পৌষ্টিকতন্ত্র | Nutritional system

পাকস্থলীতে খাদ্য পরিপাকের জন্য পাকস্থলী থেকে পাচক রস নিঃসৃত । হয়। পাচক রসের উপাদান গুলো হল হাইড্রোক্লোরিক এসিড ও পেপসিনোজ। পাকস্থলীতে যে হাইড্রোক্লোরিক এসিড থাকে তা খাদ্যের রোগজীবাণু ধ্বংস করে। আমিষ জাতীয় খাদ্য পরিপাক শুরু হয় পাকস্থলীতে, তবে শর্করা জাতীয় খাদ্য পরিপাক শুরু হয় মুখবিবর থেকে। আমিষ পরিপাকের ফলে অ্যামাইনো এসিড ও পেপটাইড উৎপন্ন হয়। আমিষ পরিপাকের জন্য পাচক রসে পেপসিন, অগ্ন্যাশয় রসে ট্রিপসিন এবং আন্ত্রিক রসে লাইপেজ থাকে।

শর্করা পরিপাকের ফলে গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ উৎপন্ন হয়। শর্করা পরিপাকের জন্য লালারসে টায়ালিন, অগ্ন্যাশয়রসে অ্যামাইলেজ ও মল্টেজ থাকে। লিপিড বা চর্বি পরিপাকের ফলে উৎপন্ন হয় ফ্যাটি এসিড ও মনোগ্লিসারাইড-২। লিপিড পরিপাকের জন্য গ্রন্থিসমূহ হতে প্রধানত লাইপেজ নিঃসৃত হয়। জারক রসের রেনিন পাকস্থলিতে দুগ্ধজাতীয় খাদ্য জমাট বাধায়।

পিত্তরস : পিত্তরস যকৃতে তৈরি হয়। পিত্তরস স্নেহজাতীয় খাদ্যকে ভেঙ্গে ছোট ছোট টুকরায় পরিণত করে যা অন্ত্রে সহজে শোষিত হয়। পিত্তের রঞ্জকের জন্য দায়ী হল বিলিরুবিন যা প্লীহায় তৈরি হয়। মানুষের রক্তে বিলিরুবিনের স্বাভাবিক মাত্রা ০.২-০.৮ মি.গ্রাম/ডেসিলিটার। রক্তে বিলিরুবিন স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক হলে জন্ডিস রোগ হয়। রক্তের লোহিত কণিকা ভেঙ্গে বিলিরুবিন তৈরি হয়।

ক্ষুদ্রান্ত ও বৃহদান্ত্র : ক্ষুদ্রান্ত ও বৃহদান্ত্র হল পরিপাকতন্ত্রের অংশ। ক্ষুদ্রান্তের দৈর্ঘ্য ৬-৭ মিটার এবং বৃহদ্রান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ২ মিটার। বৃহদান্ত্র কয়েকটি অংশে বিভক্ত। যথা: সিকাম, কোলন ও মলাশয়। সিকামের সাথে সংযুক্ত ছোট থলির মতো অংশটিকে বলে অ্যাপেনডিক্স। ক্ষুদ্রান্তে খাদ্যরস শোষিত হয়, বৃহদ্রান্তে এসে খাদ্যের অবশিষ্ট অংশ জমা হয় এবং পায়ুপথে বেরিয়ে যায়। পেপটিক আলসার হল এক ধরনের ঘা যা ক্ষুদ্রান্তে হয়। এটি এন্ড্রোসকপির সাহায্যে নির্ণয় করা হয়।

 পৌষ্টিকতন্ত্র
  • মানুষের পৌষ্টিক নালীর দৈর্ঘ্য: ৬ মিটার বা ২০ ফুট।
  • মানুষের দুধের দাঁতের সংখ্যা: ২০টি।
  • পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দাঁতের সংখ্যা: ৩২টি।
  • দেহের সবচেয়ে কঠিন অংশের নাম: দাঁতের এনামেল।
  • পাকস্থলীর ধারণক্ষমতা: ১.৫ - ২ লিটার।
  • পাকস্থলী থেকে নিঃসৃত রসের নাম: পাচক রস।
  • পাকস্থলীতে কোন এসিড থাকে: হাইড্রোক্লোরিক এসিড । পাকস্থলীতে খাদ্য আসার পর প্রাচীরের গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি থেকে হাইড্রোক্লোরিক এসিড নিঃসৃত হয় যা জীবাণু ধ্বংস করে এবং নিষ্ক্রিয় পেপসিনোজেনকে সক্রিয় পেপসিনে পরিণত করে। এছাড়াও পেপসিনের কাজের জন্য অম্লীয় পরিবেশ তৈরি করার মাধ্যমে পরিপাকে অংশগ্রহণ করে।
  • পাচক রসের মধ্যে হাইড্রোক্লোরিক এসিড নিঃসৃত হয় প্যারাইটাল কোষ হতে এবং পেপসিনোজেন নিঃসৃত হয় চিফ কোষ হতে
  • পাকস্থলীতে HCI এসিডের কাজ: রোগ জীবাণু ধ্বংস করা।
  • পেপটিক আলসারঃ এক ধরনের রোগ যাতে পাকস্থলী বা ক্ষুদ্রান্ত্রে ঘা হয়।
  • কোন পরীক্ষা দ্বারা পেপটিক আলসার রোগ নির্ণয় করা হয়: এন্ডোসকপি।
  • কোন জারক রস পাকস্থলীতে দুগ্ধ জমাট বাধায়: রেনিন।
  • মানুষের কোন অঙ্গটি দেখতে ইংরেজী U এর মত: ডিওডেনাম।
  • এনজাইম: এক ধরনের প্রোটিন যা জীবদেহে অল্প পরিমাণ বিদ্যমান থেকে বিক্রিয়ার হারকে ত্বরান্বিত করে, কিন্তু বিক্রিয়ার পর নিজেরা অপরিবর্তিত থাকে।

