তরল ও বায়বীয় পদার্থ

ঘনত্ব :
√ বস্তুর একক আয়তনের ভরকে তার উপাদানের ঘনত্ব বলে ।
√ কোন বস্তুর ঘনত্ব বস্তুর উপাদান ও তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে।

চাপ
√ কোন পৃষ্ঠের একক ক্ষেত্রফলের উপর লম্বভাবে প্রযুক্ত বলের মানকে চাপ বলে ।
√ চাপের একক: নিউটন/ বর্গমিটার। নিউটন/ বর্গমিটারকে প্যাসকেলও বলা হয়।
√ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ ও প্যাসকলের সম্পর্ক: 1 বায়ুমণ্ডলীয় চাপ = 101325 পাসকল ।
√ সমুদ্র পৃষ্ঠে বায়ু মন্ডলীয় চাপ : 103 kN/m2 / 10.3m of water / 760mm of mercury.

আর্কিমিডিসের নীতি: বস্তুকে কোন স্থির তরল অথবা বায়বীয় পদার্থে আংশিক বা সম্পূর্ণ ডুবালে বস্তুটি কিছু ওজন হারায় । এই হারানো ওজন বস্তুটির দ্বারা অপসারিত তরল বা বায়বীয় পদার্থের ওজনের সমান ।

প্লবতা: কোন বস্তুকে কোন স্থির তরলে নিমজ্জিত করলে বস্তুটি উপরের দিকে যে লব্ধিবল অনুভব করে, তাকে প্লবতা বলে ।

কোন বস্তুর ভাসা ও নিমজ্জনের কারণ: কোন বস্তুকে যখন তরল পদার্থে ডুবানো হয় তখন ঐ বস্তুটির উপর দুটি বল ক্রিয়াশীল হয়। বস্তুটির ওজন W সরাসরি নিচের দিকে ক্রিয়া করে এবং তরল পদার্থের চাপজনিত লব্ধি বল W1 উপরের দিকে ক্রিয়া করে। দুটি বল একই সরলরেখা বরাবর বিপরীত দিকে ক্রিয়া করে। বস্তুটি তরল পদার্থে ডুববে না ভাসবে তা এই বল দুটির উপর নির্ভর করবে । এখানে তিন ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে :

[ক] W > W1 হলে অর্থাৎ বস্তুর ওজন বস্তু দ্বারা অপসারিত তরল পদার্থের ওজনের চেয়ে বেশি হলে বস্তুটি তরলে ডুবে যাবে। এক্ষেত্রে বস্তুর ঘনত্ব তরলের ঘনত্বের চেয়ে বেশি।
[খ] W < W1 হলে অর্থাৎ বস্তুর ওজনের চেয়ে বস্তুটি দ্বারা অপসারিত তরলের ওজন বেশি হলে বস্তুটি ঐ তরলে ভেসে থাকবে। এক্ষেত্রে তরলের ঘনত্ব বস্তুর ঘনত্বের চেয়ে বেশি।
[গ] W = W1 হলে অর্থাৎ বস্তু দ্বারা অপসারিত তরল পদার্থের ওজন বস্তুর ওজনের সমান হলে বস্তুটি ঐ তরলে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত অবস্থায় ভাসবে। এক্ষেত্রে বস্তুর ঘনত্ব তরলের ঘনত্বের সমান হয় ৷

তরল ও বায়বীয় পদার্থ

একটি বস্তুকে পানিতে সম্পূর্ণভাবে ডুবালে পানিতে যেখানে এটি রাখা যায় সেখানেই এটি থাকে। এর কারণ: বস্তুর ঘনত্ব পানির ঘনত্বের সমান।

