বলবিদ্যা (অথবা বলবিজ্ঞান) পদার্থবিজ্ঞানের একটি শাখা । আমরা বস্তুর গতি সম্পর্কে নিশ্চয়ই অবগত আছি কিন্তু বস্তু কেন গতিশীল হয় তা যদি বিশ্লেষণ করি তাহলে আমরা দেখব বস্তু গতিশীল হয় বলের কারণে । বল কীভাবে বস্তুর উপর কাজ করে তা নিয়ে আলোচনা করার সময় খুব স্বাভাবিক ভাবেই বিভিন্ন ধরনের বল , বস্তুর জড়তা , ঘর্ষণ বল , স্থিতি ও গতি , সরণ , ত্বরণ , দ্রুতি , বেগ , নিউটনের গতিসূত্র , ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র এই বিষয়গুলো ও আলোচনায় উঠে আসবে ।
![শক্তির রূপান্তরের উদাহরণ](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgl51fXzXpayutRbmq5mJr9g5-HgUhXxyfpabT_0wVMNwTmuF86QxWm7UpW-hX-wSgk0eEnpG01CGJZWCxaiyLwEcRB-TWq46L53N3B7Q8MDNc0Z9gS6Eg8Mm-8lQk1T36m0RbfR_YYHQ1MC765VPA7a_gg46Xd9qMLIwU9QQcy-1EyG_vu9xrk5yEEucQ/s1600-rw/%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE.webp)
বস্তুর স্থিতি ও গতি
একটি উদাহরণ আমরা লক্ষ করি , মনে কর তুমি বাসায় বসে টিভি দেখছ । এখানে যদি তোমাকে প্রশ্ন করা হয় যে টিভিটা গতিশীল না স্থিতিশীল ? খুবই স্বাভাবিকভাবেই এর উত্তর বলা হবে স্থিতিশীল । কিন্তু না এর সঠিক উত্তর হচ্ছে গতিশীল ।
কারণ, যেই পৃথিবীতে বসে তুমি টিভি দেখছ সেই পৃথিবীই প্রচণ্ড বেগে সূর্যের চতুর্দিকে এবং নিজ অক্ষের চতুর্দিকে পরিভ্রমণ করছে। কিন্তু যদি প্রশ্নটি এমন হতো, তোমার সাপেক্ষে স্থির না গতিশীল?’ তাহলে সঠিক উত্তর হতো ‘স্থির’।
অর্থাৎ বস্তুর স্থিতি অবস্থা ও গতিশীল অবস্থা একটি আপেক্ষিক বিষয় । আপেক্ষিক' শব্দের অর্থ অন্য বিষয়ের উপর নির্ভরশীল/ পরস্পরের উপর নির্ভরশীল।
পারিপার্শ্বিক বস্তুর সাপেক্ষে যদি কোন বস্তুর অবস্থান সময়ের সাথে অপরিবর্তিত থাকে, তাহলে ঐ বস্তুর অবস্থাকে পারিপার্শ্বিক বস্তুর সাপেক্ষে স্থিতি বলে। ট্রেনের কামরায় দুই ব্যক্তি বসে থাকলে । একজনের সাপেক্ষে অন্যজনের অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয় না। এটাই স্থিতি।
পারিপার্শ্বিক বস্তুর সাপেক্ষে যদি কোন বস্তুর অবস্থান সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয় তাহলে ঐ বস্তুর অবস্থাকে গতি বলে। ট্রেনের লাইনের পাশে কোন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে থাকলে ট্রেনের দুই ব্যক্তির সাপেক্ষে দাঁড়ানো ব্যক্তিকে গতিশীল মনে হবে।
কোন বস্তু প্রকৃতপক্ষে স্থির কিনা তা নির্ভর করে প্রসঙ্গ বস্তুর উপর। প্রসঙ্গ বস্তু স্থিতিশীল হলে তার সাপেক্ষে কোন বস্তুর স্থিতিশীল বস্তুর স্থিতিকে আমরা পরম স্থিতি বলি। আর পরম স্থিতিশীল বস্তুর সাপেক্ষে কোন বস্তুর গতিই পরম গতি।
মহাবিশ্বে এমন কোন বস্তু পাওয়া যায় না যা প্রকৃতপক্ষে স্থির রয়েছে। কারণ পৃথিবী প্রতিনিয়ত সূর্যের চারদিকে ঘুরছে। সূর্য ও তার গ্রহ-উপগ্রহ নিয়ে নভোমণ্ডলের চারদিকে ঘুরছে। কাজেই আমরা যখন কোন বস্তুকে স্থিতিশীল বা গতিশীল বলি তা আপাত স্থিতিশীল বস্তুর সাপেক্ষে বলে থাকি।
