পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস | History of creation of the world

পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস জানার আগে আমাদের মহাবিশ্ব সৃষ্টির ইতিহাস জানতে হবে । মহাবিশ্ব সৃষ্টির পূর্বমুহূর্তকে টাইম জিরো বা জিরো আওয়ার বলা হয়। মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও বিকাশ সংক্রান্ত যেসব তত্ত্ব আছে তার মধ্যে বহুল প্রচলিত হলো 'বিগব্যাঙ তত্ত্ব'। বাংলায় একে বলা হয় 'মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব'। এই তত্ত্বের মতে মহাবিশ্ব একসময় অত্যন্ত উত্তপ্ত ও ঘনরূপে বা ঘন অবস্থায় ছিল যা অতি দ্রুত প্রসারিত হচ্ছিল। দ্রুত প্রসারণের ফলে মহাবিশ্ব ঠান্ডা হয়ে যায় এবং বর্তমান প্রসারণশীল অবস্থায় পৌঁছায়। বিগ ব্যাং সৃষ্টির আগের মুহূর্তের সীমাকে প্রাঙ্ক ওয়াল বলে। এ সময় মহাকর্ষ বল, পরমাণু বিদ্যা, সময় সবকিছু অকার্যকর ছিল।

 পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস

বিগব্যাঙ তত্ত্ব

বিগ ব্যাং পৃথিবীর সৃষ্টি নিয়ে এ পর্যন্ত যতগুলো মতামত পাওয়া গিয়েছে এর মধ্যে বিগ ব্যাং তত্ত্ব সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। বেলজিয়ামের জোতির্বিজ্ঞানী জি. লেমেটার ১৯২৭ সালে মহাবিশ্ব সম্প্রসারণের কথা উল্লেখ করেন। মহাবিশ্ব সম্প্রসারণের বিস্ফোরণকে তিনি বিগ ব্যাঙ বা মহাবিস্ফোরণ নামে অভিহিত করেন। তিনি 'বিগ ব্যাঙ' তত্ত্ব প্রদান করেন। ১৯৪৮ সালে জর্জ গ্যামো বিগ ব্যাঙ এর ধারণা উপস্থাপন করেন। এই তত্ত্ব অনুসারে মহাবিশ্ব এক সময় প্রসারমান উত্তপ্ত গলিত পদার্থ ছিল। প্রসারিত হতে হতে এটি একসময় বিস্ফোরিত হয়। এটি বিগ ব্যাঙ বা প্রচণ্ড নিনাদ - মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময়ের মহা বিস্ফোরণ। এটি হল সেই মুহূর্ত যখন একই সাথে স্থান, সময় এবং পদার্থ সৃষ্টি হয়েছিল। এটি আমাদের পার্থিব সময় হিসেবে ১৫০০ কোটি বছর থেকে ১৭০০ কোটি বছর পূর্বে সংঘটিত হয়েছে বলে মনে করা হয়। অধিকাংশ বিজ্ঞানী একে ১৭০০ কোটি বছর পূর্বের বলে মনে করেন।

এপ্রিল' ৯৮ ক্যালিফোর্নিয়ায় আয়োজিত এক সেমিনারে বিজ্ঞানী হকিং মহাবিশ্বের উদ্ভব ও নিয়তি' সংক্রান্ত তত্ত্ব উপস্থাপন করেন। এই তত্ত্বটির নাম দেয়া হয়েছে 'ওপেন ইনফ্লেশন থিওরি' বা মুক্তি স্ফীতি তত্ত্ব'। তাঁকে এ তত্ত্বের জনক বলা হয়।

১৭শ কোটি বৎসর পূর্বে মহাবিশ্বের সমস্ত বস্তু সংকুচিত অবস্থায় একটি বিন্দুর মত (অতি পরমাণু) ছিল। এই অতি পরমাণুটি প্রসারিত হতে হতে এক সময় বিস্ফোরিত হয় এবং চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সৃষ্টি হয় পদার্থ, স্থান এবং কালের। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া পুঞ্জীত বস্তু থেকে সৃষ্টি হয়েছে ছায়াপথ, গ্রহ এবং উপগ্রহের। আদি এ বিস্ফোরণকে বলা হয় বিগ ব্যাঙ বা মহাবিস্ফোরণ। স্টিফেন হকিং তাঁর A Brief History of Time বইতে বিগ ব্যাং তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেন।

