কায়কোবাদ

কায়কোবাদ (১৮৫৭-১৯৫১)

মহাকবি কায়কোবাদ আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম বাঙালি মুসলমান কবি । বাংলা মহাকাব্যের অস্তোন্মুখ এবং গীতিকবিতার স্বর্ণযুগে তিনি মুসলমানদের গৌরবময় ইতিহাস থেকে কাহিনি নিয়ে ‘মহাশ্মশান' মহাকাব্য রচনা করে দুঃসাহস দেখিয়েছেন, যা তাঁকে গৌরবময় আসনে অলংকৃত করে । তিনি বাংলা মহাকাব্য ধারার কবি হিসেবে খ্যাত।

কায়কোবাদের সাহিত্যকর্ম

সাহিত্যিক উপাদান সাহিত্যিক তথ্য
জন্ম কায়কোবাদ ১৮৫৭ সালে ঢাকার নবাবগঞ্জের আগলা পূর্বপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ।
প্রকৃত নাম তাঁর প্রকৃত নাম মুহম্মদ কাজেম আল কুরায়শী
বিশেষত্ব আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম কবি কায়কোবাদ। (সূত্র: বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান ]

তিনি বাঙালি মুসলিম কবিদের মধ্যে প্রথম মহাকাব্য ও সনেট রচয়িতা। তাঁর কাব্য প্রতিভায় হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও নবীনচন্দ্র সেনের প্রভাব ছিল।
উপাধি বাংলা কাব্য সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯২৫ সালে নিখিল ভারত সাহিত্য সংঘ তাঁকে 'কাব্যভূষণ', 'বিদ্যাভূষণ', ‘সাহিত্যরত্ন' উপাধি প্রদান করেন ।
বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সম্মেলন তিনি ১৯৩২ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সম্মেলনের মূল অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
মহাকাব্য কায়কোবাদের মহাকাব্যের নাম ‘মহাশ্মশান’ (১৯০৪): এটি পানিপথের ৩য় যুদ্ধের কাহিনি (১৭৬১) অবলম্বনে রচিত ।
‘মহাশ্মশান' মহাকাব্য কায়কোবাদের শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য ‘মহাশ্মশান' (১৯০৪)। [অধিকাংশ বইয়ে ‘মহাশ্মশান’ এর প্রকাশসাল দেওয়া হয়েছে ১৯০৫, কিন্তু এটি হবে ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দ। সূত্র: বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান]।

মোহাম্মদ রওশন আলী সম্পাদিত ‘কোহিনূর’ পত্রিকায় মহাকাব্যটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এটি পানিপথের ৩য় যুদ্ধের কাহিনি (১৭৬১) অবলম্বনে রচিত। এ মহাকাব্য ৮৭০ পৃষ্ঠায় তিন খণ্ডে মোট ৬০টি সর্গে বিভক্ত।

পানিপথের যুদ্ধে মারাঠাদের সাথে রোহিলা-অধিপতি নজিব-উদ্-দৌলা'র শক্তি পরীক্ষা হয়। কবির দৃষ্টিতে এটি উভয়ের শক্তিক্ষয় ও ধ্বংস, এজন্য তিনি একে ‘মহাশ্মশান’ বলেছেন। এ কাব্যে ঐতিহাসিক-অনৈতিহাসিক দুই ধরনের চরিত্রের সমাবেশ ঘটেছে। প্রশিক্ষিত মুসলিম যোদ্ধা ইব্রাহীম কার্দি মুসলিম শিবিরে চাকরি না পেয়ে মারাঠা কর্তৃক চাকরি পায় এবং সমাদৃত হয়। যুদ্ধ শুরু হলে ইব্রাহীম কার্দির স্ত্রী জোহরা মনুবেগ ছদ্মনাম ধারণ করে এসে স্বামীকে মুসলিম শিবিরে ফিরিয়ে নিতে চেষ্টা করে।

ইব্রাহীম কার্দি বিশ্বাসঘাতকতা না করে মারাঠাদের জন্য যুদ্ধে জীবন দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। নায়ক ইব্রাহীম কার্দির মৃত্যু কাব্যটিকে ট্র্যাজিক করে তোলে।

মুনীর চৌধুরীর ‘রক্তাক্ত প্রান্তর' নাটকের কাহিনিও পানিপথের ৩য় যুদ্ধ। উল্লেখযোগ্য চরিত্র: ইব্রাহীম কার্দি, জোহরা।
কাব্যগ্রন্থ কায়কোবাদের কাব্যগ্রন্থগুলোর নাম:

‘বিরহবিলাপ' (১৮৭০): এটি কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ যা মাত্র বার বছর বয়সে রচনা করেন এবং তের বছর বয়সে প্রকাশিত হয় ।
'অশ্রুমালা' (১৮৯৫): এটি গীতিকাব্য।
‘মহরম শরীফ’ (১৯৩২): এটি মহাকাব্যোচিত বড় আকারের একটি কাহিনিকাব্য ।
‘কুসুমকানন' (১৮৭৩),
‘শিবমন্দির' (১৯২১),
‘অমিয়ধারা’ (১৯২৩),
‘শ্মশানভস্ম' (১৯৩৮)।

কায়কোবাদের বিখ্যাত কবিতা ‘আযান’
কবির মৃত্যুর পর প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ ‘প্রেমের ফুল' (১৯৭০),
‘প্রেমের বাণী’ (১৯৭০),
‘প্রেম পারিজাত' (১৯৭০),
‘মন্দাকিনী ধারা' (১৯৭১),
‘গওস পাকের প্রেমের কুঞ্জ' (১৯৭৯)।
মৃত্যু তিনি ২১ জুলাই, ১৯৫১ সালে ঢাকায় মারা যান ।
নবীনতর পূর্বতন