মহাকাশ অভিযান | Space Expedition

সোভিয়েত ইউনিয়ন তথা বর্তমান রাশিয়া সর্বপ্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে এবং সর্বপ্রথম পুরুষ ও নারীকে মহাকাশে পাঠায়। ফলে রাষ্ট্রটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীতে মহাকাশ অভিযান প্রতিযোগিতায় এগিয়ে ছিল। সেই প্রতিযোগিতায় বাঁধ সাধে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিদ্বন্দ্বী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র । তারা ১৯৬০-এর দশকে মহাকাশ অভিযানে অংশ নেয় । ১৯৬৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাঁদে প্রথম মানুষ পাঠিয়ে এই প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়। একই সময়ে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জাপান ও চীন সীমিত উৎক্ষেপণ ক্ষমতা অর্জন করছিল।

 মহাকাশ অভিযান

মহাশূন্য যাত্রার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা

  • স্পুটনিক- I ( Sputnik-I ) : মহাশূন্যযাত্রার প্রথম পদক্ষেপটির সূচনা হয়েছে ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর। এই যাত্রার সূচনা করে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাশূন্যে স্পুটনিক-১ নামক কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে। এটি মহাশূন্যে পাঠানো প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ। স্পুটনিক শব্দের অর্থ Fellow Travellers (ভ্রমণসঙ্গী)।
  • স্পুটনিক-II ( Sputnik-II ) : জীবন্ত প্রাণী বহনকারী প্রথম মহাশূন্যযান। সোভিয়েত ইউনিয়ন নির্মিত এ মহাশূন্যযানের যাত্রী ছিল লাইকা (Laika) নামের একটি কুকুর।
  • স্কোর [Score] : মহাশূন্যে পাঠানো প্রথম যোগাযোগ উপগ্রহ।
  • লুনা-২ [Luna-2] : চন্দ্রপৃষ্ঠকে স্পর্শকারী প্রথম মহাশূন্যযান।
  • লুনা-৩ [Luna-3] : প্রথম উপগ্রহ যা চাঁদের অদৃশ্যমান অংশের ছবি পাঠায়।
  • ভস্টক-১ [Vostoc-1] : মানুষ নিয়ে যাওয়া প্রথম মহাশূন্য যাত্রা। পৃথিবীর প্রথম মহাশূন্যচারী মানুষ হলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের ইউরি গ্যাগারিন (Yuri Gagarin)। ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল তিনি পৃথিবীকে পরিক্রমণ করেন।
  • স্টক-৬ [Stock-6] : প্রথম মহিলা মহাশূন্যচারীবাহী মহাশূন্যযান। এই মহিলা ছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেলানটিনা তেরেসকোভা (valentina tereshkova) । ১৯৬৩ সালের ৪ ডিসেম্বর তিনি মহাশূন্য যাত্রা করেন।
  • ইনটেলসেট-১ (Intelset-1 ) : বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য পাঠানো প্রথম যোগাযোগ উপগ্রহ। পরবর্তীতে উপগ্রহটির নামকরণ করা হয় Early Bird.
  • ভেনেরা-৩ [Venera-3 ] : শুক্র গ্রহে অবতরণকারী প্রথম মহাশূন্যযান। ১৯৬৫ সালের ১৬ নভেম্বর এটি শুক্রগ্রহে অবতরণ করে।
  • লুনা-৯ [Luna-9] : প্রথম সফলভাবে চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণকারী (Soft landing) মহাশূন্য অনুসন্ধানী যান।
  • সয়োজ-৪ [ Soyage-4] : প্রথম পরীক্ষামূলক স্পেস স্টেশন।
  • অ্যাপোলো-১১ ( Apollo-11 ) : এই চন্দ্রযানের মাধ্যমে মহাশূন্যচারী নীল আর্মস্ট্রং (Neil Armstrong) ১৯৬৯ সালের ২০ জুন প্রথম মানুষ হিসাবে চন্দ্রপৃষ্ঠে প্রথম পা রাখেন। তার ৮ মিনিট পর এডুইন অলড্রিন তাঁকে অনুসরণ করেন।
  • মারস-২ [ Mars-2 ] : মঙ্গলগ্রহে অবতরণকারী প্রথম মহাশূন্য অনুসন্ধানী যান। (Space Probe)
  • পায়োনিয়ার [ Pioneer ] : প্রথম মহাশূন্য অনুসন্ধানীযান যা বহস্পতি গ্রহে খুব নিকট হতে ছবি তুলতে সক্ষম হয়।
  • ল্যান্ডসেট-১ : রিমোট সেনসিং বা দূর অনুধাবনের জন্য পাঠানো প্রথম উপগ্রহ।
  • অ্যাপোলো-সায়োজ টেস্ট প্রজেক্ট ( Apollo Soyuz test Project ) : আন্তর্জাতিক যোগসূত্র স্থাপনের জন্য মহাশূন্যে পাঠানো প্রথম উপগ্রহ।
  • ভয়েজার ( Vovager ) : বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন এবং পুটোর কক্ষপথে প্রেরিত যুক্তরাষ্ট্রের একটি মহাশূন্যযান।
  • ভাইকিং [Viking] : মঙ্গলগ্রহের উদ্দেশ্যে পাঠানো মার্কিন মহাশূন্য অনুসন্ধানী যান।
  • গ্যালিলিও [ Galileo] : পৃথিবী থেকে পাঠানো বৃহস্পতির একটি কৃত্রিম উপগ্রহ ।
  • পাথ ফাইন্ডার [Pathfinder] : 'পাথ ফাইন্ডার' হল মঙ্গলগ্রহের উদ্দেশ্যে প্রেরিত একটি মার্কিন নভোযান। 'পাথ ফাইভারের সাথে পাঠানো রোবটের নাম 'সোজানার'। রোবটটিকে পাঠানো হয়েছিল মঙ্গলগ্রহের শিলারাশি পরীক্ষা ও চিত্র প্রেরণের জন্য।
  • চন্দ্রযান-১ [ Chandrayaan-1 ] : প্রথম ভারতীয় চন্দ্রযান হিসাবে ২০০৮ সালের ১৪ নভেম্বর সফলভাবে চাঁদে অবতরণ করে।

