কোষ (জীববিজ্ঞান) | Cell

কোষ হচ্ছে জীবদেহের গঠন ও কাজের একক। কোনো কোনো বিজ্ঞানী জীবকোষকে জীবদেহের গঠন ও জীবজ ক্রিয়াকলাপের একক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। লোয়ি (Loewy) এবং সিকেভিজ (Siekevitz) 1969 সালে বৈষম্য ভেদ্য (selectively permeable) পর্দা দিয়ে আবৃত এবং জীবজ ক্রিয়াকলাপের একক যা অন্য সজীব মাধ্যম ছাড়াই নিজের প্রতিরূপ তৈরি করতে পারে, এমন সত্তাকে কোষ বলেছেন। তবে ১৬৬৫ সালে সর্বপ্রথম রবার্ট হুক সেল (cell) নামকরণ করেন এবং এর বর্ণনা দেন । কোষ শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ সেল (cell)। সেল শব্দটি ল্যাটিন শব্দ সেলুলা থেকে এসেছে যার অর্থ একটি ছোট্ট কক্ষ বা কুঠুরি। কোষতত্ত্বের প্রবর্তক স্লাইডেন ও সেয়ান । একটি কোষের আদর্শ আকার হচ্ছে ১০ মাইক্রোমিটার এবং ভর হচ্ছে ১ ন্যানোগ্রাম। দশশত কোটি কোষকে পাশাপশি সাজালে আধা ইঞ্চির মত লম্বা হয় । এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে বৃহত্তম কোষ হচ্ছে উটপাখির ডিম এবং সবচেয়ে ছোট কোষ Mycoplasma gallisepticum - নামক ব্যাকটেরিয়ার কোষ । তবে মানবদেহের সবচেয়ে ছোট কোষ শ্বেতকণিকা । সবচেয়ে দীর্ঘতম কোষ হচ্ছে মানুষের স্নায়ুকোষ (১ মিটার)। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে কোষের সংখ্যা ছয় লক্ষ কোটি থেকে দশ লক্ষ কোটি। ব্যাকটেরিয়া, অ্যামিবা, ম্যালেরিয়া জীবাণু ইত্যাদি এককোষী জীব । কিন্তু মানুষসহ পৃথিবীর অধিকাংশ জীবই বহুকোষী।

কোষের প্রকারভেদ

সকল জীবকোষ এক রকম নয়। এদের মধ্যে গঠনগত পার্থক্য যেমন আছে তেমনই আছে আকৃতি ও কাজের পার্থক্য। নিউক্লিয়াসের গঠনের ভিত্তিতে কোষ দুই ধরনের, আদি কোষ এবং প্রকৃত কোষ।

১. আদিকোষ বা প্রাককেন্দ্রিক কোষ (Prokaryotic cell) : এ ধরনের কোষে কোনো সুগঠিত নিউক্লিয়াস (nucleus) থাকে না। এজন্য এদের আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত কোষও বলা হয়। এসব কোষের নিউক্লিয়াস কোনো পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে না, তাই নিউক্লিও-বস্তু সাইটোপ্লাজমে ছড়ানো থাকে। এসব কোষে মাইটোকন্ড্রিয়া, প্লাস্টিড, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম ইত্যাদি অঙ্গাণু থাকে না তবে রাইবোজোম থাকে। ক্রোমোজোমে কেবল DNA থাকে। নীলাভ সবুজ শৈবাল বা ব্যাকটেরিয়ায় এ ধরনের কোষ পাওয়া যায়। ব্যাকটেরিয়া, ঈস্ট, সায়ানোব্যাকটেরিয়া, নীলাভ সবুজ শৈবাল ইত্যাদি আদি কোষের উদাহরণ । আদি কোষের বৈশিষ্ট্যসমূহ হল :

  • গঠন: সরল ও জটিলতা বর্জিত।
  • নিউক্লিয়াস: সুনির্দিষ্ট নিউক্লিয়াস নেই। DNA অণু থাকলেও সুনির্দিষ্ট নিউক্লিয়ার মেমব্রেন ও নিউক্লিওলাস অনুপস্থিত।
  • ক্রোমাসোম আদি প্রকৃতির। একটি মাত্র DNA অণু ক্রোমোসোমের কাজ সম্পাদন করে।
  • রাইবোজোম ছাড়া অন্য কোন কোষীয় অঙ্গাণু নেই। মাইটোকন্ড্রিয়া আছে।
  • অ্যামাইটোসিস পদ্ধতিতে কোষ বিভাজন হয়।

২. প্রকৃত কোষ বা সুকেন্দ্রিক কোষ (Eukaryotic cell) : এসব কোষের নিউক্লিয়াস সুগঠিত অর্থাৎ নিউক্লিয়ার ঝিল্লি (nuclear membrane) দিয়ে নিউক্লিও-বস্তু পরিবেষ্টিত ও সুসংগঠিত। এসব কোষে রাইবোজোমসহ সকল অঙ্গাণু উপস্থিত থাকে। ক্রোমোজোমে DNA, প্রোটিন, হিস্টোন এবং অন্যান্য উপাদান থাকে। অধিকাংশ জীবকোষ এ ধরনের হয়। মানবদেহের কোষ প্রকৃত কোষের উৎকৃষ্ট উদাহরণ । প্রকৃত কোষের বৈশিষ্ট্যসমূহ হল :

