর্তি:

  • ঢাকা-১০৫
  • চট্টগ্রাম -৫০
  • সিলেট -১৩
  • খুলনা -৮১
  • বরিশাল -২০
  • রাজশাহী-১৩৫
  • রংপুর -৫০
  • বানৌঘা: রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলায় অবস্থিত।
  • নবগ্রাম: নওগাঁ জেলার ধামুরহাট উপজেলায় অবস্থিত।

প্রাচীন মসজিদ সমূহ

  • যাট গম্বুজ মসজিদ : বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ। ১৫শ শতাব্দীতে পীর খান জাহান আলী এটি নির্মাণ করেন। ষাট গম্বুজ মসজিদে ৮১টি গম্বুজ রয়েছে (সাত লাইনে ১১টি করে ৭৭টি এবং চার কোনায় ৪টি মোট ৮১টি।)। এটি জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্বসভ্যতার নিদর্শন হিসেবে (World Heritage) স্বীকৃত হয়েছে ১৯৮৩ সালে।
  • সাত গম্বুজ মসজিদ : সুবাদার শায়েস্তা খানের পুত্র উমিদ খাঁ সাত গম্বুজ মসজিদটি নির্মাণ করেন। ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত এই মসজিদ সপ্তদশ শতাব্দীতে (১৬৮০) নির্মিত হয়। শায়েস্তা খান চক মসজিদের নির্মাতা (১৬৭৫)। গম্বুজের সংখ্যা ৭টি।
  • নয় গম্বুজ মসজিদ : নয় গম্বুজ মসজিদ বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলায় অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।
  • বিনতি বিবির মসজিদ : বিনতি বিবির মসজিদ প্রাক-মুঘল আমলে নির্মিত ঢাকা শহরের প্রাচীনতম মসজিদ। নারিন্দা পুলের উত্তর দিকে অবস্থিত এই মসজিদটি ১৪৫৭ খ্রিস্টাব্দে সুলতান নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহের শাসনামলে মারহামাতের কন্যা মুসাম্মত বখত বিনত বিবি এটি নির্মাণ করেন।
  • মুসা খান মসজিদ : ঢাকা শহরের প্রাকমুঘল আমলের একটি মসজিদ। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের নিকটে কার্জন হলের পিছনে অবস্থিত। ঈসা খাঁর পুত্র মুসা খাঁ এটি নির্মাণ করেন।
  • দারাসবাড়ি মসজিদ : চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম সুপ্রাচীন মসজিদ। ধারণা করা হয়, ১৪৭৯ খ্রিস্টাব্দে শামসুদ্দিন আবুল মোজাফফর ইউসুফ শাহের আমলে এ মসজিদ নির্মিত হয়েছিল।
  • রাজবিবি মসজিদ : চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। ১৪৮০ খ্রিস্টাব্দে এই মসজিদটি নির্মিত হয়।
  • ছোট সোনা মসজিদ : চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানায় অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ। সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহের আমলে (১৪৯৩-১৫১৯ খ্রি) ওয়ালী মোহাম্মদ নামক এক ব্যক্তি মসজিদটি নির্মাণ করেন।
  • চামচিকা মসজিদ : চাপাইনবাবগঞ্জ জেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। ১৪৫০-১৫১৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এটি নির্মিত হয়।
  • বাঘা মসজিদ : রাজশাহী জেলায় অবস্থিত একটি বিখ্যাত মসজিদ। ১৫২৩ সালে সুলতান নুসরত শাহ এটি নির্মাণ করেন। ৫০ টাকার নোটে এই মসজিদের ছবি আছে।
  • আশরাফপুর মসজিদ : নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। সুলতান নুসরত শাহের রাজত্বকালে ১৫২৪ খ্রিস্টাব্দে দিলওয়ার খান এটি নির্মাণ করেন।
  • আওলাদ হোসেন লেনের মসজিদ : মুঘল আমলে নির্মিত ঢাকা শহরের প্রাচীনতম মসজিদ। সুবেদার ইসলাম খান এটি নির্মাণ করেন।
  • গোয়ালদিহির গায়েবী মসজিদ : সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহের আমলে মোল্লা হিজাবর খান ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দে এটি নির্মাণ করেন।
  • কুসুম্বা মসজিদ : নওগাঁ জেলার মান্দা থানার কুসুম্বা গ্রামের একটি প্রাচীন মসজিদ। শুর বংশের শাসক গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর শাহের আমলে সুলাইমান নামের এক ব্যক্তি ১৫৫৮-১৫৫৯ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি নির্মাণ করেন।
  • চকবাজার শাহী মসজিদ : ঢাকা শহরের চকবাজারে অবস্থিত একটি মোঘল আমলের মসজিদ। মুঘল সুবেদার শায়েস্তা খান ১৬৭৬ খ্রিস্টাব্দে এটি নির্মাণ করেন।
