বৈদ্যুতিক রোধ ও পরিবাহিতা

বিদ্যুৎ পরিবাহিতার উপর ভিত্তি করে পদার্থকে তিনভাগে ভাগ করা যায় যথা : পরিবাহী , অপরিবাহী ও অর্ধপরিবাহী । এ থেকে বোঝা গেল কোন পদার্থের মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ বেশি প্রবাহিত হয় আবার কোনটার মধ্যে দিয়ে কম প্রবাহিত হয় আবার কোনটার মধ্যে বিদ্যুৎ পরিবাহিত হয় না । অর্থাৎ পদার্থের মধ্যে এমন একটি ক্ষমতা রয়েছে যা দ্বারা তারা বিদ্যুতের পরিবহনকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে । আর এ বাধা প্রদান করার ক্ষমতাই হল রোধ । অপরিবাহী পদার্থের রোধ সবচেয়ে বেশি এবং পরিবাহী পদার্থের রোধ সবচেয়ে কম ।

রোধ

রোধ হচ্ছে বিদ্যুৎ পরিবাহীতার ধর্ম। বিদ্যুৎ পরিবাহীতার যে ধর্মের জন্য এর মধ্য দিয়ে পরিবাহিত তড়িৎ প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয় বা বিঘ্নিত হয়, তাকে রোধ বলে। রোধের এসআই একক ও'ম, একে গ্রীক চিহ্ন ওমেগা (Ω) দ্বারা সূচিত করা হয়। বৈদ্যুতিক যন্ত্রে প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রোধ ব্যবহার করা হয়।

ওহমের সূত্র: নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোন পরিবাহীর মধ্য দিয়ে যে বিদ্যুৎ প্রবাহ চলে তা পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্যের সমানুপাতিক।

বিদ্যুৎ প্রবাহ, রোধ এবং বিভব পার্থক্যের মধ্যে সম্পর্ক:
বিভব পার্থক্য = রোধ × বিদ্যুৎ প্রবাহ। (V = RI)
কোন পরিবাহকের রোধ চারটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যথা:
ক) পরিবাহকের দৈর্ঘ্য
গ) পরিবাহকের উপাদান
খ) পরিবাহকের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল
ঘ) পরিবাহকের তাপমাত্রা

দৈর্ঘ্যের রোধ

একই প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল এবং একই উপাদান দ্বারা তৈরি দুটি পরিবাহী তার P এবং Q দেখানো হয়েছে। P তারের দৈর্ঘ্য Q তারের চেয়ে বেশি। বেশি হওয়ায় তার রোধও বেশি।

প্রস্থচ্ছেদের রোধ

একই দৈর্ঘ্যের এবং একই উপাদান দ্বারা তৈরি দুটি পরিবাহী তার S এবং T দেখানো হয়েছে। S তারের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল T তারের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল অপেক্ষা বেশি। যে তারের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল বেশি তার রোধ কম ।

রোধের সূত্র: ৩টি যথা :
দৈর্ঘ্যের সূত্র তাপমাত্রা, উপাদান ও প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল স্থির থাকলে কোন পরিবাহীর রোধ পরিবাহীর দৈর্ঘ্যের সমানুপাতিক ।
প্রস্থচ্ছেদের সূত্র তাপমাত্রা, উপাদান ও দৈর্ঘ্য স্থির থাকলে কোন পরিবাহীর রোধ পরিবাহীর প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল ব্যস্তানুপাতিক ।
উপাদানের সূত্র তাপমাত্রা, দৈর্ঘ্য ও প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল স্থির থাকলে বিভিন্ন পরিবাহীর রোধ বিভিন্ন হয় ।

পরিবাহীর রোধের সূত্র:
রোধ = আপেক্ষিক রোধ × পরিবাহীর দৈর্ঘ্য পরিবাহীর প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল

আপেক্ষিক রোধ

নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় একক দৈর্ঘ্য ও একক প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফলবিশিষ্ট কোন পরিবাহীর রোধকে আপেক্ষিক রোধ বলে। একে ρ দ্বারা প্রকাশ করা হয় । আপেক্ষিক রোধের একক Ω-m (ওহম-মিটার)।

পদার্থ আপেক্ষিক রোধ (Ω m)
রূপা 1.59 × 10 -8
তামা 1. 68 × 10 -8
সোনা 2. 44 × 10 -8
গ্রানাইট 2. 50 × 10 -8
হীরা 1.00 × 10 -8
বাতাস 1.30 × 10 -8