সরণ: নির্দিষ্ট দিকে পরিপার্শ্বিকের সাপেক্ষে বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তনকে সরণ বলে। সরণের একক: সরণের একক হল দৈর্ঘ্যের একক অর্থাৎ মিটার।
দ্রুতি: সময়ের সাথে কোন বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তনের হারকে দ্রুতি বলে । দ্রুতির একক: মিটার/সেকেন্ড।
বেগ: সময়ের সাথে কোন বস্তুর সরণের হারকে বেগ বলে অর্থাৎ বস্তু নির্দিষ্ট দিকে একক সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাই বেগ । বেগের আন্তজাতিক একক: মিটার/সেকেন্ড ।
দ্রুতি | বেগ |
---|---|
১. দ্রুতি স্কেলার রাশি। | ১. বেগ ভেক্টর রাশি |
২. শুধু মানের পরিবর্তন হলে দ্রুতির পরিবর্তন হয় । | ২. শুধু মানের কিংবা শুধু দিকের অথবা উভয়ের পরিবর্তন হলে বেগের পরিবর্তন হয়। |
৩. বস্তুর বেগের মানই দ্রুতি । | ৩. নির্দিষ্ট দিকে দ্রুতিই বেগ । |
ত্বরণ: সময়ের সাথে বস্তুর অসম বেগের পরিবর্তনের হারকে ত্বরণ বলে।
ত্বরণের আন্তর্জাতিক একক: মিটার/সেকেন্ড।
কৌণিক ত্বরণের আন্তজাতিক একক: রেডিয়ান/সেকেন্ড।
নিউটনের গতিসূত্র
১৬৮৬ খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন তাঁর অমর গ্রন্থ 'ফিলোসোফিয়া ন্যাচারলিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা'-তে গতির তিনটি সূত্র প্রদান করেন। এ তিনটিই নিউটনের গতিসূত্র নামে পরিচিত।
প্রথম সূত্র : বাইরে থেকে বল প্রয়োগ না করলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির থাকবে আর গতিশীল বস্তু চিরকাল সমবেগে গতিশীল থাকবে। একে জড়তার সূত্রও বলা হয়।
দ্বিতীয় সূত্র : বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার এর উপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যেদিকে ক্রিয়া করে ভরবেগের পরিবর্তনও সেদিকে হয়।
তৃতীয় সূত্র: প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। ( To every action there is an equal & opposite reaction. )
নিউটনের প্রথম সূত্র থেকে দুটি বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়: জড়তা এবং বল। আর দ্বিতীয় সূত্র হতে প্রথম সূত্র প্রতিপাদন করা যায়।
জড়তা: পদার্থ যে অবস্থায় আছে চিরকাল সেই অবস্থায় থাকতে চাওয়ার যে প্রবণতা বা সেই অবস্থা বজায় রাখতে চাওয়ার যে ধর্ম তাকে জড়তা বলে । জড়তা দুই প্রকার: ১. গতি জড়তা, ২. স্থিতি জড়তা।
ক) স্থিতি জড়তা: স্থিতিশীল বস্তুর চিরকাল স্থির থাকতে চাওয়ার যে প্রবণতা বা স্থিতি বজায় রাখতে চাওয়ার যে ধর্ম তাকে স্থিতি জড়তা বলে ।
খ) গতি জড়তা: গতিশীল বস্তুর চিরকাল সমবেগে গতিশীল থাকতে চাওয়ার যে প্রবণতা বা একই গতি অক্ষুন্ন রাখতে চাওয়ার যে ধর্ম তাকে গতি জড়তা বলা হয়।
জড়তার ভ্রামক/মোমেন্ট: কোন অক্ষের সাপেক্ষে ঘূর্ণায়মান কোন দৃঢ় বস্তুর প্রত্যেকটি কণার ভর এবং ঘূর্ণন অক্ষ থেকে এদের দূরত্বের বর্গের গুণফলের সমষ্টিকে ঐ দৃঢ় বস্তুর জড়তার ভ্রামক বলে। একক: M.K.S পদ্ধতিতে kgm2.