  • হাজী শাহবাজের মসজিদ : ঢাকার রমনা এলাকায় অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। মুঘল সুবেদার শাহজাদা আযমের শাসনামলে ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দে হাজী শাহবাজ কর্তৃক মসজিদটি নির্মিত হয়।
  • সাত গম্বুজ মসজিদ : সাতগম্বুজ ঢাকার জাফরাবাদ এলাকায় অবস্থিত। মসজিদে চারটি মিনার + তিনটি গম্বুজ = মোট সাত, এই কারণে মসজিদের নাম হয়েছে 'সাত গম্বুজ মসজিদ'। ১৬৮০ সালে মুঘল সুবেদার শায়েস্তা খাঁর আমলে তাঁর পুত্র উমিদ খাঁ মসজিদটি নির্মাণ করেন।
  • লালদীঘি শাহী মসজিদ : রংপুর জেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ।
  • বেগমবাজার মসজিদ : পুরনো ঢাকার বেগম বাজারে অবস্থিত একটি মসজিদ। ১৭০০-১৭০৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এটি নির্মিত হয়।
  • লালবাগ শাহী মসজিদ : ঢাকার লালবাগ কেল্লার সন্নিহিত স্থানে অবস্থিত মুঘল আমলের একটি মসজিদ। ১৭০৩ খ্রিস্টাব্দে ফখরুখশিয়রের পৃষ্ঠপোষকতায় মসজিদটি নির্মিত হয়।
  • খান মহম্মদ মির্ধার মসজিদ : পুরান ঢাকার আতশখানায় অবস্থিত মুঘল আমলের একটি প্রাচীন মসজিদ। ১৭০৬ খ্রিস্টাব্দে খান মহম্মদ মির্ধা এটি নির্মাণ করেন।
  • ওয়ালী খানের মসজিদ : চট্টগ্রাম জেলার চকবাজারে অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। মুঘল ফৌজদার ওয়ালী বেগ খান ১৭১৩ থেকে ১৭১৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মসজিদটি নির্মাণ করেন।
  • বাজরা শাহী মসজিদ : নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার বাজরা ইউনিয়নে দিল্লীর শাহী মসজিদের অনুকরণে নির্মিত বাজরা শাহী মসজিদ মুঘল সাম্রাজ্যের স্মৃতি বহন করে। মুঘল সম্রাট মুহম্মদ শাহের আমলে ১৭৩২ সালে জমিদার আমানউল্লাহ কর্তৃক নির্মিত হয়।
  • তারা মসজিদ : তারা মসজিদ পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় আবুল খয়রাত রোডে অবস্থিত। এটি নির্মিত হয় ১৮ শতকের শেষের দিকে। মীর্জা গোলাম পীর (অন্য নাম মীর্জা আহমদ জান) এটি নির্মাণ করেন। ১৯২৬ সালে আলী জান ব্যাপারি মসজিদটি সংস্কার করেন।
  • নয়াবাদ মসজিদ : নয়াবাদ মসজিদ বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলায় অবস্থিত। মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের আলমে ১৭৯৩ সালে এটি নির্মিত হয়।
  • হিন্দা কসবা শাহী জামে মসজিদ : জয়পুরহাট জেলায় একটি বিখ্যাত মসজিদ। পীর হযরত আবদুল গফুর চিশতীর (রহ) নির্দেশে ১৩৬৫ বঙ্গাব্দে মওলানা আবদুল খালেক চিশতী এটি নির্মাণ করেন।
  • আতিয়া জামে মসজিদ : টাঙ্গাইল জেলায় অবস্থিত একটি বিখ্যাত মসজিদ। ১০ টাকার নোটে এ মসজিদের ছবি আছে।
  • বায়তুল মোকাররম : ঢাকার গুলিস্তানে অবস্থিত বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ। ১৯৬০ সালে নির্মিত এই মসজিদটি বর্তমানে বিশ্বের দশম বৃহত্তম মসজিদ। মসজিদটির স্থপতি হলেন আবুল হোসেন মোহাম্মদ থারিয়ানী।
  • বায়তুল ফালাহ : চট্টগ্রামের বৃহত্তম মসজিদ।
  • বাবা আদমের মসজিদ : ঢাকা জেলায় রামপালে "বাবা আদমের মসজিদ" অবস্থিত। ১৪৩৪ খ্রিস্টাব্দে মালিক কাফুর শাহের রাজত্বকালে নির্মিত হয়।
  • প্রথম বৈদ্যুতিক স্বয়ংক্রিয় গম্বুজের মসজিদ : ময়মনসিংহ নগরীর চরখরিচা গ্রামে নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক স্বয়ংক্রিয় গম্বুজের মসজিদ। ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মনোরম, দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদের নাম রাখা হয় 'মদিনা মসজিদ'। ৩ মার্চ ২০১৭ প্রথম জুম্মার নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে শুভ উদ্বোধন করা হয় এ মসজিদটি। মসজিদের পাঁচটি গম্বুজ রয়েছে। চারটি স্থির এবং একটি বৈদ্যুতিক গম্বুজ। সুউচ্চ মিনার রয়েছে দুটি, যার উচ্চতা চারতলার উপর থেকে ১৬০ ফুট। মসজিদটির পুরো কাজ হয়েছে মারবেল পাথরে এবং কাঠ আনা হয়েছে মিয়ানমার থেকে। মসজিদটি নির্মান শুরু হয় ২০১১ সালে এবং এটি ৪ তলা বিশিষ্ট ১৯,৭০৬ কর্গফুট।

