রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরিভাষা | Political and Diplomatic Terminology

Zero-Stunt-game: Zero-Stunt-game বা শূন্য অংকের খেলা এমন একটি খেলা বা প্রতিযোগিতা, যেখানে প্রতিযাগেী দুই বা দুই পক্ষ। আর এ খেলায় একজনের অর্জন বা লাভ, অন্য জনের হারানো বা লোকসানের সমান। অর্থাৎ একজনের অর্জন থেকে অন্যজনের বর্জন বাদ দিলে সব সময় ফলাফল শূন্য হয়। এটি সাম্য ও মুক্তির উপর ভিত্তি করে সৃষ্ট এক ধরনের বৈশ্বিক রাজনৈতিক দর্শন। এ দুটি নীতির উপর ভিত্তি করে উদারতাবাদকে অনেক বিস্তৃত আকার দেয়া হয়েছে। জিরোসাম গেমের মধ্যে উদারতাবাদ এ অর্থে পাওয়া যায় যে, এ প্রতিযোগিতায় যে কেউ সফল ও ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

Washington Consensus: বিখ্যাত Washington Consensus [ওয়াশিংটন কনসেনসাস ] নয়া উদারতাবাদী অর্থনৈতিক নীতি বাস্তবায়নের সাথে সম্পৃক্ত। এ নীতিটি অর্থনীতিবিদ জন উইলিয়ামসন ১৯৯৩ সালে ভালো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ভিত্তি মূলে তার এবং ওয়াশিংটন ভিত্তিক IBRD এবং IMF-এর কিছু নীতিমালাকে বুঝাতে ব্যবহার করেন। নীতিগুলো হচ্ছে বাণিজ্য উদার করা, অন্তর্মুখী বিনিয়োগ বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক-শৃঙ্খলা, দক্ষ সরকারি ব্যয়ের অগ্রাধিকার, কর সংস্কার, ফিন্যানসিয়াল উদারীকরণ, প্রতিযোগিতামূলক বিনিময় হার, বেসরকারি খাতে হস্তান্তরকরণ নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা এবং সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করা।

আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা উদ্ভব: ১৬১৮-১৬৪৮ সময়কালে ত্রিশ বছরব্যাপী প্রথম সর্ব ইউরোপীয় যুদ্ধ সংঘটিত হয়। প্রোটেস্ট্যান্ট ও রোমান ক্যাথলিকদের মধ্যে, যাতে প্রায় আশি লক্ষ মানুষ প্রাণ হারায়। যুদ্ধের এ ভয়াবহতা থেকে মুক্তি লাভের জন্য জার্মানির উত্তর-পশ্চিমের ওয়েস্টফ্যালিয়া নামক স্থানে। ১৬৪৮ সালে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যেখানে উপরিউক্ত দুই পক্ষ স্বাক্ষর করে। এ চুক্তির মাধ্যমে আধুনিক বিশ্বে প্রথমবারের মতো প্রত্যেকটা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেয়া হয়, যেখানে রাষ্ট্রের আয়তন, জনসংখা, ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী এক রাতে অন্য রাষ্ট্র কর্তৃক অভ্যন্তরীণ, বহিঃরাষ্ট্রীয় এবং সার্বভৌমত্বের বিষয়ে কোনারূপে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়ে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। ১৬৪৮ সাল থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত এবং স্নায়ুযুদ্ধের সময় বর্তমান সময়েও রাষ্ট্রব্যবস্থা তথা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ওয়েস্টফ্যালিয়া নীতি অনুযায়ীই চলছে।

অ্যানার্কিজম [ Anarchism]: Anarchism বা নৈরাজ্যবাদী আন্দোলন উনবিংশ শতাব্দীতে জোরদার হয়ে ওঠে। নৈরাজ্যবাদীদের বৈশিষ্ট্য হলো:

  1. সমাজ-বিশ্লেষণের ধার না ধারা
  2. কোনো সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক কর্মসূচি
  3. বিপ্লবী কর্মকান্ডের জন্য
  4. বিদ্যমান সমাজের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে অস্বীকার করা; সুনির্ধারিত রাজনৈতিক পদ্ধতির অনুপস্থিতি, সুস্পষ্ট লক্ষ্যহীনতা এবং সন্ত্রাস-এ তিনটিই ছিল নৈরাজ্যবাদীদের প্রধান বৈশিষ্ট্য।

