সংবেদী অঙ্গ | Sensory Organs

সংবেদী অঙ্গ হল সেই সব অঙ্গ যেগুলো দ্বারা আমরা বাইরের জগৎ অনুভব করতে পারি। অর্থাৎ যে অঙ্গের সাহায্যে আমরা বাহিরের জগৎকে অনুভব করতে পারি বা বুঝতে পারি , তাকে সংবেদী অঙ্গ বলে। চোখ, কান, নাক, জিহ্বা ও ত্বক এ পাঁচটি হল মানুষের সংবেদী অঙ্গ।

 সংবেদী অঙ্গ

চোখ : চোখের আলোক সংবেদী অংশের নাম রেটিনা । চক্ষু লেন্সের পেছনে অবস্থিত অক্ষিগালেকের ভিতরের পৃষ্ঠের গোলাপি রঙের ঈষৎ স্বচ্ছ আলোকসংবেদী আবরণকে রেটিনা বলে। এটি নার্ভতন্তু ও রক্তবাহী নালী দ্বারা গঠিত এক ধরনের আলোকগ্রাহী পর্দা। চোখে আলো পতিত হলে আলো নার্ভতন্তুতে সাড়া জাগায় এবং দৃষ্টিবোধের সৃষ্টি হয়। রেটিনা আলোক শক্তিকে তড়িৎ সংকেতে পরিণত করে । এটি রডস (Rods) ও কোনস (Cones) নামক কতগুলো স্নায়ুকোষ দ্বারা গঠিত। এখানে বস্তুর উল্টো প্রতিবিম্ব তৈরি হয়। রড কোষগুলো লম্বাটে ও রোডপসিন নামক প্রোটিনযুক্ত এবং অনুজ্জ্বল আলোতে দর্শনের জন্য বিশেষ উপযোগী। কোণ কোষগুলো কোণাকৃতি ও আয়োডপসিন নামক প্রোটিনযুক্ত । এই কোণ কোষগুলো উজ্জ্বল আলোতে এবং রঙিন বস্তু দর্শনের জন্য উপযোগী। যে অস্বচ্ছ পর্দার সাহায্যে চোখের মনি বা তারাতে আলো প্রবেশ করে তাই আইরিস। এটি চোখে আলো প্রবেশের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। মানবচোখে রয়েছে উভোত্তল লেন্স। চোখের অশ্রুর উৎস ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি। চোখের অশ্রুতে লাইসোজাইম এনজাইম থাকে । চোখের রঙ নিয়ন্ত্রণকারী পদার্থ হলো মেলানিন। এ মেলানিন প্রস্তুতকারী এজেন্ট হলো P প্রোটিন যা OCA2 ও HERC2 নামক পাশাপাশি অবস্থিত জিন তৈরি করে। এ জিনদ্বয় আবার ক্রোমোজোম-১৫ একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে অবস্থিত। অর্থাৎ চোখের রঙ পরোক্ষভাবে DNA দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। স্ক্লেরা ও রেটিনার মধ্যবর্তী করয়েড নামক স্তরটি মেলানিন রঞ্জকে রঞ্জিত।

কান : কানের প্রধান কাজ হল শ্রবণে অংশ নেয়া। এছাড়া শরীরের ভারসাম্য রক্ষায় কান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কানে শব্দতরঙ্গ প্রবেশ করলে কর্ণপর্দা অংশ কেঁপে ওঠে। মানুষের কানের প্রধান তিনটি অংশ হল- বহিঃকর্ণ , মধ্যকর্ণ ও অন্তঃকর্ণ । বহিঃকর্ণ কর্ণছত্র , কর্ণকুহর ও কর্ণপটহ দ্বারা গঠিত। এদের কাজ হল শব্দতরঙ্গকে বাইরের থেকে মধ্যকর্ণে প্রবাহিত করা । মধ্যকর্ণ মেলিয়াস, ইনকাস ও স্টেপিস নামে তিনটি অস্থি দ্বারা গঠিত। এদের কাজ হল শব্দতরঙ্গকে কর্ণপটহ থেকে অন্তকর্ণে প্রবাহিত করা। স্টেপিস মানবদেহের সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্রতম অস্থি বা অঙ্গ । স্টেপিস ত্রিকোণাকার অস্থি।

