বাংলাদেশের জনসংখ্যা | বিসিএস প্রস্তুতি

একবিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীর সামনে যেসব সমস্যা সবচেয়ে প্রকট হয়ে দেখা দেবে সেগুলোর মধ্যে প্রধান হলো জনসংখ্যা সমস্যা। বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি ক্ষুদ্র, দরিদ্র অথচ জনবহুল দেশ। এখানে মাত্র ১,৪৮,৪৬০ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ১৭ কোটি লোকের বসবাস । ষষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। যা ২৭ জুলাই ২০২২ তারিখে ঘোষণা করা হয়েছিল । তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর সর্বশেষ ঘোষণা অনুসারে অর্থাৎ ২৮ নভেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। এ অবস্থায় বিশাল এই জনসংখ্যাকে এখন থেকেই অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করতে না পারলে এ দেশবাসীর আগামী দিনগুলো ক্রমাগত দুর্বিষহ হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কাজেই বাংলাদেশের এক নম্বর জাতীয় সমস্যা হচ্ছে জনসংখ্যা সমস্যা । জাতীয় জনসংখ্যা নীতি প্রণীত হয় ১৯৭৬ সালে ।

বাংলাদেশের জনসংখ্যা
বাংলাদেশের জনসংখ্যা

বিভিন্ন সমীক্ষায় বাংলাদেশের জনসংখ্যা

  • বিশ্ব জনসংখ্যা প্রতিবেদন-২০২১ : জনসংখ্যা ১৬.৬৩ কোটি , গড় আয়ু [ পুরুষ ৭১ বছর এবং মহিলা ৭৫ বছর ] , জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.১% ।
  • বিশ্ব জনসংখ্যা প্রতিবেদন-২০২২ : জনসংখ্যা ১৬.৭৯ কোটি , গড় আয়ু [ পুরুষ ৭২ বছর এবং মহিলা ৭৫ বছর ] , জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ০.৯% । বিশ্ব জনসংখ্যা প্রতিবেদন ২০২২ অনুসারে জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের ৮ম দেশ ।
  • বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা- ২০২১ : জনসংখ্যা ১৬.৮২ কোটি , গড় আয়ু ৭২.৮ বছর , জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৭% , জনসংখ্যার ঘনত্ব (প্রতি বর্গকিমি): ১,১৪০ জন। ; সাক্ষরতার হার (৭+): ৭৫.২%।
  • বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা- ২০২৩ : অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৩ অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা- ১৭.৯৮ কোটি ।
  • জনসংখ্যা ও জনতাত্ত্বিক সূচক ২০২০ : জনসংখ্যা ১৬.৮২ কোটি , গড় আয়ু ৭২.৮ বছর , জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩০% ।
  • পঞ্চম আদমশুমারি-১১ : জনসংখ্যা ১৪.৯৭ কোটি , গড় আয়ু -- বছর , জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৭% ।
  • ষষ্ঠ আদমশুমারি- ২২ : জনসংখ্যা ১৬.৯৮ কোটি , গড় আয়ু [ পুরুষ ৭০.৮ বছর এবং মহিলা ৭৪.২ বছর ] , জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.২২% ।
বিশ্ব জনসংখ্যা রিপোর্ট ২০২১ [জাতিসংঘ জনসংখ্যা বিভাগ (UNFPA)]
জনসংখ্যায় বাংলাদেশের অবস্থান
জনসংখ্যায় বিশ্বে ৮ম
জনসংখ্যার ঘনত্বে বিশ্বে ৭ম
জনসংখ্যায় এশিয়া মহাদেশে ৫ম
জনসংখ্যায় মুসলিম বিশ্বে ৪র্থ
জনসংখ্যায় সার্কভুক্ত দেশে ৩য় (ঘনত্ব: ১২৩৮.৪ জন)

আদমশুমারি (Census)

আদমশুমারি: একটি দেশের জনসংখ্যাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গণনা করার পদ্ধতিকে আদমশুমারি বলে। বর্তমানে আদমশুমারিকে বলা হয় জনশুমারি। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৬টি আদমশুমারি হয়েছে যথাঃ

