শক্তির উৎস এবং এর প্রয়োগ

শক্তির উৎস বলতে যে বস্তুর মধ্যে কাজ করার সামর্থ্য নিহিত থাকে তাকেই শক্তির উৎস বলে। আসলে শক্তি একটি ব্যাপক ধারণা, যা বিভিন্ন রকমের প্রাকৃতিক সম্পদ বা প্রযুক্তি থেকে উৎপন্ন হতে পারে। প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে শক্তির উৎস হতে পারে সূর্য, বাতাস, পানি, বৃষ্টিসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানসমূহ। প্রযুক্তির দিক থেকে শক্তির উৎস হতে পারে বিদ্যুৎ, পরমাণু শক্তি, জৈব শক্তি , রাসায়নিক শক্তি এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত উৎসসমূহ। মূলত সকল শক্তির আধাঁর সূর্য । সূর্য থেকে উদ্ভিদকূল সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরাসরি শক্তি গ্রহণ করে । আমরা উদ্ভিদকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকি । যার ফলস্বরুপ আমাদের শরীরে শক্তি সঞ্চারিত হয় । শক্তির কোন বিনাশ বা ধ্বংস নেই । শুধুমাত্র রুপান্তরের মাধ্যমে আমরা একে ব্যবহার করে থাকি মাত্র । যেমন- পানির গতিশক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রুপান্তর করে আমরা বিদ্যুৎ শক্তির ব্যবহার করে থাকি । বর্তমান আধুনিক সভ্যতা গড়ে উঠার মূল চালিকা শক্তি হলো বিদ্যুৎ শক্তি।

 শক্তির উৎস এবং এর প্রয়োগ

জীবাশ্ম জ্বালানি (Fossil Fuel)

কোটি কোটি বছর পূর্বে গাছপালা, জীবজন্তু ইত্যাদি বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাধ্যমে ভূ-গর্ভে মাটিচাপা পড়ে গেলে ভূ-অভ্যন্তরে তা প্রচন্ড চাপ, তাপমাত্রায় বিধ্বংসী পাতন ঘটে এবং কয়লা, খনিজ তেল (পেট্রোলিয়াম) ও প্রাকৃতিক গ্যাস আকারে ভূ-অভ্যন্তরে জমা হয়। এগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানি বলে ৷

জীবাশ্মবিদ্যা (Paleontology): যে বিজ্ঞান জীবাশ্ম সম্বন্ধে আলোচনা করে, তাকে জীবাশ্মবিদ্যা বা Paleontology বলে।

কয়লা

কয়লার বিধ্বংসী পাতনে যে পদার্থ পাওয়া যায়: কোল গ্যাস, আলকাতরা, অ্যামোনিয়াক্যাল লিকার ও কোক ।

কোল গ্যাসে যা থাকে: হাইড্রোজেন-৪৭%, মিথেন ৩৬%, কার্বন মনোক্সাইড ৮%, কার্বন ডাই অক্সাইড ২%, নাইট্রোজেন ৩% এবং অন্যান্য অ্যারোমেটিক যৌগ যেমন-বেনজিন, এমোনিয়া, টলুইন ৪%।

রাস্তা বা ছাদে আস্তরণ হিসাবে ব্যবহৃত পিচ উৎপন্ন হয়: আলকাতরা বা কোলটার হতে।

কয়লার প্রকারভেদ:
তাপ উৎপাদন ক্ষমতা ও কার্বনের পরিমানের উপর ভিত্তি করে কয়লা তিন প্রকারঃ
[ক] অ্যান্থ্রাসাইট
[খ] বিটুমিনাস
[গ] পীট কয়লা/ লিগনাইট

অ্যানথ্রাসাইট কয়লা পোড়ালে সবচেয়ে বেশি তাপ উৎপন্ন হয়।
পীট কয়লা পোড়ালে সবচেয়ে কম তাপ পাওয়া যায় ।
পীট কয়লার বৈশিষ্ট্য: ভিজা ও নরম ।
বাষ্পীয় ইঞ্জিনের জ্বালানি: কয়লা ।
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান জ্বালানি: কয়লা।

