স্নায়ু রোগ , মানসিক রোগ , ক্যান্সার , দাঁতের রোগ , Anthrax / অ্যানথ্রাক্স ,সাপের কামড় ,ওষুধ প্রতিরোধী ক্ষমতা

স্নায়ু রোগ হল স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে এমন যেকোনো অবস্থা। স্নায়ুতন্ত্র শরীরের একটি জটিল নেটওয়ার্ক যা মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ড থেকে শরীরের বাকি অংশে বার্তা প্রেরণ এবং গ্রহণ করে। স্নায়ু রোগের ফলে বিভিন্ন ধরণের লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • স্নায়ুতে ব্যথা, অসাড়তা, ঝিনঝিনি বা জ্বালাপোড়া
  • মাংসপেশীর দুর্বলতা বা পক্ষাঘাত
  • চলাফেরায় অসুবিধা
  • সমন্বয়ের অভাব
  • বক্তৃতা বা গিলে ফেলার সমস্যা
  • মূত্রাশয় বা অন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ হারানো
  • সংবেদনশীলতা হ্রাস
  • জ্ঞান হারানো

স্নায়ু রোগ

  • আমাদের মাথা ধরার কারণ : আমাদের শরীরে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ মস্তিষ্ক। এই মস্তিষের আবরণকে খুলি বলে। এই খুলিতে অসংখ্য শিরা এবং ধমনী থাকে। যেগুলি ব্যথায় সংবেদনশীল। তাছাড়া মস্তিষ্কের চতুর্দিকে অসংখ্য গ্রন্থি থাকে যেগুলি ব্যথায় সংবেদনশীল। কোন কারণে যখন ঐসব শিরা, ধমনী বা গ্রন্থিগুলো আঘাতপ্রাপ্ত হয় তখনই আমরা ব্যথা অনুভব করি। আমাদের মস্তিষ্কের শিরা ও ধমনীগুলি বিভিন্ন কারণে আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে, যেমন চোখ, নাক, দাঁত প্রভৃতি আঘাত প্রাপ্ত হলে মস্তিষ্কের সংবেদনশীল শিরা এবং ধমনীগুলিও আক্রান্ত হয় ফলে আমাদের মাথা ধরে। মাথার কাছের কিংবা ঘাড়ের উপরকার দিকের মাংসপেশীর সংকোচনের ফলেও মাথা ধরতে পারে। তাছাড়া পেটে গ্যাস হলেও অনেক সময় মাথা ধরা দেখা যায় এবং মানসিক দুশ্চিন্তা থেকেও মাথা ধরা হতে পারে।
  • মূর্ছা (Syncope) : মূর্ছা অন্যান্য রোগের লক্ষণ মাত্র। রক্তরস, রক্তপাত, মানসিক আঘাত, স্নায়ুবিক দৌর্বল্য, উত্তেজক পদার্থ সেবন প্রভৃতি থেকে এই রোগ হয়। অস্থিরতা ভাব, হার্টের দূর্বলভাব, বমি হতে পারে। রোগীকে এমাইল নাইট্রেট শোঁকালে মূর্ছা ভাঙ্গে। শরীরে দূর্বলতা এবং রক্তাল্পতা থাকলে তার জন্য অবশ্য চিকিৎসা করাতে হয়।
  • স্মৃতিভ্রংশতা বা সিজোয়ফ্রেনিয়া : মস্তিষ্কের অনেক রোগে বুদ্ধিবৃত্তিক ক্রিয়ায় অক্ষমতা দেখা যায়। ফলে রোগী অনেক কিছু ভুলে যায়। উপযুক্ত শব্দ ব্যবহার করতে পারে না, এমনকি সহজ হিসাব-নিকাশও ভুল হয়ে যায়। এ রকম অবস্থাকে এক কথায় স্মৃতিভ্রংশতা বলা হয়। এ অবস্থায় রোগী অনেকটা কাল্পনিক জগতে বাস করে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এমনিতেও স্মৃতিভ্রংশতা দেখা দিতে পারে। 'আলজিমার ডিজিজ' ও মস্তিষ্কের অনেক রক্তনালী বন্ধ হলেও স্মৃতিভ্রংশতা দেখা যায়।
  • মস্তিস্কের ডোপামিন তৈরির কোষগুলো নষ্ট হলে কি রোগ হয় : পারকিনসন