থেমে থাকা বাস হঠাৎ চলা শুরু করলে যাত্রী পেছনের দিকে হেলে পড়ে। কারণ - বাস থেমে থাকলে যাত্রীর শরীর স্থির থাকে। বাস হঠাৎ চলতে শুরু করলে যাত্রীদের শরীরের বাসসংলগ্ন নিচের অংশ গতিশীল হয় কিন্তু শরীরের উপরের অংশ স্থিতি জড়তার কারণে স্থির থাকতে চায়। ফলে শরীরের উপরের অংশ পেছনের দিকে হেলে পড়ে।
চলন্ত বাস হঠাৎ ব্রেক করলে যাত্রী সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। কারণ চলন্ত অবস্থায় বাসের সাথে যাত্রীও একই গতি প্রাপ্ত হয়। কিন্তু বাস হঠাৎ থেমে গেলে বাসের সাথে সাথে যাত্রীর শরীরের নিচের অংশ স্থির হয় কিন্তু উপরের অংশ গতি জড়তার কারণে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। ফলে যাত্রী সামনে ঝুঁকে পড়ে।
কাচের জানালায় রাইফেলের বুলেটে কেবল একটি ছিদ্রের সৃষ্টি হয়, কিন্তু ঢিল ছোঁড়া হলে কাচ চৌচির হয়ে যায় কেন? বুলেটের গতি অত্যন্ত বেশি হয়। বুলেট যখন কাচের জানালায় ছোড়া হয়, তখন অতি অল্প সময় বুলেটের গতি কাচের উপর ক্রিয়া করে। এতে কেবল কাচের আঘাতপ্রাপ্ত অংশে স্থিতিজড়তার সামান্য পরিবর্তন হয়, অন্য অংশের স্থিতিজড়তা অপরিবর্তিত থাকে। এর ফলে আঘাতপ্রাপ্ত অংশে ছোট ছিদ্র তৈরি হয়। অন্যদিকে, ঢিল ছুঁড়লে এর গতি অনেক কম থাকে। ফলে এটি কাচের জানালায় অনেক সময় ধরে ক্রিয়া করে। এতে কাচের জানালার বেশ কিছু অংশের স্থিতিজড়তা নষ্ট হয়। যে সমস্ত অংশের স্থিতিজড়তা নষ্ট হয়, সেগুলো ভেঙ্গে যায় বলে কাচ চৌচির হয়ে যায়।
স্থিতি জড়তার কারণে কোটের উপর লাঠি দ্বারা আঘাত করলে ধূলিকণা পড়ে যায়।
গতি জড়তার কারণে একজন রিক্সাচালক খানিকক্ষণ প্যাডেল করে একটু বিশ্রাম নিলেও রিক্সাটা এগিয়ে যায়।
গতি জড়তার কারণে সুষম বেগে চলন্ত রেলগাড়ির কামরায় বসে একটি ছেলে উপরের দিকে একটি বল ছুঁড়ে দিলে বলটি ছেলেটির হাতে পড়ে।
গতি জড়তার কারণে দ্রুতগতিতে ধাবমান ঘোড়ার পিঠ হতে লাফ দেয়ার পর পেছনে পড়ে না গিয়ে আবার ঘোড়ার পিঠে পড়ে।
গতি জড়তার কারণে চলমান গাড়ি থেকে নেমে সামনের দিকে অগ্রসর না হলে মানুষ পড়ে যায়।
বন্দুক থেকে গুলি ছোঁড়া হলে পেছনের দিকে বন্দুক চালনাকারীকে ধাক্কা দেবে। এটা নিউটনের তৃতীয় সূত্রানুযায়ী হয়।
একজন মাঝি নৌকা চালানোর সময় নিউটনের তৃতীয় সূত্র প্রয়োগ করে। মহাকাশযান উৎক্ষিপ্ত হয় নিউটনের তৃতীয় সূত্রের নীতিতে।