কয়লায় কার্বনের পরিমাণ: কয়লার মূল উপাদান কার্বন। বিভিন্ন রকম কয়লায় কাৰ্বন আছে -
১. অ্যানথ্রাসাইট - ৯৫% কার্বন।
২. বিটুমিনাস - ৫০- ৮০% কার্বন।
৩. লিগনাইট - ৫০% কার্বন।

কয়লা প্রক্রিয়াকরণ:
১. ভূ-গর্ভের কয়লার খনি থেকে মেশিনের সাহায্যে কয়লা উত্তোলন করা হয়।
২. কয়লা উত্তোলনের জন্য দুটি পদ্ধতি আছে।
৩. একটি হলো ওপেন পিট মাইনিং (Open pit mining)। আর অন্যটি হলো ভূগর্ভস্থ মাইনিং (Underground mining) ।
৪. সাধারণত কয়লার স্তর ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি থাকে বলে ওপেন পিট মাইনিং পদ্ধতি বেশি ব্যবহৃত হয়।
৫. মেশিন দিয়ে ভূগর্ভস্থ থেকে কয়লা তোলার পর কনভেয়ার বেল্ট দিয়ে সেগুলো প্রক্রিয়াকরণ প্লান্টে নেওয়া হয়।
৬. সেখানে কয়লায় থাকা অন্যান্য পদার্থ যেমন- ময়লা, শিলা কণা, ছাই, সালফার, এগুলোকে পৃথক করে ফেলা হয়।

পেট্রোলিয়াম

পেট্রোলিয়াম (Petroleum): পেট্রোলিয়াম মূলত হাইড্রোজেন ও কার্বন দিয়ে গঠিত হাইড্রোকার্বন যৌগের সমষ্টি। পেট্রোলিয়াম শব্দটি ল্যাটিন শব্দ পেট্রা অর্থাৎ পাথর এবং ওলিয়াম অর্থাৎ তেল থেকে এসেছে । পেট্রোলিয়াম বলতে অনেক সময় সাধারণত তরল তেলকে (Crude Oil) বোঝানো হয়ে থাকলেও বস্তুত এ শব্দটি দ্বারা শিলাস্তরে অবস্থিত গ্যাসীয় হাইড্রোকার্বন, যা প্রাকৃতিক গ্যাস (Natural gas) নামে পরিচিত এবং কঠিন হাইড্রোকার্বন, যা অ্যাসফাল্ট নামে পরিচিত, তাও বোঝানো হয়। প্রকৃতপক্ষে প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল এবং অ্যাসফ্যান্ট হাইড্রোকার্বন যৌগসমূহের যথাক্রমে বায়বীয়, তরল এবং কঠিন রূপ এবং সে হিসেবে এদের উৎপত্তিগত এবং অবস্থানগত বৈশিষ্ট্যে যথেষ্ট সামঞ্জস্য রয়েছে।

অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম: ভূপৃষ্ঠের নিচে C 1 থেকে C 40 কার্বন পরমাণুগঠিত হাইড্রোকার্বনের যে মিশ্রণ পাওয়া যায়, তাকে অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম বলে ।

পেট্রোলিয়ামের উৎপত্তি : পেট্রোলিয়াম ভূগর্ভে উচ্চতাপ এবং চাপের প্রভাবে শিলাস্তরের ভেতর অবস্থিত জৈবিক পদার্থের ভৌত এবং রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়ে থাকে। কোনো কোনো শিলাস্তর যেমন কাদাশিলা (Shale) ও চুনাপাথর (Limestone) উৎপত্তিকালে কখনো বা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জৈবিক পদার্থ জমা হতে পারে এবং তা যখন ভূ-অভ্যন্তরে স্থানান্তরিত হয়ে পর্যাপ্ত তাপের প্রভাবে পড়ে তখন এ জৈবিক পদার্থ থেকে পেট্রোলিয়াম সৃষ্টি হয়ে থাকে। এ ধরনের কাদাশিলা বা চুনাপাথরকে পেট্রোলিয়ামের উৎস শিলা (Source Rock) বলে। উৎস শিলার জৈবিক পদার্থ স্থলজাত উদ্ভিদ শ্রেণীর অথবা সমুদ্রজাত উদ্ভিদ বা প্রাণী উভয় শ্রেণীরই হতে পারে। সমুদ্রজাত উদ্ভিদ এবং প্রাণী জাতীয় জৈবিক পদার্থের খনিজ তেল সৃষ্টি করার ক্ষমতা অনেক বেশি। তবে সমুদ্র ও স্থলজাত জৈবিক পদার্থ উভয়ই সমানভাবে গ্যাস উৎপাদন করতে পারে। তাই কোনো এলাকার তেলের আধিক্য বা গ্যাসের আধিক্য থাকা ঐ এলাকায় পেট্রোলিয়াম উৎসশিলায় জৈবিক পদার্থের ধরনের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে।

