বংশগতি বিদ্যা | Genetics

মা ও বাবার কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য সন্তানসন্ততি পেয়েই থাকে। জীববিজ্ঞানের যে শাখায়, উত্তরাধিকার সূত্রে কিভাবে পিতামাতার বৈশিষ্ট্যসমূহ সন্তান-সন্তুতিতে সঞ্চারিত হয় এ সম্বন্ধে যে আলোচনা করা হয়, তাকে বলে - Genetics বা বংশগতি বিদ্যা । Genetics শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন উইলিয়াম বেটসন ১৯০৬ সালে । জিনতত্ত্বের অগ্রদূত - ভাইজম্যান। আর সন্তানরা পিতামাতার যেসব বৈশিষ্ট্য পায়, সেগুলোকে বলে বংশগত বৈশিষ্ট্য। আর তাই প্রাণিজগতের উৎপত্তি ও বংশ সম্বন্ধীয় বিদ্যাকে ও - Genetics/ বংশগতি বিদ্যা বলে । বংশগতি সম্বন্ধে এক সময় মানুষের ধারণা ছিল কাল্পনিক। পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা দিয়েছেন কীভাবে পিতামাতার বৈশিষ্ট্য তার সন্তানসন্তত্তিতে সঞ্চারিত হয়। উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে প্রথম যিনি বংশগতির ধারা সম্বন্ধে সঠিক ধারণা দেন তার নাম গ্রেগর জোহান মেন্ডেল। বর্তমানে বংশপতি সম্বন্দ্বে আাধুনিক যে তত্ত্ব প্রচলিত আছে তা মেন্ডেলের আবিষ্কার তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ জন্য মেন্ডেলকে জিনতত্ত্বের জনক বলা হয়। বিজ্ঞানী হুগো দ্য ভ্রিস (হল্যান্ড), কার্ল করেন্স (জার্মানি), এরিখ চেরমাক (অস্ট্রিয়া) মেন্ডেলের গবেষণার ফলাফল পুনরাবিষ্কার করেন-১৯০০ সালে।

 বংশগতি বিদ্যা

ক্রোমোজোম

বংশগতির প্রধান উপাদান হচ্ছে ক্রোমোজোম । নিউক্লিয়াসে অবস্থিত নির্দিষ্ট সংখ্যক সুতার মতো যে অংশগুলো জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্য বহন করে তাদের ক্রোমোজোম বলে। ক্রোমোসোম নিউক্লিক এসিড ( DNA, RNA ) , প্রোটিন ( হিস্টোন ও ননহিস্টোন ) , ধাতব আয়ন এবং বিভিন্ন এনজাইম নিয়ে গঠিত। ক্রোমোজোমের গঠন ও আকার সম্বন্ধে আমরা যে ধারণা পাই তা প্রধানত মাইটোসিস কোষ বিভাজনের প্রোফেজ ধাপে সৃষ্ট ক্রোমোজোম থেকে পাই। প্রতিটি ক্রোমোজোমের প্রধান দুটি অংশ থাকে ক্রোমাটিড ও সেন্ট্রোমিয়ার। মাইটোসিস কোষ বিভাজনের প্রোফেজ ধাপে প্রত্যেকটা ক্রোমোজোম লম্বালম্বিভাবে বিভক্ত হওয়ার পর যে দুটি সমান আকৃতির সুতার মতো অংশ গঠন করে তাদের প্রত্যেকটিকে ক্রোমাটিড বলে। ক্রোমাটিড দুটি যে নির্দিষ্ট স্থানে পরস্পর যুক্ত থাকে তাকে সেন্ট্রোমিয়ার বলে। কোষ বিভাজনের সময় স্পিন্ডল তন্তু সেন্ট্রোমিয়ারের সাথে যুক্ত হয়।

জীবের এক একটি বৈশিষ্ট্যের জন্য একাধিক জিন কাজ করে, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটিমাত্র জিন বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্যকে নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষের চোখের রং, চুলের প্রকৃতি, চামড়ার রং ইত্যাদি সবই জিন কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। মানুষের মতো অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যগুলোও তাদের ক্রোমোজোমে অবস্থিত জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ক্রোমোজোম জিনকে এক বংশ থেকে পরবর্তী বংশে বহন করার জন্য বাহক হিসাবে কাজ করে বংশগতির ধারা অক্ষুণ্ণ রাখে। মিয়োসিস কোষ বিভাজনের দ্বারা বংশগতির এ ধারা অব্যাহত থাকে। ক্রোমোজোম বংশগতির ধারা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য কোষ বিভাজনের সময় জিনকে সরাসরি মাতাপিতা থেকে বহন করে পরবর্তী বংশধরে নিয়ে যায়। এ কারণে ক্রোমোজোমকে বংশগতির ভৌতভিত্তি বলা হয়। সুতরাং এ আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম মিয়োসিস কোষ বিভাজনের মাধ্যমে বংশগতির ধারা অব্যাহত থাকে এবং ক্রোমোজমের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বংশানুক্রমে প্রতিটি প্রজাতির স্বকীয়তা রক্ষিত হয়।

