বাংলাদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব

বাংলাদেশের ইতিহাসে অসংখ্য বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের অবদান রয়েছে যারা তাদের জ্ঞান, কর্ম, এবং সৃজনশীলতার মাধ্যমে দেশ ও জাতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তেমনি কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হল ।

সমাজ সেবক ও সংস্কারক

  • হাজী মুহম্মদ মুহসীন : তিনি (৩ জানুয়ারি ১৭৩২ – ২৯ নভেম্বর ১৮১২) ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলার একজন প্রখ্যাত মুসলিম জনহিতৈষী, ধার্মিক, উদার ও জ্ঞানী ব্যক্তি, যিনি তাঁর নিজের দানশীলতার মহৎ গুণাবলীর জন্য দানবীর খেতাব পেয়েছিলেন। ১৭৩২ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি শহরে এক সম্ভ্রান্ত ও ঐশ্বর্যশালী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতৃসম্পত্তি ও পরলোকগত বোন মুন্নুজানের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়ে তিনি বিশাল সম্পত্তির অধিকারী হন। বিশাল সম্পত্তির অধিকারী হয়েও তিনি অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন। গরীব মেধাবী ছাত্রদের জন্য তিনি 'মুহসীন ট্রাস্ট' গঠন করেন। দানশীলতার জন্য তিনি 'দানবীর' বা 'বাংলার হাতেম তাই' নামে পরিচিত। এই দানশীল ও পরোপকারী ব্যক্তি ১৮১২ সালে পরলোকগমন করেন।
  • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর : ১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৩৯ সালে সংস্কৃত কলেজ থেকে তিনি 'বিদ্যাসাগর' উপাধি লাভ করেন। তিনি ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা নামে স্বাক্ষর করতেন। হিন্দু সমাজে বিধবাবিবাহ প্রচলনের চেষ্টা করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় ২৬ জুলাই, ১৮৫৬ বিধবা বিবাহ আইন পাস হয়। ১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই বিদ্যাসাগরের মৃত্যু হয়। বিদ্যাসাগরের পুত্র নারায়ণচন্দ্র ১৮৭০ সালে বিধবা বিবাহ করেন। তিনি বহুবিবাহ বিরোধী ছিলেন। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের হেডপন্ডিত (১৮৪১) ও সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ (১৮৫১) সালে।
  • রাজা রামমোহন রায় : রাজা রামমোহন রায়কে বলা হয় 'ভারতীয় রেঁনেসাস বা নবজাগরণের অগ্রদূত'। ১৭৭২ সালে হুগলী জেলার এক তালুকদার পরিবারে রামমোহন রায়ের জন্ম হয়। ১৮২৮ সালে রামমোহন রায় ' ব্রাহ্মসভা ' প্রতিষ্ঠা করেন। একেশ্বরবাদ প্রচারের জন্য 'ইউনিটেরিয়া' ধর্মসভা গঠন করেন ১৮২১ সালে। বেদান্তবাদ শিক্ষাদানের জন্য বেদান্ত কলেজ (১৮২৫) প্রতিষ্ঠা করেন। সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধকরণে ও বিধবা বিবাহ প্রচলনের স্বপক্ষে তিনি জোর প্রচারণা চালান। ১৮২৯ সালের ৮ ডিসেম্বর রাজা রামমোহনের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির লর্ড বেন্টিংক এ প্রথা বাতিল করেন। এ সম্পর্কে তাঁর বই 'প্রবর্তক ও নিবর্তকের সম্বাদ'। তৎকালীন নামমাত্র দিল্লিশ্বর মোঘল বাদশা দ্বিতীয় আকবর তাঁর দাবি-দাওয়া ব্রিটিশ সরকারের কাছে পেশ করার জন্য ১৮৩০ সালে রামমোহন রায়কে বিলেতে পাঠান। এ উপলক্ষে সম্রাট তাকে 'রাজা' উপাধি দেন। রাজা রামমোহন রায় ছিলেন পাশ্চাত্য শিক্ষার পক্ষপাতী। এ উদ্দেশ্যে তিনি কলকাতায় এ্যাংলো হিন্দু নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৩৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের ব্রিস্টল শহরে রাজা রামমোহন রায় ইহলোক ত্যাগ করেন।
  • স্যার সৈয়দ আহমদ খান : ভারতের মুসলিম জাগরণের প্রথম অগ্রদূত স্যার সৈয়দ আহমদ। আলীগড় আন্দোলনের জনক সৈয়দ আহমেদ খান ১৮১৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মুসলমানদের মধ্যে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই প্রগতিমূলক ভাবধারা গড়ে তোলার জন্য সৈয়দ আহমেদ যে আন্দোলনের সূত্রপাত করেন, তা আলীগড় আন্দোলন নামে পরিচিত। তিনি মুসলমানদের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও পাশ্চাত্য ভাবধারা প্রচারের উদ্দেশ্যে ১৮৫৭ সালে আলীগড়ে প্রথমে 'মোহামেডান অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল স্কুল' প্রতিষ্ঠা করেন। এ স্কুল ধীরে ধীরে কলেজ (১৮৭৫ সালে) এবং কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৯২০) উন্নীত হয়। তিনি ১৮৮৬ সালে 'মোহামেডান এডুকেশনাল কনফারেন্স' নামে একটি সংস্থা স্থাপন করেন। এ সংস্থার কাজ ছিল আলীগড় আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রচার করা।
  • হাজী শরীয়ত উল্লাহ : হাজী শরীয়ত উল্লাহ - ফরায়েজী আন্দোলনের উদ্যোক্তা। এই আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল ফরিদপুর। তাঁর নাম অনুসারে শরীয়তপুর জেলার নামকরণ। তার জন্মস্থান মাদারীপুর (১৭৮১)। মুসলমান সমাজের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় অবনতির সংস্কার হিসেবে ফরায়েজী আন্দোলন শুরু করেন।
  • নওয়াব আব্দুল লতিফ : ১৮২৮ সালে ফরিদপুর জেলায় নওয়াব আব্দুল লতিফ জন্মগ্রহণ করেন। বাংলায় মুসলমানদের মধ্যে আধুনিক শিক্ষা প্রচলনের জন্য ১৮৬৩ সালে নওয়াব আব্দুল লতিফ কলকাতায় মুসলিম সাহিত্য সমাজ (মোহামেডান লিটারারি সোসাইটি) প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলমান সমাজের প্রতি তাঁর অবদানের জন্য সরকার তাঁকে 'খান বাহাদুর' উপাধি প্রদান করে। বাংলার এই মনীষী ১৮৯৩ সালের ১০ জুলাই ইন্তেকাল করেন। নীল কমিশন গঠনে তিনি প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখেন। 'নিখিল ভারত প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা' আয়োজনের বিষয়বস্তু ছিল - মুসলমান ছাত্রদের ইংরেজি শিক্ষার উপকারিতা।
  • নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ : খাজা সলিমুল্লাহ বা নবাব স্যার সলিমুল্লাহ ( ১৯০১ থেকে ১৯১৫ পর্যন্ত ) ঢাকার চতুর্থ নবাব ছিলেন। তিনি ৭ জুন ১৮৭১ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং পরলোকগমন করেন ১৬ জানুয়ারি ১৯১৫ । তার পিতা নবাব খাজা আহসানউল্লাহ ও পিতামহ নবাব খাজা আব্দুল গনি। তিনি নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি জমি দান করেন। তার দানে গড়ে উঠেছে সলিমুল্লাহ মেডিকেল ও মুসলিম এতিমখানা ইত্যাদি।
  • সৈয়দ আমীর আলী : সৈয়দ আমীর আলী ১৮৪৯ সালের ৮ এপ্রিল হুগলি জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। মুসলমানদের বিভিন্ন অধিকার আদায় এবং সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি ১৮৭৭ সালে কলকাতায় সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন (Central National Mohamedan Association) নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করেন। সৈয়দ আমীর আলী ভারতীয় মুসলমানদের রাজনৈতিক আন্দোলনের পথপ্রদর্শক ছিলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সমিতি ছিল মুসলমানদের প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। তিনি ১৯০৯ সালে লন্ডনে প্রিভি কাউন্সিলের সদস্যপদ লাভ করেন। সৈয়দ আমীর আলী ভারতীয়দের মধ্যে সর্বপ্রথম এ সম্মানের অধিকারী হন। তিনি একজন সুসাহিত্যিক ও যশস্বী লেখক ছিলেন। তিনি 'The spirit of Islam, A Short history of Saracens, Life and Teaching of the Prophet' প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করেন। এই মহান ব্যক্তি ১৯২৮ সালে লন্ডনে মারা যান। তিনি ব্রিটিশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি স্থাপনের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন। তিনি ১৮৮৭ সালে ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে CIE উপাধি পান।
  • রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন : তিনি মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত । ১৮৮০ সালে ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলায় পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের নারী শিক্ষা প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯১১ সালে কলকাতায় 'সাখাওয়াৎ মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল' প্রতিষ্ঠা করেন। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন 'আঞ্জুমান খাওয়াতিনে ইসলাম' (১৯১৬)। তার নামানুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রোকেয়া ছাত্রীনিবাস নামকরণ করা হয়। ১৯৩২ সালে ৯ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর রচিত উপন্যাস পদ্মরাগ । তাঁর ইংরেজি উপন্যাস Sultana's Dream । তাঁর রচিত গদ্যগ্রন্থ মতিচুর ও অবরোধবাসিনী ।