প্রাচীন মন্দির সমূহ

  • ঢাকেশ্বরী মন্দির : ঢাকার শহরের পলাশী ব্যারাক এলাকায় অবস্থিত একটি সুপ্রাচীন মন্দির। ধারণা করা হয় সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন দ্বাদশ শতাব্দীতে এটি নির্মাণ করেন। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পূর্ব-পশ্চিমে চারটি মন্দির রয়েছে যা অনেকটা বৌদ্ধ মঠের মত।
  • কান্তজীর মন্দির : কান্তাজীউ মন্দির বা কান্তাজির মন্দির বা কান্তনগর মন্দির দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার ঢেঁপা নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রাচীন মন্দির। এটি নবরত্ন মন্দির নামেও পরিচিত কারণ তিনতলা বিশিষ্ট এ মন্দিরে নয়টি চূড়া বা রত্ন ছিল। কান্তজী মন্দিরগাত্রের রিলিফ ভাস্কর্যগুলো রচিত হয়েছে পোড়ামাটির ফলকে। মহারাজা প্রাণনাথ রায় এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তাঁর পোষ্যপুত্র রামনাথ ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে এর নির্মাণ কাজ শেষ করেন।
  • সোনারং জোড়া মঠ : বাংলাদেশের অষ্টাদশ শতাব্দীর একটি প্রত্নতত্ব নিদর্শন। এটি মুন্সিগঞ্জ জেলার টুঙ্গিবাড়ী উপজেলায় অবস্থিত। রূপচন্দ্র নামক একজন হিন্দু ব্যক্তি এটি নির্মাণ করেন।
  • বেল আমলা বড় শিবালয় : বারো শিবালয় মন্দিরের অবস্থান জয়পুরহাটের বেল আমলা গ্রামে। সেন রাজা বল্লাল সেন এটি নির্মাণ করেন।
  • বড় শিব মন্দির : বড় শিব মন্দির পুঠিয়া রাজবাড়ির ৬টি মন্দিরের একটি। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। এর উচ্চতা ৩৫ মিটার। ভুবনময়ী দেবীর নামানুসারে একে ভুবনেশ্বর মন্দিরও বলা হয়।
  • কালভৈরব মন্দির : কালভৈরব মন্দির বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় অবস্থিত অন্যতম ঐতিহাসিক এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। মূলত এটি শ্রী শ্রী কালভৈরব মূর্তি। মূর্তিটির উচ্চতা ২৮ ফুট।
  • জগন্নাথ মন্দির : পাবনা
  • বিশ্বনাথ মন্দির : ময়মনসিংহ
  • গুরুদুয়ারা নানকশাহী : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে অবস্থিত।
  • রাঘুনাথ মন্দির : শেরপুর
  • ধামরাই জগন্নাথ রথ : ধামরাই, ঢাকা
  • রামু মন্দির : কক্সবাজার
  • পুঠিয়া মন্দির : রাজশাহী
  • রাজা কংস নারায়ণের মন্দির : তাহিরপুর, রাজশাহী
  • বড় কালিবাড়ি মন্দির : রাজশাহী
  • আদিনাথ মন্দির : মহেশখালী
  • কানকির মন্দির : নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলায় অবস্থিত।
  • রামনা কালী মন্দির : ঢাকা শহরের রমনা পার্ক এলাকায় অবস্থিত।