দেশভিত্তিক প্রথম সফল মহাশূন্যযান উৎক্ষেপণ

দেশ উপগ্রহ সময়কাল
রাশিয়া স্পুটনিক-১ [Sputunik-1] ৪ অক্টোবর, ১৯৫৭
যুক্তরাষ্ট্র এক্সপ্লোরার-১ [Explorer-1] ১৯৫৮
ফ্রান্স এস্টেরিক্স [Asterix] ১৯৬৫
জাপান ওসুমি [Osumi] ১৯৭০
চীন ডং ফং হং-১ [ Dong Fong Hong-1] ১৯৭০
যুক্তরাজ্য প্রোসপেরো এক্স-৩ [Prospero X-3] ১৯৭১
ভারত রোহিনি-১ [Rohini-1] ১৯৮০
ইউক্রেন সিক-১ [Sich-1] ১৯৯৫
ইরান উমিদ (Omid) [ইংরেজি নাম Hope ] ২ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯

দেশভিত্তিক প্রথম সফল মনুষ্যবাহী মহাশূন্যযান উৎক্ষেপণ

  • রাশিয়া ১২ এপ্রিল, ১৯৬১ সালে মহাশূন্যয্যন ভস্টক-১ এ করে প্রথম সফল মনুষ্যবাহী মহাশূন্যযান উৎক্ষেপণ করেন । এতে প্রথম যাত্রী হিসেবে ছিলেন ইউরি গ্যাগারিন । রাশিয়ার মহাশূন্যচারীদের বলা হয় Cosmonaut ।
  • যুক্তরাষ্ট্র ৫মে , ১৯৬১ সালে মহাশূন্যয্যন মার্কারি-রেডস্টোন-৩ এ করে প্রথম সফল মনুষ্যবাহী মহাশূন্যযান উৎক্ষেপণ করেন । এতে প্রথম যাত্রী হিসেবে ছিলেন অ্যালান শেফার্ড । যুক্তরাষ্ট্রের মহাশূন্যচারীদের বলা হয় Astronaut ।
  • চীন ১৫ অক্টোবর, ২০০৩ সালে মহাশূন্যয্যন শেনঝিউ-৫ এ করে প্রথম সফল মনুষ্যবাহী মহাশূন্যযান উৎক্ষেপণ করেন । এতে প্রথম যাত্রী হিসেবে ছিলেন ইয়াং লিওই । চীনের মহাশূন্যচারীদের বলা হয় Taikonaut ।