  • গঠনঃ অপেক্ষাকৃত জটিল।
  • নিউক্লিয়াসঃ সুনির্দিষ্ট নিউক্লিয়াস আছে। নিউক্লিয়ার মেমব্রেন ও নিউক্লিওলাস আছে।
  • ক্রোমোসোম সুগঠিত।
  • সাইটোপ্লাজমে বিভিন্ন ধরনের অঙ্গাণু আছে।
  • বিভাজন প্রক্রিয়াঃ মাইটোসিস এবং মিয়োসিস।

কাজের ভিত্তিতে প্রকৃত কোষ দুই ধরনের, দেহকোষ এবং জননকোষ।

১. দেহকোষ (Somatic cell): বহুকোষী জীবের দেহ গঠনে এসব কোষ অংশগ্রহণ করে। মাইটোসিস পদ্ধতিতে বিভাজনের মাধ্যমে দেহকোষ বিভাজিত হয় এবং এভাবে দেহের বৃদ্ধি ঘটে। বিভিন্ন তন্ত্র ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠনে দেহকোষ অংশ নেয়।

২. জননকোষ (Gametic cell): যৌন প্রজনন ও জনঃক্রম দেখা যায়, এমন জীবে জননকোষ উৎপন্ন হয়। মিয়োসিস পদ্ধতিতে জনন মাতৃকোষের বিভাজন ঘটে এবং জনন কোষ উৎপন্ন হয়। অপত্য জননকোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃজনন কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যার অর্ধেক থাকে। পুং ও স্ত্রী জননকোষ মিলিত হয়ে নতুন জীবের দেহ গঠনের সূচনা করে। পুং ও স্ত্রী জননকোষের মিলনের ফলে সৃষ্ট এই প্রথম কোষটিকে জাইগোট (Zygote) বলে। জাইগোট বারবার বিভাজনের মাধ্যমে জীবদেহ গঠন করে।

  • জননকোষের উদাহরণ: জননকোষ দুই ধরনের। যথাঃ শুক্রাণু ও ডিম্বাণু।
  • দেহকোষ বিভাজিত হয়- মাইটোসিস পদ্ধতিতে।
  • দেহকোষের পুনরুজ্জীবন ঘটানোর জন্য প্রয়োজন- প্রোটিন।
  • শুক্রাণু ও ডিম্বাণু- হ্যাপ্লয়েড [n] কিন্তু শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয় ডিপ্লয়েড (2n)।
  • শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয়ের ডিপ্লয়েড (2n) কোষের মিয়োসিস বিভাজনের মাধ্যমে গঠিত হয়- শুক্রাণু [n] ও ডিম্বাণু (n)।
  • শুক্রাণু [n] ও ডিম্বাণুর [2n] নিষেকের ফলে উৎপন্ন জাইগোট বা ভ্রণাণু ডিপ্লমেড (2n)।
  • অকোষীয় - ভাইরাস। কোষের অঙ্গাণুসমূহ উপস্থিত নেই ।
  • এককোষী- ব্যাকটেরিয়া, অ্যামিবা, ম্যালেরিয়া জীবাণু, প্লাজমোডিয়াম।
  • বহুকোষীয় - Spirogyra, Sargassum, Polysiphonia।

কোষের প্রধান অঙ্গাণুসমূহ এবং তাদের কাজ

উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদ ও প্রাণীরা সকলেই প্রকৃত কোষী। প্রতিটি কোষ কতগুলো অঙ্গাণু নিয়ে তৈরি হয়। এসব অঙ্গাণুর অধিকাংশই উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়ের কোষে থাকলেও কিছু অঙ্গাণু আছে, যা কেবল উদ্ভিদকোষে অথবা কেবল প্রাণিকোষে পাওয়া যায়। ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখা যায়, এমন কিছু কোষ অঙ্গাণুর সাথে এবার আমরা পরিচিত হব।

 উদ্ভিদ কোষ  প্রাণী কোষ

কোষপ্রাচীর (cell wall)

কোষপ্রাচীর উদ্ভিদ কোষের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এটি মৃত বা জড়বস্তু দিয়ে তৈরি। প্রাণিকোষে কোষপ্রাচীর থাকে না। কোষপ্রাচীরের রাসায়নিক গঠন বেশ জটিল, এতে সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ, লিগনিন, পেকটিন, সুবেরিন নামক রাসায়নিক পদার্থ থাকে। তবে ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীর প্রোটিন, লিপিড ও পলিস্যাকারাইড দিয়ে এবং ছত্রাকের কোষপ্রাচীর কাইটিন দিয়ে তৈরি। প্রাথমিক কোষপ্রাচীরটি একস্তরবিশিষ্ট। মধ্য পর্দার উপর প্রোটোপ্লাজম থেকে নিঃসৃত কয়েক ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য জমা হয়ে ক্রমশ গৌণপ্রাচীর সৃষ্টি হয়। এ প্রাচীরে মাঝে মাঝে ছিদ্র থাকে, যাকে কূপ বলে। কোষপ্রাচীর কোষকে দৃঢ়তা প্রদান করে, কোষের আকার ও আকৃতি বজায় রাখে। পাশের কোষের সাথে প্লাজমোডেজমাটা (আণুবীক্ষণিক নালি) সৃষ্টির মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে এবং পানি ও খনিজ লবণ চলাচল নিরক্ষ্মণ করে।