বিগ ব্যাং এর পর মহাবিশ্ব যে প্রসারিত হতে শুরু করেছে তা আর কখনো থামবে না। অনন্তকাল ধরে চলতে থাকবে এই প্রসারণ অর্থাৎ সময়ের কখনো মৃত্যু ঘটবে না। প্রতি মিনিটে মহাবিশ্বের ১ লাখ কোটি ঘন আলোকবর্ষ স্ফীতি হয়। বিগ ব্যাং এর আগের মুহূর্তে মহাবিশ্ব ছিল সময়হীন এক শূন্যতায় ঝুরে থাকা মটর দানার মত জিনিস। ঐ ক্ষুদ্র দানাটির এর পরের কয়েক মুহূর্তে খুব দ্রুত প্রসারিত হয়। এটাই ইনফ্লেশন বা স্ফীতি। এই স্ফীতি এবং মটর দানার অবস্থার মাঝামাঝি একটি মুহূর্তে বিগ ব্যাং ঘটেছিল।

মহাবিশ্বের আনুমানিক বয়স ১৩.৮ বিলিয়ন (১,৩৮০ কোটি) বছর। চিলির আতাকামা কসমোলজি টেলিস্কোপ (ACT) থেকে প্রাপ্ত পর্যবেক্ষণগুলো ব্যবহার করে জটিল গাণিতিক পদ্ধতিতে বিজ্ঞানীরা এ বয়স নির্ণয় করেন।

মহাবিস্ফোরণ নকসা : বেশিরভাগ বিজ্ঞানীদের ধারণা সৃষ্টির শুরুতে মহাবিশ্ব অবিশ্বাস্যভাবে ঘন ও উত্তপ্ত ছিল। পরবর্তী সময়ে এক মহাবিস্ফোরণের ফলে সকল পদার্থ ও শক্তির উদ্ভব হয়। পরে এটি বহির্ভাগে প্রসারণের ফলে তৈরি হয় নক্ষত্র ছায়াপথ। এ ধরনের প্রসারণ অনবরত ঘটছে। কিন্তু এ প্রসারণের পরিমাণ অতি নগন্য। বেলজিয়ামের জ্যোতির্বিজ্ঞানী জর্জেস লেমিটেয়্যার-এর এই সূত্রকে মহাবিস্ফোরণ নকসা (Big Bang) নামে অভিহিত করা হয়।

মহাবিশ্ব

অধিকাংশ বিজ্ঞানী মনে করেন, প্রায় ১৭০০ কোটি বছর পূর্বে এক প্রচণ্ড বিস্ফোরণে মহাবিশ্বের জন্ম হয়। এরপর থেকে মহাবিশ্ব ক্রমেই প্রসারিত হচ্ছে। প্রতি মিনিটে মহাবিশ্বের আয়তন ১ লাখ কোটি ঘন আলোকবর্ষ বেড়ে যাচ্ছে।

এ সৃষ্টি জগতে যা কিছু আছে তার সবকিছু নিয়েই মহাবিশ্ব। ক্ষুদ্র পোকামাকড় ও ধূলিকণা থেকে শুরু করে আমাদের এই পৃথিবী, দূর-দূরান্তের গ্রহ-নক্ষত্র, ধূমকেতু, গ্যালাক্সি এবং দেখা না দেখা সবকিছু নিয়েই মহাবিশ্ব। মহাবিশ্ব যে কত বড় তা কেউ জানে না। কেউ জানে না মহাবিশ্বের আকার বা আকৃতি কেমন। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন মহাবিশ্বের শুরু ও শেষ নেই। কেউ কেউ এখনও বিশ্বাস করেন মহাবিশ্বের আকার ও আকৃতি আছে। মানুষ প্রতিনিয়তই মহাবিশ্ব সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কার করছে। তবু, এর অনেক কিছুই এখনও অজানা রয়ে গেছে। এই অজানা হয়তো চিরকালই থাকবে।