Cryptocracy: একটি দেশের শাসন ক্ষমতা যখন ধনিক শ্রেণির হাতে থাকে তখন আমরা সেই সরকার ব্যবস্থাকে। Plutocracy বা ধনিকতন্ত্র বলে থাকি। Oligrachy বা গোষ্ঠীতন্ত্র বলতে স্বল্পসংখ্যক লোকের শাসনকে বোঝায়। আর যে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় শুধু অভিজাত শ্রেণিরই কর্তৃত্ব বহাল থাকে সেই ব্যবস্থাকেই Aristocracy বা অভিজাততন্ত্র বলে। এছাড়া যে রাষ্ট্রে ব্যবস্থায় প্রকৃত শাসকরা আড়ালে আবডালে থেকে শাসন কার্য পরিচালনা করে তাকে Cryptocracy বলে।

বাফার স্টেট: বিবাদমান দুই বৃহত্তম রাষ্ট্রের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র কম শক্তি সম্পন্ন স্বাধীন ও নিরপেক্ষ রাষ্ট্র।

স্যাটেলাইট স্টেট: প্রতিবেশী বৃহৎ এবং শক্তিশালী রাষ্ট্রের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবাধীন অপেক্ষাকৃত দুর্বল রাষ্ট্র।

Persona-non-grata: কূটনীতিক পরিভাষার একটি শব্দ কোন দেশ তার দেশে অন্য কোন দেশের কোন কূটনীতিককে যে কোন সময় কোন কারণ ব্যাখ্যা ছাড়াই অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে পারে। ঐ কূটনীতিককে তখন Persona-non-grata' বলে।

Ping Pong Diplomacy: এর ইংরেজি প্রতিশব্দ Shuttle Diplomacy। ১৯৭১ সালে চীনের আমন্ত্রণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেবিল টেনিস (Ping Pong) দল চীন সফর করে। এতে চীন-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়। এ জন্য এটার নামকরণ করা হয় 'পিং পং ডিপ্লোমেসি ।

ডমিনো তত্ত্ব: আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ডমিনো তত্ত্ব বলে একটা কথা আছে। যুক্তরাষ্ট্র পঞ্চাশের দশকে প্রথমবারের মতো এই তত্ত্বের কথা প্রচার করছিল। পঞ্চাশের দশকে ইন্দোচীনে যখন সমাজতন্ত্রীরা একের পর এক রাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন হচ্ছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র এই ডমিনো তত্ত্বর কথা প্রচার করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল একটাই, সমাজতন্ত্রীদের ঠেকাতে সামরিক হস্তক্ষেপ । ডমিনো তত্ত্বে বলা হয়েছে, কোন একটি রাষ্ট্রে যদি সমাজতন্ত্রীরা ক্ষমতাসীন হয়, তাহলে পাশের রাষ্ট্রটিও সমাজতন্ত্রীদের দখলে চলে যাবে। অনেকগুলো তাস যদি দাড় করিয়ে রাখা যায়, একটিকে টোকা দিয়ে ফেলে দিলে এক এক করে পাশের তাসগুলোও পড়ে যাবে। এটাই হচ্ছে ডমিনো তত্ত্বের মূল কথা। একটি রাষ্ট্র যদি সমাজতন্ত্রীদের দখলে চলে যায়, তাহলে পাশের রাষ্ট্রটিও এর প্রভাবে প্রভাবিত হবে এবং একসময় ওই রাষ্ট্রটিতেও সমাজতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।

WMD: Weapons of mass destruction (গণবিধ্বংসী অস্ত্র) দ্বারা এমন যে কোনো অস্ত্রকে বোঝায় যা অনেক মানুষকে একসাথে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে, যা মনুষ্য নির্মিত (দালান) বা প্রাকৃতিক (পাহাড়) কাঠামোর বিপুল ক্ষতি সাধন করে বা সাধারণভাবে জৈব মন্ডলের বিশাল ক্ষতির কারণ হয়। এটা বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। যেমন: পারমাণবিক, রেডিওলজিক্যাল, রাসায়নিক, জৈবিক বা অন্যান্য। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ সন্ত্রাসবাদ এবং অন্যান্য হুমকি থেকে আমেরিকানদের রক্ষা করার জন্য এই অস্ত্রগুলো ব্যবহার থেকে বিরত রাখতে প্রতিদিন কাজ করে।

নবীনতর পূর্বতন