উচ্চ রক্তচাপ | High blood pressure

উচ্চ রক্তচাপকে নীরব ঘাতক হিসেবে গণ্য করা হয়। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে 2025 সালের মধ্যে স্ট্রোক ও করোনারি ধমনির রোগ হবে বিশ্বের এক নম্বর মরণব্যাধি এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়বে মহামারী আকারে। হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ হলো উচ্চ রক্তচাপ।

  উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ কী? রক্ত চলাচলের সময় রক্তনালিগাত্রে যে চাপ সৃষ্টি হয়, তাকে রক্তচাপ বলে। আর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রক্তচাপকে উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে সাধারণত সিস্টোলিক চাপ ১২০ মিলিমিটার পারদের নিচে এবং ডায়াস্টোলিক চাপ ৮০ মিলিমিটার পারদের নিচের মাত্রাকে কাঙ্ক্ষিত মাত্রা হিসেবে ধরা হয়। আর এই রক্তচাপ যখন মাত্রাতিরিক্ত হয় তখনই আমরা তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে থাকি।

উচ্চ রক্তচাপ ঝুঁকির কারণ: বাবা বা মায়ের উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তার সন্তানদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এছাড়াও যারা স্নায়ুবিক চাপে (Tension) বেশি ভোগেন অথবা ধূমপানের অভ্যাস আছে, তাদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। দেহের ওজন বেশি বেড়ে গেলে কিংবা লবণ এবং চর্বিযুক্ত খাদ্য বেশি খেলে এমনকি পরিবারের সদস্যদের ডায়াবেটিস বা কোলেস্টেরলের পূর্ব ইতিহাস থাকলে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। সন্তান প্রসবের সময় খিঁচুনি রোগের (Eclampsia) কারণে মায়ের রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ: মাথাব্যথা, বিশেষ করে মাথার পেছন দিকে ব্যথা করা উচ্চ রক্তচাপের প্রাথমিক লক্ষণ। এছাড়া রোগীর মাখা ঘোরা, ঘাড় ব্যথা করা, বুক ধড়ফড় করা ও দুর্বল বোধ করাও উচ্চরক্তচাপের লক্ষণ। অনেক সময় রোগীর নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। উচ্চ রন্তচাপের রোগীর ভালো ঘুম হয় না এবং অল্প পরিশ্রমে তারা হাঁপিয়ে ওঠে। ভয়ের ব্যাপার হলো, প্রায় 50% ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ হলে কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তখন স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায় কিছু বুঝে ওঠার আগেই।

রক্তচাপ নির্ণয় করা: রক্তচাপ মাপক যন্ত্র বা বিপি যন্ত্র দিয়ে রন্তচাপ মাপা হয়। রক্তচাপ মাপার শুরুতে রোগীকে কয়েক মিনিট নিরিবিলি পরিবেশে শান্তভাবে সোজা হয়ে শুয়ে থাকতে হবে। কমপক্ষে 15 থেকে 20 মিনিটের ব্যবধান রেখে রক্তচাপ নির্ণয় করা ভালো।

উচ্চ রক্তচাপের প্রতিকার: উচ্চ রক্তচাপের প্রতিকারে টাটকা ফল এবং শাক-সবজি খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত। দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রেখে শারীরিক পরিশ্রম করা বা ব্যায়াম করা প্রয়োজন। চর্বিজাতীয় খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকা ছাড়াও খাবারের সময় অতিরিক্ত লবণ (কাঁচা লবণ) খাওয়া উচিত নয়। ধূমপান ত্যাগ করা জরুরি। উচ্চ রপ্তচাপ নিয়ঘণে না থাকলে মস্তিক্ষে রন্তক্ষরণ ঘটতে পারে, যা স্ট্রোক নামে পরিচিত। কর্মতৎপরতা, স্বাস্থ্য, বয়স এবং রোগের কারণে মানুষের রন্তচাপের মাত্রা কমবেশি হতে পারে। মোটা লোকদের ওজন কমানো, চর্বিজাতীয় খাদ্য কম খাওয়া, খাবারে কম লবণ দেওয়া ইত্যাদি নিয়ম মেনে চললে উচ্চ রক্তচাপ এড়ানো যায়। রক্তচাপ খুব বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ঔষধ সেবন করা উচিত।

নবীনতর পূর্বতন