সেলুলোজ উদ্ভিদের একটি প্রধান গাঠনিক পদার্থ। উদ্ভিদের কোষ প্রাচীর সেলুলাজ দিয়ে গঠিত। উদ্ভিদের অবকাঠামো নির্মাণে সেলুলোজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদ্ভিদদেহে যেহেতু কোন কঙ্কাল নেই, সেহেতু উদ্ভিদের ভার বহনের দায়িত্ব পালন করে সেলুলোজ । তুলায় সেলুলোজ এর পরিমাণ ৯৪%, লিনেনে ৯০% এবং কাঠে ৬০%। বন ও বস্ত্র শিল্পের প্রধান উপাদান হলো সেলুলোজ।

  • কোষপ্রাচীর গঠনের মূল একক- মাইক্রোফাইব্রিল।
  • উদ্ভিদ কোষের কোষপ্রাচীর সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ, পেক্টোজ, লিগনিন, সুবেরিন প্রভৃতি উপাদান দ্বারা গঠিত ।
  • ছত্রাকের কোষপ্রাচীর কাইটিন নামক কার্বহাইড্রেট দ্বারা গঠিত ।
  • ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীর প্রোটিন, লিপিড ও পলিমার দিয়ে গঠিত।

কোষঝিল্লি (Plasmalemma)

প্রোটোপ্লাজমের বাইরে দুই স্তরের যে স্থিতিস্থাপক পর্দা থাকে, তাকে কোষঝিল্লি বা প্লাজমালেমা বা প্লাজমা মেমব্রেন বলে। কোষঝিল্লির ভাঁজকে মাইক্রোভিলাই বলে। এটি প্রধানত লিপিড এবং প্রোটিন দিয়ে তৈরি। কোষঝিল্লি একটি বৈষম্যভেদ্য পর্দা হওয়ায় অভিস্রবণের মাধ্যমে পানি ও খনিজ লবণ চলাচল নিয়ণ্ত্রণ করে এবং পাশাপাশি কোষগুলোকে পরস্পর থেকে আলাদা করে রাখে।

  • প্লাজমা মেমব্রেন গঠিত প্রধানত- লিপিড ও প্রোটিন অথবা P-L-P দিয়ে।
  • প্লাজমা মেমব্রেনের গঠন সংক্রান্ত ' ফ্লুইড-মোজাইক মডেল' প্রবর্তন করেন - সিঙ্গার ও নিকলসন (১৯৭২)।
  • প্লাজমা মেমব্রেনের ফসফোলিপিড অণুর ফাঁকে ফাঁকে থাকে- কোলেস্টেরল অণু।

প্রোটোপ্লাজম

কোষের ভিতরে যে অর্ধস্বচ্ছ, থকথকে জেলির মতো বস্তু থাকে তাকে প্রোটোপ্লাজম বলে। কোষঝিল্লি দিয়ে ঘেরা সবকিছুই প্রোটোপ্লাজম, এমনকি কোষঝিল্লি নিজেও প্রোটোপ্লাজমের অংশ। কোষঝিল্লী ছাড়াও এখানে আছে সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণুগুলো এবং নিউক্লিয়াস।

  • প্রোটোপ্লাজমকে 'জীবনের ভৌত ভিত্তি' বলে অভিহিত করেন— হাক্সলে।
  • উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রোটোপ্লাজমের গঠন একই রকম'-এ সিদ্ধান্ত দেন- ফন্টানা।
  • প্রোটোপ্লাজমকে 'গতিশীল পদার্থের এক বিস্ময়কর অবস্থা' বলে আখ্যায়িত করেন- থমসন।
  • 'প্রোটোপ্লজম প্রাণের ভৌত ভিত্তি' বলেন- বি, হাটউইগ।
  • প্রোটোপ্লাজম আবিষ্কার করেন হিউগো ফন মল
  • প্রোটোপ্রাজম নামকরণ করেন- (১৯৩৯-৪০) সালে পারকিনজি।
  • প্রাণী ও উদ্ভিদের সকল মৌলিক জৈবিক কাজ সম্পন্ন করে- প্রোটোপ্লাজম।
  • প্রোটোপ্লজম গঠিত সাধারণত ৭৫% পানি ও ২৫% অন্যান্য বস্তু দিয়ে।
  • প্রোটোপ্লাজমের- ৩টি অংশ। যথা : প্রাজমা মেমব্রেন, সাইটোপ্লাজম ও নিউক্লিয়াস।

সাইটোপ্লাজম

প্রোটোপ্লাজম থেকে নিউক্লিয়াস বা কেন্দ্রিকাটিকে সরিয়ে দিলে যে জেলির মতো বস্তুটি থেকে যায় সেটিই সাইটোপ্লাজম। এই সাইটোপ্লাজমের মধ্যে অনেক ধরনের অঙ্গাণু থাকে। এদের প্রত্যেকের কাজ আলাদা হলেও একে অপরের উপর নির্ভরশীল। এই অঙ্গাণুগুলোর কোনো কোনোটি ঝিল্লিযুক্ত আবার কোনো কোনোটি ঝিল্লিবিহীন। ঝিল্লিযুক্ত সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণুগুলো হচ্ছে:

মাইটোকন্ড্রিয়া (Mitochondria) : শ্বসনে অংশগ্রহণকারী এ অঙ্গাণুটি 1886 (মতান্তরে 1894) সালে আবিষ্কার করেন রিচার্ড অস্টম্যান এবং এর নাম দেন 'বায়োব্লাস্ট', তবে বর্তমানে প্রচলিত নামটি দেন বিজ্ঞানী বেনডা। এটি দুই স্তরবিশিষ্ট আবরণী বা ঝিল্লি দিয়ে ঘেরা। ভিতরের স্তরটি ভিতরের দিকে আঙ্গুলের মতো ভাঁজ হয়ে থাকে। এদের ক্রিস্টি (cristae) বলে। ক্রিস্টির গায়ে বৃন্তযুক্ত গোলাকার বস্তু থাকে, এদের অক্সিজোম (oxisomes) বলে। অক্সিজোমে উৎসেচকগুলো (enzymes) সাজানো থাকে। মাইটোকন্ড্রিয়নের (এক বচন) ভিতরে থাকে ম্যাট্রিক্স (matrix) জীবের শ্বসনকার্যে সাহায্য করা মাইটোকন্ড্রিয়ার প্রধান কাজ। মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোষের 'শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র' বা 'পাওয়ার হাউস' বলা হয়। জীব তার বিভিন্ন কাজে এই শক্তি খরচ করে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সকল উদ্ভিদকোষ ও প্রাণিকোষে মাইটোকন্ড্রিয়া পাওয়া যায়।

 মাইটোকন্ড্রিয়া
  • মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোষের প্রাণশক্তি বলা হয়। একে কোষের শক্তিঘরও বলা হয়।
  • মাইটোকন্ড্রিয়া উপস্থিতি লক্ষ্য করেন-১৮৫০ সালে কলিকার এবং ১৮৯৪ সালে অল্টম্যান।
  • ১৮৯৮ সালে মাইটোকন্ড্রিয়া নামকরণ করেন/আবিষ্কার করেন- বেন।
  • মাইটোকন্ড্রিয়ার রাসায়নিক উপাদান: ৭৩% প্রোটিন, ২৫-৩০% লিপিড, সামান্য পরিমাণে RNA, DNA, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে।
  • মাইটোকন্ড্রিয়ার অভ্যন্তরে ফাঁকা অংশটি পূর্ণ থাকে- ম্যাট্রিক্স নামক দানাদার বস্তু দিয়ে।
  • দ্বিস্তর বিশিষ্ট মাইটোকন্ড্রিয়ার অভ্যন্তরের আবরণটি অনিয়মিতভাবে ভাঁজ হয়ে সৃষ্ট আঙ্গুলের ন্যায় প্রবর্ধককে বলে – ক্রিষ্টি।
  • মাইটোকন্ড্রিয়া কাজ : শ্বসনের মাধ্যমে শক্তি উৎপন্ন করে। [গ্লাইকোলাইসিস ছাড়া শ্বসনের সবকটি বিক্রিয়া (ক্রেবস চক্র, ইলেকট্রন পরিবহন, অক্সিডেটিভ ফসফোরাইলেশন) ঘটে।
  • মাইটোকন্ড্রিয়া হলো কোষের- শ্বসন অঙ্গাণু।
  • মাইটোকন্ড্রিয়া থাকে না- আদিকোষ (ব্যাকটেরিয়া) ও নীলাভ সবুজ শৈবালে।
  • জীবকোষের কোন স্থানে প্রোটিন সংশ্লেষিত হয়: রাইবোজোম।

প্লাস্টিড (Plastid) : বিজ্ঞানী আর্নস্ট হেকেল 1866 সালে উদ্ভিদ কোষের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গাণু প্লাস্টিড আবিষ্কার করেন। প্লাস্টিডের প্রধান কাজ খাদ্য প্রস্তুত করা, খাদ্য সঞ্চয় করা এবং উদ্ভিদদেহকে বর্ণময় এবং আকর্ষণীয় করে পরাগায়নে সাহায্য করা। প্লাস্টিড তিন ধরনের- ক্লোরোপ্লাস্ট, ক্রোমোপ্লাস্ট এবং লিউকোপ্লাস্ট। সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত অঙ্গাণুগুলোর মধ্যে প্লাস্টিড সবচেয়ে বড় । প্লাস্টিডকে বলা হয় - বর্ণাধার। উদ্ভিদ কোষে প্লাস্টিড থাকে। প্রাণিকোষ, ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ায় প্লাস্টিড থাকে না।

ক্লোরোপ্লাস্ট (Chloroplast): সবুজ রঙের প্লাস্টিডকে ক্লোরোপ্লাস্ট বলে। ক্লোরোপ্লাস্টের ভিতর সবুজ বর্ণকণিকা ক্লোরোফিল থাকে। যার সাহায্যে সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য প্রস্তুত করে থাকে । ক্লোরোফিল তৈরিতে প্রধানত নাইট্রোজেন ও ম্যাগনেসিয়াম মৌল প্রয়োজন । গাছের পাতা সবুজ হয় ক্লোরোফিলের জন্য। ছত্রাক অসবুজ ক্লোরোফিল নেই বলে। পাতা, কচি কাণ্ড ও অন্যান্য সবুজ অংশে এদের পাওয়া যায়। প্লাস্টিডের গ্রানা (grana) অংশ সূর্যালোককে আবদ্ধ করে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে। এই আবদ্ধ সৌরশক্তি স্ট্রোমাতে (stroma) অবস্থিত উৎসেচক সমষ্টি, বায়ু থেকে গৃহীত কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং কোষের ভিতরকার পানি ব্যবহার করে সরল শর্করা তৈরি করে। এই প্লাস্টিডে ক্লোরোফিল থাকে, তাই এদের সবুজ দেখায়। এছাড়া এতে ক্যারোটিনয়েড নামে এক ধরনের রঞ্জক ও থাকে। ১৮৮৩ সালে প্রাস্টিড (ক্লোরোপ্লাস্ট) আবিষ্কার করেন - শিম্পার।