অনেক কিছু অজানা থাকলেও বিজ্ঞানীরা এটা জানতে পেরেছেন যে, মহাবিশ্বের অনেক কিছুই মহাকাশ নামক সীমাহীন ফাঁকা জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। মহাবিশ্বের কোনো কোনো অংশে এসব বস্তু বা পদার্থের উপস্থিতি অন্য অংশের চেয়ে বেশি। যেসব অংশে পদার্থ বা বস্তু বেশি জড়ো বা ঘনীভূত হয়েছে তাদের বলা হয় গ্যালাক্সি বা নক্ষত্রজগৎ। গ্যালাক্সি হলো গ্রহ ও নক্ষত্রের এক বৃহৎ দল। আমাদের বাসভূমি পৃথিবী যে গ্যালাক্সিতে অবস্থিত তার নাম ছায়াপথ বা মিল্কিওয়ে। এরকম কোটি কোটি গ্যালাক্সি রয়েছে মহাবিশ্বে, যেখানে রয়েছে কোটি কোটি নক্ষত্র।

গ্যালাক্সিগুলো মহাকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে ঘুরে বেড়ায়, ঠিক যেন বায়ুমণ্ডলে উড়ে বেড়ানো মৌমাছির ঝাঁকের মতো। মহাকাশের সীমাহীনতার তুলনায় গ্যালাক্সি নক্ষত্রগুলোকে খুব কাছাকাছি মনে হয় আসলে তা নয়। এরা পরস্পর থেকে অনেক দূরে। এদের মধ্যকার দূরত্ব সাধারণ দুরত্বের পরিমাপে পরিমাপ করা যায় না ; আলোকবর্ষ দুরত্বে পরিমাপ করতে হয় । আমরা জানি যে, আলো এক সেকেন্ডে প্রায় ৩ লক্ষ কিলোমিটার পথ যেতে পারে। শূন্য মাধ্যমে আলো এক বছরে যে দূরত্ব অতিক্রম করে , তাকে এক আলোকবর্ষ বলে । এক আলোক বর্ষ সমান ৯.৪৬ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার বা ৫.৮৮ ট্রিলিয়ন মাইল। পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্ব প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার, সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগে প্রায় ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড। অন্যদিকে সূর্য থেকে এর সবচেয়ে নিকটবর্তী নক্ষত্র আলফা সেন্টোরিতে আলো পৌঁছাতে সময় লাগে ৪ বছরের চেয়ে বেশি। এক দূরবর্তী নক্ষত্র থেকে অন্য দূরবর্তী নক্ষত্রে আলোর পৌঁছাতে সময় লাগে কয়েক মিলিয়ন বছর। তাহলে সহজেই অনুমেয় , নক্ষত্রগুলোর মধ্যবর্তী দূরত্ব কত বেশি আর মহাবিশ্ব কত বিশাল।

সৌরজগৎ মিল্কিওয়ে নামক গ্যালাক্সির অন্তর্গত। পৃথিবী থেকে নক্ষত্রগুলোকে দপদপ্‌ বা মিট্সিট্ করে জ্বলতে দেখা যায়। নক্ষত্রগুলো প্রত্যেকে এক একটি জ্বলন্ত গ্যাসপিন্ড বলে এদের সবারই আলো ও উত্তাপ আছে। মহাবিশ্বের নক্ষত্রগুলোকে তাদের আলোর তীব্রতা অনুসারে লাল, নীল, হলুদ এই তিন বর্ণে ভাগ করা হয়েছে। অতি বৃহৎ নক্ষত্রের রং লাল, মাঝারি নক্ষত্রের রং হলুদ এবং ছোট নক্ষত্রের রং নীল হয়ে থাকে।