  • আলজেইমার্স কি ধরনের রোগ : অজ্ঞাত কারণে সংঘটিত প্রাক-বার্ধক্যকালীন স্নায়ুরোগ হলো আলজেইমার্স। এর ফলে রোগীর স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তা করার ক্ষমতা কমে যায় এবং রোগী নানারকম অস্বাভাবিক আচরণ করে। এ রোগ ৬৫ বছরের আগে শুরু হলে তাকে আলজেইমার্স এবং ৬৫ বছরের পর শুরু হলে তাকে 'আলজেইমার্স জাতীয় বুদ্ধিভ্রংশতা' বলা হয়। এ রোগে আক্রান্ত রোগী প্রথম দিকে ভুলো মনে হয়। এরপর স্মৃতিশক্তি দুর্বল হতে থাকে এবং স্বাভাবিক আচার-আচরণ হ্রাস পেতে থাকে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এ রোগ হলেও এটি সরাসরি বার্ধক্যজনিত রোগ নয়। এ রোগের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই।
  • পার্কিনসন এবং আলঝাইমার রোগের পার্থক্য : পার্কিনসন (Parkinson) এবং আলঝাইমার (Alzheimer) উভয়ই মূলত স্নায়ুরোগ বিশেষ। তবে এদের মধ্যে নিম্নোক্ত পার্থক্য বিদ্যমান। যথা-
    পার্কিনসন রোগ: কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের এক প্রকার দীর্ঘমেয়াদী জটিল রোগ এর ফলে মানবদেহ রোগীর নড়াবার ক্ষমতা শ্লথ হয়ে যায়, পেশিসমূহ অনড় (rigid) ও দূর্বল হয় এবং বিশ্রামরত অবস্থাতেও হাত-পা কাঁপতে (tremor) থাকে।
    আলঝাইমার রোগ: অজ্ঞাত কারণে সংঘটিত প্রাক-বার্ধক্য-কালীন স্নায়ুরোগ বিশেষ। এর ফলে রোগীর স্মৃতিশক্তি ও চিন্তা করার ক্ষমতা কমে যায় এবং রোগী নানারকম অস্বাভাবিক আচরণ করে। এই রোগ ৬৫ বছর বয়সের আগে শুরু হলে তাকে আলঝাইমার ব্যাধি (Alzheimer's disease) বলা হয়।
  • মৃগীরোগ : মৃগী হল এক ধরনের স্নায়ুতন্ত্রের রোগ। যারা এই রোগে ভোগে তাদের হঠাৎ করে খিচুনি বা আক্ষেপ শুরু হয় তারপর তারা অজ্ঞান হয়ে পড়ে। যখন একবার ব্যাপারটি শেষ হয়ে যায়, তখন তারা আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। মানসিক আঘাত, মাথার গুরুতর আঘাত, মস্তিষ্কের ক্ষত, প্রবল জ্বর অথবা টিউমার প্রভৃতি কারণে মৃগী রোগ হয়।
  • সেরিব্রাল পালসি : মানবদেহের বৃদ্ধির সময়ে মস্তিষ্কে কোনো কারণে আঘাত কিংবা ক্ষতির ফলে সৃষ্ট অনগ্রসরশীল মোটর জটিলতা (non-progressive motor disorder) সেরিব্রাল পালসি নামে পরিচিত। অনগ্রসরশীল মোটর জটিলতার মধ্যে বিভিন্ন অঙ্গের অবশতা (paralysis), খিচুনি, অস্বাভাবিক রিফ্লেক্স, কথা বলতে বিলম্ব হওয়া, আচরণের অস্বাভাবিকতা ইত্যাদি লক্ষণসমূহ উল্লেখযোগ্য। এ রোগের জন্মপূর্ব সম্ভাব্য কারণসমূহের মধ্যে বংশগত কিংবা জন্মগত ত্রুটি, মায়ের গর্ভকালীন রোগ (যেমন- রুবেলা বা জার্মান হাম) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। Echlampsia, প্রসবকালীন জটিলতা কিংবা বিলম্ব, প্রসবের সময়ে কিংবা পরে মস্তিষ্কে অক্সিজেন স্বল্পতার জন্য এ রোগ হয়। প্রসবকালীন আঘাত সেরিব্রাল পালসির একটি বড় কারণ।
  • Brain Death এ কোনটি থাকবে : মস্তিস্কের মৃত্যু অর্থাৎ শারীরিক মৃত্যু নয় এমন ক্ষেত্রে প্রাণীর চোখের পাতা স্থির থাকে (Constricted pupil), গভীর কোমায় চলে যায় (Deep coma) এবং পালস্ রেসপন্স থাকে না (Pulse not responsive to atropine)। ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রাশ্বাসের ব্যাঘাত ঘটার মতো বিষয় (Apnoea) এ সময় অনুপস্থিত।