পেট্রোলিয়াম কিভাবে উৎপন্ন হয়: পৃথিবীর অভ্যন্তরে প্রচণ্ড চাপের প্রভাবে প্রাণী ও উদ্ভিদের জৈব বিধ্বংসী পাতন প্রক্রিয়ায় ।

অশোধিত তেল রিফাইনিং করে যা পাওয়া যায়: খনি থেকে প্রথমে উত্তোলিত পেট্রোলিয়াম পদার্থকে অশোধিত তেল (Crude Oil) বলে। এর মধ্যে বিভিন্ন উপাদান থাকে। তবে এদের মধ্যে প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে কার্বন ও হাইড্রোজেন সমন্বয়ে গঠিত বিভিন্ন হাইড্রোকার্বন। কার্বনের সংখ্যা অনুসারে এসব জ্বালানির বিভিন্ন নাম করা হয়। এক হতে চার কার্বন বিশিষ্ট রিফাইনারী গ্যাস, পাঁচ হতে সতের কার্বন বিশিষ্ট তরল জ্বালানি যেমন পেট্রোল, কেরোসিন, ডিজেল তেল, লুব্রিকেটিং বা পিচ্ছিলকারক তেল এবং আঠার ও তার ঊর্ধ্বে কঠিন পদার্থ; যেমন -বিটুমিন, মোম ইত্যাদি।

অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম হতে যে পদার্থ পাওয়া যায়: এল.পি গ্যাস, লাইট পেট্রোলিয়াম, লাইট ন্যাপথা, পেট্রোল, কেরোসিন, ডিজেল, লুব্রিকেটিং তেল, প্যারাফিন ওয়াক্স এবং বিটুমিন।

পেট্রোলিয়ামের উপাদানগুলো পৃথক করা হয়: আংশিক পাতন যন্ত্রের সাহায্যে।

অপরিশোধিত পেট্রোলিয়ামের আংশিক পাতনের সময় টাওয়ারের নিচে জমা থাকে: বিটুমিন ।

গ্যাসোলিন: পেট্রোলিয়ামের আংশিক পাতন এর সময় ২১ ডিগ্রি থেকে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার অঞ্চল থেকে পৃথকীকৃত অংশকে গ্যাসোলিন বলে। এটি উদ্বায়ী জ্বালানী (Volatile fuel)।

পেট্রোলের অপর নাম: গ্যাসোলিন ।

পেট্রোল: পেন্টেন ( C 5 H 12 ) থেকে ডোডেকেন ( C 12 H 26 ) পর্যন্ত যৌগসমূহ ।

পেট্রোলের আগুন পানি দ্বারা নেভানো যায় না, কারণ, পেট্রোল পানির চেয়ে হাল্কা ।

ডিজেল তেল (Disel): ট্রাইডেকেন ( C 13 H 28 ) থেকে অক্টাডেকেন ( C 18 H 38 ) পর্যন্ত যৌগসমূহ । অশোধিত তেলের আংশিক পাতন থেকে প্রাপ্ত কেরোসিন তেল এর চেয়ে অধিক স্ফুটনাংক (২৫০ থেকে ৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বিশিষ্ট হাইড্রোকার্বন মিশ্রণকে ডিজেল তেল বলে। এর প্রধান উপাদান C 13 -C 17 কার্বনযুক্ত হাইড্রোকার্বন। আপেক্ষিক গুরুত্ব (Specific Gravity) ০.৮৫।

ডিজেলের অপর নাম: গ্যাস অয়েল।

কেরোসিন Kerosene oil): ডোডেকেন ( C 12 H 26 ) থেকে পেন্টাডেকেন ( C 18 H 38 ) পর্যন্ত যৌগসমূহ। অশোধিত তেল এর আংশিক পাতন থেকে বিভিন্ন অংশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপাদান হচ্ছে কেরোসিন তেল । অশোধিত তেল এর প্রায় শতকরা ১৩ ভাগ কেরোসিন । কেরোসিন ভগ্নাংশ ১৬০ থেকে ২৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পরিণত হয়।