  • প্রথমঃ ১৯৭৪
  • দ্বিতীয়ঃ ১৯৮১
  • তৃতীয়ঃ ১৯৯১
  • চতুর্থঃ ২০০১
  • পঞ্চমঃ ২০১১
  • ষষ্ঠঃ ২০২২ [ বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল শুমারি ৬ষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ ]
  • ভারতবর্ষে প্রথম আদমশুমারি হয় : ১৮৭২ সালে লর্ড মেয়োর শাসনামলে
  • সর্বশেষ আদমশুমারি হয় : ১৫ জুন থেকে ২১ জুন , ২০২২
  • পরবর্তী ৭ম আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হবে : ২০৩১ সালে
  • বাংলাদেশে জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুষ্ঠিত হয় : ১০ বছর পর পর
  • আদমশুমারি পরিচালনা করে : বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো
পঞ্চম আদমশুমারি - ২০১১
উপাদান তথ্য
শুমারির তারিখ ১৫-১৯ মার্চ, ২০১১
শুমারি রাত্রি ১৫ মার্চ ২০১১ রাত ১২ হতে ভোর ৬টা পর্যন্ত
গণনা পদ্ধতি Modified Defacto
মোট জনসংখ্যা ১৪ কোটি ৯৭ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৪ জন
পুরুষ ৪৭,৪৯,৮০,৩৮৬ জন (৫০.০৬%)
মহিলাঃ ৭,৪৭,৯১,৯৭৮ জন (৪৯.৯৪%)
পুরুষ-নারীর অনুপাত ১০০.৩: ১০০
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৭%
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ঋণাত্মক ৪টি জেলায়। যথা- খুলনা, বাগেরহাট, বরিশাল, ঝালকাঠি
জনসংখ্যার ঘনত্ব ১০১৫ জন (প্রতি বর্গকিলোমিটারে)
২৫২৮ জন (প্রতি বর্গমাইলে)
ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যা মুসলিম (৯০.৪%) , হিন্দু (৮.৫%), বৌদ্ধ (০.৬%), খ্রিস্টান (০.৩%), অন্যান্য (০.১%)
২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী বাংলাদেশে Household প্রতি জন্যসংখ্যা ৪.৪ জন
খানার সংখ্যা ৩.২১,৭৩,৬৩০ জন (অনুমিত)
খানা প্রতি গড় সদস্য ৪.৪ জন (অনুমিত)
প্রতিবন্ধী জনসংখ্যা ২০,১৬,৬১২ জন (মোট জনসংখ্যার ১.৪%)
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ সিলেট বিভাগে (২.২১%)
গাজীপুর জেলায় (৫.২১%)
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সর্বনিম্ন বরিশাল বিভাগে (০.১৮%)
বাগেরহাট জেলায় (-০.৪৭%)
সর্বাধিক জনবসতিপূর্ণ জেলা ঢাকা (৮২২৯ জন/বর্গ কিমি বা ২১৩১৩ জন/বর্গ মাইলে)
সবচেয়ে কম লোক বাস করে বান্দরবানে (৮৭ জন/বর্গ কিমি বা ২২৫ জন/বর্গ মাইলে)
৬ষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২
উপাদান তথ্য
শুমারির তারিখ ১৫- ২২ জুন, ২০২২ খ্রি.
স্লোগানঃ জনশুমারিতে তথ্য দিন, পরিকল্পিত উন্নয়নে অংশ নিন
গণনা পদ্ধতি Modified Defacto
মোট জনসংখ্যা ২৭ জুলাই ২০২২ তারিখে প্রকাশিত প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন (৪৯.৫%) , মহিলা ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন (৫০%) এবং তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী ১২ হাজার ৬২৯ জন । তবে ২৮ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন দেখানো হয়েছে ।
পুরুষ-নারীর অনুপাত ৯৯ : ১০০
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.২২%
জনসংখ্যার ঘনত্ব ১,১১৯ জন জন (প্রতি বর্গকিলোমিটারে)
২৫২৮ জন (প্রতি বর্গমাইলে)
ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৯১.০৪% মুসলমান, ৭.৯৫% হিন্দু, ০.৬১% বৌদ্ধ, ০.৩০% খ্রিষ্টান এবং ০.১২% অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।
২০২২ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী বাংলাদেশে Household প্রতি জন্যসংখ্যা ৪ জন
খানার সংখ্যা ৪ কোটি ১০ লাখ
খানা প্রতি গড় সদস্য গড় সদস্য ৪ জন
প্রতিবন্ধী জনসংখ্যা ২ কোটি ৩৬ লাখ ২ হাজার ৬০৪ জন (মোট জনসংখ্যার ১.৪৩%)
সাক্ষরতার হার ৭৪.৬৬ শতাংশ
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ঢাকা বিভাগ (১.৭৪ %)
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সর্বনিম্ন বরিশাল বিভাগ সর্বনিম্ন (০.৭৯ %)
সবচেয়ে বেশি জনবসতিপূর্ণ বিভাগ ঢাকা বিভাগ (২১৫৬ জন প্রতি বর্গ কিলোমিটারে)
সবচেয়ে কম জনবসতিপূর্ণ বিভাগ বরিশাল বিভাগ (৬৮৮ জন প্রতি বর্গ কিলোমিটারে)।
সর্বাধিক ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৩৯৩৫৩ জন)
সর্বনিম্ন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা রংপুর সিটি কর্পোরেশন (প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৩৪৪৪ জন)
সর্বোচ্চ জনসংখ্যা ঢাকা বিভাগে ৪ কোটি ৪২ লাখ ১৫ হাজার ১০৭ জন
সর্বনিম্ন জনসংখ্যা বরিশাল বিভাগে ৯১ লাখ ১০২ জন

