অ্যারোমেটিক যৌগ | Aromatic compounds

অ্যারোমেটিক যৌগ : যে সকল জৈব যৌগের অণুতে এক বা একাধিক বেনজিন চক্র বা বলয় থাকে, তাদেরকে অ্যারোমেটিক যৌগ (CnH2n + 2 ) বলে । যেমন: বেনজিন, টলুইন, ফেনল, ন্যাপথালিন ইত্যাদি । অ্যারোমেটিক যৌগের প্রধান উৎস আলকাতরা।

বেনজিন অ্যারোমেটিক যৌগ কেন : এটি অ্যাসিটিলিনের পলিমার। বেনজিনের রাসায়নিক ধর্ম পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বেনজিন অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন যেমন, ইথিলিনের মতো H2, Cl2 ও O3 -এর সাথে যুত বিক্রিয়া দেয়। আবার অ্যারোমিটিসিটি ধর্ম ও হাকেল নীতি অনুসারে এটি অ্যারোমেটিক যৌগ।

অ্যারোমেটিক যৌগ

টলুইন: টলুইন যা আগে টলুয়ল নামে পরিচিত ছিলো, টলুইন হল একটি স্বতন্ত্র গন্ধ সহ একটি স্বচ্ছ বর্ণহীন তরল - এটি একটি সুগন্ধযুক্ত হাইড্রোকার্বন নামেও পরিচিত। যার রাসায়নিক নাম মিথাইল বেনজিন। টলুইন এর রাসায়নিক সংকেত C6H5CH3 । বেনজোয়িক এসিড, ট্রাইনাইট্রো টলুইন (TNT), স্যাকারিন প্রভৃতি প্রস্তুতিতে টলুইন ব্যবহার করা হয় ।

স্যাকারিন: স্যাকারিন হল টলুইন থেকে রাসায়নিক উপায়ে প্রস্তুত এক প্রকার দানাদার পদার্থ।এর রাসায়নিক নাম অর্থো সালফো-বেনজামাইড । এটা চিনি অপেক্ষা ৫৫০ গুণ বেশি মিষ্টি । এর কোন খাদ্যমান নেই । মিষ্টি প্রস্তুতকারকগণ স্যাকারিন ব্যবহার করেন।

ফেনল, যেটি কার্বলিক অ্যাসিড (হাইড্রোক্সিবেনজিন) হিসেবেও পরিচিত, এটি একটি অ্যারোমেটিক জৈব যৌগ। ফেনলের আণবিক সংকেত: C6H5OH । এটি সাদা দানাদার কঠিন পদার্থ , সহজে উদ্বায়ী এবং অম্লধর্মী যৌগ ।

জীবাণুনাশক ও কীটনাশক

জীবাণুনাশক বলতে এমন কিছু সক্রিয় রাসায়নিক যৌগকে বোঝায় যেগুলি জীবাণু বা অণুজীব নাশ করতে পারে বা এগুলির প্রজনন ও বৃদ্ধি ব্যাহত করতে পারে। যেমন- গ্যামেক্সিন বা লিনডেন , ডি.ডি.টি ইত্যাদি ।

গ্যামেক্সিন বা লিনডেন: গ্র্যামেক্সিন একটি শক্তিশালী জীবাণুনাশক ও কীটনাশক । এর রাসায়নিক নাম বেনজিন হেক্সাক্লোরাইড (C6H6Cl6)। গ্যামেক্সিন বা লিনডেন উকুন এবং পাঁচড়া চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি চুল এবং মাথার জন্য শ্যাম্পু হিসেবে ত্বকের জন্য একটি স্থানীয় লোশন হিসাবে বাজারে পাওয়া যায় । এছাড়াও কৃষিকার্যে কীটনাশক হিসেবে এর ব্যবহার রয়েছে ।

ডি.ডি.টি: ডিডিটি একটি গৃহস্থালী পরিষ্কারকরণে ব্যবহৃত রাসায়নিক যার পুরো নাম প্যারা প্যারা ডাইক্লোরো ডাই ফিনাইল ট্রাই ক্লোরো ইথেন । এটি মূলত শক্তিশালী জীবাণুনাশক ও কীটনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। স্নেহপদার্থে (অর্থাৎ তেলে) দ্রাব্য এই বিষ স্পর্শ করলে কীটপতঙ্গদের সোডিয়াম চ্যানেল বেশি খুলে গিয়ে পক্ষাঘাত ঘটে এবং কীটপতঙ্গ মারা যায়।

বিস্ফোরক দ্রব্য

টি.এন.টি: টি.এন.টি এর পূর্ণরূপ হল 2, 4, 6 ট্রাই নাইট্রো টলুইন। রাসায়নিক সংশ্লেষণে অনেকসময় এই হলুদ বর্ণের কঠিন পদার্থকে বিকারক হিসেবে ব্যবহার করা হয় কিন্তু এটার বহুল ব্যবহার এখন বিস্ফোরক হিসেবে বিভিন্ন ধরনের বোমায় । এটি একটি রাসায়নিক যৌগ যার রাসায়নিক সংকেত C6H2(NO2)3CH3

পিকরিক এসিড : পিকরিক এসিড একটি জৈব যৌগ, যার রাসায়নিক সংকেত (O2N)3C6H2OH। এর ইউপ্যাক নাম ২,৪,৬ ট্রাই নাইট্রো ফেনল। গ্রিক শব্দ পিকরোস থেকে পিকরিক শব্দের উৎপত্তি, যার অর্থ তিক্ত। তিক্ত স্বাদের কারণেই এর এই নামকরণ। প্রধানত বিস্ফোরক হিসেবে ইহা ব্যবহৃত হয়।