হ্যাপ্লয়েড সেট ক্রোমোজোম: ক্রোমোসোমের সংখ্যা প্রজাতি নির্দিষ্ট। শুক্রাণু বা ডিম্বাণু দুই ধরনের জননকোষে ক্রোমোসোমের সংখ্যা ঐ প্রজাতি নির্দিষ্ট ক্রোমোজোম সংখ্যার অর্ধেক হয় বলে একে গ্যামিটিক একক বা হ্যাপ্লয়েড সেট বলে। হ্যাপ্লয়েড সেট ক্রোমোসোমে জীনের সমষ্টিকে জীনোম বলে।

ডিপ্লয়েড কোষ : ডিপ্লয়েড বলতে বোঝায় দুই সেট (set) ক্রোমোজোম বিশিষ্ট। অর্থাৎ মূল বা হ্যাপ্লয়েড সংখ্যক ক্রোমোজোমের দুই সেট উপস্থিত এমন। এটি “2n” দ্বারা প্রকাশ করা হয়। একটি কোষের নিউক্লিয়াস দুই সেট ক্রোমোজোম বিশিষ্ট হলে তাকে ডিপ্লয়েড কোষ বলে।

  • ১৮৭৫ সালে ক্রোমোজোম আবিষ্কার করেন- স্ট্রাসবুর্গার (Strasburger)।
  • ১৮৮৮ সালে ক্রোমোজোমের দ্বিবিভাজন বর্ণনা করেন - Walter Flemming
  • ১৯৬৫ সালে ক্রোমোজোমের আণবিক গঠনের ফোন্ডেড ফাইবার মডেলের বর্ণনা দেন- ডুপ্রে।
  • Myrmecia Pilosule প্রজাতিভূক্ত পিপড়াতে সবচেয়ে কম সংখ্যক ক্রোমোজোম পাওয়া যায়: পুরুষ পিপড়ায় ১টি এবং স্ত্রী পিপড়ায় ২টি ক্রোমোজোম থাকে।
  • ফার্নবর্গীয় উদ্ভিদে সবচেয়ে বেশি ক্রোমোজোম পাওয়া যায়: (১২৬০টি)।
  • মানুষের দেহকোষে ক্রোমোসোম সংখ্যা: ডিপ্লয়েড (2n) বা ২৩ জোড়া (২২ জোড়া অটোসোম, ১ জোড়া সেক্স ক্রোমোসোম )।
  • মানুষের জননকোষে ক্রোমোসোম সংখ্যাঃ হ্যাপ্লয়েড [N] বা ২৩ টি (২২টি অটোসোম , ১ টি সেক্স ক্রোমোসোম)।
  • শুক্রাণুতে ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২২টি অটোসোম; ১টি সেক্স ক্রোমোসোম (Y)
  • ডিম্বাণুতে ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২২টি অটোসোম; ১টি সেক্স ক্রোমোসোম (X)।
  • পুরুষের দেহে কি সেক্স ক্রোমোসোম থাকে: XY
  • মহিলার দেহে কি সেক্স ক্রোমোসোম থাকে: XX.
  • সন্তান পুত্র বা কন্যা হওয়ার জন্য কে দায়ী: বাবা। যেহেতু সন্তান পুত্র বা কন্যা হওয়া নির্ভর করে X এবং Y ক্রোমোজোমের উপর। আর মহিলার দেহে কোনো Y ক্রোমোসোম বিদ্যমান না থাকায় সন্তান পুত্র বা কন্যা হওয়ার জন্য XY সেক্স ক্রোমোসোম বহনকারী পিতাই দায়ী।

কিছু জীবের ক্রোমোসোম সংখ্যাঃ

  • ধানগাছ : ২৪
  • বিড়াল: ৩৮
  • কবুতর: ৮০
  • মাছি : ১২
  • কুকুর : ৭৮
  • গরু : ৬০
  • কুনোব্যাঙ: ২২
  • মুরগি : ৭৮
  • ছাগল : ৬০
  • ভেড়া : ৫৪

মানুষের ক্রোমোজোম : মানুষের ক্রোমোজোম দুটি প্রকারে বিভক্ত করা যেতে পারে যথাঃ ক) অটোসোম খ) সেক্স-ক্রোমোসোম।

অটোসোম : যে সকল ক্রোমোসোম জীবের দৈহিক বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে অটোসোম বলে।

সেক্স ক্রোমোজোম : যে ক্রোমোসোম জীবের যৌন বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে সেক্স ক্রোমোসোম বলে।

ডিএনএ (DNA)

ডিএনএ (DNA) : ক্রোমোজোমের প্রধান উপাদান ডিএনএ হলো ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড (Deoxyribo Nucleic Acid)। এটি সাধারণত দুই সূত্রবিশিষ্ট পলিনিউক্লিওটাইডের সর্পিলাকার গঠন। একটি সূত্র অন্যটির পরিপুরক। এতে পাঁচ কার্বনযুক্ত শর্করা, নাইট্রোজেনঘটিত বেস বা ক্ষার (এডিনিন, পুরানিন, সাইটোসিন ও থাইমিন) এবং অজৈব ফসফেট থাকে। এই তিনটি উপাদানকে একত্রে 'নিউক্লিওটাইড' বলে। DNA ক্রোমোজোমের স্থায়ী পদার্থ। মার্কিন বিজ্ঞানী Watson এবং ইংরেজ বিজ্ঞানী Crick 1953 সালে প্রথম DNA অণুর ডাবল হেলিক্স (Double helix) বা দ্বি-সূত্রী কাঠামোর বর্ণনা দেন এবং এ কাজের জন্য তাঁরা নোবেল পুরুস্কার পান। নাইট্রোজেন বেসগুলো দুধরনের, পিউরিন এবং পাইরিমিডিন। এডিনিন (A) ও গুয়ানিন (G) বেস হলো পিউরিন এবং সাইটোসিন (C) ও থায়ামিন (T) বেস হলো পাইরিমিডিন। DNA ক্রোমোজোমের প্রধান উপাদান এবং বংশগতির রাসায়নিক ভিত্তি (Chemical basis of heredity)। DNA-ই জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রকৃত ধারক এবং বাহক, যা জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সরাসরি বহন করে মাতাপিতা থেকে তাদের বংশধরে নিয়ে যায়।