মানসিক রোগ

বিষণ্ণতা: হর্ষোন্মদনার (mania) মতো বিষণ্ণতাও মানুষের ভাবানুভূতির গোলযোগ (affective disorder)। বিষণ্ণতা সম্পর্কে অনেক মতবাদ রয়েছে। মনোসমীক্ষণ মতবাদ অনুসারে মনে করা হয় দ্ব্যর্থবোধক ভালোবাসার অনুভূতির বিষয় থেকে বিচ্ছিন্নতাজনিত বিরাগ থেকে সৃষ্ট অনুভূতিই বিষণ্ণতা। অন্য কথায় বিশেষ ভালোবাসার বিষয় থেকে বিচ্ছিন্নতার প্রতিক্রিয়াই বিষণ্ণতা। আধুনিক মনোবিজ্ঞানের ধারনা অনুসারে বিষন্নতার কারণ হিসাবে অসহায়ত্ব, হীনমন্যতা ও নেতিবাচক বোধজ্ঞানের উপর বেশি জোর দেওয়া হয়। আচরণবিদদের মতবাদ অনুসারে অনিয়ন্ত্রিত অপছন্দনীয় উদ্দীপনার ফলে কিংবা রি-ইনফোর্সমেন্টের অভাবে বিষণ্ণতার সৃষ্টি হয় এবং অসুখের ভূমিকার প্রতি সকলের সহানুভুতির ফলে তা বজায় থাকে। বিভিন্ন মতবাদের ভিত্তিতে বিষণ্ণতা রোগের নানান রকম চিকিৎসা পদ্ধতি বের করা হয়েছে- মনোসমীক্ষণ, আচরণগত চিকিৎসা, সামাজিক ও রাজনৈতিক ভূমিকা, বিভিন্ন ওষুধ, বৈদ্যুতিক চিকিৎসা ইত্যাদি। এছাড়াও বিষন্নতা রোগের আরও অনেক ওষুধ রয়েছে। কম গুরুত্বের বিষণ্ণতার চিকিৎসার জন্য সাইকোথেরাপি কিংবা আচরণগত চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়।