হাবল টেলিস্কোপ [Hubble Space Telescope ]

মহাশূন্য বিভিন্ন চিত্রগ্রহণ গ্রহণের জন্য ১৯৯০ সালের ২৪ এপ্রিল হাবল টেলিস্কোপ পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপিত হয়। এই টেলিস্কোপটি নাসা [NASA] এবং ইসা [ESA] এর যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হয়।

ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ [Event Horizon Telescope ] :

পৃথিবী থেকে 55 মিলিয়ন আলোক বর্ষ দূরে অবস্থিত গ্যালাক্সি M87 এর কেন্দ্রের ব্ল‍্যাক হোলের ছবি Event Horizon Telescope এর মাধ্যমে উঠানো হয়।

আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র [International Space Station]

পৃথিবীর নিম্নকক্ষে স্থাপিত একটি কৃত্রিম উপগ্রহ। এ যাবৎকালের সর্ববৃহৎ মহাকাশ স্টেশন। এটি আকার এত বড় যে, এটি পৃথিবী থেকে খালি চোখে দৃশ্যমান হতে পারে।

আকার : ৫১ মিটার × ১০৯ মিটার × ২০মিটার
ওজন : ৩৬৯,৯১৪ কেজি
নির্মাণকাল ১৯৯৮-২০১১ খ্রিস্টাব্দ
নির্মাতা :
  • National Aeronautics and Space Administration (NASA)
  • European Space Agency (ESA)
  • Russian Federal Space Agency (RKA)
  • Japan Aerospace Exploration Agency (JAXA)
  • Canadian Space Agency (CSA).
স্কাইল্যাব : মার্কিন মহাকাশ স্টেশন।
মির : রুশ মহাকাশ স্টেশন।
স্পেস শাটল : স্পেস শাটল বহুবার মহাশূন্যচারীদের নিয়ে মহাকাশে যায় এবং ফিরে আসে। এর প্রধান সুবিধা হল এটি বার বার ব্যবহার করা যায়।
মার্কিন স্পেস শাটল: 'আটলান্টিস', 'এন্ডেভার', 'ডিসকভারি'"।
রুশ স্পেস শাটল: 'সয়ূজ'।
কলম্বিয়া : নাসার একটি বিধ্বস্ত স্পেস শাটল।
V-SAT :
  • 'VSAT' এর পূর্ণরূপ Very Small Aparture Terminal
  • ভূ-পৃষ্ঠ তে স্যাটেলাইটে যোগাযোগ করার জন্য VSAT ব্যবহার করা হয়।
দূর অনুধাবন ( Remote sensing ) উপগ্রহের সাহায্যে দূর থেকে ভূমণ্ডলের অবলোকন।
মহাশূন্যে পর্যটক :
  • মহাকাশে প্রথম পর্যটক মার্কিন ধনকুবের ডেনিস টিটো [Dennis Tito]
  • মহাকাশে প্রথম নারী পর্যটক ইরানি বংশোদ্ভূত মার্কিনি আনুশেহ আনসারি [Anousheh Ansaril ]

প্রথম ও বৃহত্তম মহাকাশ উৎক্ষেপণ কেন্দ্র: বাইকনুর কসমোড্রেম বিশ্বের প্রথম ও বৃহত্তম মহাকাশ উৎক্ষেপণ কেন্দ্র। এটি কাজাখস্তানের মরুভূমিতে অবস্থিত। কাজাখ সরকারের কাছ থেকে রাশিয়ানরা ২০৫০ সাল পর্যন্ত এটি ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৫০ সালে এটি নির্মাণ করে।

নবীনতর পূর্বতন