মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস | History of the Mughal Empire

জহিরুদ্দিন মুহম্মদ বাবর ১৫২৬ সালে ইব্রাহীম লোদীকে প্রথম পানিপথের যুদ্ধে পরাজিত করে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। মুঘল সম্রাটরা ছিলেন মধ্য এশিয়ার তুর্কো-মঙ্গোল বংশোদ্ভূত। তারা চাঘতাই খান ও তৈমুরের মাধ্যমে চেঙ্গিস খানের বংশধর। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহ অবদমিত হলে যোগদানকারী মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহদুর শাহকে রেংগুনে পাঠানো হয়। এভাবে মুঘল সাম্রাজ্য শেষ হয়।

পানিপথ : পানিপথ উত্তর-পশ্চিম ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের একটি শহর। এটি দিল্লি থেকে ৯০ কিমি, উত্তরে যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত। এখানে ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে পানিপথের যুদ্ধ হিসেবে খ্যাত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

পানিপথের যুদ্ধসমূহ :

  • পানিপথের প্রথম যুদ্ধ : ↓
    প্রতিপক্ষ : বাবর এবং ইব্রাহিম লোদী ↓
    সময়কাল : ১২ এপ্রিল, ১৫২৬ ↓
    ফলাফল : ইব্রাহীম লোদী পরাজিত ও নিহত হন। দিল্লির সালতানাতের পতন হয় এবং উপমহাদেশে মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপিত হয়। বাবুর এই যুদ্ধে কামান ব্যবহার করেন। এটি ভারতের ইতিহাসে কোনো যুদ্ধে প্রথম কামান ব্যবহার।
  • পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ : ↓
    প্রতিপক্ষ : আকবর সেনাপতি বৈরাম খান এবং আফগান নেতা হিমু ↓
    সময়কাল : ১৫৫৬ সাল ↓
    ফলাফল : হিমু পরাজিত ও নিহত হন। এ যুদ্ধের ফলে আকবর দিল্লি অধিকার করেন। এ যুদ্ধে জয়লাভের ফলে ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘল আফগান সংঘর্ষের অবসান ঘটে।
  • পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ : ↓
    প্রতিপক্ষ : আহমদ শাহ আবদালি মারাঠা ↓
    সময়কাল : ১৭৬১ সাল ↓
    ফলাফল : আহমদ শাহ আবদালি মারাঠাদিগকে পরাজিত করেন।

