সালোকসংশ্লেষণ | Photosynthesis

সবুজ উদ্ভিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো যে এরা সূর্যালোকের উপস্থিতিতে কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং পানি থেকে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাজাতীয় খাদ্য তৈরি করে। সবুজ উদ্ভিদে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য তৈরি হওয়ার এ প্রক্রিয়াকে সালোকসংশ্লেষণ (Photosynthesis) বলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় আলোকশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। সবুজ উদ্ভিদে প্রস্তুত খাদ্য উদ্ভিদ নিজে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় বিপাকীয় প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে ব্যবহার করে এবং অবশিষ্ট খাদ্য ফল, মূল, কাণ্ড অথবা পাতায় সঞ্চিত রাখে। উদ্ভিদে সঞ্চিত এই খাদ্যের উপরেই মানবজাতি ও অন্যান্য জীবজন্তুর অস্তিত্ব নির্ভর করে। সবুজ উদ্ভিদ মোট সূর্যালোকের মাত্র ১% সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে সংবন্ধিত হয়।

সালোকসংশ্লেষণ

সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো হলো: ক্লোরোফিল, আলো, পানি এবং কার্বন ডাই- অক্সাইড। সালোকসংশ্লেষণ একটি জৈব রাসায়নিক (biochemical) বিক্রিয়া, যেটি এরকম:

6CO2 + 12H2O আলোক্লোরোফিল C6H12O6 + 6H2O + H2O

পাতার মেসোফিল টিস্যু সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার প্রধান স্থান। স্থলজ সবুজ উদ্ভিদ মাটি থেকে মূলের মাধ্যমে পানি শোষণ করে পাতার মেসোফিল টিস্যুর ক্লোরোপ্লাস্টে পৌঁছায় এবং স্টোমা বা পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে বায়ু থেকে CO2 গ্রহণ করে, যা মেসোফিল টিস্যুর ক্লোরোপ্লাস্টে পৌঁছে। জলজ উদ্ভিদ পানিতে দ্রবীভূত CO2 গ্রহণ করে। বায়ুমণ্ডলে 0.03% এবং পানিতে 0.3% CO2, আছে, তাই জলজ উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষণের হার স্থলজ উদ্ভিদ থেকে বেশি। অক্সিজেন এবং পানি সালোকসংশ্লেষণের উপজাত দ্রব্য (by-product)। এটি একটি জারণ-বিজারণ প্রক্রিয়া (oxidation-reduction process)। এ প্রক্রিয়ায় H2O জারিত হয় এবং CO2 , বিজারিত হয়।

  • সালোক সংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ: চারটি। যেমন: আলো, পানি, ক্লোরোফিল ও কার্বন ডাই অক্সাইড। পাতায় ক্লোরোপ্লাস্টের সংখ্যা ও ক্লোরোফিলের পরিমাণের ওপর সালোক সংশ্লেষণ সরাসরি নির্ভরশীল।
  • সালোক সংশ্লেষনের ফলে শর্করা জাতীয় খাদ্য উৎপন্ন হয়। উপজাত হিসাবে পাওয়া যায় অক্সিজেন।
  • সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নির্গত অক্সিজেনের উৎস: পানি।
  • সালোক সংশ্লেষণ হয় উদ্ভিদের সবুজ অংশে বিশেষ করে পাতায়। কচি সবুজ কাণ্ডে এবং সবুজ বীজপত্রে সালোক সংশ্লেষণ হয়।
  • সালোকসংশ্লেষণ বেশি হয়- (২২-৩৫)°C তাপমাত্রায়।
  • সালোকসংশ্লেষণ হয় না/ বন্ধ হয়ে যায়- অতি নিম্ন তাপমাত্রায় (0°এর কাছাকাছি) এবং অতি উচ্চ তাপমাত্রায় (৪৫°এর উপরে)।
  • ১৯০৫ সালে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে দুটি পর্যায়ে ভাগ করেন ইংরেজ শরীরতত্ত্ববিদ ব্র্যাকম্যান (Blackman)।
  • সালোকসংশ্লেষণের পর্যায় দুটি - ক) আলোক পর্যায় খ) অন্ধকার পর্যায়
  • সালোকসংশ্লেষণের অভ্যন্তরীণ প্রভাবকগুলো হলো ক্লোরোফিল, পাতার বয়স ও সংখ্যা, শর্করার পরিমাণ, পটাশিয়াম, এনজাইম।
  • কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ খুব বেশি বেড়ে গেলে মেসোফিল টিস্যুর কোষের অম্লত্ব বৃদ্ধি পায় ।
  • পত্ররন্ধ্র বন্ধ হয়ে যায় এবং সালোকসংশ্লেষণের হার কমে যায়।
  • যে এককোষী প্রাণীতে সালোকসংশ্লেষণ ঘটে - ক্রাইস্যামিবা (Chrysamoeba). ও ইউগ্লিনা (Euglena) তে।

ফটোফসফোরাইলেশন: আলোকশক্তি ব্যবহার করে ATP তৈরির প্রক্রিয়াকে ফটোফসফোরাইলেশন বলে।

ক্যালভিন ও ব্যাশাম চক্র: সালোকসংশ্লেষণের অন্ধকার পর্যায়ে বায়ুমণ্ডলের CO2 ব্যবহার করে শর্করা তৈরির চক্রকে ক্যালভিন ও ব্যাশাম চক্র বলে।