মোম: উচ্চতর অ্যালকেন ও স্টিয়ারিক এসিডের মিশ্রণ ।

জেড জ্বালানি/ জেড ফুয়েল: পাথরের সাহায্যে অশোধিত পেট্রোলিয়াম থেকে এক প্রকার শোধিত মিশ্র জ্বালানীকে জেড জ্বালানি বলে ৷

ডিজেল ( C 5 - C 18 ) ডিজেলকে পোড়ালে সালফার ডাই অক্সাইড তৈরি হয়।
পেট্রোল ( C 5 - C 12 ) জ্বালানি রূপে পোড়ালে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস তৈরি হয়।
অকটেন ( C 8 ) জ্বালানি রূপে পোড়ালে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস তৈরি হয়।
সিএনজি ( C 3 ) জ্বালানি রূপে পোড়ালে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস তৈরি হয়।

তেলক্ষেত্রে উত্তোলনযোগ্যতা বা রিকভারি ফ্যাক্টর (Recovery Factor): কোনো তেলক্ষেত্রে যে পরিমাণ তেল মজুদ থাকে তার সবটাই উৎপাদান করা যায় না। উত্তোলনযোগ্যতা বলতে মজুদের যে পরিমাণ অংশ উত্তোলন করা যাবে, তাকে বোঝায় । এটা নির্ভর করে মজুদ শিলার (Reservoir rock) পারমিয়াবিলিটি (Permeability) অর্থাৎ তার ভেতর তেল চলাচলের সহজলভ্যতা, তেলের ঘনত্ব, যে প্রাকৃতিক চাপের সাহায্যে তেল উৎপাদিত হবে তার ধরন, তেলক্ষেত্রে কুপের বিন্যাস ইত্যাদি নানা বিষয়ের ওপর। এক হিসাবে দেখা যায়, উত্তোলনযোগ্যতার মান ২০% থেকে ৬৫% এর ওপরে হতে পারে। সাধারণত বেলে পাথরে (Sandstone) মজুদ শিলার তেলের উত্তোলনযোগ্যতা চুনাপাথরের (Limestone) মজুদ শিলার চেয়ে বেশি হয়ে থাকে । আমাদের দেশে হরিপুরে তেলের উত্তোলনযোগ্যতা আনুমানিক ৬০%।

প্রাকৃতিক গ্যাস

প্রাকৃতিক গ্যাস (Natural gas): ভূ-পৃষ্ঠের নিচে মিথেন ( CH 4 ) থেকে বিউটেন ( C 4 H 10 ) পর্যন্ত অ্যালকেনের যে মিশ্রণ পাওয়া যায়,তাকে প্রাকৃতিক গ্যাস বলা হয়।

প্রাকৃতিক গ্যাসের উপাদান: মিথেন (৮০-৯০%), ইথেন (প্রায় ১৩%), প্রোপেন (প্রায় ৩%), বিউটেন, ইথিলিন, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন সালফাইড ( H 2 S ) এবং নিম্ন স্ফুটনাঙ্ক বিশিষ্ট হাইড্রোকার্বন বাষ্প ।
প্রাকৃতিক গ্যাসে মিথেনের সাথে অল্প পরিমাণ অপেক্ষাকৃত ভারী হাইড্রোকার্বন গ্যাস ও যৌগ ( CO 2 , N 2 I , H 2 S ) থাকে, যা প্রাকৃতিক গ্যাসের মানের অবনতি ঘটায়। এ গ্যাসে হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসের পরিমাণ বেশি হলে টক গ্যাস, আর কম হলে মিষ্টি গ্যাস বলে ।

আমাদের দেশে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক গ্যাসে মিথেনের পরিমাণ: ৯৫-৯৯%। এ গ্যাস অধিক বিশুদ্ধ হওয়ার কারণে সালফার প্রায় অনুপস্থিত।

