ফররুখ আহমদ

ফররুখ আহমদ (১৯১৮-১৯৭৪)

চল্লিশের দশকে আবির্ভূত শক্তিমান কবিদের অন্যতম ফররুখ আহমদ ছিলেন ইসলামি স্বাতন্ত্র্যবাদী কবি। তাঁর রচিত কবিতায় পাকিস্তানবাদ, ইসলামি আদর্শ বিশেষত মুসলিম জাগরণ এবং আরব-ইরানের ঐতিহ্য উজ্জ্বলভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছে। আরবি-ফারসি শব্দের প্রয়োগ নৈপুণ্য, বিষয়বস্তু ও আঙ্গিকের অভিনবত্বে তাঁর রচিত কবিতা বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে ।

ফররুখ আহমদের সাহিত্যকর্ম

সাহিত্যিক উপাদান সাহিত্যিক তথ্য
জন্ম ফররুখ আহমদ ১০ জুন, ১৯১৮ সালে মাগুরা জেলার (তৎকালীন যশোর) শ্রীপুর উপজেলার মাঝআইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রকৃত নাম প্রকৃত নাম সৈয়দ ফররুখ আহমদ। দাদী ডাকতেন রমজান নামে ।
উপাধি তাঁকে ইসলামি স্বাতন্ত্র্যবাদী কবি, ইসলামি রেনেসাঁর কবি বলা হয় । তাঁর উপাধি: মুসলিম রেনেসাঁর কবি
সম্পাদনা তিনি ‘মাসিক মোহাম্মদী' পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এবং ঢাকা বেতারের ‘স্টাফ রাইটার' হিসেবে কাজ করেছেন ।
প্রথম কবিতা ১৯৩৭ সালে ‘ বুলবুল ' পত্রিকায় তাঁর প্রথম কবিতা ‘ রাত্রি’ এবং ‘মাসিক মোহাম্মদী' পত্রিকায় ‘ পাপজন্ম ' কবিতাটি প্রকাশিত হয় ।
রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত তিনি ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে বাংলার পক্ষে এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে, পাকিস্তানের অখণ্ডতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য, বিবৃতি প্রদান করেন এবং কবিতা রচনা করেন।

১৯৬৭ সালে পাকিস্তান সরকার রেডিও ও টেলিভিশনে রবীন্দ্র সংগীত প্রচার বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে তিনি এ সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন।
পুরস্কার ও সম্মাননা তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬০), আদমজী কবিতা: সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৬), ইউনেস্কো পুরস্কার (১৯৬৬), একুশে পদক (১৯৭৭), স্বাধীনতা পুরস্কার(১৯৮০) পান।
গ্রন্থসমূহ তাঁর রচিত গ্রন্থসমূহ:

কাব্যগ্রন্থ:

‘সাত সাগরের মাঝি' (১৯৪৪): ১৯টি কবিতার সমন্বয়ে এটি কবির প্রথম প্রকাশিত ও শ্রেষ্ঠ কাব্য। মুসলিম জাগরণের লক্ষ্যে এ কাব্যের কবিতাগুলি লিখিত। সেজন্য কবি বঙ্গীয় শব্দ ও অনুষঙ্গ ত্যাগ করে গ্রহণ করেছেন আরব্য উপন্যাস, ইরান-আরবের সংস্কৃতি ও পুরাণকথা। বাংলা প্রচলিত শব্দ পরিত্যাগ করে কবি বহু অপ্রচলিত আরবি-ফারসি শব্দ গ্রহণ করেছেন। ইসলামের ইতিহাস ও ঐতিহ্য কাব্যটির মূল সুর। বিখ্যাত উর্দু কবি আল্লামা ইকবালকে তিনি কাব্যটি উৎসর্গ করেন। এ কাব্যটি প্রকাশে অর্থায়ন করেন কবি বেনজির আহমেদ। ‘সাত সাগরের মাঝি' ও 'পাঞ্জেরি' এ কাব্যের বিখ্যাত কবিতা।

হাতেমতায়ী ’ (১৯৬৬): এটি কাহিনিকাব্য, এর জন্য তিনি ১৯৬৬ সালে আদমজী পুরস্কার লাভ করেন।

‘নৌফেল ও হাতেম' (১৯৬১): এটি কাব্যনাট্য।

‘মুহূর্তের কবিতা' (১৯৬৩): এটি তাঁর সনেট সংকলন ।

‘সিরাজাম মুনিরা’ (১৯৫২),
'হাবেদা মরুর কাহিনি ' (১৯৮১),
‘সিন্দাবাদ' (১৯৮৩)।

শিশুতোষ :

‘পাখির বাসা' (১৯৬৫): এটি শিশুতোষ গ্রন্থ। এর জন্য তিনি ১৯৬৬ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার পান ।
‘নতুন লেখা' (১৯৬৯),
‘হরফের ছড়া' (১৯৭০),
‘চাঁদের আসর' (১৯৭০),
‘ছড়ার আসর' (১৯৭০),
‘ফুলের জলসা’ (১৯৮৫)।

‘উপহার’: এ কবিতাটি তিনি নিজের বিয়ে উপলক্ষে লিখেন । এটি পরবর্তীতে ‘সওগাত' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

‘স্মরণী’: এ কবিতাটি তিনি আল্লামা ইকবালের স্মরণে লিখেন।

‘পাঞ্জেরী’: পাঞ্জেরী ফারসি শব্দ। এর বাংলা অর্থ জাহাজের অগ্রভাগে রক্ষিত পথনির্দেশক আলোকবর্তিকা বা আলোকবর্তিকাধারী ব্যক্তি। এটি তিনি রূপক অর্থে ব্যবহার করেছেন। ইংরেজ শাসনের যাতাকলে পিষ্ট ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী নেতাকে পাঞ্জেরী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ‘পাঞ্জেরী' কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত ।
মৃত্যু তিনি ১৯ অক্টোবর, ১৯৭৪ সালে ঢাকায় মারা যান।
নবীনতর পূর্বতন