ক্রোমোপ্লাস্ট ( Chromoplast ) : ক্লোরোপ্লাস্ট সবুজ বর্ণের কিন্তু ক্রোমোপ্লাস্ট সবুজ ব্যতীত অন্যান্য বর্ণ। ক্রোমোপ্লাস্টের জন্য পুষ্প রঙ্গিন ও সুন্দর হয়। কখনও কখনও রঙিন বৃতি রঙিন মূলে (মূলা, গাজর, মিষ্টিআলু) ক্রোমোপ্লাস্ট থাকে । ক্রোমোপ্রাস্টের জন্য ফুল ও ফল বিভিন্ন বর্ণের হয় বলে - কীটপতঙ্গ, প্রজাপতি ফুলের প্রতি আকৃষ্ট হয় ও পরাগায়ন ঘটায়।

লিউকোপ্লাস্ট (Leucoplast): যেসব প্লাস্টিডে কোনো রঞ্জক পদার্থ থাকে না, তাদের লিউকোপ্লাস্ট বলে। যেসব কোষে সূর্যের আলো পৌঁছায় না, যেমন মূল, ভ্রুণ, জননকোষ ইত্যাদি সেখানে এদের পাওয়া যায়। এদের প্রধান কাজ খাদ্য সঞ্চয় করা। আলোর সংস্পর্শে এলে লিউকোপ্লাস্ট ক্লোরোপ্লাস্টে রূপান্তরিত হতে পারে।

  • কোষের কোন অংশ সকল সজীব কোষে থাকে: সাইটোপ্লাজম ।
  • দেহের রাসায়নিক কারখানা বলা হয়- সাইটোপ্লাজমকে।
  • ডিম্বাণুর সাইটোপ্লাজমকে বলা হয়-উত্তপ্লজম।
  • সাইটোপ্লাজমে যে অঙ্গাণু থাকে: মাইটোকন্ড্রিয়া, রাইবোজম, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম, গলজি বডি ইত্যাদি।
  • উদ্ভিদ কোষের সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত অঙ্গাণুর মধ্যে আকারে সবচেয়ে বড় - প্লাস্টিড।

গলজি বস্তু (Golgi body) : গলজি বস্তু (কিংবা গলগি বস্তু) প্রধানত প্রাণিকোষে পাওয়া যায়, তবে অনেক উদ্ভিদকোষেও এদের দেখা যায়। এটি সিস্টার্নি ও কয়েক ধরনের ভেসিকল নিয়ে তৈরি। এর পর্দায় বিভিন্ন উৎসেচকের পানি বিয়োজন সম্পন্ন হয়। জীবকোষে বিভিন্ন পদার্থ নিঃসৃতকরণের সাথে এর নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। হরমোন নিঃসরণেও এর ভূমিকা লক্ষ করা যায়। কোনো কোনো বিপাকীয় কাজের সাথেও এরা সম্পর্কিত এবং কখনো কখনো এরা প্রোটিন সঞ্চয় করে রাখে।

এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম (Endoplasmic reticulum) : এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এর আবরণীর গায়ে প্রায়ই রাইবোজোম লেগে থাকে, তাই স্বাভাকিকভাবেই এসব স্থানে প্রোটিন সংশ্লেষণের ঘটনা ঘটে। কোষে উৎপাদিত পদার্থগুলোর প্রবাহ পথ হিসেবে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম ব্যবহৃত হয়। এগুলো কখনো কখনো প্লাজমা মেমব্রেনের সাথে যুক্ত থাকে, তাই ধারণা করা হয় যে, এক কোষ থেকে অন্য কোষে উৎসেচক ও কোষে উৎপাদিত অন্যান্য দ্রবাদি এর মাধ্যমে চলাচল করে। মাইটোকন্ড্রিয়া, কোষগহ্বর এগুলো সৃষ্টিতে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। উদ্ভিদ এবং প্রাণী উভয় কোষেই এরা উপস্থিত থাকে।

কোষ গহ্বর (Vacuole) : সাইটোপ্লাজমে কোষের মধ্যে যে আপাত ফাঁকা স্থান দেখা যায়, সেগুলোই হচ্ছে কোষগহ্বর। বৃহৎ কোষগহ্বর উদ্ভিদ কোষের বৈশিষ্ট্য। এর প্রধান কাজ কোষরস ধারণ করা। বিভিন্ন ধরনের অজৈব লবণ, আমিষ, শর্করা, চর্বিজাতীয় পদার্থ, জৈব এসিড, রঞ্জক পদার্থ, পানি ইত্যাদি এই কোষরসে থাকে। প্রাণিকোষে কোষগহ্বর সাধারণত অনুপস্থিত থাকে, তবে যদি কখনো থাকে, তবে সেগুলো আকারে ছোট হয়।

