মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯০৮-১৯৫৬)

তিরিশোত্তর বাংলা কথাসাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় একটি অবিস্মরণীয় নাম। তাঁর গল্প ও উপন্যাসগুলোতে স্বতন্ত্র ও স্বকীয় বৈশিষ্ট্য উজ্জ্বল। বিজ্ঞানমনস্ক এ লেখক মানুষের মনোজগৎ তথা অন্তর্জীবনের রূপকার হিসেবে সার্থকতা দেখিয়েছেন। শরৎচন্দ্র ও কল্লোল গোষ্ঠীর লেখকদের পর বাংলা সাহিত্যে বস্তুতান্ত্রিকতা ও মনোবিশ্লেষণে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় অগ্রগণ্য।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যকর্ম

সাহিত্যিক উপাদান সাহিত্যিক তথ্য
জন্ম মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯ মে, ১৯০৮ সালে বিহারের সাঁওতাল পরগনার দুমকা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস- মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরের মালবদিয়া গ্রাম ।
প্রকৃত নাম তাঁর পিতৃপ্রদত্ত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় । ডাক নাম মানিক। জন্মপঞ্জিকায় নাম অধরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ।
সাহিত্যিক আদর্শ তিনি প্রথমদিকে ফ্রয়েডীয়, পরবর্তীতে মার্কসিজম মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। মার্কসবাদী ঔপন্যাসিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
রাজনীতি তিনি ১৯৪৪ সালে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করে সদস্যপদ লাভ করেন।
সম্পাদনা তিনি ' নাবারুণ' পত্রিকার সম্পাদক ও 'বঙ্গশ্রী' পত্রিকার সহসম্পাদক ছিলেন।
পেশা লেখালেখিই ছিল তার প্রধান পেশা ও নেশা। এ জন্য তাকে 'কলম পেশা মজুর' বলা হয়।
প্রথম গল্প মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত প্রথম প্রকাশিত গল্প ‘অতসী মামী’ (বাংলা-১৩৩৫): এটি ডিসেম্বর, ১৯২৮ এবং জানুয়ারি, ১৯২৯ সালে পৌষ সংখ্যা 'বিচিত্রা' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ গল্পেই তিনি মানিক নামটি প্রথম ব্যবহার করেছেন। ফলে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছাউনিতে প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় নামটি ঢাকা পড়ে যায়।
উপন্যাস মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত উপন্যাসসমূহ:

জননী ' (১৯৩৫): এটি তাঁর রচিত প্রথম উপন্যাস। এটি নারীর জননী-জীবনের নানা স্তর এবং সন্তানের সঙ্গে জননীর সম্পর্কের সূক্ষ্ম মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণমূলক উপন্যাস। চরিত্র: শ্যামা।

‘পদ্মানদীর মাঝি' (১৯৩৬): জেলেদের দৈনন্দিন জীবনের চালচিত্র এর উপজীব্য। চরিত্র: কুবের, কপিলা, মালা, হোসেন মিয়া। উর্দু কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজের চিত্রনাট্যে ১৯৫৮ সালে এ.জে কারদার পরিচালিত উর্দু ছবি ‘জাগো হুয়া সাবেরা' নামে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। এটি নিয়ে গৌতম ঘোষ ১৯৯২ সালে 'পদ্মা নদীর মাঝি' নামে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন ।

‘পুতুলনাচের ইতিকথা' (১৯৩৬): কলকাতার এক সাধারণ গ্রাম গাওদিয়া আর তার সাধারণ মানুষ নিয়ে এ উপন্যাসের পটভূমি। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে বাঙালি শিক্ষিত মধ্যবিত্তের অন্তর্গত টানাপোড়েন ও অস্তিত্ব সংকট শশী চরিত্রের মাধ্যমে প্রকাশিত। লোকায়ত ভাষায় প্রেম নিবেদন করে কুসুম, কিন্তু শশীর কাছ থেকে সাড়া না পাওয়ায় তার আত্মিক মৃত্যু ঘটে। এ উপন্যাসে বিভিন্ন চরিত্র ক্রিয়াশীল থাকলেও তারা চারিত্রিক দৃঢ়তা নিয়ে দাঁড়াতে পারেনি, পুতুলের মতো অন্যের অল্প ধাক্কাতেই চালিত হয়েছে। এটি মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণমূলক উপন্যাস। চরিত্র: শশী, কুসুম।

'অমৃতস্য পুত্রা' (১৯৩৮): এটি পারিবারিক ও দাম্পত্য সমস্যামূলক উপন্যাস।

শহরতলী ' (১৯৪০): নিম্ন মধ্যবিত্ত ও শ্রমিকশ্রেণির মানুষের জীবনের কাহিনি ও সেইসাথে প্রবৃত্তির নিরাবরণ প্রকাশ, মানুষের আচরণের বলিষ্ঠতা ও কপটতা, ঈর্ষার রূপায়ণ এ উপন্যাসের মূল সুর।

অহিংসা ' (১৯৪১): মানুষ যে অজ্ঞাতসারে অনেক অহিংস কাজ করে অথবা হিংসার সাথে অহিংসা যে মানুষের মধ্যে জড়িত থাকতে পারে, এটি নিয়েই উপন্যাসের কাহিনি বিস্তৃত ।

আরোগ্য' (১৯৫৩) : 'সামাজিক কারনেই মানুষ মানসিক 'ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়' এ তত্ত্বকে ধারণ করেই তিনি রচনা করেন এ উপন্যাসটি।

‘দিবারাত্রির কাব্য' (১৯৩৫),
'শহরবাসের ইতিকথা' (১৯৪৬),
' চিহ্ন ' (১৯৪৭),
' চতুষ্কোণ' (১৯৪৮),
জীয়ন্ত’ (১৯৫০),
‘সোনার চেয়ে দামী' (১৯৫১),
‘স্বাধীনতার স্বাদ’ (১৯৫১),
‘ইতিকথার পরের কথা' (১৯৫২),
আরোগ্য (১৯৫৩)
'হরফ ' (১৯৫৪),
'হলুদ নদী সবুজ বন' (১৯৫৬),
‘মাশুল' (১৯৫৬)।
গল্পগ্রন্থ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত গল্পগ্রন্থসমূহ:

‘অতসী মামী অন্যান্য গল্প' (বাংলা-১৩৩৫),
‘প্রাগৈতিহাসিক ’ (১৯৩৭),
‘মিহি ও মোটা কাহিনী' (১৯৩৮),
সরীসৃপ ’ (১৯৩৯),
‘সমুদ্রের স্বাদ' (১৯৪৩),
বৌ ’ (১৯৪৩),
ভেজাল ' (১৯৪৪),
‘হলুদ পোড়া’ (১৯৪৫),
‘আজকাল পরশুর গল্প' (১৯৪৬),
‘ছোট বকুলপুরের যাত্রী' (১৯৪৯),
ফেরিওয়ালা' (১৯৫৩)।
অন্যান্য রচনাবলি মানিকের অন্যান্য রচনাবলি:

গল্প : ‘প্রাগৈতিহাসিক’(চরিত্র: ভিখু,পাঁচি), ‘আত্মহত্যার অধিকার'।
প্রবন্ধ : ‘লেখকের কথা' (১৯৫৭)।
নাটক : ‘ভিটেমাটি' (১৯৪৬)।
মৃত্যু তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৫৬ সালে মৃগী রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
নবীনতর পূর্বতন