জনসংখ্যা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য :

  • জাতিসংঘের তথ্যানুসারে বর্তমানে ঢাকা বিশ্বের ৯ম মেগাসিটি। সাধারণত যেসব মহানগর এলাকার জনসংখ্যা ১ কোটি বা তার অধিক সেসব মহানগরকে মেগাসিটি বলা হয় ।
  • বর্তমানে বিশ্বে মেগাসিটি- ২৮টি এবং মেটাসিটি- ৭টি (টোকিও, নয়াদিল্লী, সাংহাই, মেক্সিকোসিটি, সাওপাওলো, মুম্বাই, ওসাকা)। ২ কোটির বেশি জনসংখ্যাবিশিষ্ট মহানগরীকে মেটাসিটি বলা হয়।
  • বিশ্বের মেগাসিটির তালিকায় ঢাকা অন্তভূক্ত হয়- ১৯৮০ সালে।
  • জনসংখ্যায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান - অষ্টম।
  • জনসংখ্যায় মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশ - চতুর্থ।
  • বাংলাদেশ আদমশুমারি হয়েছে - ছয়টি ।
  • জনসংখ্যার ভিত্তিতে সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ - ইন্দোনেশিয়া।

বাংলাদেশের উপজাতি সংক্রান্ত বিষয়াদি

  • বাংলাদেশে বসবাসকারী উপজাতি জনসংখ্যা : ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী, বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ১৬ লক্ষ ৫০ হাজার ১৫৯ জন ; সমগ্র জনগোষ্ঠির প্রায় এক শতাংশের মতো (০.৯৯%) ।
  • বাংলাদেশে বসবাসকারী উপজাতির সংখ্যা : ৫০টি [ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন, ২০১০ - ২৩ মার্চ ২০১৯ প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী ] ; ৪৫টি [সূত্রঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ]
  • পার্বত্য চট্টগ্রামে বাস করে : মোট ১১টি উপজাতি। এরা হচ্ছেন মারমা, চাকমা, মুরং, ত্রিপুরা, লুসাই, খুমি, বোম, খেয়াং, চাক, পাংখো ও তংচংগ্যা।
  • বাংলাদেশের বৃহত্তম উপজাতি : চাকমা (প্রথম), সাঁওতাল (দ্বিতীয়)
  • পিতৃপ্রধান উপজাতি : মারমা, হাজংসহ অধিকাংশ উপজাতি।
  • মাতৃতান্ত্রিক উপজাতি : গারো, খাসিয়া
  • খাগড়াছড়ির আদিবাসী রাজা : বোমাং রাজা
  • ৫০ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী : ওরাওঁ, কোচ, কোল, কন্দ, কড়া, খারিয়া/খাড়িয়া, খারওয়ার/ খেড়োয়ার, খাসিয়া/খাসি, খিয়াং, খুমি, গারো, গঞ্জ, গড়াইত, গুর্খা, চাক, চাকমা, ডালু, তঞ্চঙ্গা, ত্রিপুরা, তেলী, তুরি, পাহাড়ী/ মালপাহাড়ী, পাংখোয়া/ পাংখো, পাত্র, বাগদী, বানাই, বড়াইক/ বাড়াইক, বেদিয়া, বম, বর্মণ, ভিল, ভূমিজ, ভুইমালী, মণিপুরী, মারমা, মুখ, ম্রো, মাহাতো/ কুর্মি মাহাতে/বেদিয়া মাহাতো, মালো/ ঘাসিমালো, মাহালী, মুসহর, রাখাইন, রাজোয়াড়, লোহার, লুসাই, শবর, সাঁওতাল, হুদি, হো, হাজং।