লাইসোজোম (Lysosome) : লাইসোজোম জীবকোষকে জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করে। এর উৎসেচক আগত জীবাণুগুলোকে হজম করে ফেলে। এর পরিপাক করার উৎসেচকগুলো একটি পর্দা দিয়ে আলাদা করা থাকে, তাই অন্যান্য অঙ্গাণু এর সংস্পর্শে এলেও হজম হয় না। দেহে অক্সিজেনের অভাব হলে বা বিভিন্ন কারণে লাইসোজোমের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তখন এর আশেপাশের অঙ্গগুলো নষ্ট হয়ে যায়। কখনো কোষটিই মারা যায়।

ঝিল্লিবিহীন সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণুগুলো হচ্ছে:

কোষকঙ্কাল (Cytoskeleton) : কোষঝিল্লি অতিক্রম করে কোষের ভিতরে ঢুকলে প্রথমেই কোষকঙ্কাল নজরে পড়বে। সেটি লম্বা এবং মোটা-চিকন মিলিয়ে অসংখ্য দড়ির মতো বস্তু যা কোষের চারদিকে জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে। কোষকঙ্কাল ভিতর থেকে কোষটিকে ধরে রাখে। অ্যাকটিন, মায়োসিন, টিউবিউলিন ইত্যাদি প্রোটিন দিয়ে কোষকঙ্কালের বিভিন্ন ধরনের তন্তু নির্মিত হয়। মাইক্রোটিউবিউল, মাইক্রোফিলামেন্ট কিংবা ইন্টারমিডিয়েট ফিলামেন্ট এ ধরনের তন্তুর উদাহরণ।

রাইবোজোম (Ribosome) : প্রাণী এবং উদ্ভিদ উভয় ধরনের কোষেই এদের পাওয়া যায়। এই ঝিল্লিবিহীন বা পর্দাবিহীন অঙ্গাণুটি প্রধানত প্রোটিন সংশ্লেষণে সাহায্য করে। প্রোটিনের পলিপেপটাইড চেইন সংযোজন এই রাইবোজোমে হয়ে থাকে। এছাড়া রাইবোজোম এ কাজে প্রয়োজনীয় উৎসেচক সরবরাহ করে থাকে। উৎসেচক বা এনজাইমের কাজ হলো প্রাণরাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি বাড়িয়ে দেওয়া।

সেন্ট্রোজোম (Centrosome) : এটি প্রাণিকোষের বৈশিষ্ট্য, প্রধানত প্রাণিকোষে এদের পাওয়া যায়। নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদ কোষে কদাচিৎ এদের দেখা যায়। প্রাণিকোষের নিউক্লিয়াসের কাছে দুটি ফাঁপা নলাকার বা দত্তাকার অঙ্গাণু দেখা যায়, তাদের সেন্ট্রিওল বলে। সেন্ট্রিওলের চারপাশে অবস্থিত গাঢ় তরলকে সেট্রোস্ফিয়ার এবং সেট্রোস্কিয়ারসহ সেন্ট্রিওলকে সেন্ট্রোজোম বলে। সেন্ট্রোজোমে থাকা সেন্ট্রিওল কোষ বিভাজনের সময় অ্যাস্টার রে তৈরি করে। এছাড়া স্পিন্ডল যন্ত্র সৃষ্টিতেও সেন্ট্রোজোমের অবদান রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ফ্লাজেলা সৃষ্টিতে এরা অংশগ্রহণ করে।

নিউক্লিয়াস বা কেন্দ্রিকা (Nucleus)

জীবকোষের প্রোটোপ্লাজমে নির্দিষ্ট পর্দাথের ক্রোমোজোম বহনকারী সুস্পষ্ট যে বস্তুটি দেখা যায় সেটিই হচ্ছে নিউক্লিয়াস। এর আকৃতি গোলাকার, ডিম্বাকার বা নলাকার। সিভকোষ এবং লোহিত রক্তকণিকার নিউক্লিয়াস থাকে না। নিউক্লিয়াসে বংশগতির বৈশিষ্ট্য নিহিত থাকে। এটি কোষে সংঘটিত বিপাকীর কার্যাবলিসহ সব ক্রিয়া-বিক্রিয়া নিয়াণ করে। সুগঠিত নিউক্লিয়াসে নিচের অংশগুলো দেখা যায়।

নিউক্লিয়ার ঝিল্লি (Nuclear membrane) : নিউক্লিয়াসকে ঘিরে রাখে যে ঝিল্লি, তাকে নিউক্লিয়ার ঝিল্লি বা কেন্দ্রিকা ঝিল্লি বলে। এটি দুই স্তর বিশিষ্ট। এই ঝিল্লি লিপিড ও প্রোটিনের সমন্বয়ে তৈরি হয়। এই ঝিল্লিতে মাঝে মাঝে কিছু ছিদ্র থাকে, যেগুলোকে নিউক্লিয়ার রন্ধ্র বলে। এই ছিদ্রের ভিতর দিয়ে নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজমের মধ্যে কিছু বস্তু চলাচল করে। নিউক্লিয়ার ঝিল্লি সাইটোপ্লাজম থেকে নিউক্লিয়াসের অন্যান্য বস্তুকে পৃথক রাখে এবং বিভিন্ন বস্তুর চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।