আরএনএ (RNA)

আরএনএ (RNA) : RNA হলো রাইবোনিউক্লিক এসিড (Ribonucleic Acid)। অধিকাংশ RNA-তে একটি পলিউক্লিওটাইডের সূত্র থাকে। এতে পাঁচ কার্বনবিশিষ্ট রাইবোজ শর্করা, অজৈব ফসফেট এবং নাইট্রোজেন বেস (এডিনিন, গুয়ানিন, সাইটোসিন এবং থায়ামিনের পরিবর্তে ইউরাসিল) থাকে। RNA ভাইরাসের ক্রোমোজোমে স্থায়ী উপাদান হিসেবে RNA পাওয়া যায়। কিন্তু কিছুসংখ্যক ভাইরাসের ক্ষেত্রে (যেমন- TMV, Tobacco Mosaic Virus) DNA অনুপস্থিত। অর্থাৎ যে সমস্ত ভাইরাস DNA দিয়ে গঠিত নয় তাদের নিউক্লিক এসিড হিসেবে থাকে RNA। এসব ক্ষেত্রে RNA-ই বংশপতির বস্তু হিসেবে কাজ করে।

জিন (Gene)

জিন (Gene) : জীবের সব দৃশ্য এবং অদৃশ্যমান লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী এককের নাম জিন। এর অবস্থান জীবের ক্রোমোজোমে। ক্রোমাজোমের যে স্থানে জিন অবস্থান করে, তাকে লোকাস (Locus) বলে। সাধারণত একটি বৈশিষ্ট্যের জন্য একটি নির্দিষ্ট জিন থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একাধিক জিন মিলিতভাবে একটি বৈশিষ্ট্য প্রকাশে সহায়তা করে। আবার কোনো কোনো সময় একটি জিন একাধিক বৈশিষ্ট্যও নিয়ন্ত্রণ করে। বিভিন্ন গবেষণার তত্ত্ব থেকে জানা গেছে, জিনই বংশগতির নিয়ন্ত্রক। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে দ্বিসূত্রক DNA নিজের হুবহু অনুলিপি করতে পারে। আবার, DNA থেকে প্রয়োজনীয় সংকেতের অনুলিপি নিয়ে RNA সাইটোপ্লাজমের রাইবোজোমে আসে এবং সেই সংকেত অনুসারে সেখানে প্রোটিন তৈরি হয়। সুকেন্দ্রিক কোষের ক্ষেত্রে সেই প্রোটিন প্রথমে জমা হয় এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামে। সেখান থেকে গলজি বস্তু এবং ভেসিকলগুলোর দ্বারা সেই প্রোটিনে নানাবিধ পরিবর্তন হয় এবং তা উপযুক্ত স্থানে বাহিত হয়। প্রাককেন্দ্রিক কোষে অবশ্য সরাসরি প্রোটিনগুলো গন্তব্যে পৌঁছায়। প্রোটিনগুলোই মূলত নির্ধারণ করে প্রাণরাসায়নিক বিক্রিয়াগুলোর গতি-প্রকৃতি এবং তা থেকেই পরিবেশের সাপেক্ষে নির্ধারিত হয় জীবের বৈশিষ্ট্যাবলি। কোনো জীবের গঠন থেকে আচরণ পর্যন্ত সবই এই বৈশিষ্ট্যগুলোর আওতায় পড়ে। তাই বলা যায়:
DNA → RNA → প্রোটিন → বৈশিষ্ট্য।

মাতা-পিতার বৈশিষ্ট্য উদ্ভিদের বংশধরদের মধ্যে কীভাবে প্রকাশ পায়, সে সম্বন্ধে বিজ্ঞানী গ্রেগর জোহান মেন্ডেল 1866 সালে মটরশুঁটি গাছ নিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যবান তত্ত্ব আবিষ্কার করেছিলেন। মেন্ডেল একটি লম্বা ও একটি খাটো মটর গাছ নিয়ে কৃত্রিম উপায়ে লম্বা গাছের পরাগরেণু খাটো গাছের গর্ভমুণ্ডে এবং খাটো গাছের পরাগরেণু লম্বা গাছের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তর করে এদের প্রজনন ঘটান। অন্য কোনো পরাগরেণু যাতে আসতে না পারে, সেজন্য তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নেন। যেহেতু লম্বা গাছের জিন প্রকট, তাই এ থেকে উৎপন্ন বীজ বুনে দেখা গেল সব গাছই লম্বা হয়েছে; কোনো খাটো গাছ নেই। এই গাছগুলোতে কোনো খাটো গাছের জিন বাহক হিসেবে রয়ে গেছে কি না পরীক্ষা করার জন্য এদের একটি গাছকে স্বপরাগায়নের মাধ্যমে প্রজনন ঘটিয়ে তা থেকে উৎপন্ন বীজ বুনে দেখা গেল যে এতে লম্বা ও খাটো দুরকমের গাছই রয়েছে, যার মধ্যে তিন ভাগ গাছ লম্বা এবং এক ভাগ গাছ খাটো। মেন্ডেলের এই তত্ত্ব উদ্ভিদ ও প্রাণীর সুপ্রজননে প্রয়োগ করা হয়। কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উদ্ভিদ বা প্রার্থীর মধ্যে নিয়ন্ত্রিত যৌন প্রজনন ঘটিয়ে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বংশধর সৃষ্টি করা হয়। এদের মধ্যে থেকে কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্য বেছে নিয়ে সুপ্রজননের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যের উদ্ভিদ ও প্রাণী সৃষ্টি করা হয়। বর্তমানে উন্নত জাতের শস্য উৎপাদনের এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।