প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার

প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার
বৌদ্ধ বিহার অবস্থান জ্ঞাতব্য
সোমপুর বিহার পাহাড়পুর, নওগাঁ নির্মাতা: পাল রাজা ধর্মপাল (অষ্টম শতক)
শালবন বিহার ময়নামতি, কুমিল্লা নির্মাতা: দেবরাজা ভবদেব (অষ্টম শতক)
আনন্দ বিহার ময়নামতি, কুমিল্লা নির্মাতা: দেবরাজা আনন্দদেব (অষ্টম শতক)
মহামুণি বিহার রাউজান, চট্টগ্রাম
সীতাকোট বিহার নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর খ্রিস্টীয় পঞ্চম বা ষষ্ঠ শতকে নির্মিত হয়। সীতাকোট বিহার বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার।
রাজবন বৌদ্ধবিহার কাপ্তাই, রাঙামাটি
জগদ্দল বিহার ধামুইরহাট, নওগাঁ নির্মাতা: রাজা রামপাল
হলুদ বিহার নওগাঁ
ভাসু বা বসু বিহার মহাস্থানগড়, বগুড়া এটি একটি সংঘারামের ধ্বংসাবশেষ।
নালন্দা বিহার আচার্য ছিলেন - মহাস্থবীর শিলভদ্র

সোমপুর বিহার

শ্রী ধর্মপাল দেব নওগাঁ জেলার পাহাড়পুরে একটি বিহার বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। বিহারটির নাম ছিল সোমপুর বিহার। অষ্টম শতাব্দীতে তিনি এটি নির্মাণ করেন। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজের ফলে যত বৌদ্ধবিহার আবিষ্কৃত হয়েছে তার মধ্যে এটি আয়তনে বৃহত্তম । ১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন। ১৮০৭- ১৮১২ সালের মধ্যে কোন এক সময়ে বুকানন হ্যামিল্টন পাহাড়পুর পরিদর্শন করেন। এটি ছিল পাহাড়পুরের প্রথম প্রত্নতাত্বিক পরিদর্শন। সেই সূত্র ধরে ১৮৭৯ সালে কানিংহাম এই বিশালকীর্তি আবিষ্কার করেন। 'সত্য পীরের ভিটা' সোমপুর বিহারের একটি উল্লেখযোগ্য স্থান। ইউনেস্কো ঘোষিত বাংলাদেশের ৩টি ঐতিহ্যবাহী স্থানের এটি একটি। সোমপুর মহাবিহার ১৯৯৫ সালে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত হয়।