ক্যান্সার

  • ক্যান্সার: শরীরের কোন কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকে ক্যান্সার বলে। দেহকোষের দ্রুত ও অস্বাভাবিক বৃদ্ধিই হলো ক্যান্সার। দেহের কোনো অংশের কোষ দ্রুতহারে ক্রমাগত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ও বিভাজিত হলে জৈবনিক কার্যকলাপের যে ব্যাঘাত ঘটে, তাকে ক্যান্সার বলে। এটি একটি ভয়াবহ ব্যাধি যা কোষের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বা বৃদ্ধির নিয়ন্ত্রণকে ব্যাহত করে।
  • ম্যামোগ্রাফী দ্বারা কোন ধরনের ক্যান্সার ধরা পড়ে: স্তন ক্যান্সার।
  • কেমোথেরাপির জনক: পল এহার্লিক।
  • কেমোথেরাপি: কেমোথেরাপি হলো এমন একধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক ঔষধ (উচ্চতর এন্টিবায়োটিকও হতে পারে) ব্যবহার করে দেহের ক্ষতিকর দ্রুত বিভাজনরত কোষ ধ্বংস করা হয়।

দাঁতের রোগ

  • দাঁতের ক্ষয়রোগের কারণ: ফ্লুরাইডের অভাবে দাঁতের ক্ষয়রোগ হয়।
  • পাইয়োরিয়া: পাইয়োরিয়া হলো দাঁতের একটি রোগ। এ রোগে দাঁতের মাড়ি থেকে পুঁজ বা রক্ত নির্গত হয় ও মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার রাখা, ভিটামিন 'সি' যুক্ত খাবার খাওয়া এবং এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করার মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকার করা যায়।
  • দাঁতে ব্যাথা কি কারণে হয় এবং এর ফলে কি কি লক্ষণ প্রকাশ পায়: দাঁতের এনামেল ক্ষয়, পায়োরিয়া, বাতরোগে ভোগা, ভিটামিনের অভাব, ঠান্ডা লাগা, দাঁতের মাড়ি ফোলা, দাঁতে গর্ত হওয়া, বিভিন্ন প্রকার জীবানুর আক্রমণ, হরমোনের গোলমাল প্রভৃতি কারণে দাঁতে ব্যাথা হতে পারে। এর ফলে মুখে দুর্গন্ধ হয়, দাঁতের মাড়ি ফুলে উঠে, দাঁতের মূলে দূষিত ক্ষত হয় এবং প্রচন্ড ব্যথা চলতে থাকে।