DNA , RNA , Gene এর তথ্যকণিকা

  • DNA এর পূর্ণরূপ: ডি অক্সি রাইবো নিউক্লিক এসিড। ১৮৬৮ সালে Miescher প্রথম DNA আবিষ্কার করেন।
  • RNA এর পূর্ণরূপ: রাইবো নিউক্লিক এসিড।
  • নিউক্লিক এসিড কি: নিউক্লিওটাইডের পলিমার।
  • নিউক্লিওটাইড কি উপাদান দিয়ে গঠিত: নাইট্রোজেন বেস + পেন্টোজ সুগার + ফসফেট গ্রুপ।
  • নিউক্লিওটাইডের উদাহরণ: ATP, ADP, AMP, GTP ইত্যাদি।
  • ATP এর পূর্ণরূপ: Adenosine Triphosphate.
  • নিউক্লিওসাইড যে উপাদান দিয়ে গঠিত: নাইট্রোজেন বেস + পেন্টোজ সুগার।
  • নিউক্লিওসাইডের উদাহরণ: অ্যাডিনোসিন, গুয়ানোসিন ইত্যাদি।
  • নাইট্রোজেন বেস প্রকারভেদ: নাইট্রোজেন বেস প্রধানত দুই ধরনের।
    ক) পিউরিন: অ্যাডিনিন, গুয়ানিন।
    খ) পাইরিমিডিন: সাইটোসিন, থাইমিন, ইউরাসিল।
  • DNA- তে যে নাইট্রোজেন বেস থাকে:
    দুইটি পিউরিন বেস : অ্যাডিনিন ও গুয়ানিন ।
    দুইটি পাইরিমিডিন বেসঃ সাইটোসিন ও থাইমিন ।
  • RNA তে যে নাইট্রোজেন বেস থাকে:
    দুইটি পিউরিন বেস : অ্যাডিনিন ও গুয়ানিন ।
    দুইটি পাইরিমিডিন বেসঃ সাইটোসিন ও ইউরাসিল।
  • নিউক্লিক এসিডে যে সুগার থাকে:
    DNA - তে : ডিঅক্সিরাইবোজ সুগার,
    RNA - তে : রাইবোজ সুগার।
  • DNA কোষের কোথায় বিদ্যমান: নিউক্লিয়াসে।
    • নিউক্লিয়াস ছাড়াও DNA থাকে - মাইটোকন্ড্রিয়া ও প্লাস্টিডে।
    • DNA অণুর শোষণের ক্ষমতা অত্যন্ত বেশি - অতিবেগুনী (UV) রশ্মি।
    • কোষ বিভাজনের ইন্টারফেজ দশায় একটি DNA দ্বিসূত্রক থেকে দুটি হুবহু একই রকম DNA দ্বিসূত্রক গঠিত হওয়াকে বলে - DNA প্রতিলিপন (Replication)
    • RNA থেকে DNA তৈরির প্রক্রিয়াকে বলা হয়- রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন
  • জীন : DNA এর একটি খন্ডাংশ যা জীবের বংশগতির মৌলিক ভৌত ও কার্যকরী একক এবং বংশ থেকে বংশাত্তরে জীবের বৈশিষ্ট্য বহন করে, তাকে জীন বা ফ্যাক্টর বলে।
  • মানবদেহের প্রতিটি কোষে জীনের সংখ্যাঃ মানবদেহের প্রতিটি কোষ ১,০০,০০০ পর্যন্ত জীন বহন করতে পারে।

DNA ও RNA এর পার্থক্য

পার্থক্য
DNA RNA
১. ডিঅক্সিরাইবোজ শর্করা ১. রাইবোজ শর্করা
২. নাইট্রোজেন বেসঃ আরজিনিন, সাইটোসিন, গুয়ানিন, থাইমিন। ২. নাইট্রোজেন বেসঃ অ্যাডিনিন, সাইটোসিন, গুয়ানিন ও ইউরাসিল।
৩. প্রতিলিপনে সক্ষম ৩. প্রতিলিপনে সক্ষম নয়
৪. চিরস্থায়ী ৪. ক্ষণস্থায়ী
৫. অনুলিপনের মাধ্যমে নতুন DNA সৃষ্টি হয় ৫. নতুনভাবে RNA সৃষ্টি হয় কোন অনুলিপন হয়না।
৬. সাধারনত ক্রোমোসোমে থাকে ৬. ক্রোমোসোম, সাইটোপ্লাজম ও নিউক্লিয়াসে থাকে।
৭. DNA অণুর কোন প্রকারভেদ নেই ৭. RNA অণুর কয়েক প্রকার যথাঃ RNA, mRNA, rRNA ও জেনেটিক RNA
৮. RNA অণুর অবস্থান সাইটোপ্লাজম, ক্রোমোজোম ও রাইবোজোমে। ৮. DNA সাধারণত ক্রোমোজোমে অবস্থান করে। কখনও কখনও মাইটোকনড্রিয়া ও ক্লোরোপ্লস্টে DNA পাওয়া যায়।