নদীর পানির চেয়ে সমুদ্রের পানিতে সাঁতার কাটা সহজ: সমুদ্রের পানিতে নানা ধরনের লবণ দ্রবীভূত থাকে। তাই সমুদ্রের পানির ঘনত্ব নদীর পানি বা পুকুরের পানির চেয়ে বেশি। ঘনত্ব বেশি হওয়ার কারণে সমুদ্রের পানির প্লবতা নদী বা পুকুরের পানির প্লবতার চেয়ে বেশি। ফলে সমুদ্রের পানিতে সাঁতার কাটার সময় সাঁতারুর শরীরের উপর প্লবতা বেশি হওয়ায় শরীর হালকা বলে মনে হয়। এ কারণে নদী বা পুকুরের পানির তুলনায় সমুদ্রের পানিতে সাতার কাটা সহজ।

লোহার টুকরা পানিতে ডুবে যায় কিন্তু লোহার তৈরী জাহাজ পানিতে ভাসে : লোহার টুকরা পানিতে ভাসে না কারণ লোহার খণ্ড দ্বারা অপসারিত পানির ওজন লোহা খণ্ডের ওজনের চেয়ে অনেক কম। কিন্তু লোহার তৈরি হলেও জাহাজ পানিতে ভাসে কারণ জাহাজের ভিতরটা ফাঁপা। ফলে জাহাজ যে আয়তনের পানি অপসারণ করে তার ওজন জাহাজের ওজনের চেয়ে বেশি হয়। এতে জাহাজ পানিতে নামালে প্রথমে ডুবতে শুরু করে। খানিকটা ডুবার পর যখন অপসারিত পানির ওজন জাহাজের ওজনের সমান হয় তখন জাহাজটি ভাসতে থাকে।

বরফ পানিতে ভাসে: পানি বরফে পরিণত হলে এর আয়তন বেড়ে যায়। ১ লিটার পানি বরফে পরিণত হলে এর আয়তন ১২ ১১ লিটার হয়। সুতরাং বরফের ঘনত্ব পানির ঘনত্বের চেয়ে কম আর তাই বরফ পানিতে ভাসে । পানিতে ভাসায় সময় বরফের ১১ ১২ অংশ পানির নিচে থাকে এবং ১২ অংশ পানির উপরে থাকে ।

পচা ডিম পানিতে ভাসে : ভাল ডিমের ঘনত্ব পানির ঘনত্ব অপেক্ষা বেশি। তাই এটি পানিতে ডুবে যায়। কিন্তু পচা ডিমে হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস জমে যাওয়ার জন্য এর ঘনত্ব পানির চেয়ে কমে যায়। এজন্য পচা ডিম পানিতে ভাসে ।

পানি একমাত্র তরল পদার্থ যার ওজন কঠিন অবস্থার তুলনায় কম। আবার উত্তপ্ত করলেও পানির ঘনত্ব কমে । তাহলে উত্তপ্ত এবং শীতল অবস্থার মাঝামাঝি এমন একটি অবস্থা নিশ্চয়ই রয়েছে যে অবস্থায় পানির ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। স্বাভাবিক আদর্শ পরিবেশে 4°C তাপমাত্রায় পানির ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি থাকে অর্থাৎ পানি এসময় সবচেয়ে ভারি হয়। তাপমাত্রা 4°C এর কম বা বেশি হলে পানি হালকা হয়। এটিই পানির ব্যতিক্রমধর্মী প্রসারণ অর্থাৎ তরল পদার্থের প্রসারণের সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম ।

প্লিমসল লাইন: অতিরিক্ত মাল বোঝাই এড়ানোর জন্য জাহাজের গায়ে চিহ্নিত রেখাকে প্লিমসল লাইন বলে ।

আপেক্ষিক গুরুত্ব: Specific Gravity: কোন বস্তুর ওজন ৪° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার সমআয়তন পানির ওজনের অনুপাতকে বস্তুর উপাদানের আপেক্ষিক গুরুত্ব বলে। কোন বস্তুর আপেক্ষিক গুরুত্ব S = বস্তুর ওজন/ 8° সে. তাপমাত্রার সমআয়তনের পানির ওজন 1.5m × 1.0 m × 2.0m আয়তনের একটি বস্তুর পানিতে ওজন 3000 Kg এর Specific gravity হলো 1.1