চোখের রোগ

  • কেউ কেউ বর্ণান্ধ হয় কেন: প্রাথমিক বর্ণ হলো তিনটি যথাঃ নীল, সবুজ ও লাল। যারা এ রঙের পার্থক্য বুঝতে পারে না তাদেরকে বর্ণান্ধ বলা হয়। অপটিক নার্ভের ত্রুটির জন্য এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি বর্ণত্রয়ের যে কোনো একটি কিংবা দুটি কিংবা তিনটিতেই অন্ধ হতে পারে। লাল রঙ চিনতে না পারলে সে অন্ধত্বকে 'প্রোটানোপিয়া', সবুজ রঙ চিনতে না পারলে সেই অন্ধত্বকে 'ডিউটারানোপিয়া' এবং নীল রঙ চিনতে না পারলে সেই অন্ধত্বকে 'ট্রাইটোনোপিয়া' বলা হয়।
  • মানুষ অন্ধ হয় কেমন করে: জন্মগত অন্ধত্বের কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে এটা নিশ্চিত যে মাতৃগর্ভেই ভ্রুণ মায়ের কোন রোগ ভোগের জন্য অন্ধ হয়ে যায়। উদাহরণ স্বরুপ মা যদি গণোরিয়ার মতো মারাত্মক কোন যৌন ব্যাধিতে ভোগে তাহলে তা ভ্রুণের অন্ধত্ব আনতে পারে। গর্ভবতী মহিলা যদি সিফিলিসে ভোগে তাহলে ভ্রুণের চোখের ঠিকমতো বিকাশ হয় না। অক্ষিপটের অপটিক নার্ভের এবং মস্তিষ্কের দর্শনকেন্দ্রের রোগও জন্মগত অন্ধত্বের কারণ হতে পারে।
    জন্মের পর অন্ধত্ব প্রাপ্তির তিনটি কারণ আছে, যথা- ট্রাকোমা, ক্যাটারাক্ট বা ছানি এবং গ্লুকোমা। আরও কিছু কিছু অন্য রোগ আছে যা চোখের দৃষ্টিকে দূর্বল করে তোলে। এইসব রোগগুলো হল যক্ষা, বহুমূত্র, ডিপথেরিয়া, ম্যানিনজাইটিস ইত্যাদি।
  • চোখে ছানি পড়া বা ক্যাটারাক্ট: চোখে ছানি পড়া হল চক্ষু লেন্সের opacity বা ঘোলাটে হয়ে যাওয়া। এটি ডায়বেটিস, কোন আঘাত বা কোন সংক্রমণ থেকে হতে পারে। বয়স বৃদ্ধির সাথে ছানি পড়ার সম্ভাবনা বাড়তে থাকে। চোখে অস্ত্রোপচার করে রোগাক্রান্ত লেন্সকে কনটাক্ট লেন্স দ্বারা প্রতিস্থাপন করে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়। চিকিৎসা না করালে একসময় ফুলে গিয়ে চক্ষু গোলক নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
  • কোন বয়সে ক্যাটারাক্ট রোগ দেখা দেয়: বৃদ্ধ বয়সে। চোখের লেন্সের উপর এক প্রকার হাল্কা পর্দার উদ্ভব ঘটায় লেন্স ঝাপসা হয়ে যায়। অস্ত্রোপচার করে বিশেষ লেন্স ব্যবহার করলে অব্যহতি পাওয়া যায়।
  • মাইওপিক দৃষ্টিহীনতা: স্বল্প দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি দূরের জিনিস দেখতে পায় না, খুব কাছের জিনিস কোনরকমে দেখতে পায়। এই লক্ষণ দেখা দিলে আমরা তাকে দৃষ্টিহীনতা বলি। অক্ষিগোলকের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেলে এবং অভিযোজনে ত্রুটি ঘটলে এই রোগ দেখা দেয়।
  • গ্লুকোমা: চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ বেড়ে যাওয়ার ফলে সৃষ্ট ব্যাধি গ্লুকোমা নামে পরিচিত। এটি অন্যতম প্রধান এবং গুরুতর রোগ। অন্ধত্বেরও এটি একটি একটি প্রধান কারণ। কোনো বিশেষ ত্রুটির জন্য অক্ষিগোলক থেকে জলীয় পদার্থ নির্গত হতে পারে না। এটি গ্লুকোমা। এ রোগ হলে চোখের ভেতরে চাপ বৃদ্ধি পায় এবং চোখ অন্ধত্বপ্রাপ্ত হতে পারে।
    গ্লুকোমার সাধারণত চার কারণ:
    ১. জন্মগত বা শৈশবকালীন গ্লুকোমা- জন্ম থেকেই কিংবা জন্মের পরে এ ধরনের গ্লুকোমা হয়;
    ২. প্রাথমিক মুক্ত কোণ গ্লুকোমা'।
    ৩. প্রাথমিক 'বদ্ধ কোণ গ্লুকোমা' - এ ধরণের গ্লুকোমা হঠাৎ শুরু হয় ও চোখে অত্যন্ত ব্যাথা হয়;
    ৪. অন্যান্য কারণে সৃষ্ট গ্লুকোমা- চোখের নানা রকম রোগ যেমন- ছানি, প্রদাহ, আঘাত, শল্যচিকিৎসা ইত্যাদি কারণে গ্লুকোমা হতে পারে।
    গ্লুকোমা দুচোখে ঘটে এবং দৃষ্টি সীমা ক্রমেই সংকুচিত হতে থাকে। রোগী যখন বুঝতে পারে তখন চিকিৎসা করার মত অবস্থা থাকে না। তাই মানুষ অন্ধ হয়ে যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ সনাক্ত করে চিকিৎসা দিলে গ্লুকোমাজনিত অন্ধত্ব প্রতিরোধ করা যায়। চিকিৎসার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখা। ঔষধের সাহায্যে চোখের ভিতরের চাপ নিয়ন্ত্রণ করা না হলে শল্য চিকিৎসার দরকার হয়। বদ্ধকোণ গ্লুকোমার ক্ষেত্রে শল্যচিকিৎসার সাহায্যে অ্যাকুয়াস হিউমার বের হওয়ার জন্য একটি কৃত্রিম পথ তৈরী করে দেওয়া হয়। জন্মগত গ্লুকোমা শল্যচিকিৎসার সাহায্যে নিরাময়ের চেষ্টা করা হয়। কারণ এসব ক্ষেত্রে চোখের গঠনে কিছু জন্মগত ত্রুটি থাকে।