নিউক্লিওপ্লাজম (Nucleoplasm) : নিউক্লিয়ার ঝিল্লির ভিতরে জেলির মতো বস্তু বা রস থাকে। একে কেন্দ্রিকারস বা নিউক্লিওপ্লাজম বলে। নিউক্লিওপ্লাজমে নিউক্লিক এসিড, প্রোটিন, উৎসেচক ও কতিপয় খনিজ লবণ থাকে।

নিউক্লিওলাস (Nucleolus) : নিউক্লিওপ্লাজমের মধ্যে ক্রোমোজোমের সাথে সংলগ্ন গোলাকার বস্তুকে নিউক্লিওলাস বা কেন্দ্রিকাণু বলে। ক্রোমোজোমের রংঅগ্রাহী অংশের সাথে এরা লেগে থাকে। এরা RNA ও প্রোটিন দিয়ে তৈরি হয়। - এরা রাইবোজোম সংশ্লেষণ করে।

ক্রোমাটিন জালিকা (Chromatin reticulum) : কোষের বিশ্রামকালে অর্থাৎ যখন কোষ বিভাজন চলে না, তখন নিউক্লিয়াসের মধ্যে সুতার মতো জিনিস জট পাকিয়ে থাকতে দেখা যায়। এই সুতাগুলো হলো ক্রোমাটিন। ক্রোমাটিন মূলত DNA এবং থাকা এই ক্রোমাটিন তত্ত্ব গুলোকে একসাথে ক্রোমাটিন জালিকা বা নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম বলে। কোষ বিভাজনের সময় এরা মোটা এবং খাটো হয়, তাই তখন তাদের আলাদা আলাদা ক্রোমোজোম হিসেবে দেখা যায়। ক্রোমোজোমে অবস্থিত জিনগুলো বংশগতির গুণাবলি বহন করে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে নিয়ে যায়। কোনো একটি জীবের ক্রোমোজোম সংখ্যা ঐ জীবের জন্য নির্দিষ্ট। এসব ক্রোমোজোমে বংশধারা বহনকারী জিন (gene) অবস্থান করে এবং বংশের বৈশিষ্ট্য বংশপরম্পরায় বহন করা ক্রোমোজোমের কাজ।

  • ল্যাটিন শব্দ nucleus অর্থ- প্রাণকেন্দ্র।
  • নিউক্লিয়াসকে কোষের মস্তিষ্ক বলা হয়।
  • নিউক্লিয়াসের আবিষ্কার করেন : রবার্ট ব্রাউন (১৮৩১ সালে সর্বপ্রথম অর্কিড পত্রকোষে (রাস্নার) নিউক্লিয়াস আবিষ্কার করেন)।
  • কোষের বিপাকীয় কার্যাবলীসহ সব জৈবনিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে নিউক্লিয়াস (যা প্রোটোপ্লাজমের অংশ)।
  • সাধারণত একটি আদর্শ কোষে থাকে - ১টি নিউক্লিয়াস
  • কোন কোষে নিউক্লিয়াস থাকেনা: সীভকোষ, লোহিত কণিকা, অণুচক্রিকা ইত্যাদি।
  • কোন কোষে একাধিক নিউক্লিয়াস থাকে: পেশিকোষ। [উদ্ভিদ - শৈবাল- Vaucheria, botrydium, Sphaeroplea এবং ছত্রাক-Penicillium ইত্যাদিতে।
  • প্রাণীর বহু নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট কোষকে বলে - সিনোসাইট।
  • নিউক্লিয়াসের প্রধান উপাদান প্রোটিন ও নিউক্লিক এসিড।
  • নিউক্লিয়াস গঠিত হয় নিউক্লিয়ার মেমব্রেন, নিউক্লিওপ্লাজম, নিউক্লিওলাস ও ক্রোমাটিন - দানা/তন্তু দিয়ে।
  • নিউক্লিওলাস সর্বপ্রথম দেখতে পান-১৭৮১ সালে ফন্টানা।
  • নিউক্লিওলাস আবিষ্কার করেন - ১৮৩২ সালে ওয়ানার।
  • নিউক্লিওলাস নামকরণ করেন - ১৮৪০ সালে বাউম্যান।
  • নিউক্লিওলাস বহনকারী ক্রোমোসোমকে বলে - SAT ক্রোমোসোম।
  • নিউক্লিক এসিডের ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে - নিউক্লিওলাস।

ডিএনএ (DNA)

ডিএনএ (DNA) : DNA এর পূর্ণরূপ ডি অক্সি রাইবো নিউক্লিক এসিড। নিউক্লিক এসিড হল নিউক্লিওটাইডের পলিমার। যা গঠিত হয় নাইট্রোজেন বেস + পেন্টোজ সুগার + ফসফেট গ্রুপ। নিউক্লিওসাইড গঠিত হয় নাইট্রোজেন বেস + পেন্টোজ সুগার। নাইট্রোজেন বেস প্রধানত দুই ধরনের। ক) পিউরিন : অ্যাডিনিন, গুয়ানিন। খ) পাইরিমিডিন : সাইটোসিন, থাইমিন, ইউরাসিল। DNA - তে ডিঅক্সিরাইবোেজ সুগার থাকে। DNA কোষের নিউক্লিয়াসে অবস্থিত থাকে। ডাবল হেলিক্স DNA এর আবিষ্কারক ওয়াটসন ও ক্রিক (১৯৫৩)।