নোবেল জয়ী বাঙালি

  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার জোড়াসাঁকোর এক ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিবান ব্রাহ্ম পিরালী ব্রাহ্মণ পরিবারে ২৫ বৈশাখ, ১২৬৮ বঙ্গাব্দ (৭মে, ১৮৬১ খ্রিঃ) সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ বা ৭ আগস্ট, ১৯৪১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মাতা সারদা দেবী। জোড়াসাকোর ঠাকুর পরিবারের আসল পদবী ছিল 'কুশারী'। পারিবারিকভাবে তাঁরা জমিদার ছিলেন।
    ১৯০১ সালে বোলপুরের শান্তি নিকেতন 'ব্রহ্মচর্যাশ্রম' নামক বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠা করেন যা ১৯২১ সালে 'বিশ্বভারতী' বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।
    ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। হিন্দু- মুসলমানের মিলনের জন্য তিনি রাখি উৎসবের প্রচলন করেন।
    ১৯১৩ সালের অক্টোবর মাসে 'গীতাঞ্জলি' কাব্যের জন্য নোবেল পুরস্কার পান। তিনি এশিয়া মহাদেশে প্রথম নোবেল বিজয়ী। তিনি সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী প্রথম ভারতীয়।
    ১৯১৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।
    ১৯১৫ সালে তৎকালীন ভারত সরকার তাকে 'স্যার' বা 'নাইট' উপাধি প্রদান করে। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে 'নাইট' উপাধি ত্যাগ করেন।
    ১৯৩০ সালে জার্মানীতে আইনস্টাইনের সাথে সাক্ষাত হয়। সাক্ষাতে তিনি দর্শন, মানুষ ও বিজ্ঞান নিয়ে আলাপচারিতা করেছিলেন।
    ১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।
    ১৯৪০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।
    ২০০৪ সালের ২৪ মার্চ 'শান্তি নিকেতন' হতে নোবেল পুরস্কার চুরি যায়।
  • অমর্ত্য সেন : অমর্ত্য সেন ১৯৩৩ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলায়। তিনি দুর্ভিক্ষ, মানব উন্নয়ন তত্ত্ব, জনকল্যাণ অর্থনীতি ও গণদারিদ্রের অন্তর্নিহিত কার্যকারণ বিষয়ে গবেষণা এবং উদার রাজনৈতিক অবদান রাখার জন্য ১৯৯৮ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। অমর্ত্য সেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক। তিনি বর্তমানে ভারতের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য।
    নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির দিক থেকে তিনি দ্বিতীয় বাঙালি, উপমহাদেশে ষষ্ঠ এবং ২২তম এশীয়। তিনি অর্থনীতিতে নোবেল জয়ী প্রথম এশীয়। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ Poverty and Famine', 'The Idea of Justice', 'Identity and Violence: The illusion of destiny', 'The Country of First boys'
  • ড. মুহাম্মদ ইউনুস : ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশী নোবেল বিজয়ী ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদ। তিনি ১৯৪০ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিষয়ের একজন শিক্ষক। তিনি ক্ষুদ্রঋণ (Microcredit) এবং 'সামাজিক ব্যবসা' ধারণার প্রবর্তক। অধ্যাপক ইউনুস গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। মুহাম্মদ ইউনূস ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির দিক থেকে তিনি প্রথম বাংলাদেশি, তৃতীয় বাঙালি, উপমহাদেশের সপ্তম, ১১তম মুসলিম এবং ৩৩তম এশীয়। শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্তির দিক থেকে তিনি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয়। তিনি ১৯৭৮ সালে প্রেসিডেন্ট পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে ম্যাগসেসে পুরস্কার, ১৯৮৬ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার এবং ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক 'মেডেল অব ফ্রিডম' লাভ করেন। তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ 'দারিদ্র্যহীন বিশ্বের অভিমুখে' এবং '(Banker to the Poor)। তিনি বিশ্ব খাদ্য পুরষ্কার পেয়েছিলেন।
    তার সাম্প্রতিক বই (ডক্টর ইউনুস):
    • A world of three zeros 2017,
    • Creating a world unlimited potential (2015),
    • Without poverty (2008),
    • Super happiness (2015)
    তাঁর উল্লেখযোগ্য অন্যান্য পুরস্কার-
    * আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার : ১৯৮৯ (সুইজারল্যান্ড)
    * কাজী মাহবুব উল্যাহ পুরস্কার : ১৯৯২ (বাংলাদেশ)
    * রাজা বৌদওয়া আন্তর্জাতিক উন্নয়ন পুরস্কার : ১৯৯৩ (বেলজিয়াম)
    * তুন আবদুল রাজাক পুরস্কার : ১৯৯৪ (মালয়েশিয়া)
    * স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার : ১৯৯৪ (বাংলাদেশ)
    * বিশ্ব বসতি পুরস্কার : ১৯৯৭ (যুক্তরাজ্য)
    * গান্ধী শান্তি পুরস্কার : ২০০০ (ভারত)
    * পিটার্সবার্গ পুরস্কার : ২০০৪ (যুক্তরাষ্ট্র)
    * এম সি সি আই ঢাকা এর শতবর্ষ পদক পুরস্কার : ২০১৪ (বাংলাদেশ)
    * ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিন এর "বেস্ট কর্পোরেট সোস্যাল রেসপন্সেবল ব্যাংক পুরষ্কার: ২০১৪ (যুক্তরাজ্য)
    * আই সি এম এ বি'র বেস্ট কর্পোরেট অ্যাওয়ার্ড পুরস্কার: ২০১৪ (বাংলাদেশ)
    * Global Women's Leadership Award: ২০১৯

রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ

  • আবুল কাশেম ফজলুল হক : এ কে ফজলুল হক ১৮৭৩ সালের ২৬ অক্টোবর বরিশাল জেলার রাজাপুর থানার সাতুরিয়া গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কাজী মুহম্মদ ওয়াজেদ এবং সাইদুন্নেসা খাতুনের একমাত্র পুত্র ছিলেন। রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ মানুষের নিকট তিনি শেরে-এ-বাংলা (বাংলার বাঘ) নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি রাজনৈতিক অনেক পদে অধিস্তান করেছেন তাঁর মধ্যে কলকাতার মেয়র (১৯৩৫), অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী (১৯৩৭-৪৩), পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী (১৯৫৪), পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (১৯৫৫), পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর (১৯৫৬-৫৮) অন্যতম। অবিভক্ত বাংলার ১ম শিক্ষামন্ত্রি (১৯২৪)। কৃষকপ্রজা পার্টির সভাপতি (১৯৩৫)। তিনি ঋণ সালিশি আইন, প্রজাস্বত্ব আইন ও মহাজনি প্রথা বাতিল আইনের প্রবর্তক। ১৯৪০ সালের ২০ মার্চ লাহোর প্রস্তাব করেন। তাঁর রচিত বই বেঙ্গল টুডে (১৯৪৪)। তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা - বালক, ভারত সুহৃদ । তিনি নজরুল সম্পাদিত নবযুগের অর্থদাতা।
  • হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী : হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বিখ্যাত বাঙ্গালি রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী ছিলেন। ১৮৯২ সালে পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজনৈতিক অনেক পদে অধিজ্ঞান করেছেন তাঁর মধ্যে কলকাতার ডেপুটি মেয়র (১৯২৩), অবিভক্ত বাংলার শেষ মুখ্যমন্ত্রী (১৯৪৬-৪৭), নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি (১৯৪৯), পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী (১৯৫৬-৫৭) অন্যতম ।১৯৬৩ সালে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে মুত্যুবরণ করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু ছিলেন।
  • মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী : আবদুল হামিদ খান ভাসানী একজন বিখ্যাত বাঙালি রাজনীতিবিদ। তিনি ১৮৮০ সালে সিরাজগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। দেশের মানুষের কাছে তিনি 'মজলুম জননেতা' নামে পরিচিত। তিনি পূর্বপাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি যুক্তফ্রন্ট গঠনের অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন। ১৯৫৭ সালের কাগমারী সম্মেলনে বক্তৃতা করেন। এ সম্মেলনে তিনি বলেন, পূর্ববাংলা পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা শোষিত হতে থাকলে পূর্ববঙ্গবাসী তাদের সালামু ওয়ালাইকুম জানাতে বাধ্য হবে। তিনি ১৯৫৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করেন। তিনি রাজনৈতিক জীবনের বেশিরভাগ সময় বামপন্থী মাওধারার রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। এজন্য তাঁর অনুসারীদের অনেকে তাঁকে 'লাল মওলানা' নামেও ডাকতেন। ১৯৭৬ সালের ১৬ মে ফারাক্কা বাধ নির্মাণের প্রতিবাদে ঐতিহাসিক লংমার্চের নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৬ সালে তিনি পরলোকগমন করেন। টাঙ্গাইলের সন্তোষে তাঁকে দাফন করা হয়। লাইন প্রথা বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলেন। তাঁর সভাপতিত্বে ৩১ জানুয়ারি ১৯৫২ ঢাকা জেলা বার লাইব্রেরীতে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় ।
  • এম. এ. জি. ওসমানী : ১৯১৮ সালের সুনামগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪০ সালের রাজকীয় কমিশন লাভ করেন (দেরাদুন সামরিক একাডেমি হতে) । ইপিআরএস (East Pakistan rifles) এর অতিরিক্ত কমান্ড্যান্ট এর দায়িত্ব পালনকালে বেঙ্গল রেজিমেন্ট গড়েন। তাঁকে বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর জনক বলা হয়। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি। সশস্ত্র ও মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার হন। ১৯৮৪ সালে এই অকৃতদার মৃত্যুবরণ করেন।
    [ বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হিসাবে মুক্তিযুদ্ধেও তথা সকল আর্মড ফোর্সের সুপ্রীম কমান্ডার/ সর্বাধিনায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। এম. এ. জি. ওসমানী ছিলেন কমান্ডার- ইন-চীফ।]
  • শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান : ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলার বাগবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র হতে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রিগেড ফোর্স-জেড এর প্রধান ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য 'বীর উত্তম' পদকে ভূষিত হন। তিনি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ধারনার প্রবর্তক এবং সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি ১৯৭৮ সালে 'বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল' (বি.এন.পি) গঠন করেন। ১৯৮১ সালের ৩০মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সেনাবাহিনীর কতিপয় সদস্যের হাতে নিহত হন। ঢাকার শেরে-বাংলা নগরে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
  • হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ : ↓
    জন্ম-মৃত্যু: ২০ মার্চ ১৯৩০-১৪ জুলাই ২০১৯
    পারিবারিক ডাকনাম: পেয়ারা
    জন্মস্থান: ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম (নানাবাড়িতে)
    পৈতৃক নিবাস: দিনহাটা, কুচবিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
    স্ত্রী: ২ জন রওশন এরশাদ (বিবাহ ১৯৫৬) এবং বিদিশা এরশাদ (বিবাহ ২০০০ ও বিচ্ছেদ ২০০৫)
    ১৯৮২ রক্তপাতহীন এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন।
    ১৯৮৬ সালে রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি গঠন করেন।
    আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ : 'আমার কর্ম আমার জীবন'।

জাতীয় চার নেতা

(৩ নভেম্বর ১৯৭৫ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের হত্যা করা হয়)

  • তাজউদ্দিন আহমেদ : ↓
  • জন্মস্থান: গাজীপুরের কাপাসিয়া
  • মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
  • ছাত্রলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।
  • ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন।
  • ১৯৭২ সালের ১২ই জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করে অর্থ, পরিকল্পনা ও রাজস্ব মন্ত্রী হন।
  • ১৯৭৪ সালে মন্ত্রিসভা থেকে সরে দাঁড়ান।
  • সৈয়দ নজরুল ইসলাম : ↓
  • জন্মস্থান: ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহকুমা
  • ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলন।
  • ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগ ময়মনসিংহ জেলা সভাপতি।
  • মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন।
  • ১৯৭২ এর ১২ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার শিল্পমন্ত্রী হন।
  • ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি উপরাষ্ট্রপতি হন।
  • বাকশালের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি ছিলেন।
  • এ এইচ এম কামারুজ্জামান : ↓
  • জন্মস্থান: রাজশাহী
  • মুজিবনগর সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী ছিলেন।
  • ১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন ।
  • আওয়ামী লীগের সভাপতি হন।
  • মোঃ মনসুর আলী : ↓
  • জন্ম: সিরাজগঞ্জ
  • বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
  • তিনি ‘ক্যাপ্টেন মনসুর’ নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন।
  • ১৯৪৮ সালে তিনি যশোর ক্যান্টনমেন্টে প্রশিক্ষণ নেন এবং পিএলজি-এর ক্যাপ্টেন পদে অধিষ্ঠিত হন ৷ এ সময় থেকেই তিনি ক্যাপ্টেন মনসুর নামে পরিচিত হতে থাকেন ৷
  • তার পুত্র মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা ।
  • মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী। স্বাধীনতার পর অর্থমন্ত্রী ছিলেন - তাজউদ্দীন আহমদ।

বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ও তাদের আবিষ্কার

  • জগদীশচন্দ্র বসু [Jagadish Chandra Bose] : জগদীশ চন্দ্র বসু একজন সফল বাঙালি বিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আবিষ্কারের মধ্যে উদ্ভিদের বৃদ্ধি পরিমাপক যন্ত্র ক্রেসকোগ্রাফ, উদ্ভিদের দেহের উত্তেজনার বেগ নিরূপক সমতল তরুলিপি যন্ত্র রিজোনাষ্ট রেকোর্ডার অন্যতম। জগদীশ চন্দ্র ছিলেন রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ট বন্ধু। ছোটদের জন্য তিনি 'অব্যক্ত' নামক বিজ্ঞান বিষয়ক একটি গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি গাছের প্রাণ এবং মার্কনির আগেই রেডিও আবিষ্কার করেছিলেন বলে বাঙালি একটি মহলে ধারণা প্রচলিত আছে। প্রথম ধারণা একবারেই ভুল। গাছের প্রাণ নিয়ে পণ্ডিতেরা প্রাচীনকাল থেকেই একবারেই নিঃসংশয় ছিলেন। জগদীশচন্দ্র কেবল প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেছিলেন যে, উদ্ভিদ ও প্রাণী জীবনের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য আছে। দ্বিতীয় ধারণাটিও সর্বাংশে সঠিক নয়। মার্কনি আধুনিক ছোট বা শর্ট তরঙ্গ মাপের বেতারতরঙ্গ ব্যবহার করে দূরে বেতার তরঙ্গ পাঠাতে সফল হয়েছিলেন যার ফলশ্রুতি হল রেডিও। কিন্তু জগদীশচন্দ্র কাজ করেছিলেন অতি ক্ষুদ্র বা মাইক্রোওয়েভ বেতার তরঙ্গ নিয়ে যার প্রয়োগ ঘটেছে আধুনিক টেলিভিশন এবং রাডার যোগাযোগের ক্ষেত্রে। ১৯৩৭ সালে ভারতের ঝাড়খণ্ডের গিরিডিতে তিনি মৃত্যবরণ করেন।
  • ডঃ কুদরাত-ই-খুদা : বিজ্ঞানী হিসেবে তাঁর ও তাঁর সহকর্মীদের ১৮ টি আবিষ্কার এর পেটেন্ট রয়েছে, যার মধ্যে নয়টি পাটসংক্রান্ত। এর মধ্যে পাট ও পাটকাঠি থেকে রেয়ন , পাটকাঠি থেকে কাগজ এবং রস ও গুড় থেকে মরফিন এর আবিষ্কার উল্লেখযোগ্য। তিনি পাটকাঠি থেকে মণ্ড তৈরী করে সেই মণ্ড থেকে অতি উন্নতমানের দৃঢ় তক্তা করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। পারটেক্স কাঠ কুদরাত-এ-খুদার বিশেষ অবদান।
  • সত্যেন্দ্রনাথ বসু : পদার্থবিজ্ঞানী পিটার হিগস ও বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নামে নামকরণ করা "হিগস-বোসন' কথাটি 'ঈশ্বর কণা" হিসেবে পরিচিত।
  • প্রফুল্ল চন্দ্র রায় |Prafulla Chandra Roy] : প্রফুল্ল চন্দ্র রায় যিনি পি.সি রায় নামেও পরিচিত (১৮৬১-১৯৪৪) একজন প্রখ্যাত বাঙ্গালি রসায়নবিদ, বিজ্ঞানশিক্ষক, দার্শনিক ও কবি। তিনি বেঙ্গল কেমিক্যালের প্রতিষ্ঠাতা এবং মারকিউরাস নাইট্রাস এর আবিষ্কারক। তাঁর জন্ম অবিভক্ত বাংলার খুলনা জেলায়। তিনি জগদীশ চন্দ্র বসুর সহকর্মী ছিলেন।
  • মেঘনাদ সাহা [Meghnad Saha] : মেঘনাদ সাহা (সংক্ষেপে এম, এন সাহা) পদার্থবিজ্ঞানে থার্মাল আয়নাইজেশন (Thermal Ionaisation) তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে বিখ্যাত। ১৮৯৩ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন।
  • ফজলুর রহমান খান [Fazlur Rahman Khan] : ফজলুর রহমান খান (১৯২৯-১৯৮২) বাংলাদেশের একজন বিশ্বখ্যাত স্থপতি ও পুরকৌশলী। তিনি এফ. আর খান নামে সুপরিচিত। তিনি পৃথিবীর অন্যতম উচ্চতম ভবন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর 'সিয়ার্স টাওয়ার' এর নকশা প্রণয়ন করেন। সিয়ার্স টাওয়রের বর্তমান নাম উইলিস টাওয়ার।
  • আবদুল্লাহ আল মুতী [Abdullah-Al-Muti] : আবদুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দীন (১৯৩০-১৯৯৮) বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ এবং বিজ্ঞানলেখক। সিরাজগঞ্জ জেলার ফুলবাড়ি উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এদেশে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার জন্য ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক কলিঙ্গ পুরস্কার (১৯৮৩) লাভ করেন। তাঁর বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থের মধ্যে 'এসো বিজ্ঞানের রাজ্যে' 'আবিষ্কারের নেশায়', 'রহস্যের শেষ নেই', 'সাগরের রহস্যপুরী', 'জানা-অজানা দেশে' বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
  • জামাল নজরুল ইসলাম : জামাল নজরুল ইসলাম (১৯৩৯-২০১৩) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তার জন্ম ঝিনাইদহ শহরে। তিনি মহাবিশ্বের উদ্ভব ও পরিণতি বিষয়ে মৌলিক গবেষণার জন্য খ্যাতি লাভ করেন।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ

  • ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ : তিনি ছিলেন একাধারে ভাষাবিদ, গবেষক, চিন্তাবিদ এবং শিক্ষাবিদ। ১৮৮৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলার পেয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ অনেক বই লিখেছেন। তাঁর মধ্যে 'ভাষা ও সাহিত্য', 'বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত', 'বাংলা সাহিত্যের কথা', 'বাংলা ভাষার ব্যাকরণ', 'বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান', 'বিদ্যাপতি শতক', 'দীওয়ানে হাফিজ' এবং রুবাইয়াৎ-ই-ওমরখৈয়াম উল্লেখযোগ্য। তিনি ছিলেন একজন খাটি বাঙালি এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমান। জাতিসত্তা সম্পর্কে তাঁর স্মরণীয় উক্তি ছিল, 'আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙ্গালি।' ১৯৬৬ সালে ১৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা পঞ্জিকা সংস্কার করেন। ১৯৬৯ সালের ১৩ জুলাই তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়। ঐ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ঢাকা হলের নামকরণ করা হয় শহীদুল্লাহ হল।
  • মুহম্মদ কুদরত ই খুদা : কুদরত ই খুদা বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত রসায়নবিদ, গ্রন্থকার এবং শিক্ষাবিদ। ১৯০০ সালে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর দেশে শিক্ষা ব্যবস্থা পুনর্গঠনে যে শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয় তিনি তাঁর সভাপতি ছিলেন। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট প্রণীত হয়। তাঁর নামানুসারে রিপোর্টটির নামকরণ করা হয় 'কুদরত-ই- খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট।
  • জামিলুর রেজা চৌধুরী :
    জীবনকাল: ১৫ নভেম্বর ১৯৪২ - ২৮ এপ্রিল ২০২০।
    জাতীয় অধ্যাপক, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, গবেষক, শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী জামিলুর রেজা চৌধুরী। তাঁর জন্ম সিলেট শহরে। ২০০১-২০১০ তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২ মে ২০১২ থেকে আমৃত্যু তিনি ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর ৭০টির বেশি প্রবন্ধ ও গবেষণাকর্ম প্রকাশিত হয়। ১৯ জুন ২০১৮ বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত করে। ২০১৭ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী জাপানের সর্বোচ্চ বেসরকারি সম্মাননা The Order of the Rising Sun, Gold Rays With Neck Ribbon' লাভ করেন।
  • এমাজউদ্দীন আহমদ :
    জীবনকাল: ১৫ ডিসেম্বর ১৯৩৩-১৭ জুলাই ২০২০।
    খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ, গবেষক-পর্যালাচেক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদহে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেন। তিনি ১ নভেম্বর ১৯৯২-৩১ আগস্ট ১৯৯৬ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য ১৯৯২ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত চিকিৎসক

  • অধ্যাপক ডা. এম আর খান : এম আর খান (মো. রফি খান)
    জন্ম: সাতক্ষীরা শহরতলীর রসুলপুর গ্রামে ১ আগষ্ট ১৯২৮;
    মৃত্যু: ৫ নভেম্বর ২০১৬
    বাংলাদেশে শিশু চিকিৎসায় পথিকৃৎ চিকিৎসক ও জাতীয় অধ্যাপক। তিনি বাংলাদেশে শিশু বিভাগের প্রথম অধ্যাপক। তাকে বলা হয়, "Father of Paediatric in Bangladesh" . তাকে জাতীয় অধ্যাপকের মর্যাদায় ভূষিত করা হয় ১৯৯৫ সালে। একুশে পদক ২০০৯ সালে এবং স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন ২০১৬ সালে। গ্রন্থ: 'Essence of Paediatrics, Pocket Paediatric Prescriber' (প্রকাশকাল জানুয়ারি ১৯৮২), 'Essence of Endocrinology' 'প্রাথমিক চিকিৎসা', 'মা ও শিশু' আপনার শিশুর জন্য জেনে নিন', 'শিশুকে সুস্থ রাখুন' এবং 'ড্রাগথেরাপি ইন চিলড্রেন'।
  • ডা. রফিকুল ইসলাম (১৯৩৬-৫ মার্চ ২০১৮) : খ্যাতিমান চিকিৎসক ও খাবার স্যালাইনের চারজন আবিষ্কারকের অন্যতম। তার জন্ম কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত আইনজীবী

  • ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক : (২ নভেম্বর ১৯৩৫-২৪ অক্টোবর ২০২০)
    'আইনের বাতিঘর' হিসেবে খ্যাত সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। তার জন্ম কলকাতার সুবর্ণপুর গ্রামে। ৭ এপ্রিল -১৭ ডিসেম্বর ১৯৯০ তিনি দেশের ষষ্ঠ অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে তিনি কোনো সম্মানী গ্রহণ করেননি। তিনি যেমন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আইনি লড়াই করেছেন, তেমনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষেও আইনজীবী হিসেবে লড়েছেন। দেশের ইতিহাসে আইন পেশায় এমনটি বিরল। মানবতাবাদী আইনজীবী হিসেবে পরিচিত ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক ২৫টিরও বেশি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। তার জীবনের উপার্জিত অর্থের প্রায় সবই তিনি ব্যয় করেছেন সমাজসেবায়।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত উদ্যোক্তা

স্যার ফজলে হাসান আবেদ (১৭ এপ্রিল ১৯৩৬-২০ ডিসেম্বর ২০১৯) : বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি সংস্থা ব্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ। অসাধারণ দায়িত্ববোধ, সহমর্মিতার গভীর জীবন দর্শন ও নিরলস শ্রমের এক অবিস্মরণীয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বের কারণে জীবদ্দশাতেই কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। ২০ ডিসেম্বর ২০১৯ মৃত্যুবরণ করেন বাংলাদেশের উন্নয়নের পালাবদলের অন্যতম এ পথদ্রষ্টা। বাঙালির অহংকার, অনুপ্রেরণার বাতিঘর এ মহাপ্রাণের মহাপ্রয়াণে আমরাও শোকাভিভূত।

জন্ম: ২৭ এপ্রিল ১৯৩৬: কামালখানিপাড়া, বানিয়াচং উপজেলা, হবিগঞ্জ।
প্রথম উদ্যোগ ১৯৭০ সালে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে বিপন্ন দ্বীপ মনপুরায় ত্রাণসেবা। সেটিই ব্র্যাকের বীজ।
ব্র্যাক 'অ্যাকশন বাংলাদেশ' ও 'হেল্প বাংলাদেশ' নামে দুটি সংগঠন থেকে ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ প্রতিষ্ঠা করেন ব্র্যাক।
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার ও সম্মান র‍্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার (১৯৮০), ব্র্যাকের ইউনেস্কোর নোমা পুরস্কার (১৯৮৫) ও স্বাধীনতা পুরস্কার (২০০৭), দারিদ্র্য বিমোচনে অসাধারণ অবদানের জন্য যুক্তরাজ্য থেকে সম্মানজনক 'স্যার' উপাধি (২০১০), বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার (২০১৫), শিক্ষায় অবদানের জন্য ইদান পুরষ্কার ও স্বর্ণপদক (২০১৯)।

