ভৌত রাশি ও পরিমাপ

ভৌত রাশি ও পরিমাপ সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমেই আমাদের জানতে হবে ভৌত রাশি কি বা কাকে বলে । এই ভৌতজগতে যা কিছু পরিমাপ করা যায় তাকেই রাশি বলে। রাশি দুই প্রকার যথাঃ [ক] মৌলিক রাশি [খ] লব্ধ রাশি ।

মৌলিক রাশি: যে সকল রাশি স্বাধীন বা নিরপেক্ষ যেগুলো অন্য রাশির উপর নির্ভর করেনা বরং অন্যান্য রাশি এদের উপর নির্ভর করে তাদেরকে মৌলিক রাশি বলে। মৌলিক রাশি সাতটি। যথাঃ দৈর্ঘ্য, ভর, সময়, তড়িৎ প্রবাহ, তাপমাত্রা, দীপন তীব্রতা এবং পদার্থের পরিমাণ। এই ভৌত জগতের অসীমসংখ্যক ভৌত রাশিমালার সংজ্ঞা, মাত্রা, একক ইত্যাদি মনে রাখা সম্ভব শুধুমাত্র এই ৭টি মৌলিক রাশি দিয়েই।

লব্ধ রাশি: যে সকল রাশি মৌলিক রাশির উপর নির্ভর করে বা মৌলিক রাশি থেকে লাভ করা যায়, তাদেরকে লব্ধ রাশি বলে। মৌলিক রাশি সাতটি ছাড়া বাকি সবই লব্ধ রাশি। যথাঃ বেগ, ত্বরণ, বল, কাজ ইত্যাদি।

রাশি পরিমাপের পদ্ধতি:

রাশি C.G.S M.K.S F.P.S
দৈর্ঘ্যের একক Centimeter Meter Foot
ভরের একক Gram Kilogram Pound
সময়ের একক Second Second Second

S.I বা আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতি

১৯৬০ সাল থেকে দুনিয়া জোড়া বিভিন্ন রাশির একই রকম একক চালু করার সিদ্ধান্ত হয়। এককের এই পদ্ধতিকে বলা হয় আন্তর্জাতিক পদ্ধতি (Systeme International d'Unites) বা সংক্ষেপে এস,আই (SI)।

S.I পদ্ধতিতে এককগুলোর নাম: আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে M.K.S পদ্ধতিকে আত্মীকরণ করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে সাতটি মৌলিক রাশির জন্য সাতটি মৌলিক একক ধরা হয়েছে এবং বাকী সকল একক এক বা একাধিক মৌলিক এককের গুণফল বা ভাগফল থেকে প্রতিপাদন করা হয়েছে। সাতটি মৌলিক একক হলঃ

মৌলিক রাশি একক
দৈর্ঘ্য (length) মিটার (meter)
ভর (mass) কিলোগ্রাম (kilogram)
সময় (time) সেকেন্ড (second)
তড়িৎ প্রবাহ (electric current) অ্যাম্পিয়ার (ampere)
তাপমাত্রা (temperature) কেলভিন (kelvin)
দীপন তীব্রতা (luminous intensity) ক্যান্ডেলা (candela)
পদার্থের পরিমাণ (amount of substance) মোল (mole)

পরিমাপের একক (Units of measurements)

সুনির্দিষ্ট ধারণা বাস্তব ধারণা
১ মিটার (m): শূন্য মাধ্যমে আলো ২৯৯,৭৯২,৪৫৮ সেকেন্ডে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে ১ মিটার বলে । এক মিটার: স্বাভাবিক উচ্চতার একজন মানুষের মাটি থেকে পেট পর্যন্ত দূরত্ব মোটামুটি এক মিটার।
১ কিলোগ্রাম (kg): প্লাংকের ধ্রুবকে 6.626070 × 10 34 m 2 /s দিয়ে ভাগ দিলে যে ভর পাওয়া যায় সেটি হচ্ছে ১ কিলোগ্রাম (kg)। এক কিলোগ্রাম: ১ লিটার পানির বোতল বা প্রায় চার গ্লাসে যতটুকু পানি থাকে তার ভর হচ্ছে এক কেজি।
১ সেকেন্ড (s): একটি সিজিয়াম 133 ( Cs 133 ) পরমাণুর ৯,১৯২,৬৩১,৭৭০টি স্পন্দন সম্পন করতে যে সময় লাগে তাকে ১ সেকেন্ড (s) বলে । এক সেকেন্ড: 1001 এই তিনটি শব্দ বলতে যে সময় লাগে, তা হচ্ছে এক সেকেন্ড।
১ অ্যাম্পিয়ার (A): প্রতি সেকেন্ডে 1/ 1.602176634 × 10 -19 ইলেকট্রনের সমপরিমাণ চার্জ প্রবাহিত হলে সেটি হচ্ছে ১ অ্যাম্পিয়ার (A)। এক অ্যাম্পিয়ার: তিনটি মোবাইল ফোন একসাথে চার্জ করা হলে এক অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়।
1 কেলভিন (K): যে পরিমাণ তাপমাত্রার পরিবর্তনে তাপশক্তির 1.380649 × 10 23 Joule পরিবর্তন হয়, সেটি হচ্ছে ১ কেলভিন [K]। এক কেলভিন: হাত দিয়ে কারো জ্বর অনুভব করলে বলা যেতে পারে তার তাপমাত্রা ১ কেলভিন বেড়েছে।
১ মোল (mol): যে পরিমাণ বস্তুতে এভোগ্যাড্রোর ধ্রুব 6.02214076 × 10 23 সংখ্যক কণা থাকে সেটি হচ্ছে ১ মোল (mol)। এক মোল: বড় এক চামচ পানিতে যত মোল পানির অণু থাকে, তা হচ্ছে ১ মোল।
ক্যান্ডেলা: সেকেন্ডে 540× 10 12 বার কম্পনরত আলোর উৎস থেকে যদি এক স্টেরেডিয়ান ঘনকোণে ১/৬৮৩ ওয়াট বিকিরণ তীব্রতা পৌঁছায় তাহলে সেই আলোর তীব্রতা হচ্ছে এক এক ক্যান্ডেলা: একটি মোমবাতির আলোকে মোটামুটিভাবে এক ক্যান্ডেলা ধরা যায়।