রকেট কিভাবে চলে? নিউটনের তৃতীয় সূত্রের তত্ত্ব অনুসারে রকেট চলে । রকেটে জ্বালানি পুড়িয়ে প্রচুর গ্যাস উৎপন্ন করা হয়। রকেটের পিছনের অংশ থেকে গ্যাস প্রচণ্ড বেগে নির্গত হওয়ায় গতির বিপরীত ক্রিয়ায় রকেটকে বিপরীত দিকে ধাক্কা দেয়। ফলে রকেট প্রচণ্ড বেগে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। বিমান ও রকেট চালনার মূল পার্থক্য হল রকেট চলার জন্য বাতাসের দরকার হয় না কিন্তু বিমান সম্পূর্ণভাবে বাতাসনির্ভর।
জেট ইঞ্জিন কিভাবে চলে? ইঞ্জিনের পশ্চাতের নির্গমপথ দিয়ে তীব্র বেগে গ্যাস বের হবার সময় নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র অনুযায়ী এই গ্যাস যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, তা-ই ইঞ্জিনকে সামনের দিকে চালনা করে। এটি রিঅ্যাকশন ইঞ্জিন। এর যন্ত্রাংশে ঘর্ষণজনিত যে উত্তাপ সৃষ্টি হয় তা লুব্রিকেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে প্রশমিত করা হয়।
বায়ুশূন্য স্থানে পাখি উড়তে পারে না: পাখি ডানা দিয়ে বায়ুতে আঘাত করলে বাতাস ডানার উপর সমান বিপরীতমুখী বল অর্থাৎ প্রতিক্রিয়া বলের সৃষ্টি করে। তাই পাখি আকাশে উড়তে পারে। বায়ুশূন্য স্থানে পাখির ডানা বল প্রয়োগ করলেও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া বলের সৃষ্টি হয় না। তাই পাখি বায়ুশূন্য স্থানে উড়তে পারে না।
ঘোড়া গাড়িকে টানে, ঘোড়ার টানের প্রতিক্রিয়ায় গাড়িও ঘোড়াকে সমান ও বিপরীত বলে টানে তবে গাড়ি কিভাবে চলে - ঘোড়া গাড়িকে টানার সময় মাটিতে তির্যকভাবে পা দিয়ে বলপ্রয়োগ করে। ফলে মাটিও ঘোড়ার পা বরাবর একটি প্রতিক্রিয়া বলের সৃষ্টি করে। যদি এই প্রতিক্রিয়ার বলটির উপাংশ ঘোড়ার উপর প্রযুক্ত গাড়ির বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া বলের (ঘর্ষণ বল) চেয়ে বেশি হয়, তবেই ঘোড়ার গাড়িটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
নৌকা থেকে একজন আরোহী লাফিয়ে যখন তীরে নামেন তখন নৌকা দূরে সরে যায় -- যে নীতির উদাহরণঃ গতির তৃতীয় সূত্র বা ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র।
বল
যা স্থির বস্তুর উপর ক্রিয়া করে তাকে গতিশীল করে বা করতে চায় বা গতিশীল বস্তুর উপর ক্রিয়া করে তার গতির পরিবর্তন করে বা করতে চায় তাকে বল বলে । বলের আন্তর্জাতিক একক: নিউটন। সি.জি.এস পদ্ধতিতে বলের একক: ডাইন। ১ নিউটন = ডাইন
বলের পরিমাপ: বস্তুর ভর ও ত্বরণের গুণফল দ্বারা পরিমাপ করা যায়। অর্থাৎ বল (F) = ভর [M] × ত্বরণ (a)
১ কেজি বল (1 kg-wt force) = কত নিউটন?