লতিফুর রহমান : (২৮ আগস্ট ১৯৪৫-১ জুলাই ২০২০)
বিশিষ্ট শিল্পপতি ও ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান। দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা। তার জন্ম ভারতের জলপাইগুড়িতে, কিন্তু গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চিওড়া ইউনিয়নের চিওড়া গ্রামে। ব্যবসায়ে নৈতিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০১২ সালে বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক

কামাল লোহানী : (২৬ জুন ১৯৩৪-২০ জুন ২০২০)
জীবনকাল: সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক। তার জন্ম সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার সমতলা গ্রামে কামাল লোহানী নামেই পরিচিত হলেও তার পারিবারিক নাম আবু নঈম মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান লোহানী। ১৯৫৫ সালে দৈনিক মিল্লাত পত্রিকা দিয়ে সাংবাদিকতার হাতেখড়ি। মুক্তিযুদ্ধের সময় কামাল লোহানী স্বাধীন বাংলা বেতারের সংবাদ বিভাগের দায়িত্ব নেন। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ বাংলাদেশের বিজয়ের খবর বেতার মাধ্যমে তিনিই প্রথম পাঠ করেন। ২৫ ডিসেম্বর ১৯৭১ স্বাধীন বাংলাদেশে দায়িত্ব পান ঢাকা বেতারের। ১৯৯১ সালে এবং ২০০৮ সালে কামাল লোহানী বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে তিনি সাংবাদিকতায় একুশে পদক লাভ করেন।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী

ফকির লালন শাহ : লালন ফকির ছিলেন একজন আধ্যাত্মিক বাউল সাধক, মানববাদী সমাজ সংস্কারক এবং দার্শনিক। তিনি অসংখ্য গানের গীতিকার ও সুরকার ছিলেন। তাকে 'বাউল সম্রাট' হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। লালন ফকিরের (১৭৭৪- ১৮৯০) সঠিক জন্মস্থান নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কিছু সূত্রে পাওয়া যায় লালন ফকির ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে ঝিনাইদহ জেলার হরিশপুরগ্রামে এক কায়স্থ হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কোন কোন লালন গবেষক মনে করেন তিনি কুষ্টিয়া জেলার চপেড়া ইউনিয়নের ভাড়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। 'মাসিক মোহাম্মদী' পত্রিকার বাংলা ১৩৪৮ সালের আষাঢ় সংখ্যায় তার জন্ম যশোর জেলার ফুলবাড়ি বলে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু ছেলেবেলায় অসুস্থ অবস্থায় তার পবিরার তাকে ত্যাগ করে। তখন সিরাজ সাই নামের এক মুসলমান বাউল তাঁকে আশ্রয় দেন এবং সুস্থ করে তোলেন। লালন কুষ্টিয়া জেলার ছেউড়িয়া গ্রামে একটি আখড়া গড়ে তোলেন, যেখানে তিনি তাঁর শিষ্যদের শিক্ষা দিতেন। ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর কুষ্টিয়ায় নিজ আখড়ায় মৃত্যুবরণ করেন।

বিখ্যাত কয়েকটি লালনগীতি:

  • "খাঁচার ভিতর অচিন পাখী ................"
  • "মিলন হবে কত দিনে.......... "
  • "আমার বাড়ীর কাছে আরশী নগর, এক পরশী বসত করে।"
  • "সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে......"
  • "জাত গেল জাত গেল বলে......"
  • "কেউ মালা, কেউ তসবি গলায়, তাইতো জাত ভিন্ন বলায়......"
  • "আমি অপার হয়ে বসে আছি, ওহে দয়াময় পাড়ে লয়ে যাও আমায়......"
  • "দেখ না মন ঝক মারিয়া দুনিয়া দারি............"
  • "তিন পাগলের হলো মেলা..........."
  • 'আমার ঘরের চাবি পরের হাতে..........."

* লালন গীতিগুলো প্রথম সংগ্রহ করা শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ।

হাসন রাজা : দেওয়ান হাসন রাজা উনিশ শতকের সর্বাপেক্ষা খ্যাতনামা বাউল এবং বাউল শিল্পী। ১৮৫৫ সালে সুনামগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২২ সালে হাসন রাজা মারা যান। হাসন রাজার বিখ্যাত গানের পঙক্তি।

  • "লোকে বলে, বলে রে, ঘর বাড়ী ভালা নয় আমার......"
  • "মাটির পিঞ্জিরার মাঝে বন্দী হইয়ারে.."
  • "সোনা বন্ধে আমারে দেওয়ানা বানাইল...."
  • "আঁখি মুজিয়া দেখ রূপরে.........."

ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ : ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ (১৮৮১-১৯৭২ খ্রিস্টাব্দ) একজন বাঙালি সঙ্গীতজ্ঞ। সেতার ও সানাই এবং রাগসঙ্গীতে বিখ্যাত ঘরানার গুরু হিসাবে সারা বিশ্বে বিখ্যাত। মূলত সরোদই ছিল তাঁর শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বহন। আলাউদ্দিন খাঁ জন্ম বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শিবপুর গ্রামে। তাঁর সন্তান ওস্তাদ আলী আকবর খাঁন ও অন্নপূর্ণাদেবী নিজ নিজ ক্ষেত্রে উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। আচার্যের বিখ্যাত শিষ্য হলেন পন্ডিত রবি শংকর।

আব্বাসউদ্দিন আহমদ : আব্বাস উদ্দীন আহমদ (১৯০১-১৯৫৯) একজন বিখ্যাত লোকসঙ্গীত শিল্পী । তিনি পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলার অন্তর্গত বলরামপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভাওয়াইয়া, চটকা জারি, সারি, ভাটিয়ালী, মুর্শিদী প্রভৃতি গানের জন্য খ্যাতি লাভ করেন। তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ 'আমার শিল্পী জীবনের কথা'।

আবদুল আলীম : আবদুল আলীম (১৯৩১-১৯৭৪ খ্রি) বাংলা লোকসঙ্গীতের এক অমর শিল্পী। তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের তালিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর কিছু অবিস্মরণীয় গান-

  • নাইয়ারে নায়ের বাদাম তুইলা..........
  • এই যে দুনিয়া কিসেরও লাগিয়া..........
  • সর্বনাশা পদ্মা নদী, তোর কাছে.........
  • হলুদিয়া পাখী সোনারও বরুণ, পাখিটি ছাড়িল কে..........

শাহ আবদুল করিম : উস্তাদ শাহ আবদুল করিম (১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯১৬ - ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৯) হচ্ছেন একজন বাংলাদেশী কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকার ও সঙ্গীত শিক্ষক। তিনি সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাউল সঙ্গীতকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। কর্মজীবনে তিনি পাঁচশো-এর উপরে সংগীত রচনা করেছেন। বাংলা সঙ্গীতে তাঁকে বাউল সম্রাট হিসাবে সম্বোধন করা হয়। তিনি বাংলা সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০০১ সালে একুশে পদক পুরস্কারে ভূষিত হন। তাঁর কিছু অবিস্মরণীয় গান-

  • বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে
  • আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম
  • গাড়ি চলে না
  • রঙ এর দুনিয়া তরে চাই না
  • ঝিলমিল ঝিলমিল করেরে ময়ুরপংখী নাও
  • মানুষ হয়ে তালাশ করলে
  • আমি বাংলা মায়ের ছেলে
  • আমি কূলহারা কলঙ্কিনী
  • কেমনে ভুলিবো আমি বাঁচি না তারে ছাড়া
  • কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু
  • মন মজালে,ওরে বাউলা গান
  • আমার মাটির পিনজিরাই সোনার ময়নারে
  • বসন্ত বাতাসে সইগো
  • মহাজনে বানাইয়াছে ময়ুরপংখী নাও
  • সখী কুঞ্জ সাজাও গো
  • গান গাই আমার মনরে বুঝাই
  • আগের বাহাদুরি গেল কই
  • বন্ধুরে কই পাব
  • আসি বলে গেল বন্ধু আইলনা
  • প্রান বন্ধু আসিতে কত দুরে

আজম খান : পপসম্রাট আজম খান ১৯৫০ সালে ঢাকার আজিমপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান। তাঁকে বাংলা 'পপগানের জনক' বলা হয়। ১৯৭২ সালে 'উচ্চারণ' নামক ব্যান্ড দিয়ে তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল। তিনি ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা (২নং সেক্টর)। ২০১১ সালের ৫জুন তিনি পরলোক গমন করেন। তাঁর কিছু অবিস্মরণীয় গান-

  • এত সুন্দর দুনিয়ার কিছুই
  • চার কলেমা সাক্ষী দেবে...
  • ওরে সালেকা ওরে মালেকা
  • রেল লাইনের ঐ বস্তিতে..
  • আসি আসি বলে তুমি.
  • হাইকোর্টের মাজারে,
  • চুপ চুপ অনামিকা চুপ..