Anthrax / অ্যানথ্রাক্স

Anthrax/ অ্যানন্ত্রাক্স: অ্যানথ্রাক্স একটি গ্রিক শব্দ, যার অর্থ coal বা কয়লা। অ্যানথ্রাক্স আক্রান্তের শরীরে কালো রঙের ক্ষত সৃষ্টি হওয়া থেকেই সম্ভবত এ ধরনের নামকরণ হয়েছে। অ্যানথ্রাক্সকে বাংলায় তড়কা রোগ বলা হয়। অ্যানথ্রাক্স মূলত Bacillus anthracis নামক রড আকৃতির gram (+) এবং বায়বীয় স্থানে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া দ্বারা গবাদিপশুর (গরু, ছাগল এবং ভেড়া) একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ, যা অসাবধানতা ও অসচেতনতার কারণে মানুষের মধ্যে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে।

উৎস: Bacillus anthracis- এর স্পোর বা জীবাণুগুলোর মূল উৎস মাটি। মাটিতে এই ব্যাকটেরিয়ার স্পোরগুলো দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে এবং তা কয়েক দশক পর্যন্ত হতে পারে। ফলে কোনো গবাদিপশু যেমন-গরু ভেড়া ছাগল ইত্যাদি তৃণভোজী প্রাণী ঘাস খাওয়ার সময় সহজেই এ স্পোর দ্বারা আক্রান্ত হয়।

বিস্তার: আক্রান্ত গবাদিপশু জবাই, চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ ও মাংস কাটার সঙ্গে যারা জড়িত থাকে তারা খুব সহজেই এ রোগে আক্রান্ত হয়। শরীরে কোনো কাটাছেঁড়ার মাধ্যমে, শ্বাস- প্রশ্বাসের মাধ্যমেও মানুষের শরীরে অ্যানথ্রাক্স রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে। উল্লেখ্য, আক্রান্ত গবাদিপশুর সরাসরি সংস্পর্শে না থেকেও বিভিন্ন ধরনের মাংসাশী, বর্জ্যভূক প্রাণীর দ্বারাও এ রোগ সহজে মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে।

প্রতিরোধে করণীয়: আক্রান্ত মৃত গবাদি পশুকে যত দ্রুত সম্ভব মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে এবং মলমূত্র ও রক্ত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। যারা গবাদিপশু রক্ষনাবেক্ষণ, জবাই এবং মাংস কাটার সঙ্গে জড়িত, তাদের মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে। গবাদিপশু আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে নিকটস্থ পশু হাসপাতালে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি গ্রহণ করতে হবে। অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধের জন্য পশু ও মানুষের জন্য কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়েছে এবং ভ্যাকসিন দিলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই ভ্যাকসিন নিতে হবে।