  • গ্যালাক্সি: মহাকর্ষ শক্তি দ্বারা একত্রে গ্রোথিত এক বিরাট নক্ষত্র মণ্ডলীকে গ্যালাক্সি বলে। এটি মূলত কোটি কোটি জ্যোতিষ্কের একটি দল। মহাকাশে অসংখ্য গ্যালাক্সি রয়েছে। এগুলো পরস্পর হতে অনেক দূরে অবস্থিত ।
  • জ্যোতিষ্ক : অসীম মহাকাশের নক্ষত্র, গ্রহ, উপগ্রহ, ধূমকেতু, ছায়াপথ, উল্কা, কেয়াসার, সুপারনোভা ইত্যাদিকে বলা হয় জ্যোতিষ্ক। এগুলো সাতভাগে বিভক্ত।
  • ছায়াপথ : মহাশূন্যে অন্ধকার আকাশে দীপ্তমান পথের মত গ্যালাক্সির যে অংশ দেখা যায় তাই ছায়াপথ। ছায়াপথ মহাশূনাকে একটি মহাবৃত্তের ন্যায় বেষ্টন করে রয়েছে। আমাদের ছায়াপথ হল 'মিল্কিওয়ে'। আমাদের ছায়াপথের অন্য নামগুলো হল সুরগঙ্গা, আকাশগঙ্গা, স্বর্গগঙ্গা। পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের ছায়াপথ হল 'ম্যাজিলানিক ক্লাউডস'। এটি আমাদের পৃথিবী থেকে ২ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। অ্যান্ড্রোমিডা-এর ছায়াপথ ২০ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে এবং সপ্তর্ষিমণ্ডল এর ছায়াপথ ৮০ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
  • জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক: জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক হলেন হিপ্পার্কস। তাঁর নামে মহাজাগতিক মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে।
  • হিপ্পার্কস ম্যাপ : এটি নতুন মহাজাগতিক মানচিত্র। এই মানচিত্রটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক হিপ্পার্কসের নামে উৎর্সগীকৃত । ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ESA) ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত জরিপ চালয়ে এটি প্রস্তুত করে। ত্রিমাত্রিক এই মহাজাগতিক ম্যাপটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক বিরাট মাইলফলক। এতে ১ লক্ষ ১৮ হাজার তারার অবস্থান ও গতিপথের উল্লেখ আছে।

জ্যোতিষ্ক

অসীম মহাকাশের দিকে তাকালে আমরা চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র , গ্রহ, উপগ্রহ, ধূমকেতু, ছায়াপথ, উল্কা ইত্যাদি অসংখ্য আলোকবিন্দু দেখতে পাই, এগুলোকে জ্যোতিষ্ক বলে। সকল জ্যোতিষ্কের নিজস্ব আলো নেই। যাদের নিজস্ব আলো নেই তারা অন্যের আলোতে আলোকিত হয়। জ্যোতিষ্ক ৭ ধরনের। যথা- নক্ষত্র, নীহারিকা, গ্রহ, উপগ্রহ, ধূমকেতু, ছায়াপথ এবং উল্কা।

