জহির রায়হান

জহির রায়হান (১৯৩৫-১৯৭২)

প্রখ্যাত কথাশিল্পী ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান ছিলেন ভাষাসৈনিক। তিনি প্রত্যক্ষভাবে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। তাঁর রচিত সাহিত্যকর্ম ও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শাসনকে ও সামরিক জান্তার গণহত্যার চিত্র চিত্রিত করা হয় এবং জনগণকে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে উদ্বুদ্ধ করা হয় ।

জহির রায়হানের সাহিত্যকর্ম

সাহিত্যিক উপাদান সাহিত্যিক তথ্য
জন্ম জহির রায়হান ১৯ আগস্ট, ১৯৩৫ সালে ফেনীর মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রকৃত নাম তাঁর প্রকৃত নাম আবু আবদার মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ। ডাকনাম- জাফর
বিশেষ পরিচিতি শহীদুল্লা কায়সার তাঁর ভাই। চিত্রনায়িকা কোহিনুর আক্তার সুচন্দা তার স্ত্রী ।
ভাষা আন্দোলন জহির রায়হান ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন।
সাংবাদিকতা ছাত্রজীবনে তিনি সাহিত্য মাসিক 'প্রবাহ' (১৯৫৬) এবং ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘ এক্সপ্রেস' পত্রিকার সম্পাদনা ও প্রকাশনার সাথে যুক্ত ছিলেন। এছাড়াও ১৯৫০ সালে ‘যুগের আলো' পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন ।
রাজনীতি ১৯৫১-৫৭ সাল পর্যন্ত কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। এ সময় কমরেড মনি সিংহের দেয়া রাজনৈতিক নাম ‘ রায়হান’ গ্রহণ করেন ।
পরিচালক ১৯৫৬ সালে 'জাগো হুয়া সাবেরা' ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন।
পুরস্কার তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার- ১৯৭২ (মরণোত্তর) পান।
উপন্যাস তাঁর উপন্যাসসমূহ:

‘শেষ বিকেলের মেয়ে' (১৯৬০): এটি তাঁর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস। এটি ‘সাপ্তাহিক বিজলী' পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় ।

‘হাজার বছর ধরে’ (১৯৬৪): আবহমান বাংলার জীবন ও জনপদ এর প্রতিপাদ্য। তিনি এ উপন্যাসের জন্য ১৯৬৪ সালে ‘আদমজী সাহিত্য পুরস্কার' লাভ করেন। জহির রায়হানের স্ত্রী কোহিনুর আক্তার সুচন্দা এ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন এবং ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার' লাভ করেন। চরিত্র - টুনি, মন্তু, মকবুল।

‘আরেক ফাল্গুন’ (১৯৬৮): ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ হয়ে ১৯৫৫ সালে বর্তমান শহিদ মিনারের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন পর্যন্ত চলমান আন্দোলন, জনতার সম্মিলন, ছাত্র/ছাত্রীদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ, তাদের প্রেম-প্রণয় ইত্যাদি এ উপন্যাসের মূল বিষয়। এটি ভাষা আন্দোলনভিত্তিক প্রথম উপন্যাস ।

‘আর কত দিন' (১৯৭০): মুক্তিযুদ্ধপূর্ব সময়ের অস্থির সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনমুখর প্রেক্ষাপটে আসন্ন যুদ্ধের একটি ভয়াবহ সম্ভাবনা, যুদ্ধকালীন বাস্তবতা, লাঞ্ছিত মানবতার আর্তি, শান্তি ও ভালোবাসার জন্য মানুষের চিরন্তন অন্বেষা এ উপন্যাসের মূল উপজীব্য। ইভা ও তপু এ উপন্যাসের শাশ্বত শান্তি ও ভালোবাসার মূর্ত প্রতীক ।

‘তৃষ্ণা’ (১৯৬২),

‘বরফ গলা নদী' (১৯৬৯),

‘কয়েকটি মৃত্যু' (১৯৬৫)।
চলচ্চিত্র তাঁর পরিচালিত চলচ্চিত্রগুলো:

‘কখনো আসে নি’ (১৯৬১): এটি তাঁর পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র

‘সঙ্গম' (১৯৬৪): এটি বাংলাদেশের প্রথম রঙ্গিন চলচ্চিত্র।

‘জীবন থেকে নেয়া” (১৯৭০): এটি ভাষা আন্দোলনভিত্তিক চলচ্চিত্র । প্রথম এই চলচ্চিত্রেই জাতীয় সংগীত বাজানো হয় ।

‘কাঁচের দেয়াল’ (১৯৬৩): এটি নিগার পুরস্কার লাভ করে ।

'বাহানা' (১৯৬৫): এটি ছিল উর্দু ভাষায় নির্মিত তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম সিনেমাস্কোপ ছবি।

Let there be Light : প্রামান্যচিত্র।

Stop Genocide: বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার প্রামান্যচিত্র। এটি ১৯৭১ সালে জহির রায়হান কলকাতা থেকে তৈরি করেন।

‘সোনার কাজল' (১৯৬২),

'বেহুলা' (১৯৬৬),

'আনোয়ার' (১৯৬৭)।
গল্পগ্রন্থ তাঁর গল্পগ্রন্থটির নাম ‘সূর্যগ্রহণ' (১৯৫৫)।
গল্পসমূহ তাঁর রচিত গল্পসমূহ:

‘সূর্যগ্রহণ’: বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত তসলিম নামক যুবকের পরিবারের মর্মবিদারক কাহিনি নিয়ে রচিত।

‘একুশের গল্প’: ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে এটি রচিত।

‘বাঁধ’: গ্রামীণ পটভূমিতে পীরদের ভণ্ডামি নিয়ে রচিত।
‘একুশের গল্প’ বিখ্যাত ঔপন্যাসিক ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান রচিত ভাষা আন্দোলনভিত্তিক বিখ্যাত ছোটগল্প 'একুশের গল্প'। এ গল্পের প্রধান চরিত্র ঢাকা মেডিকেল পড়ুয়া ছাত্র তপু। জন্ম থেকেই তার একটি পা ছোট ছিল। সে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা আদায়ের মিছিলে যোগ দেয় এবং মিলিটারির গুলি তার কপালে আঘাত করলে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। শাসকশ্রেণি তার লাশ পর্যন্ত গায়েব করে। চার বছর পর তপুর সহপাঠীর রুমমেট একটি কঙ্কাল নিয়ে গবেষণা করার সময় দেখতে পায় কঙ্কালের একটি পা ছোট এবং কপালে ছিদ্র। সাথে সাথে ছাত্রটি তা তপুর বন্ধুদের দেখায়। তপুর বন্ধুর কঙ্কালটি পরীক্ষা করে দেখে এটি তপুরই কঙ্কাল। এভাবেই তপু আবার কঙ্কাল হয়ে বন্ধুদের মাঝে ফিরে আসে।
মৃত্যু তিনি ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি নিখোঁজ ভাই শহীদুল্লা কায়সারকে খুঁজতে মিরপুরে গিয়ে নিজেই নিখোঁজ হন। তাঁর লাশও পাওয়া যায়নি ।
নবীনতর পূর্বতন