আপেক্ষিক গুরুত্ব জানা থাকলে --
১. কোন বস্তু পানিতে ডুববে না ভাসবে তা সহজে বুঝা যায়। যদি বস্তুটি পানির চেয়ে হালকা হয় তাহলে ভাসমান অবস্থায় এর কত অংশ পানিতে নিমজ্জিত হবে তাও জানা যায় ।
২. কোন বস্তু বিশুদ্ধ না ভেজাল তা নির্ণয় করা যায়।

আপেক্ষিক গুরুত্বের একক: একই জাতীয় দুটি রাশির অনুপাত বলে আপেক্ষিক গুরুত্বের কোন একক নাই (Dimensionless)।

পদার্থ আপেক্ষিক গুরুত্ব
পানি ১.০০
বরফ ০.৯১৭
লোহা ৭.৮৬
অ্যালুমিনিয়াম ২.৭
তামা ৮.৯২
সোনা, রুপা ১০.৫

পৃষ্ঠটান (Surface tension): তরল মাত্রই একটি ধর্ম আছে - তরল পৃষ্ঠ সর্বদা সংকুচিত হয়ে সর্বনিম্ন ক্ষেত্রফলে আসতে চায়। তরলের মধ্যে যে বলের প্রভাবে এই বিশেষ ধর্ম প্রকাশ পায়, সেই বলকেই পৃষ্ঠটান বলে । আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে পৃষ্ঠটানের একক নিউটন/ মিটার।

পৃষ্ঠটানের বৈশিষ্ট্য:
১. পৃষ্ঠটান তরল তলকে সংকুচিত করার চেষ্টা করে।
২. তরল তলের ক্ষেত্রফল বাড়াবার চেষ্টা করলে পৃষ্ঠটান তা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে।

উদাহরণ:
১. পৃষ্ঠটানের জন্য পানির ছোট ফোটা বা বৃষ্টির ফোটা গোলাকার হয়।
২. নদীর তীরে ভিজা বালুর উপর দিয়ে হেটে যাবার সাথে সাথে পদচিহ্ন মুছে যায় কারণ, পৃষ্ঠটানের জন্য বালু নিজ স্থানে চলে আসে।

কুপি থেকে সলিতায় তেল আসে: কৈশিক চাপের জন্য ।

সান্দ্রতা / Viscosity : তরল পদার্থের অভ্যন্তরীণ ঘর্ষণের ফলে প্রবাহে (বয়ে যেতে) বাধা দেবার প্রবণতাকে সান্দ্রতা বলা হয়। তরল পদার্থ বলতে বস্তুত পদার্থের সেই দশাকে বোঝায় যাতে তার উপর ব্যাবর্তন পীড়ন প্রয়োগ করলে তা বইতে আরম্ভ করে, যেখানে বয়ে যাওয়া বলতে তার বিভিন্ন তলের মধ্যে আপেক্ষিক গতিকেই বর্ণনা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় মধুর সান্দ্রতা water থেকে বেশি। এই আপেক্ষিক গতির ফলে তলগুলি একে অপরের উপর একপ্রকার ঘর্ষণ জাতীয় বাধা (যা গতিশক্তিকে তাপ হিসাবে হারিয়ে যেতে দেয়) প্রদান করে যার ফলে এক তল থেকে আরেক তলে তরলের বিভিন্ন গভীরতায় প্রবাহবেগ সঞ্চারে আপেক্ষিক পার্থক্য থেকে যায়। সান্দ্রতা বলের মান তরল পদার্থের সান্দ্রতাঙ্ক এবং গভীরতার সঙ্গে উপরোক্ত গতিপার্থক্য কত দ্রুত বদলায় তার দ্বারা পরিমাপ করা যায়। এর একক Poise.

নবীনতর পূর্বতন