  • নক্ষত্র : রাত্রিবেলা মেঘমুক্ত আকাশের দিকে তাকালে অনেক আলোক বিন্দু মিটমিট করে জ্বলতে দেখা যায়, এদের নক্ষত্র বলে বিজ্ঞানীগন ১০০ কোটিরও অধিক নক্ষত্রের সন্ধান লাভ করেছেন।
    নক্ষত্রের বৈশিষ্ট্যঃ
    ক) নক্ষত্রগুলো প্রকৃতপক্ষে জ্বলন্ত বাষ্পপিণ্ড ।
    খ) নক্ষত্রের নিজস্ব আলো ও উত্তাপ আছে।
    গ) নক্ষত্রের আকার গোল, সর্পিল, বৈশ্বিক আবার অবয়বহান হতে পারে।
  • নক্ষত্রের বিবিধ :
    • আকাশে উজ্জ্বলতম নক্ষত্র লুব্ধক (SIRIUS) ।
    • সবচেয়ে বড় নক্ষত্র বেটেলগম (সূর্যের চেয়ে ৫০০ গুণ বড়) ।
    • পৃথিবীর নিকটতম নক্ষত্র সূর্য।
    • পৃথিবীর দ্বিতীয় নিকটতম নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টারাই (Prosima Centauri)
    • সূর্যের নিকটতম নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টারাই।
    • ধ্রুব তারা শুধুমাত্র উত্তর গোলার্ধে দেখা যায়।
  • নক্ষত্রমন্ডলী : মেঘমুক্ত অন্ধকার রাতে আকাশের দিকে তাকালে মনে হয় কতকগুলো নক্ষত্র মিলে জোট বেঁধেছে। এরপ দলকে নক্ষত্রমন্ডলী বলে । প্রাচীনকালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এক একটি নক্ষত্র দলকে কাল্পনিক রেখা দ্বারা যুক্ত করে বিভিন্ন আকৃতি কল্পনা করে এগুলোর বিভিন্ন নাম দিয়েছেন। এর মধ্যে সপ্তর্ষিমণ্ডল (Great Bear), কালপুরুষ (Onon) বা আদমসুরত , ক্যাসিওপিয়া (Cassiopeia), লঘুসপ্তর্ষি (Little Bear), বৃহৎ কুক্কুরমণ্ডল (Canis Major), এরিডানাস (Eridanus) ইত্যাদি। [বি.দ্র. কালপুরুষ তীর ধনুক হাতে শিকারীর মত। ]
  • সপ্তর্ষিমণ্ডল : উত্তর আকাশের কাছাকাছি যে সাতটি উজ্জ্বল নক্ষত্র দেখা যায়, তার নাম সপ্তর্ষিমণ্ডল। সাতজন ঋষির নাম অনুসারে এরা পরিচিত। জ্যামিতিক রেখা দিয়ে এদের যুক্ত করলে প্রশ্নবোধক ( ? ) চিহ্নের মত দেখায়।
  • গ্যালাক্সি : মহাকাশে কোটি কোটি নক্ষত্র, ধূলিকণা এবং বিশাল বাষ্পকুণ্ড নিয়ে জ্যোতিষ্কমগুলীর যে দল সৃষ্টি হয়েছে তাকে গ্যালাক্সি বা নক্ষত্র জগৎ বলে। মহাকাশে অসংখ্য গ্যালাক্সি রয়েছে। গ্যালাক্সিগুলো পরস্পর ব্যাপক ব্যবধানে অবস্থিত।
  • ছায়াপথ : রাতের অন্ধকার আকাশে উত্তর-দক্ষিণে উজ্জ্বল দীপ্ত দীর্ঘপথের মত যে তারকারাশি দেখা যায় তাকে ছায়াপথ বলে। একটি ছায়াপথ লক্ষ কোটি নক্ষত্রের সমষ্টি। প্রকৃতপক্ষে, কোন একটি গ্যালাক্সির ক্ষুদ্র অংশই ছায়াপথ।
    • আমাদের ছায়াপথের নাম মিল্কওয়ে বা আকাশগঙ্গা বা সুরগঙ্গা বা সুর্গগঙ্গা ।
    • পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের ছায়াপথের নাম ম্যাজিলানিক ক্লাউডস। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব ২ লক্ষ আলোকবর্ষ।
  • কসমিক ইয়ার : ছায়াপথ তার নিজ অক্ষকে কেন্দ্র করে একবার ঘুরে আসতে যে সময় প্রয়োজন হয়, তাকে কসমিক ইয়ার বলে। আমাদের ছায়াপথের কসমিক ইয়ার হল ২০ কোটি আলোকবর্ষ।
  • নীহারিকা : মহাকাশে স্বল্পালোকিত তারকারাজির আস্তরণকে নীহারিকা বলে। নীহারিকাসমূহ গ্যাসীয় পদার্থে পূর্ণ । এদের আকার বিচিত্র। এক একটি নীহারিকার মাঝে কোটি কোটি নক্ষত্র থাকতে পারে। এরা পৃথিবী থেকে কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
