খাদ্য ও পুষ্টি | Food and nutrition

ইঞ্জিন চালানোর জন্য কয়লা, ডিজেল, পেট্রোল, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি উপাদান ব্যবহার করা হয়। বলতে পারো, এ জ্বালানিগুলোর কাজ কী? এ জ্বালানিগুলো পুড়ে শক্তি উৎপন্ন করে। আর এ শক্তি যানবাহনগুলোকে গতি দান করে। যানবাহনগুলো চলতে থাকে। মানবদেহকে একটি ইঞ্জিনের সাথে তুলনা করা হয়। অন্যান্য ইঞ্জিনের মতো আমাদের দেহ নামক ইঞ্জিনটি চালানোর জন্য চাই শক্তি। মানবদেহ এ শক্তি কোথা থেকে পায়? খাদ্য আমাদের দেহের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে ও শক্তি যোগায়। খাদ্যের মূল উৎস সজীব দেহ। খাদ্য মূলত বিভিন্ন যৌগের সমন্বয়ে গঠিত। আমরা উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে মূলত খাদ্য পাই। খাদ্য বলতে সেই জৈব উপাদানকে বোঝায় যা জীবের দেহ গঠন ও শক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। খাদ্যের মধ্যে যে সকল উপাদান বা পুষ্টিদ্রব্য থাকে তা আমাদের দেহে প্রধানত তিনটি কাজ করে। যথা-

  • জীবের বৃদ্ধি সাধন, ক্ষয়পূরণ ও রক্ষণাবেক্ষণ।
  • তাপশক্তি ও কর্মশক্তি প্রদান।
  • রোগ প্রতিরোধ, সুস্থতা বিধান ও শারীরবৃত্তীয় কাজ (যেমন: পরিপাক, শ্বসন, রেচন ইত্যাদি) নিয়ন্ত্রণ করে।
 খাদ্য ও পুষ্টি

পুষ্টি ও পুষ্টিমান

পুষ্টি একটি প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়াতে খাদ্যবস্তু খাওয়ার পরে পরিপাক হয় এবং জটিল খাদ্য উপাদানগুলো ভেঙ্গে সরল উপাদানে পরিণত হয়। দেহ এসব সরল উপাদান শোষণ করে নেয়। শোষণের পরে খাদ্য উপাদানগুলো দেহের সকল অঙ্গের ক্ষয়প্রাপ্ত কোষের পুনর্গঠন ও দেহের বৃদ্ধির জন্য নতুন কোষ গঠন করে। তাছাড়া তাপ উৎপাদন, রোগ প্রতিরোধ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পুষ্টি যোগায়। দেহে খাদ্যের এই সকল কাজই পুষ্টি প্রক্রিয়ার অন্তর্গত। অর্থাৎ পুষ্টি উপাদান হচ্ছে প্রতিদিনের খাবারের গুণসম্পন্ন সেসব উপাদান যা দেহের শক্তি ও যথাযথ বৃদ্ধি নিশ্চিত করে, মেধা ও বুদ্ধি বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধ করে, অসুখ-বিসুখ থেকে তাড়াতাড়ি সেরে উঠতে সাহায্য করে এবং মানুষকে কর্মক্ষম করে।

কোন খাদ্যে কী পরিমাণ ও কত রকম খাদ্য উপাদান থাকে তার উপর নির্ভর করে ঐ খাদ্যের পুষ্টিমান বা পুষ্টিমূল্য। যেমন- সিদ্ধ চালে ৭৯% শ্বেতসার, ৬% স্নেহ পদার্থ থাকে। এছাড়া সামান্য পরিমাণ আমিষ, ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকে। ১০০ গ্রাম চাল থেকে ৩৪৫-৩৪৯ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। সিদ্ধ চালে শ্বেতসার, আমিষ ও ভিটামিন থাকে। কিন্তু এতে শ্বেতসারের পরিমাণ বেশি থাকে। অতএব চাল একটি শ্বেতসার জাতীয় পদার্থ।

কোনো খাদ্য উপাদানের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে হলে ঐ খাদ্যের প্রকৃতি সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। খাদ্যের প্রকৃতি বলতে এটা কি মিশ্র খাদ্য, নাকি বিশুদ্ধ খাদ্য তাকে বোঝায়। মিশ্র খাদ্যে একের অধিক পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকে। যেমন- দুধ, ডিম, খিচুরি, পেয়ারা ইত্যাদি। অন্যদিকে বিশুদ্ধ খাদ্যে শুধুমাত্র একটি উপাদান থাকে। যেমন- চিনি, গ্লুকোজ। এতে শর্করা ছাড়া আর কোনো উপাদান থাকে না।