আমরা জানি, বল = ভর x ত্বরণ
১ কেজি বল = (১ × ৯.৮) নিউটন
= ৯.৮ নিউটন
--------------------------------
ভর = ১ কেজি এবং ত্বরণ হল অভিকর্ষজ ত্বরণ = ৯.৮ মি:/সে
১ গ্রাম বল (1gm-wt force) = ৯৮১ ডাইন ।
কেন্দ্ৰমুখী বল : যখন কোন বস্তু বৃত্তাকার পথে ঘুরতে থাকে তখন যে বল সর্বদা বস্তুর উপরে ঐ বৃত্তের কেন্দ্র অভিমুখে ক্রিয়া করে বস্তুটিকে বৃত্তপথে গতিশীল রাখে, তাকে কেন্দ্রমুখী বল বলে ।
কেন্দ্রবিমুখী বল : যখন কোন বস্তু একটি বৃত্তাকার পথে ঘুরে তখন যে বল ঐ বস্তুর উপর বৃত্তের কেন্দ্রের বিপরীত দিকে কাজ করে তাকে কেন্দ্রবিমুখী বল বলে।
রাস্তার ব্যাংকিং : বক্রপথে মোটর বা রেলগাড়ি চলার সময় একটি কেন্দ্রমুখী বলের প্রয়োজন হয়। কেন্দ্রমুখী বলের অভাবে গতি জড়তার কারণে যানবাহন উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই জড়তাকে প্রশমিত করার জন্য বক্রপথে বাইরের রাস্তা ভিতরের দিকের চেয়ে কিছুটা উচু করে কেন্দ্রমুখী বল সৃষ্টি করা হয়। এ ব্যবস্থাকে রাস্তার ব্যাংকিং বলে।
পালতোলা নৌকা কিভাবে সম্পূর্ণ অন্য দিকের বাতাসকে এর সম্মুখ গতিতে ব্যবহার করতে পারে: সম্মুখ অভিমুখে বলের উপাংশটিকে কার্যকর করে ।
নদীর একপাশ থেকে গুন টেনে নৌকাকে মাঝ নদীতে রেখেই সামনের নেয়া সম্ভব হয় : একটি রশি দ্বারা যখন নৌকার গুন টানা হয়, রশি দ্বারা নৌকার উপর প্রযুক্ত বল দুইটি উপাংশে ক্রিয়া করে । বলের একাংশ নৌকাকে সম্মুখ দিকে চালিত করে এবং অপর অংশ নৌকা নদীর পাড়ের দিকে চালিত করে। এই অবস্থায় নৌকাটি কিছুদূর এগিয়ে পাড়ে ঠাঁই নেয়ার কথা। কিন্তু নৌকার মাঝি গুন টানার সময় হাল যথাযথভাবে ঘুরায়ে পাড়ের দিকের বলের অংশকে প্রশমিত করে। ফলে সম্মুখদিকের বলের ক্রিয়ায় নৌকা সামনের দিকে মাঝ-নদী বরাবর চলে ।
ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র
একাধিক বস্তুতে ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বল ছাড়া অন্য কোন বল ক্রিয়া না করলে যে কোন নির্দিষ্ট দিকে তাদের মোট ভরবেগের কোন পরিবর্তন হয় না। ভরবেগ ভর × বেগ। কাজেই বস্তুর বেগ দ্বিগুণ হলে ভরবেগ দ্বিগুণ হবে।