শালবন বিহার

শালবন বিহার বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার কোটবাড়ি উপজেলায় অবস্থিত। কুমিল্লা জেলার ময়নামতি ও লালমাই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত এই বিহারটি ৮ম শতাব্দীর শেষদিকে নির্মিত । ধারণা করা হয় যে দেবরাজ ভবদেব এই বিহার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিহার টির আশেপাশে এক সময় ঘন শাল বন ছিল বলে এর নাম করা হয়েছিল শালবন বিহার। অনেকের মতে এটি বাংলাদেশের প্রাচীনতম বৌদ্ধ বিহার যা মোটেও সঠিক ধারণা নয় । শালবন বিহার একটি বর্গাকার স্থাপত্য। বিহার টির চার দিকে প্রবেশদ্বার রয়েছে। বিহার টির মধ্যখানে একটি বড় মন্দির এবং তার চারপাশে অনেক ছোট ছোট কক্ষ রয়েছে। মনে করা হয় যে ভিক্ষুরা এই কক্ষগুলিতে বাস করতেন।

বাংলাদেশের গির্জা

বাংলাদেশে খ্রিস্টান ধর্মের আগমন ষোড়শ শতাব্দীতে। পর্তুগিজদের হাত ধরে এই ধর্মের প্রচার শুরু হয়। ব্রিটিশ শাসনামলে খ্রিস্টান ধর্মের প্রসার ঘটে এবং অনেক গির্জা নির্মাণ করা হয়। বাংলাদেশের গির্জাগুলির স্থাপত্য বৈচিত্র্যপূর্ণ। কিছু গির্জা ইউরোপীয় স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত, আবার কিছু গির্জা স্থানীয় স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত।

বাংলাদেশের গির্জা
নাম অবস্থান
১. আর্মেনিয়ান গির্জা আরমানিটোলা, ঢাকা
২. সেন্ট থমাস চার্চ বাহাদুর শাহ পার্ক, ঢাকা
৩. হলি রোজারিও চার্চ তেজগাঁও, ঢাকা
৪. সেন্ট মেরিস ক্যাথিড্রাল কাকরাইল, ঢাকা
৫. সেন্ট নিকোলাস চার্চ কালিগঞ্জ, গাজীপুর
৬. অক্সফোর্ড মিশন চার্চ বগুড়া সড়ক, বরিশাল
৭. আওয়ার লেডি অব দ্য হলি রোজারিও ক্যাথিড্রাল চার্চ পাথরঘাটা, চট্টগ্রাম

সমাধিক্ষেত্র : ২য় বিশ্বযুদ্ধে মিয়ানমারে (তৎকালীন বার্মা) সংঘটিত যুদ্ধে যে ৪৫ হাজার কমনওয়েলথ সৈন্য নিহত হন তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে মিয়ানমার, আসাম এবং বাংলাদেশে মোট ৯টি সমাধিক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে ২টি কমনওয়েলথ সমাধিক্ষেত্র রয়েছে। যার একটি কুমিল্লার ময়নামতিতে; অন্যটি চট্টগ্রামের অবস্থিত।

বাংলাদেশের প্রাচীন দীঘি

কৃত্রিমভাবে খনন করা জলাধারকে দীঘি বলে। বাংলাদেশের প্রাচীন দীঘিগুলির ইতিহাস প্রায় দুই হাজার বছরের পুরনো। দীঘিগুলি আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অমূল্য সম্পদ।

প্রাচীন দীঘি
নাম অবস্থান
রামসাগর দিনাজপুর
ধর্ম সাগর দীঘি কুমিল্লা
সাগরদীঘি টাঙ্গাইল
ইছামতি দীঘি টাঙ্গাইল
পানিহাটা দীঘি শেরপুর
বিজয় সিংহের দীঘি ফেনী
আনন্দবাজার দীঘি ময়নামতি, কুমিল্লা
ফয়েজ লেক চট্টগ্রাম
নবীনতর পূর্বতন