মুঘল সাম্রাজ্যের বংশ তালিকা

  • সম্রাট জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর ( মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা) (১৫২৬ – ১৫৩০ খ্রি.)
  • সম্রাট হুমায়ুন (১৫৩০ – ১৫৪০ খ্রি.)
  • সম্রাট আকবর (১৫৫৬ – ১৬০৫ খ্রি.)
  • সম্রাট জাহাঙ্গীর (১৬০৫ – ১৬২৭ খ্রি.)
  • সম্রাট শাহজাহান (১৬২৮ – ১৬৫৮ খ্রি.)
  • সম্রাট আওরঙ্গজেব (১৬৫৮ – ১৭০৭ খ্রি.)
  • সম্রাট বাহাদুর শাহ (১৭০৮ – ১৭১২ খ্রি.)
  • সম্রাট জাহান্দার শাহ (১৭১২ – ১৭১৩ খ্রি.)
  • সম্রাট ফাররুকশিয়ার (১৭১৩ – ১৭১৯ খ্রি.)
  • সম্রাট রাফি-উদ-দারজাত (২৮ ফেব্রুয়ারি – ৬ জুন ১৭১৯ খ্রি.)
  • সম্রাট দ্বিতীয় শাহজাহান (৬ জুন ১৭১৯ – ১৯ সেপ্টেম্বর ১৭১৯ খ্রি.)
  • সম্রাট মোহাম্মদ শাহ (১৭১৯ – ১৭৪৮ খ্রি.)
  • সম্রাট আহমদ শাহ বাহাদুর (১৭৪৮ – ১৭৫৪ খ্রি.)
  • সম্রাট দ্বিতীয় আলমগীর (১৭৫৪ – ১৭৫৯ খ্রি.)
  • সম্রাট তৃতীয় শাহজাহান ( ১০ ডিসেম্বর ১৭৫৯ – ১০ অক্টোবর ১৭৬০ খ্রি.)
  • সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম ( ১৭৬০ – ১৮০৬ খ্রি.)
  • সম্রাট মোহাম্মদ শাহ বাহাদুর ( ৩১ জুলাই ১৭৮৮ – ২ অক্টোবর ১৭৮৮ খ্রি.)
  • সম্রাট দ্বিতীয় আকবর শাহ ( ১৮০৬ – ১৮৩৭ খ্রি.)
  • সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ (১৮৩৭ – ১৮৫৭ খ্রি.)
মুঘল সম্রাটদের জন্মের সময় নাম
পরিচিত নাম জন্মের সময় নাম
সম্রাট জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর জহিরউদ্দিন মোহাম্মদ
সম্রাট হুমায়ুন নাসির উদ্দিন মুহাম্মদ হুমায়ুন
সম্রাট আকবর জালাল-উদ্দিন-মোহাম্মদ
সম্রাট জাহাঙ্গীর নুরুদ্দিন মোহাম্মদ সেলিম
সম্রাট শাহজাহান শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ খুররাম
সম্রাট আওরঙ্গজেব মহিউদ্দিন মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব
সম্রাট বাহাদুর শাহ কুতুব উদ্দিন মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম শাহ আলম
সম্রাট জাহান্দার শাহ মাজ উদ্দিন জাহান্দার শাহ বাহাদুর
সম্রাট ফাররুকশিয়ার ফর‌রুখসিয়ার
সম্রাট রাফি-উদ-দারজাত রাফি উল-দারজাত
সম্রাট দ্বিতীয় শাহজাহান রাফি উদ-দৌলত
সম্রাট মোহাম্মদ শাহ রশান আক্তার বাহাদুর
সম্রাট আহমদ শাহ বাহাদুর আহমেদ শাহ বাহাদুর
সম্রাট দ্বিতীয় আলমগীর আজিজ-উদ-দীন
সম্রাট তৃতীয় শাহজাহান মহি উল মিল্লাত
সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম আলী গহর
সম্রাট মোহাম্মদ শাহ বাহাদুর বিদার বক্ ত
সম্রাট দ্বিতীয় আকবর শাহ মির্জা আকবর
সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ আবু জাফর সেরাজ উদ্দিন মোহাম্মদ বাহাদুর শাহ জাফর

জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর (১৫২৬-১৫৩০ )

১৪৮৩ সালে বাবর মধ্য এশিয়ার বর্তমান রুশ-তুর্কিস্তানের অন্তর্গত ফারগানায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পিতার দিক হতে তৈমুর লঙ এবং মায়ের দিক থেকে চেঙ্গিস খানের বংশধর ছিলেন। তিনি ছিলেন ফারগানার যুবরাজ। পিতার মৃত্যু হলে মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি পিতৃসিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। জ্ঞাতিশত্রুদের আক্রমণে সিংহাসনচ্যুত ও ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে তিনি পূর্বদিকে গমন করেন এবং ১৫০৪ সালে কাবুল দখল করে নিজেকে বাদশাহ ঘোষণা করেন । দিল্লীর শাসনকর্তা ইব্রাহীম লোদীর জ্ঞাতিশত্রু পাঞ্জাবের শাসনকর্তা দৌলত খান লোদী বাবরকে ভারতবর্ষ আক্রমনের আহবান জানালে বাবর বিনা বাধায় ১৫২৫ সালে পাঞ্জাব দখল করেন। ১৫২৬ সালের ২১ এপ্রিল বাবর দিল্লীর অদূরে পানিপথের প্রান্তরে ইব্রাহীম লোদীর মুখোমুখি হন। এ যুদ্ধে বাবর ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম কামানের ব্যবহার করেন । ইব্রাহীম লোদী পরাজিত ও নিহত হলে বাবর দিল্লী অধিকার করেন এবং নিজেকে সমগ্র হিন্দুস্তানের বাদশাহ হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা । ১৫২৭ সালে রাজপুত রানা সংগ্রাম সিংহকে পরাজিত করে দিল্লীতে মুঘল সম্রাজ্যের ভিত প্রতিষ্ঠা করেন। ১৫৩০ সালে বাবর মারা যান। তিনি ' তুযুক-ই-বাবর ' নামে আত্মজীবনী রচনা করেছিলেন যা ফরাসি ভাষায় রচিত।

