শামসুর রাহমান

শামসুর রাহমান (১৯২৯-২০০৬)

আধুনিক কবি শামসুর রাহমান, যিনি রোমান্টিকতার সাথে সমাজমনস্কতার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে নতুন কাব্যধারার জন্ম দিয়েছেন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতাযুদ্ধ ও পরবর্তী সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন তাঁর কবিতাকে করেছে অনন্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। নগর জীবনের যন্ত্রণা, একাকিত্ব, পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন ইত্যাদি তাঁর কবিতায় লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য।

শামসুর রাহমানের সাহিত্যকর্ম

সাহিত্যিক উপাদান সাহিত্যিক তথ্য
জন্ম শামসুর রাহমান ২৪ অক্টোবর, (পারিবারিক হিসেবে ২৩ অক্টোবর) ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে পুরান ঢাকার মাহুতটুলিতে জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস নরসিংদী জেলার রায়পুরার পাড়াতলি গ্রাম ।
ডাকনাম শামসুর রাহমানের ডাকনাম- বাচ্চু
সাংবাদিকতা ১৯৫৭ সালে সাংবাদিক হিসেবে ‘দৈনিক মর্নিং নিউজ'- এ কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে ‘দৈনিক পাকিস্তান’ পত্রিকায় যোগদান করেন। পরবর্তীতে এটি ‘দৈনিক বাংলা’ নামে নামকরণ হয়। ১৯৭৭ সালে ‘দৈনিক বাংলা' ও সাপ্তাহিক ‘বিচিত্রা'র সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৮৭ সালে সরকার পরিচালিত ‘দৈনিক বাংলা’ থেকে পদত্যাগ করেন।
ছদ্মনাম মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি কলকাতার ‘দেশ' পত্রিকায় ‘মজলুম আদিব' ছদ্মনামে কবিতা লিখতেন। তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় সিন্দাবাদ, চক্ষুষ্মান, লিপিকার, নেপথ্যে, জনান্তিকে, মৈনাক প্রভৃতি ছদ্মনামে সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয় লিখতেন।
উপাধি শামসুর রাহমান ‘নাগরিক কবি' হিসেবে খ্যাত।
পুরস্কার তিনি ১৯৬৩ সালে ‘আদমজী সাহিত্য পুরস্কার', ১৯৬৯ সালে ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার', ১৯৭৭ সালে ‘একুশে পদক' এবং ১৯৯১ সালে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ লাভ করেন ।
কাব্যগ্রন্থ তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো :

তাঁর মোট কাব্য ৬৫ টি ।

‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে' (১৯৬০): এটি তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ।

‘বন্দী শিবির থেকে ’ (১৯৭২): এ কাব্যে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন আবেগ ও প্রত্যাশা প্রাধান্য পেয়েছে। এ কাব্যের মাধ্যমে তিনি কবি খ্যাতি অর্জন করেন।

‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ' (১৯৮২): ১৯৭৫-৮২ সাল পর্যন্ত দেশে সংঘটিত একাধিক সামরিক অভ্যুত্থান এবং সামরিক শাসনের যুপকাষ্ঠে দেশ ও জনগণের চরম অবস্থার প্রতিফলন আছে এ কাব্যে।

‘রৌদ্র করোটিতে' (১৯৬৩),

'বিধ্বস্ত নীলিমা' (১৯৬৭),

‘নিরালোকে দিব্যরথ’ (১৯৬৮),

‘নিজ বাসভূমে' (১৯৭০),

‘দুঃসময়ের মুখোমুখি' (১৯৭৩),

'ফিরিয়ে নাও ঘাতককাটা' (১৯৭৪),

‘আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি' (১৯৭৪),

‘এক ধরনের অহংকার' (১৯৭৫),

‘আমি অনাহারী' (১৯৭৬),

‘শূন্যতায় তুমি শোকসভা' (১৯৭৭),

‘বাংলাদেশ স্বপ্ন দ্যাখে' (১৯৭৭),

‘প্রতিদিন ঘরহীন ঘরে' (১৯৭৮),

'প্রেমের কবিতা' (১৯৮১),

‘ইকারুসের আকাশ' (১৯৮২),

‘এক ফোঁটা কেমন অনল' (১৯৮৬),

‘বুক তাঁর বাংলাদেশের হৃদয়’ (১৯৮৮),

‘হরিণের হাড়' (১৯৯৩),

‘তুমিই নিঃশ্বাস, তুমিই হৃদস্পন্দন' (১৯৯৬),

‘হেমন্ত সন্ধ্যায় কিছুকাল' (১৯৯৭),

‘না বাস্তব না দুঃস্বপ্ন' (২০০৬)।
উপন্যাস তাঁর উপন্যাসগুলো:

অক্টোপাস ' (১৯৮৩),

‘অদ্ভুত আঁধার এক’ (১৯৮৫),

‘নিয়ত মন্তাজ' (১৯৮৫),

‘এলো সে অবেলায়’ (১৯৯৪)।
আত্মস্মৃতি ‘স্মৃতির শহর' (১৯৭৯),

'কালের ধূলোয় লেখা'
(২০০৪)।
শিশুতোষ ‘এলাটিং বেলাটিং' (১৯৭৫),

‘ধান ভানলে কুঁড়ো দেবো'
(১৯৭৭),

‘লাল ফুলকির ছড়া'
(১৯৯৫)।
প্ৰবন্ধ ‘আমৃত্যু তাঁর জীবনানন্দ' (১৯৮৬),

'কবিতা এক ধরনের আশ্রয়'
(২০০২)।
বিখ্যাত পক্তি ১. পৃথিবীর এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত জ্বলন্ত,
ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে, নতুন নিশানা উড়িয়ে,
দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক এই বাংলায় তোমাকেই আসতেই হবে। (তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা)

২. স্বাধীনতা তুমি, রবী ঠাকুরের অজর কবিতা । (স্বাধীনতা তুমি)

৩. স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন। (স্বাধীনতা তুমি)

৪. তোমার মুখের দিকে আজ আর যায় না তাকানো, বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা (বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা)
বিখ্যাত কবিতা বিখ্যাত কবিতা :

‘হাতির শুড়’: ১৯৫৮ সালে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানকে বিদ্রূপ করে ‘সমকাল' পত্রিকায় এ কবিতাটি লেখেন।

‘টেলেমেকাস’: ১৯৬৬ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাগারে বন্দী হলে তাঁকে উদ্দেশ্য করে তিনি এ কবিতাটি লেখেন।

‘বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা': ১৯৬৮ সালে আইয়ুব খান পাকিস্তানের সব ভাষার জন্য অভিন্ন রোমান হরফ চালু করার প্রস্তাব করেন। এ ঘটনার ফলে শামসুর রাহমান এ কবিতাটি লেখেন ।

‘আসাদের শার্ট’: ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি গুলিস্তানে একটি মিছিলের সামনে লাঠিতে শহীদ আসাদের শার্ট দিয়ে বানানো পতাকা দেখে আলোড়িত শামসুর রাহমান এ কবিতাটি লেখেন ।

‘স্বাধীনতা তুমি' ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা’: মুক্তিযুদ্ধের সময় এপ্রিলের প্রথম দিকে যুদ্ধের ধ্বংসলীলা দেখে তিনি এ দুটি কবিতা লেখেন।
মৃত্যু তিনি ১৭ আগস্ট, ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। কবির ইচ্ছানুযায়ী ১৮ আগস্ট বনানী কবরস্থানে মায়ের সমাধির মধ্যে সমাহিত করা হয়।
নবীনতর পূর্বতন