কোন আলোতে সালোক সংশ্লেষণ সবচেয়ে বেশী হয়: ক্লোরোফিল বিশেষ বিশেষ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো শোষণ করতে পারে। লাল আলোতে সালোক সংশ্লেষণ সবচেয়ে বেশি হয়। সালোক সংশ্লেষণের সময় আলোর বেগুনি-নীল এবং কমলা-লাল অংশ বেশি ব্যবহৃত হয়। বাকি বর্ণের আলো খুবই কম ব্যবহৃত হয়।

ঘন পাতাবিশিষ্ট বৃক্ষের নিচে রাতে ঘুমানো স্বাস্থ্যসম্মত নয় কেন: শ্বসন দিবারাত্র সবসময় হয়। প্রত্যেক জীব শ্বসনের জন্য অক্সিজেন গ্রহন করে, কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে। গাছ সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহন করে, অক্সিজেন ত্যাগ করে। সূর্যালোকের উপস্থিতিতে সালোক সংশ্লেষণ হয় বলে রাতে সালোক সংশ্লেষণ বন্ধ থাকে। এজন্য রাতে গাছ থেকে শ্বসনের ফলে উৎপন্ন কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত করে যা বায়ু অপেক্ষা ভারী বলে গাছের নীচে জমা হতে পারে। এতে গাছের নীচ নিদ্রাযাপন কারী ব্যক্তির অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দিতে পারে। এ জন্য রাতে ঘন পাতাবিশিষ্ট বৃক্ষের নীচে ঘুমানো স্বাস্থ্যসম্মত নয়।

সকল সপুষ্পক উদ্ভিদ কি স্বভোজী: সকল সপুষ্পক উদ্ভিদে ক্লোরোফিল বিদ্যমান। ফলে এরা সূর্যের আলোর সাহায্যে সালোকংশ্লেষণের মাধ্যমে নিজের খাদ্য নিজেরাই প্রস্তুত করতে পারে। তাই এরা স্বভোজী।

সালোক সংশ্লেষনের হার কমে যায় যদি-

  • ০° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার কাছাকাছি এবং ৪৫° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার উপরে।
  • পানির পরিমাণ কমে গেলে।
  • কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমান কমে গেলে।
  • বাতাসে অক্সিজেনের ঘনত্ব বেড়ে গেলে।
  • মাটিতে নাইট্রোজেন, ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রনের পরিমান কমে গেলে।
  • বাতাসে ক্লোরোফরম, হাইড্রোজেন সালফাইড, মিথেন বা কোন বিষাক্ত গ্যাসের উপস্থিতিতে।
  • কচি পাতা এবং বয়স্ক পাতায় সালোক সংশ্লেষনের হার কম হয়।
  • বিকালে সালোক সংশ্লেষনের পরিমাণ কম হয়।

রাতের বেলায় সালোক সংশ্লেষন হয় না কেন: রাতের বেলায় সূর্যালোক নেই বলে কারণ সূর্যালোকের ফোটন কণিকা ক্লোরোফিল সক্রিয় করে।

  • শর্করা উৎপাদনের প্রাকৃতিক কারখানা বলা হয়: গাছের সবুজ পাতাকে ।
  • কোন উদ্ভিদের সালোক সংশ্লেষনের হার বেশি: জলজ উদ্ভিদের সালোক সংশ্লেষনের হার বেশি কারণ, জলজ উদ্ভিদে CO2 এর পরিমান ০.৩% বেশি। বিঃদ্রঃ উদ্ভিদ যত বেশি CO2 পাবে সালোক সংশ্লেষনের হার বৃদ্ধি পাবে।
  • সালোক সংশ্লেষন বেশি হয়: মধ্য বয়সী পাতায় বেশি হয় এবং কচি পাতায় কম হয়, (কারণ কচি পাতায় ক্লোরোফিল কম থাকে)।

ক্লোরোফিল: ক্লোরোফিল হলো সবুজ বণের রঞ্জক কণিকা। যা উয়িদের সবুজ অংশে পাওয়া যায় বিশেষ করে পাতার মেসোফিল কোষে থাকে। ক্লোরোফিলের কাজ উদ্ভিদের খাদ্য তরিতে সাহায্য করে। অর্থাৎ সৌরশক্তি হইতে আলোকশক্তি শোষণ করে সর্বশেষ রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে।

  • উদ্ভিদের ক্লোরাফিলে কোন ধাতব অণু থাকে: ম্যাগনেসিয়াম থাকে।
  • সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার প্রধান স্থান পাতার মেসোফিল টিস্যু।
  • সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সৌরশক্তিকে কোন শক্তি হিসাবে গাছ সংরক্ষণ করে: রাসায়নিক শক্তি হিসাবে।
  • সালোক সংশ্লেষণ কি ধরনের প্রক্রিয়া: একটি জারণ-বিজারণ প্রক্রিয়া।
  • সালোক সংশ্লেষণের অভ্যন্তরীণ প্রভাবক হিসাবে কোন ধাতু কাজ করে: পটাশিয়াম ধাতু।
  • উদ্ভিদ কোনটির মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে: উদ্ভিদ পত্ররন্ধের মাধ্যমে বায়ু থেকে CO2 গ্রহণ করে। জলজ উদ্ভিদ পানিতে দ্রবীভূত CO2 গ্রহণ করে। (পানিতে ০.৩% CO₂আছে) জলজ উদ্ভিদে সালোক সংশ্লেষনের হার স্থলজ উদ্ভিদ থেকে বেশি।
  • ATP কে কি বলা হয়: ATP (Adelosine Triphosphate) কে জৈবমুদ্রা বা শক্তি মুদ্রা (Biological coin or energy coin) বলে ।
নবীনতর পূর্বতন