নূরুল মোমেন

নূরুল মোমেন (১৯০৬-১৯৮৯)

প্রখ্যাত নাট্যকার নূরুল মোমেন সমকালীন সমাজের অসঙ্গতি ও দ্বন্দ্বসমূহ ব্যঙ্গরসের মাধ্যমে নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরেন। সামাজিক সঙ্কটের পটভূমিকায় অন্তর্দ্বন্দ্বমূলক নাট্যচরিত্র অঙ্কন করে খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে বিবৃতি দেন ।

নূরুল মোমেনের সাহিত্যকর্ম

সাহিত্যিক উপাদান সাহিত্যিক তথ্য
জন্ম নুরুল মোমেন ২৫ নভেম্বর, ১৯০৬ সালে বর্তমান ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার বুড়োইচ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ।
পরিচিতি তিনি সাহিত্যাঙ্গনে ‘ নাট্যগুরু ' হিসেবে সমধিক পরিচিত। তিনি রম্যসাহিত্য রচয়িতা হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন।
প্রথম কবিতা মাত্র ১০ বছর বয়সে তাঁর প্রথম কবিতা ‘ সন্ধ্যা’ ধ্রুবতারা সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়।
পুরস্কার ও সম্মাননা তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬১), একুশে পদক (১৯৭৮) পান এবং পাকিস্তান সরকার কর্তৃক সিতারা-ই- ইমতিয়াজ (১৯৬৭) উপাধি লাভ করেন ।
নাটক তাঁর রচিত নাটকগুলো:

রূপান্তর' (১৯৪৭): এটি তাঁর রচিত প্রথম নাটক। এটি ঢাকা বেতারে প্রচারিত হয়েছিল ।

নেমেসিস' (১৯৪৮): এটি ১৯৩৯-৪৩ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত।

‘নয়া খান্দান' (১৯৬২): আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতদের কাছে বংশমর্যাদার চেয়ে সুরুচিই বরং কাম্য। এই সুশিক্ষাই বর্তমান যুগের নতুন বা নয়া খান্দান হিসেবে বিবেচিত। বংশমর্যাদা ও এ নিয়ে আভিজাত্যের প্রতি শ্লেষ ব্যক্ত হয়েছে এ নাটকে।

আলোছায়া” (১৯৬২): ভালোমন্দের প্রতীক আলোছায়া। ভালোমন্দের দ্বন্দ্ব ছিল, আছে ও থাকবে। ভালো বা আলোর প্রভাব যার মধ্যে আছে সেই স্মরণীয় থাকবে, কালো বা ছায়ার প্রাধান্যধারীরা বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাবে, এটিই এ নাটকের বিষয়। চরিত্র: জামিল, জাহানারা, সুলতান ।

‘শতকরা আশি’ (১৯৬৭),

‘আইনের অন্তরালে’ (১৯৬৭),

‘যেমন ইচ্ছা তেমন' (১৯৭০)।
রম্যগ্রন্থ তাঁর রচিত রম্যগ্রন্থসমূহ:

' বহুরূপী ' (১৯৫৮),
' নরসুন্দর ' (১৯৬১),
‘হিং টিং ছট' (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড-১৯৭০)।
মৃত্যু তিনি ১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯০ সালে ঢাকায় মারা যান।

নেমেসিস নাটকের পরিচয়

১৯৩৯-৪৩ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সমকালীন বিখ্যাত নাট্যকার নুরুল মোমেন রচিত একক চরিত্র বিশিষ্ট নাটক ‘নেমেসিস’ (১৯৪৮)। নাটকটি ‘শনিবারের চিঠি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ১৯৪৫ সালে এবং গ্রন্থরূপে প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে। নেমেসিস প্রতিহিংসার গ্রিক দেবী এবং মানব নিয়তি তার হাতে। মানুষ ইচ্ছে করেও তা অতিক্রম করতে পারে না, যেমনটি পারেনি স্কুল মাস্টার সুরজিত নন্দী। সুরজিত ধনী নৃপেন বোসের কন্যা সুলতাকে ভালোবেসে বিয়ে করতে চায়। নৃপেন বোস বিয়ের পূর্বশর্ত দেয়, তিন মাসের মধ্যে সুরজিতকে পাঁচ লাখ টাকা উপার্জন করতে হবে। সুরজিত এ শর্তে রাজী হয়ে নৃপেন বোস ও তার সহযোগী অসীমের সহায়তায় যুদ্ধের বাজারে কালো টাকা উপার্জনের পথ আবিষ্কার করে । কিন্তু বিবেকের দংশনে পীড়িত হয় সুরজিত। অবশেষে বিজয় মুহূর্তে তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে নাটকের সমাপ্তি ঘটে। এ নাটকে সমকালীন দুর্ভিক্ষ, মজুতদারদের পিশাচবৃত্তি ও নিরন্নদের হাহাকারের বাস্তবচিত্র অংকিত হয়েছে।

নবীনতর পূর্বতন