নাসির উদ্দিন মুহম্মদ হুমায়ূন (১৫৩০-১৫৪০)

বাবুরের মুত্যুর পর তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র হুমায়ূন দিল্লীর সিংহাসনে আরোহন করেন। ১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট হুমায়ূন বাংলা প্রবেশ করেন এবং গৌড় অধিকার করেন। তিনি গৌড় নগরের অপরূপ সৌন্দর্য এবং এর অপরূপ জলবায়ুর উৎকর্ষ দেখে মুগ্ধ হন। তিনি গৌড় নগরীর নাম পরিবর্তন করে 'জান্নাতাবাদ'/ জান্নাতুল সুবাহ রাখেন। তিনি বাংলায় আটমাস অবস্থান করে দিল্লীর দিকে যাত্রা করেন। কিন্তু পথিমধ্যে বক্সারের নিকটবর্তী চৌসা নামক স্থানে শেরশাহ হুমায়ূনকে অতর্কিত আক্রমণ করেন। চৌসারের যুদ্ধে (১৫৩৯ সাল) পরাজিত হয়ে হুমায়ূন কোনক্রমে প্রাণ নিয়ে দিল্লী পৌঁছেন। পরের বছর (১৫৪০ সাল) শের শাহের বিরুদ্ধে আবার অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু কনৌজের নিকট বিলগ্রামের যুদ্ধে তিনি আবার পরাজিত হন। বিজয়ী শেরশাহ দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করেন। শেরশাহ ভারতে পাঠান শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। পারস্য সম্রাটের সহায়তায় হুমায়ূন ১৫৫৫ সালে পুনরায় দিল্লী দখল করেন। ১৫৫৬ সালে দিল্লীর অদূরে তাঁর নির্মিত দীন পানাহ দূর্গের পাঠাগারের সিড়ি থেকে পড়ে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।

মসলিন : মসলিন তুলার আশ থেকে প্রস্তুত করা এক ধরনের সূক্ষ্ম কাপড় বিশেষ। বাংলার ইতিহাসে মসলিন বলতে তৎকালীন ঢাকা এবং ঐ পাশ্ববর্তী এলাকায় উৎপাদিত অতি সূক্ষ্ম কাপড়কে বোঝানো হতো। এটি "ঢাকাই মসলিন" নামে বিশ্বব্যাপী খ্যাত ছিল। মসলিন শব্দের উৎপত্তির উৎস অস্পষ্ট হলেও নামটি যে ইউরোপীয়দের দেয়া সে সম্পর্কে কোনো সন্দেহ নেই। মসলিন মুঘল সম্রাটদের বিলাসের বস্তু ছিল।

শেরশাহ (শুর শাসন) - (১৫৪০-১৫৫৫)