প্রাকৃতিক গ্যাস সৃষ্টির মূল কারণ: পৃথিবীর অভ্যন্তরের প্রচণ্ড তাপ ও চাপ ।

সিলিন্ডারে করে যে গ্যাস বিক্রি করা হয়, তার প্রধান উপাদান: বিউটেন ।

প্রাকৃতিক গ্যাসে যে শক্তি সঞ্চিতঃ প্রাকৃতিক গ্যাসে রাসায়নিক শক্তি সঞ্চিত থাকে। এর ব্যবহার প্রধানত জ্বালানি হিসেবে। গ্যাসের সাহায্যে তাপশক্তি উৎপাদিত হয় এবং তা থেকে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত হয় বিদ্যুৎ।

প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার:
বিভিন্ন শিল্প কারখানায় প্রধানত জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বাংলাদেশে রান্নার কাজে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।
সার কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
CNG যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

জ্বালানি হিসাবে প্রাকৃতিক গ্যাসের সুবিধাঃ
১. পরিবেশ দূষণের মাত্রা অপেক্ষাকৃত কম হয়।
২. গ্যাসে জ্বালানি খরচ কম হয়।
৩. গৃহিণীর কাছে অন্যান্য জ্বালানির ব্যবহার অপেক্ষা প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ।

আমাদের দেশে ইউরিয়া সার উৎপাদন করার কাঁচামাল: প্রাকৃতিক গ্যাস।

এলপিজি (LPG): এলপিজি-এর পূর্ণরূপ হলো ‘Liquified Petrolium Gas' । যার বাংলা অর্থ হচ্ছে 'রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস'। যা বর্তমানে বিভিন্ন গাড়িতে ব্যবহার করা হয়। প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদানগুলো হলো মিথেন, ইথেন, প্রোপেন, বিউটেন, পেন্টেন ইত্যাদি। এদের মধ্যে প্রোপেন ও বিউটেন হচ্ছে এলপিজি-এর প্রধান উপাদান ।

সিএনজি : CNG-এর পূর্ণরূপ হলো 'Compressed Natural Gas' (কমপ্রেস করা প্রাকৃতিক গ্যাস). উচ্চচাপে প্রাকৃতিক গ্যাসকে ঘনীভূত করে যানবাহনের জ্বালানি বা অন্য কোনো কাজে ব্যবহারকে সংক্ষেপে CNG বলে । CNG হচ্ছে পেট্রোল, ডিজেল অথবা প্রোপেনের বিকল্প জ্বালানি। বাংলাদেশে ২০০৩ সাল থেকে যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা শুরু হয়েছে।

সিএনজি-এর ব্যবহার:
উচ্চচাপে প্রাকৃতিক গ্যাসকে তরলে রূপান্তরিত করে যানবাহনের জ্বালানি হিসেবে (তেলের বিকল্প হিসাবে) ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের জ্বালানি থেকে অব্যবহৃত কার্বন কম নির্গত হয় বলে এটি পরিবেশবান্ধব ।
বিভিন্ন শিল্প কারখানায় প্রধানত জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সহজে স্থানান্তরযোগ্য বলে যেখানে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ করা যায় না সেখানে সিলিন্ডারে ভরে গৃহস্থালী কাজে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে রান্নার কাজে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।
সার কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
CNG যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

CNG: CNG হল কমপ্রেস করা প্রাকৃতিক গ্যাস । CNG এর পূর্ণরূপ Compressed Natural Gas.

জ্বালানির অপচয় বন্ধ করার উপায়: জ্বালানি আমাদের মূল্যবান সম্পদ। কাজেই এ সম্পদের সঠিক ব্যবহারবিধি সম্পর্কে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত। দৈনন্দিন রান্না-বান্না ও যানবাহন চালানোর সময় জ্বালানির অপচয় দেখা যায়। জ্বালানির অপচয় বন্ধ করতে নিম্নলিখিত উপায় অবলম্বন করা যায় :
ব্যক্তিকে সচেতন ও মিতব্যয়ী হতে হবে;
রান্না-বান্না শেষে চুলা বন্ধ রাখতে হবে;
গ্যাসের চুলার ওপর কাপড়-চোপড় শুকানো যাবে না;
পথের মধ্যে থামতে হলে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ রাখতে হবে;
যানবাহনের ইঞ্জিন ত্রুটিমুক্ত রাখতে হবে এবং
ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।

শক্তির অন্যতম প্রধান উৎস জ্বালানি আমাদের মূল্যবান সম্পদ। কাজেই এ সম্পদ সংরক্ষণ করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব ।

নবীনতর পূর্বতন