নাক : মানুষের নাক হলো মুখের সবচেয়ে প্রসারিত অংশ। এটি শ্বাসযন্ত্র ও ঘ্রাণতন্ত্রের প্রধান অঙ্গ। নাকের হাড়, নাকের কার্টিলেজ এবং নাকের সেপ্টাম দ্বারা নাকের আকৃতি নির্ধারিত হয়। নাকের সেপ্টাম নাকের ছিদ্রগুলোকে পৃথক করে এবং নাকের গহ্বরকে দুই ভাগে বিভক্ত করে। নাকের প্রধান কাজ হচ্ছে শ্বাসক্রিয়া সম্পন্ন করা। নাকের মধ্যে নাকের মিউকাস দ্বারা বাতাস ফিল্টার হয় এবং এর ফলে নাকে প্রবেশকৃত অপ্রয়োজনীয় কণাগুলিকে ফুসফুসে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। হাঁচির মাধ্যমে নাক থেকে অবাঞ্ছিত কণাগুলি বের হয়ে যায়। অ্যারোসল হাঁচি প্রক্রিয়াকে বাঁধা দিতে পারে। নাকের আরেকটি প্রধান কাজ হল ঘ্রাণ এবং গন্ধের অনুভূতি। উপরের নাক গহ্বরের এপিথেলিয়ামে ঘ্রাণের জন্য সংবেদী বিশেষ ঘ্রাণকোষ রয়েছে।

জিহ্বা : জিহ্বা হলো অধিকাংশ মেরুদণ্ডী প্রাণীর মুখের একটি পেশীবহুল অঙ্গ; যা খাদ্য চিবুতে এবং তা গিলে ফেলতে সহায়তা করে। মানুষের জিহ্বায় চার ধরণের টেস্টবাড থাকে। এগুলো হল টক, তিতা, মিষ্টি এবং লবণাক্ত। খাদ্যদ্রব্যের রাসায়নিক পদার্থগুলো লালামিশ্রিত হয়ে জিহ্বার টেস্টবাডের সংস্পর্শে আসার পর আমরা কেবল খাদ্যের স্বাদ বুঝতে পারি। জিহ্বা প্রাকৃতিক উপায়ে দাঁত পরিষ্কারের কাজে ব্যবহৃত হয়। জিহ্বার প্রধান কাজ হলো, মানুষের ক্ষেত্রে কথা বলায় সাহায্য করা এবং অন্যান্য প্রাণীদের ক্ষেত্রে কণ্ঠস্বর সক্রিয় করা।

ত্বক : মানবদেহের বৃহত্তম অঙ্গ হল ত্বক। প্রকৃতপক্ষে এটি নরম আবরণ এবং দেহকে আবৃত করে রাখে। এটি প্রাণিদেহের ভিতরের অংশগুলোকে রক্ষা করে। স্তন্যপায়ীদের ত্বকে লোম বা ছোট চুল থাকে। মানুষের গায়ের রঙ ত্বকের মেলানিনের উপর নির্ভর করে। ত্বকে মেলানিন বেশি থাকলে গায়ের রঙ কালো হয় এবং ত্বকে মেলানিন কম থাকলে গায়ের রঙ ফর্সা হয়। মানুষের চামড়ার রং নিয়ন্ত্রণ করে ডিএনএ । যা বংশপরস্পরায় ত্বকের রং বহন করে ।

  • রাতের বেলা বিড়াল ও কুকুরের চোখ জ্বলজ্বল করে কেন: কুকুর ও বিড়ালের চোখে টেপেটাম নামক রঞ্জক কোষ থাকে।
  • কানের কাজ : শ্রবণ ও দেহের ভারসাম্য রক্ষা করা।
  • কোন প্রাণী জিহবার সাহায্যে শোনে : সাপ।
  • কোন প্রাণী গায়ের রঙ পরিবর্তন করে আত্মরক্ষা করতে পারে: গিরগিটি।
  • মানুষের চোখ , কান , নাক , জিহ্বা এবং ত্বক এই পাঁচটি অঙ্গকে পঞ্চ ইন্দ্রিয় বলা হয় । কারণ এগুলো দ্বারা আমরা কোন কিছু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারি ।
  • আলট্রভায়োলেট রশ্মি চর্ম ক্যান্সার সৃষ্টি করে ।
  • পেঁচা দিনে দেখতে পায় না কিন্তু রাতে দেখতে পায় কারণ পেঁচার চোখের রেটিনাতে রডস এর সংখ্যা বেশি এবং কোনস এর সংখ্যা কম ।
নবীনতর পূর্বতন