সাপের কামড়

  • সাপের কামড়ের স্থান দেখে সাপ সম্বন্ধে কি ধারণা পাওয়া যায়: বিষধর সাপ কাটলে ক্ষতস্থানে বড় বড় দুটো দাতের দাগ থাকে। বিষহীন সাপে কাটলে অনেকগুলো ছোট দাতের বৃত্তাকার দাগ থাকে।
  • সাপের বিষে থাকে: জিংক সালফাইড (ZnS)
  • বিষধর সাপ কাটলে কি করা উচিত:
    • কামড়ের স্থান পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা।
    • উক্ত অঙ্গ যথাসম্ভব নিশ্চল রাখা কারণ বেশি নড়াচড়া করলে বিষ তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ে। কামড়ের স্থান হাতে বা পায়ে হলে কামড়ের স্থানের উপরে দড়ি/ কাপড় দিয়ে বাধা। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে বাধন যেন এত শক্ত না হয় যা পায়ে রক্ত সরবরাহে বাধা দেয়।
    • দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।
  • Antidote: ওষুধ ও কোনো পদার্থ যা বিষের বা রোগের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করে তাকে বলে antidote (বিষ বা রাগে প্রতিষেধক ওষুধ)।
  • শরীরের কোন স্থান পুড়ে গেলে কি করা উচিত: তৎক্ষণাৎ পরিষ্কার ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা।
  • শরীরের কোন স্থান ভেঙ্গে গেলে কি করা উচিত: ভাঙ্গা স্থান নড়াচড়া করলে ভাঙ্গা স্থানে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে থাকে। এ জন্য ভাঙ্গা স্থান যাতে নড়াচড়া করতে না পারে সেজন্য ভাঙ্গা স্থান কাঠ বা বাঁশ দিয়ে বেধে রোগীকে দ্রুত চিকিৎসকের নিকট নিয়ে যেতে হবে।

ওষুধ প্রতিরোধী ক্ষমতা বা Drug Resistance

কোনো রাসায়নিক পদার্থের ক্ষতিকর প্রভাবের প্রতি জীবদেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা হলো ওষুধ প্রতিরোধী ক্ষমতা। এ ধরনের প্রতিরোধ এক বা একাধিক রাসায়নিক পদার্থের প্রতি হতে পারে। বিভিন্ন ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে শরীরে ক্রমশ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জিত হতে থাকে। ওষুধ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিকাশের নানারকম কারণ রয়েছে। যেমন- কোষের ভেতরের ওষুধের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, ওষুধের বিপাকের হার বেড়ে যাওয়া, বিকল্প বিপাক ক্রিয়ার পথ সৃষ্টি হওয়া ইত্যাদি।