রোধের সমবায়: একাধিক রোধকে একত্রে যুক্ত করাকে বলে রোধের সমবায়।
প্রকারভেদ: ২ প্রকার। যথা: ১. শ্রেণী সমবায় বা রোধের আনুক্রমিক ২. সমান্তরাল সমবায় ।

শ্রেণী সমবায় বা রোধের আনুক্রমিক সমান্তরাল সমবায়
যখন কতগুলো রোধকে এমন ভাবে পর পর সাজানো হয় যাতে রোধগুলোর মধ্য দিয়ে একই মাত্রার তড়িৎ প্রবাহ চলে তখন উক্ত সমবায়কে শ্রেণী সমবায় বা রোধের আনুক্রমিক বলে। যখন কতগুলো রোধের একপ্রান্ত কোন এক বিন্দুতে এবং অপর প্রান্ত অন্য এক বিন্দুতে সংযুক্ত করা হয় এবং প্রত্যেকটি রোধের দু'প্রান্তে একই বিভব পার্থক্য থাকে তখন রোধের এরূপ সমবায়কে সমান্তরাল সমবায় বলে।
শ্রেণী সমবায় সমান্তরাল সমবায়

বর্তনীতে ব্যবহৃত রোধক: বর্তনীতে ব্যবহৃত রোধক দুই প্রকার। যথা-
১. স্থির মানের রোধক ২. পরিবর্তী রোধক

১. স্থির মানের রোধক: যে সকল রোধকের রোধের মান নির্দিষ্ট তাদেরকে স্থির মানের রোধক বলে ।

২. পরিবর্তী রোধক: পরিবর্তী রোধক হলো সেই সকল রোধক যাদের রোধের মান প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করা যায়। এদেরকে রিওস্টেটও বলা হয় । কোনো বর্তনীতে যখন তড়িৎ প্রবাহের মানের পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় তখনই কেবল বর্তনীতে রিওস্টেট অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

তাপমাত্রার সাথে রোধের সম্পর্ক

কোন উপাদানের পরিবাহকের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল অপরিবর্তিত থাকলে নির্দিষ্ট একটি পরিবাহকের রোধ এর দৈর্ঘ্যের সমানুপাতে পরিবর্তিত হয়।
একই উপাদানের তৈরি মোটা তার ও চিকন তারের মধ্যে চিকন তারের রোধ বেশি ।
তাপমাত্রা বাড়ালে প্রায় সকল পরিবাহকেরই রোধ বৃদ্ধি পায় ।
তাপমাত্রা বাড়ালে যেসব মৌলের রোধ হ্রাস পায়: কার্বন, সিলিকন, জার্মেনিয়াম ।
যে পদার্থের উপর আলো পড়লে রোধ হ্রাস পায়: সেলেনিয়াম ও ক্ষার জাতীয় পদার্থ ।
চৌম্বকক্ষেত্রের প্রাবল্য বৃদ্ধি পেলে যে ধাতুর রোধ বৃদ্ধি পায়: বিসমাথ ।
চাপ বৃদ্ধিতে রোধ হ্রাস পায়: কার্বন গুড়ার ।
মানবদেহের রোধ: গায়ের চামড়া শুকনো থাকলে মানব দেহের রোধের পরিমাণ প্রায় 50,000Ω থাকে । কিন্তু চামড়া ভিজা থাকলে এর রোধ অনেক কমে প্রায় 10000Ω হয় ।
ভেজা অবস্থায় কোন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম স্পর্শ করা বিপজ্জনক: ভিজা অবস্থায় শরীরের রোধ কম হওয়ায় শরীরের মধ্য দিয়ে বেশি প্রবাহ চলতে পারে । এ অবস্থায় ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক সুইচ, বালব, পাখা, হিটার, ইস্ত্রি, টেলিভিশন প্রভৃতিকে স্পর্শ করলে দেহের রোধ কম থাকায় বৈদ্যুতিক শক খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।
বৈদ্যুতিক পাখা ধীরে ধীরে ঘুরলে বিদ্যুৎ খরচ একই হয়: বৈদ্যুতিক পাখা ধীরে বা জোরে ঘোরা রেগুলেটর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। রেগুলেটরে পরিবর্তনশীল রোধ থাকে । রোধ বাড়ানো হলে পাখা ধীরে ঘোরে । পাখা ধীরে ঘুরলেও বিদ্যুৎ খরচ একই হয় কারণ এসময় রেগুলেটরে বিদ্যুৎশক্তি তাপশক্তি হিসাবে অপচয় হয়।

নবীনতর পূর্বতন