কার্বহাইড্রেট বা শর্করা পরিপাককারী এনজাইমগুলোর নাম:

  • লালা রসে : টায়ালিন ও মল্টেজ।
  • পাচক রসে : কার্বহাইড্রেট পরিপাককারী কোন এনজাইম নেই।
  • অগ্ন্যাশয় রসে : অ্যামাইলেজ ও মল্টেজ।
  • আন্ত্রিক রসে : অ্যামাইলেজ, মল্টেজ, সুক্রেজ, ল্যাকটেজ ইত্যাদি।

আমিষ (Protein) পরিপাককারী এনজাইমগুলোর নাম:

  • লালা রসে : আমিষ পরিপাককারী কোন এনজাইম নেই।
  • পাচক রসে : পেপসিন, জিলেটিনেজ।
  • অগ্ন্যাশয় রসে : ট্রিপসিন, কাইমোট্রিপসিন, কার্বক্সিপেপটাইডেজ, ইলাস্টেজ।
  • আন্ত্রিক রসে : অ্যামাইনো পেপটাইডেজ, ডাই ও ট্রাই পেপটাইডেজ প্রভৃতি।

লিপিড বা স্নেহ জাতীয় খাদ্য পরিপাককারী এনজাইমগুলোর নাম:

  • লালা রসে : চর্বি পরিপাককারী কোন এনজাইম নেই ।
  • পাচক রসে : পাকস্থলীয় লাইপেজ
  • অগ্ন্যাশয় রসে : অগ্ন্যাশয় লাইপেজ, ফসফোলাইপেজ ও কোলেস্টেরল এস্টারেজ
  • আন্ত্রিক রসে : আন্ত্রিক লাইপেপেজ, লেসিথিনেজ ইত্যাদি।

শর্করা, আমিষ এবং স্নেহজাতীয় খাদ্যের পরিপাক কোথায় শুরু হয়:

  • শর্করা জাতীয় খাদ্যের পরিপাক শুরু হয় মুখে ।
  • আমিষ ও স্নেহজাতীয় খাদ্যের পরিপাক শুরু হয় পাকস্থলিতে।
  • কার্বহাইড্রেট পরিপাকের ফলে কি উৎপন্ন হয়: গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ, গ্যালাকটোজ।
  • আমিষ পরিপাকের ফলে কি উৎপন্ন হয়: অ্যামাইনো এসিড ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পেপটাইড।
  • চর্বি বা লিপিড পরিপাকের ফলে কি উৎপন্ন হয়: ফ্যাটি এসিড, ২-মনোগ্লিসারাইড।
  • পিত্ত (bile) কোথায় তৈরী হয়: যকৃতে ।
  • পিত্ত কোথায় জমা থাকে: পিত্তথলিতে।
  • পিত্তের কাজ: স্নেহ জাতীয় পদার্থকে ভেঙ্গে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টুকরায় পরিণত করে। ফলে স্নেহজাতীয় পদার্থ অস্ত্র দ্বারা শোষিত হয়।
  • পিত্তের বর্ণের জন্য দায়ী: বিলিরুবিন।
  • বিলিরুবিন কোথায় তৈরি হয়: প্লীহায় (Spleen)। লোহিত রক্ত কণিকা ভেঙ্গে বিলিরুবিন উৎপন্ন হয়।
  • কোন রক্ত কণিকা ভেঙ্গে বিলিরুবিন উৎপন্ন হয়: লোহিত রক্ত কণিকা।
  • রক্তে বিলিরুবিনের স্বাভাবিক মাত্রা: ০.২-০.৮ মিঃগ্রাঃ/ ডেসিলিটার।
  • বিলিরুবিনের সাথে যকৃতের সম্পর্ক: যকৃতে বিলিরুবিনের কনজুগেশন (Conjugation) হয়।
  • রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে তাকে কি বলে: জন্ডিস বা পাণ্ডুরোগ।
  • জন্ডিস রোগে দেহের কোন অংশ আক্রান্ত হয়: যকৃত।
  • মানব দেহের ক্ষুদ্রান্ত্রে সকল খাদ্য পরিপাক হয়ে থাকে। পরিপাকের শেষে খাদ্য সারাংশ শোষিত হয়ে পোর্টাল শিরার মাধ্যমে যকৃতে এসে পৌঁছায়। এটি আমাদের দৈহিক রসায়নাগার হিসেবে পরিচিত।
নবীনতর পূর্বতন