  • অ্যান্টিবায়োটিক: যে সকল ঔষধ ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস করে, তাদের অ্যান্টিবায়োটিক বলে। অ্যান্টিবায়োটিক এক ধরনের জীবজ পদার্থ যার সামান্য পরিমাণেও অন্য অণুজীবকে ধ্বংস করে বা বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করতে সমর্থ হয়। বিভিন্ন জীব থেকে এন্টিবায়োটিক পাওয়া যায়। তবে বেশির ভাগই পাওয়া যায় ব্যাকটেরিয়া স্ট্রেপটোমাইটিস ও মোল্ড জাতীয় ছত্রাক থেকে। এন্টিবায়োটিক উৎপাদনকারী অণুজীবের আবাসস্থল হচ্ছে মাটি।
  • Antibiotic (অ্যান্টিবায়োটিক): অণুজীব কর্তৃক উৎপাদিত এবং অন্যান্য অণুজীবের জন্য বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থকে Antibiotic (অ্যান্টিবায়োটিক) বলা হয়। জীবাণুদ্বারা প্রস্তুতকৃত, জীবাণুর বিরুদ্ধে দেহে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম এন্টিবডি হচ্ছে এন্টিবায়োটিক। বিশেষ ধরনের জীবাণু ধ্বংস বা বৃদ্ধি রহিতকরণের ঔষধ হলো এন্টিবায়োটিক। এটি অণুজীবদের (বিশেষত: ব্যাকটেরিয়া) বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলে ছত্রাক বা জীবাণু কর্তৃক রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এন্টিবায়োটিক তৈরি করা হয়। পেনিসিলিন একটি কার্যকর এন্টিবায়োটিক যা পেনিসিলিয়াম ছত্রাক হতে ১৯২৯ সালে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং কর্তৃক আবিষ্কৃত হয়। স্টেফাইলোকক্কাস এবং স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে পেনিসিলিন খুবই কার্যকর। পেনিসিলিয়াম , নোটেটাম, পেনেসিলিন, নিওমাইসিন, ইরাইথ্রোমাইসিন, ক্লোরামফেনিকল, টেরামাইসিন , অ্যাজিথ্রোমাইসিন ইত্যাদি হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক-এর উদাহরণ।
  • Antiseptic (অ্যান্টিসেপটিক): মানুষ কিংবা অন্য প্রাণীর শরীরে সংক্রামক জীবাণু ধ্বংস ও জীবাণুর বৃদ্ধি রোধ করার জন্য যে ওষুধ ব্যবহার করা হয় তা অ্যান্টিসেপ্টিক নামে পরিচিত। অ্যান্টিসেপটিক দেহকে সম্পূর্নরূপে জীবানুমুক্ত করতে পারে না কিন্তু দেহে জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা বহুলাংশে কমিয়ে দেয়। ক্লোরোহেক্সিডিন, ৬২.৫-৭০% ইথানল (ইথাইল অ্যালকোহল) দ্রবণ, ৩% হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড দ্রবণ ইত্যাদি হলো অ্যান্টিসেপটিকের উদাহরণ। কোথাও কেটে গেলে বা পুড়ে গেলে ইনফেকশন প্রতিরোধ করার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা হিসাবে এন্টিসেপটিক ব্যবহার করা হয়। যেমন: বিটা আয়োডিন, KMnO4.
  • অ্যান্টিবায়োটিক কে আবিষ্কার করেন: অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেন আলোকজেন্ডার ফ্লেমিং। তিনি ১৯২৯ সালে Penicillium নামক ছত্রাক হতে Penicillin অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেন। তাঁর এই আবিষ্কারের ফলে লক্ষ লক্ষ লোক ম্যালেরিয়ায় নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান। বিশ্ববাসী এজন্য আজও তাঁকে শ্রদ্ধাভাবে স্মরণ করে। তিনি যুক্তরাজ্যের অধিবাসী ছিলেন।
  • ক্লোক্সাসিলিন: Penicillin গ্রুপভূক্ত অ্যান্টিবায়োটিক।
  • এন্টিবায়োটিক কিভাবে কাজ করে: জীবাণু ধ্বংস করে।
  • Antiviral drug : যে সকল ঔষধ ভাইরাস ধ্বংস করে, তাদের অ্যান্টি-ভাইরাস ঔষধ বলে।
  • অ্যাসাইক্লোরোভির : একটি অ্যান্টি-ভাইরাস ঔষধ। হার্পিস, জলবসন্ত রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
  • 'সিঙ্কোনা' গাছ থেকে কোন ঔষধ তৈরি করা হয় : কুইনাইন।
  • ভায়াগ্রা : ভায়াগ্রা হল যৌন উত্তেজক ঔষধ। এর প্রকৃত নাম সিলডেনাফিল। মার্কিন কোম্পানী ফাইজার এর প্রস্তুতকারক। লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যায় এ ঔষধ ব্যবহৃত হয়।
  • আকুপাংচার হলো : চীনের প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি
  • শরীরের tumor ও cancer-এর চিকিৎসা এবং বৈজ্ঞানিক অধ্যয়ন ও অনুশীলন হলো Oncology
  • Cardiology হলো হৃদবিজ্ঞান, Ophthalmology হলো চক্ষুবিজ্ঞান আর Neurology হলো স্নায়ুবিজ্ঞান।
নবীনতর পূর্বতন