জেনেটিক ডিসঅর্ডার বা বংশগতি ব্যাধি/অস্বাভাবিকতা

কিছু জিনগত অসুখ আছে, যেগুলোতে মিউটেশন হয় সেক্স ক্রোমোজোমে অবস্থিত জিনগুলোতে। এসব অসুখকে বলে সেক্স-লিংকড অসুখ (Sex-linked disorder)। যেহেতু Y ক্রোমোজোম খুবই ছোট আকৃতির এবং এতে জিনের সংখ্যা খুব কম, তাই বেশিরভাগ সেক্স লিংকড অসুখ হয় X ক্রোমোজোমে অবস্থিত জিনগুলোর মিউটেশনের কারণে। মেয়েদের যেহেতু দুটি X ক্রোমোজোম থাকে, সেহেতু একটি X ক্রোমোজোমে মিউটেশন থাকলেও আরেকটি X ক্রোমোজোম স্বাভাবিক থাকার কারণে রোগলক্ষণ প্রকাশ পায় না। দুটি X ক্রোমোজোমেই একই সাথে একই অসুখের মিউটেশন থাকার সম্ভাবনা খুব কম বলে মেয়েরা সাধারণ সেক্স-লিংকড রোগে আক্রান্ত হয় না, বড়জোর বাহক (carrier) হিসেবে কাজ করে (যে নিজে অসুস্থ নয় কিন্তু অসুস্থতার জিন বহন করে, তাকে বাহক বলে)। পুরুষের যেহেতু X ক্রোমোজোম মাত্র একটি, তাই তারা সেক্স-লিংকড অসুখের বাহক হয় না, সেটিতে অসুখ-সৃষ্টিকারী মিউটেশন থাকলেই তাদের ভিতর অসুখের লক্ষণ প্রকাশ পায়।

কালার ব্লাইন্ড বা বর্ণান্ধতা: কালার ব্লাইন্ড বা বর্ণান্ধতা এমন এক অবস্থা যখন কেউ কোন রং সঠিকভাবে চিনতে পারে না। রং চিনতে আমাদের চোখের স্নায়ু কোষে রং সনাক্তকারী পিগমেন্ট থাকে। কালার ব্লাইন্ড অবস্থায় রোগীদের চোখে স্নায়ু কোষের রং সনাক্তকারী পিগমেন্ট এর অভাব থাকে। যদি কারো চোখে একটি পিগমেন্টের অভাব থাকে, তাহলে সে লাল ও সবুজ এর পার্থক্য করতে পারে না। এটা সর্বজনীন কালার ব্লাইন্ড সমস্যা। একাধিক পিগমেন্ট না থাকার কারণে লাল এবং সবুজ রং ছাড়াও রোগী নীল এবং হলুদ রং পার্থক্য করতে পারে না। পুরুষদের বেলায় সাধারণত প্রতি 10 জনে 1 জনকে কালার ব্লাইন্ড হতে দেখা যায়। তবে খুব কম নারীরাই এই অসুখে ভোগেন। বংশগতি ছাড়াও কোনো কোনো ঔষধ, যেমন বাত রোগের জন্য হাইড্রক্সি-ক্লোরোকুইনিন সেবনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে চোখের রঙিন পিগমেন্ট নষ্ট হয়ে রোগী কালার ব্লাইন্ড হতে পারে।

থ্যালাসেমিয়া: থ্যালাসেমিয়া রক্তের লোহিত রক্ত কণিকার এক অস্বাভাবিক অবস্থাজনিত রোগের নাম। এই রোগে লোহিত রক্ত কণিকাগুলো নষ্ট হয়। ফলে রোগী রক্তশূন্যতায় ভোগে। এই রোগ বংশপরম্পরায় হয়ে থাকে। থ্যালাসেমিয়া বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বংশবাহিত রক্তজনিত সমস্যা। ধারণা করা হয়, দেশে প্রতিবছর 7000 শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং বর্তমানে প্রায় এক লাখ রোগী আছে। এটি একটি অটোসোমাল রিসিসিভ ডিজঅর্ডার, অর্থাৎ বাবা ও মা উভয়েই এ রোগের বাহক বা রোগী হলে তবেই তা সন্তানে রোগলক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পায়। চাচাতো-মামাতো-খালাতো ভাইবোন বা অনুরূপ নিকট আত্মীয়য়ের মধ্যে বিয়ে হলে এ ধরনের রোগে আক্রান্ত সন্তান জন্ম দেওয়ার আশঙ্কা বহুগুণ বেড়ে যায়। জিনের প্রাপ্তির উপর নির্ভর করেও থ্যালাসেমিয়াকে দুভাবে দেখা হয়, থ্যালাসেমিয়া মেজর এবং থ্যালাসেমিয়া মাইনর। থ্যালাসেমিয়া মেজরের বেলায় শিশু তার বাবা ও মা দুজনের কাছ থেকেই থ্যালাসেমিয়া জিন পেয়ে থাকে। থ্যালাসেমিয়া মাইনরের বেলায় শিশু থ্যালাসেমিয়া জিন তার বাবা অথবা তার মায়ের কাছ থেকে পেয়ে থাকে। এ ধরনের শিশুরা থ্যালাসেমিয়ার কোনো উপসর্গ দেখায় না। তবে থ্যালাসেমিয়া জিনের বাহক হিসেবে কাজ করে।