বাংলাদেশের প্রধান উপজাতিদের অঞ্চলভিত্তিক অবস্থান
উপজাতি বাংলাদেশে অবস্থান
চাকমা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার
ত্রিপুরা (টিপরা) খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটি
লুসাই খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটি
মগ (মারমা + রাখাইন) মারমা : বান্দরবানে চিম্বুক পাহাড়ের পাদদেশে
রাখাইন: কক্সবাজার ও পটুয়াখালী
বনজোগী (বম) রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান
তঞ্চঙ্গ্যা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার
পাংখোয়া বান্দরবান ও রাঙামাটি
মুরং (ম্রো) বান্দরবান
চক বান্দরবান
খুমি বান্দরবান
খিয়াং বান্দরবান
খাসিয়া সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী জৈয়ন্তিকা পাহাড়ে
মণিপুরী সিলেট, মৌলভীবাজার এবং হবিগঞ্জ জেলার আসাম-পাহাড় অঞ্চলে
মুণ্ডা সিলেট
হদি/ হাদুই নেত্রকোনার বারহাট্টা, বিরিশিরি, শ্রীবদি
কুকি রাঙামাটি
গারো ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা (বিরিশিরি) ও টাঙ্গাইল
হাজং ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা। এদের কিছু অংশ শেরপুর ও সিলেটে (সুনামগঞ্জ) বসবাস করে। [ সূত্র: বাংলাপেডিয়া]
সাঁওতাল রাজশাহী, রংপুর, বগুড়া, দিনাজপুর
রাজবংশী রংপুর
ওঁরাও দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহী ও বগুড়া
পাঙন মৌলভীবাজার
হালাম হবিগঞ্জ
বাওয়ালী ও মৌয়ালী বাওয়ালীরা সুন্দরবনের গোলপাতা এবং মৌয়ালীরা সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করে।
কোল বা মুন্ডা খুলনা জেলার কয়রা, ডুমুরিয়া ও সাতক্ষীরা জেলায় এরা বসবাস করে। এছাড়া ভারতের। ঝাড়খন্ড, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গে এদের বাস।

উপজাতিরা সবচেয়ে বেশি বাস করে পার্বত্য চট্টগ্রামে। পার্বত্য চট্টগ্রামে মোট ১৩টি উপজাতি বসবাস করে। পার্বত্য তিনটি জেলায় উপজাতিরা দেশের মোট উপজাতির ৫০%। বাংলাদেশে উপজাতি জনসংখ্যা প্রায় ২ মিলিয়ন বা ২০ লাখের মতো। আর সংখ্যাগরিষ্ঠ উপজাতি হলো চাকমা। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী চাকমা লোকসংখ্যা ৪,৪৪,৭৪৮ জন। দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ উপজাতি হলো মারমা। তাদের লোকসংখ্যা ২,০২,৯৭৪ জন। উল্লেখ্য , ২০২২ সালের 'জনশুমারিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের প্রকৃত সংখ্যা আসেনি ।