শাহনাজ রহমতুল্লাহ (গানের পাখি) :
জন্ম: ২ জানুয়ারি ১৯৫২ (ঢাকা); মৃত্যু: ২৩ মার্চ ২০১৯
দীর্ঘ পাঁচ দশকের সঙ্গীত জীবনে বাংলা দেশাত্মবোধক গানকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিলেন 'গানের পাখি' খ্যাত শাহনাজ রহমতুল্লাহ। তিনি ছিলেন বাংলা সংগীতের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী। ১৯৬৩ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে প্রথম চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দেন; চলচ্চিত্রের নাম ছিলো নতুন সুর।

বিবিসির জরিপে সেরা: ২০০৬ সালে বিবিসি'র জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় শাহনাজ রহমতুল্লাহর গাওয়া চারটি গান স্থান পায়- জয় বাংলা বাংলার জয় (সমবেত কণ্ঠ) এক নদী রক্ত পেরিয়ে, একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয় এবং একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল।

তার কালজয়ী কিছু গান গান :
• প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ
• আমার দেশের মাটির গন্ধে ভরে আছে সারা মন
• যদি প্রশ্ন করে, আললা নদীর এক দেশ
• খোলা জানালায় চেয়ে দেখি তুমি আসছো।
• যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়
• ফুলের কানে ভ্রমর এসে
• পারি না ভুলে যেতে
• সাগরের তীর থেকে মিষ্টি কিছু হাওয়া এনে
• সাগরের সৈকতে কে যেনো দূর হতে
• শুনেন শুনেন জাহাপনা
• যদি চোখের দৃষ্টি
• আমার ছাট্টে ভাইটি মায়ায় ভরা মুখটি
• আমি সাত সাগরের ওপার হতে
• ঘুম ঘুম ঘুম চোখে
• ঐ ঝিনুক ফোটা সাগর ভেলায়
• আরো কিছু দাও না দুখু আমায়

আব্দুর জব্বার (১৯৩৮-২০১৭) :
জন্ম: ১০ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া জেলার আডুয়াপাড়ায়। মৃত্যু: ৩০ আগস্ট ২০১৭ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হতে প্রচারিত অনেক উদ্দিপনামূলক গান গেয়ে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। তিনি নানা ঘরানার কয়েক হাজার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। তার গাওয়া "তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয় ", "সালাম সালাম হাজার সালাম" , ও "জয় বাংলা বাংলার জয়" গান তিনটি ২০০৬ সালে মার্চ মাস জুড়ে অনুষ্ঠিত বিবিসি বাংলার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকায় স্থান করে নেয়। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত দুটি সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক (১৯৮০) ও স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৬) ভূষিত হন।

তাঁর বিখ্যাত গানগুলো হলো:

  • সালাম সালাম হাজার সালাম
  • তুমি কি দেখেছ কভু
  • ওরে নীল দরিয়া
  • পিচঢালা এ পথ
  • জয় বাংলা বাংলার জয়
  • এক বুক জ্বালা নিয়ে
  • বন্ধু তুমি শত্রু তুমি
  • আমি তো বন্ধু মাতাল নই..... ইত্যাদি।

লাকী আখন্দ : জন্ম ১৮ জুন ১৯৫৬, পুরোনো ঢাকার পাতলাখান লেনে। মৃত্যু ২১ এপ্রিল ২০১৭। প্রখ্যাত সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, গায়ক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাকে বলা হতো 'সুরের বরপুত্র'। প্রথম একক অ্যালবাম বের হয় ১৯৮৪ সালে সারগামের ব্যানারে।

আইয়ুব বাচচু :
প্রখ্যাত ব্যান্ড সংগীত শিল্পী
জন্ম ১৬ আগস্ট ১৯৬২; মৃত্যু: ১৮ অক্টোবর, ২০১৮
বাংলা সঙ্গীতাঙ্গনের কিংবদন্তী, জনপ্রিয় ব্যান্ডদল খজই'র লিড গিটাররিস্ট ও ভোকাল। তার জন্ম চট্টগ্রামে। তিনি অই নামে পরিচিত ছিলেন। তার ডাকনাম রবিন। 'গিটার জাদুকর' নামে খ্যাত আইয়ুব বাচ্চু সঙ্গীত জগতে তার পথচলা শুরু করেন ১৯৭৮ সালে 'ফিলিংস'ব্যান্ডের মাধ্যমে। এরপর তিনি নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন খজই নামের ব্যান্ড দল, যার যাত্রা শুরু ৫ এপ্রিল ১৯৯০। এর পুরো নাম Love Runs Blind, শুরুতে যা ছিল Little River Band

সুবীর নন্দী :
জন্ম: ১৯ নভেম্বর ১৯৫৩: মৃত্যু:-৭ মে ২০১৯
জন্মস্থান: নন্দীপাড়া, বানিয়াচং, হবিগঞ্জ

অ্যালবাম: সুবীর নন্দীর প্রথম একক অ্যালবাম 'সুবীর নন্দীর গান' ১৯৮১ সালে বাজারে আসে। এছাড়াও তার উল্লেখযোগ্য অ্যালবাম প্রেম বলে কিছু নেই, ভালোবাসা কখনো মরে না, সুরের ভুবনে, গানের সুরে আমায় পাবে, প্রণামাঞ্জলী (ভক্তিমূলক গানের অ্যালবাম)।

উল্লেখযাগ্যে জনপ্রিয় গান: আশা ছিল মনে মনে আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয় আমি, বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি, এই দুনিয়ার রাস্তা ঘাটে, একটা ছিল সোনার কন্যা, এই পাড়ে একজন কান্দে, ও আমার উড়াল পঙ্খীরে, কেঁদো না তুমি কেঁদো না, কেন ভালাবোসা হারিয়ে যায়, কতো যে তোমাকে বেসেছি ভালো, চাদে কলঙ্ক আছে যেমন, তুমি এমনই জাল পেতেছো সংসারে, তোমারি পরশে জীবন আমার ওগো ধন্য হলো, তোমরা বল মাতালটা কে, দিন যায় কথা থাকে, নেশার লাটিম ঝিম ধরেছে, পাহাড়ের কান্না দেখে, পাখি রে তুই খাচা ভেঙে, বন্ধু তোর বারাত নিয়া, বন্ধু হতে চেয়ে তোমার, হাজার মনের কাছে প্রশ্ন রেখে, মরিলে কান্দিস না, মাস্টার সাব আমি নাম দস্তখত শিখতে চাই, সেই দুটি চোখ।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার: শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পাঁচবার পুরষ্কার লাভ করেন সুবীর নন্দী।

প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোর (৪ নভেম্বর ১৯৫৫-৬ জুলাই ২০২০)
বাড়ি; জন্মস্থান: রাজশাহী;
মা মিনু ছিলেন সংগীত অনুরাগী। তার প্রিয় শিল্পী ছিলেন কিশোর কুমার। সেই প্রিয় শিল্পীর নামে নিজের সন্তানের নাম রাখেন 'কিশোর'।

তাকে বলা হয় বাংলাদেশের প্লেব্যাক সম্রাট। চলচ্চিত্রে তার প্রথম গান 'অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ'; ছবি-মেইল ট্রেন (১৯৭৭)।

তিনি মোট আটবার শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। পুরস্কারপ্রাপ্ত গানগুলোর নাম: হায়রে মানুষ, রঙ্গিন ফানুস, দম ফুরাইলেই ঠুস; চলচ্চিত্র: বড় ভালো লাকে ছিল: (১৯৮২) সবাইতো ভালাবোসা চায়; চলচ্চিত্র: সারেন্ডার: (১৯৮৭); আমি পথ চলি একা এই দুটি ছোট্ট হাতে: চলচ্চিত্র: ক্ষতিপূরণ; (১৯৮৯); দুঃখ বিনা হয় না সাধনা: চলচ্চিত্র: পদ্মা মেঘনা যমুনা: (১৯৯১) এসো একবার দুজনে আবার; চলচ্চিত্রঃ কবুল; (১৯৯৬); চোখ যে মনের কথা বলে; চলচ্চিত্র: আজ গায়ে হলুদ: (২০০০); সাজঘর; চলচ্চিত্র: সাজঘর: (২০০৭); কি যাদু করিলা: চলচ্চিত্রঃ কি যাদু করিলা: (২০০৮)।