শেরশাহ (১৫৪০-১৫৪৫) : শের খান প্রথম জীবনে বিহারের শাসনকর্তা সুলতান মুহম্মদের অধীনে চাকরি গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি মুঘল সম্রাট বাবরের অধীনে চাকরি গ্রহণ করেন এবং বাবরের বিরাগভাজন হয়ে পলায়ন করে পুনরায় সুলতান মুহম্মদের অধীনে চাকরি গ্রহণ করেন। সুলতান মুহম্মদের মৃত্যুর পর তিনি বিহারের প্রকৃত শাসনকর্তা হয়ে বসেন। ১৫৩৮ সালে তিনি বাংলার সুলতান গিয়াসউদ্দিন মাহমুদকে পরাজিত করে বাংলা দখল করেন। ১৫৩৯ সালে চৌসারের যুদ্ধে হুমায়ূনকে পরাজিত করে শেরখান 'শেরশাহ' উপাধি নেন। তিনি নিজেকে বিহারের স্বাধীন সুলতান হিসাবে ঘোষণা করেন। ১৫৪০ সালে তিনি বাংলা দখল করেন। একই বছর তিনি হুমায়ূনকে পরাজিত করে দিল্লী অধিকার করে উপমহাদেশে আফগান সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তার প্রকৃত নাম ফরিদ খান । ১৫৪৫ সালে বারুদ বিস্ফোরণে তিনি নিহত হন।

  • গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড: তিনি ' সড়ক ই আজম ' বাংলাদেশের সোনারগাঁ থেকে লাহোর পর্যন্ত ৪৮৩০ কি.মি. (৩০০০ মাইল) দীর্ঘ একটি মহাসড়ক নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে ইংরেজগণ এ রাস্তা সংস্কার করে নাম দেয় 'গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড '।
  • ডাক ব্যবস্থার উন্নয়ন: তিনি ডাক ব্যবস্থার উন্নতির জন্য ঘোড়ার মাধ্যমে ডাক আনা নেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
  • কবুলিয়ত ও পাট্টা: শেরশাহ কবুলিয়ত (চুক্তি দলিল) ও পাট্টার (ভূমি স্বত্বেও দলিল) প্রচলন করেন। কৃষকগণ তাদের অধিকার ও দায়িত্ব বর্ণনা করে সরকারকে কবুলিয়ত নামে দলিল সম্পাদন করে দিত আর সরকার পক্ষ থেকে জমির উপর জনগণের স্বত্ব স্বীকার করে নিয়ে পাট্টা দেওয়া হত।
  • দাম মুদ্রাঃ শেরশাহ মুদ্রাব্যবস্থার সংস্কার করেন। তিনি 'দাম' নামক রূপার মুদ্রার প্রচলন করেন।

মুঘল সাম্রাজ্য (দ্বিতীয় পর্যায়)

সম্রাট জালাল উদ্দিন আকবর (১৫৫৬-১৬০৫ সাল)

১৫৫৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মাত্র ১৩ বছর বয়সে আকবর দিল্লীর সিংহাসনে আরোহন করেন। হুমায়ূনের মৃত্যুর পর বৈরাম খান আকবরের রাজপ্রতিনিধি নিযুক্ত হন। এজন্য আকবর অনুরাগবশত তাকে Lord Father বা খান ই বাবা বলে ডাকতেন। হুমায়ূনের মৃত্যুর পর হিমু দিল্লীর মুঘল শাসনকর্তাকে পরাজিত করে দিল্লী ও আগ্রা অধিকার করেন এবং স্বাধীনভাবে রাজত্ব শুরু করেন।