সাতটি ধ্রুবের নির্দিষ্ট করে দেওয়া মান

ধ্রুব মান
আলোর বেগ (c) 299,792,458 meter / second
প্লাংকের ধ্রুব (h) 6.62607015 × 10 -34 Joule / second
ইলেকট্রনের চার্জ (e) 1.602176634 × 10 -19 coulomb
Cs 133 পরমাণুর স্পন্দন 9,192, 631,770 hertz
বোল্টজম্যান ধ্রুব (kg) 1.380649 × 10 -23 joule/ kelvin
এভোগ্যাড্রোর ধ্রুব ( N A ) 6.02214076 × 10 23 particles / mole
বিকিরণ তীব্রতা ( K cd ) 683 lumens / watt

তরল পদার্থ পরিমাপের একক – লিটার ।

S.I পদ্ধতিতে গুরুত্বপূর্ণ একক

রাশি একক
ক্ষেত্রফল মিটার 2 বা বর্গমিটার
আয়তন মিটার 3 বা ঘনমিটার
সরণ মিটার (m)
বেগ বা দ্রুতি মিটার/ সেকেন্ড ( ms -1 )
ত্বরণ মিটার / সেকেন্ড 2 ( ms -2 )
কৌণিক ত্বরণ রেডিয়ান / সেকেন্ড 2
ভরবেগ কিলোগ্রাম-মিটার/ সে 2
বল বা ওজন নিউটন (N)
কাজ/ শক্তি/ তাপ জুল (J)
ক্ষমতা ওয়াট (W)
ঘনত্ব কিলোগ্রাম/মিটার (kgm¹)
চাপ/pressure প্যাসকেল (Pa)
দোলনকাল সেকেন্ড
তরঙ্গ দৈর্ঘ্য মিটার
কম্পাঙ্ক হার্জ (Hz)
প্রসারণ সহগ প্রতি কেলভিন
তাপ ধারণ ক্ষমতা জুল/কেলভিন
আপেক্ষিক সুপ্ততাপ জুল/ কিলোগ্রাম
Viscosity Poise
চৌম্বক ফ্লাক্স ওয়েবার
আলোক ফ্লাক্স লুমেন
দীপন তীব্রতা লাক্স
দীপন ক্ষমতা ক্যান্ডেলা
লেন্সের ক্ষমতা ডায়অপ্টার
আধান কুলম্ব
বিভব পার্থক্য / তড়িৎচালক বল ভোল্ট
তড়িৎ প্রাবল্য নিউটন/কুলম্ব
রোধ ওহম
পরিবাহিতা সিমেন্স
তেজস্ক্রিয়তা বেকরেল
এক্সরে রন্টজেন

