আবদুল মান্নান সৈয়দ

আবদুল মান্নান সৈয়দ (১৯৪৩-২০১০)

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, জগন্নাথ কলেজের সাবেক অধ্যাপক আবদুল মান্নান সৈয়দ ছিলেন বাংলাদেশের একজন আধুনিক কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার, গবেষক ও সাহিত্য সম্পাদক। রবীন্দ্রোত্তরকালে বাংলা সমালোচনা সাহিত্যে তিনি ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছেন। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে দেশের প্রধান কবিদের সবাই যখন ‘জাতীয় কবিতা পরিষদ' গঠন করে এরশাদের বিরুদ্ধে লেখনী ধারণ করেন, তখন তিনি এরশাদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘এশীয় কবিতা উৎসব'- এ একাধিকবার যোগদান করেন। জনশ্রুতি আছে, এরশাদ ঐ সময় যে কবিতাগুলি নিজের নামে দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ করতেন সেগুলোর রচয়িতা ছিলেন আবদুল মান্নান সৈয়দ ।

আবদুল মান্নান সৈয়দের সাহিত্যকর্ম

সাহিত্যিক উপাদান সাহিত্যিক তথ্য
জন্ম আবদুল মান্নান সৈয়দ ৩ আগস্ট, ১৯৪৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণার ইছামতি নদীর তীরে জালালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দেশ বিভাগের পর ঢাকার কুলি রোডে (বর্তমান গ্রীন রোড) স্থায়ীভাবে বসবাস করেন।
ছদ্মনাম ও পরিচিতি তিনি ‘অশোক সৈয়দ' ছদ্মনামে লিখতেন এবং ‘পরাবাস্তব কবি' হিসেবে খ্যাত। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম ‘পোয়েট ইন রেসিডেন্ট' । তিনি কবি জীবনানন্দ দাশ ও কাজী নজরুল ইসলামের উপর গবেষণার প্রবাদ পুরুষ হিসেবে খ্যাত।
প্রথম লেখা ১৯৫৯ সালে ইত্তেফাক পত্রিকার সাহিত্য বিভাগে ‘সোনার হরিণ' কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে কবিতার জগতে আত্মপ্রকাশ করেন।
পুরস্কার তিনি 'বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার' (১৯৮১), ‘নজরুল পুরস্কার' (১৯৯৮), 'নজরুল পদক' (২০০১) ও একুশে পদক পান।
সাহিত্যকর্ম তাঁর রচিত সাহিত্যকর্মসমূহ:

কাব্য:

‘জন্মান্ধ কবিতাগুচ্ছ' (১৯৬৭),
'জ্যোৎস্না রৌদ্রের চিকিৎসা' (১৯৬৯),
'ও সংবেদন ও জলতরঙ্গ' (১৯৭৪),
‘কবিতা কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড' (১৯৮২),
‘পার্ক স্ট্রিটে এক রাত্রি' (১৯৮৩),
‘পরাবাস্তব কবিতা' (১৯৮৪),
'মাছ সিরিজ' (১৯৮৪),
‘সকল প্রশংসা তাঁর' (১৯৯৩),
'নীরবতা গভীরতা দুই বোন বলে কথা' (১৯৯৭)।

উপন্যাস:

‘পরিপ্রেক্ষিতের দাসদাসী' (১৯৭৪),
‘কলকাতা’ (১৯৮০),
‘অ-তে অজগর' (১৯৮২),
‘পোড়ামাটির কাজ’ (১৯৮২),
‘গভীর গভীরতর অসুখ' (১৯৮২),
‘ক্ষুধা প্রেম আগুন' (১৯৯৪),
‘শ্রাবন্তীর দিনরাত্রি' (১৯৯৮),
‘হে সংসার হে লতা'।

গল্পগ্রন্থ:

‘একরাত্রি': এক কাজ পাগল কেরানীর নিষ্ঠাময় চাকরী জীবনের গল্প ।
‘মার্চ’: পরাবাস্তব চেতনা ভিত্তিক গল্প ।
‘সত্যের মত বদমাশ' (১৯৬৮),
'চলো যাই পরোক্ষে (১৯৭৩),
‘মৃত্যুর অধিক লাল ক্ষুধা' (১৯৭৭),
‘নেকড়ে হায়েনা ও তিন পরী' (১৯৯৭),
‘অমরতার জন্য মৃত্যু'।

কাব্যনাট্য:

‘চাকা' (১৯৮৫),
‘কবি ও অন্যরা' (১৯৯৬)।

প্রবন্ধ:

‘দশ দিগন্তের দ্রষ্টা’,
‘করতলে মহাদেশ’,
‘আমার বিশ্বাস’,
‘ছন্দ’।

স্মৃতিকথা :

‘আমার বিশ্বাস' (১৯৮৮),
‘স্মৃতির নোটবুক' (২০০১),
‘ভেসেছিলাম ভাঙা ভেলায়' (২০০৯),
'মিটিলনা সাধ ভালবাসিয়া তোমায়' (২০১২)।

প্রবন্ধ গবেষণা:

‘শুদ্ধতম কবি' (১৯৭২),
‘নজরুল ইসলাম : কবি ও কবিতা' (১৯৭৭),
‘নজরুল : কালজ কালোত্তর' (১৯৮৭),
‘আধুনিক সাম্প্রতিক' (২০০১)।
মৃত্যু তিনি ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১০ সালে মারা যান।
নবীনতর পূর্বতন