  • আকবরের উদার নীতি: অমুসলমানদের উপর ধার্য সামরিক করকে জিজিয়া কর বলে। সম্রাট আকবর রাজপুত ও হিন্দুদের বন্ধুত্ব অর্জন করার জন্য তীর্থ ও জিজিয়া কর রহিত করেন। তিনি রাজপুত কন্যা যোধাবাঈকে বিবাহ করেন। তিনি রাজপুতদের বিভিন্ন উচ্চপদে অধিষ্ঠিত করেন।
  • আকবরের ধর্মমত: ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে সকল ধর্মের সার সম্বলিত 'দীন-ই- ইলাহী' নামক নতুন একেশ্বরবাদী ধর্মমত প্রবর্তন করেন।
  • আকবরের চরিত্র ও কৃতিত্ব: সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে মুঘল সাম্রাজ্য সর্বাধিক বিস্তার লাভ করে। আকবর ১৫৭৬ সালে বাংলা জয় করেন। সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করার জন্য সম্রাট আকবর সাম্রাজ্যকে ১৫টি প্রদেশে ভাগ করেন। রাজকর্মচারীদের সুবিন্যস্ত করার জন্য তিনি মনসবদারী প্রথা চালু করেন। সম্রাটের রাজসভার সদস্যদের মধ্য আবুল ফজল, ফৈজী, টোডরমল, বীরবল, মানসিংহ প্রভৃতি ব্যক্তিবর্গের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রাজস্ব মন্ত্রী টোডরমল রাজস্ব ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। আবুল ফজল রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ 'আইন-ই-আকবরি'। আকবরের রাজসভার গায়ক ছিলেন তানসেন। তানসেনকে 'বুলবুল-ই-হিন্দ' বলা হয়। আকবরের রাজসভার বিখ্যাত কৌতুককার ছিলেন বীরবল। তার আমলে নির্মিত হয় ফতেহপুর সিকরি।
  • আকবরের সময় সমগ্র বঙ্গদেশ - 'সুবহ-ই-বাঙ্গালাহ' নামে পরিচিত ছিল।
  • 'বুলান্দ দরওয়াজা' - এর নির্মাতা সম্রাট আকবর।
  • অমৃতসর স্বর্ণমন্দির - এর নির্মাতা সম্রাট আকবর।
  • আকবরের সমাধি - সেকেন্দ্রায়।
  • বাংলাদেশে বার ভূঁইয়াদের অভ্যুত্থান ঘটে - সম্রাট আকবরের সময়।

সেলিম নূর উদ্দিন মুহম্মদ জাহাঙ্গীর (১৬০৫-১৬২৭ সাল)

সম্রাট জাহাঙ্গীরের সাথে নূরজাহানের বিবাহ মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তিনি অপূর্ব রূপবতী ও গুণবর্তী মহিলা ছিলেন। নূরজাহানের বাল্য নাম ছিল মেহেরুন নেছা। সম্রাট আকবর বাংলা জয় করলেও সারা বাংলায় মুঘল শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হয়নি। সম্রাট জাহাঙ্গীর বাংলায় মুঘল শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। সম্রাট জাহাঙ্গীরের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ 'তুজুক-ই-জাহাঙ্গীর'

  • জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে ভারতে ইংরেজদের আগমন ঘটে।
  • নিজের নামে মুদ্রা প্রচলন করেন।
  • তিনি আগ্রার দূর্গ নির্মান করেন।
  • বাংলা দখল করার জন্য সুবাদার ইসলাম খান চিশতীকে (বাংলার প্রথম মুঘল সুবাদার) তিনি বাংলায় প্রেরন করেন ।

শাহজাহান ওরফে খুররম (১৬২৮-১৬৫৮ সাল)

তিনি মুঘল বংশের পঞ্চম শাসক। মমতাজ মহল ছিলেন সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী। শাহজাহান তার স্ত্রীকে প্রাণাধিক ভালবাসতেন। সম্রাজ্ঞী ১৬৩১ সালে চতুর্দশ সন্তান জন্মদানকালে শেষ নিঃশেষ ত্যাগ করেন। সম্রাট তার প্রিয়তমার মৃত্যুতে গভীর আঘাত পান। তিনি আগ্রার যমুনা নদীর তীরে পত্নীপ্রেমের অক্ষয়কীর্তি 'তাজমহল ' নির্মাণ করেন। তাজমহলের স্থপতি ওস্তাদ ঈশা খাঁ। বলদেব দাস ছিলেন তাজমহল নির্মাণকার্যে নিযুক্ত বাঙালি স্থপতি। মণি মুক্তা খচিত স্বর্ণমণ্ডিত ময়ূর সিংহাসন সম্রাট শাহজাহানের অমর সৃষ্টি। সম্রাট শাজাহানের মুকুটে বিশ্ববিশ্রুত অপূর্ব 'কোহিনুর' হীরা শোভা বর্ধন করত। ১৭৩৯ সালে পারস্যের সম্রাট নাদির শাহ দুর্বল মুঘল সম্রাট মুহাম্মদ শাহ এর আমলে এ হীরা পারস্যে নিয়ে যায়। এটি বর্তমানে ইংল্যান্ডের রানীর রাজপ্রাসাদে শোভা পাচ্ছে । সম্রাট শাহজাহান দিল্লীতে লাল কেল্লা, জাম-ই-মসজিদ, দিওয়ান-ই- আম, দিওয়ান-ই-খাস, আগ্রায় মতি মসজিদ এবং লাহোরে সালিমার উদ্যান নির্মাণ করেন। এজন্য তাঁকে Prince of Builders বলা হয়। এ সময় সম্রাটের অনুমতিক্রমে ইংরেজরা বাংলায় 'পিপিলাই' নামক স্থানে প্রথম সরাসরি বাণিজ্য কুঠি বা বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপন করে। সম্রাট শাহজাহানের চার পুত্র হল দারা, সুজা, আওরঙ্গজেব ও মুরাদ।