লক্ষণ : তীব্র থ্যালাসেমিয়ার কারণে জন্মের আগেই মায়ের পেটে শিশুর মৃত্যু হতে পারে। থ্যালাসেমিয়া মেজর আক্রান্ত শিশুরা জন্মের পর প্রথম বছরেই জটিল রক্তশূন্যতা রোগে ভোগে।

চিকিৎসা : সাধারণত নির্দিষ্ট সময় পর পর রক্ত প্রদান এবং নির্দিষ্ট ঔষধ খাইয়ে থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা দেওয়া হয়। রোগীদের লৌহসমৃদ্ধ ফল বা ঔষধ খেতে হয় না, কারণ তা শরীরে জমে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতিসাধন করে। এছাড়া যকৃৎ নষ্ট হলে জন্ডিস, অগ্ন্যাশয় নষ্ট হলে ডায়াবেটিস ইত্যাদি নানা প্রকার রোগ ও রোগলক্ষণ দেখা দিতে পারে। থ্যালাসেমিয়া রোগীর 30 বছরের বেশি বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম, যদি এসব সমস্যা একবার শুরু হয়।

মেন্ডেলের সূত্র

গ্রেগর জোহান মেন্ডেল বংশগতির দুটি সূত্র প্রদান করেন । জীনতত্ত্বের জনক বলে পরিচিত মেন্ডেল মূলত পেশায় অস্ট্রিয়ার একজন ধর্মযাজক ছিলেন। গ্রেগর জোহান মেন্ডেলের প্রথম সূত্রের ফিনোটাইপিক অনুপাত ৩:১। মেন্ডেলের দ্বিতীয় সূত্রের অনুপাত ৯:৩: ৩:১। মেন্ডেলের প্রথম সূত্রের অপর নাম - মনোহাইব্রিড ক্রস সূত্র/ জনন কোষ শুদ্ধতার সূত্র/ পৃথকীকরণ সূত্র। মেন্ডেলের দ্বিতীয় সূত্রের অপর নাম - স্বাধীনভাবে মিলনের বা বন্টনের সূত্র। ১ম সূত্রের জিনোটাইপ-১: ২:১ । তিনি মটরশুটি গাছ নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছিলেন যা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে ।