  • কোয়াসার : যে সকল নীহারিকার কেন্দ্রের ঔজ্জ্বল্যতার জন্য তাদের একটি দীপ্যমান তারকা মনে হয়, তাদের কোয়াসার বলে। Quasi Staller Radio Sources এর সংক্ষিপ্ত রূপ Quasar। এটি মহাকাশে শক্তিশালী রেডিও ওয়েভ বিকিরণের উৎস।
  • ধূমকেতু : মহাকাশে মাঝে মাঝে এক প্রকার জ্যোতিষ্কের আবির্ভাব ঘটে। সব জ্যোতিষ্ক কিছুদিনের জন্য উদয় হয়ে আবার অদৃশ্য হয়ে যায়। এ সব জ্যোতিষকে ধূমকেতু বলা হয়। ধূমকেতু নক্ষত্রের চারদিকে দীর্ঘপথে পরিক্রমণ করে। সূর্যের নিকটবর্তী হলে প্রথমে অস্পষ্ট মেঘের আকারে দেখা যায়। ক্রমশ এগুলোর উজ্জ্বল কেন্দ্রবিন্দু এবং কুয়াশার আবরণে আচ্ছাদিত কেশের ন্যায় বস্তু দৃষ্টিগোচর হয়। এই কেন্দ্র থেকে বের হয়ে আসে উজ্জ্বল ঝাঁটার ন্যায় দীর্ঘ বাষ্পময় পুচ্ছ।
  • হ্যালির ধূমকেতু : জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডমন্ড হ্যালি যে ধূমকেতু আবিষ্কার করেন তা হ্যালির ধূমকেতু নামে পরিচিত।
    ক) হ্যালির ধূমকেতু প্রায় ৭৫ বা ৭৬ বছর পরপর দেখা যায় ।
    খ) ১৭৫৯, ১৮৩৫, ১৯১০ ও ১৯৮৬ সালে হ্যালির ধূমকেতু দেখা গেছে।
    গ) হ্যালির ধূমকেতু আবার দেখা যাবে (১৯৮৬+৭৬) ২০৬২ সালে।
  • শুমেকার লেভী-৯ : শুমেকার লেভী-৯ একটি ধূমকেতু। ধূমকেতুটি কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে বৃহস্পতির কক্ষপথে চলে আসে এবং ১২টি খণ্ডে বিভক্ত হয়ে ১৬-২২ জুলাই, ১৯৯৪ বৃহস্পতি গ্রহে আঘাত হানে।
  • 'হেলবপ' ধূমকেতু : বিগত শতাব্দীর সবচেয়ে উজ্জ্বল ধূমকেতু 'হেলবপ'। জ্যোতির্বিজ্ঞানী এলান হেল ও টমাস বপ ১৯৯৫ সালে ২৩ জুলাই এই ধূমকেতুটি আবিষ্কার করেন।
  • উল্কা : মহাশূন্যে অজস্র জড়পিন্ড ভেসে বেড়ায়। এই জড়পিন্ডগুলো মাধ্যাকর্ষণ বলের আকর্ষণে প্রচণ্ড গতিতে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে। বায়ুর সংস্পর্শে এসে বায়ুর সংগে ঘর্ষণের ফলে এরা জ্বলে ওঠে। এগুলোকে উল্কা বলে।
  • উল্কাবৃষ্টি : ধুমকেতুর সূর্যের কাছাকাছি এসে পড়লে এর প্রচণ্ড উত্তাপ এবং সৌরঝড়ের কারণে সম্মুখভাগ ও অন্তঃস্থল গলে গিয়ে পেছনের দিকে ধূমকেতুর লেজ-এ ছড়িয়ে পড়ে। এই 'লেজ'-এর মধ্যে থাকে অসংখ্য পাথরের টুকরো, ধূলিকনা ও গ্যাস। ধূমকেতুর লেজ পৃথিবীর সংস্পর্শে আসলে বিদ্যমান অসংখ্য কঠিন পিও উল্কার ন্যায় ছুটে চলে এবং উল্কাপাত ঘটে। একে উল্কাবৃষ্টি বলে।
  • গ্রহ : মহাকর্ষ বলের প্রভাবে মহাকাশে কতকগুলো জ্যোতিষ্ক সূর্যের চারদিকে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পথে পরিক্রমণ করে। এ সব জ্যোতিষ্ককে গ্রহ বলে।
    ক) এদের নিজেদের কোনো আলো বা তাপ নেই।
    খ) এরা তারার মত মিটমিট করে জ্বলে না।
  • উপগ্রহ : মহাকর্ষ বলের প্রভাবে যে জ্যোতিষ্ক বা বস্তু গ্রহকে ঘিরে আবর্তিত হয়, তাদের উপগ্রহ বলে। এদের নিজস্ব আলো ও তাপ নেই। উপগ্রহ দুই ধরনের:
    ক) স্বাভবিক উপগ্রহঃ প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্ট। যেমন- চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র স্বাভবিক উপগ্রহ।
    খ) কৃত্রিম উপগ্রহঃ মহাশূন্য পাড়ি দেওয়ার জন্য মানব সৃষ্ট উপগ্রহ। 'স্যাটেলাইট' বলতে এখন কৃত্রিম উপগ্রহকেই বোঝায়। যেমন- স্পুটনিক-1, ভস্টক-১ ইত্যাদি।
নবীনতর পূর্বতন