এককের গুণিতক ও উপগুণিতক

গুণিতক/উপগুণিতক উৎপাদক ও সংকেত উদাহরণ
এক্সা (exa) ১০ ১৮ , E ১ এক্সামিটার = ১ Em = ১০ ১৮ m
পেটা (peta) ১০ ১৫ , P ১ পেটামিটার = ১ Pm = ১০ ১৫ m
টেরা (tera) ১০ ১২ , T ১ টেরাগ্রাম = ১ Tg = ১০ ১২ g
গিগা (giga) ১০ , G ১ গিগাবাইট = 1 GB = ১০ B
মেগা (mega) ১০ , M ১ মেগাওয়াট = ১ MW = ১০ W
কিলো (kilo) ১০ , K ১ কিলোভোল্ট = ১ kV = ১০ V
হেক্টো (hecto) ১০ , h ১ হেক্টোজুল = ১hJ = ১০ J
ডেকা (deca) ১০ , da ১ ডেকানিউটন = ১ daN = ১০ N
ডেসি (deci) ১০ -১ , d ১ ডেসিও'ম = ১d = ১০ -১
সেন্টি (centi) ১০ -২ , c ১ সেন্টিমিটার = ১ cm = ১০ -২ m
মিলি (milli) ১০ -৩ , m ১ মিলিঅ্যাম্পিয়ার = ১ mA = ১০ -৩ A
মাইক্রো (micro) ১০ -৬ , μ ১ মাইক্রোভোল্ট = 1 V = ১০ -৬ V
ন্যানো (nano) ১০ -৯ , n ১ ন্যানোসেকেন্ড = ১ ns = ১০ -৯ s
পিকো (pico) ১০ -১২ , p ১ পিকোফ্যারাড = ১ pF = ১০ -১২ F
ফেমটো (femto) ১০ -১৫ , f ১ ফেমটোমিটার = 1 fm = ১০ -১৫ m
এটো (atto) ১০ -১৮ , a ১ অটোওয়াট = ১ aW = ১০ -১৮ W

মাত্রা (Dimensions)

যে কোনো ভৌত রাশিকে বিভিন্ন সূচকের (power) এক বা একাধিক মৌলিক রাশির গুণফল হিসেবে প্রকাশ করা যায় । কোনো ভৌত রাশিতে উপস্থিত মৌলিক রাশিগুলোর সূচককে রাশিটির মাত্রা বলে।
যেমন বল = ভর × ত্বরণ = ভর × বেগ সময় = ভর × দৈর্ঘ্য সময় 2
এখানে দৈর্ঘ্যের মাত্রা L, ভরের মাত্রা M, সময়ের মাত্রা T
বসালে বলের মাত্রা পাওয়া যাবে ML T 2 বা MLT -2
অর্থাৎ, বলের রয়েছে ভরের মাত্রা (1), দৈর্ঘ্যের মাত্রা (1) এবং সময়ের মাত্রা (- 2)।
কোনো রাশির মাত্রা নির্দেশ করতে তৃতীয় বন্ধনী [ ] ব্যবহার করা হয়।
যেমন বলের মাত্রা [F] = MLT -2

স্কেলার রাশি ও ভেক্টর রাশি

দিকের বিবেচনায় বস্তু জগতের সকল রাশিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় । যথা: ১. স্কেলার রাশি, ২. ভেক্টর রাশি ।

স্কেলার রাশি: যে সকল ভৌত রাশিকে শুধু মান দ্বারা সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করা যায়, দিক নির্দেশের প্রয়োজন হয় না তাদেরকে স্কেলার রাশি বলে। যথা: দৈর্ঘ্য, ভর (Mass), দ্রুতি, কাজ, শক্তি, সময়, তাপমাত্রা ইত্যাদি ।

ভেক্টর রাশি: যে সকল ভৌত রাশিকে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করার জন্য মান ও দিক উভয়ের প্রয়োজন হয় তাদেরকে ভেক্টর রাশি বলে। যথা: সরণ, ওজন, বেগ, ভরবেগ, ত্বরণ, বল, তড়িৎ তীব্রতা, চৌম্বক তীব্রতা ইত্যাদি।

ভেক্টর রাশি ও স্কেলার রাশির পার্থক্য

স্কেলার রাশি ভেক্টর রাশি
স্কেলার রাশির শুধু মান আছে দিক নেই। ভেক্টর রাশির মান ও দিক উভয় আছে।
দুটি স্কেলার রাশির যেকোনো একটির মান শূন্য না হলে এদের গুণফল শূন্য হয় না। দুইটি ভেক্টর রাশির কোন একটির মান শূন্য না হলেও এদের ভেক্টর গুণফল শূন্য হতে পারে।
শুধু মান বা শুধু দিক বা উভয়ের পরিবর্তন হলে ভেক্টর রাশির পরিবর্তন হয়। শুধু মানের পরিবর্তন হলে স্কেলার রাশির পরিবর্তন হয় ।
ভেক্টর রাশির যোগ, বিয়োগ, গুণ ইত্যাদি বীজগণিতের নিয়মে হয় না ৷ স্কেলার রাশির যোগ, বিয়োগ, গুণ ইত্যাদি বীজগণিতের নিয়মানুসারে হয়।
দুইটি স্কেলার রাশির গুণ করলে সর্বদা স্কেলার রাশি পাওয়া যায়। দুইটি ভেক্টর রাশির গুণফল একটি ভেক্টর রাশি অথবা একটি স্কেলার রাশি হতে পারে।
নবীনতর পূর্বতন