আওরঙ্গজেব (১৬৫৮-১৭০৭ সাল)

শাহজাহানের স্ত্রী মমতাজ মহলের গর্ভে চারপুত্র ও দুইকন্যা জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পুত্রদের নাম দারা, সুজা, আওরঙ্গজেব ও মুরাদ। কন্যাদের নাম ছিল জাহান আরা ও রওশন আরা। ভ্রাতৃযুদ্ধে জাহান আরা দারার পক্ষ এবং রওশন আরা আওরঙ্গজেবের পক্ষ সমর্থন করে। যুদ্ধে অপর ভাইদের পরাজিত করে আওরঙ্গজেব ক্ষমতা দখল করেন। সম্রাট শাজাহান তাঁর পুত্র আওরঙ্গজেবকে যোগ্যতার স্বীকৃতিস্বরূপ 'আলমগীর' নামক তরবারী প্রদান করেন। সম্রাট আওরঙ্গজেব অতিশয় ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছিলেন। এজন্য তাঁকে 'জিন্দাপীর' বলা হয়। তিনি জিজিয়া কর পুনঃস্থাপন করেন। তাঁর সময়ে সুবাদার শায়েস্তা খান বাংলা থেকে পর্তুগীজদের বিতাড়িত করেন।

মুহম্মদ শাহ

দুর্বল ও অকর্মণ্য মুঘল সম্রাট মুহম্মদ শাহ এর আমলে (১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে) পারস্যের নাদির শাহ ভারত আক্রমণ করেন। নাদিরশাহ ভারত হতে মহামূল্যবান কোহিনূর হীরা, ময়ূর সিংহাসন এবং প্রচুর ধনরত্ন পারস্যে নিয়ে যান। কোহিনূর হীরা বর্তমানে ইংল্যান্ডের রাণীর রাজপ্রাসাদে শোভা পাচ্ছে। ময়ূর সিংহাসন বর্তমানে আছে ইরানে।

আহমদ শাহ আবদালীর ভারত আক্রমণ : আহমদ শাহ আবদালি নাদির শাহের সেনাপতি ছিলেন। তিনি নাদিরশাহের মৃত্যুর পর আফগানিস্তানের অধিপতি হন । তিনি মুহম্মদ শাহের রাজত্বকালে ভারত আক্রমণ করেন কিন্তু পরাজিত হন। এ পরাজয়ের শোধ নেওয়ার জন্য তিনি আরও তিনবার ভারত আক্রমণ করেন।

দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ (১৮৩৭-১৮৫৭)

শেষ মুঘল সম্রাট ছিলেন দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ। সিপাহী বিদ্রোহের পর ১৮৫৮ সালে তাঁকে রেঙ্গুনে (বর্তমান ইয়াঙ্গুনে) নির্বাসন দেওয়া হয়। ১৮৬২ সালে তিনি রেঙ্গুনে নির্বাসিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। রেঙ্গুনেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।

নবীনতর পূর্বতন