ওস্তাদ আল্লা রাখা খান : ওস্তাদ আল্লা রাখা খান ছিলেন একজন বিখ্যাত তবলা বাদক বা তবলা শিল্পী। তিনি হলেন প্রখ্যাত তবলা বাদক ওস্তাদ জাকির হুসেইনের বাবা। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলার রতনগড় গ্রামে তার জন্ম । তার বাবা কৃষক হওয়াতে ভেবেছিলেন ছেলেকে দিয়ে তার মতো কৃষি কাজ করবে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। বরং তার আগ্রহ ছিল সংগীতের প্রতি।

গীতিকার/ সুরকার

অতুলপ্রসাদ সেন অতুলপ্রসাদ সেন রচিত গানের সংখ্যা প্রায় ২০০টি। তার মাতৃভূমি, মাতৃভাষা ও স্বজাতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত গানগুলো জাতীয়তাবাদ ও স্বাধীনতা আন্দোলনে জনসাধারণের মনে প্রেরণা যোগায়। পরবর্তীতে এই গানটি পাঠ্যবইয়ে কবিতা আকারে প্রকাশিত হয়।

গোবিন্দ হালদার : গোবিন্দ হালদার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতারে সম্প্রচারিত তার লেখা গানসমূহ মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতো। তিনি ১৭ জানুয়ারি ২০১৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার রচিত উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে মোরা একটি টি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি', 'এক সাগর রক্তের বিনিময়ে', 'পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে', 'লেফট রাইট লেফট রাইট', 'হুঁশিয়ার হুশিয়ার', 'পদ্মা মেঘনা যমুনা', 'চলো ঐ বীর সৈনিক', 'হুশিয়ার বাংলার মাটি' অন্যতম।

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল : বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব। যিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন। ১৯৭০ এর দশকের শেষ লগ্ন থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পসহ সংগীত শিল্পে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৭১ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক (২০১০), শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে দুই বার (২০০১ ও ২০০৫) জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। তাঁর বিখ্যাত কিছু গান হচ্ছে:

  • সব কটা জানালা খুলে দাও না
  • ও মাঝি নাও ছাইড়া দে ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে
  • সেই রেল লাইনের ধারে
  • সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবণ্য
  • একতারা লাগেনা আমার দোতারাও লাগেনা
  • আমার সারা দেহ খেওগো মাটি
  • আমার বুকের মধ্যখানে
  • আম্মাজান আম্মাজান
  • পরেনা চোখের পলক
  • তুমি মোর জীবনের ভাবনা

বাংলাদেশের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী

জয়নুল আবেদীন [Zainul Abedin] :
জয়নুল আবেদীন (১৯১৪-১৯৭৬ খ্রি:) বাংলাদেশের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী। তিনি 'শিল্পাচার্য' নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি মূলত ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলার ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ (পঞ্চাশের মন্বন্তর)- এর ছবি একে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর বিখ্যাত চিত্রকর্মের মধ্যে রয়েছে 'সংগ্রাম' (তেলরং-এ আঁকা), 'মনপুরা-৭০', 'ম্যাডোনা-৪৩' (দুর্ভিক্ষ-চিত্রমালা), 'বিদ্রোহী গরু', 'সাঁওতাল রমনী', 'গায়ের বধু', 'নবান্ন' প্রভৃতি। তিনি লোকশিল্প জাদুঘর (সোনারগাঁ) এবং ঢাকা আর্ট ইনস্টিটিউট (বর্তমান চারুকলা ইনস্টিটিউট) প্রতিষ্ঠা করেন। [কাঠ খোদাই চিত্র - সাঁওতাল - শিল্পী শফিউদ্দীন আহমেদ] শিল্পী জয়নুল আবেদীনের সংগ্রহশালা ময়মনসিংহে। তাঁর বিখ্যাত উক্তি 'নদী আমার মাস্টার মশাই'। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারানো হাজারো মানুষের স্মৃতির উদ্দেশ্যে আঁকা ৩০ ফুট দীর্ঘ 'মনপুরা ৭০' চিত্রকর্ম।

কামরুল হাসান [Quamrul Hassan] : কামরুল হাসান বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে জেনারেল ইয়াহিয়ার মুখের ছবি দিয়ে আঁকা পোস্টারটি (Annihilate These Demons বা এই জানোয়ারদের করতে হবে) খুব বিখ্যাত। 'এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে' শিরোনামে বিখ্যাত পোস্টারটি এঁকেছিলেন কামরুল হাসান। তিনি ১৯৭২ সালে তৎকালীন সরকারের অনুরোধে শিবনারায়ণ দাশ কর্তৃক ডিজাইনকৃত পতাকার বর্তমান রূপ দেন। তিনি ১৯৮৮ সালে স্বৈরশাসক এরশাদকে ব্যঙ্গ করে 'দেশ আজ বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে' পোস্টারটি স্কেচ আঁকেন। তাঁর বিখ্যাত চিত্রকর্ম 'তিন কন্যা' এবং 'নাইওর'। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মুদ্রার ডিজাইন করেন। তিনি 'পটুয়া' নামে পরিচিত। তিনি 'মুকুল ফৌজ' কে গড়ে তোলেন।

এস. এম. সুলতান [SM Sultan] : শেখ মোহাম্মদ সুলতান (এস এম সুলতান নামে পরিচিত) বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী। তাঁর বিখ্যাত চিত্রকর্ম 'হালচার্য', 'হত্যাযজ্ঞ' এবং 'চরদখল'। তিনি খাকসার আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। শেষ বয়সে নড়াইলের নিজবাড়ীতে তিনি শিশুদের জন্য 'শিশুস্বর্গ ও 'চারুপীঠ' নামে দুটি চিত্র অঙ্কন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এছাড়া তিনি নন্দন কানন নামে একটি প্রাইমারী ও একটি হাইস্কুল এবং আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশ সরকার তাকে 'রেসিডেন্ট আর্টিস্ট' মর্যাদা দেন। তিনি স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত। তারেক মাসুদ তার উপর তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন, যার নাম 'আদম সুরত'। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় তাকে 'ম্যান অব এশিয়া' খেতাবে ভূষিত করে।

রনবী : রফিকুন্নবী (উপনাম রনবী) বাংলাদেশের খ্যাতনামা ব্যাঙ্গচিত্রশিল্পী ও কার্টুনিস্ট। 'টোকাই' নামক কার্টুন চরিত্রটি তার অনবদ্য সৃষ্টি।

মুস্তাফা মনোয়ার : মুস্তাফা মনোয়ারের অমর সৃষ্টি শিক্ষামূলক কার্টুন 'মীনা' (Meena)। মীনা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন ভাষায় নির্মিত একটি জনপ্রিয় টিভি কার্টুন ধারাবাহিক এবং কমিক বই। মীনার জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতার জন্য সার্কের পক্ষ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর 'মীনা দিবস ' ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সাফ গেমস (বর্তমান নাম সাউথ এশিয়ান গেমস)-এর মাসকট ছিল মিশুক। টানা টানা মায়াবী চোখের হরিণ শিশু মিশুক-এর স্থপতি মোস্তফা মনোয়ার।

শাহাবুদ্দিন আহমেদ (জন্ম: ১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৫০) : বিংশ শতাব্দীর শেষভাবে আবির্ভূত একজন বিখ্যাত বাঙালী চিত্রশিল্পী। আধুনিক ঘরানার প্যারিস-প্রবাসী ফরাসী-বাঙালী এই শিল্পীর খ্যাতি ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছে। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে মাস্টার পেইন্টার্স অব কনটেম্পোরারী আর্টসের পঞ্চাশজনের একজন হিসেবে বার্সেলোনায় অলিম্পিয়াড অব আর্টস পদকে ভূষিত হন। ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার তাকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে। এছাড়া চিত্রকর্মে অসামান্য অবদানের জন্য ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা নাইট উপাধি পেয়েছেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন শিল্পী সাহাবুদ্দিন আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধে তিনি প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে নেতৃত্ব দেন।

চিত্রকলায় অবদান: বড় ক্যানভাসের পর্দায় গতিশীল ও পেশীবহুল অতিমানবীয় পুরুষের ছবি আঁকতে ভীষণ পছন্দ করেন শাহাবুদ্দিন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে উপজীব্য করে রংয়ের তুলির সাহায্যে যথাযথ উপস্থাপনা, প্রতিস্থাপন ইত্যাদি বিষয়গুলো সার্থক ও সফলভাবেই সম্পন্ন করেছেন তিনি। এছাড়াও, শাহাবুদ্দিনের তুলিতে নারী চিত্রকর্মগুলোয় তাদের চিরায়ত কোমলতা, দ্যূতির স্পন্দন, স্নিগ্ধতা দেখা যায়।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত ভাস্কর