  • ফিনোটাইপ : জীবের বাহ্যিক লক্ষণকে ফিনোটাইপ বলে। এটি জীবের আকার, আকৃতি, বর্ণ প্রকাশ করে। সরাসরি দেখেই কোন জীবের ফেনোটাইপ জানা যায়। যেমন: লম্বা, খাটো ইত্যাদি।
  • জিনোটাইপ : কোন জীবের লক্ষণ নিয়ন্ত্রণকারী জীনযুগলকে জিনোটাইপ বলে। একটি জীবের জিনোটাইপ তার পূর্ব বা উত্তরপুরুষ থেকে জানা যায়।
  • জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (Genetic Engineering): একটি কোষ থেকে কোন সুনির্দিষ্ট জীন নিয়ে অন্য কোষে স্থাপন ও কর্মক্ষম করার ক্ষমতাকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বলে। অন্যভাবে বলা যায়, নতুন বৈশিষ্ট্য সৃষ্টির জন্য কোনো জীবের DNA তে পরিবর্তন ঘটানোকে Genetic Engineering বলে।
  • মিউটেশন : অতিবেগুনী রশ্মি, এক্স-রে, ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদির প্রভাবে কখনও কখনও জীবের ক্রোমোজোম বা জিনের চিরস্থায়ী পরিবর্তন ঘটে। এ পরিবর্তনকে মিউটেশন বলে।
  • সংকরায়ন : দুটি ভিন্ন প্রজাতির জীবের মধ্যে যৌন মিলনকে সংকরায়ন বলে।
  • এটাভিজম : কয়েক পুরুষ পূর্বের বৈশিষ্ট্য হঠাৎ করে নতুন বংশধরে দেখা দিলে তাকে এটাভিজম বলে।
  • জীবনের ভাষা (Language of Life) কোনটিকে বলা হয়: প্রোটিনকে।
  • এপিস্ট্যাসিস (Epistasis) বা বাধক জিন: যে জিনটি অপর জিনের বৈশিষ্ট্য প্রকাশে বাধা দান করে, তাকে এপিস্ট্যাটিক জিন বা বাধক জিন বলে। অথবা, এক কথায় বলা যায় যে, একটি জিন অপর জিনের কাজকে প্রকাশ করতে দেয় না। একটি জিন অপর একটি জিনের কার্যকারীতাকে প্রকাশ করতে না দিলে যে ঘটনা ঘটে তাকেই এপিস্ট্যাসিস বলে।
  • জীনোম (Genome): যে কোন প্রজাতির প্রতিটি কোষের নিউক্লিয়াসের ক্রোমোজোমের হ্যাপ্লয়েড সেটকে জীনোম বলে।
  • সম্পূরক জীন (Supplementary gene): দুটি স্বাধীন কিন্তু প্রকট জিনের পারস্পরিক ক্রিয়া এমনভাবে ঘটে যে তখন জীবদেহে নতুন ধরনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়, এ প্রকার জিনগুলোকেই সম্পূরক জিন বলে।
  • হাইপোস্ট্যাটিক জিন : যে জিনটি বৈশিষ্ট্য প্রকাশে বাধা পায়, তাকে হাইপোস্ট্যাটিক জিন বা বাধাপ্রাপ্ত জিন বলে।
  • লোকাস : ক্রোমোজোমের যে স্থানে জিন অবস্থান করে তাকে লোকাস (Locus) বলে।
  • প্রকট বৈশিষ্ট্য ও প্রকট জিন : মাতা পিতা থেকে প্রথম বংশধরে জীবের যে বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় তাকে প্রকট বৈশিষ্ট্য বলে এবং এই প্রকট বৈশিষ্ট্য প্রকাশের জন্য যে জিন দায়ী থাকে তাকে প্রকট জিন বলে।
  • প্রচ্ছন্ন জিন : যে জিনের বৈশিষ্ট্যটি প্রথম বংশধরে প্রকাশ পায়না তবে দ্বিতীয় বংশধরে এক চতুর্থাংশ জীবে প্রকাশ পায় তাকে প্রচ্ছন্ন জিন বলে।
  • ক্রায়োসার্জারি: ক্রায়োসার্জারি হলো এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যার মাধ্যমে অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায় শরীরের অস্বাভাবিক বা রোগাক্রান্ত কোষগুলোকে ধ্বংস করা যায়।
  • বায়োমেট্রিক্স : বায়োমেট্রিক্স হলো বায়োলজিক্যাল ডেটা পরিমাপ এবং বিশ্লেষণ করার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। বায়োমেট্রিক্সের মাধ্যমে মানুষের দেহের বৈশিষ্ট্য যেমন- ফিঙ্গার প্রিন্ট, ডিএনএ, চেহারা, চোখের রেটিনা ইত্যাদি মেপে এবং বিশ্লেষণ করে বৈধতা নির্ণয় করে। সহজ কথায় আঙ্গুল বা দেহের যেকোন অঙ্গের ছাপকে ব্যবহার করে কম্পিউটার সফটওয়্যার নির্ভর যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে তাই হলো বায়োমেট্রিক্স। বায়োমেট্রিক্স বর্তমানে ব্যক্তি সনাক্তকরণ এবং সত্যতা যাচাই করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • বায়োইনফরমেটিক্স : বায়োইনফরমেটিক্স হলো বিজ্ঞানের সেই শাখা, যা Biological data এনালাইসিস করার জন্য কম্পিউটার প্রযুক্তি, ইনফরমেশন থিউরি এবং গাণিতিক আনকে ব্যবহার করে অর্থাৎ জীব বিজ্ঞানের সমস্যাগুলো যখন কম্পিটার প্রযুক্তি কৌশল (কম্পিউটেশনাল টেকনিক) ব্যবহার করে সমাধান করা হয় তখন তাকে বায়োইনফরমেটিক্স বলে।
  • প্লাজমিড : প্লাজমিড হল স্বজননক্ষম ও বহিঃ ক্রোমোসোমীয় বৃত্তকার দ্বৈত DNA অণু। প্লাজমিডকে জৈব প্রযুক্তির অন্যতম মৌলিক হাতিয়ার বলা হয়।
  • রিকম্বিনেন্ট DNA: একটি DNA অণুর কাঙ্খিত দুই জায়গা কেটে খন্ডটিকে আলাদা করে অন্য এক DNA অণুর নির্দিষ্ট জায়গায় আটকে দেওয়ার ফলে যে নতুন ধরনের DNA পাওয়া যায়, তাকে রিকম্বিনেন্ট DNA বলে। পল বর্গ ১৯৭২ সালে সর্ব প্রথম রিকম্বিনেন্ট DNA অণু তৈরি করেন। সাধারণত E. coli থেকে প্লাজমিড সংগ্রহ করা হয়। রিকম্বিনেন্ট DNA তৈরীর প্রক্রিয়াকে রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তি বলা হয়।
  • লাইগেজ এনজাইম : যে এনজাইম গাঁথন বা জোড়া লাগার কাজে ব্যবহৃত হয়।
  • রেস্ট্রিকশন এনজাইম : যে এনজাইম প্রয়োগ করে DNA অণুর সুনির্দিষ্ট অংশ কর্তন করা যায়, তাকে রেস্ট্রিকশন এনজাইম বলে।
  • জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রয়োগ:
    • ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ ও প্রাণী তৈরি
    • ব্যাকটেরিয়াকে পরিবর্তন করে কল্যাণমুখী কাজে ব্যবহার করা।
    • কীটপতঙ্গ, ছত্রাক প্রভৃতির জৈবনিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ফসল রক্ষা।
    • বর্জ্য পদার্থের পচন ও বিষাক্ত বর্জ্যের রূপান্তর।
    • বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ উৎপাদন যেমন: হরমোন, ভ্যাকসিন, অ্যান্টিবায়োটিক, এনজাইম।
    • জ্বালানী তৈরি
  • টিস্যু কালচার প্রযুক্তি: সাধরণভাবে উদ্ভিদ টিস্যুকালচার বলতে উদ্ভিদের যেকোন বিভাজনক্ষম অঙ্গ থেকে (যেমনঃ শীর্ষমুকুল, কক্ষমুকুল, কচিপাতা ইত্যাদি) বিছিন্ন কোন টিস্যু সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত মিডিয়ামে কালচার (আবাদ) করাকেই বোঝায়। এরূপ কালচার পদ্ধতির মাধ্যমে উল্লিখিত টিস্যু থেকে নতুন চারাউদ্ভিদ উৎপাদন করা টিস্যু কালচার পদ্ধতির প্রাথমিক উদ্দেশ্য।
  • সংকর জাত : দুটি প্রজাতির সম্মিলনে সৃষ্ট জীবের জাত।
  • বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো কোন প্রাণীর 'জিনগত নকশা' উন্মোচন করেছেন: মহিষ ।

