পানিবাহিত রোগ | Water borne diseases

দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে অথবা সেই পানি রান্নাসহ ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করার ফলে যে ধরনের রোগ সংক্রমিত হয় তাকেই পানিবাহিত রোগ বা জলবাহিত রোগ বলা হয় । দূষিত পানিতে জীবাণু, ভাইরাস, পরজীবী এবং রাসায়নিক পদার্থ থাকতে পারে যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। পানিবাহিত রোগ বিশ্বব্যাপী একটি বড় সমস্যা, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে। অতি পরিচিত পাঁচটি পানিবাহিত রোগ হল ডায়রিয়া, আমাশয়, কলেরা, জন্ডিস ও টাইফয়েড। বন্যার পর ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায় । যে সব অনুজীব রোগ সৃষ্টি করে তাদেরকে প্যাথজেনিক বলে ।

ডায়রিয়ার প্রতিকার

ডায়রিয়া চিকিৎসার মূল নীতি:

  1. পানি স্বল্পতা প্রতিরোধ করা ;
  2. পানি স্বল্পতার সৃষ্টি হলে তা পূরণ করা ;
  3. ডায়রিয়া চলাকালে ও পরবর্তীকালে শরীরের উপযুক্ত পুষ্টির ব্যবস্থা করা ;

পানি স্বল্পতা প্রতিরোধ করার জন্য :

  • ক. রোগীকে অতিরিক্ত পানীয় (যেমন- ভাতের মাড়, লবণ গুড়ের শরবত, মুখে খাওয়ার স্যালাইন ইত্যাদি) পান করাতে হবে;
  • খ. রোগীকে যথেষ্ট খাবার দিতে হবে;

পানি স্বল্পতা সৃষ্টি হলে :

  • ক. শরীর থেকে যে পানি ও লবণ বের হয়ে গিয়েছে তা পূরণ করতে হবে। পানি স্বল্পতার মাত্রানুসারে মুখে খাবার স্যালাইন কিংবা শিরায় স্যালাইন দিয়ে পানি স্বল্পতা পূরণ করা যায়।
  • খ. ডায়রিয়া চলতে থাকলে মুখে খাওয়ার স্যালাইন খাইয়ে পানি স্বল্পতা রোধ করতে হবে।

ডায়রিয়া রোগীকে স্যালাইন খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় কেন:

ডায়রিয়ার মূল সমস্যা হল দেহ হতে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়। এতে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। এ জন্য ডায়রিয়া রোগীকে ওর-স্যালাইন (ORS) খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ওর স্যালাইনের (ORS) উপাদান:
১.৩০ মিঃ গ্রাম - সোডিয়াম ক্লোরাইড
০.৭৫ মিঃ গ্রাম - পটাশিয়াম ক্লোরাইড
১.৪৫ মিঃ গ্রাম - ট্রাই সোডিয়াম সাইট্রেট
৬.৭৫ গ্রাম - গ্লুকোজ

ডায়রিয়ায় ডাবের পানি উত্তম কেন:

ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর ঘনঘন পাতলা পায়খানা ও বমির ফলে শরীরের প্রয়োজনীয় পানি ও অত্যাবশ্যকীয় খনিজ লবণের অভাব দেখা দেয়। ডাবের পানিতে পটশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং কিছুটা গ্লকোজও থাকে। এসব রাসায়নিক পদার্থের সাথে কিছুটা সোডিয়ামও বিদ্যমান। অন্য কোনো পানীয়তে এত সব নেই। এজন্য ডায়রিয়া হলে ডাবের পানি অত্যন্ত উপকারী।

নরমান স্যালাইন: সোডিয়াম ক্লোরোইডের ০.৯% জলীয় দ্রবণ।

খাবার স্যালাইন: icddr'b (International Centre for Diarrhoreal Disease Research, Bangladesh) ১৯৬০ সালে ওরস্যালাইন বা খাবার স্যালাইন আবিষ্কার করেন ।

খাবার স্যালাইন বানানোর পর কতক্ষণ পর্যন্ত খাওয়ানো যাবে : ওআরএস প্যাকেট দিয়ে তৈরি স্যালাইন ১২ ঘন্টা পর্যন্ত ভালো থাকে। যদি ১২ ঘন্টা পর স্যালাইন অবশিষ্ট থাকে তবে তা ফেলে দিতে হবে এবং পুনরায় নতুন স্যালাইন তৈরি করতে হবে।

আমাশয়ের কারণ এবং প্রতিকার

অ্যান্টি অ্যামিবা হিস্টোলাইটিকা নামক এক প্রকার প্রোটোজোয়া এবং সিগেলা নামক এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে এ রোগ হয়। আমাশয় দুই ধরনের- অ্যামেবিক আমাশয় ও ব্যাসিলারি আমাশয়। মবিকুইন এন্টারোভায়োফর্ম ও Metronidazole অ্যামেবিক আমাশয়ের জন্য এবং মালফাগুয়ানিডিন, স্ট্রেপটোমাইসিন প্রভৃতি ব্যাসিলারি আমাশয়ের প্রতিকারের জন্য ব্যবহৃত হয়।

আমাশয়ের উপসর্গ এবং প্রতিকার: Antamoeba histolytica নামক এক প্রকার প্রোটোজোয়া এবং Shigella নামক এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে এ রোগ হয়। তাই আমাশয় দু'ধরনের অ্যামেবিক আমাশয় ও ব্যাসিলারী আমাশয়। নাভির চারপাশে ব্যথা, ঘন ঘন মলত্যাগ, মলের সাথে পুঁজ, শ্লেষ্মা ও রক্তক্ষরণ এ রোগের লক্ষণ। অ্যামেবিক আমাশয়ের লক্ষণ হলো দুর্গন্ধযুক্ত তরল মল, বাদামী রঙের স্বল্প শ্লেষ্মাযুক্ত মল।

কলেরা রোগের কারণ ও প্রতিকার

সাধারণত দূষিত খাবার গ্রহণের সময় মানুষ কলেরার জীবাণু গ্রহণ করে। মাছি এ রোগ বেশি ছড়ায়। টেট্রা সাইক্লিন এবং ওরাল ফ্লুইড গ্রহণ করলে এ রোগ প্রতিকার করা যায়। এ রোগ প্রতিরোধ করতে হলে কলেরা প্রতিরোধক টিকা নেয়া প্রয়োজন। আক্রান্ত রোগীকে আলাদা করে রাখতে হবে। রোগীর মলমূত্র মাটিতে পুতে রাখতে হবে ও পানি ফুটিয়ে খেতে হবে।

  • কলেরা স্যালাইন কে আবিষ্কার করে : ICDDR,B
  • ICDDR,B এর পূর্ণরূপ : International Center for Diarrhoeal Disease Research, Bangladesh
  • ICDDR,B কোথায় অবস্থিত : মহাখালী, ঢাকা।
  • টাইফয়েড : বেসিলাস টাইফাস নামক জীবাণু দ্বারা এ রোগের উৎপত্তি। এ ধরনের জীবাণু পানি, খাদ্য বা দুধের সাথে শরীরে প্রবেশ করে এবং রক্তে বিষ ছড়ায়। টাইফয়েড প্রতিরোধক টিকা নিলে ও পানি ফুটিয়ে খেলে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
নবীনতর পূর্বতন