ডিনামাইট : ডিনামাইট এক ধরনের বিস্ফোরক যা নাইট্রোগ্লিসারিন ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। নোবেল পুরস্কারের প্রবর্তক আলফ্রেড নোবেল ডিনামাইট আবিষ্কার করেন এবং ১৮৬৭ সালে এর প্যাটেন্ট নিবন্ধন করেন। বিভিন্ন শোষক পদার্থ দিয়ে নাইট্রোগ্লিসারিন কে শোষণ করিয়ে নিয়ে ডিনামাইট তৈরি করা হয়। যা উন্নত ধরনের বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহৃত হয় ।
ডিনামাইটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান: নাইট্রোগ্লিসারিন ।

বিবিধ

সেলুলোজ: কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের যৌগ। কাঠ, তুলা, কাগজ, পাট প্রভৃতি অতি পরিচিত সেলুলোজ পদার্থ। কাঠে সাধারণত শতকরা ৪০-৫০ ভাগ সেলুলোজ থাকে ।
কাগজ কি ধরনের যৌগঃ সেলুলোজ ।
তারপিন যে কাজে লাগে: Paint এবং Thinner হিসাবে।
কোনগুলো দিয়ে লিপষ্টিক তৈরি হয়: গ্রীজ, রঞ্জক এবং একটি দ্রাবক ।
পাউরুটি ফোলানোর জন্য যা ব্যবহৃত হয়: ময়দার সঙ্গে ঈস্টের বিক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন কার্বন ডাই- অক্সাইড (CO2) ময়দাকে ফাঁপিয়ে পাউরুটিকে ফাঁপা ও ছিদ্রযুক্ত করে ।
কোন খাদ্যে পচন ধরে না: কর্মী মৌমাছি ফুল থেকে পুষ্পসার বা নেক্টার সংগ্রহ করে। মৌমাছিদের পাকস্থলীতে এ রস থেকে পানি অপসারিত হয়ে মধুতে পরিণত হয়। মধু কিছুটা অম্ল প্রকৃতির হওয়ায় জীবানু নাশক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ জৈবসার: সরিষার খৈল ।
চিটাগুড় /মাতৃগুড়/মোলাসেস: ৩০% সুক্রোজ ও ৩২% ইনভার্ট চিনির মিশ্রণ ।
পলিমারকরণ: একই পদার্থের অসংখ্য অনু বা একাধিক পদার্থের অসংখ্য অনু পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে বৃহৎ অনু গঠন করায় প্রক্রিয়াই হলো পলিমারকরণ।
প্লাস্টিক: ইউরিয়া ও ফরমালডিহাইড এর বিক্রিয়ায় কঠিন পদার্থ উৎপন্ন হয় তাকে প্লাস্টিক বলে। প্লাস্টিকের আবিষ্কারক ইংরেজ রসায়নবিদ আলেকজান্ডার পার্কস ১৮৬২ সালে ।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কণিকা :
• প্যারাফিন শব্দের অর্থ আকর্ষণ নেই ।
• প্লাস্টিক হল পলিটেট্রাফ্লোরো ইথেন বাণিজ্যিকভাবে যা টেফনল নামে পরিচিত।
• Paint এ থিনার (Thinner) হিসেবে ব্যবহৃত হয় - তারপিন তেল ।
• টুথপেষ্টের প্রধান উপাদান- সাবান ও পাউডার ।
• ট্যাল্লো হলো- গরুর চর্বি।
• ফুটন্ত সাবানের লবণের পানি ঢালাকে বলে- গ্রেইনিং ।
• বোরিক অ্যাসিড এক ধরনের - এন্টিসেপটিক।
• সয়াবিন অয়েল ব্যবহৃত হয়— স্লো তৈরিতে।
• গ্যাস শুষ্ক করার জন্য ব্যবহৃত হয়- সিলিকা জেল ।

CH3OH এবং CH3CH2OH এর মধ্যে পার্থক্য করার জন্য ব্যবহার করা হয় আয়োডোফর্ম টেষ্ট (Iodoform test)। মিথানল ও ইথানল উভয়েই প্রাইমারি (১°) অ্যালকোহল। এদের মধ্যে ইথানলের অণুতে মিথাইল মূলক আছে যা আয়োডিনের সাথে NaOH-এর উপস্থিতিতে CH3I (মিথাইল আয়োডাইড) উৎপন্ন করে। মিথানলে -এর সাথে এরূপ মিথাইল মূলক থাকে না। অর্থাৎ এ বিক্রিয়া দ্বারা মিথাইল ও ইথানলের মধ্যে পার্থক্য করা যায়।

ইথারকে কালো কাগজে মোড়া সরু মুখ বিশিষ্ট রঙ্গীন বোতলে রাখা হয় কেন:
সূর্যালোকের উপস্থিতিতে বায়ুর সংস্পর্শে এলে বায়ুর অক্সিজেনের সঙ্গে ইথারের বিক্রিয়ায় ধীরে ধীরে তীব্র বিষাক্ত এবং বিস্ফোরক পদার্থ ইথার পারঅক্সাইড উৎপন্ন করে। ইথারের বোতলে পারঅক্সাইড বিস্ফোরণের সম্ভাবনা থাকে। তাই ইথারকে সূর্যালোক এবং বায়ুর সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখার জন্য ইথারকে কালো কাগজে মোড়া সরু মুখ বিশিষ্ট রঙ্গীন বোতলে রাখা হয় ।

নবীনতর পূর্বতন