সাবান এবং সাবানের কাজ

সাবান ব্যবহারের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় খ্রিস্টপূর্ব ২৮০০ সালে প্রাচীন ব্যাবিলনে প্রথম ব্যবহার হয়েছিল । সে হিসেবে সাবান ব্যবহারের ইতিহাস অনেক পুরানো । আজকে আমরা সাবান কি , কিভাবে সাবান তৈরি হয় , সাবানের কাজ কি , কিভাবে ময়লা পরিষ্কার করে ইত্যাদি জানার চেষ্টা করব । সেই সাথে ডিটারজেন্ট কি , সাবান ও ডিটারজেন্টের পার্থক্য এই টিউটরিয়ালেই জানানোর চেষ্টা করব ।

সাবান  এবং সাবানের কাজ

সাবান

সাবান হচ্ছে উচ্চতর ফ্যাটি এসিডের সোডিয়াম বা পটাসিয়াম লবণ । যার রাসায়নিক নাম : সোডিয়াম স্টিয়ারেট (C17H35COONa)/ পটাসিয়াম স্টিয়ারেট (C17H35COOK) ক্ষারের উপস্থিতিতে তেল ও চর্বির পানি যোজন বিক্রিয়ার মাধ্যমে সাবান উৎপন্ন হয়। সাবান তৈরীর এ পদ্ধতিকে সাবানায়ন বলে । সাবান তৈরির প্রধান কাঁচামাল তেল বা চর্বি । সাবান তৈরির উপজাত হিসাবে পাওয়া যায় গ্লিসারিন। সাবান তৈরির পদ্ধতি তিনটি যথা:
১. এক শীতল পদ্ধতি
২. অর্ধ স্ফুটন পদ্ধতি
৩. পূর্ণস্ফুটন পদ্ধতি

লন্ড্রি সাবান- এর উপাদান: নারকেল তেল, মহুয়া তেল, ক্যাস্টর অয়েল, কস্টিক সোডা লেই, সোপ স্টোন পাউডার এবং সোডিয়াম সিলিকেট।

টয়লেট সাবান- এর উপাদান: নারকেল তেল, কস্টিক সোডা লেই, জিংক অক্সাইড এবং পারফিউম।

তেল ও চর্বি: তেল ও চর্বি হল গ্লিসারিন ও উচ্চতর ফ্যাটি এসিডের সমন্বয়ে গঠিত এস্টার । একে গ্লিসারাইডও বলা হয়।

তেল ও চর্বির মধ্যে পার্থক্য :
১. তেল হল অসম্পৃক্ত কার্বক্সিলিক এসিডের গ্লিসারাইড আর চর্বি হল সম্পৃক্ত কার্বক্সিলিক এসিডের গ্লিসারাইড ।
২. 20°C তাপমাত্রায় তেল তরল পদার্থ এবং চর্বি কঠিন পদার্থ ।
৩. তেল উদ্ভিদদেহে আর চর্বি প্রাণিদেহে উৎপন্ন হয়।

সাবানের কাজ

সাবানের ময়লা পরিষ্কারের পদ্ধতি: সাবানে সোডিয়াম বা পটাশিয়াম স্টিয়ারেট থাকে। এই স্টিয়ারেট কাপুর এর সাথে বিক্রিয়া করে এবং পিচ্ছিল অধঃক্ষেপ হিসেবে কাপড় থেকে ময়লা পৃথক করে ফেলে । সাবানের হাইড্রোকার্বন অংশ চর্বি বা তেল পানিতে দ্রবীভূত করে । কাপড়ে সাবান দেয়া হলে সাবানের অণু ভেঙে সোডিয়াম আয়ন ও ফ্যাটি এসিডের আয়ন উৎপন্ন হয় । সোডিয়াম আয়ন পানির প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং ফ্যাটি এসিড আয়ন তৈলাক্ত ময়লার প্রতি আকৃষ্ট হয়। এ সময় ফ্যাটি এসিড এর অণুগুলো তেলের অণু ঘিরে রাখে এবং পানির সাথে বিক্রিয়া না করেই পানির উপর ভেসে উঠে। এতে কাপড় থেকে তৈলাক্ত ময়লা পরিষ্কার হয়। নড়াচড়া বা ঘষা দিলে ময়লা সহজে ও দ্রুত পরিষ্কার হয়।

অতিরিক্ত সাবানের ব্যবহার পুকুরের ক্ষতি করে: অতিরিক্ত সাবান ব্যবহার করলে পানিতে সোডিয়াম স্টিয়ারেট মিশে পানিকে দূষিত করে। এই পানি পান করা বা ব্যবহার করা যায় না । মাছ ও জলজ প্রাণী ক্ষতি করে। তাই পুকুরের পানিতে অতিরিক্ত সাবান ব্যবহার করা উচিত নয়।

সেভিং সাবানের উপাদান: কস্টিক পটাশ ও স্টিয়ারিক এসিড ।
টয়লেট ক্লিনার এর উপাদান: কস্টিক সোডা
সাবানকে শুষ্ক করে: সোডিয়াম সিলিকেট

ডিটারজেন্ট

ডিটারজেন্ট: ডিটারজেন্ট বলতে সংশ্লেষণ পদ্ধতিতে প্রস্তুতকৃত এবং সাবানের গুণসম্পন্ন রাসায়নিক পদার্থকে বুঝায়। রাসায়নিকভাবে ডিটারজেন্ট হল দীর্ঘ কার্বন শিকলযুক্ত অ্যালাইল হাইড্রোজেন সালফেটের সোডিয়াম লবন বা দীর্ঘ কার্বন শিকলযুক্ত অ্যালাইল বেনজিন সালফোনিক এসিডের সোডিয়াম লবন ।
ডিটারজেন্টের কাঁচামাল হলোঃ
• সাবান তৈরির উপাদান
• উদ্ভিদ ও প্রাণীর চর্বি
• পেট্রোলিয়াম উপজাতসমূহ

সাবান ও ডিটারজেন্টের পার্থক্য

সাবান ডিটারজেন্ট
সাবান হলো দীর্ঘ কার্বন শিকল বিশিষ্ট ফ্যাটি এসিড এর সোডিয়াম পটাশিয়াম লবণ । ডিটারজেন্ট হলো দীর্ঘ কার্বন শিকল বিশিষ্ট বেনজিন সালফোনিক এসিড এর সোডিয়াম লবণ ।
সাবান খর পানিতে ভালো কাজ করতে পারে না । ডিটারজেন্ট খরপানি ও মৃদুপানিতে সমভাবে কার্যকরী।
ডিটারজেন্ট এর চেয়ে পরিষ্কারকরণের ক্ষমতা সাবানের কম । সাবানের চেয়ে পরিষ্কারকরণের ক্ষমতা ডিটারজেন্ট এর বেশি ।

টুথপেস্টের প্রধান উপাদান: সাবান ও পাউডার।
টুথপেস্টে ফ্লোরাইড ব্যবহার করা হয় কেন: এটা দাঁতের ক্ষয়রোধ করে ।

নবীনতর পূর্বতন