ক্লোনিং

কোন জীব থেকে সম্পূর্ণ অযৌন প্রক্রিয়ার হুবহু নতুন জীব সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে ক্লোনিং বলে। ক্লোন শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন- ব্রিটিশ বিজ্ঞানী হে বি এস হালডন, ১৯৬৩ সালে।

  • কোন জীব থেকে অযৌন প্রজনন প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট জীবকে কি বলে: ক্লোন।
  • ক্লোনিং এর জনক : ড. ইয়ান উইলমুট।
  • ড. ইয়ান উইলমুট ক্লোন পদ্ধতিতে প্রথম কোন প্রাণী জন্ম দেন : ভেড়া।
  • সর্বপ্রথম ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে সৃষ্ট ভেড়ার নাম : ডলি।
  • ডলির জন্ম হয় : ৫ জুলাই, ১৯৯৬ সালে স্কটল্যান্ডের এডিনবরায়। (যুক্তরাজ্যে)।
  • বিখ্যাত গায়িকা ডলি পারটনের নামানুসারে ক্লোন মেষ শাবকের নাম রাখা হয় ডলি।
  • 'ডলি' আর্থাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়েছিল।
  • 'ডলি' মারা যায়: ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০০৩।
  • বিশ্বের প্রথম ক্লোন বিড়ালের নাম: সিসি (কার্বন কপি)।
  • বিশ্বের প্রথম ক্লোন বানর শাবকের নাম: টেট্রা।
  • বিশ্বের প্রথম ক্লোন ঘোড়ার নাম: প্রমিথিয়া।
  • পৃথিবীর প্রথম ক্লোন মানব শিশুর জন্ম হয়: ২৬ ডিসেম্বর ২০০২ (স্থানীয় সময় ১১.৫৫ টায়)। এই ক্লোন শিশুর জন্ম হয়: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।
  • প্রথম ক্লোন মানব শিশুটির নাম দেয়া হয়: ইভ (কন্যা সন্তান)।
  • কোন সংস্থা এই ক্লোন শিশুটির জন্মদানে সক্ষম হয়: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানব গবেষণা কেন্দ্র ক্লোনেইড।
  • প্রথম ক্লোন শিশু 'ইভ' এর জন্মদানে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন: ক্লোনেইডের প্রধান ব্রিজিট বোইসেলিয়া ।

টেস্ট টিউব শিশু

যে সকল দম্পতি কোনো কারণে সন্তান জন্ম দিতে পারে না, সেই দম্পতির স্ত্রীর ডিম্বাণু শরীর থেকে বের করে এনে স্বামীর শুক্রাণুর সাথে টেস্ট টিউবের মধ্যে রেখে নিষিক্ত করে ২/৩ দিন পর নিষিক্ত ডিম্বাণু ও শুক্রাণু স্ত্রীর জরায়ুতে স্থানান্তরিত করা হলে যে শিশু জন্মগ্রহণ করে, তাকে টেস্ট টিউব বেবি বলে।

  • টেস্ট টিউব বেবির জনক রবার্ট এডওয়ার্ডস - (যুক্তরাষ্ট্র)
  • বিশ্বের প্রথম টেস্ট টিউব বেবি: লুইস ব্রাউন।
  • লুইস ব্রাউন জন্মগ্রহণ করে: ইংল্যান্ডের ওল্ডহেম শহরের কারশো নামক হাসপাতালে।
  • লুইস ব্রাউন জন্মগ্রহণ করে: ১৯৭৮ সালের ২৫ জুলাই রাত ১১.৫৭ মিনিটে।
  • বাংলাদেশে প্রথম টেস্ট টিউব শিশুর জন্ম হয়: ৩০ মে ২০০১
  • বাংলাদেশে প্রথম টেস্ট টিউব শিশুর জন্ম হয়: রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে। (একমাসে ৩টি শিশুর জন্ম হয়)
  • বাংলাদেশের জন্মগ্রহণকারী প্রথম টেস্ট টিউব শিশু তিনটির নাম: হিরা, মনি ও মুক্তা।
  • বাংলাদেশের কোন দম্পতি টেস্ট টিউবের মাধ্যমে সন্তান ধারণ করেন: মোঃ আবু হানিফ ও ফিরোজা বেগম।
  • বাংলাদেশে সর্ব প্রথম টেস্ট টিউব পদ্ধতিতে সন্তান জন্মের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেন: ডা. পারভিন ফাতেমা।
নবীনতর পূর্বতন