উদ্ভিদ কোষ ও প্রাণিকোষের পার্থক্য

পার্থক্য
'উদ্ভিদ কোষ (Plant Cell) প্রাণিকোষ (Animal Cell)
সেলুলোজ নির্মিত কোষপ্রাচীর থাকে। কোষ প্রাচীর নেই।
প্লাস্টিড থাকে। প্লাস্টিড নেই ।
এক বা একাধিক কোষ গহবর থাকে। নিম্নশ্রেণীর প্রাণী ব্যতীত অধিকাংশ কোষে কোষগহবর থাকে না।
সাধারণত সেন্ট্রোসোম থাকে না। সর্বদা সেন্ট্রোসোম থাকে।
সঞ্চিত খাদ্য- স্টার্ট/ শ্বেতসার। সঞ্চিত খাদ্য - গ্লাইকোজেন
লাইসোসোমের উপস্থিতি বিরল। প্রাণী কোষে সবসময় লাইসোসোম থাকে।
গ্লাইঅক্সিসোম থাকে। গ্লাইঅক্সিসোম থাকে না।
প্লাজমোডেসমাটা থাকে। প্লাজমোডেসমাটা থাকে না।
ডেসমোজোম থাকে না। ডেসমোজোম থাকে ।
প্রাণী কোষের প্রয়োজনীয় সকল অ্যামিনো এসিড, কো- এনজাইম এবং ভিটামিন সংশ্লেষণ করতে সক্ষম। নিজের জন্য প্রয়োজন সকল অ্যামিনো এসিড, কো- এনজাইম এবং ভিটামিন সংশ্লেষণ করতে সক্ষম না।
কোষপ্রাচীরের উপস্থিতির কারণে হাইপোটনিক দ্রবণে কোষ বিদীর্ণ হয় না। যেহেতু কোষপ্রাচীর অনুপস্থিত তাই প্রাণীকোষ হাইপোটনিক দ্রবণে বিদীর্ণ হয়ে যায়।
মাইক্রোভিলাই থাকে না। কোষঝিল্লিতে মাইক্রোভিলাই থাকে।

অন্যান্য

ফুলের বিভিন্ন বর্ণের জন্য দায়ী কে:

  • অ্যান্থোসায়ানিন নামক বর্ণকণিকা ফুলের লাল বর্ণ (জবা, শিমুল, অশোক, মাদার ও পলাশ),
  • বিটাসায়ানিন নামক বর্ণকণিকা লাল-বেগুনি বর্ণ,
  • বিটাজেন্থিন নামক বর্ণকণিকা হলুদ বর্ণের জন্য দায়ী (সরিষা ফুলের)। এসব বর্ণকণিকার কোনটিই না থাকলে ফুলের বর্ণ সাদা হয়।
  • মূল, ভূ-নিম্নস্থ কাণ্ড যেখানে সূর্যালোক পৌছায় না সেখানে থাকে - বর্ণহীন লিউকোপ্লাস্ট।

কাঁচা ফল সবুজ হলেও পাকলে তা বিভিন্ন বর্ণের হয় কেন:

  • ফলত্বক সাধারণত প্রথমে সবুজ থাকে কারণ এতে থাকে প্রচুর ক্লোরোফিল। ক্লোরোফিল ছাড়াও এতে থাকে কম পরিমাণে ক্যারোটিন, জ্যান্থোফিল।
  • ফল পাকতে শুরু করলে নতুন করে ক্লোরোফিল তৈরি বন্ধ হয়ে যায়, এমনকি আগেরগুলোও নষ্ট হয়ে যায়।
  • অন্যদিকে রঙিন ক্যারোটিন ও জ্যান্থোফিলের পরিমাণ বাড়তে থাকে। এর ফলে সবুজ রঙ পরিবর্তন হয়ে
    - হলুদ (জ্যান্থোফিল বেশি হলে),
    -কমলা (ক্যারোটিন বেশি হলে),
    - লাল (লাইকোপিন বেশি হলে) ইত্যাদি বর্ণের হয়।
  • সবুজ ফল (যেমন - টমেটো) পাকলে লাল হয় - লাইকোপিনের কারণে/ ক্লোরোফিল তৈরি বন্ধ হলে।

আরো কিছু তথ্য

  • কোষের প্রোটিন ফ্যাক্টরি' বলা হয়- রাইবোজোমকে।
  • কোষের সুইসাইডাল স্কোয়ার্ড বলা হয় - লাইসোসোমকে।
  • কোষের 'প্যাকেজিং কেন্দ্র বলা হয় – গলজি বডিকে।
  • রাসায়নিক বিক্রিয়ার স্থল হিসেবে কাজ করে - ভেসিকল।
  • কোষর প্রাণকেন্দ্র ' মস্তিষ্ক' বলা হয়- নিউক্লিয়াসকে।
  • কোষের শক্তিঘর/ Power house/ প্রাণশক্তি বলা হয় - মাইটোকন্ড্রিয়াকে।
  • 'কোষের বর্ণাধার' বলা হয় – প্লাস্টিডকে।
  • কোষের 'নিউক্লিক এসিডের ভান্ডার' বলা হয় - নিউক্লিওলাসকে।
নবীনতর পূর্বতন