নিতুন কুণ্ডু [Nitun Kundul] : নিতুন কুণ্ডু (১৯৩৫-২০০৬) বাংলাদেশের একজন চিত্রশিল্পী ও উদ্যোক্তা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের 'সাবাস বাংলাদেশ', ঢাকার কাউরানবাজারের 'সার্ক ফোয়ারা', ঢাকার হাইকোর্ট সংলগ্ন 'কদম ফোয়ারা', 'সাম্পান' তাঁর উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য ও শিল্পকর্ম। তাঁর প্রণীত পোষ্টারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল 'সদা জাগ্রত বাংলার মুক্তিবাহিনী ও বাংলার বীর মুক্তিযোদ্ধা'

মৃণাল হক (৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৮ ২১ আগস্ট, ২০২০) : দেশের খ্যাতিমান ভাস্কর মৃণাল হক ১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং সেখানে ভাস্কর্যের কাজ শুরু করেন। ২০০২ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। দেশে ফিরে নিজ উদ্যোগে নির্মাণ করেন মতিঝিলের 'বক' ভাস্কর্যটি। ২০০৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নির্মিত গোল্ডেন জুবিলি টাওয়ার তারই শিল্পকর্ম। এছাড়া সারা দেশে তিনি অনেকগুলো ভাস্কর্যের কাজ করেছেন।

ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী : ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী (১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৭ ৬ মার্চ ২০১৮) ছিলেন একজন বাংলাদেশি ভাস্কর। মূলত ঘর সাজানো এবং নিজেকে সাজানোর জন্য দামী জিনিসের পরিবর্তে সহজলভ্য জিনিস দিয়ে কিভাবে সাজানো যায় তার সন্ধান করা থেকেই তার শিল্পচর্চার শুরু। নিম্ন আয়ের মানুষেরা কিভাবে অল্প খরচে সুন্দরভাবে ঘর সাজাতে পারে সে বিষয়গুলো তিনি দেখিয়েছেন। ঝরা পাতা, মরা ডাল, গাছের গুড়ি দিয়েই মূলত তিনি গৃহের নানা শিল্প কর্ম তৈরি করতেন। স্বাধীনতাযুদ্ধে অবদানের জন্য ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে মুক্তিযোদ্ধা খেতাব দেয়। ২০১০ সালে তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পদক পান।

নভেরা আহমেদ (মার্চ ২৯, ১৯৩৯ মে ৬, ২০১৫) : নভেরা আহমেদ ছিলেন একজন বাংলাদেশী ভাস্কর। তিনি বাংলাদেশের আধুনিক ভাষ্কর্যশিল্পের অন্যতম অগ্রদূত এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথম বাংলাদেশী আধুনিক ভাস্কর। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদক প্রদান করে। তিনি প্রায় ৪৫ বছর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত প্যারিসে বসবাস করেন।

১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে অল পাকিস্তান পেইন্টিং অ্যান্ড কাল্পচার এক্সিবিশন আয়োজন হয়। সে সময়ে দশ বছর বয়সি একটি ছেলে ঘরের কাজে নভেরাকে সাহায্য করত। এই প্রদর্শনীর জন্য নভেরা তারই একটি আবক্ষমূর্তি তৈরি করলেন এবং নাম দিলেন চাইল্ড ফিলোসফার। এই ভাস্কর্যের জন্য তিনি সেই প্রদর্শনীতে প্রথম পুরস্কার লাভ করেন। অবয়বধর্মী ভাস্কর্য এক্সট্রিমিনেটিং এঞ্জেল, ছয় ফুটের অধিক উচ্চতাবিশিষ্ট স্টাইলাইজড ভাস্কর্যটিতে বিধৃত হয়েছে শকুনের শ্বাসরোধকারী একজন নারীর অবয়ব; নারীর হাতে অশুভ শক্তি ও মৃত্যুর পরাভবের প্রতীক।

তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে ভাস্কর হিসেবে নিজের একটা দৃঢ় অবস্থান তৈরি করতে সমর্থ হয়েছিলেন নভেরা। একই বিষয়বস্তু নিয়ে নির্মিত একাধিক ভাস্কর্যের মধ্যে পরিবার (১৯৫৮), যুগল (১৯৬৯), ইকারুস (১৯৬৯) ইত্যাদি কাজে মাধ্যমগত চাহিদার কারণেই অবয়বগুলি সরলীকৃত। ওয়েলডেড স্টিলের জেব্রা ক্রসিং (১৯৬৮), দুটি লুনাটিক টোটেম ইত্যাদির পাশাপাশি রয়েছে ব্রোঞ্জ মাধ্যমে তৈরি দন্ডায়মান অবয়ব। এছাড়া কয়েকটি রিলিফ ভাস্কর্য ও স্কুল। পুনাটিক টোটেম বা মেডিটেশন (১৯৬৮) এই দুটি ভাস্কর্যে শিল্পীর মরমি অনুভবের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। কোথাওবা রয়েছে আদিম ভাস্কর্যরীতি থেকে পরিগ্রহণ।

২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ অবধি বিস্তৃত দীর্ঘ জীবনের তুলনায় নভেরা আহমেদের শিল্পকর্মের সংখ্যা কম। ষাট দশকের শেষভাগের মধ্যেই তার যা কিছু সষ্টি ও নির্মাণ। ১৯৭৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত প্যারিসের স্বেচ্ছানির্বাসনের জীবন পরিধিতি তিনি খুবই কম কাজ করেছেন। এ সময় অবশ্য তিনি কিছু ছবি এঁকেছেন।

বাংলাদেশের বিবিধ ব্যক্তিত্ব

অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান | Atisa Dipankara Shrijnana] : অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান ৯৮২ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলায় বজ্রযোগিনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। অতীশ দীপঙ্করের বাসস্থান এখনও 'নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা' নামে পরিচিত। ছোটবেলায় তাঁর নাম ছিল আদিনাথ চন্দ্রগর্ভ। তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত বৌদ্ধ ভিক্ষু ও ধর্মপ্রচারক। বঙ্গদেশের রাজা প্রথম মহীপালের অনুরোধে তিনি বিক্রমশীলা মহাবিহারের অধ্যক্ষের পদ গ্রহণ করেন। তিনি তিব্বতের রাজা চ্যান চাব জ্ঞানপ্রভের অনুরোধে ১০৪১ খ্রিস্টাব্দে বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য দুর্গম হিমালয় অতিক্রম করে তিব্বতে যান। তিনি তাজুর নামে বিশাল তিব্বতি গ্রন্থ সংকলন করেছিলেন। ১৩ বছর ধর্ম প্রচারের পর ১০৫৪ খ্রিস্টাব্দে ৭২ বছর বয়সে তিব্বতের রাজধানী লাসার কাছে হেথাং বিহারে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৯৭৮ সালের ২৮ জুন তাঁর দেহভস্ম চীন থেকে ঢাকার ধর্মরাজিক বৌদ্ধবিহারে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আনীত হয় এবং সেখানে এটি সংরক্ষণ করা হয়।

আরজ আলী মাতুব্বর : ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে বরিশাল জেলায় এক দরিদ্র পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। আরজ আলী মাতুব্বর বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত লৌকিক দার্শনিক। ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে পরলোকগমণ করেন। ২৮ এপ্রিল ২০১৮ বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের নির্মিত আরজ আলী মাতব্বরের স্মৃতি জাদুঘর উন্মুক্ত করা হয়।

ব্রজেন দাস : ১৯২৭ মুন্সীগঞ্জে জন্ম। ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেন (১৯৫৮ সালে) । ১৯৯৮ সালে মারা যান। ১৯৯৯ সালের মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক পান।

পলান সরকার :
জন্ম: ৯ সেপ্টেম্বর ১৯২১; মৃত্যু: ১ মার্চ ২০১৯
পলান সরকার একজন সমাজকর্মী। তিনি রাজশাহী জেলার ২০টি গ্রামজুরে গড়ে তুলেছিলেন অভিনব শিক্ষা আন্দোলন। নিজের টাকায় বই কিনে তিনি পড়তে দিতেন গ্রামের পিছিয়ে পড়া মানুষকে। এলাকাবাসীর কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন "বইওয়ালা দাদুভাই" হিসেবে। ২০১১ সালের সামাজিকভাবে অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে 'একুশে পদক' প্রদান করে। তাকে "আলোর ফেরিওয়ালা" বলা হয়।

নবীনতর পূর্বতন