খাদ্য উপাদান

খাদ্য অনেকগুলো রাসায়নিক উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। এ রাসায়নিক উপাদানগুলোকে খাদ্য উপাদান বলা হয়। কেবলমাত্র একটি উপাদান দিয়ে গঠিত এমন খাদ্যবস্তুর সংখ্যা খুবই কম। উপাদান অনুযায়ী খাদ্যবস্তুকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-

  1. আমিষ বা প্রোটিন – অসংখ্য অ্যামাইনো এসিড বিভিন্নভাবে সমন্বিত হয়ে বৃহদাকার যৌগিক জৈব অণু গঠন করে, যা প্রোটিন নামে পরিচিত। প্রোটিন ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধিসাধন ও দেহ গঠন করে।
  2. শর্করা বা শ্বেতসার- কার্বন-ডাই অক্সাইড, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন এর সমন্বয়ে যৌগিক জৈব অণু গঠন করে, যা শর্করা বা শ্বেতসার নামে পরিচিত । এটি শক্তি উৎপাদন করে।
  3. স্নেহ বা চর্বি – কার্বন-ডাই অক্সাইড ও অক্সিজেন এর সমন্বয়ে যৌগিক জৈব অণু গঠন করে, যা স্নেহ বা লিপিড নামে পরিচিত । এটি তাপ ও শক্তি উৎপাদন করে।

এছাড়া অন্যান্য তিন প্রকার উপাদান বিশেষ প্রয়োজন। যথা-

  1. খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন- রোগ প্রতিরোধ, শক্তি বৃদ্ধি, বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উদ্দীপনা যোগায়।
  2. খনিজ লবণ- বিভিন্ন জৈবিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়।
  3. পানি- দেহে পানির সমতা রক্ষা করে, কোষের গুণাবলি নিয়ন্ত্রণ করে এবং কোষ অঙ্গাণুসমূহকে ধারণ ও তাপের সমতা রক্ষা করে।

বডি মাস ইনডেক্স (BMI): মানবদেহের গড়ন ও চর্বির একটি সূচক নির্দেশ করে। অর্থাৎ সুস্থ জীবনযাপনে মানব শরীরের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় কোনো নির্দিষ্ট বয়সে শরীরের দৈর্ঘ্যের সাথে চর্বির পরিমাণগত সম্পর্ক মান নির্দেশ করে। শরীরের সুস্থতা ও স্থুলতা মান নির্ণয়ে এই মানদন্ড দু'টি খুবই উপযোগী। সুস্বাস্থ্যের জন্য আদর্শ মান ১৮.৫-২৪.৯। ২৫-২৯.৯ শরীরের অতিরিক্ত ওজন এবং ৩০ - ৩৪.৯ মোটা হওয়ার প্রথম স্তর নির্দেশ করে।

  • খাদ্য উপাদানকে প্রধানত কয় ভাগে ভাগ করা যায়: দুইভাগে। যথাঃ
    ক) ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টঃ প্রোটিন, কার্বহাইড্রেট, লিপিড ।
    খ) মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টঃ ভিটামিন, খনিজ লবণ, পানি।
  • সুষম খাদ্যের উপাদান: ৬টি। যথাঃ শর্করা, আমিষ, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজলবণ এবং পানি ।
  • সুষম খাদ্যে শর্করা, আমিষ ও স্নেহজাতীয় খাবারের অনুপাত: ৪: ১ : ১ ।
  • কোনটিকে মোটামুটিভাবে সম্পূর্ণ বা আদর্শ খাদ্য বলা হয়: দুধ। ভিটামিন সি ব্যতীত সব খাদ্যোপাদানই দুধে বিদ্যমান ।
  • কোন খাদ্য উপাদান থেকে শক্তি পাওয়া যায়: শর্করা, আমিষ, স্নেহ ।
  • আমাদের দেশে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের গড় কত ক্যালরি শক্তি প্রয়োজন: ২৫০০ ক্যালরি ।
  • শ্বেতসার, আমিষ এবং স্নেহজাতীয় পদার্থ হতে কি পরিমাণ শক্তি পাওয়া যায়:
    শর্করা/শ্বেতসাব: ৪ কিলোক্যালরি/ গ্রাম,
    আমিষ : ৪.৩৫ কিলোক্যালরি/ গ্রাম,
    স্নেহ : ৯.৩ কিলোক্যালরি/ গ্রাম।
নবীনতর পূর্বতন