উপজাতীদের ধর্ম
ধর্ম উপজাতী
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী উপজাতিদের অধিকাংশ বৌদ্ধ ধর্মালম্বী (৪৩.৭%) । চাকমা, চাক, মারমা, খিয়াং, খুমি, তঞ্চঙ্গ্যা, রাখাইন।
সনাতন ধর্মাবলম্বী গারো, পাংখোয়া, নুনিয়া, পলিয়া, পাহান, ভূঁইমালী, মাহাতো, মুশহর, রবিদাস, রানা কর্মকার, লহরা, কুর্মি, কোচ, খাড়িয়া, নায়েক, পাত্র, বর্মণ, বীন, বোনাজ, শবর, হাজং, হালাম, ত্রিপুরা।
প্রকৃতি পূজারি মুণ্ডা, রাজবংশী
খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী বম, লুসাই, মাহালী, খাসিয়া
ইসলাম ধর্মাবলম্বী পাঙন
উপজাতিদের ভাষা
উপজাতি ভাষা
ত্রিপুরা ককবরক
সাঁওতাল সাঁওতালী
ওঁরাও কুরখ
গারো মান্দি/ আচিক/খুসিক
উপজাতিদের বর্ণমালা
চাকমা অহমিয়া
রাখাইন বর্নি/মনখেমর
  • নৃ-গোষ্ঠীর কথ্য ভাষা আছেঃ প্রায় সকল সব নৃগোষ্ঠীর।
  • সাঁওতাল নৃ-গোষ্ঠীর নিজস্ব কথ্য ভাষা আছে কিন্তু নিজস্ব বর্ণমালা নেই।
  • চাকমা ভাষায় লিখিত প্রথম উপন্যাসের নাম -- ফেবো (২০০৪)।
  • মোট উপজাতীয় ভাষা - ৩২টি।

বাংলাদেশে ব্যবহৃত ৪১টি নৃ-তাত্ত্বিক ভাষা : বাংলা, চাটগাইয়া, মারমা, সিলেটি, বিহারি, গারো, মৈতি, রাখাইন, সাঁওতালি, চাকমা, চীন-বম, হাজং, ম্রো, রংপুরী, সাদরি-ওরাও, উশুই, বাংলা সাংকেতিক ভাষা, বিষ্ণুপুরী, চাক, চীন-আসসা, চীনখুমি, কোচ, কোদা, ককবরক, কোল, মাহালি, মেগাম, মুণ্ডারী, নার, তঞ্চৈঙ্গা, টিপরা, ওয়ার-জৈন্তিয়া, আটং, খাসি, কুরুক্স, মিজো, রোহিঙ্গা, লিংগাম, পাংখায়ো, রিয়াং এবং সাউরিয়া পাহাড়িয়া।

উপজাতীয়দের উৎসব : উপজাতীয়দের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে সামগ্রিকভাবে বৈসাবি বলে। (বৈসুক, সাংগ্রাই এবং বিঝুর সংক্ষিপ্ত রূপ)। পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার প্রধান ৩টি আদিবাসী সমাজের বর্ষবরণ উৎসবকে একত্রে বলা হয় 'বৈসাবি উৎসব'। ত্রিপুরা উপজাতিদের কাছে এটি বৈসুক, মারমাদের কাছে সাংগ্রাই এবং চাকমাদের কাছে এটি বিজু নামে পরিচিত। বিজু উৎসবটি পালিত হয় তিনদিন অর্থাৎ চৈত্রমাসের শেষ দুই দিন (ফুলবিজু ও মূলবিজয়) এবং বৈশাখ মাসের প্রথমদিন নুওবসর (নতুন বছর)।

উপজাতীয়দের উৎসব
উপজাতি উৎসব
ত্রিপুরা বৈসুক (বর্ষবরণ)
মারমা সাংগ্রাই (বর্ষবরণ)
চাকমা বিঝু (বর্ষবরণ)
ফাল্গুনী পূর্ণিমা (ধর্মীয়)
গারো ওয়ানগালা (ধর্মীয়)
রাখাইন সান্দ্রে
মুরং ছিয়াছত
খিয়াং সাংলান
সাঁওতাল সোহরাই, বাহা, পাসকা পরব