একটি হালকা ও একটি ভারী বস্তুর ভরবেগ সমান। ভরবেগ সমান হওয়ায় ভর কম হলে বেগ বেশি হবে এবং ভর বেশি হলে বেগ কম হবে। হালকা ও ভারী একই উচ্চতা থেকে নিচের দিকে পড়তে থাকলে হালকা বস্তুর ভর কম হওয়ায় গতিশক্তি বেশি হবে। অন্যদিকে ভারী বস্তুর ভর বেশি হওয়ায় গতিশক্তি কম হবে।
জড়তা
ফুলানো বেলুনের মুখ ছেড়ে দিলে বাতাস বেরিয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে বেলুনটি ছুটে যায়। কোন ইঞ্জিনের নীতির সংগে এর মিল আছে: রকেট ইঞ্জিন।
বিমান ও রকেট চলা মধ্যে মূল পার্থক্য: রকেট চলার জন্য বাতাসের দরকার হয় না কিন্তু বিমান সম্পূর্ণভাবে বাতাস নির্ভর
ঘর্ষণ
দুটি বস্তু পরস্পরের সংস্পর্শে থেকে যদি একের উপর দিয়ে অপরটি চলতে চেষ্টা করে অথবা চলতে থাকে তাহলে বস্তুদ্বয়ের স্পর্শ তলে এই গতির বিরুদ্ধে একটা বাঁধার উৎপত্তি হয়, এই বাঁধাকে ঘর্ষণ বলে।
স্থির ঘর্ষণ এবং গতিশীল ঘর্ষণের অনুপাত সবসময় ১ এর চেয়ে বেশি।
ঘর্ষণ বল F, প্রতিক্রিয়া বল R হলে ঘর্ষণ সহগ μ = F/R . সাধারণত ঘর্ষণ সহগের মান 0 এবং 1 এর মধ্যে থাকে।
ঘর্ষণ এর প্রকারভেদ: ঘর্ষণকে চার ভাগে ভাগ করা যায়:
১. স্থিতি ঘর্ষণ (Static friction)
২. গতি ঘর্ষণ (Sliding friction)
৩. আবর্ত ঘর্ষণ (Rolling friction)
৪. প্রবাহী ঘর্ষণ (Fluid friction)
ঘর্ষণের সুবিধা : ঘর্ষণজনিত বাধার জন্য
১. হাঁটা সম্ভব হয়।
২. কোন কিছু ধরা সম্ভব হয়।
৩. কাঠে পেরেক বা স্ক্রু আটকানো যায় ।
৪. দড়িতে কোন গিরো দেওয়া সম্ভব হয়।
৫. দিয়াশলাই হতে আগুন পাওয়া যায়।
৬. ব্রেক চেপে গাড়ি থামানো যায়।
৭. বেল্টের সাহায্যে যন্ত্রপাতি ঘুরানো যায় ।
৮. সেতারে ঝংকার তোলা সম্ভব হয়।
ঘর্ষণের অসুবিধা:
১. যন্ত্র চলার সময় গতিশীল অংশগুলোর মধ্যে ঘর্ষণ ক্রিয়া করার ফলে ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
২. ঘর্ষণের ফলে যান্ত্রিক দক্ষতা বেশ কমে যায় ।
৩. ঘর্ষণের ফলে অনাবশ্যক তাপ উৎপাদনের জন্য যন্ত্রের ক্ষতি হয় ।
লুব্রিকেশন সিস্টেমের কাজ: যন্ত্রাংশে ঘর্ষণজনিত যে উত্তাপ সৃষ্টি হয় তাকে হ্রাস করে ।
একটি বস্তুর অবস্থান নির্বিশেষে যে বিন্দু দিয়ে পুরো ওজন কাজ তাকে বলা হয় ভারকেন্দ্র।