আবু ইসহাক

আবু ইসহাক (১৯২৬-২০০৩)

প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক আবু ইসহাক ছিলেন জীবনসন্ধানী লেখক । তাঁর রচনার মূল বিষয় ছিল বিশ্বযুদ্ধ, দূর্ভিক্ষ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্থ নিম্নবিত্ত সাধারণ মানুষের জীবনচিত্র, যা তিনি নির্মোহ দৃষ্টিতে উপস্থাপন করেছেন।

আবু ইসহাকের সাহিত্যকর্ম

সাহিত্যিক উপাদান সাহিত্যিক তথ্য
জন্ম আবু ইসহাক ১ নভেম্বর, ১৯২৬ সালে শরিয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার শিরঙ্গল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
‘রসের জলসায়’ গল্প মাত্র ১৪ বছর বয়সে ১৯৪০ সালে 'রসের জলসায়' গল্পটি কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত ' নবযুগ ' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
এনএসআই ১ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালে এনএসআই এর খুলনা বিভাগের প্রধানের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
সম্পাদনা তিনি বাংলা একাডেমির ‘সমকালিন বাংলা ভাষার অভিধান' (১৯৯৩) সম্পাদনা করেন ।
পুরস্কার ও সম্মাননা তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৩), একুশে পদক (১৯৯৭) পান ।
বাড়ি চাকরি জীবনের শেষ পর্যায়ে খুলনার খালিশপুর এলাকায় ‘সূর্যদীঘল বাড়ি' নামে একটি বাড়ি নির্মাণ করেন।
উপন্যাস তাঁর উপন্যাসগুলো:

‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ (১৯৫৫): এটি প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস। পঞ্চাশের মন্বন্তর, দেশ বিভাগ, স্বাধীনতার আনন্দ ও বেদনাসহ বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনের বিশ্বস্ত দলিল এ উপন্যাস। এপ্রিল, ১৯৮৯ সালে এর কিশোর সংস্করণ প্রকাশিত হয় । প্রধান চরিত্র: জয়গুন।

‘পদ্মার পলিদ্বীপ' (১৯৮৬): এটির প্রথম ১৬টি অধ্যায় ১৯৭৪-৭৬ পর্যন্ত ‘মূখর মাটি’ নামে বাংলা একাডেমির ‘উত্তরাধিকার’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এর অনেক পরে তিনি উপন্যাসটি ৩২টি অধ্যায়ে সমাপ্ত করে ১৯৮৬ সালে ‘পদ্মার পলিদ্বীপ' নামে প্রকাশ করেন। এ উপন্যাসের একদিকে রয়েছে পদ্মাতীর কেন্দ্রীক চরের অধিবাসীর জীবনসংগ্রাম, পদ্মার বুকে জেগে উঠা চর দখলকে কেন্দ্র করে সংঘাত, অন্যদিকে রয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় গ্রামীণ বা চরাঞ্চলের মানুষের জীবনের দুর্বিষহ দিনাতিপাত। চরিত্র: ফজল, এরফান মাতব্বর, জরিনা।

জাল' (১৯৮৮): এটি গোয়েন্দা কাহিনি ভিত্তিক ।
অন্যান্য সাহিত্যকর্ম তাঁর অন্যান্য সাহিত্যকর্মসমূহ:
গল্পগ্রন্থ: ‘মহাপতঙ্গ' (১৯৬৩): এ গল্পটিতে একজোড়া চড়ুই পাখির জবানিতে একদিকে বিজ্ঞানের আশীর্বাদ, অন্যদিকে অভিশাপের কথা বিধৃত হয়েছে। এ গল্পের ইংরেজি অনুবাদ Dragon Fly এর নাট্যরূপের জন্য “সুইজারল্যান্ড আন্তর্জাতিক পুরস্কার' লাভ করেন ।
‘অভিশাপ’ (১৯৪০): এটি তাঁর প্রথম প্রকাশিত ছোটগল্প। যা কাজী নজরুল ইসলামের ‘নবযুগ' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
‘হারেম’ (১৯৬২),
‘জোঁক’ (ছোটগল্প)।
নাটক: ‘জয়ধ্বনি'
স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ: “স্মৃতিবিচিত্রা”
মৃত্যু তিনি ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০০৩ সালে ঢাকায় মারা যান।

‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ উপন্যাসের পরিচয়

গ্রামীণ জীবনের দারিদ্র্য, কুসংস্কার, মোড়ল ও মোল্লাদের দৌড়াত্ম্য, হৃদয়হীনা শাশুড়ির বৌয়ের প্রতি অত্যাচার প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আবু ইসহাক রচনা করেন বিখ্যাত উপন্যাস 'সূর্য দীঘল বাড়ী' (১৯৫৫)। ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে বাংলার ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে পঞ্চাশের মন্বন্তর নামে যে দুর্ভিক্ষ হয়, তাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারায়। যারা প্রাণ বাঁচিয়ে লঙ্গরখানায় আশ্রয় নিতে পেরেছিল তাদেরই একজন স্বামী পরিত্যাক্তা জয়গুন। এই জয়গুনের জীবনের আলেখ্যকে কেন্দ্র করে এগিয়ে যায়। উপন্যাসের কাহিনি। জয়গুনদের বাড়িতে রাতে কথিত ভূতের ঢিল পড়ে, সে বাড়িতে নির্ভয়ে থাকা যায় না। তাই সূর্য দীঘল বাড়ী অমঙ্গলের প্রতীকে পরিণত হয়। পঞ্চাশের মন্বন্তর, দেশ বিভাগ, স্বাধীনতার আনন্দ ও বেদনাসহ বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনের বিশ্বস্ত দলিল এ উপন্যাস। এটি তাঁর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস। এ উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৭৯ সালে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন শেখ নিয়ামত আলী ও মসীহউদ্দিন শাকের। এটি বাংলাদেশের প্রথম সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র। এর চলচ্চিত্ররূপ আন্তর্জাতিক ১টি পুরস্কার লাভ করে । উপন্যাসটি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

নবীনতর পূর্বতন