প্রধান উপজাতির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা

চাকমা : চাকমা পুরুষরা ধুতি এবং মহিলারা পিনন পরিধান করে। চাকমারা গ্রামকে বলে আছাম। চাকমাদের গ্রামের প্রধান হলেন কারবারি। কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত হয় মৌজা, মৌজার প্রধান কারবারি।

সাঁওতাল : ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সাঁওতাল বিদ্রোহ এবং নাচোলের কৃষক বিদ্রোহ ইতিহাসে বিশেষভাবে স্মরণীয়। সাঁওতালদের আদি দেবতা সিংবোঙ্গা। এদের প্রধানকে বলে মাজি।

গারো : এদের ভাষার নাম মান্দি/গারো ভাষা। পাহাড়ি গারোরা অচ্ছিক এবং সমতলের গারোরা লামদানি নামে পরিচিত। প্রধান দেবতা তারারা, রাবুগা। এছাড়া আছে সালভার, ছোছম, মেন, নবাং ইত্যাদি। গারোদের ধর্মের নাম সংসারেক। দু চালা বাড়িগুলোকে বলে নকমান্দি।

খাসিয়া : মেয়েদের পোশাকের নাম কাজিম পিন। এরা প্রধানত পান চাষী । বাড়িতে কোন অতিথি আসলে খাসিয়ারা পান, সুপারি ও চা দিয়ে তাদেরকে আপ্যায়ন করে।

মনিপুরী : রাধা-কৃষ্ণের উদ্দেশ্যে নাচ করা মনিপুরিদের সবচেয়ে প্রিয়। একে 'গোপী নাচ ' বলা হয়। বসন্তকালে তারা জাঁকজমকের সাথে হোলি উৎসব পালন করে। এরা ফাল্গুন মাস থেকে বছর গণনা শুরু করে। নববর্ষকে বরণ করতে তারা পালন করে ফাগুয়া

  • জলকেলি উৎসব করে - রাখাইনরা।
  • উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের সংস্কৃতির কথা উল্লেখ আছে সংবিধানের ২৩ (ক) অনুচ্ছেদে।
  • বাংলাদেশের যে বিভাগে কোন উপজাতি নেই - খুলনা।
  • একমাত্র উপজাতি হিসেবে যাদের মধ্যে বিধবা বিবাহ বহু বিবাহ এবং বিবাহ বিচ্ছেদ প্রচলিত আছে - হাজংদের মধ্যে।
উপজাতীয়দের জন্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান - ৮টি
প্রতিষ্ঠান অবস্থান
১. ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক একাডেমি
[ বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম উপজাতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (প্রতিষ্ঠাকাল-১৬ আগস্ট, ১৯৭৭) ]
বিরিশিরি, দুর্গাপুর উপজেলা, নেত্রকোনা
২. ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট রাঙামাটি
৩. ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট বান্দরবান
৪. ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট খাগড়াছড়ি
৫. কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কক্সবাজার
৬. রাখাইন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র রামু, কক্সবাজার
৭. রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক একাডেমি রাজশাহী
৮. মণিপুরী ললিতকলা একাডেমি কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জাদুঘর: রাঙামাটি শহরের ভেদভেদি নামক স্থানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটের অভ্যন্তরে 'ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠী জাদুঘর'টি অবস্থিত। এটি ১৯৯৯ সালে স্থাপিত হয়। এই জাদুঘরে আদিবাসীদের লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় সংস্কৃতির নিদর্শন ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিচ্ছেদ, অলঙ্কারসহ ব্যবহৃত দুর্লভ সামগ্রী সংরক্ষণ করা হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়: পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ৩টি জেলা (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন) নিয়ে গঠিত। পাহাড়িদের দাবি-দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে 'পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি' গঠিত হয় যা সত্তরের দশকে সরকারের সাথে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে লিপ্ত হয়। বিরাজমান এ সংকট নিরসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের সাথে পাহাড়ি জনগণের পক্ষে জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, যা 'পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি ' নামে পরিচিত। ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর সম্পাদিত এ চুক্তি মোতাবেক ১৯৯৮ সালের ১৫ জুলাই পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠিত হয়।

নবীনতর পূর্বতন